আমি কথা রাখিনি।
এই উপন্যাসটির লেখিকার কলমের আমি একজন ভক্ত। বুঁদ হয়ে পড়েছিলাম ওঁর যদুপুরের লেডিজ হোস্টেলের স্মৃতিচারণ। কাজেই এই উপন্যাসটি পড়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া দেবার অনুরোধ আসতেই এককথায় রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু তারপর প্রায় ন’মাস বা তার বেশি সময় গড়িয়েছে। আমি কথা রাখিনি, নানান অজুহাতে।
কখনও বইটা হারিয়ে গেছে। আবার জোগাড় হল। তারপর বাড়িতে সবার কোভিড, আমি ঘরে বন্ধ, ঝাঁট দিচ্ছি, বাসন ধুচ্ছি ইত্যাদি বাহানা। কিছুদিন গেল। এবার?
এবার আমার নিজের কোভিড, যদিও মাইল্ড, গলা জ্বালা ছাড়া কোন সিম্পটম নেই- ওমিক্রন? তাতেও পিছল কিছুদিন।
কবে সেরে উঠেছি, অন্য সব লেখা বা বইপড়ার প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি। এবার?
আসলে আমি এই বইটার থেকে পালাচ্ছি, পালিয়ে যেতে চাইছি। কেন?
বইটা একটা ভয়াল নকশিকাঁথার মাঠ। ছুঁচের নিপুণ বুনুনিতে গাঁথা হয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট কোলাজ। তাতে নানান চিত্র, নানান শহরের টুকরো ছবি। কোলকাতা থেকে মুম্বাই, পুনে, কেরল এবং পাটনা। সবমিলিয়ে ধীরে ধীরে উপন্যাসটি ৭২ টি পর্বে এবং পঞ্চাশ হাজার শব্দের বয়নে এক মহাকাব্যিক আকার নেয়। আর বইটি নিখাদ উপন্যাস, সমসাময়িক জীবনের জীবন্ত দলিল, কিন্তু কখনই খবরের কাগজের রিপোর্ট নয়।
একশ বছর আগের স্প্যানিশ প্লেগে শুধু শহর কোলকাতায় দু’কোটি মানুষের মরে যাওয়ার গল্প আমাদের আজ তেমন বিচলিত করে না। ও তো অনেক আগের কথা, তখন ভারত ছিল ব্রিটিশের উপনিবেশ। তখন তো টিবি’রও তেমন চিকিৎসা ছিল না। স্ট্রেপটোমাইসিন আবিষ্কার হয়নি।
আজ স্বাধীন ভারতে এমনটি হতে পারে না। তখন এত হাসপাতাল ছিল না। এত প্রাইভেট হাসপাতাল ছিল না। খোলা বাজারে এত ওষুধ পাওয়া যেত না। আমরা নিশ্চিন্ত থাকি। এখন মানুষের গড় আয়ু তখনকার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কোন চিন্তা নেই।
আর যাদের মেডিক্লেম আছে, ই এস আই কার্ড আছে, ব্যাংকে ব্যালান্স আছে – তারা যাবে কলম্বিয়ায়, ফোর্টিস এবং মেডিকায়, অন্য শহরে হলে ম্যাক্স বা মেদান্তে।
কিন্তু বইটি প্রথম পর্বেই হাড়ে ঠান্ডা কাঁপন ধরায়। আমাদের বিশ্বাসের গোড়া ধরে ঝাঁকায়। টের পাই, এই তো সবে শুরু। কেউ বাদ যাবে না। ফ্ল্যাটের মধ্যবিত্ত বৌদিরা বা তাদের কাজের মাসিরা – কেউ অতিমারীর নাগালের বাইরে নয়।
লেখিকা ছবি আঁকেন।
ফুটে ওঠে বিভিন্ন শ্রেণীর গড়ে ওঠা আলাদা আলাদা মূল্য বোধ। বিভিন্ন প্রজন্মের আলাদা আলাদা মূল্যবোধ। অতিমারীর কঠিন সময়ে আমরা টাল খাই। লুকিয়ে রাখা দাঁত-নখ গুলো এই সময় দৃশ্যমান হয়। লকডাউন এবং ওয়ার্ক ফ্রম হোম আমাদের জীবনযাত্রার অভ্যস্ত গতি, সুর-তাল-লয় সব বদলে দিয়েছে।
বইটি আমাকে প্রশ্ন করে।
টিভিতে সেলিব্রিটিরা লকডাউনে বদলে যাওয়া জীবনের কথা বলেন। লারা দত্তা এবং অমিশা প্যাটেল নিও নর্ম্যাল জীবনযাত্রা থুড়ি লক ডাউনের জীবন তুলে ধরেন।
তারপর আমিশার গলা বলল, “আমাকে কুক করতে হচ্ছে, জান? মাই কুক ইজ অন লিভ।”
— তাই? তুমি ঘর ঝাড়ুপোছা করছ লারা?
— ও ইয়েস। লারা একটা মোহময়ী ভঙ্গি করলেন। ইউ ক্যান সি মি ক্লিনিং রুম অন ইন্সটা।
— আমাদের এখানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। স্যানিটাইজারও পাচ্ছি না। আজকেই কি লকডাউন ডিক্লেয়ার হবে লারা?
কিন্তু এটা অতিমারীর তৃতীয় বছর চলছে। এখন জীবন অনেক স্বাভাবিক। মর্নিং ওয়াকের সময় দেখি আমি ছাড়া কারও মুখে মাস্ক নেই। সবাই ভুলতে চায় প্রথম দুটো বছরকে। ভুলতে চায় বিভিন্ন মিউটেশনক, ডেলটাকে,ওমিক্রনকে। আমিও ভুলতে চাই। তাই সরিয়ে রাখি অনুরাধা কুন্ডার হাড়হিম করা বইটিকে। উনি যে ভুলতে দেন না, ছেলেভুলানো ছড়া শোনাতে চান না।
অতএব, কাজের মেয়ে শ্যামা বারবার কাশতেই লিবের্যাল বৌদি বলেন-
“কাল থেকে তোর ছুটি। বাড়িতে থাকবি। মাস পড়লে এসে টাকা নিবি।” শ্যামা ভাইরাস বোঝে না। মাস্ক চেনে না। স্যানিটাইজারও বোঝে না। ছুটি বোঝে। আর টাকা। চায়ের কাপ নিয়ে চলে গেল। রান্না শেষ। এবার বাড়ি যাবে”।
আমি চমকে উঠি। এ তো আমার স্ত্রীর কণ্ঠস্বর, লেখিকা শুনতে পেলেন কী করে?
“শ্যামা দু-চারটে টুকটাক ইশক করে বেড়ায়। তার তো শরীর মন বলে কিছু আছে! সেইরকম একজন আশিক দশরথ। কাজের বাড়ি, ছেলে, শাশুড়ি, আশিককুল নিয়ে সে দিব্য আছে প্রথমদিকের কান্নাকাটিকে অবহেলায় তিন থাপ্পড় মেরে। এখন আর মনেও পড়ে না। ফোন করা তো দূরের কথা”।
এদেরও তো আমি চিনি। দশরথ আমার পাশের পাড়ায় থাকে। কিন্তু এখন?
“দশরথ এখন সবজি এবং কাপড়ের মাস্ক বিক্রি করে। ফিরতি পথে দুটো বেগুন, মূলো, আলু নীল শ্যামা। ফ্রি-তে একটা মাস্ক” ।
উপন্যাস এগোয় সেতারের বিলম্বিত আলাপের মত। ওস্তাদ অনেক যত্নে একটি একটি করে স্বর লাগাচ্ছেন আর রাগের চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রাগের নাম কোভিড-১৯।
“— খুব খতরনাক রোগ নাকি গো?
— চোখে দেখা যায় না ভাইরাস। খবরের কাগজে লিখছে। ই লে। মুখ বেঁধে থাকবি।
মাস্ক পরে নেয় শ্যামা। মাস্কের ওপর দিয়ে ওর কুচকুচে কালো চোখ চকচক করে। চোখে হাসি”।
এবার একটি দীর্ঘ মীড়ের কাজ।
“লকডাউন আসছে। ওরা শুনেছে।লকডাউন কী কেউ বলতে পারছে না ঠিকঠাক। কীভাবে আসে তাও জানে না। শুনলে মনে হচ্ছে ছোটকালে দেখা কু-ঝিকঝিক রেলগাড়ির মতো ঝমঝম করে চলে আসছে। লকডাউন। লকডাউন শব্দ করতে করতে” ।
লকডাউনে হোস্টেল বন্ধ। বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ ঘরে বিছানায় শুয়ে সিগারেট খেতে খেতে মেয়েটি দেয়ালের টিকটিকির সঙ্গে কথা বলে। সেই আলাপ শুনে আমি ভয় পাই।
“— এই পৃথিবীর একটা অতিমারি দরকার ছিল, জান। বড্ড ফাস্ট হয়ে যাচ্ছিল সব। আমার মায়ের বন্ধু! সবাই সবাইকে দেখা হলে হাগ করে, চুমু খায় আর দেন দে স্টার্ট বিচিং অ্যান্ড শোয়িং অফ। ইন ডিফারেন্ট ডিগনিফায়েড ওয়েজ। ডায়েট ফুডের দাম জান? কিটো দেখে দেখে ঘেন্না ধরে গেছে। দেখো। একটু পরে ঝগড়া শুনতে পাবে। মাই ডিয়ার ফাদার অ্যান্ড মোম উইল স্টার্ট ফাইটিং। দুজনে বাড়িতে আটক যে!
— স্বামী-স্ত্রীতে অমন হয়।
— দ্যুসা! স্বামী-স্ত্রী! দে আর টায়ার্ড অব ইচ আদার। স্বাভাবিক। বাবা ক্যান্ট মিট হিজ লেডি-লাভ। রিয়া আন্টি। মা ক্যান নট মিট হার বাডিজ। চ্যাট করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে”।
আমাদের মেয়েটি আমাদের প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ - ও আমাদের ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দিতে চায়। শক ট্রিটমেন্ট দিতে চায়।
— “কীরে। কী করছিলি এতক্ষণ? এতবার ডাকছি। ঝাঁঝিয়ে উঠল নীল রং।
শি নিডস সাম শক। ও মুখ ঘোরাল।
শান্ত স্বরে বলল, মাস্টারবেশন। এনি প্রবলেম?”
আমি জানি, বাকি জীবনে কখনও আমার মেয়ের বন্ধ দরজা দেখে এমন প্রশ্ন করব না।
এবার একটা পরিচিত বাঁধা গৎ বেজে ওঠে।
শ্যামা দিদি মানুষটা ভালো। সকালে কাজে যাবার আগে সবার জন্য ফ্যানাভাতে ডিম সিদ্ধ দেয়। ভালো খাওয়াদাওয়া। ঘরে টিভি। ফ্রিজ। শ্যামা দিদি মাইনে পেয়ে দুটো নতুন কুর্তা এনে দিয়েছিল। কিন্তু বেলা এগারোটার সময় ঘুম ভেঙে নেশা নেশা চোখে জাম্বু যেদিন জুহির হাত থেকে চায়ের কাপ নিতে গিয়ে হাত ধরেই টেনে নিল, সেদিন জুহি সত্যি বুঝল যে তার মুখ দিব্যা ভারতীর এবং শরীর নারীর। এরপর নদীতে বাণ এলো। দু-মাসের মাথাতে মুম্বাই রওনা দিল ওরা। বেরোনোর আগে মন্দিরে জাম্বু সিঁদুর পরিয়ে বর হয়ে গেল জুহির।
দুনি লয়ে গত বাজছে, সমে ফেরার আগে তবলায় লগ্গি বাজল।
“জুহি মেনে নিল এবং বুঝে গেল হিরোইন হওয়া ওর কপালে নেই। তবে ক্লায়েন্ট ভালো হলে মজা খুব। জুহি রিসোর্ট চিনল। ককটেল চিনল। মকটেল চিনল। দামি পার্লার গেল ক্লায়েন্টের পয়সায়। চামড়া চিকণ হল। চুল স্ট্রেট ও সিল্কসম”।
এবার মৃত্যু আর খবরের শিরোনামে নয়, আচমকা পৌঁছে যায় আমাদের চেনা চরিত্রের কাছে পরোয়ানা হাতে।
চারদিন বাদে জ্বর এলো জুহির। ধূম জ্বর। কাশি। বমি। পায়খানা।
শিফু মালিক রিস্ক নেবার পাত্র না। অবিলম্বে বিতাড়িত হল জুহি। হসপিটালে যাবার জোর নেই। অসমাপ্ত কনস্ট্রাকশনের নীচে এক গা জ্বর নিয়ে পড়ে থাকল। অসুস্থ জ্বোরো শরীরের ওপরেও লোভের থাবা পড়ে। জুহি ককিয়ে কাঁদে। এখানে আরও কিছু জন আছে তার মতো। কাশি কমলে খিদে। খিদে কমলে বমি। এর মধ্যে কতগুলো হাসপাতালের লোক এসে লালা নিয়ে গেল। দুদিন পর এসে পজিটিভ বলে নিয়ে চলে গেল কোথায় জুহি জানে না। সুনীল শেট্টি এসে মাথাতে হাত বুলিয়ে দেন। করুণাঘন চোখ তাঁর।
— হিরোইনকো ইয়ে ক্যা হুয়া?
— বুখার স্যার । এখন আর সাব বলে না ও।
— ঠিক হো যাও জলদি। শুট হ্যায় না?
— বিলকুল স্যার । হিরো কৌন বনেগা স্যার?
সুনীল শেট্টি পিপিই পরিহিত। ফেস মাস্ক পরে নেন। স্বচ্ছ পলিথিন সদৃশ আবরণ নীল কুয়াশা ছড়ায়।
নার্স এসে নল খুলে নেয়।
মৃত্যুর এক শৈল্পিক রূপকল্প, তার অভিঘাত মারাত্মক। লেখিকা উদাসীন নন, কিন্তু নিরাসক্ত নির্মম।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরুপায় ঘরে ফেরা শুরু হয়, আরেক লং মার্চ।
“বিকেল থেকে হাঁটবে আবার। সামান্য চাল নিতে পেরেছে সঙ্গে। মুড়ির প্যাকেট। সামনে রাস্তা। কঠিন পিচ। কোনো ম্যাপ নাই। সুলেমান বলেছে থানে হয়ে যেতে”।
লেখিকার কলম বড্ড মিতভাষী, নির্মম। আমি ভয় পাই।
“মেয়ের মেজাজ ভালো না। বর ওয়ার্ক ফ্রম হোম কিন্তু স্যালারি কাট হবে জানতে পেরে খিচড়ে আছে। এত পরিশ্রমের পর স্যালারি কাট হলে চলে! তারপর তিনটে মোটা প্রিমিয়াম আছে এইসময়েই। মেইড দুজনকেই বসিয়ে মাইনে দিতে হবে”।
আমার পরিচিত ঘরের গল্প। সেজন্যেই এই বইকে ভয়। বড্ড প্রশ্ন করে।
“দু-বাড়ি থেকে অ্যাডভান্স টাকা পেয়েছে শ্যামা। সব মিলে হাতে এখন দশ। আর-একটা বাড়িতে সন্ধেবেলা রুটি করে দিত। সে কাজটা গেছে। দিব্যি বলে দিল, আর আসতে হবে না। বসিয়ে মাইনে দেবেই বা কেন, এই ভেবে নিজেকে বোঝাল শ্যামা। তার তো তবু দুটো কাজ আছে। লতিফার একটাও নেই”।
ডেলটা প্রকোপ চলছে। মধ্যবিত্ত আর উদার নয়।
“রোগটা কতদিনে যাবে কে জানে এইভাবে ঘরবন্দি থেকে গায়ে হাত পায়ে ব্যথা। বউদিকে ফোন করলে বলে, সারা ভারতে রোগ। পৃথিবীতে রোগ। পৃথিবী বা ভারত কাকে বলে জানে না শ্যামা। কতদূর, কত বড়ো তাও বোঝে না। কাজ ছাড়া পাগল পাগল লাগে ঘরবন্দি। শেষে বিকেলে কয়েকজন বউ-ঝি মিলে স্কুলের মাঠে গপ্পো করতে যায়। মাস্ক কিনেছে দশ টাকা দিয়ে। কথা বলার সময় গলাতে নামায়”।
আমরা সাহস পাই নি। আমাদের আছে প্রযুক্তি। আমরা আঁকড়ে ধরি হোয়াটস অ্যাপ, ফেস টাইম এবং জুমকে। শ্যামারা ধরে সঙ্গীদের হাত।
বেকারি ছুঁয়ে যাচ্ছে সবাইকে, বিশেষ করে যারা আমাদের ইনফর্ম্যাল লেবারফোর্স তাদের। বদ্ধ ঘরে হাওয়া বিষিয়ে উঠছে।
--লকডাউনে বরের টোটো বন্ধ। বাইরের মেয়েমানুষ বন্ধ। কাজেই বেলির সারা গায়ে কালশিরে। সেদিকে তাকিয়ে শিউরে ওঠে শ্যামা। ফাঁকা ঘরে ছেলে আর শাশুড়ি নিয়ে দিব্যি আছে সে”।
“লকডাউনের পর মালিক পক্ষ এক সপ্তাহ একবেলা খাবার দিয়েছে। ডালচাওল। তারপর বলেছে আপনা দেখো। যেখানে রেশন নিতে গেছে শুনেছে ইয়ে হিন্দুয়ো কে রেশন হ্যায়। এদেশে মুসলমান হয়ে জন্মাবার চেয়ে গরিব হওয়া ভালো। আবদুল ও এরশাদের লকডাউন উপলব্ধি”।
এবার চোখ বুজে ফেলি।
“কেউ ছোঁবে না। শেয়াল কুকুর টেনে নিলে নিক। যদি ওই রোগে মরে থাকে? দল চলে গেল নিজেদের মতো। কেউ পেছন ফিরে তাকাল না। দুটো কুকুর এসে শুঁকছিল বুড়োকে। তারপর টেনে খুলে ফেলল পুঁটুলিটা। দু-চারখানা কাপড়, কাগজ কীসের টানাটানি করল। পুঁটলিতে কোনো খাদ্যবস্তু না পেয়ে একটা লুঙ্গি টেনে ছিঁড়ে খেলতে লাগল কুকুর দুটো।
একটা চিরুনি। মাদুলি। লুঙ্গিটা টানাটানিতে ছিঁড়ে অদ্ভুত ভাবে বিছিয়ে। সুখনলাল ছেলের বইতে দেখেছে। একটা ম্যাপের মতো। একটা দেশের ম্যাপ।
একটা গোটা ভারতবর্ষ নেতিয়ে শুয়ে থাকল রাস্তার ওপর। ছোটো ছোটো হলুদ প্রজাপতি নেচে গেল বাতাসে”।
কোভিডের মৃত্যু কিও এতটাই হিংস্র? নাকি আরও?
“ওরা কোনো কাগজপত্র দেখতে চায় না। সাফ কথা। শ্যামার শাশুড়ি করোনাতে মরেছে। শ্যামার করোনা হয়েছিল। ওই চোদ্দ দিনে কী সেরেছে না সেরেছে ওরা জানে না। শ্যামা ঘরে থাকতে পারবে না। এ বস্তিতে কালুর কথা শেষ কথা।
তবে যদি কালুর নির্দিষ্ট জায়গাতে শ্যামা কালুর সঙ্গে আলাদা দেখা করে বা কালুকে ঘরে আসতে দেয় তাহলে আলাদা কথা।
রুখে দাঁড়িয়ে শ্যামাসুন্দরী বলল, “ব্যাগে রিপোট আছে। নেগেটিভ। দু-বার নেগেটিভ কোরানটিনে থেকে আসছি। কোন্ বাপের ব্যাটার খ্যামতা আছে আমাকে আটকায়? ডেকে লিয়ে আয় কাউনসেলারকে। কোন্ পুলিশ ডাকবি ডাক। আমিও দেখছি কে আমারে ঘরে ঢুকতে না দেয়।”
ভাইরাস যদি বাঁচার তাগিদে নব নব রূপ ধারণ করে তবে মানুষই বা থেমে যাবে কেন?
বইটিকে আমি পড়ার পর আমার নিজস্ব সংগ্রহের তাকে ঢুকিয়ে দিয়েছি। ভুলতে চেয়েছিলাম, পারলাম না। ভাবছি, কোন কোন জিনিস ভোলা উচিত নয়।
গুরুচণ্ডা৯-কে ধন্যবাদ এই বিরল সাহসী উপন্যাসটি প্রকাশের জন্যে।