গল্প লিখব কী করে । আমি তো আর মানুষই দেখি না । ম্যাজেনাইন ফ্লোর থেকে নেমে টুকটুক করে প্রতিদিন সকাল সন্ধে রাস্তার মোড় লাগোয়া টিপটপ মিটশপে গিয়ে বসি । ফারুখ আসে । খদ্দেরদের মুরগি কেটে কেটে দেয় । ঝেড়ে, বেছে, পরিষ্কার করে । আমি টাকার অঙ্ক মিলিয়ে নিই দোকান ছাড়ার আগে । ফারুখের পেমেন্ট দিনের হিসাবে । বিক্রি ভালো হলে এক্সট্রা । দুপুরে বাড়ি ফিরে ঘুমোই । মালকিন বৌদি একটা নাগাদ ভাতের থালা রেখে যায় । ভাতের সাথে ডাল সবজি মাছ । এই মনোটোনিটায় একসময় বিরক্তি বোধ হত । এখন এর অন্যথা হলে ভয় লাগে । কিন্তু অন্যথা তো হয় । এতটাই হয় যে ভয়টা চারিয়ে যেতে যেতে ক্রমশ বুক থেকে তলপেট, তলপেট থেকে শিশ্নে এসে দাঁড়ায় । আমি ভয়টাকে বার করার জন্য হস্তমৈথুন করি । বললে বিশ্বাস করবেন না, আমি আর মেয়েদের দিকে তাকাই না । টিপটপ মিটশপে সব নানা বয়সের মামনিরা আসে । টসটসে কিশোরী, ঝাকাস বৌদি, ভরভরন্ত মাসিমা । আরে রাখুন বড়দা, মেয়েছেলের আবার বয়সের কী এত! দশটায় দোকান বন্ধ করে ম্যাজেনাইন ফ্লোরে আসি । একটাই ঘর । লাগোয়া বাথরুম । চার বাই সাড়ে ছয়ের একটা চৌকি পেতে রেখেছি । চওড়াটা একফুট কম হলে কড়কড়ে আটশ টাকা বেঁচে যেত । কিন্তু তখন আসলে বনলতা আসত । হপ্তায় প্রায় দু’দিন । বনলতা, পরের বউ । কোন একটা পত্রিকায় নাকি আমার গল্প টল্প পড়েছিল । খোঁজ টোজ নিয়ে সোজা টিপটপ মিটশপে হাজির । তৃতীয় দিনের সন্ধেয় দোকান থেকে ম্যাজেনাইন । এইসব কেসে যা হয় আরকি । আট মাস মতো নিয়মিত এল । শুতে শুতে বরের নামে, শ্বশুর শাশুড়ি ননদ নন্দাইয়ের নামে একরাশ কাঁদুনি গাইল । তারপর দেখি আর ফোন ধরে না । হোয়াটসঅ্যাপ করলে ডেলিভারি হয় না । আমি তো বড়দা অনেক পরে জেনেছি ওখানেও নাকি ব্লক করা যায় । একদিন আঠেরো বার ফোন করার পর ধরল । দুপুরবেলা । বুঝলাম বর বাড়ি নেই । জিজ্ঞেস করলাম এড়িয়ে যাচ্ছ কেন । বলল গায়ের মুরগির গন্ধের জন্য নাকি ওর অর্গ্যাজম হয় না ।
তো কী যেন বলছিলাম? হ্যাঁ । হস্তমৈথুন । এই বনলতার আট মাসের অভ্যেসটা কাটাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল । মফঃস্বলের ছেলে, ওরকম কথায় কথায় তো আর শুয়ে পড়তে পারি না । শেকড়ের মধ্যে এখনও পাপ-পুন্যফুন্যর ভাবনাটা রয়ে গেছে । মুরগির গন্ধটা শোনার পর থেকে না, কেমন মিইয়ে গেলাম । আর আমি যত না, তার চেয়ে বেশি আমার তিনি । প্রথমটায় চাপ নিয়ে ফেলেছিলাম । বত্তিরিশ বছর বয়স আর এমন কী বলুন । বাড়ি থেকে বাবা-মা ফোন করলেই অমুক বোনের তমুক মাসিশাশুড়ির মেয়ের ছবি পাঠাবে কিনা জিজ্ঞেস করে । তা এত মেয়ে দেখে করবটা কি । সবই খেঁদি পেঁচি নুরজাহান কেস । বিয়ে করব না এরকম কিছুও ঠিক করিনি কিন্তু । গল্প উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হব বলে না । আরে বড়দা, এরম হুদো হুদো বিভাস প্রামাণিক সাহিত্যিক হওয়ার আশায় প্রকাশকের পা চেটে বেড়ায় । আমার জাস্ট কলকাতায় একটা নিজের দোকান নেওয়ার আছে । এটা ভাড়ার । এটাও সত্যি যে আমার জন্য ফুলকির বিয়েটা আটকে রয়েছে । ফুলকি, আমার ছ’বছরের ছোট বোন । নিজের না, ছোটকাকার মেয়ে । ছোটকাকা সাতচল্লিশ বছর বয়সে হঠাৎ অফিসের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেল, সেই থেকে ফুলকি আমার আর আমার ভাই মুন্নার সাথে বড় হয়েছে । একবার কী হয়েছিল, তখন এইটে পড়ি, ফুলকি কোনও কারণে কলতলার দিক থেকে গায়ে লাল গামছা জড়িয়ে আসছিল । খুব কাছ থেকে, অনেকটা খোলা বুক দেখে ফেললাম । সাদা আর অল্প বাদামি । সেই প্রথম ঘুমের মধ্যে বীর্যপাত । পরদিন এত অপরাধবোধ হল বড়দা, যে আর স্কুলেই গেলাম না । বিকেলবেলা ফুটবল খেলতে গিয়ে রতনদা বলল, আরে ধুর, ও নিজের বোন নাকি, ও তো তোর কাকার মেয়ে । সেই প্রথম নিজের আর তুতোর তফাৎটুকু বোধগম্য হল । হস্তমৈথুন ব্যাপারটা রতনদাই খোলাখুলি শিখিয়েছিল সেদিন ।
ক্রিস্টাল হার্বাল ক্লিনিকে গিয়ে বলতে, গোটা ছয়েক ওষুধ লিখে দিল । সে ওষুধ আবার ওদের কাছ থেকেই কিনতে হয় । বিল হল চব্বিশ টাকা । সব ক্যানসেল করে একটা ট্যাবলেটের শিশি নিয়ে এলাম । রাত্তিরে দুটো বড়ি, ঘুমোবার আগে । সে কী কেলো বড়দা! কিছুতেই কিছু হয়না । ইংরিজির বদলে গড়িয়াহাট থেকে দুটো বাংলা সিডি আনা করালাম । মাতৃভাষায় যদি কিছু উপকার হয় । তাও হল না । ব্যবসাটা কোনওক্রমে করতে হয় তাই করা । লেখা ফেখা মাথায় উঠেছে । পুরো বনবনাইটিস । শেষে বড়দা, আপনার এই দোকানের উল্টোদিকে ওষুধ পাওয়া গেল । আপনার দোকান, যা কিনা আমায় ভাড়ায় দেওয়া - টিপটপ মিটশপ । প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম দোকানটার আয়পয় ভালো । কিন্তু চার-চারটে বছর বসছি, এতদিনে একবারও এ বিষয়টা চোখে পড়েনি কেন কে জানে ! ফারুখ যখন রোজ দোকান বন্ধ করে, এই সাড়ে ন’টা নাগাদ, রাস্তার উল্টো ফুটে ম্যাক্সিমিনি বুটিকের মামনিরা তাদের ম্যানিকুইনগুলোকে জামা ছাড়ায় । রোগা রোগা ম্যানিকুইন, তাদের চ্যাপ্টানো নিতম্ব, বুকের কাছে সামান্য ঢিবি । কিন্তু না, কোনও যোনি নেই । দু’পায়ের ফাঁকে একটা মসৃণ অংশ । তকতকে । নির্ভাঁজ । নির্লোম । আঁশটে গন্ধহীন । সকাল হলে দুজন ম্যানিকুইন রোজ আলাদা আলাদা জামা পরে । আবার রাত্তির হলে আলগা গা । এতটাই আলগা, যে কোনও প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না । এমনকি প্রবেশেরও না । স্রেফ ঢাললেই হয় । ঝটিতি ।
ম্যানিকুইন দুটোর নাম রেখেছি । ফুলকির ছোটবেলার একজোড়া স্তনের নামে ।