-বাংলা সিরিয়াল-
যে বিনোদন মাধ্যমের টাইমটেবিল অনুসারে কলকাতায় বেশিরভাগ বাড়ি খেতে বসে তাকে বলা হয় সিরিয়াল।
অন্যভাবে বলা যায় যে মাধ্যমের কাল্পনিক হাঁড়ির হাল অনুসারে কলকাতার বেশির ভাগ হাঁড়ির ফ্যান গালা হয় তাকে বলে হয় সিরিয়াল। সিরিয়ালের বৈশিষ্ট্যগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
গল্প
১ নায়ক- বড়লোকের ছেলে। বাথরুমেও যান উডল্যান্ড শোভিত হয়ে। বিররররররররাট বাড়ি। রেফারেন্স ফ্রেম হিসেবে প্রতিটা চ্যানেলের নিজস্ব একটা করে বাড়ি আছে। ভ্যামপ বড় জ্যেঠিকে বাড়ি ছেড়ে ফুটিয়ে দেওয়ার মত উদ্ধত। নাস্তিক। মায়ের মন রাখতে অঞ্জলি দেন।
২ নায়িকা- গরীবের মেয়ে। যেমন ভালো ক্যালকুলাস করেন তেমনি ভালো শুক্তনি রাঁধেন। বিররররররররররাট মন। নায়কের প্রেমিকার জন্য ফুলশয্যের খাট সাজিয়ে দিতে বাজারে যান ফুল কিনতে। তারপর বাড়ি থেকে বাজারের রাস্তার মাঝে্ পথগুলিয়ে স্মৃতি হারিয়ে ফ্যালেন। আস্তিক। জানেন রাধামাধব একদিন সব ঠিক করে দেবেন।
৩ খল (নায়ক)-সাধারণত নায়কের বড় পিসেমশাইয়ের ছেলে বা সৎ জামাইবাবু বা ভালোমানুষ বোনের খারাপ মানুষ শ্বশুর যে ভদ্রলোক ওই বড়লোকবাড়িতেই থাকেন। বৌদির রান্নায় বেশি নুন ঢেলে দেওয়া থেকে শুরু করে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়ার মত জিনিয়াস আইডিয়াগুলো এক্সিকিউট করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে ধরা পড়ে যান তারপর পায়ে ধরে ক্ষমা চান। কিন্তু উদারচিত্ত নায়িকা পুলিশে দিতে দেয়না। এরপর কয়েকদিন চুপচাপ থেকে আবার উক্ত কাজগুলো শুরু করেন।
খল (নায়িকা)- সাধারণত নায়কের বড় পিসেমশাইয়ের ছেলের বা আপন জামাইবাবুর বা ভালোমানুষ ভাইয়ের খারাপ মানুষ বউ বা নায়কের প্রাক্তন প্রেমিকা যিনি ওই বড়লোকবাড়িতেই থাকেন বা সকালে উঠেই দাঁত মাজতে মাজতে চলে আসেন। বৌদির রান্নায় বেশি নুন ঢেলে দেওয়া থেকে শুরু করে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়ার মত জিনিয়াস আইডিয়াগুলো যাদের মাথা থেকে বেরোয় কিন্তু স্ত্রৈণ স্বামীরা এক্সিকিউট করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে ধরা পড়ে যান তারপর এনাদের নির্দেশেই পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চান। হাপুশ কেঁদে স্বামীকে জেলের লপসি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচান। এরপর কয়েকদিন চুপচাপ থেকে আবার উক্ত কাজগুলো শুরু করেন।
বিবেক- সাধানরত বাড়ির নব্বুই পেরুনো পরম আস্তিক, অকারণে হাসনাবাদ বা বসিরহাটি টানে বাংলা বলা পেরেন্টস যুগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন বছর পঁয়তাল্লিশের শিশু বা সত্যিকারের শিশু। এনারা ভালো! শুধু ভালো!! একদম ষড়যন্ত্রের পর্দা পড়ে যাওয়ার পর শেষ কথাটা এনারা বলেন। পেরেন্টস যুগল কথামৃত শোনান, মানসিক ভারসাম্যহীন “পাকাপাকা” কথা বলে, কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বকুনি খান, আর বাচ্চা-টি “ও কে মা?” বা “ও কি গে মা? গে মানে কি মা?” জাতীয় প্রশ্ন করে সবাইকে বিচ্ছিরি অবস্থায় ফেলেন।
কমেডিয়ান- সিরিয়ালের যেই চরিত্র, সেটা যেই হোক, খলনায়ক আর নায়িকাকে লজ্জায় ফেলতে পারলেই তিনি কমেডিয়ান।
বাস্তব
১ নায়ক- সাধারণত ফিল্মে সুবিধে করতে না পারা মাস্কুলার, কম পপুলার, দুরন্ত দাড়ি নিয়ে উড়ন্ত গাড়ি চালানোয় এক্সপার্ট ওপার তিরিশের তরুণ।
২ নায়িকা- একেবারে আনকোরা। আগে ছাতুর বিজ্ঞাপনে অব্দি দেখা যায়নি। বছর তিরিশেকের গৃহবধু দেখতে লাগলেও একদিন জানা যায় সে মাধ্যমিক দেবে বলে ছুটি নিয়েছে। গল্পে তখন হয় সে মরে যায় বা হারিয়ে যায় বা তিনটে ডক্টরেট করবার পরেও সমাজকে উত্তর দেওয়ার জন্যে আরেকটা ডক্টরেট করতে বিলেত যায়।
৩ খল (নায়ক)-এনাদের হাতে কাজ সবচাইতে বেশি। টাইম ওয়াইস প্রাইম বদলে যায়।
৪খল (নায়িকা)-এনাদের হাতে কাজ সব চাইতে বেশি। টাইমওয়াইস প্রাইম বদলে যায়।
৫ বিবেক- এনাদের হাতে কাজ সবচাইতে বেশি। টাইমওয়াইস প্রাইম বদলে যায়।
দর্শক
ডাকের পরে মা লাগানো যায় এরকম সব্বাই। সক্কলে সক্কলে। এনারা চরিত্রদের আপনার লোক বলে ভাবেন ও ভালোবাসেন। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে, জামাকাপড় তুলে দিয়ে, হাতের কাজ সেরে পাত পেড়ে হয়ে যান চরিত্রদেরই একজন। তাদের লিভারে ক্যানসার হলে কাঁদেন, তাদের মেয়ের নাম কী হতে পারে জানিয়ে এসেমেস করেন, আর সদ্যযুবা এফবি সিক্ত বাবু বা খুকু এসব কী দেখছো বলে মক করলে জানান দেন “আমার তো আর বাইরে নেই তোমাদের মত”। আর দার্জিলিং গেলেও আগে জেনে নেন হোটেলের টিভিতে স্টার জলসা বা জি বাংলা আসে কিনা।
তবে একটা অদ্ভুত জিনিস শুধু আর শুধু মাত্র এনারাই পারেন। সেটা হলো অবাক হওয়া। এক জিনিস একই দিনে তিনচার বার দেখলে আপনার কান্না বা হাসি পেতে পারে, ভালো বা মন্দ লাগতে পারে, কিন্তু এনারা একই টুইস্ট বার বার দেখে অবাক হন! সকালে দুপুরে রাত্তিরে। সেম। এক। ডিট্টো। তাও অবাক হন!
টুইস্ট
‘ক’ আর ‘খ’ এর বিয়ে হলো । উড়ে এসে জুড়ে বসলো ‘গ’। ‘গ’ কে ‘ঘ’ ভালোবাসে কিন্তু তার পাইলস আছে তাই বলতে পারেনি মনের কথা। ‘ক’ আর ‘খ’ আলাদা হলো। ‘খ’ কে ‘ঘ’ আপন করে নিলো। ‘গ’ এর সাথে ‘চ’ এর বিয়ে হলো। ইদিকে ‘চ’ মনে মনে ‘ক’ কে ভালোবাসে কিন্তু ‘ক’ ‘ক্ষ’ কে মা বলে ডেকে তার মেয়ে ‘ঃ’ কে সিঁদুর পরিয়ে দিতে গিয়ে দেখলো ‘খ’ এর ও পাইলস হয়েছে। তার মন গলে গ্যালো। এমন সময় কুয়েত রির্টান ‘জ’ ফিরে এসে সব ঠিক করতে গিয়ে জানতে পারলো ‘শ’ আসলে ‘চ’ এর বাবা। এবার? মহাপর্ব।
মহাপর্বে মহানন্দে বেঁচে থাকুক বাহা-পাখি-ঝিলিক রা। রাশি রাশি বয়ে আনুক সাংসারিক লাবণ্য। আপনারও জুটুক লক্ষ্মীমন্ত আইপিএস বউমা বা বিলেত ফেরত সর্বগুণসম্পন্ন শুক্তো থেকে কাঁটা বাছতে না পারা জামাই। ভালো হোক মঙ্গল হোক সব্বার। জয় রাধামাধব।