এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • খাটা পায়খানা

    প্রতিভা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৪ মে ২০২০ | ৩৫৮৭ বার পঠিত
  • লক ডাউন দ্বিতীয় ফেজ শুরু হবার একদিন আগের ঘটনা। বাড়ির সামনের রাস্তাটা মসৃণ গড়িয়ে যেখানে বড় রাস্তায় মিশেছে সেখানে বেশ লোক জড়ো হয়ে আছে,কথাবার্তা ভেসে আসছে দেখে রঙ্কিনাথ রেলিংয়ে পেট রেখে ঝুঁকে পড়ল। কিন্তু গাছপালার ফাঁকে কতোগুলো লোকের আবছা শরীরের রেখা, ডেঁয়ো পিঁপড়ের মতো ফুলো পশ্চাদ্দেশ ছাড়া আর কিছু নজরে এলোনা।

    লাল চকচকে ফুলো ফুলো গালের ওপর রোদ পিছলিয়ে রাস্তা দিয়ে লোকাল কাউন্সিলরের ডান হাত যাচ্ছিল। তাকে ডেকেই জিজ্ঞাসা করা গেল,

    -ও কমলবাবু, বলি হয়েছেটা কী ?

    কমল বাবু ঢিমে স্কুটার একেবারে থামিয়ে আগে বিল্ডিংটা জরিপ করল। দোতলা না তিনতলা,কোথা থেকে প্রশ্নটা আসছে। তারপর রঙ্কিনাথের চোখে চোখ মিলতেই বলল।

    অ আপনি ! হাইড্রেন্টে পরিষ্কার করতে নেমে নাকি আর ওঠেনি। যাই দেখি কী হাল ।

    কজন ছিল,কখন নেমেছিল,মিউনিসিপ্যালিটির ধাঙর কিনা,এটা এমার্জেন্সি সার্ভিসের এক্তিয়ারে পড়ে কিনা, এতোসব জিজ্ঞাসা করার জন্য গলা খুসখুস করলেও রঙ্কিনাথ মোটে চান্স পেল না। তার আগেই স্কুটারে স্টার্ট দিয়ে কমলের প্রস্থান।

    এই হাইড্রেন্টের নোংরা জলে মিথেন গ্যাস শুঁকে ডুবে মরা খুব অনাছিষ্টি কান্ড। নোংরামির একশেষ। কষ্টও কেমন ! এখন সব দরদে ফেটে পড়ছে আটকে পড়া শ্রমিকের জন্য, সারাক্ষণ এরা কতশত কঠিন কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, কেউ তো পাত্তাই দেয় না। বরং বাড়িতে মিস্ত্রী বা যোগাড়ে এলে চুপিচুপি এ ওর কানে বলে দেয়, সাবধান, এরা কিন্তু ডেঞ্জারাস। চোর ডাকাত সব পাবে এদের মধ্যে।

    ভাবতে ভাবতেই তিলোয়ার কথা মনে পড়ে গেল রঙ্কির। রোগা কালো মাঝবয়েসি তিলোয়া যাকে মায়ের কড়া শাসনে পিসি বলে ডাকতো সে। তিলোয়া আর তাদের খাটা পায়খানা।

    আসলে রঙ্কিনাথের বাড়িতে খাটা পায়খানা ছিল। দেশের বাড়িতে। তাও আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। রান্নাঘরে পাশের রাস্তা দিয়ে দুশ গজ গিয়ে কাঠের সিঁড়িতে ছ’ ধাপ উঠে একদিকে খোলে এইরকম কাঠের ফ্রেম দেওয়া টিনের দরজা, রঙ্কির এখনো পরিষ্কার মনে আছে।

    আর থাকবে নাইই বা কেন, পাঁচ ছ' বছর বয়সে তার সে কী আমাশার রোগ। বেশির ভাগ সময় ঐ চৌকো টিনের লম্বাটে খোপটায় কাটাতে হতো তাকে। হাতের জল শুকোতে না শুকোতে পেটে মোচড় মারতো ,আবার দে দৌড়। ঠাকুমা বলত,

    -এই পোলাডারে বাঁচাইতে পারা যাইবে না।

    ঠাকুমা চ আর য-এ জিভ দিয়ে ওপরের পাটির দাঁতের গোড়া ছুঁতো। ফলে ও দুটোর উচ্চারণ যেন একটু ধেবড়ে যেত বেশি। এগুলো অবশ্য রঙ্কি এখন ভেবে ভেবে বার করেছে। রীতিমতো প্র্যাকটিস ক’রে, ঠাকুমার মতো উচ্চারণ হচ্ছে কী না ধরে ধরে দেখে।

    ভাবা ছাড়া উপায়ই বা কী, রঙ্কিনাথ যদি বৌ বা ছেলেপুলেদের বলে তার বাড়িতে খাটা পায়খানা ছিল,তাহলে তারা এমন ভাবে তাকাবে যেন সেই পায়খানার টিন থেকে এখনও গন্ধ উঠে আসছে ,বা রঙ্কিনাথ হেগে ছোঁচেনি। তার চেয়ে এই ভালো বাবা। এই বসে বসে ভাবা।

    লক ডাউনে ভাবারও দেদার সময়। তাই ছোটখাটো তিলোয়া, তার কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে আঁচল মলিন শাড়ির ঘোমটা মাথায় দিয়ে বহুক্ষণ রঙ্কির সঙ্গে সঙ্গে রইল। ভালোই হল, এই সুযোগে ছোটবেলার অনেক টুকটাক কথা ঝড়ে আম পড়ার মতোই চড়বড় করে লাফিয়ে পড়তে লাগলো রঙ্কিনাথের মনের উঠোনে।

    সেই পায়খানার গর্তের দুপাশে দুটো পায়ের পাতা রাখবার ব্যবস্থা করা ছিল। দুটো ইঁটের মতো স্ট্রাকচার। প্রায় পাঁচ ছ’ ফুট নীচে চৌকো মুড়ির টিন। ঝোলা গুড়েরও হতে পারে। তার আদ্দেকটা হলুদ তরলে ভর্তি। শৌচকর্ম করবার আলাদা জায়গা ছিল না কিনা, তাই রঙ্কির বাবা কাকা সহ চোদ্দ গুষ্টি ঐ টিনের ওপরেই ছুঁচতো। ফলে যা হবার তাই হতো। বড়সড় নাদি ফেললে ছপাত শব্দের সঙ্গে কখনো সেই হলুদ তরল শিশু রঙ্কিনাথের পোঁদে ছিটকে এসে লাগতো। সেদিন সেদিন রঙ্কি বদনা হাতে ভ্যাঁ ভ্যাঁ কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসত।

    ঠাম্মা গোওওও...

    কান্দস ক্যান ,ও মাণিক আমার, কান্দো ক্যান !

    ঠাকুমার শত প্রশ্নের উত্তরেও রঙ্কি রা কাড়তো না। কারণ সে ভালো করেই জানতো বলে দিলে বুড়ি তাকে ঘেঁটি ধরে কুয়োতলায় নিয়ে গিয়ে ল্যাংটো করে স্নান করাবে। যেখানে হাগার জল লেগেছে বলে রঙ্কি দেখাবে সেইখানে ধুঁধুলের ছোবড়া দিয়ে এমন রগড়াবে, যেন ছাল উঠে যায়। কী দরকার বাবা। সত্যবাদী যুধিষ্ঠির সেজে তো লাভ নেই। আকুল কান্না দিয়েই নাহয় ঢাকা থাক মনের ব্যাকুল ভাব।

