একজন কালবেলা হঠাৎ পৃথিবীতে।
নিভে গেল পাখিদের মেহেবুব। পালকের দল ছিন্নভিন্ন। দূর্বাদলের লাস্য গেল ঝরে। ময়ূরবীণা স্তব্ধ!
বর্ষাতিথি ভুলে গেল সমুদ্রের ছিটকিনি খুলে দিতে। ডাকব্যবস্থার ধুলো, গড়াগড়ি বন্ধুসখার কলিংবেল। কে কাকে দেবে উপহার ডাহুকের সাটিনগ্রীবা। রোদের হারমোনিয়ামই বা শেখাবে কোন সরগরম। কবে হবে শুরু নীহারিকার পত্রলেখা!
বন্দী হল মাধবীশিশুর মধুপনা। কিশোর কিশোরী ভুলে গেল খুনসুটি।একে একে নিভলো বেলোয়ারি। মৌচাক-সবুজ সিঁথি নিভিয়ে দিলো অরণ্যের ধুনীকুণ্ডলী। রানার হারালো কোকিলের ঠিকানা। কুহু হারালো মানুষের নিধুবিলি।
রবিঠাকুর মানলেন না হার। খোয়াইনদীর খেয়ালতরীতে বসে তিনি বাঁধলেন ইচ্ছেভোর, সারামুখ আলোজ্যোতি মালঞ্চ, তারপর সেই তোরঙভরা নিরাময় উপহার দিলেন লাবন্যকে। অমিতকে শেখালেন সাতপাক অমৃতজ্যোতির ভাণ্ড। তরুণীর সাজে সেজে উঠলো চম্পকগীতির গীতবিতান।
রবীন্দ্রনাথ মেলে দিলেন তেষ্টার বাহু। সঙ্গীত ভবনের আলখাল্লায় ফুটে উঠলো পিপাসার্ত শান্তিনিকেতন।
জীবনানন্দও পিছিয়ে থাকলেন না। সদ্যরং অন্তরার আতরভ্যানের সঙ্গে পরিচিত হলেন। পলাশরুদ্র ঘরে ফেরার আলিঙ্গনটি তাঁকে শেখালো তরুআকাশ, কুসুমগোল অভ্যর্থনার কবিতাচুক্তি।
মগজে ঝিকমিক বনলতার বিদ্যুৎ। নাটোরনাচের চন্দনে মত্ত হল ধানসিঁড়ি।
গদ্যের গয়নাঘাটে ক্রমশ শক্তিশালী লেখা-বন্দর, পদ্যজেটি। এখুনি না লিখলেই নয়। জীবনানন্দের কলমে দ্রুত গতির চারুহ্রদ, বিষুবঝুমকার কেদারবদ্রি। এখন, মৃত্তিকাও তুমুল চম্পকময় এবং তুঙ্গ যমুনাবতী। জীবনানন্দ কাউকেই ফেরালেন না। আয়নার সরল মুকুরে ছড়িয়ে দিলেন উদবেল হাসির মায়াঝঙ্কার। মানুষের চোখে লাফিয়ে উঠলো স্বপ্নওম। টানা গদ্যে শুরু হল আঁকা তুলিশিসের চাঁদসূর্য এবং হিমালয়মণ্ডলের গল্পগাছা এমনকি ত্রিপল্লবের ভূমিবৈদূর্য।
বিখ্যাত চিত্রকর, নাম মহাকাল। দেশে-বিদেশে তাঁর চিত্রকল্পগুলি হেসে ওঠে এক নিমেষে।
তিনিও হাতে তুলে নিলেন অপরাজিতা। অপরা অমলতাসের বিভূতি দিলেন বসুধাকে। রিমঝিম ধ্বনি, সাজলো পরমা প্রকৃতি। চটজলদি প্রদোষ আর যামিনী আঁকলেন, মোমরঙের সাথে সামান্য গর্জনতেল মিশিয়ে। মোহন-উতল সরস্বতীর ঢেউ। ঊষাদেবীর পোষা মুকুর এসে বসলো মঙ্গলঘটের চূড়ায়। নিপুণ তান, শুদ্ধস্বরে লেখা হল দর্পণমুরলী এবং আয়ুষ্মতী কোজাগরী।
শিশুরা আবার বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। স্কুলের আলপথগুলি মেলে দিল পেন্সিলের ডানা। কিশোরী সাজলো সরলঅঙ্কের আভায়। কিশোরের হাতে টগবগ পাটিগণিতের ঘুড়ি। অরণ্য মেলে দিলো সবুজ চুমকিপরা পরিমিনার। যুবতী নদীরা মাতলো নববিবাহের মাতলায়। ছুটলো রানার, ডাকঘরের কাঁধে অজস্র সানাই, শুভ ইচ্ছের শঙ্খআঙিনা।
দিগন্তের উদ্যানে বোগেনভেলিয়ার টহল হল শুরু আর হাস্নুহানার নিপাট ঘরেফেরা। আশাবরীর রাগজ্যোৎস্না মেলে দিল মায়াবী চুম্বকলতার গৃহ এবং লক্ষ্মীশ্রী।
দৃশ্যটি আশায় অজস্র সৎবরজ আর ভরসায় উজ্জ্বল রাঙা, আর কবিয়ালের ছবিটিও আনন্দশ্রেষ্ঠ হোমরাজির বিভূতি!
এবার নিশ্চয়ই ভাঙবে ঘুম শ্রীমতি ছন্দ পয়ার পৃথিবীর আঁকবেন মহাকাল, প্রকৃত মানুষের সংজ্ঞা।
শব্দের নিপুণ ব্যবহার,তীক্ষ্ণ অনুভব।ঋদ্ধ হলাম।