এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • বেড়াল ও একটি পারিবারিক ডি এন এ চর্চা

    যশোধরা রায়চৌধুরী
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ১৪৫০ বার পঠিত


  • দুর্জনে বলে থাকে আমাদের পরিবারে মানুষের থেকে পশুদের বেশি কদর। আমরা নাকি মানুষের সুখ দু:খ মান অপমান কিছুই বুঝি না। পশুদেরটা বুঝি। অবশ্য এই দুর্জনরা সকলেই মানুষ। পশুদের বক্তব্য আমার কখনো শোনা হয়নি।
    পশু বলতে এখানে আমি কোন প্রতীকী অর্থ বোঝাচ্ছি না কিন্তু। বোঝাতে চাইছি দুপেয়ে ডানাওয়ালা এবং চারপেয়ে নানারকমের পশুপাখিকেই। তবে আমি লক্ষ্য করে দেখেছি আমাদের পরিবার মূলত বেড়াল-ঘেঁষা । কিছু কিছু ক্ষেত্রে কুকুরে প্রসারিত হয়েছে আমাদের পশুপ্রীতি। তবে বাঘ সিংহ আমরা কখনো পুষিনি, কাজেই তেমনটা দাবি করলে অত্যুক্তি হবে। আর পাখি। নানারকমের পাখি। তবে পাখিপোষার ব্যাপারটা আমাদের নেহাতই সমাজসেবায় আবদ্ধ। বহুদিন আগে ছাতে খাঁচা করে এক গাদা বদ্রিকা পুষে আমার মাকে খুব নাকাল হতে হয়েছিল। হাঁস পুষেও। সে গল্পগুলো পরে কোন এক সময়ে বলা যাবে। যাই হোক, তারপর থেকে আমাদের বাড়িতে জেনেরালি পাখি পোষা হয়নি, উদ্ধার করা হয়েছে এবং নানা সেবাযত্নের পর তাদের পুনরায় আকাশের বাসায় রিহ্যাবিলিটেট করা হয়েছে।

    সচরাচর জন্তুজানোয়ারের কথা উঠলে আমরা নিজেদের ঠিক রাখতে পারিনা। আমরা মানে আমি, আমার মেয়ে, আমার দিদি । আমার মা-ও পারতেন না। বিশেষ করে বেড়াল। যদি কেউ বেড়াল শব্দটাই মুখ দিয়ে একবার খসায়, আমরা আবেগে কাতর হয়ে পড়ি, উশখুশ করতে শুরু করে দিই । বাঘ সাপ বা বিছেও পশুপাখির মধ্যে পড়ে, সেগুলোকে আমরা অ্যানিমাল প্ল্যানেটের পর্দাতেই রাখতে পছন্দ করি বটে, কিন্তু বাঘসিংহকে দেখেছি তথাপি বেজায় বেদম কুটুকুটু সুইট লাগে... অন্তত জিরাফ বা জেব্রার থেকে ঢের ঢের বেশি তো লাগেই। ক্যাট ফ্যামিলির সঙ্গে আমার নিজের একাধিক সখ্য আছে। বাঘ বেড়াল খটাশ বনবেড়ালের চোখ আমার কাছে সৌন্দর্যের সেরা সংজ্ঞা। যে চোখ আলোর তারতম্যে আকার পালটায় তাকে কেয়াবাত বলা ছাড়া আর কী করব? সুন্দরী নারীর সঙ্গে বেড়ালের তুলনা নিয়ে মোক্ষম সব ব্যাপার আছে, সেটা জানার জন্য লেখার শেষ অব্দি অপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয় ।

    আমাদের বাড়ির লোকেদের পশুপ্রীতি বহু প্রজন্মের। আমার দিকে সেই জেনেটিক কোডিং এসেছে দু দিক থেকে। আমার মায়ের দিক এবং বাবার দিক । দুদিকের ডি এন এ-তেই নিশ্চয় কিছু পশুপ্রীতি অথবা বিল্লিপ্রীতির প্রোটিন ছিল। আমার মা এবং দিদি তো পাগল বটেই, আমার মায়ের পিশিমা জাঁদরেল অঙ্কবিদ এবং বরিশালের মারাত্মক স্বাধীনতাসংগ্রামী হলে কী হবে, সাংঘাতিক পশুপ্রীতি এবং অবিবাহের জন্য দূর দূর অব্দি প্রখ্যাতা ছিলেন। প্রচুর বেড়াল আর কুকুর পুষেছেন, বেড়াল বুকে নিয়ে ঘুমোতেন। হাঁপানির রোগী হয়েও। এবং হাঁপানি ও বেড়ালপ্রীতি নাকি তিনি পেয়েছিলেন তাঁর বাবার থেকে , অর্থাৎ আমার মায়ের ঠাকুর্দাদার থেকে ।

    আর বাবার দিকে আমার ওপরের শাখায় খুব একটা ডাটাবেস নেই। কিন্তু তলার দিকে আমি প্রত্যক্ষ করে চলেছি যেটা, সেটা হল আমার খুড়তুতো জ্যেঠতুতো ভাইবোনরা, এমনকি জ্যেঠিমাও (!), এবং আমার নিজের পিশিমা সকলেই বেড়াল পুষে চলেছেন পাগলের মত, সব সামাজিক অসুবিধে অগ্রাহ্য করে । এসব ক্যারেকটারদের কারুর কারুর সম্বন্ধে যথা সময়ে আলোকপাত করা হবে। তবে পশুপ্রীতির এই পারিবারিক অসম্ভব কী ভাবে সংঘটিত হল জানিনা। সচরাচর দেখা যায় স্বামী বেড়াল ভালবাসলে স্ত্রী একেবারে এককাট্টাভাবে বেড়াল অপছন্দ করবেন, স্ত্রী পাখি পুষলে পাখি হবে স্বামীর দু চক্ষের বিষ। কিন্তু আমাদের পরিবারে আমার বাবা মায়ের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি, আশ্চর্যভাবেই।

