মোদি সরকারের পতনের কি সূচনা হয়ে গেছে? উত্তরটা যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে বলতে হবে, এখনই এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছালে সেটা তাড়াহুড়ো করে ফেলা হচ্ছে। এবং এমন সিদ্ধান্তকে অবশ্যই অলস সিদ্ধান্ত বলা যেতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র গোটা দেশব্যাপী ‘মুড অব দ্য নেশন সার্ভে’ (MOTNS) শিরোনামে জনমত সমীক্ষা থেকে কেন্দ্রের মোদি সরকার ও বিরোধী শিবিরের জন্যে তিনটি বার্তা সামনে এসেছে। অর্থনীতি, অর্থনীতি এবং অর্থনীতি। তিনটি বার্তাই একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। শাসক দলের জন্য এটা সর্তকতা ঘণ্টি, যার শব্দমাত্রা তাঁদের ‘অমৃত কাল’-এর সুখসঙ্গীত থেকেও অনেক প্রবল। আর এই বার্তা বিরোধীদের জন্যে একই সঙ্গে সুযোগ এবং দায়িত্বশীল আচরণের ইঙ্গিত।
মানুষ এই সমীক্ষা কীভাবে পড়বে, সেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যদিও আমরা জনমত সমীক্ষা পর্যালোচনা করি নির্বাচনের ব্যাপারে আভাস পেতে। একজন প্রাক্তন নির্বাচন বিশ্লেষক হিসাবে এই বিষয়টা আমায় পীড়া দেয়। কোনো একটি নির্বাচনকেন্দ্রের চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে দুটটি নির্বাচনের মধ্যবর্তী অবস্থাকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করা উচিত নয়। সমীক্ষার ক্ষেত্রে আসল বিষয় হল বর্তমান অবস্থাকে পর্যালোচনা করে মানুষের মতামতের প্রবণতাটা তুলে ধরা।
রেকর্ড রাখার জন্য, আমাকে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে ‘ইন্ডিয়া টুডে’র ‘মুড অফ দ্য নেশন সার্ভে’(MOTNS)-এর সর্বশেষ রাউন্ড, আমাদের দেশের জনসাধারণের এই মুহূর্তের মতামত অনুধাবনের জন্য সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি জনমত সমীক্ষা প্রকল্প। যাতে উঠে এসেছে, যদি লোকসভা নির্বাচন এবছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হত, সেক্ষেত্রে বিজেপির আসন সংখ্যা দাঁড়াত ২৮৩ ( যা ২০১৯ সালে প্রাপ্ত ৩০৩টি আসনের থেকে একটু কম) এবং এনডিএ’র মোট আসন সংখ্যা হত ৩০৭ ( যা গত লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ৩৫৩টি আসনের তুলনায় অনেকটাই কম)।
চটজলদি উপায় অবলম্বন
এত কিছুর পরেও এটা স্পষ্টতই বুঝতে হবে, যে আসন সংখ্যার কথা বলা হচ্ছে সেই ব্যাপারে খুব বেশি সময় ব্যয় না করার মত বহু কারণ রয়েছে। প্রথমত, নির্বাচনের ২০ মাস আগে কোনো আসনের ব্যাপারে আগাম কোনো ইঙ্গিত পাওয়ার চেষ্টা আমরা করব না। দ্বিতীয়ত, বিহারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে এই জনমত সমীক্ষাটি করা হয়। যদিও নির্বাচন-বিশ্লেষকরা এই বিষয়টি তাঁদের পর্যালোচনায় নিয়ে এসেছিলেন, সে রাজ্যে নির্বাচনের মত জরুরিকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে। তাঁদের বিশ্লেষণে প্রকাশ পেয়েছিল, এখন ভোট হলে সেখানে বিজেপি তাদের ৮টি আসন ও এনডিএ মোট ২১টি আসন হারাবে এবং যার ফলস্বরূপ নীতিশ কুমারের শিবির পরিবর্তন দেখা পারে।
আমি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, যে এই জনমত সমীক্ষার ব্যাপারে আমার অস্বস্তির আরও একটি কারণ রয়েছে। সেটা হল, এই বছরের একেবারে গোড়ায়, জানুয়ারির শুরুতে, ‘ইন্ডিয়া টুডে’র ‘মুড অফ দ্য নেশন সার্ভে’ (MOTNS) লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করার ও কথা বলার বিষয়টি হঠাৎই বন্ধ করে দিয়েছিল। অথচ এই পদ্ধতিটিকে অবলম্বন করেই বিগত ৬টি যুগ ধরে লাগাতার জনমত সমীক্ষা করার কাজ চলে এসেছে। এবং এই পদ্ধতিটি দীর্ঘ সময়ের পরীক্ষিত ও একটি গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি হিসাবেই বিবেচিত হয়েছে। এই পদ্ধতিক্রমকে জনমত সমীক্ষার ব্যাপারে অনুসরণ করে আসছে ‘দ্য সেন্টার ফর দ্য স্টাডিজ অব ডেভলপিং সোসাইটি’-এর মত বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, ‘মুড অব দ্য নেশন সার্ভে’-এর অধীনে চলে যাওয়া ‘সি-ভোটার’-এর মত নয়া জনমত সমীক্ষার এজেন্সি সামনাসামনি মানুষের সঙ্গে কথা বলার পদ্ধতির বদলে টেলিফোন সাক্ষাৎকারকে বেছে নিয়েছে । এটা সুবিদিত যে টেলিফোনে সাক্ষাৎকার নেওয়া খুবই সস্তা, আর সেকারণেই বোধহয় গোটা দুনিয়াতে এই পদ্ধতির প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। এটাও ঠিক যে ভারতে মোবাইলের জনঘনত্ব এখন অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও এই পদ্ধতি সর্বজনীন নয়। এবং যতই উন্নত পরিসংখ্যান কৌশল আপনি ব্যবহার করুন না কেন, টেলিফোন সাক্ষাৎকারে খুব কম সংখ্যক মতামতই পাওয়া যাবে।
নির্দিষ্ট করে আরও বলা যায়, এটা চরম হতাশাজনক যে ভারতে নির্বাচনী জনমত সমীক্ষার ব্যাপারে উচ্চমানের একটি পত্রিকা স্বচ্ছভাবে জনমত সমীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যে বাজেট দরকার, সেই ব্যাপারে সমঝোতা করেছে। এটা করতে গিয়ে সরাসরি মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের বদলে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়াকে বেছে নিয়েছে। জনমত সমীক্ষায় এই পদ্ধতিগত পরিবর্তনকে বলা হচ্ছে ‘ক্যাটি (CATI) ইন্টারভিউজ’। প্রাপ্তবয়স্কদের মতামত এই ধরনের সাক্ষাতকারগ্রহণ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। আপনারা কি বুঝতে পারছেন যে CATI-র পুরো কথা হল, ‘কম্পিউটার অ্যাসিসস্টেড টেলিফোনিক ইন্টারভিউ’? আপনারা কি বুঝতে পারছেন যে এই পদ্ধতিতে জনমত সমীক্ষা করার ফলে মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছে যাওয়ার যে মানসম্মত পদ্ধতি, তা এবারের ‘মুড অব দ্য নেশন সার্ভে’ (MOTNS)-এ বাতিল হয়ে গেছে? এর ফলে ঠিক কী হয়েছে? এই ‘ক্যাটি’ পদ্ধতির সাক্ষাৎকারের ফলে বেশ কিছু তথ্য বিবেচনাতেই আনা হয়নি। যেমন, যাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, তাদের বয়স, তাদের শ্রেণী, তাদের লিঙ্গ পরিচয় — এসব বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যাওয়া যায়নি। এমনকি অর্থনৈতিক নিপীড়ন, লৈঙ্গিক ও সাম্প্রদায়িক সমস্যার মত অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে কোনোরকম তথ্য এই সমীক্ষায় উঠে আসেনি।
‘আরে বোকা, এটা অর্থনীতি’
এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, সমীক্ষাটি প্রচুর তথ্য সামনে এনেছে। বিশেষ করে জনমতের বিস্তৃত প্রবণতার উপর। এই সমীক্ষা থেকে নির্ভুলভাবে একটা শিরোনাম উঠে আসছে, সেটা হল, ‘আরে বোকা, এটা অর্থনীতি’। “এই মুহূর্তে গোটা দেশ সবথেকে বড় কোন সমস্যার মুখোমুখি?”- এই প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় যে তিনটি উত্তর সর্বাধিকভাবে সামনে এসেছে, সেগুলি হল – ১. মূল্যবৃদ্ধি (২৭ শতাংশ) ২. বেকারত্ব (২৫ শতাংশ) ৩. দারিদ্র্য (৭ শতাংশ)।
যুক্তিযুক্তভাবেই প্রায় সকলের মনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করে অর্থনৈতিক সমস্যার কথাটাই বিষয়টাই রয়েছে। কারণ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর খাতায়-কলমে এবং তার বাইরেও তথ্য তেমনটাই। তালিকার শীর্ষে রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। কারণ রেকর্ড যা বলছে তাতে মুদ্রাস্ফীতি কম হলেও এই মূল্যবৃদ্ধি হামেশাই হয়।
কর্মসংস্থানের ব্যাপারে হতাশ হওয়ার মত যে পরিসংখ্যানে আমাদের সামনে উঠে আসে তার পরিপ্রেক্ষিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জনমত সমীক্ষার ৫৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে বেকারত্বের পরিস্থিতি ‘খুবই গুরুতর’। এর বিপরীতে মাত্র ৯ শতাংশ এমনটা মনে করেন না।
হ্যাঁ, আমি এই জনমত সমীক্ষা দেখে একটা ব্যাপারে খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম। সেটা হল, মানুষ মনে করছে যে এই মুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কয়েক যুগ ধরে জনমত সমীক্ষা পর্যালোচনা করে আমি এমনটাই দেখেছি যে ভারতীয়রা আসলেই বেশ আশাবাদী। তাঁরা মনে করেন, বর্তমান অবস্থা যেমনই থাকুক, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি উন্নত হবেই।
আমার কাছে এটা একটা ধাক্কা খাওয়ার মত ছিল, যে ৩৪ শতাংশের বেশি লোক আশা করে যে আগামী ছয় মাসে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপ হবে, অন্যদিকে ৩১ শতাংশ লোক আশা করছে যে সামনের ৬ মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হবে যা বিগত ৬ মাসের তুলনায় ঠিক উলটো চিত্র। কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের পরের পরিস্থিতি বাদে ভারতে অর্থনৈতিক নৈরাশ্যবাদের বিষয়ে ব্যাপকভাবে কোনো কথাবার্তা হয়েছে কিনা —যেটা নথিবদ্ধ—তেমনটা আমার মনে পড়ছে না।
জনমত সমীক্ষার একজন গবেষক হিসাবে, সাধারণ মানুষের তরফে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়নের চেয়ে পরিবারিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়ায় অনেক বেশি করে আস্থা রাখি। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ইচ্ছামত উজ্জ্বল কিংবা অন্ধকারাচ্ছন্ন হিসাবে তুলে ধরে মানুষকে বোকা বানানো সহজ। কিন্তু দৈনন্দিন সাংসারিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে জনতাকে ঠকানো যায় না। কিন্তু গত ৬ বছর ধরে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ মানুষকে প্রশ্ন করে গেছে, “২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের অর্থনীতির কতটা পরিবর্তন হয়েছ বলে মনে করেন?” এরকম প্রশ্নের মাধ্যমে একদিকে সূক্ষ্ম কায়দায় নরেন্দ্র মোদির নামটাকে আরও বেশি করে জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই প্রশ্নটি এমনভাবে করা হয়েছে, যার অভিমুখটাই ছিল মোদির পক্ষে। যদিও ৩৬ শতাংশের প্রতিক্রিয়া যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপ হয়েছে। তুলনায়, ২৮ শতাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া যে ২০১৪-র থেকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি জারি আছে। অর্থাৎ এই যে বেশি সংখ্যক মানুষ যারা নিজেদের পরিস্থিতির উন্নতি আশা করেন কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা যে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে — এই পরিসংখ্যান যে কোনও সরকারের জন্য ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার পতনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
অর্থনীতি থেকে রাজনীতি
অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে রাজনৈতিক সম্ভাবনায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টা নির্ভর করে মানুষ তাদের খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য সরকারকে দোষারোপ করছে কিনা তার ওপর। এক্ষেত্রেও মোদি সরকারের জন্য খবরটা মোটেও ভালো নয়। সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ইতিবাচক রেটিং এখন মাত্র ৪৮ শতাংশ, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেকর্ড। আর সরকারের অর্থনৈতিক নীতির বিপক্ষে নেতিবাচক রেটিং এখন ২৯ শতাংশ, যা পিছনের নেতিবাচক রেটিং-এর তুলনায় সর্বোচ্চ। এনডিএ সরকারের ‘সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনটি প্রধান উল্লেখযোগ্য বিষয়ই হবে অর্থনীতি সম্পর্কিত – মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তবে হ্যাঁ, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতির নেতিবাচক মূল্যায়ন এখনও ইতিবাচক মূল্যায়নকে ছাড়িয়ে যায়নি। এবং সরকারের সামগ্রিক মূল্যায়ন এখনও বেশ ইতিবাচক। যেহেতু কাশ্মীর, রাম মন্দির, দুর্নীতি এবং আশ্চর্যজনকভাবে কোভিডের মত অন্যান্য সমস্যাকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব কমার কোনো লক্ষণ না থাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
তবে এটাও আবারও বলা দরকার, যে যদি কেউ এখনই মনে করেন, যে মোদি সরকারের পতনের সূচনা হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াটা তাড়াহুড়ো করে ফেলা হবে এবং গভীরে চিন্তা ও পর্যালোচনা করে সিদ্ধন্তে পৌঁছানোর বদলে ‘অলস সিদ্ধান্ত’ হিসাবেই বিবেচিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এখনও অটুট। যদিও যাঁরা তাঁর কাজকে অসফল বা চূড়ান্ত ব্যর্থ হিসাবে মূল্যায়ন করেন, তাঁদের সংখ্যাটাও এখন অনেক। কিন্তু এটা ঠিক যে এখনও পর্যন্ত কোনো বিরোধী নেতা জনপ্রিয়তার বিচারে প্রধানমন্ত্রীর ধারে-কাছেও পৌঁছাননি।
যদিও গণতান্ত্রিক কাঠামোর সাম্প্রতিক অবস্থার ব্যাপারে একটি চিহ্নিত অস্বস্তি রয়েছে। যাঁরা মনে করেন দেশের গণতন্ত্র বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, তাঁদের সংখ্যা স্পষ্টতই চিহ্নিত, যাঁরা এটা মনে করেন না তাঁদের চেয়ে। আক্ষেপের বিষয়, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহের ধ্বংস হওয়া কিংবা বাকস্বাধীনতাকে বাধা দেওয়ার মত বিষয়ে জনগণের কোনো ক্ষোভ নেই। ভারতীয়রা উদারনৈতিক ও সক্রিয় গণতন্ত্রের থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের অহংকার এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণকেই পছন্দসই মনে করছে বোধহয়!
সম্প্রতি আমার কলামে বলেছিলাম, ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁদের জন্য জনসমর্থন ইতিমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে, যাকে তারা বলছে ‘done deal’, সেটা সমর্থন করার মত কোনো কারণই নেই। আসলে বিজেপি তার পদলেহনকারী মিডিয়াদের মাধ্যমে এই ধরণের সার্কাস চালাতে পারদর্শী। এটা ছাড়া এই ধরনের কথার কোনো মূল্য নেই।
আমাদের এখনই ধরে নেওয়া উচিত নয়, যে বিজেপি নিশ্চিতভাবেই জিততে বা হারতে চলেছে। বিহারের পটপরিবর্তন, তাকে ঘিরে নির্বাচনী ভিত্তিরেখার পরিবর্তন এবং এই সমীক্ষায় উঠে আসা অর্থনৈতিক দুরাবস্থার প্রসঙ্গ স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে, যে নির্বাচনী দৌড়ের রাস্তা এখনও খোলা আছে। আর সেই ঐতিহাসিক দায়িত্বভার এখন বিরোধী শিবিরের ওপরেই বর্তায়।