তবলিঘি জামাত ইসলামিক মিশনারি সংগঠন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বিস্তার - এবং সে বিস্তার রীতিমতো ব্যাপক। সদস্যসংখ্যা নিয়ে স্পষ্ট আন্দাজ পাওয়া মুশকিল - কয়েক কোটি তো বটেই - সম্ভবত, পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্মীয় সংগঠনের একটি। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থেকে পাকিস্তানের নামজাদা ক্রিকেটার - তবলিঘি জামাত স্পষ্ট করে সদস্যদের নাম না জানালেও, তাঁদের হয়ে অনেককেই বিভিন্নসময় কথা বলতে দেখা গিয়েছে। ঘোষিত রাজনৈতিক লক্ষ্য কিছু নেই তেমন - মুসলমান মানেই জঙ্গী বলে যাঁরা বিশ্বাস করেন, আশ্বস্ত হতে পারেন, এঁরা নাশকতার সাথে সেভাবে যুক্ত নন - যদিও ফরাসী সরকার বিপরীতটা বিশ্বাস করেন, তাঁদের ধারণা দেশের জঙ্গীদের আশি শতাংশই তবলিঘি জামাতের সদস্য - এবং মার্কিন সরকার মনে করেন, এঁরা জেহাদিদের প্যাসিভ সাপোর্টার। আবার, আগমার্কা জেহাদিরা এঁদের তথাকথিত রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিয়ে ভারী বিরক্ত - জাকির নাইক বা ওরকম আরো অনেক উলেমা এঁদের কট্টর বিরোধী। বলা যেতে পারে, তবলিঘি জামাতের মুখ্য প্রভাব সামাজিক - এবং প্রভাব যথেষ্ট ব্যাপক হলেও, মুসলমান সমাজে এঁদের বিরোধীর সংখ্যাও কিছু কম নয়।
এঁদের ঘোষিত লক্ষ্য, মুসলমানদের জীবনযাত্রা ও ধর্মপালন সেই হজরত মহম্মদের সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া - সমাজে মহিলাদের স্থান বা ইত্যকার বিষয়ে এনাদের ধ্যানধারণা তথৈবচ - কাজেই, প্লীজ, তবলিঘি জামাতের হয়ে যে প্রগতিশীল জনগণ সাফাই গাইছেন, আমি তাঁদের মধ্যে নই। অবশ্য, কোনো একবগগা ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষেই প্রগতিশীল বা মুক্তমনা হয়ে ওঠা সম্ভবপর কিনা সে নিয়ে তর্ক চালানো যেতেই পারে - কিন্তু, সেই আলোচনা এই লেখার বিষয় নয়।
মোদ্দা কথা, তবলিঘি জামাত এই বিশ্বব্যাপী করোনার বাজারে একেবারে তহলকা মাচিয়ে দিয়েছেন।
ফেব্রুয়ারী মাসের শেষে সংগঠনের কনক্লেভ হয় মালয়েশিয়াতে - যাকে, নিউ ইয়র্ক টাইমস বর্ণনা করেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনার বাড়বাড়ন্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে। চার দিনের কনক্লেভে যাঁরা হাজির ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছশো জনের বেশী করোনা-আক্রান্ত হন মালয়েশিয়াতে - ব্রুনেইয়ে আক্রান্তদের অধিকাংশ এই কনক্লেভে ছিলেন, এমন খবর পাওয়া যায় - কনক্লেভ থেকে থাইল্যান্ডে জীবাণু নিয়ে যান অন্তত জনাদশেক - কাম্বোডিয়াতে বাইশজন - আর, এঁরা প্রত্যেকে আরো কতজনের কাছাকাছি এসে সংক্রমণ ঘটিয়েছেন, সেটা অনুমানসাপেক্ষ।
দিল্লীর নিজামুদ্দিন মার্কাজে তবলিঘি জামাতের জমায়েত হয় মার্চ মাসের দশ থেকে তের তারিখ (এ নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী তথ্য মিলছে)। অংশ নেন দেশের প্রচুর মানুষের সাথে ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া থেকে আগত প্রচারকরাও - জামাত কর্তৃপক্ষ বলছেন, সংখ্যাটা ছাব্বিশশোর আশেপাশে - সাধারণ অনুমান সাড়ে তিন হাজার।
মাথায় রাখুন, মার্চের তের তারিখেই, অর্থাৎ জমায়েতের যেদিন শেষ, সেদিন এদেশের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদপ্তর জানান, করোনা সেরকম কোনো এমার্জেন্সি নয় - এবং জনগণের অকারণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। বিদেশ থেকে এদেশে লোকজনের প্রবেশ ছিল অবাধ।
সমাবেশ শুরুর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড উনিশকে প্যান্ডেমিক বলে ঘোষণাও করেননি - সে ঘোষণা আসে মার্চের এগারো তারিখ। দিল্লী সরকারের ইশকুল-কলেজ-শপিং মল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আসে মার্চের বারো তারিখে। এই ঘোষণার পরেও দিল্লীর কালকাজি মন্দিরে ভিড় থাকত জমজমাট, রোজই। কোনোরকম ধর্মীয়, রাজনৈতিক সমাবেশ করা যাবে না - দিল্লী সরকারের তরফে নির্দেশনামা আসে ষোলই মার্চ - তবলিঘি জামাতের সমাবেশ শেষ হওয়ার তিনদিন বাদে (অবশ্য, আবারও বলি, সমাবেশ শুরু আর শেষ কবে, সে নিয়ে বিস্তর ধোঁয়াশা রয়েছে)।
কিন্তু, এ-ও মনে রাখা যাক, বহু লোকের একসাথে জমায়েত হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতার কথা বলা হয়েছিল তার আগেই - হোলি উৎসব নিয়েও সাবধানতার কথা বলা হয়েছিল - শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব স্থগিত হয়েছিল এর আগেই।
অবশ্য, দেশের বেশ কিছু অংশে হোলি পালনে ঘাটতি ছিল না - মথুরাতে হোলিতে ধূমধাম হয়েছিল ভালোই। পাঞ্জাবে আনন্দপুর সাহিবে হোলা মহল্লার হইচই অন্যান্যবারের উচ্চতায় না পৌঁছালেও - ছয় দিনের উৎসবে কয়েক লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়। গুরদ্বারার গ্রন্থী সত্তরোর্ধ বলদেব সিং দু'হপ্তার জার্মানি ভ্রমণ সেরে হোলা মহল্লায় যোগদান করেন - আট থেকে দশই মার্চ - বাসে করে বাড়ি ফেরেন - দিনসাতেকের মাথায় মারা যান - মৃত্যুর পরদিন রিপোর্ট আসে, তিনি করোনা পজিটিভ - দেশের চতুর্থ করোনায় মৃত্যুর ঘটনা। মৃত্যুর আগে বলদেব পরিবারের ছয়জন এবং কমপক্ষে আরো একজনকে করোনা সংক্রমণপ্রদানে সফল হন - হোলা মহল্লায় গড়ে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষ লোকের ভিড় হয় অন্যান্য বছর - এবছর বাজার কিঞ্চিৎ ডাউন - ওই মেরেকেটে কুড়ি লাখ - অকাল তখত-এর উচ্ছ্বসিত জাঠেদার জ্ঞানী হরপ্রীত সিং জানান, বিশ্বে সবাই যখন একে অপরের সাথে কথাবার্তা বলতে ভয় পাচ্ছে, তখন খালসার নামে লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হচ্ছেন, একে মির্যাকল ছাড়া আর কীই বা বলা যায় (মনে আছে কিনা জানি না, আমাদের একান্ত প্রিয়জন শ্রদ্ধেয় দিলীপবাবুও কাছাকাছি সময়ে জানিয়েছিলেন, যারা চাঁদে-সূর্যে-মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠাতেন, আজ তাঁরা ভয়ের চোটে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না - আর আমরা দেখুন মায়ের মন্দিরে কেমন জড়ো হয়েছি, ভাগাভাগি করে প্রসাদ খাচ্ছি - আমরা জানি, যেকোনো বিপদ থেকে মাতাজি আমাদের রক্ষা করবেন)। আনন্দপুর সাহিবে সেই মির্যাকলের শেষে কজন করোনায় আক্রান্ত হলেন, কজন মৃত্যুর মুখে আর রাজ্য জুড়ে ঠিক কতো হাজার কোয়ার্যান্টাইনে - সে নিয়ে অবশ্য জাঠেদারের অবজার্ভেশন জানা যায়নি।
যাক সে কথা, তবলিঘি জামাতের জমায়েতে ফেরা যাক। অনুমান করা হচ্ছে, তাঁদের সেই জমায়েত থেকে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। অন্তত দশজন মারা গিয়েছেন - আক্রান্ত বহু - সংস্পর্শে থাকার সুবাদে কোয়ার্যান্টাইনে ততোধিক। বিদেশ থেকে এমনিতেই প্রচুর লোকজন আসেন বলে করোনা মোকাবিলায় দিল্লীতে বেশ গুছিয়ে বন্দোবস্ত করা হয়েছিল - তবলিঘির আচমকা ধাক্কায় সে ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে। কর্ণাটকে কোয়ার্যান্টাইনে প্রায় আশিজন - আরো তিনশোজনকে সরকার হন্যে হয়ে খুঁজছেন। পুনেতে জানা গিয়েছে, নিজামুদ্দিন থেকে ফিরে এসেছেন একশো বিরাশি জন - তাঁরা হোম কোয়ার্যান্টাইনে। মৃতদের মধ্যে ছজন মারা গিয়েছেন তেলেঙ্গানায় - দিল্লী থেকে ফিরেছেনও বেশ কয়েকজন - সেখানকার অবস্থা সহজেই অনুমেয়। তামিলনাড়ুতেও সরকার জেরবার। এরাজ্যেও।
এক ধর্মপ্রচারক অনুষ্ঠান থেকে কাশ্মীরে ফিরেই অসুস্থ হন - তিনি আবার পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের সবকটিই ব্যবহার করেছিলেন আসতে যেতে - বাস ট্রেন ও প্লেন - জম্মু কাশ্মীরে করোনায় প্রথম মৃত ব্যক্তি তিনিই - যাতায়াতে তিনি ঠিক কজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তার হিসেব পাওয়া সির্ফ মুশকিল নহি, একেবারেই না-মুমকিন।
আবারও বলে রাখা যাক, না, জমায়েতের সময় লকডাউন ছিল না, এমনকি জনতা কার্ফ্যুর আগাম ঘোষণাও ছিল না।
কিন্তু, এক জায়গায় অনেক লোকের জড়ো হওয়ার বিরুদ্ধে সাবধানবাণী ছিল। করোনার বিপদ দিয়ে সরকার সরাসরি নিষেধাজ্ঞা গোছের কিছু জারি না করলেও, নেতামন্ত্রীরা হোলি খেলার বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছিলেন - অন্তত, সতর্কতার আবহ ছিল। এবং, মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত তবলিঘি জামাতের কনক্লেভ যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা-সংক্রমণের অন্যতম প্রধান ভরকেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে - নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই রিপোর্ট দিল্লীর জমায়েতের এক সপ্তাহ আগেকার।
অতএব, এই জমায়েত যে তবলিঘি জামাতের তরফে চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা - এ নিয়ে সংশয় না রাখাই ভালো। যাঁরা তবলিঘি জামাতের হয়ে আহারে-বাছাদের-তো-কেউ-মানা-করেনি-জানতে -পারবে-কোত্থেকে এসব ভাটের সাফাই গাইছেন, তাঁরা চুপ করুন, প্লীজ। তেরো তারিখ নাকি জমায়েত শেষ। তারপরেও ওখানে লোকজন রয়ে গেলেন কেন? এরপরেও অন্তত পাঁচ-ছদিন আন্তর্জাতিক উড়ান চালু ছিল - বিদেশী অভ্যাগতরা আটকে পড়েছিলেন, এই যুক্তি খাটে কি?? এরপরেও আট-নদিন বাস-ট্রেন চলেছে - লকডাউনের জন্য লোকজন বাড়ি ফিরতে পারেননি, এই কথা মানায় কি?? বিশ্বজুড়ে করোনার আতঙ্ক গভীর হচ্ছে - বিশ্বব্যাপী এত বড় সংগঠন চালান, আর আপনারা এটুকু জানতে পারেননি??
দ্বিতীয়ত, আপনাদের জমায়েতের তারিখটা এক্স্যাক্টলি কী ছিল? যত বেশী সূত্র ধরে খবরটা বুঝতে চাইছি, ততোই কনফিউশন বাড়ছে। আগে দেখছিলাম, দশ থেকে তেরো, কোথাও দেখছি এখন তেরো থেকে ষোলো - কোথাও আবার দশ থেকে ষোল - একজায়গায় পড়লাম মার্চের আট থেকে একুশ - কেউ কেউ বলছেন, মার্চের শুরু থেকে লাগাতার। শোরগোল এফআইআর ইত্যাদির পরে তবলিঘি জামাতের আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, উনিশে মার্চ যখন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন বাইশে মার্চের জনতা কার্ফ্যুর কথা, তখনই তাঁরা উদ্যোগ নেন জমায়েত ফাঁকা করার। কিন্তু, দিল্লী সরকার তো তার আগেই একসাথে বেশী লোক জমা হওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন - নির্দেশিকা এসেছিল ষোলই মার্চ - আপনাদের কানে আসে নি? আর, এত বড় আন্তর্জাতিক ধর্মসম্মেলন - আপনারা ঠিক কত দিন ধরে অনুষ্ঠান চালাবেন, স্পষ্ট করে জানাবেন না??
পাশাপাশি, এ নিয়েও সংশয় রাখবেন না, প্লীজ - ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই নিয়ম - মাঝেমধ্যে দুচারটে ব্যক্তিক্রম যদি চোখে পড়ে, মনে রাখবেন, সেগুলোকে ওই নিয়মের প্রমাণ হিসেবেই দেখা উচিত। অতএব, তবলিঘি জামাত বা খালসার হোলা মহল্লা - একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
এবং, এও মনে রাখা ভালো, তবলিঘি জামাতের অনুষ্ঠান শেষ হয় তেরো তারিখ (যদি সত্যি হয়ে থাকে) - আর মার্চের আঠারো তারিখেও যোগি আদিত্যনাথ জানান, রামনবমীর মেলা হবেই - দর্শনার্থীদের রক্ষা করার জন্যে থাকবেন স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র। এমনকি, লকডাউনের মধ্যেই, সবরকম নিয়ম ভেঙে, শতাধিক সাধুসন্ত-আমলা নিয়ে রামলালার বাসস্থান বদল করালেন যোগি আদিত্যনাথ - পঁচিশে মার্চ। দেশজুড়ে হইহই করে গোমূত্র পার্টির আয়োজন - অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার উদ্যোগে - যাতে সোশ্যাল/ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর বালাই ছিল না সেভাবে - অবশ্য তার প্রয়োজনও ছিল না - কেননা, গোমূত্র তো করোনা-প্রতিরোধের বিকল্প মডেল -সে আয়োজনও তবলিঘি জামাতের অনুষ্ঠানের পরে।
সুতরাং, সংগঠিত ধর্ম, ধর্মীয় সংগঠন এবং ধর্মকে ব্যবহার করতে চান যাঁরা - সে যে ধর্মেরই হোক না কেন - কারো কাছ থেকে দায়িত্বজ্ঞান বা সামাজিক দায়বোধের আশা না করাই ভালো।
পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই করোনার বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে ধর্মীয় সমাবেশের হাত ধরে - যেমন ধরুন, দক্ষিণ কোরিয়ার সেই মহিলা - সেখানকার চিকিৎসক-বিজ্ঞানীদের কাছে কেস নম্বর থার্টি ওয়ান - একাই সংক্রমণের বড়ো চেইন রিয়্যাকশন শুরু করেছিলেন - চার্চে গিয়ে একধাক্কায় সাঁইত্রিশ জনেরও বেশী মানুষকে করোনা পজিটিভ করেছিলেন - তাঁদের থেকে আবার আরো অনেকে। কাজেই, সংগঠিত ধর্মাচরণ সংক্রমণের সহায় - অন্তত এই পরিস্থিতিতে - এবং, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই এই বিপদের বিরুদ্ধে সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ করে না - ধর্মাচ্ছন্ন এই দেশে তো একেবারেই না।
ঠিক একারণেই, দেশবাসীকে করোনার হাত থেকে বাঁচানোর উদ্দেশে তিরুপতি মন্দিরে যখন আয়োজন হয় ধন্বন্তরি মহাযজ্ঞের - উনিশে মার্চ (যেদিন ঘটনাচক্রে যোগি আদিত্যনাথ রামনবমীর মেলা বাতিল বলে ঘোষণা করলেন) থেকে তিনদিন - এবং প্রত্যেকদিন হাজারে হাজারে দর্শনার্থীর ভিড় জমল মন্দিরে - মন্দির কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখে আলাদা করে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই, তাই না!!! করোনা আতঙ্কে শিরডির মন্দির বন্ধ করে দেওয়ার আগের মুহূর্তে - মার্চের সতের তারিখ - মন্দিরস্থল দর্শনার্থীদের ভিড়ে উপচে পড়ে। ধর্মীয় উপাসনাস্থলের কর্তৃপক্ষ বা তাঁদের আকুল ভক্তকুল - ক্যালাসনেস আর কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় কারা এগিয়ে, সে বিচার প্রায়শই দুরূহ।
অবশ্য, আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, প্রশাসন কী করছিল এই সময় - মানে, প্রশাসনের নাকের ডগাতেই তো ঘটেছে এইসব ঘটনা - তাই না!! আঃ, বড্ডো সরল মানুষ আপনি। এদেশে ধর্মের ব্যাপারে প্রশাসন আবার কী করবে!!!!
জাস্ট লেখার খাতিরেই বলে রাখা যাক, দিল্লীর ঘটনায় দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তবলিঘি জামাতের তরফে হলেও - অপদার্থতার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না - বাকি পরিবেশ-পরিস্থিতি-বাস্তবতা তো আমাদের জানা-ই আছে, তাই না?? একই কথা বলা যেতে পারে, আনন্দপুর সাহিবের হোলি মহল্লার ক্ষেত্রে বা তিরুপতির জমায়েত বা সাঁইবাবার মন্দিরের ভিড়ের ঘটনায় - উদাহরণ বাড়িয়ে যাওয়া যায় - কিন্তু, যা বোঝাতে চাইছি, বোঝানো গিয়েছে, আশা করি।
অতএব, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ক্ষেত্রে, দেখলেনই তো, চমৎকার সর্বধর্মমিলনের সুরটুকু দিব্যি অক্ষুণ্ণ আছে - ধনীতম হিন্দু মন্দির কর্তৃপক্ষ, খালসার বৃহত্তম মেলা কিম্বা মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সংগঠন - দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ক্ষেত্রে হাম কিসিসে কম নহি।
তবে যে বাকি সব বাদ দিয়ে শুধু একথাই বারবার শুনছেন, যে, "ওরা" এরকমই - দেশে থেকে দেশের নিয়ম মানবে না - দেশের খেয়ে দেশের শত্রু - দেশের অসুখ-বিসুখ বিপদ-আপদের কারণ একমাত্র "ওরাই"?? কেন??
যাঃ!! এটুকুও বোঝেন না!!! দাদা কি বিদেশ থেকে ফিরলেন নাকি? মোদিজীর ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ায় সবে পা রাখলেন?? আপনাকে তো দাদা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হচ্ছে!!!!
আরো বিশদে পড়তে চাইলে -
চমৎকার লেখা, শুধু একটু কারেকশন
On Thursday (12 March) the Delhi government had announced closure of all schools and cinema halls till March 31. The next day (13 March), the government barred all formal gatherings of over 200 people,
খুব ভালো লাগল। খুবই দরকারি লেখা। আমার মনে হয় তবিলিঘি-র দার্শনিক অবস্থান সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বক্তব্য রাখার খুবই প্রয়োজন, বিশেষ করে বামপন্থী এথিইস্ট দার্শনিক জায়গা থেকে। শুধু তবিলিঘি কেন, হিন্দু ক্রিশ্চান সমস্ত ধর্মের সংগঠনের ভূমিকা সমালোচনা না করার কোন মানেই হয় না।
খানিকটা অন্য প্রসঙ্গে - যদি কোন কঠিন সময়ে এই সব ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে বামপন্থীদের একসঙ্গে কাজ করতে হয় তাও সমালোচনার জায়গা খোলা রাখতেই হবে।
জিলবেয়ার অ্যাশকার-এর একটা ইন্টারভিউ থেকে একটা কোট থাকুক এখানে। পুরো ইন্টারভিউ এর লিংকটাও নিচে রইল। "In this part of the world as in any other, when Marxists must enter alliances with forces of in many ways opposed ideological and programmatic orientations, the five golden rules formulated in 1905 by the Russian revolutionary Alexander Parvus remain essential: “1) Do not merge organisations. March separately but strike together. 2) Do not abandon our own political demands. 3) Do not conceal divergences of interest. 4) Watch our ally as we would watch an enemy. 5) Concern ourselves more with using the situation created by the struggle than with keeping an ally.”"
https://jacobinmag.com/2019/04/marx-prophet-proletariat-muslim-fundemantalism-islam-socialism