    তবে বেড়ালই এই লেখার প্রথম লক্ষ্য । কারণ এই বিষয়ে আমি নিজেকে এক্সপার্ট মনে করি। আমার জীবনের একটি বড় অংশের দু:খ-সুখ-ক্লেশ-অপমান এবং আনন্দ সবই ছিল বেড়ালকেন্দ্রিক। এ মুহূর্তে আমি বেড়াল পুষি না কিন্তু আমার পরিবারের অন্যান্যরা পোষে । বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে দু ধরণের লোক আছে। একদল বেড়াল ভালোবাসেন আর একদল বেড়ালকে ঘৃণা করেন। এই দু রকমের বাইরে আর কোন লোক নেই। আসলে বেড়াল এমন একটি প্রাণী যে বিপাশা বসু, তসলিমা নাসরিন এবং আমাদের বাতস্যায়নের কামসূত্রের মত অলঙ্ঘনীয় , অনুপেক্ষনীয়, এবং সাদা বাংলায় যাকে বলে ইররেজিস্টিবল । আপনার মধ্যে এক্সট্রিম ঘৃণা বা চূড়ান্ত প্রেম , এই দুইয়ের কোন একটার জন্ম দেবে। বাট ইউ ক্যানট ইগনোর ইট । বেড়াল সম্বন্ধে উদাসীন থাকতে আমি সত্যি এ যাবত কাউকে দেখিনি। বরঞ্চ সব প্রতিক্রিয়াই বেশ বাড়াবাড়ি লেগেছে। যেমন আমার কিছু কিছু বন্ধু আমাদের বাড়িতে এলে চেয়ারের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে থাকত, সোফার উপরে লাফাত, আরশোলা দেখলে আমি যা যা করে থাকি তারা বেড়াল দেখলে তাই তাই করত। সেই থেকে আমাদের বাড়ির সোফার স্প্রিং আলগা হয়ে গেছে।

    আজ্ঞে হ্যাঁ , আমরা বেড়াল পুষতাম। আমাদের ভবানীপুরের বাড়িকে লোকজন "বেড়ালের বাড়ি' হিসেবে জানত। এখনো খানিকটা জানে। আমাদের বাড়িতে এখন আর মানুষ থাকে না। বেড়াল থাকে। ছ সাতজন থাকে। গুনতিটা গুলিয়ে গেছে কারণ প্রতি সিজনে সংখ্যাটা বাড়ে । স্বাধীনা বেড়ালিনীরা প্রায়শই পাড়া বেড়িয়ে আসে, এবং ঘন ঘন বেড়ালসংখ্যা বেড়ে যায়। তবে তাদের কেউ কেউ মরেও যায় , বেড়াল মায়েদের আধুনিক জীবনের লাইফস্টাইলঘটিত অবহেলায়। ঐসব মায়ের দুগ্‌ধবঞ্চিত বাচ্চাদের দেখার জন্য আমুলস্প্রের কৌটো আর ড্রপার নিয়ে আমার মা তো এখন আর সশরীরে নেই। আমার বাস গৌহাটিতে আর আমার দিদির বাস শিকাগোতে। সে মাঝে মাঝে আসে গোটাদুই বৃহত স্যুটকেসে কিলো কিলো ক্যাটফুড নিয়ে। আমাদের বাড়ির মাইনে করা সিকিওরিটি ম্যান আছেন একজন, আনোয়ার হোসেন সাহেব। তিনি তাঁর মাইনের ভেতরের যে যে কাজ ধরা থাকে তার বাইরে গিয়ে বেড়ালদের ক্যাটফুড খাওয়ান, বাটিতে বাটিতে পানীয় জল ঢেলে দেন নিয়মিতভাবেই । মার্কিন ক্যাটফুডের দৌলতে আমার অবর্তমান মায়ের বর্তমান বেড়ালদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে নিশ্চিতভাবেই । স্টাডি করলে দেখা যাবে তাদের প্রজননক্ষমতাও নির্ঘাত বৃদ্ধি পেয়েছে।

    প্রথমেই আমাদের ক্রেডেনশিয়ালটা বলে রাখি। এক কালীন ৩৫ টি অব্দি বেড়াল এক বাড়ির এক ছাতের তলায় পোষার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য আমার/আমাদের হয়েছিল। আমাদের বেড়াল পোষাপুষির শুরু সেই ১৯৭৭ -৭৮ থেকে । মানে যবে থেকে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার তবে থেকে আমাদের বাড়িতে বেড়াল। প্রথমে সংখ্যাটা ভবহ কিছু ছিল না। তাই আমাদের খাদ্য ভাত ও মাছের কাঁটা থেকে তাদেরও খাওয়াদাওয়া ম্যানেজ হত। জনবিস্ফোরণ শুরু হল কিছুটা প্রাকৃতিক কারণে কিছুটা মানুষের আমাদের বাড়িকে "বেড়ালের বাড়ি' বলে চিহ্নিত করায়। সেই সময় থেকে নিয়মিত মধ্যরাতে বা শেষরাতে বাড়ির দোরগোড়ায় কে বা কারা প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে করে তিনটে পাঁচটা বেড়ালছানা রেখে দিয়ে চলে যেত। তারা ভোর রাত থেকে চিঁ চিঁ চীতকারে আমাদের নিদ্রাভঙ্গ করত । তাদের চীতকার সূক্ষ্ম কিন্তু মর্মভেদী, হাই ডেসিবেল না হলেও হাই ফ্রিকুয়েন্সি। আমরা দৌড়ে নিচে যেতাম আর পনেরো দিন থেকে এক মাস, বড় জোর দু মাস বয়সী পর্যন্ত মায়ের দুধখাওয়া নধর শিশুদের আবিষ্কার করতাম। পাড়ার কোন না কোন বাড়ির নিষ্ঠুর গৃহক?Ñ£রা মা ষষ্ঠীর জীবগুলোকে না মেরে পাড়ার দুষ্টু বাচ্চাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে আসতে বলতেন আর কি। অত:পর আমার মায়ের ন্যাতাকানি পেতে ঝুড়িতে তাদের ঠাঁই দেওয়া এবং ড্রপার দিয়ে আমূলস্প্রে খাওয়ানো শুরু হত। অধিকাংশ মাতৃদুগ্‌ধবঞ্চিতরাই অবশ্য খুব ক্ষীণজীবী হয়ে মাত্র কিছুদিন বেঁচে থাকত, তারপর অসুখ বিসুখে মারা যেত। যা থেকে প: ব: সরকারের স্বাস্থ্যদপ্তর-এর বিজ্ঞাপন না পড়েই আমরা জেনে গিয়েছিলাম যে মাতৃদুগে্‌ধ শুধু খাদ্যগুণই থাকে না, সেটি রোগ প্রতিষেধকও বটে।

    এছাড়াও আরও একভাবে বেড়ালের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছিল। আমার মা, আমার দিদি ও আমার একটা সিক্সথ সেন্স ডেভেলাপ করেছিল ইতিমধ্যে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমরা আবর্জনার স্তূপে, গাছের তলায় , পাঁচিলের উপরে, নর্দমার কাছে ফেলে দেওয়া ঐ দুগ্‌ধপোষ্য বেড়ালশিশুদের ঠিক দেখতে পেয়ে যেতাম। তাদের কেউ হয়ত ভিজে শীতে থরথর কাঁপছে, কেউ হয়ত আমের খোসা এবং ভাঙা ঝুড়ির তলায় লুকিয়ে আছে। আমরা ঠিক খুঁজে পেতাম। তাদের দেখতে বা শুনতে বা অনুভব করতে পেতাম। এবং আমাদের ব্যাগে তাদের ভরে বাড়ি নিয়ে আসতাম। এভাবে আমাদের অনেক সময়েই সিনেমা দেখতে বেরিয়ে না দেখে ফিরে আসতে হয়েছে, রবীন্দ্রনৃত্যনাট্য না দেখে ফিরে আসতে হয়েছে, বিয়েবাড়ি যাবার পথে শাড়ি নষ্ট হয়েছে এবং ফিরে এসে অন্য শাড়ি পরে আবার বিয়েবাড়ি যেতে হয়েছে। বেড়ালটিকে ধরে আনলেই তো আর হবে না, তাকে ডেটল জল দিয়ে পুঁছে আবার সেই ঝুড়ি, ন্যাতাকানি, ড্রপার, আমূলস্প্রে ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে প্রোসেসিং করতে হবে। তবে না।
    এইভাবে আমাদের বাড়িতে এককালীন বেড়ালের সংখ্যা ১০-১২ থেকে ম্যাক্সিমাম ৩৫ অব্দি রেঞ্জ করেছিল। এটা গোটা ২০ বছর চলে । আমি ও দিদি দুজনেই সংসারী হবার পর মায়ের পক্ষে আর এতজনের দেখভাল সম্ভব হয়না, তখন সংখ্যাটা কমিয়ে আনা হয়, এবং শেষত সেটা ৫-৬-এ নামে। এখন , যা বললাম, আবার বাড়ছে। শুধু ইদানীং বেড়ালদের খাদ্যাভ্যাস একেবারে আমূল পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের কৈশোর ও প্রথম যৌবনে বেড়ালদের খাদ্য ছিল মোটা আতপ চালের ভাত, চালটা রেশন থেকে ধরা ( সেটা আমিই ধরতাম)এবং আলাদা বৃহত পাত্রে তৈরি করা । আর মাছের ছাঁট সেদ্ধ। মাছের ছাঁট কিনতাম আমি বা দিদি, একটা পর্বে দিদি বিদেশ চলে যাবার পর শুধুই আমি। সে এক বিশাল ব্যাপার।
    সেই বেড়ালদের জন্য সপ্তাহের একদিন বাজারে গিয়ে মাছওয়ালার কাছ থেকে মাছের ছাঁট ( আঁশ এবং পিত্তির মত ফালতু জিনিশ বাদ দিয়ে আলাদা করে রাখা লাল টুকটুকে কানকো, তেল, প্যাটা, পটকা ইত্যাদি ইত্যাদি) কিনতাম। এইসব ছাঁটের দাম প্রচুর, এক প্যাকেট পাঁচ টাকা মিনিমাম। একটু বেশি পরিষ্কার, লাল এবং তাজা ছাঁট হলে দশ টাকা অব্দি যায়। তাও এটা আমি ২০০৭-০৮ –এর দাম বলছি। ১৯৮০র দশকে দু টাকায় এক প্যাকেট পাওয়া যেত । ছোট মাছ-কাটিয়েদের কাছে এক থাবা ছাঁট পেতাম এক টাকাতেও । হাতে অনেক খুচরো মজুদ রাখতে হত। যখন আমি সদ্য কলেজ পড়ুয়া তখন থেকে তো বেড়ালের মাছ কিনতে বাজারে যাওয়া আমার শুরু। এইজাতীয় বহুবর্ণী বড় বড় বাজারের সঙ্গে সেই আমার প্রথম পরিচয় এবং প্রেমের সূচনা।
    প্রথমে ছোট বাজার খিরোদ ঘোষে মাছের অপ্রতুলতা লক্ষ্য করে শেষমেশ আমরা কালিঘাট বাজার অব্দি যাওয়া শুরু করি। অথবা যদুবাবুর বাজার। দুটো বাজারই আমাদের বাড়ি থেকে কিঞ্চিত দূরে, কিন্তু ওয়ার্থ ইট। বিশাল বিশাল দু তিনটে মতস্য গলি বা মতস্য করিডোর আছে সেই সব বাজারে। সুপারমার্কেটেই শুধু বিষয় ভাগ করে গলি থাকে এ কথা ভুল। এই স্থানের গন্ধ এবং সদা সিক্ততা জায়গাটিকে সাধারণ্যের পক্ষে দুর্গম করেছে। অনেককেই কাপড় বাঁচিয়ে নাকে রুমাল দিয়ে এই সব গলিপথে যাতায়াত করতে দেখা যায়। এবং অজস্র ছোট বড় মাঝারি মাছ-ওয়ালা বসে সেখানে। আর বৃহ্‌ৎ বৃহ্‌ৎ বঁটি সহযোগে মাছ কাটার জন্য চার পাঁচজন স্পেশাল লোক আছে, যারা মাছ বিক্রি করে না, শুধু কেটেই তাদের ব্যবসা। অন্য মাছওয়ালাদের থেকে মাছ কিনে এনে থপাস করে থলিটি এই মাছ কাটিয়েদের সামনে ফেলে দিতে হয়, এবং কাটানোর রেট ঠিক হয় মাছের পরিমাণ এবং কাটার কারিকুরির উপরে। ট্যাংরা বা চিংড়ি কাটার দর কাতলা কাটার দরের চেয়ে বেশি হবে এটা যেমন একটা সত:সিদ্ধ ব্যাপার । মতস্যভোজী বাঙালির মেছোবাজারের এইসব রহস্য সকল বাঙালিরই জানা, পুনরুক্তি করার কিছু নেই।
    তবে আমার বলা এই জন্য যে যেটা সকলের জানা নেই, সেটা হচ্ছে যে বঙ্গ সমাজে ম্‌ৎস্যপ্রেমী যদিচ সকলেই, কিন্তু বেড়ালপ্রেমীও আমি একা ছিলাম না। সেই বাজারে আমার মত বেড়াল প্রেমী আরো গোটা তিনচার যেত। রবিবার রবিবারেই এদের যাওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি। যেহেতু সেদিন শুধু বেড়ালপ্রেমী মানুষ নয়, মনুষ্যপ্রেমী, থুড়ি, ম্‌ৎস্যপ্রেমী মানুষও মাছের বাজারটা করে বেশি। সব মিলিয়ে বেড়ালের জন্য মাছের কানকোর সাপ্লাই সেদিন খুব বেড়ে যায়, ডিম্যান্ডও ততোধিক থাকে ।
    একটা অদ্ভুত জুয়োখেলার মত পরিস্থিত তখন তৈরি হত। আমি হয়ত ঢুকলাম, ঠিক তার আগেই কাছিয়েকুছিয়ে মাছ কাটিয়েদের থেকে সব মাছের কানকো তুলে নিয়ে গেছেন অন্য এক বেড়ালপ্রেমী। তখন সেই বেড়ালপ্রেমী আমার অদৃশ্য শত্রু। পরদিন থেকে তাঁকে কীভাবে টপকে, বাইপাস করে, ফাঁকতাল বুঝে টকাস করে আমি ছাঁটগুলো তুলে নিতে পারি আগেই, সেই ব্যাপারে রীতিমত স্‌ট্‌র্‌যাটেজি খেলতে হত। কারণ তা নইলে, আমাকে তখন আরো আধঘন্টা আলু মুলো বাঁধাকপি ফুলকপি দর করে, বা মনুষ্যভক্ষণের জন্য মাছ টিপে টুপে দেখে , বেছেবুছে কিনেকেটে সময় কাটাতে হবে। আবার অতখানি ছাঁট জমতে সময় লাগবে। তারপর থেকে মান্থলি ব্যবস্থা করা হল। আগে থেকে বলা থাকত; একটি কি দুটি পেয়ারের ছেলে মাছের কাঁটা রেখে দিত। ও হরি, ও লক্ষণ, মাছের কাঁটা রাখবি কিন্তু আমার জন্য । আমি বাজারে ঢুকলেই "দিদি -' বলে তারা বিগলিত হাঁক পাড়ত। টপাটপ তার গুছিয়ে রাখা কানকোর প্যাকেট আমি ব্যাগে পুরে নিতাম। কোনদিন হয়ত রবিবার বাজার মিস হয়ে যেত, যেটা করলে আমারই সমূহ বিপদ ছিল। তবু তা হয়। সেটা করলে পরের দিন ছেলেটির অভিযোগ শুনতে হত। আগের দিন এলেন না দিদি, কত কাঁটা রেখেছিলাম আপনার জন্য , তিনজন চাইল, দিলাম না, সব ফেলে দিতে হল শেষটা । লস হয়ে গেল।
    বারোটা , সাড়ে বারোটা অব্দি এইসব বড় বড় বাজারে মাছের কাটাকাটি চলে । তারপর সবাই পাট গুটোয় । মাছ ঢুকে যায় বরফের গুঁড়োভরা বাস্কে। আর দাঁড়িপাল্লা , বাটখারা ও বঁটি ( বঁটির লোহার পাত আলাদা ও তলার কাঠের পায়া আলাদাভাবে) ধূয়া হয়ে যায় । কাজেই ঘড়ির কাঁটা, বর্ষাকালে আকাশ, এবং টিভিতে মহাভারতের টাইমিং দেখে ক্যালকুলেট করে রবিবার আমাদের বেরোতে হত। বাজারটি ফাঁকা চাই, মাছটি কাটা চাই, পরিমাণটি বেশি চাই।
    এ তো গেল মাছ কেনার গপ্প। এবার সেই মাছ বাড়ি এনে ধুয়ে সেদ্ধ করার পালা। ইতিমধ্যে রিকশাওয়ালা তার রিকশার পাদানি রক্তে ভেসে গেছে দেখে বিস্তর গাইঁগুঁই করবে। মাছের থলির জালের ভেতর দিয়ে ঐ কাটা মাছের রক্ত ঝরত চুঁইয়ে। সেটা আবার আমাকেই কলের জল দিয়ে ধুয়ে দিতে হয় প্রায়শ । আবার সেই মাছের থলিগুলো বাড়িতে রান্নাঘরে এনে ঢুকিয়ে দিলেই তো আর চলবে না। দরজা ভাল করে না বন্ধ করলে ত কাঁচা মাছের গন্ধে সমস্ত বেড়ালকুল গিয়ে থলিশুদ্ধ ছিঁড়ে খাবে। একেবারে ছেঁকে আক্রমণ করবে তাদের জান্তব উল্লাসে।
    এইসবের বাধা পেরিয়ে শেষমেশ রবিবার দুপুর নাগাদ তাজা তাজা মাছসেদ্ধ দিয়ে বেড়ালকুল ভাত খেত। অত:পর তাদের বাকি মাছ নানা আকারের বাক্স ও বাটিতে করে ফ্রিজে ভরা হত। আমাদের বাড়িতে একটা পুরনো ফ্রিজ চালু থাকতে থাকতেই নতুন ফ্রিজ কেনা হয়েছিল। পুরনো ফ্রিজ বাই ব্যাক করা হয়নি। ওটা হয়ে গেছিল বেড়ালের ফ্রিজ। মাছ সেদ্ধর বিকট গন্ধ যাতে আমাদের খাবারের গন্ধের উপরে চড়াও না হয়, তাই এই ব্যবস্থা। সেইসব প্রোসেসড মাছ আমাদের বরফের বাক্স থেকে শুরু করে পুরনো ফ্রিজের নিচের তাক অব্দি শোভা পেত।
    যারা বেড়াল পোষে তারা সকলেই বেড়ালের নামকরণের ব্যাপারে একেবারে তীব্রভাবে সংবেদন শীল। আমাদের প্রথমদিকে নামগুলো হত অতি সহজ সাধাসিধা। মিশি, কেলো, জেরি, পানু ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর ইনটি বিন্টি পাপা টিন্টি । যখন অস্বাভাবিক সংখ্যাবৃদ্ধি শুরু হল, তখন অ্যালফা, বিটা , গামা , ডেলটা ইত্যাদি রাখা শুরু হল । আমার মেয়ে দিদার বাড়ির অনেক বেড়ালের নামকরণ করেছে সিন্ডারেলা, স্নোয়ি ইত্যাদি ইত্যাদি। অতি সম্প্রতি একটি বহুপ্রজননশীল মহিলা বিড়ালের অটোমেটিক নামকরণ হয়েছে "মা' । তবে আমাদের এক বান্ধবী বলেছেন তাঁর বেড়ালযমজের নাম রাখা হয়েছে, নাইকি আর মাইকি । নাইকি সারাদিন ছেলের জুতোর ভেতরে বসে থাকে, বলা বাহুল্য জুতোটি নাইকি। আর মাইকি ভীষণ মাতৃভক্ত। নামকরণের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, বেড়ালের নামকরণ নিয়ে তাঁরা মোটামুটি একটা রিসার্চ করতে পারেন।
    বেড়াল পোষার ফলে আমাদের সবচেয়ে বেশি যেটা ভুগতে হয়েছে সেটা পাড়াপ্রতিবেশীর অভিযোগ। তাদের কারোর বাড়িতে কোন হুলো বেড়াল ঢুকে মাছ চুরি করলেই সশরীরে এসে তাঁরা "তোমাদের বেড়াল আমার রান্নাঘরে ঢুকেছিল' এমন অভিযোগ জানিয়ে যেতেন। আমরাও চেষ্টা করতাম প্রমাণ করার, ঐরকম কোন কান কাটা মুশকো হলুদ ছোপছোপ জঘন্য নোংরা বেড়াল আমাদের হতেই পারেনা। কস্মিনকালেও আমাদের পোষা বেড়ালরা ছোঁক ছোঁক করতে পাশের বাড়ি যায়না। কিন্তু আমরাও জানতাম আমাদের বেড়ালেরা অতকিছু ধোয়া তুলসীপাতা নয়। কাজেই ওসব ধোপে টিঁকত না। প্রায়শই শুনতাম কোন শিক্ষিত পাড়ায় এরকম অসংখ্য বেড়াল পোষার নিয়ম নেই এবং তাঁরা আর এরকম হলে কর্পোরেশনকে ডাকতে বাধ্য হবেন। ভাগ্যক্রমে আমাদের কর্পোরেশন এখনো তত তত্‌পর হয়ে ওঠেনি।

    বেশি সমস্যা হত যখন আমাদের বেড়ালগুলো বেশি কায়দা মারতে গিয়ে ওনাদের কারুর না কারুর বাড়ির কার্নিশে বেমক্কা লাফ মেরে গিয়ে পড়ত আর তারপর আর বেরোবার রাস্তা বের করতে পারত না। বেড়ালদের এই স্বভাবটা খুব আছে। প্রথমে কোন অদ্ভুত স্থানে লাফটাফ মেরে পৌঁছে যাওয়া, তারপর কাতর প্রার্থনা, আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করো। কখনো কখনো এইরকম অনুদ্ধার্য উদ্ভট স্থানে আটকে থাকা বেড়াল সারারাত কেঁদেছে। আমরা সারারাত ঘুমুতে পারিনি। পরদিন সে নিজেই ফিরে এসেছে। তবে একবার অগ্নিনির্বাপকদল এসে সিঁড়ি দিয়ে পাশের বাড়ির উটকো কার্নিশ থেকে একটা বেড়ালকে উদ্ধার করেছিল, পরেরদিন আনন্দবাজারে খবরও ছাপা হয়েছিল। এ বিষয়ে আমার কিছু লেখা শোভা পায় না কারণ আমার পূর্বেই এই বিষয়ের ওপরে আমাদের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যাওয়া একটি কাহিনি স্বকীয় সরস বর্ণনায় নবনীতা দেবসেন লিখেছেন। তিনি আর তাঁর দুই কন্যা কীভাবে ফায়ার ব্রিগেডের সাহায্যে তিনতলার ছাত থেকে বেড়াল উদ্ধার করেছিলেন। গল্পটি পড়ে নিলে সুধী পাঠক আমার পুনরুক্তির হাত থেকে মুক্তি পাবেন। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি আর এক প্রাত:স্মরণীয়া লেখিকা লীলা মজুমদার "বেড়ালের বই' অব্দি লিখে গেছেন। কাজেই আমার পক্ষে এই লাইনে নতুন কিছু করে দেখাবার আশা খুবই ক্ষীণ বলেই মনে করি।

    বেড়াল মানেই আসলে একগাদা ঝামেলা। জিনিশপত্র ভাঙাভাঙি, এটা ওটা ফেলা, জল ফেলে লেখা নষ্ট করা, এঁটো করে খাবার নষ্ট করা, ঘরদোর নোংরা করা, এসব তো আছেই। বেড়াল বাড়িতে থাকলে সারাদিন ধরে কোন একটা সময় আপনি খুঁজে পাবেন না যে সময়টায় কোন না কোন সমস্যা হচ্ছে না, সব শান্তিপূর্ণ আছে। একুমাত্র খুব ঘোর গ্রীষ্মের দুপুরে ছাড়া। ঐ সময় বেড়ালেরা গরমে একেবারে জেরবার হয়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, আর ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয় আশ্চর্য এক অনড় ঘুমে। এই ঘুম শেখার মত, এই ঘুম আমাদের যাবতীয় আর্ট অফ লিভিং-এর রীতিকায়দা, ইয়োগা ক্লাস, রিল্যাক্সেশন লেসন হ্যানোত্যানোর বাবা। ঐভাবে যদি মানুষ ঘুমোতে পারত তাহলে কোন ব্লাড প্রেশার কোন হার্টের রোগ তাকে ছুঁতে পারত না। কখনো শুনেছে বেড়ালের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ? আমিও শুনি নি , তবে আমার দিদি মার্কিন বেড়ালএর কিডনি সমস্যা হয়েছে। সেটা অবিশ্যি ওরকম ঘোঁত ঘোঁত করে খেলে যে কারুর হবে , ওদেশের বেড়ালগুলো যেরকম মোটা কোন স্বাভাবিক ভারতীয় বেড়ালকে দেখিনি।

    যতক্ষণ বেড়ালেরা জেগে থাকে ততক্ষণ হুড়ুদ্দুম তুলকালাম করে। একবার আমাদের এক বেড়াল এক ফুলদানি উলটে টিভির উপরে জল ফেলে পুরো টিভি রঙ্গিন থেকে সাদাকালো করে দিয়েছিল। ছবি ফুটেছিল, একটি ছোট্ট চৌকো মাপে, পর্দার মাঝামাঝি বরাবর। তারপর ফুস করে সে ছবি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। কোথাও কোন কাচের বাসন, ভঙ্গুর যে কোন জিনিশ থাকলেই বেড়ালেরা ঠিক টের পায় এবং যে কোন উচ্চতা অব্দি তারা যেতে প্রস্তুত সেই সব জিনিশ ফেলে ভেঙে দেবার জন্য । আলমারির ভেতরে ঢুকে জিনিসপত্র ফেলা, এমনকি আলমারিতে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত ওরা পারে। আর ওদের যদি কোন কারণে আপনি ধরবেন বলে মনস্থ করেন, ওরা ওদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে সেটা টের পাবে এবং আপনার সমস্ত পরিকল্পনাকে বানচাল করে ধরা দেবে না। সে যত প্রিয় বেড়ালই হোক, আর যতই হাতে দুধ বা মাছের বাটি নিয়ে যান, থলিতে পোরার বদ উদ্দেশ্য থাকলে কখনৈ পারবেন না বেড়াল ধরতে। বিপদে পড়লেও এক কেস। ডাকবেন, বাপু বাছা করবেন, বিপন্ন বেড়ালটি কাতর ম্যাওঁ ম্যাওঁ করে যাবেন শুধু। কিছুতেই ধরা দেবেন না।

    বেড়ালকে যদি বা কখনো ঐভাবে তার অনিচ্ছাসত্তেও ধরার সুযোগ কখনো হয়ে থাকে আপনার, তাহলে জানা আছে নিশ্চয়ি ফল কি দুর্বিষহ হতে পারে। সে কীভাবে আপনাকে আঁচড়ে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেবে । ওষুধ খাওয়ানো, চান করানো ( জল ও বেড়াল বিপরীত দুটি এলিমেন্ট, কখনো মেশানোর চেষ্টা করতে নেই) এবং খাঁচায় পুরে ডাক্তারের বাড়ি নিয়ে চলা, এই সব উদ্দেশ্যে কতবার আমার হাতে পায়ে গলায় বড় বড় আঁচড়ের দাগ তৈরি হয়েছে, এবং পরদিন কলেজে বা কাজের জায়গায় বন্ধুবান্ধবের ইঙ্গিতপূর্ণ চাহনির সম্মুখীন হতে হয়েছে সে আর কী বলি । মারাত্মকভাবে লোকজনকে যদি আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে আগ্রহী করে তুলতে চান তাহলে বেড়াল অবশ্যই পুষবেন। এত বড় অ্যাটেনশন পাবার রাস্তা আর নেই। আপনি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, মাথায় এক বড় ব্যান্ড এড লাগিয়ে, বা ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, হাতে দগদগে এক আঁচড়ের ঘা নিয়ে । আহা! কী ইম্প্রেশন!

    বেড়াল পুষতে হলে দিলটাকেও বেশ শক্ত, পাথরের, কাঁটাতারে ঘেরা, প্রোটেক্টেড জ?ওন করে তুলুন। কারণ দু:খ পেতে হবে অতি ঘন ঘন। ঘন ঘন বেড়াল হারিয়ে যাওয়া, জানালা বা ছাত থেকে নিচে পড়ে যাওয়া , রাস্তার কুকুরের কামড় খেয়ে মরে যাওয়া এমন সব দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটে থাকে। এমনকি ওপর থেকে পড়ে আমাদের নিচের পাঁচিলের উঁচিয়ে থাকা পেরেকে পেট ফেঁসে গিয়ে ফাটা পেট নিয়ে মজন্তালী সরকারের মত অনেকক্ষণ ম্যাঁও ম্যাঁও করে তারপর আমার হাতের উপরেই মারা গেছিল একটি বেড়াল। এই সব অভিজ্ঞতাতেই আমাদের কান্নার বান ডেকেছে, আবার চোখ মুছে উঠেও বসেছি। সাধে কি আর বলেছি, আমার জীবনের একটি বড় অংশের দু:খ-সুখ-ক্লেশ-অপমান এবং আনন্দ সবই ছিল বেড়ালকেন্দ্রিক !
    সত্যি বেড়াল অনেক আনন্দ দিয়েছে, অনেক দু:খও দিয়েছে। প্রিয় পোষা বেড়ালের মৃতদেহ নিয়ে জবাগাছ লেবুগাছের তলায় পুঁতেছি, আবার গঙ্গায় দিয়েও এসেছি। দিদির পায়ের চাপে একবার একটা ছোট্ট বেড়ালছানা মরো মরো হয়েছিল। পরে বেঁচে যায়। তা ছাড়া কত কত বেড়ালকে যে দুগ্গা বলে থলিতে পুরে বাজারে ছেড়ে দিয়ে এসেছি, বিশেষত একটু বেশি টেরিটোরিয়াল ইনস্টিংকট সম্পন্ন হুলো বেড়ালদের। লেজ উত্থাপন করে সারাবাড়ি যারা নিজেদের ডোমেন চিহ্নিত করে বেড়াত। আর মহাভারতে অর্জুনের মত পাড়ায় পাড়ায় প্রেমিকা জুটিয়ে আসত। বাড়িতে এসে ভাবটা করত যেন ভাজামাছটি উলটে খেতে জানে না।

    আসলে বেড়ালের নটা জীবন না থাকলে আর দেখতে হত না। ওদের ঐ তুলতুলে চেহারায় যা কড়া একখানা জান পুরে পাঠান ভগবান, যে ভগবানকে বেড়াল ভেবে ফেলার মত মিশরীয় ভাবনা আমরাও ভাবতে পারি। আমাদের ষষ্ঠী মায়ের ব্যাপারটা আর না-ই বা তুললাম।

    বেড়ালরা যে কতভাবে পড়ে যায়, কতভাবে হারিয়ে যায়, ব্যথা পায়, আবার ফিরেও আসে, বেঁচেও থাকে। গৃহিণীদের ছোঁড়া চ্যালাকাঠে কোমর ভেঙে গেছে তবু মরেনি, এমন পা টেনে টেনে হাঁটা খোঁড়া বেড়ালিনীও আমি দেখেছি। তবে সব প্রাণীই তো একদিন না একদিন মরে, আর ওদের আয়ু আমাদের থেকে কম, তাই ১২ -১৩ বছরের মাথায় পূর্ণবয়সে প্রিয় প্রিয় সব বেড়ালকে মরতে দেখেছি অনেক। জীবন আর মৃত্যু দুটো সম্বন্ধেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভান্ডার ফুলে ফেঁপে উঠেছে ওদেরই জন্য।
    তবে এ প্রসঙ্গে অন রেকর্ড রাখি যে আমাদের একটা কুকুরও ছিল। কিন্তু পরের দিকে সে প্রায় বেড়াল হয়ে গেছিল। সামনের বড়রাস্তার নেড়ি কুকুর পরিবারের ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এর অভাবে সে-ও ছিল অ্যাজ ইউজুয়াল অনেকগুলো বাচ্চার একটা । বাচ্চাগুলো প্রায়শই গাড়ি চাপা পড়ে মরত। এটি তখন কয়েক মাসে মাত্র বয়সী, একই দুর্ভাগ্য এরও হতে পারত, কিন্তু হয়নি। এ মরেনি, স্কুটারের চাকা গলার উপর দিয়ে চলে যাওয়ায় ওর ঘাড় একপাশে হেলে পড়েছিল আর একটা চোখের মণি চোখের গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছিল। আমরা তাকে মুখে জল দিয়ে মৃত্যুতে অ্যাসিস্টেন্স দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে এবং মায়ের বুদ্ধিমত কিঞ্চিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে সে বেঁচে উঠল, চোখের ঝুলে পড়া মণিটা আবার ঢুকে গেল চোখের কোটরে, সে কাণা হয়ে আর ঘাড় কাত করে ১৫ বছর বেঁচে ছিল। কাণা বলে আর মেয়ে বলে তার নাম পদ্মলোচন না রেখে রাখা হল "সুন্দরী' । "সুন্দরী, সুন্দরী' বলে ডাকলেই ও লেজ নাড়ত আর চূড়ান্ত এক্সাইটেড হয়ে প্রচন্ড জোরে দৌড়ত। এক চোখে কাণা হওয়ায় ওর দৌড়নোর পথটা ছিল বৃত্তাকার। ও সোজা দৌড়তে কখনো আর পারেনি। বাঁই বাঁই করে গোল রাস্তা কেটে ওর দৌড়নো ছিল দেখার জিনিশ। সুন্দরীর সঙ্গে বেড়ালদের সখ্য ছিল গভীর। এবং এক সময়ে দেখা গেল সুন্দরী মা না হয়েও মাতৃত্বে ভরাট হয়ে উঠেছে, মাতৃহারা বেড়ালশিশুরা ওর বুক চুষছে। নেহাতই অভ্যাস ও প্রিয়শরীরের গন্ধে মাতৃহীন বেড়ালেরা এই অভ্যাসটি তৈরি করেছিল নিশ্চয়। ঘটনাটার ছবিও আছে। আমার দিদির প্রথম যুগের ফোটোগ্রাফি চর্চায় সুন্দরী প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। বেড়ালেরা তো করেইছে।

    আমার পিশির গল্পটা শুনুন। পিশি ভবানীপুরের ভাড়াবাড়িতে বছর কুড়ি থাকতেন, তখন কয়েকটি বেড়াল পুষেছিলেন। পিশেমশাই সল্ট লেকে বাড়ি করলেন, ভবানীপুরের ভাড়াবাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন। পিশি বেড়ালেদের রাস্তায় ছেড়ে দিলেন, কিন্তু ছাড়তে আর পারলেন কই? রোজ ওদের খাবার দিতে আসেন। প্রথমে একটি লোককে রেখেছিলেন যে পিশির হয়ে রাস্তায় বেড়ালগুলোকে খাওয়াবে। সে বোধহয় বেগড়বাঁই করেছিল। সুতরাং পিশি সল্ট লেক থেকে প্রত্যেকদিন সন্ধেবেলা অটো করে এসে শোভাবাজারে মেট্রো ধরে হাজরা এসে হেঁটে পুরনো পাড়ায় গিয়ে ওদের খাইয়ে আবার মেট্রো ধরে অটো করে সল্ট লেক ফেরেন!

    আমার দিদি এখন চারটি বেড়ালের জননী। ওর সোনা মোটু গারফিল্ড ইত্যাদি বেড়ালদের সুগার চেক থেকে শুরু করে নানা চিকিতসায় জান লড়ায় । তা ছাড়া ও একদিন মিশিগান লেকের ধার থেকে হেঁটে ফেরার সময়ে একটি আহত সি-গালকে উদ্ধার করেছিল, তাকে নিয়ে এসেছিল বাড়িতে, কয়েকদিন বাথরুমের বাথটাবে রেখে সেবা যত্ন করেছিল । সে আহত ডানা ঝটপটিয়ে ঘুরেছে, একটা ডানায় চোট পেয়েছিল, তাই সারা বাথরুম গম্ভীর চালে হেঁটে বেরিয়েছিল। সব সাবান খেয়ে দেখেছে। সব শ্যাম্পুও বোধহয় চেখে দেখেছিল। অত:পর দিদির দেওয়া দুধে ভেজানো পাউঁরুটি ফেলে দিয়েছিল, দিদি ডাক্তার দেখিয়ে এনে পরের দিন নিজের ভুল বুঝেছিল। ও পাখি মতস্যাহারী, কাজেই ওকে ক্যাটফুড জলে গুলে খাইয়েছিল, তোয়ালে দিয়ে জোর করে চেপে ধরে হাঁ করিয়ে। সেটা পছন্দ না হলেও , গায়ে জোর পেয়েছিল সি –গাল পুঙ্গব। কয়েকদিন পর তার ডানা ঠিক হয়ে গেছিল, তখন দিদি তাকে আবার মিশিগানের ধারে ছেড়ে এসেছিল।

    তা এসব তো করবেই। ভবানীপুরের মেয়ে কিনা, এর আগে বহুবার আহত কাক, আহত পায়রা সব এভাবেই আমাদের সেবাযত্নে বেঁচেছে। তবে চড়াইপাখির সদ্যজাত ছানা ঘুলঘুলি থেকে পড়ে গেলে সেগুলোকে আবার তুলে দিতে কী যে বেগ পেতে হত। আজকাল আর সেসব বালাই নেই। গাদা গাদা মোবাইল টাওয়ারের কল্যাণে কলকাতায় চড়াইপাখি, শালিকপাখি ইত্যাদি ছোট পাখিদের নাকি আর দেখা যায় না, ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্ব এসে এই সব শহুরে ছোট পাখির গুষ্টির তুষ্টি করেছে।
    লেখাটা শুরু করেছিলাম মজা করেই, কিন্তু লিখতে লিখতেই মন কেমন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আসলে পশুপাখি পোষা বড় দায়। এদের ভালোবাসলে এরা ভালোবাসাটা তুরন্ত ফিরিয়ে দেয় বটে, কিন্তু বাকি সমাজ সেটা বুঝলে তো!

    বেড়াল নিয়ে শেষ কথা বলি সম্প্রতি আমার করা একটি বোদলেয়ারের কবিতার অনুবাদ দিয়ে । কবিতাটির নাম ল্য শা ( le chat ) । এই কবিতাটি বুদ্ধদেব বসুও অনুবাদ করেছেন, কিছুটা স্বাধীনতা নিয়ে, অনেকটাই সরে এসে, এবং অনেকটাই রাবীন্দ্রিক চালে। তবে প্রথম লাইনে ফরাসি "ক্যর আমুরো' (লাভিং হার্ট) -কে যখন বুদ্ধদেব প্রবল সাহসের সঙ্গে "কামুক হৃদয়' করেই ফেলেছিলেন, তা থেকে আমি আর চুরি করার লোভ একেবারেই সামলাতে পারিনি।

    বেড়াল
    শার্ল বোদলেয়ার

    এসো সুন্দরী বেড়াল আমার, কামুকহৃদয়ে, এসে
    তোমার থাবার নখগুলি রাখো ভেতরে
    দাও গো ডুবতে সুন্দর দুটি চোখের ভেতরদেশে
    মেলানো ধাতুতে -নীলাভ দ্যুতির পাথরে

    যখন আমার আলস্যভরা আঙুল আদর করেছে
    মাথায় তোমার, পিঠে ঐ নমনীয়
    আমার আঙুল সুখানুভূতিতে তখনি শিউরে উঠেছে
    তোমার শরীর-তড়িতস্পর্শে প্রিয়

    আমার প্রিয়ার আত্মাকে খুঁজে পেলাম। চোখের দৃষ্টির
    কী মিল তোমার, কাম্য জন্তু, সে-ও তো !
    গভীর , শীতল , সে-ও যেন কাটে এবং বেঁধায় বিষ তির

    পা থেকে মাথায় বয়ে যায় তারও নিয়ত
    সূক্ষ্ম, অধরা, বিপজ্জনক এক আতর
    বাদামি শরীরে সাঁতার কাটছে অকাতর !

    (Viens, mon beau chat, sur mon coeur amoureux;
    Retiens les griffes de ta patte,
    Et laisse-moi plonger dans tes beaux yeux,
    Mêlés de métal et d'agate.

    Lorsque mes doigts caressent à loisir
    Ta tête et ton dos élastique,
    Et que ma main s'enivre du plaisir
    De palper ton corps électrique,

    Je vois ma femme en esprit. Son regard,
    Comme le tien, aimable bête
    Profond et froid, coupe et fend comme un dard,

    Et, des pieds jusques à la tête,
    Un air subtil, un dangereux parfum
    Nagent autour de son corps brun. )

    বেড়াল যে কবিকল্পনায় নারীর সঙ্গে কোথাও গিয়ে একটা মিলে যায়, তার প্রমাণ তো যুগে যুগে মিলেছে। কবিদেরই বা শুধু দুষি কেন। ক্যাট-ওয়াক কথাটাই তো এসেছে পাঁচিলের ওপরে সুন্দরী বেড়ালিনীদের হাঁটার কেতা লক্ষ্য করে।
    তবে আমাদের সংস্কৃতিতে বেড়াল তপস্বীর কথাটাও মন্দ নয়। পুংলিঙ্গে বেড়ালের অন্য মূর্তি, অন্য ভেক। কেমন যেন চেনা চেনা। চেরা চোখের আপাত নিস্পৃহ চাউনিটি একবার আপনার ওপর দিয়ে বুলিয়ে নিয়ে নিজের কাজে মগ্ন হয়ে পড়ে এই ধূর্ত শিকারীটি । এরকম ধ্যান যদি শেখা যেত, তাহলে জীবনে কিছু একটা করে দেখাতে পারতাম।

    ছবি- সায়ন করভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ১৪৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন