এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  টাটকা খবর

  • ডুয়ার্সের ডায়রি ঃ চতুর্থ কিস্তি

    শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | টাটকা খবর | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ | ৯৪৭ বার পঠিত
  • (এই ডায়রিটা শুরু ১১ই নভেম্বর, ২০০৯ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত "জলপাইগুড়ির টাটা চা বাগান' লেখাটার পর থেকে। গত ২১শে নভেম্বর প্রকাশিত হয় তৃতীয় কিস্তি ( http://guruchandali.com/?portletId=20&porletPage=1&pid=wpgc:///2009/11/21/1258817932189.html )। আজ চতুর্থ কিস্তি।)



    ২৬শে নভেম্বর ২০০৯, রাত ১২টা ৩৯মিনিট :

    কদিন ধ'রে ডুয়ার্সের চা বাগানের যে কথা লিখছি, তাতে আমারই কেমন একটা হতাশা জন্মাচ্ছিল। কেমন যেন শ্রমিকদের হাহাকার আর দারিদ্রের কথা আসছিল বারবার। যদিও সেটা ভীষণ ভাবেই সত্যি। যদিও নেওড়ানদী চা বাগানের শ্রমিক বন্ধুদের এই লড়াই খুবই প্রয়োজনীয়, বিশেষত: টাটার মত রাক্ষুসে মালিকের বিরুদ্ধে। তবু একটা অন্য ছবিও আছে ডুয়ার্সের।

    তিন বছর ধ'রে যার পিছনে সবচেয়ে বেশী শ্রম আর আবেগ জড়িয়ে আছে আমাদের। শ্রমিকদের সেই অন্য লড়াই এর কথা আজ বলতে ইচ্ছা করছে। আমাদের এই বন্ধুদের কথা শুনলে বোধহয় অনেক সহজেই একটা আন্দাজ করা যাবে, কোনও কিছুর কেবলমাত্র বিরোধীতা করা, আর তাকে অস্বীকার করে নিজেদের মত করে নতুন কিছু সৃষ্টি করা -- এই দুটোর হাতে কলমে পার্থক্য ঠিক কেমন হয়।

    শিকারপুর একটি বন্ধ চা বাগান। ২০০৬ সাল থেকেই চা বাগানটা বন্ধ করে দেয় এর মালিক জি ডি কানই। শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, মজুরি, রেশন সহ আরও নানা পাওনাগণ্ডার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। একটু ভেবে দেখুন শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ৬২ টাকা ৫০ পয়সা। যখন বাগানটা বন্ধ হয়েছিল তখন শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র ৫২ টাকা। এই দৈনিক মজুরির থেকে ১২% টাকা কেটে নেওয়া হয় প্রভিডেন্ট ফান্ড জমা দেওয়ার জন্য। সেই টাকা দীর্ঘ দীর্ঘ দিন জমা দেয়নি মালিক। মালিকের ভাগের টাকা জমা দেওয়া তো দূরের কথা, শ্রমিকের অংশের টাকাই চুরি করেছে মালিক। আর এই চুরি একটি ফৌজদারী অপরাধ। কিন্তু ডুয়ার্সে এই ধরনের চোর মালিকের সংখ্যা অনেক হওয়া সত্ত্বেও একজন মালিকের বিরুদ্ধেও সরকারী ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোনও ট্রেড ইউনিয়ন একটাও ডায়রি করেনি থানায় এই চুরির বিরুদ্ধে। এমনভাবেই খুব সহজে লোক ঠকিয়ে চলে চা মালিকদের কোটি কোটি টাকার কারবার। এই রকমই এক মালিক জি ডি কানই, তার পেট ভরার পর বাগানের ১৫০০ শ্রমিককে অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখে ফেলে নিশ্চিন্তে চলে যায়।

    আসলে এই সময়ের বেশ আগে থেকেই মালিকরা একটা বিষয়কে বেশ ভাল ভাবে অভ্যাস করছিলেন। সেটা হল শীতকালে যখন পাতার ফলন বন্ধ থাকে, যখন চা গাছগুলির বিশেষ পরিচর্যা দরকার হয়, যখন সেটাই প্রধান কাজ, তখন বাগান ছেড়ে চলে যাওয়া। আবার বর্ষা আসার ঠিক আগে প্রথম পাতা যখন আসবে সেই সময় এসে বাগান খোলা। এই বারবার বন্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের বন্ধ অবস্থা সম্পর্কে আতঙ্কিত করতে সক্ষম হয়েছিল মালিকপক্ষ। যাতে, যখন মালিক বাগান খুলতে আসবে, প্রায় বিনাশর্তে শ্রমিকরা রাজী হয়ে যেতে পারে বাগান খোলার প্রশ্নে। আসলে বাগান বন্ধ আর খোলার রাজনীতি, বাগানের গঠনের পুনর্বিন্যাস --এর রাজনীতির কথা বলতে গেলে আবার একটা অন্য লেখা হয়ে যাবে। তাই সেই বিষয়ে অন্য দিন লিখব। সেই কথাও এই ডায়রিতে জানাতে হবে। বৃহৎপুঁজির কি অসামান্য লীলা তা কিছুটা বোঝা যায়। যদিও আমি এই লীলা বুঝি চা বাগানের মধ্যে দিয়ে।

    যে বাগানের কথা বলছিলাম সেই বাগানের কথায় ফিরে আসি। বাগানটার নাম শিকারপুর। মালিক বেশ কিছু বছর ধরেই শীতের আগে বাগান থেকে পালিয়ে যেত স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু ২০০৬ সালে শ্রমিক সহ পুরো বাগানটাকে মরবার জন্য ফেলে রেখে চলে গেল। তারপর খুব তাড়াতাড়িই আমরা গিয়ে হাজির হলাম সেখানে। তার আগে থেকেই বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী যে যে সুবিধা পাওয়া উচিৎ তার উপর অন্য বন্ধ বাগানগুলোতে কাজ করছিলাম। তাই মূলত সেই সব সুবিধাগুলোর বিষয়ে ওদের জানাতেই শিকারপুর হানা দিয়েছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে ওদের সাথে আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরী হল।

    শিকারপুর বাগানে ঢোকার আগে থেকেই বন্ধ বাগানে শ্রমিক সমবায় বানানোর নানা পরিকল্পনা মাথায় ঘুরছিল আমাদের। শিকারপুরেই সে চেষ্টা করা যাবে এমন কিছু পরিকল্পনা করে যাইনি। ও, যেটা বলতে ভুলে গেছি, সেটা হল এখানে বাগান বন্ধ হওয়ার পর জেলাশাসক সেই বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা যাতে কিছু খেয়ে জীবিত থাকে তার জন্য বাগানের ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অপারেটিং ম্যানেজমেন্ট কমিটি,ওএমসি, বানিয়ে দেয়। সেই কমিটির কাজ হল বাগান থেকে কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি করা। আর ক্রেতা ঠিক করা হয় বিডিও অফিসে ওপেন অকশনের মধ্যে দিয়ে। তারপরও সেখানে থাকে নানা রকমের ঘোটালা। বেশিরভাগ শ্রমিকরা জানতে পারেননা কত পরিমাণ পাতা উঠল, কত দামে তা বিক্রি হল, কত টাকা শ্রমিকদের দেওয়া হল, কতটাকা কমিটির ফান্ডে জমল এইসব। সেখানে লোকাল ট্রেড ইউনিয়নের মোড়কে থাকা পার্টির কতৃত্ব চলে নানা ভাবে। খুব বাড়াবাড়ি রকমের গণ্ডগোল হলে তখন লোকাল প্রশাসন বদলে দেয় কমিটি। এইভাবেই চলে বন্ধ বাগানগুলি।

    তবে শিকারপুরের চিত্রটা প্রথম দিন থেকেই ছিল অন্যরকম। আসলে বাগান বন্ধ হবার পর থেকেই এরা খানিকটা ক্ষোভেই কোনও ইউনিয়নের নেতাদের বাগানে ঢুকতে দেয়নি। নিজেরা পার্টির নানা রঙের বাইরে কেবলমাত্র বাগানের শ্রমিক হিসাবে নিজেদের অস্তিত্বকে বুঝে নিজেদের মত ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছে। দুই একজন মাতব্বর ছাড়া।

    প্রথমদিন থেকে ওদের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে দেখে আমরা ওদের বোঝাবার চেষ্টা করেছি যে, শ্রমিকরাই যৌথভাবে বাগানের মালিক হতে পারে। সহজ করে শ্রমিক সমবায় বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছি আমরা ওদের মাঝে। ঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারিনা যে কেন ওরা আমাদের এই সমবায়ের ধারণায় এতটা প্রভাবিত হল। সত্যি এমনভাবে আর কোনও বাগানেই এই সমবায়ের ধারণাকে বোঝাতে পারিনি আমরা। কিসের এত জোর ওদের আমি সত্যিই ব্যাখ্যা করতে পারিনা।

    ওরা প্রথমেই মনে করল যে বাগান ভালভাবে চালাতে গেলে বাগানে আরও অনেক চা চারা লাগাতে হবে। কারণ মালিক বাগানের ৬০% জায়গা খালি করে চলে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাগানে পুরনো গাছ তুলে নতুন গাছ লাগানো হয়নি। বেশিরভাগ গাছের বয়স ১০০ বছরের উপরে। সেগুলির উৎপাদনশীলতা প্রায় নেই বললেই চলে। মালিক শুধু লাভ করেছে, কিন্তু তার ছিঁটেফোঁটাও বাগানের উন্নয়নের কাজে লাগায়নি। ছিবড়ে করে নিংড়ে নিয়ে চলে গেছে বাগান ছেড়ে। তাই প্রথম কাজ হল বাগানে গাছের পরিমাণ বাড়ানো। সেই জন্য প্রথম বছরেই পাতা তোলার টাকা থেকে শ্রমিকদের মজুরী মিটিয়ে শ্রমিকরা সবাই মিলে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করে যে সব শ্রমিকরা দৈনিক দশটাকা করে দিয়ে একটা ফান্ড বানাবে বাগানের উন্নতির জন্য। প্রথম বছরের শেষের দিক থেকে শুরু হয় নতুন চা চারা লাগানোর কাজ। আমিও সেখানে একটা চারা লাগিয়ে ছিলাম। এখন যখন দেখি সেখান থেকে চা পাতা উঠছে, ভাবতে নিজেরই বেশ গর্ব হয়।

    এই তিন বছরে তারা ৩৫ হেক্টর জমিতে চা চারা লাগিয়েছে। এখনতো আবার জলসেচের ব্যবস্থাও করে ফেলেছে নতুন বানানো এই ৩৫ হেক্টর জমিতে। আমরা আই ইউ এফের আমেদাবাদের অফিস তুলে দিয়ে অফিসের ফার্নিচার বেচে ৩৭ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা ঐ জলসেচের খরচের জন্য দিয়ে দিয়েছি। আর আমাদের বন্ধু এবং আই ইউ এফ এর ইন্ডিয়া কোঅর্ডিনেটর সুজাতা ঘোটস্কর ওর এক বন্ধুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার করে এনে দিয়েছিল ওদের। এসব মিলিয়েও ওদের খরচের এক শতাংশও না। তবু ঐটুকুও যদি করা যায়। এই ভাবে চা চারা লাগানোর পাশাপাশি তারা আরও কিছু ভাবতে শুরু করল।

    এখন কেবল ঐ ওএমসি বা অপারেটিং ম্যানেজমেন্ট কমিটি না। কমিটি যাতে সর্বেসর্বা হয়ে উঠতে না পারে, তা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা সাব কমিটিও বানিয়েছে শ্রমিকরা, প্রত্যেক লেবার লাইন থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। এতসব শুনে আবার বেশি উৎফুল্ল হয়ে ওঠার কিছু নেই। কারণ, এই সমবায় এখনো একটা অভ্যাস মাত্র। তাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সরকারী সাহায্যের অভাবে ওরা এখনো আইনিভাবে বাগানের মালিক হতে পারেনি। কিন্তু সমবায়ের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে ওরা। আমরাও ওদের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

    ও হ্যাঁ ওরা আরও কি কি করেছে শুনলে বোঝা যাবে, আসলে নেওড়ানদীর মত টাটার বাগানের শ্রমিকরা ওদের মত বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের চেয়ে খারাপ আছে। ওদের শ্রমিকদের মজুরী এখন ৬০ টাকা। টাটার শ্রমিকদের ৬২ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু ৮ ঘন্টা শ্রমের বিনিময়ে। আর শিকারপুরের শ্রমিকরা খুব বেশি হলে কাজ করে ৫ ঘন্টা। অতএব ঘন্টা প্রতি শিকারপুরের শ্রমিকরা টাটার শ্রমিকদের চেয়ে ৪ টাকা বেশি পায়। টাটা ২০ বছর ধরে শ্রমিকের ঘরদোর মেরামতের কাজ করে না। বেশিরভাগ শ্রমিকদের কথায়, বাগানে বর্ষায় ভিজে কাজ করতে হয়, আবার বাড়ি ফিরেও সেই জলের নিচেই থাকতে হয়, কারণ ছাদের অবস্থা একেবারেই ভয়াবহ। আর শিকারপুরে শ্রমিকরা মিলে ঠিক করেছে, শুধু ঠিক করেছেই না, করেও চলেছে ঘর-মেরামতের কাজ। তবে সম্পূর্ণ মালিকের মত করে নয়, অবশ্যই। যদি শ্রমিকরা ঘর-মেরামতের কাঁচামাল জোগাড় করে, তবে কমিটি ঘর-মেরামতির জন্য যে শ্রম লাগে তার মজুরি দিয়ে দেয়। আবার ভুলে গেছি বলতে এই বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা পাতা বেচার টাকা ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী কী কী পায়। এরা রাজ্য সরকারের ফাওলই ( FAWLOI বা Financial assistance to the workers in locked out industry ) নামের একটি স্কিমের অধীনে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে পায়। কেন্দ্রীয় সরকারের অন্ত্যদয় অন্ন যোজনার অধীনে পরিবার পিছু মাসে ৩ টাকা কেজি দরে সাড়ে সতেরো কেজি চাল আর ২ টাকা কেজি দরে সাড়ে সতেরো কেজি গম পায়। এ সবই কাজ ও খাদ্যের অধিকার নামের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ফসল। এছাড়াও পায় বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসা। ১০০ দিনের গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের কাজ এই জেলার সব পরিবারেরই পাওয়ার কথা। এই বন্ধ বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলিও সেই কাজ পান।

    তবে এই সব সরকারি সুযোগ সুবিধা খুব সহজেই তাদের কাছে আসেনি। অনেক চিৎকার চেঁচামেচির ফসল হিসাবেই মোটামুটি রেগুলার এই সুবিধাগুলি বর্তমানে শ্রমিকরা পান। শিকারপুরের শ্রমিকরা একটু বেশি ভালোভাবেই এইগুলি পান, তাঁদের সংগঠিত প্রসেসের কারণেই। এই বছর পূজায় এখানের খবরের কাগজগুলিতে বড়বড় করে ছাপা হয়েছে যে এবছর মালিক ১৮% বোনাস দিচ্ছেন শ্রমিকদের। কিন্তু শিকারপুর দিয়েছে ২০% আর তার সাথে কালী পূজায় ১০০০ টাকার আর্থিক উপহার। কোন কাগজেই ছাপানো হয়নি। কারন ট্রেড ইউনিয়নের কোন কৃতিত্ব নেই এর পিছনে। আছে শ্রমিকদের যৌথ প্রসেস। যা ট্রেড ইউনিয়নের দায়িত্ব ছিল।

    নেওড়ানদী টাটার বাগানে গর্ভাবস্থার ছুটি না দেওয়া নিয়েই সমস্যার সৃষ্টি। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার এই ছুটি শ্রমিকদের ঠিক মত দেন না। ৬ মাস গর্ভবতী অবস্থাতেও পাতার বোঝা টানতে হয় রোদ্দুরের মধ্যে। অথচ আইন অনুযায়ী ৬ মাসের গর্ভবতী অবস্থা থেকেই মেয়েদের হাল্কা কাজ দেওয়ার কথা, আর সাড়ে সাত মাসের থেকে শ্রমিকের পাওয়ার কথা ৯০ দিনের ছুটি সম্পূর্ণ বেতনের সাথে। শিকারপুরের শ্রমিকরা তাদের কমিটির মারফৎ ৬ মাসের গর্ভবতী মেয়েদের কাজ করতে দেয় না। তাদের যে ফান্ডের অবস্থা তার পক্ষে বসে বসে মজুরি দেওয়া সম্ভব না। তাই তার বদলে পরিবারের কাউকে কাজ দেওয়া হয়। যাতে পরিবার তার মজুরিটুকু পেয়ে যায়।

    নেওড়ানদী বাগান সহ বহু বাগানেই শ্রমিকরা ঠিকভাবে চিকিৎসা পান না। হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে গেলে ওষুধপত্রের খরচ কোম্পানি দেয় না, যা কোম্পানির দেওয়ার কথা। টাটার বাগানে তো বাগানের হাসপাতালে ভর্তি হলে ওষুধের জন্য যা খরচ হয় তা তাদের অসুস্থ থাকাকালীন ছুটির সময়কার মজুরি থেকে কেটে নেওয়া হয়। আর অসুস্থ থাকাকালীন ছুটিতে শ্রমিকরা ৬২ টাকা ৫০ পয়সা পাননা। তারা পান মাত্র ৩৫ টাকা। সেখান থেকেও তাদের ওষুধের টাকা কাটা হয়। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। কারন মালিকদের পক্ষ থেকে চা শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়ার অজুহাত হিসাবে যা খাড়া করা হয় তা হল বিনামূল্যে এই সব সুবিধা প্রদান। টাটার বাগানে শ্রমিকদের রেশনের থেকেও খাদ্যশস্য কেটে নেওয়া হয়, যদি শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি থাকে আর হাসপাতাল তাকে খাবার দেয়। চূড়ান্ত অমানবিক, বেআইনি কাজ।

    অথচ শিকারপুরের শ্রমিক কমিটি বাগানের শ্রমিক অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার খরচ বহন করে যতটা সম্ভব। অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা করে। বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হলে তার বদলে ঘরের একজনকে কাজ দেওয়া হয়। এমনকি হাসপাতালে শ্রমিক থাকাকালীন যে ব্যক্তি তার দেখভাল করে তাকেও মজুরী দেওয়া হয়। খুব কম পুঁজি নিয়ে, তাও আবার নিজেদের শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত ঐটুকু পুঁজিতেও এতটা ভাবতে পারে ওরা। ওরা একেবারে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে অন্য শ্রমিকদেরকে। কিন্তু এখন সমস্যা হল যে কিছুতেই সরকারি ভাবে ওদের এই কাজের একটা আইনি স্বীকৃতি ওরা পাচ্ছে না। সরকার টি এস্টেটের ধারণার বাইরে যেতে পারছে না, যে করেই হোক একটা মালিক চাই তাদের। এখন এটুকুই থাক। শ্রমিকরা এতকিছু করছে এটা বুঝে উঠতেও খানিকটা সময় লাগবে যারা পড়ছে তাদের। সাধারণ দেখার বাইরেই কিছু একটা করে তুলছে ওরা। এর পাশাপাশি নেওড়ানদী জাতীয় বাগানগুলোকে নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকদিন বাদে বলব সেই সব কথা। আরও একটু বুঝে নিই আগে।


    ১লা ডিসেম্বর, রাত ১১টা ৪০ :

    এই মুহূর্তে কলকাতায়। কলকাতায় বসেই ডুয়ার্সের ডায়রি লিখছি। আসলে কলকাতা এসে থেকেই লক্ষ্য করছি, মনটা পড়ে আছে ডুয়ার্সে। বারবার মনে হচ্ছে কী যেন হচ্ছে সেখানে। যদিও ওদের উপর আস্থার অভাব নেই একটুও। আর আমার আস্থা থাকার কথা বলাটাই বোধহয় এক ধরনের অপরাধ। আমি কে ওদের উপর আস্থা রাখার বা হারানোর।

    কয়েকদিন ধরে বাগানের অবস্থার আলাদা কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমি নেওড়ানদী বাগানের কথাই বলছি। তবে ওই যে বললাম কলকাতায় বসেও মাথায় নেওড়ানদী বাগানের মানুষগুলির কথাই বেশি সময় ধরে ভেবে চলেছি। গতকাল ওদের একজনকে ফোন করে জানবার চেষ্টা করছিলাম বাগানের অবস্থাটা ঠিক কী রকম আছে। জানতে পারলাম সিবিএমইউ, মানে সিপিএম এর চা শ্রমিক সংগঠন, নাকি বাগানে কী সব মাস পিটিশন লেখার প্রক্রিয়া নিয়েছে। যদিও বাগানের আন্দোলনরত শ্রমিক অ্যাকশন কমিটি অনেকদিন আগেই একটা মাস পিটিশনের প্রোগ্রাম নিয়েছিল। যেটা ঐ কুলীন ট্রেড ইউনিয়নগুলির পছন্দ হয়নি। ওদের সেই পাঁচটা দাবীর কথা বোধহয় আগেই বলেছি।

    আমি বোধহয় ডুয়ার্সের এখনকার যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার কথা মোটেও বলিনি। গত লোকসভা নির্বাচনের বেশ কিছু আগে থেকেই ডুয়ার্সের রাজনীতির একটা অন্য চেহারা দেখা যাচ্ছে। গোর্খাল্যান্ডের দাবি ওঠে পাহাড়ে। পাহাড়ের সাথে সাথে তারা ডুয়ার্সও গোর্খাল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে। তখন থেকে শুরু হয় সমস্যা। ডুয়ার্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০% আদিবাসী জনজাতির মানুষ।


    ৪ঠা ডিসেম্বর, দুপুর ১২টা ০৭ :

    লিখতে বসেছিলাম ১ তারিখ রাতে। নানা কারণে কিছুতেই আর লেখা হয়ে ওঠেনি। তাই খাপছাড়া রয়ে গেলো বিষয়টা। ডুয়ার্সের চা বাগানের কথা জানতে গেলে ডুয়ার্সের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাটাও কিছুটা জানা দরকার। আমি খবরের কাগজের সংবাদের কথা বলছি না। যতটুকু আমরা দেখি, অনুভব করি, সেইটুকুর কথা বলছি। বিমল গুরুং-এর নেতৃত্বে গোর্খাল্যান্ডের দাবি আর সেই ম্যাপে ডুয়ার্সকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবির বিরুদ্ধে যে সংগঠনটিকে শাসক দল খুব যত্নের সাথে ব্যবহার করেছিল, তার নাম আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। বহুদিন আগেই সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের মধ্যে দিয়ে এই সংগঠনটি রেজিস্ট্রিকৃত। তবে অতীতের চরিত্রের থেকে এর বর্তমান চরিত্র অনেকটা আলাদা। তবে শাসক দল সেই সময় বুঝতেই পারেনি যে তাদের নিজেদের কবর তারা নিজেরা খুঁড়তে চলেছে। ডুয়ার্সকে গোর্খাল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত করার সত্যিই কোন মানে হয় না। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৭০% আদিবাসী। ওরাওঁ, মুন্ডা, পাহাড়িয়া, মালপাহাড়িয়া, চিক-বরাইক এই সব -- রাঁচি, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, ছোটনাগপুর থেকে আসা আদিবাসী মানুষজন। যাঁদের ইংরেজরা চা বাগানের সস্তা শ্রমিক হিসাবে খাটানোর জন্য তুলে এনেছিল তাদের ভিটেমাটি থেকে। তাদের নিজের বলতে কিছুই নেই। যে ঘরে তারা বাস করে, সেই ঘরের মালিকও সে নয়। টি এস্টেটের বন্দী প্রজা তাঁরা।

    যখন গোর্খাল্যান্ডের দাবি ওঠে তখন তারা আরও একবার শঙ্কিত হয়ে ওঠে যে হয়তো তাদের এই বাস করার অধিকারটুকুও থাকবে না। হয়তো আবার তাদের উদ্বাস্তু হতে হবে অদূর ভবিষ্যতে। একটি নেপালি মেয়ের সাথে কথা বলছিলাম একদিন। ওদের পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি ওরা কী ভাবে দেখে। কী ভাবে দেখে, ডুয়ার্সের অধিকাংশ জনসংখ্যাই যে আদিবাসী মানুষ এই ব্যাপারটা। মেয়েটি সগর্বে বলেছিল যে, ঠিক যেমন করে বাংলায় আদিবাসীরা আছে বা অন্য জাতির মানুষ আছে, তেমন ভাবেই গোর্খাল্যান্ডে তারাও থাকবে। ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি আদিবাসী মানুষগুলির। বাংলায় যে ভাবে তারা আছে, সেভাবে থাকার অর্থ কী তাঁদের জীবনে? তাঁরা তো অন্তজ শ্রেণীর মানুষের মতই থাকে এখানে। মেট্রোরেলের মাটি কাটা, চা বাগানের সস্তা শ্রম, এই তো তাদের জীবন, তাই পৃথক গোর্খাল্যান্ডে তাদের কী উন্নতি হবে? ঠিক এই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে তারা ডুয়ার্সকে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের ম্যাপের অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা শুরু করে। ওদেরকে স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাজে লাগায় শাসকদল। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি, একবার এই মানুষগুলি তাদের অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করলে, কথা বলতে শুরু করলে, দাবি জানাতে শুরু করলে, শাসক দলের রাজনৈতিক স্বার্থের মধ্যে এদের আর বেঁধে রাখা যাবেনা। হলও তাই।

    এখানকার এই আদিবাসী মানুষের প্রায় ১০০% চা বাগানের শ্রমিক। তাদের শ্রমিক-স্বত্তাকে তো মেরে ফেলা সম্ভব হয়নি। তাদের দাবি-দাওয়া গুলোয় তাদের সার্বিক উন্নতির সাথে, তাদের ভাষার অধিকারের সাথে সাথে, যে বিষয়গুলো সামনে এসে গেল, তা হল চা শ্রমিকদের বঞ্চনার কথা। সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে, তাদের চা শ্রমিক হিসাবে প্রাপ্য ন্যায্য পাওনাগুলোর কথা, যা তারা দীর্ঘ দীর্ঘ বছর ধরে পাননা, তার বিরুদ্ধে শুরু হল তাদের কথা বলা। দাবি করা। শাসক, বিরোধী সব ধরণের দলের জন্যই এই দাবিগুলো বেশ অস্বস্তিকর।

    এদের দাবিগুলোকেও খুব সুস্থ বলেই মনে হয়েছে আমার। সার্বিক উন্নতির দাবি। চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার মত ঘর, চিকিৎসা ব্যবস্থা, এগুলো সহ বাগিচা শ্রম আইনের মধ্যে থাকা আইনি সুবিধাগুলো, যা তাদের একান্তভাবেই প্রাপ্য। যুক্তিগুলো খুব স্পষ্ট এদের, চা শ্রমিকদের সুস্থ মজুরি না থাকলে, তাদের জীবনযাপনের সুস্থ ব্যবস্থা না থাকলে তাদের সন্তানদের চা শ্রমিক হয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। এই ভাবে দীর্ঘকাল ধরে তাদের বন্দী প্রজা হিসাবেই বেঁচে থাকতে হয়। কেমন যেন নিরুপায় হয়েই বংশপরম্পরায় চা বাগানের শ্রমিক হয়ে কাজ করে চলে। কাব্যিক ভাবে ভূগোল বইয়ে লেখা হয়, মেয়েদের নরম কচি কচি হাত চা পাতা তুলতে দক্ষ হয়। পিছনের নিরুপায় থাকার গল্পটা সামনে আসেনা কখনও।

    একটা মজার ঘটনা বলি এইবার পুজো বোনাসের সময়ের। পুজো বোনাসের আগে একটা নাটক চলে বোনাস বাড়ানোর। প্রতিবারেই এই নাটক মঞ্চস্থ হয় কলকাতায়। নেতারা ধোপদুরস্ত হয়ে এসি টু টায়ারে চড়ে কলকাতা যান। কোথা থেকে এত টাকা আসে কে যানে। যাদের সদস্যদের দৈনিক মজুরী ৬২ টাকা ৫০ পয়সা, তার এত দামী টিকিটে কলকাতা যান কেমন করে সে আন্দাজ করতে পারা এক রহস্য। এইবার আদিবাসী বিকাশ পরিষদ দাবী তুলেছিল, তারাও ঐ মিটিংএ থাকতে চান। সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন তার বিরোধিতা করে। ওরা নাকি ট্রেড ইউনিয়ন না। ওরা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু চাপে পড়ে গিয়েছিল তথাকথিত ট্রেড ইউনিয়নগুলো। এবছর মালিকরাও লাভ করেছেন যথেষ্ট। আন্তর্জাতিক বাজারে এই বছর চা এর অকশনে ন্যূন্যতম দাম গেছে ১২০ ডলার। ঘরের বাজারেও দাম উঠেছে অনেক বেশি। এক্ষুণি দামটা মনে পড়ছেনা। বিকাশ পরিষদের সামাজিক চাপের মুখে দাড়িয়ে ঐ নাটকে ১৮% বোনাস দেওয়া হবে ঘোষণা করা হয়। শ্রমিকরা সবাই খুশি।

    মাঝে একটা কথা বলে রাখি। না বলে পারছিনা। এই যে পারসেন্টেজ কষা হয় না? সেটা শ্রমিকরা কখনোই দাবি করেননি মালিকের মুনাফার উপর ওই পারসেন্টেজ কষতে হবে। তাঁরা জানেন তাঁদের এক বছরের মজুরির উপর ঐ পারসেন্টেজ কষতে হয়। তা তাদের মজুরি আর কত? মালিকরা ঐটুকু টাকা দিতেও নানা টালবাহানা করতে থাকে। নেতাদের সাথে নানা রকম বোঝাপড়া, নানা কিছু। যাই হোক। প্রতি বছর বোনাস যেদিন দেওয়া হয় বাগানে সেখানে ট্রেড ইউনিয়নগুলি টেবিল পেতে বসে পড়ে চাঁদা তোলার জন্য। যুক্তি এই যে, ওদের জন্য শ্রমিকেরা এই বোনাস পাচ্ছেন, তাই ওদের চাঁদা দিয়ে খুশি করাটা শ্রমিকদের কর্তব্য। এই বছর গল্পটা এক্কেবারে উল্টে গেছে। কোন শ্রমিকই ট্রেড ইউনিয়নকে চাঁদা দেননি। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের মেম্বার এখন তারা। তাই কোন ট্রেড ইউনিয়নই তেমন জোর গলায় চাঁদা দাবি করতে পারেনি। শ্রমিকদের অস্বীকার করতে পারার এই সাহসটা খুব ভাল লেগেছে আমার।

    এর আগে শুনেছিলাম, শ্রমিকরা এতই নেতা নির্ভর যে, কোনও মহিলাকে কোনও ম্যানেজার হাত ধরে টানলে তার বর বা সে নিজে ঘুরিয়ে থাপ্পড় দেওয়ার বদলে অপেক্ষা করে কয়েকদিন ধরে যে, কবে নেতা আসবে এবং বিচার করে যা ফয়সলা করবে তাই মানতে হবে। এই গল্পটার সাথে নেওড়ানদীর শ্রমিক বিক্ষোভের কোনও মিল নেই। একেবারে এই অভ্যাসটার বিরুদ্ধে গিয়েছে শ্রমিকরা। এইখানেই আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সাফল্য। আদিবাসী অস্তিত্বর সাথে সাথেই তারা শ্রমিকদের মধ্যে শ্রমিক অস্তিত্বটাকেও স্পষ্ট করতে পেরেছে। একটা অন্যরকম ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে ওঠার একটা বাস্তব ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এই সমগ্র অঞ্চল জুড়ে। যার জন্য শ্রমিকরা অপেক্ষা করছিল অনেকদিন ধরে।

    একজন বৃদ্ধ বাঙালি ভদ্রলোক, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ইতিহাস আছে তার, একদিন বললেন যে, শ্রমিকরা আসলে এই ট্রেড ইউনিয়নগুলোর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়নি, হয়েছে নেতাদের প্রতি। তারা আসলে এই ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সাথেই আছে। কী অদ্ভুত লেগেছিল কথাটা। মনে হয়েছিল অভ্যাসের দাসে পরিণত হয়েছেন এই পুরানো ট্রেড ইউনিয়নের মানুষগুলো। একদল না পাওয়া মানুষ যখন সদর্পে তাদের অস্তিত্ব স্বাধীনভাবে প্রকাশের কথা ভাবছে, তখন এই মনের গরিব মানুষগুলো কিছুতেই ভেঙে বেরোতে পারছে না তাদের অভ্যাসের দেখার বাইরে। কোথাও এদের বড়ই বিপন্ন মনে হয়েছে তখন।

    গতবছর অক্টোবর মাসে আমরা চা নিয়ে একটা ছবি করার সময় গিয়েছিলাম রিশপে। সেখানে চা বাগান নেই। গিয়েছিলাম মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলতে। মানে উত্তরবঙ্গের কিছু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্যামেরা-বন্দী করতে। যেদিন রিশপ পৌছলাম সেই দিন থেকে লোডশেডিং। পরদিন যখন আমরা বেড়িয়ে এলাম তখনও বিদ্যুৎ আসেনি। একটি ছোট ছেলের সাথে কথা হচ্ছিল ওদের জীবনযাপন নিয়ে। ও খুব সুন্দরভাবে আমাদের বলছিল যে কি ভয়ানক খারাপ অবস্থায় ওরা আছে। কোনও কিছুর সুবিধা নেই। পাহাড় চুষে নিয়ে গিয়ে সমতলের শহর সাজে। তখন গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে অন্যায্য মনে হয়নি সত্যি। ঠিক একই রকম ভাবে যখন এই ডুয়ার্সের আদিবাসী চা শ্রমিকদের দেখি, তাদের না খেতে পাওয়া, তাদের ভাঙাচোরা ঘর, চিকিৎসা না পাওয়া, ধুঁকেধুঁকে চলা জীবন, তখনও একইভাবে আদিবাসীদের উন্নত জীবনের দাবিকে অস্বীকার করতে পারিনা। পাহাড়ি গরিবগুর্বো গোর্খাদের সাথে ডুয়ার্সের এই আধপেটা খেয়ে বেঁচে থাকা আদিবাসীদের লড়াই কাদের জন্য? কারা ফয়দা লোটে এই লড়াই-এর। কী ভাবেই বা মিলবে এই মানুষগুলো তাদের সাধারণ স্বার্থের জায়গায়? প্রশ্নগুলো ভিড় করে আসে মাথায়। এক্ষুণি সদুত্তর নেই আমার কাছে।

    ৫ই ডিসেম্বর, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ | ৯৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন