দিল্লি থেকে বিশেষ প্রতিবেদনঃ ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে , গোঘটিত কারণে কি ফাটল দেখা দিয়েছে? আলোচনায় দিল্লির ক্ষমতাশীল মহল উত্তাল। নর্থ এবং সাউথ ব্লকের অলিন্দে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, নানা নতুন সমীকরণের জল্পনা। ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সকালে। ওইদিন সকালেই উত্তরপ্রদেশের একটি বিশেষ প্রতিনিধিদল সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। বিশেষ সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী উদ্যোগটি ছিল উত্তরপ্রদেশের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর। প্রতিনিধিদলে নিজে না থাকলেও, তিনিই উত্তরপ্রদেশের দশটি শহরের নানা গোয়ালের প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে নিজের হাতে দুটি গরু বেছে নেন। বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্নৌ থেকে বিশেষ চার্টার্ড বিমানে গরু দুটিকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় রাজধানীতে। পরদিন সকালে জেড প্লাস নিরাপত্তাসহ তাদের প্রধানমন্ত্রী সন্দর্শনে পাঠানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সচিবালয়ের এক কর্তা জানান, এ পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটায় প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। বিদেশ ভ্রমণ এবং জিএসটি নিয়ে তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সকাল নটায় গো-প্রতিনিধিদের জন্য সময় বার করেছিলেন। গোমূত্র পানের জন্য আমেরিকা থেকে স্টারবাকসের দুটি বিশেষ কাপও কেনা হয়। সাক্ষাৎকার সহ পুরো ব্যাপারটাই তাঁর ইচ্ছানুযায়ীই গোপনও রাখা হয়।
সমস্যা শুরু হয় এর পরে। সচিবালয়ের ওই কর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনাও যথেষ্ট সুন্দর মেজাজে শুরু হয়েছিল। প্রথামতো আলিঙ্গন করার পর, গরুরা প্রধানমন্ত্রীকে তাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী গো-রক্ষায় তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা বলেন। হিন্দি বলয়ের প্রায় সর্বত্র গো-হত্যা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গরুদের আধার কার্ড দেবার তোড়জোড় চলছে। বিভিন্ন বহুজাতিকের সঙ্গে কথা চলছে দুধের মতো গোমূত্রও ঠান্ডা পানীয়ের বোতলে ভরে বিক্রি করার, এবং গোমূত্রের উপর জিএসটির সম্পূর্ণ ছাড়ের কথা ভাবা হচ্ছে। বিশুদ্ধ গোমূত্র আহরণের জন্য বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে বিশেষ ক্যাথিটারও। এ পর্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিস্থিতিই বজায় ছিল। সমস্যা শুরু হয়, এইসব সুখবরে গরুরা আনন্দ পাবার পরিবর্তে বিচলিত হয়ে পড়লে। তাদের একজন প্রতিনিধি বলে, আপনারা আমাদের দোহন করে দুধ খান ঠিক আছে, কিন্তু বহুজাতিকরা সর্বক্ষণ ক্যাথিটার পরিয়ে মূত্রও দোহন করে চলবে, এ কেমন কথা। মরার চেয়ে এ কম কী হল। খবরে প্রকাশ, এই বহুজাতিক বিরোধিতায় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন। "বঙ্গাল সে হো কা?" বলে তিনি নাকি বক্রোক্তিও করেন। উত্তরপ্রদেশের নিরামিশাষী গরুরা এতে অপমানিত বোধ করলে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। গরুর গোবর, গো-মূত্রকে কীভাবে মর্যাদা দিয়ে বিক্রয়যোগ্য পণ্য করে তোলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তার বর্ণনা দিলে গরুরা বলে, ওসব তো মার্কেটিং গিমিক। প্রধানমন্ত্রী তখন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে গরুদের বিশ্বাসঘাতক বলেন। সচিবালয়ের কর্তার বয়ান অনুযায়ী তিনি একটি গরুকে সরাসরি বলেন, "আপনাকে বাঁচানোর জন্য আমরা দেশের নানা প্রান্তে বিধর্মীদের পেটাচ্ছি, আর আপনারই এই বিশ্বাঘাতকতা?"
তেরিয়া গরুটি নাকি জবাবে বলে, "বিধর্মী মারবেন মারুননা। কিন্তু #NotInMyName । প্লিজ।"
প্রধানমন্ত্রী এতে মর্মাহত হন। গরুদের তীব্র চাপে পড়ে তিনি এরপর একটি টুইট করেন ঠিকই। কিন্তু বিশেষ সূত্রানুযায়ী, সেটা মন থেকে নয়। তিনি এখন পুরোটাকেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর চাল বলেই মনে করছেন। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, কথাটা সর্বাংশে মিথ্যেও না। এ সম্ভাবনা প্রবল, যে, মুখ্যমন্ত্রী মানুষের ভোটে নির্বাচিত হলেও, তিনি যে গরুদেরই বেশি নিকটজন, সেটা দেখিয়ে ক্ষমতার সিঁড়িতে উপরে ওঠার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে গরুরাই তাঁর বোড়ে। প্রতিনিধিদলের দুই গরুর অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো মতামত পাওয়া যায়নি। সমস্ত প্রশ্নের উত্তরেই তারা হাম্বা বলে এড়িয়ে গেছে।