    আর একদিন মারাত্মক এক কান্ড হলো। যথারীতি রঙ্কির পেট ব্যথা চাগাড় দিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে টিনের দরজা বন্ধ করেছে, কিন্তু এমন পেট মোচড়ানো যে শেকল তুলে দিতে পারেনি। কিন্তু আমাশার যেমন হয়, মোচড়াবে ,কিন্তু একবারে ক্লিয়ার হবেনা, রঙ্কি কোঁথ পেড়েই যাচ্ছে ,পেড়েই যাচ্ছে, পেট আর পরিষ্কার হয় না। শেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন এসে উপস্থিত হল,অমনি রঙ্কি গোল গোল চোখে দ্যাখে একজোড়া কালো হাত নিচের টিন কাত করে বড় গামলায় উবুড় করছে। ভয়ে রঙ্কি চিৎকার করতে যাবে। দ্যাখে ওপর দিকে মুখ করে হাসছে তিলোয়া,চুলে অব্দি হলুদ হলুদ কী সব,কিন্তু দাঁতগুলো সাদা ঝকঝকে।

    লে বাবু ,হামি তোহার মুনিয়াট দেখ লিয়া। পোঁদের ফুটোটা ভি। দেখিস হাতের উপর হাগিস না যেন।

    অপমানে লজ্জায় রঙ্কি আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে করতে নেমে এসেছিল পায়খানার টং থেকে। যদিও তিলোয়ার কাছ থেকে আসল কথা শুনে বাড়ির সবাই হেসে লুটোপুটি।

    তিলোয়া পিসির মুখ ছিল মারাত্মক আর চোখ সদাই ঢুলুঢুলু। মা বলতো গলা অব্দি নেশা বোঝাই না থাকলে এমন কাজ করা যায় না। সেদিন রঙ্কির দেখা বড় গামলাটা মাথায় করে বওয়া ! সামান্য ঘেন্নাপিত্তি থাকলে মানুষের অসাধ্য।

    হাঁ হাঁ, হামাদের মানুষ ভাবলে এমন বাত করতিস না, বুড়ি মায়ি। তুই বড় কঞ্জুস আছিস।

    তিলোয়া ঝগড়া করতো ঠাকুমার সঙ্গে। মাস মাইনের ওপর যখন ও যা চাইবে দিতে হবে। সে ও নেশা করবে, না শিবরাত্রির মেলা থেকে কাচের চুড়ি কিনবে সে ওর ব্যাপার। তুমি হিসেব রাখো। বাড়তি পয়সা পরের মাসের মাইনে থেকে কেটে নিও ব্যস। অতো কথা কিসের !

    এমনিতে কিন্তু রঙ্কি যখন মার্বেল গুনতো উঠোনে বসে তিলোয়া টুকটাক গল্পগাছা করতো দূরে বসে।

    -বোল তো বাবুয়া, তোর নাম কেন রঙ্কিনাথ?

    প্রশ্নের উত্তর তো মুখস্থ ছিল, সবাইকেই বলতে হতো। তাই রিনরিনে গলায় রঙ্কি বলতো,

    -রঙ্কিণী দেবীর কাছে মানত করে আমায় পেয়েছে, তাই।

    তিলোয়া মাথার কাপড় টেনে দুলে দুলে হাসতো,

    খোখাবাবু সব জানে, হাঁ সব জানে ! হামি তোর কী লাগে রে খোখা ? কী লাগে ?

    রঙ্কি বলতো,

    তুমি তো আমার পিসি। তিলোয়া পিসি।

    তিলোয়া মুখে পিসি শব্দটাকে নিয়ে অনেকক্ষণ নাড়াচাড়া করতো। পিসি মানে কী জানতে চাইতো। রঙ্কি বাবার বোন বললেও ব্যাপারটা আরো খোলসা করতে চাইতো,বার বার নিজেকেই শুনিয়ে শুনিয়ে বলতো,

    হামি শম্ভুদাদার বোন লাগি। তোর পিসি লাগি।

    তারপর মোক্ষম প্রশ্নটি করে বসতো,

    তাইলে তোর ঠাকুমা হামাকে পয়সা দিতে কঞ্জুসি করে কিঁউ? যা বাবুয়া পুছকে আনা। আপনা বিটিয়ার সাথে ইতনা কঞ্জুসি কিঁউ।

    রঙ্কি জানতো ঠাকুমা এই প্রশ্নের উত্তর দেবে না, বরং কান মুলে দিতে পারে তিলোয়ার সঙ্গে বসে এতোক্ষণ গল্প করার জন্য, তাই সে বোকা বোকা হাসতো, তর্জনী আর বুড়ো আঙুলে একটা মার্বেল গড়িয়ে দিত তিলোয়ার দিকে।
    তিলোয়া শশব্যস্তে সরে বসতো,
    বাবুয়া, ছুনা মৎ। হামলোগ মেথর হ্যায় না।

    মেথর তো কী, এইতো বেশ স্নান সেরে এসে বসেছে তিলোয়াপিসি, কপালের কাঁচপোকার ছোট টিপ, জংলা ছাপ পরিষ্কার শাড়ি, হাতের ভেতর খৈনি ডলছে আর দাঁতের পেছনে রাখছে। কনুই অব্দি হাতে কালো কালো ছোপ ছোপ শুধু, না হলে পাড়ার আর পাঁচজন খেটে খাওয়া কামলা কামিনের মতোই তো।

    এই তিলোয়াপিসির সঙ্গে একদিন সত্যি সত্যি বিশাল টক্কর লাগলো ঠাকুমার। ঠাকুমার হিসেব পাক্কা, তিলোয়া গতমাসে ত্রিশ টাকা বেশি নিয়েছে, নেশায় বেভুল তিলোয়া বলছে, বিশ রুপাইয়াসে এক পয়সা জাদা নেই লিয়া।

    গোলমালে ছোটকাকা পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে আসার আগেই তিলোয়া উচ্চারণ করে ফেলল সেইই চূড়ান্ত কথা,

    বুড়হি মায়ি, কাল সুবামে যব নিন্দসে উঠবি, দেখবি এক টিন গু ঢেলে রেখে গেছি তোর দরজার সামনে।

    তার এই বিকট হুমকি শুনে ঠাকুমা, ছোটকাকা, রঙ্কিনাথ, সবাই থ' মেরে গেছিল মনে আছে।
    অসম্ভব রাগে অপমানে জ্বলতে জ্বলতে ঠাকুমা শুধু বলেছিল,

    -তিলোয়া, তুই প্রমাণ কইরা দিলি রাস্তার কুকুররে বেশি লাই দিতে নাই।

    তিলোয়া আরো জ্বলে উঠল এ কথায়।

    হাঁ হাঁ দিতে নাই, দিতে নাই। মত দো। কুত্তা হ্যায় না হম।

    এবার হঠাৎ রঙ্কিনাথের দিকে ঝটাকসে ঘুরে গেল সে,
    এ বাবুয়া, কান খুলকে শুন লো, ফিরসে যদি পিসি বলবি তো…

    রাগের মাথায় কী জানি কী বলে বসতো তিলোয়া, ছোটকাকা তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে তার পুরো মাইনেটাই মাটিতে নামিয়ে রাখল,

    যা তিলোয়া, আর চেঁচামেচি করিস না। এই রইল তোর টাকা। কিছুই কাটিনি দ্যাখ।

    তিলোয়া ছোঁ মেরে টাকা তুলে আঁচলে গিঁট দিল, তারপর জ্বলন্ত চোখ তুলে শিশু রঙ্কির দিকে তাকিয়ে আবার হুঁশিয়ারি দিল,

    ফির যদি বলবি তো। হাঁ…

    গেট অব্দি সে হেঁটে গেল টালমাটাল পায়ে। ঠাকুমার আঁচলের পেছন থেকে উঁকি মেরে রঙ্কি ভেবেই পেল না সবাইকে ছেড়ে তার মতো ঐ টুকুনি একটা পুঁটকের ওপর তিলোয়াপিসির এতো রাগ কেন !

    হঠাৎ রঙ্কিনাথের খেয়াল হল, সে অনেকক্ষণ রেলিং চেপে পেটের ওপর ঝুঁকে আছে। সে সশব্দে একটি উদগার তুলল, তারপর একা একাই বলল,

    রাগ নয়, ওটা ছিল অভিমান। আমার ওপর, আমাদের ওপর অভিমান। একটা শিশুর সামনে অপমানিত হবার লজ্জা। যার কাছে নিজেকে বড় দেখিয়ে আত্মপ্রসাদ পেতো মেথরাণী।

    বলেই পেছন ফিরে রঙ্কি দেখে ভ্রু কুঁচকে বৌ দাঁড়িয়ে ঠিক তার পেছনটিতে।

    তুমি অতো ঝুঁকে পড়ে করছিলেটা কী ! কার অভিমান তোমার ওপর ? তোমার ওপর আবার কেউ অভিমান করে নাকি? কী অনাছিস্টি কান্ড দ্যাখো !
    সেই কখন থেকে বলছি লক ডাউন বাড়িয়ে দিল, আমার দাঁতের ডাক্তারের কী হবে, আর বাবু রাস্তার ওপরে ঝুঁকে পড়ে অভিমান দেখাচ্ছেন। উ:, এর থেকে আমি মরে গেলে ভালো হত গো।

    এই শুরু হল। রঙ্কি রাস্তার ধারে চেঁচামেচি করবে না বলে সুড়ুত করে ঘরে ঢুকে পড়ল। ঢুকতে ঢুকতে নিশ্বাসের আড়ালে সন্তর্পণে উচ্চারণ করল,

    শালা, জীবন নয় তো খাটা পায়খানা !


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ২৪ মে ২০২০ | ৩৫৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কুশান | 2401:4900:3144:30a7:714b:998c:52f9:***:*** | ২৫ মে ২০২০ ১৯:১০93658
  • খুব অল্প জায়গায় অনেকখানি পরিসর ধরানো। স্পর্শ করার মতো একটি সার্থক ছোটগল্প।

    লিখে যান প্রতিভাদি।
  • বিপ্লব রহমান | ২৫ মে ২০২০ ২০:৪৪93663
  • সাতের দশকে  ধুসর শৈশবে সিরাজগঞ্জে নানু বাড়িতে অবিকল ওই রকম খাটা পায়খানা ছিল।  রংকির মতো বয়সে ওই টিনের ছাপড়ায় যেতে ভয় পেতাম, ফাঁক গলে মলের টিনের  ওপরে না পড়ে যাই! শেষে মা পাশের মামা বাড়ির পাকা টয়লেট দেখিয়ে দিয়েছিল।... 

    দিদি,  অচ্ছুৎ তিলোয়ার বিদ্রোহ ও অভিমান তোমার মতো এতো মানবিকভাবে আর কে বলতে পারেন? 

    আরও লেখ।              

  • শিবাংশু | ২৫ মে ২০২০ ২১:২৬93666
  • এই বিষয় নিয়ে লেখা বাংলায় দুজনকে মনে পড়ছে। উৎপল দত্ত এবং শীর্ষেন্দু। এক কথায় নিখুঁত লেখা ...
  • একলহমা | ২৬ মে ২০২০ ০১:০৫93680
  • অসাধারণ কথাটি বলা ছাড়া কি-ই বা বলব! 

    খাটা পায়খানা আর আনুসঙ্গিক বিভীষিকা ও অবিশ্বাস্য অবিচার - ভুক্তভোগীরা জানি।

  • রৌহিন | ২৬ মে ২০২০ ০১:৪৬93684
  • কী সব যে লেখো না দিদি - একেকটা পড়ি আর আধ ঘন্টা থম মেরে বসে থাকতে হয়। কাঁপতে থাকি
  • কল্লোল | 2409:4060:2188:783a:4932:9c21:6e31:***:*** | ২৬ মে ২০২০ ০৯:২৬93701
  • এ প্রসঙ্গে একটি কিস্যা বয়াঁ করি। সে বোধহয় ১৯৭৯ সাল। চারদিকে বেশ বিপ্লব-বিদ্রোহ ভাব। না, ব্যাঙ্গ নয়। সেই প্রথম বাড়ির কাজের মানুষেরা সংগঠন তৈরী করেছে। নকশাল ভবধারার আন্দোলন তুঙ্গে। জঙ্গী ট্রেড ইউনিয়ন মাথা চাড়া দিয়েছে কলে-কারখানায় মায় বাবুদের অপিসেও। ঘেরাও আন্দোলন নিয়ে খুব সোরগোল।
    সে সময় টালিগঞ্জে, মানে, টালিগঞ্জ রেলব্রিজের দক্ষিনে প্রচুর খাটা পায়খানা ছিলো। জমাদারেরা মাটির চারিতে (বিশাল গামলা) জমে থাকা পদার্থ একটা লম্বা টিনের পাত্রে ঢেলে মাথায় করে নিয়ে যেতেন। একটি জলের ট্যাংকি গাড়ির মতন ট্যাংকে তা জমা হতো ও ধাপায় যেতো খালাস হতে। তাতেই নাকি ধাপার ফুলকপির বদনামের শুরু।
    ওদিকে একদিন এক জমাদার টালিগঞ্জ ফাঁড়ির মোড় পার হচ্ছিলেন ভর্তি পাত্র মাথায় নিয়ে। হয়তো তিনি কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের কাছাকাছি চলে গেছিলেন। তাতে ট্রাফিক পুলিশটি গাল পেড়ে ডান্ডার ব্যবহার করেন। ফলতঃ কিছু সোনালী প্রায় তরল চলকে তার গায়ে। সে এক ক্যাডাভ্যারাস ব্যাপার। জমাদারের কপালে ভালোমত উত্তম-মধ্যম জোটে।
    এর প্রতিবাদে দুপুর নাগাদ জমাদারেরা তাঁদের মাথার বোঝা ছড়িয়ে দিলেন সারা টালিগঞ্জ ফাঁড়ির মোড় জুড়ে। প্রায় দুই বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সেই পারমানবিক সুবাস ছেয়ে গেলো। টালিগঞ্জ ফাঁড়ির ওসি, জমাদারদের হাতে পায়ে। কিন্তু, কামান থেকে বেরিয়ে যাওয়া গোলা কি আর ফেরৎ আসে!! শেষ পর্যন্ত দমকল। আশেপাশের সব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হলো। জল দেগে সেসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ সরাতে গিয়ে কোথায় কোথায় তেজস্ক্রিয় কণা ছিটকে যাবে তার স্থিরতা নেই। পাক্কা এক সপ্তাহ লেগেছিলো সেই তেজস্ক্রিয় সুবাস দূর হতে।
  • বিপ্লব রহমান | ২৬ মে ২০২০ ১০:১৯93705
  • শাবাশ জমাদার!  এই রকম বিদ্রোহ আরও হোক    

  • তন্বী হালদার | 47.15.***.*** | ২৬ মে ২০২০ ১১:২৩93711
  • অনেক দিন পর এত ভালো গল্প পড়লাম দিদি

  • তন্বী হালদার | 47.15.***.*** | ২৬ মে ২০২০ ১১:২৩93712
  • অনেক দিন পর এত ভালো গল্প পড়লাম দিদি

  • | ২৬ মে ২০২০ ১৭:১১93723
  • খুব ভালো গল্প। খুবই ভালো।

    কল্লোলদার কিসসাটা মারাত্মক! বাপরে!

    তবে ইসে, লোকজন তো এখনো 'জমাদার' শব্দটাকে গালি হিসেবেই ব্যবহার করে। এই গুরুচন্ডা৯ সাইটেই আমাকে গত দুই বছরের মধ্যেই 'জমাদার" বলে গালি দিয়েছে বিপ্লবী পাবলিক। পরে অবশ্য অ্যাডমিনের কাছে পোস্ট ডিলিটের আবদার, ক্ষমা ফমা নাটক হয়েছে।
    কিন্তু আদতে গালি দেবার জন্য প্রথমেই 'জমাদার" শব্দটাই মনে এসেছিল এবং এই পেশাটি, হ্যাঁ পেশাবাচক শব্দটি একটি গালিই এই সত্যটা আজও জ্বলজ্বলিং।
  • কল্লোল | 2409:4060:400:85d7:fcc1:7df7:f811:***:*** | ২৬ মে ২০২০ ১৮:২১93725
  • হঠাৎ মনে এলো - জমাদার - গালাগালি হিসাবে বেশ দুর্লভ জাতের। এটি সম্ভবতঃ একটি নন-সেক্সিস্ট গালাগালির নমুনা।
  • | ২৬ মে ২০২০ ১৮:২৬93727
  • নন সেক্সিস্ট কিন্তু প্রচন্ড রেসিস্ট অ্যান্ড কাস্টিস্ট।
    কাজেই যট্টুকুনি পজিটিভ তার চেয়ে ঢের বেশী নেগেটিভ
  • কল্লোল | 2409:4060:400:85d7::991:***:*** | ২৬ মে ২০২০ ১৮:৫৬93729
  • একমত। গালাগালি সবসময়েই নেগেটিভ।
  • Du | 47.184.***.*** | ২৬ মে ২০২০ ২১:৫২93736
  • আর্টিক্ল ১৫ এও এরকম বিদ্রোহ দেখিয়েছে।

    গল্পটা অসাধারন আর খুব সত্যি। আমার ও ছোটবেলার ফুলপাতিয়াকে অবিকল মনে পড়লো। তার নাতনী এখন এমনি নানা রকম কাজ করে, শেষ বছরটায় সে আমার মামাকে দেখা শোনা করতো। উত্তরাধিকারে সহ্যের এই ক্ষমতা জন্যই কিনা কে জানে হাসিমুখে সবকিছু করার পর ও তার স্নেহ আর মজা করার অবসর থাকতো অসহায় শিশু হয়ে যাওয়া বৃদ্ধটির সাথে।
  • Somnath Roy | ২৬ মে ২০২০ ২১:৫৩93737
  • খুব ভালো লাগল!

  • সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar | 2401:4900:3146:15db:89a:fe8c:e5a:***:*** | ২৭ মে ২০২০ ০০:০৬93741
  • অসাধারণ এবং অচিরাচরিত একটি গল্প। গল্প নয় জীবন। নিপুণভাবে আঁক।    

  • শর্মিষ্ঠা দাস | 106.2.***.*** | ২৭ মে ২০২০ ০০:২৬93742
  • আপনার প্রতিটি গল্পের মতোই অসাধারণ মোচড়  !  আমাশার মোচড়ের চাইতেও বেশি শক্তিশালী । 

    শেষ বাক্যটি মোক্ষম  !

  • mahua | 165.225.***.*** | ২৭ মে ২০২০ ১৬:৩৫93773
  • ধাক্কা লাগল বুকে . বড়ো করুণ আর সুন্দর.
  • ujjwal sen | ২৮ মে ২০২০ ০০:৪৯93794
  • মহিলা জমাদার কে জমাদারনি বলা হয় না? কোনো এক সাহেব তাঁর জমাদারনি কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, তাকে আদর করে jemaddani বলে ডাকতেন, কোথাও পড়েছি ঠিক মনে করতে পারছি না। আমার ছোটবেলায় ওই পিসির মত এক জমাদারনি কে দেখেছি, তবে যতদূর মনে পড়ে রং মোটামুটি ফর্সা এবং নেশা একেবারেই করতো না, নামও মনে আছে , লালো। বরং উপার্জনের টাকায় ছেলেকে স্কুলে পড়াতো। আমাকে খুব ভালোবাসতো লালো পিসি। প্রতিভাদি কত পুরোনো কথা মনে পড়িয়ে দিলেন। ভালো থাকবেন।
  • Prativa Sarker | ২৮ মে ২০২০ ২০:৫৬93811
  • যাঁরা গল্পটা পড়লেন, মন্তব্য করলেন, নস্ট্যালজিক হলেন, সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। অনেক কৃতজ্ঞতা ! 

  • হাবিব মাসুম | 103.52.***.*** | ০৬ জুন ২০২০ ০৩:৩৮94035
  • দিদি, এতো ভালো একটা গল্পের জন্য এত্তোগুলো ভালোবাসা । পরেরটার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম ।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন