আম খাওয়ার একটা পদ্ধতি গান্ধিজি শিখিয়েছিলেন বিদেশি সাহেবকে। সে পাকা আম।
পরশুরামের 'উলট পুরাণ' সাহেবদের সভ্য হতে আম খাওয়া অভ্যাস করতে হচ্ছে বাথরুমে গিয়ে।
এও পাকা আম। বাবর আক্ষেপ করেছিলেন, এদেশে আঙ্গুর তরমুজের মতো রসাল ফল নেই বলে। পরে এ-দেশে ও চাষ করান আঙ্গুর তরমুজ। কিন্তু বাবরের নাতি মজে গিয়েছিলেন আমে। তাঁর মনে হয়েছিল, ভারতীয় আম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফল। শাহজাহানের আম প্রীতি তো সুপ্রসিদ্ধ। ছেলে আওরঙ্গজেবকে অনুযোগ করছেন, দাক্ষিণাত্যের ভালো আম একাই খেয়ে ফেলছো নাকি হে! বাবার জন্য কিছু তো পাঠাও।
মুঘল সম্রাটদের পুত্ররা বুঝে গিয়েছিলেন সিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী হতে গেলে শুধু বীরত্ব দেখানো বা রাজস্ব প্রেরণ নয়, উৎকৃষ্ট মানের আম পাঠাতে হবে। ভালো আমবাগান তৈরি করে নতুন নতুন আমের কলম তৈরি করতে হবে। এক পুত্র তো আওরঙ্গজেবকে আম পাঠিয়ে অনুরোধ করলেন, আমের নামকরণ করে দিন।
তথাকথিত 'হিন্দু বিদ্বেষী' আওরঙ্গজেব আমের নামকরণ করলেন হিন্দু শাস্ত্রের সেরা পানীয়র নামে-- সুধা।
পাকা আম গ্রামের গাছে পাওয়া যেতো ঠিকই কিন্তু অর্ধেক আম কাঁচা অবস্থায় যেতো ছোটোদের পেটে। বড়রাও বাদ যেতেন না। গ্রীষ্মের দুপুরের আগে বেলা ১০ টায় তো জলভাত আলুছানা (আলুভর্তা) খাওয়া চলতো। অনেকেই পান্তা খেতেন। আমরাও খেয়েছি। চিংড়ি শুঁটকি মাটির খোলায় ভেজে ছোট পেঁয়াজ কাঁচা লঙ্কা নুন তেল আর লেবু দিয়ে মেখে। তার যে কী স্বাদ। চিংড়ির দু এক টুকরো পান্তার জল বা আমানিতে ভাসবে। চোঁ চোঁ করে মেরে দিলে বাঙালির ভদকা আপনার দিবানিদ্রাটি উত্তম করে দেবে।
বড়রা গোয়াল ঘরে তাল গাছের তাড়ি খেতেন চানাচুর আর কাঁচা পেঁয়াজ লঙ্কা মেখে। গিয়ে বউয়ের গাল খেতেন। মুসলিম মহিলারা গালাগালিতে বড়ই ইনোভেটিভ।
ফলনা...নি তার মধ্যে একটি। ফলনাটি যে কী?
আর চার কাহারে যাওয়ার কথা তো আগেই বলেছি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলাদের সঙ্গে একটি তীব্র মনস্তাত্ত্বিক তফাৎ সাধারণভাবে এখানে আছে। সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলা স্বামীর মৃত্যু কামনা করেন না। সাত পাকে বাঁধা পড়ে সাত জনমের সম্পর্ক। স্বামী পরিত্যক্তা মহিলারাও স্বামীর নাম করে সিঁদুর দেন। শিব পূজা করেন। সাধারণভাবে মুসলিম মহিলাদের এই প্রীতি তো গাঢ় নয়, স্বামী নামক আইডিয়া গেড়ে বসেনি মস্তিষ্কে ও চিন্তায় নারী স্বাধীনতার কারণে। করলুম নি তোর ঘর। খেটে খেতে হবে, খাব। ভাতার দু চড় থাপ্পড় দিলে ফিরিয়ে দিতেও তাই পরাঙ্মুখ নন সবুজ নালীঘাসের জীবনীশক্তির অধিকারী মহিলারা।
আর না পারলে সুর করে করে গাল দেওয়া থামায় কে?
তবে বর বউ ছেলে মেয়ে দাদি দাদো সবাই আমের ছেঁচকি খেতে একজোট। হামানদিস্তা বা শিলে আম নুন লঙ্কা একসঙ্গে বেঁটে, আধো আধো করে, সবাই চেটেপুটে খাবে।
আম ছিলার জন্য মাঘ মাসের ওলাইচণ্ডী পূজার মেলায় কেনা বাহারি ছুরিগুলো ছোটরা এই সময় কাজে লাগাত। আর ঝিনুকের খোলা ঘষে মাঝখানে ফুটো করে আমের খোসা ছাড়ানোর বাহাদুরিই আলাদা। শীতকালে পকেটে থাকতো মার্বেল আর পাথরের ভাটা। এইসময় এক পকেটে ছুরি বা ঝিনুকের খোলা, অন্য পকেটে নুন লঙ্কা ।
এই আম শুধু মানুষের দল খেতেন না, আসতো হরেক পাখি। রাঢ়ের গরম বড় তেজালো।
সেই গরমের ঝাঁঝ কমাতো পাখিদের আনাগোনা।
এই পাখিদের মধ্যে টিয়ার দল ছিল অনবদ্য। লাল ঠোঁট সবুজ রঙের পালকময় পাখি জীবনের বিন্যাস বিনির্মাণে সহায়ক।
জীবনে কোনো রঙ অপ্রিয় নয়। Wrong খারাপ। রঙ নয়। বোঝাত পাখির দল। টিয়া পাখি লঙ্কা খেতে খুব ভালো বাসতো। বিশেষ করে লাল রঙের রঙিন লঙ্কা। এগনে বা আঙিনায় শুকোতে দিলে পাহারা দিতে হতো।
দাদির কাজ ছিল কাক আর টিয়াদের হুস হুস করা। বড়ি শুকোচ্ছে, আচারের বয়েম আছে, কাঁচা লঙ্কা শুকোচ্ছে, বাজার থেকে কিনে আনা ধনে জিরা ধুয়ে রোদে শুকোতে দেওয়া হতো। সেগুলোও যাতে খেয়ে না নেয়।
আর শুকোত ধান। সিদ্ধ ধান। তখন তো কথায় কথায় লোকে যন্ত্র নির্ভর হয়নি।
ঘরেতেই সেদ্ধ শুকুনো হতো। বলা হতো ধান সিজোনো। মুড়ির চাল দু বার সিজানো হতো। একবার সিজিয়ে জল ঝরিয়ে চৌবাচ্চা বা কড়াইয়ে একদিন রেখে আধফোটা হলে আবার সিজিয়ে শুকিয়ে নাও। তারপর মুড়ির চাল ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চাল করে মুড়ি ভাজো বালি দিয়ে খোলায়।
এই বালি আনা হতো নদী থেকে। বালি পুড়ে কালো হয়ে গেলে আবার নতুন বালি দাও।
আর হতো চালভাজা। হলুদ নুন মেশানো চাল ভাজা হতো কুসুম বীজ দিয়ে। বাদাম থাকতো মাঝেমাঝে। সে যে কী স্বাদ। গায়ে একটু খাঁজ কাটা কাটা দেখাতো। খাসকানি বা গোবিন্দভোগ চালের চালভাজা অতুলনীয়।
বিয়ে শাদিতে হতো হলুদ মুড়ি। আখের গুড় মিশিয়ে হতো মুড়ির মোয়া। কাচের বয়ামে ভরে রাখা হতো।
গ্রামে অভাব ঢুকতে শুরু করতো গরমকালেই। বেশিরভাগ মানুষ গরিব। মধ্যবিত্ত ৩০%। চাকুরিজীবী দুই গ্রাম মিলিয়ে আট জন। ছয় জন শিক্ষক। দুজন পিওন ও দপ্তরী। মাইনে পত্রও অনিয়মিত। মধ্যবিত্ত কৃষকদের কষ্ট শুরু হতো কার্তিকের পর। ধানের গোলা শেষ। কলকাতায় যারা কাজ করতেন, হাইকোর্টের রায় টাইপের প্রেস বা নিকেল পালিশের কারখানায় তাঁদের ছাড়া বাকিদের অবস্থা করুণ।
আমার লেখায় খাওয়ার গল্প শুনে মনে হতে পারে অনেকের ছছল-বছল জীবন। ঠিক তা নয়।
আমাদের গ্রামের বৈশিষ্ট্য ছিল, আদিবাসী ও মোগলাই মেশানো। আরে যতক্ষণ আছে, খেয়ে নে। পরে দেখা যাবে।
এর ফল আমরা খুব ভুগেছি। সঞ্চয়ের মানসিকতা ৯৮ শতাংশ মানুষের ছিল না।
আমার বাবার তো বিন্দুমাত্র ছিল না। শেষ জীবনে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করেন।
প্রতি বছর জমি বিক্রি।
মেয়েদের বিয়ে মানেই জমি বিক্রি। সেই বিক্রির টাকায় হাজার খানেক নিমন্ত্রণ। খাওয়া দাওয়া অঢেল।এছাড়া কার চিকিৎসার টাকা নাই, কার সম্পত্তি বাঁধা পড়েছে, ছাড়াতে পারছে না, ক্লাবের ছেলেরা বুট নেই বলে ফুটবল ম্যাচে মার খাচ্ছে, এছাড়া সত্তর দশকে পার্টিকর্মীদের মামলার খরচ --ইত্যাদি কারণে জমি বিক্রি ছিল।
পার্টি ক্ষমতায় এসে আরো খারাপ হলো। লোকজন আসা বেড়ে গেল। বাবা জমি চাষে মন দেওয়া ছেড়ে দিলেন।
আশ্বিন মাসে আমরা আশির দশকে, রাতে দুধ ভাত সঙ্গে আলু ভর্তা বা চিচিঙ্গা ঝিঙ্গার তরকারি খেয়েছি।
চাঁদনি রাতে এগনেয় বসে খেতে খুব রোমান্টিক লাগতো।
কিন্তু আমি বাজার যেতাম - বুঝি কী কষ্টে মা টাকা জোগাতেন। বাবার দেখা নেই। আন্ডাহারি আসতো। ডিম বেচা পয়সায় আলু আনতাম। বেশিরভাগ দিন এক কিলো। একদিন পাঁচশো আলু কিনতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। দোকানি রবি ছিল চেনা। পঁয়ত্রিশ পয়সা কেজি আলু। আমি পাঁচশো আলু কিনছি, সেও বিস্মিত।
আমি বললাম, লজ্জা ঢাকতে, আজ বেশি লাগবে না রে!
মা যে কী করে সংসার চালাতেন আশ্বিন কার্তিক মাস কে জানে!
ধানের মড়াই গ্রামের সবার, এক, সুদের মহাজন, ছাড়া ফাঁকা হয়ে যেতো। তখন ১০০ দিনের কাজ নেই, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নেই, মধ্যবিত্ত ঘরগুলোতে দৈনিক চাইতে আসা লোকজনের ভিড়।
এখনকার গ্রাম আর সত্তর আশির দশকের গ্রাম এক নয়। আশির দশকের শেষে বাবা গ্রামে সমবায় সমিতির মাধ্যমে ৮০ টি সাবমার্শিবল বা অগভীর নলকূপ স্থাপন করলেন, গ্রামে অভাব কমল।
অভাবের পিছনে একটু বাঙালি না মোগলাই জানি না, স্বভাবও দায়ী ছিল।
ধরুন, দুপুরে পাঁচ খানা তরকারি দিয়ে খেয়েছি, তিন রকম মাছ, পুকুরে মাছ ধরা হয়েছে যে, রাতে ডাল আলু সেদ্ধ।
মাছ আর নাই।
একটা কারণ হতে পারে, ফ্রিজ ছিল না কারো ঘরে। বিদ্যুৎ ও থাকতো না।
গ্যাসের গ্রাসে যায় নি গ্রাম। এবার বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করতে হবে, কটা গ্যাস, কটা ফ্রিজ আছে।
আগে খড় কুটি কাঠ বাঁশ দিয়ে মাটির চুলায় রান্না। চুলা বিচিত্র ধরণের। এক চুলা, দুই চুলা, তিন চুলা। তিন চুলা মানে এক সঙ্গে তিন তরকারি বসবে। ভাতের হাঁড়ি সবসময় এক চুলা। অনেক লোক। ভাতও খায় অনেক। একেক জন তিন চারশো চালের। এখনকার ঝাড়খণ্ডের গ্রামের সঙ্গে সত্তর আশির দশকের পূর্ব বর্ধমানের গ্রামের খুব মিল পাই।
সঞ্চয়ী ও হিসেবি মানসিকতার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
আমি ভর্তির পরীক্ষা দিয়ে কোনোক্রমে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।
আমার ভর্তি হওয়া হয় নি। দুটি কারণে। এক, রাজনীতি করি, রাজনীতি করার চেষ্টা করে যদি বহিষ্কৃত হয়ে যাই। দুই, অর্থাভাব।
৫৪০ টাকা জোগাড় হয় নি। তার মধ্যেই একজনের বিয়েতে ১২০০ লোক খাওয়ানো হয়েছে। বাবা আমার তীব্র ইচ্ছা ও কষ্ট দেখে বললেন, কলকাতায় যা, এক বিঘা জমি বেচে দিচ্ছি, এক হাজার টাকা পাবি। ভর্তি হ।
শিশির মহারাজকে প্রণাম। তিনি আমার ভর্তির জন্য বাড়তি দিন বরাদ্দ করেছিলেন। কিন্তু জমি বেচার টাকায় পড়তে ইচ্ছে হয় নি।
যদিও আমি খুব চেষ্টা করেছিলাম, কিডনি বিক্রি করেও ভর্তি হওয়ার। হয়তো সাহেব নাটক শোনার ফল
তখন তো এতো জানাশোনা হয়নি, যে, কিডনি কেনার লোক পেয়ে যাব।
মানিকতলা খালপাড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ফুটপাতের বইঘর প্রতিষ্ঠা বা পড়ালেখার জন্য আমার সর্বস্ব দিয়ে লড়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ, পয়সার জন্য নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি হতে না পারার তীব্র যন্ত্রণা।
এই যন্ত্রণা হওয়ার একটা ইতিহাস আছে। খিদে যন্ত্রণা ও অপমানের ইতিহাস।
১৯৮২। মাধ্যমিক দিয়েছি। ম্যালেরিয়া নিয়েই। পরীক্ষা ছিল ২ মার্চ। এক অমানবিক অবৈজ্ঞানিক অমার্কসিয় সিদ্ধান্ত ছিল তখন ২৩ কিলোমিটার দূরে পরীক্ষা দিতে যাওয়া। আমাদের স্কুল থেকে আমাদের বাড়ি ছয় কিলোমিটার। স্কুল থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র আরো ১৭ কিলোমিটার। বাসে তখন লাগতো ঘন্টাখানেক। এখন বোধহয় চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট। রাস্তা ঝরঝরে। বাস লঝঝরে। প্রায়ই চাকা পাংচার হয়ে যায়। তাতে আরো আধঘন্টা। দিনে দুটো করে পরীক্ষা।
তিন তিন ছয় ঘন্টা।
এইসব অমানবিক শিক্ষাকর্তাদের এখন চাবকাতে ইচ্ছে হয়।
শুধু মর্ষকামী বড়লোকিপনা।
একটা ছেলেকে তাহলে সকাল ১০ টায় পরীক্ষা দিতে হলে সকাল ছয়টায় বের হতে হবে। বিকেল পাঁচটায় পরীক্ষায় পরীক্ষা দিয়ে রাত ১০ টায় বাদুড় ঝুলে ফিরবে। পরদিন আবার পরীক্ষা। ছুটি নাই।
এঁরা আবার বৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতির গপ্পো শোনাতেন!
তো বাধ্য হয়ে সবাই, বর্ধমান শহরে বাড়ি ভাড়া নিতেন। তখন ভাগ্যিস মাঘ ফাল্গুন। ঘরে টাকা থাকতো। মেয়েদের পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার একটা বড় কারণ ছিল, বাইরে পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোথায় কাদের সঙ্গে থাকবে? পয়সা পাবে কোথায়? বাইরে ঘর ভাড়া করে বাইরে খেয়ে পরীক্ষা দেওয়া চাড্ডি খানি কথা।
আমার ম্যালেরিয়া হয়।
সেই অবস্থায় বাবা ও আমি পরীক্ষার দুদিন আগে সারারাত জেগে শিবরাত্রির রাতে শ্যামসুন্দর কলেজের মাঠে সিনেমা দেখি। বাবাই চাদর ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে নিয়ে যান। ভয় দাদা যদি জেনে যায়। দূরে সাইকেল থেকে আমাকে নামিয়ে দেন বাবা। আমি চাদর মুড়ি দিয়ে দাদার বন্ধুদের লুকিয়ে সিনেমা দেখি।
প্রধান আকর্ষণ ছিল, গণদেবতা।
তিনটি ছবি ছিল। দু টাকা টিকিট। শাপমোচন, সাগরিকা আর গণদেবতা। 'গণদেবতা' সবার শেষে। অসাধারণ ছবি তরুণ মজুমদারের। ওর আকর্ষণেই যাওয়া। পড়াশোনার মাহাত্ম্যর চেয়ে যাত্রা নাটক সিনেমার আগ্রহ ছিল বেশি। যদিও তখন আমি আমার স্কুলের প্রথম।
সারারাত জেগে ধুম জ্বর। পরদিন গোরুর গাড়ি করে যাচ্ছি আটজন। বড়োমামার তত্ত্বাবধানে। আমার প্রিয় বন্ধু ও মামাতো ভাই বড়োমামার ছেলেও পরীক্ষা দেবে। মোট আটজন। হাঁড়ি পাতিল চাল ডাল আলু সবজি ডিম সব উঠেছে।
আমি আলাদা থাকবো। ডাক্তার চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়ের ভাইপো বৌ আমাদের প্রিয় মাসিমার কাছে। বাকিরা নিখিল মজুমদার, আজম, কালাম, নজরুল, মন্টু, রবিয়েল--।
তো আমি গাড়িতে উঠেছি। ১০২ জ্বর। বাবা হঠাৎ এসে হাজির । বাবা কোন ক্লাসে পড়ি কী পড়ি খেয়াল রাখতেন না, কে বোধহয় বলেছেন, তোমার ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে জ্বর গায়ে, আর তুমি পার্টির কাজ করে বেড়াচ্ছ?
বাবা এসে গায়ে হাত দিয়েই বললেন, এতো জ্বর পরীক্ষা দিতে যেতে হবে না।
আমি বললাম, যাবই।
বাবার এক বাঁধা নাপিত ছিল। সেখানে পলাশনেই চুল কাটতে যেতে হতো। সেখানে এক জ্যোতিষী আড্ডা দিতেন। তিনি বলেছিলেন, আমাকে দেখে, এ ছেলে খুব রোগে ভুগবে? আর রেজাল্ট? সেকেন ডিভিশন হয়ে যাবে!
সেকেন্ড শব্দটায় আমার খুব রাগ ছিল।
আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ফেল করবো, থার্ড ডিভিসন পাবো, তবু সেকেন্ড ডিভিসন পাবো না।
বাবা সামনে ছিলেন।
হঠাৎ কমিউনিস্ট বাবার বোধহয় সে কথা মনে পড়েছে, বললেন, সেকেন্ড ডিভিসন হয়ে যাবে, এই জ্বরে পরীক্ষা দিলে।
আমার তখন দুটো চিন্তা।
এক পরীক্ষা না দিলে পিছিয়ে যাব।
আর দাদা জেনে যাবে, পরীক্ষার দুদিন আগে সিনেমা দেখতে গিয়ে ম্যালেরিয়া রোগীর জ্বর বাড়ানোর কথা।
আমি বললাম, যাব।
বাবা যেতে দেবেন না। আমি গোরুর গাড়ির বাতা ধরে বসে আছি।
শেষে মুশকিল আসান হলেন, বড়োমামা।
বড়োমামা রাশভারি মানুষ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বললেন, দুলাভাই, ইয়ার নষ্ট হবে যেতে দিন।
যাক, পরীক্ষা তো দিলাম। দিয়ে ফেরার দিন ঝামেলা আবার। সেহারাবাজারে এসে বিডিআর তথা ছোটো রেলে এসে গোপীনাথপুর স্টেশনে নেমেছি। বাবা নিতে এসেছেন। পরীক্ষার সময় একটা অঙ্ক করতেই ৪০ মিনিট কাটিয়ে দিই। ফলে সমস্যা হয়। সেকথা বাবাকে বলতেই বাবা বললেন, বলেছিলাম, পরীক্ষা এবার দিস না।
কথা কাটাকাটি।
আমি ঘরে ফিরেই পালালাম ঘর ছেড়ে।
সেই আমার প্রথম ঘর ছেড়ে পালানো।
প্রথম গেলাম হরেকৃষ্ণ কোঙারের আদি বাসভূমি কামারগড়িয়া গ্রামে। দাদার বন্ধু উদয় সরকারের সঙ্গে। উদয়দা তার আগে। তিন বছর আমাদের বাড়ি ছিলেন।
উদয়দার সঙ্গে ফিরে যোগ দিলাম পার্টির দেওয়াল লেখার কেন্দ্রীয় টিমে।
খুব আনন্দ।
আমি তো তখনো জানি না, বর্ধমান শহরের আমার ভাবী সহপাঠীরা পরীক্ষার পরের দিন থেকে একাদশ শ্রেণির পড়ার কাজ তথা টিউশনি শুরু করে দিয়েছে।
তো আমাদের দল প্রায় ৩০ কিমি এলাকা জুড়ে দেওয়াল লিখে বেড়াতে লাগল। দামোদর নদের ধার পলেমপুর থেকে উচালন পর্যন্ত।
রাস্তার ধারের যত দেওয়াল লিখবো আমরা। হোটেলে খাওয়া, রাতে সেহারায় পার্টি অফিসের বারান্দায় বা কোনো স্থানীয় কমরেডের বাড়িতে মশারি ছাড়াই ঘুমানো।
আমার দ্বিতীয়বার ম্যালেরিয়া হল।
তবু আমি বাড়ি ফিরলাম না।
এই করতে করতে একদিন ভোট হয়ে গেল। বাড়ি ফিরলাম। এরপর ফল বের হল। এক বন্ধুর বিয়ে হয়েছে তার দুদিন আগে। তাঁদের মোটরসাইকেল নিয়ে ফল দেখতে ২৩ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান যাচ্ছি। তখন গেজেট বের হতো।
গেজেট বের হওয়ার পর বেতারে খবর। সেই শুনে যাওয়া। মাঝে সগড়াই মোড়ে দেখি একজনের কাছে গেজেট।
বিয়ের বর দেখলাম প্রথম শ্রেণিতে পাশ করে গেছে ভালো নম্বর পেয়ে। আমার নম্বর নাই।
চুপচাপ ঘরে এসেছি।
কী হলো?
এ-রকম পরীক্ষা তো দিই নি।
তারপর অ্যাডমিট কার্ড দেখতে গিয়ে দেখি বরের রোল নম্বরটাই আমার নম্বর।
তাঁর মানে ওঁরটা নেই।
নতুন বৌ, আত্মীয় স্বজনের ভিড়।
সবাই বরের ভালো ফলে আনন্দ করছে, করুক।
এর একদিন পর চাঁদু মামা খবর পাঠালেন, বাসশ্রমিকদের একটা সংগঠন হচ্ছে। তার সাইনবোর্ড লিখে দিতে হবে।
সাইনবোর্ড লিখছি।
জ্বর গেছে। চিহ্ন রেখে গেছে। কাশি হচ্ছে। কাশছি।
দেখি একজন বয়স্ক ভারি চেহারার সুদর্শন মানুষ বিদেশি ধরনের পোশাক পরা, বললেন, এ কাশে কেন? কাশির ওষুধ আনাও।
কাশির ওষুধের দাম ৬ (ছয়) টাকা। আমি বিব্রত। ছয় টাকা তো আমার কাছে নাই।
দাম দেবো কী করে? বললাম, আনতে হবে না।
কেন?
এমনিই সেরে যাবে।
কী কথা? বলে, সাহেবি উচ্চারণে, ইংরেজিতে বললেন, এঁরা কী অদ্ভুত! বলে, ওষুধ ছাড়াই কাশি সেরে যাবে।
তারপর, আমার দিকে ফিরে বললেন, চিন্তা নেই, তুমি পুরো টাকাই পাবে।
আমি চুপ।
জিজ্ঞেস করলেন, নাম কী? এই বয়সে পড়াশোনা না করে সাইনবোর্ড লিখে বেড়াচ্ছি কেন? ক টাকা পাই? বাড়িতে কে আছেন?
আমি চুপ।
বললেন, পড়াশোনা করো না কেন?
তখন চাঁদুমামা মুখ খুললেন, ও তো আমাদের এনাম ভাইয়ের ছেলে। দাদার নাম করে বললেন, ওঁর ভাই, স্কুলের ফার্স্ট বয়। এলাকার ভালো ছেলে। মাধ্যমিক পাশ করেছে লেটার পেয়ে ইত্যাদি।
তার কদিন আগেই পরেশবাবু আমার মাধ্যমিকের ফল দেখে দেয় কিলোমিটার জুতো নিয়ে পিছু পিছু দৌড়েছেন-- দূর হ বলে।
আমি চুপ।
ভদ্রলোক এবার রেগে বললেন, একটা সংশোধনবাদী পার্টি মুসলিম ভালো ছেলেগুলোর মাথা খাচ্ছে। পার্টির ক্যাডার বানাচ্ছে। তোমার দাদাকেও তাই করেছে। তোমাকেও করবে।
এখানে তোমার পড়া হবে না।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে যেতে হবে।
নরেন্দ্রপুর স্বপ্নও দেখিনি।
খুব বেশি হলে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুল। তাও ভাবি নি।
পরের দিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকে পাঠালেন।
বললেন, সাহেব এসেছিলেন। তোমার এখানে পড়া চলবে না। তোমার প্রতিভা আছে। ডিসপ্লিন দরকার। রামকৃষ্ণ মিশনে যাও। তোমার ভালো হবে। আমাদের মুখও উজ্জ্বল করবে। এখানে থাকলে পার্টিবাজি করে মরবে।
আমার স্কুলে তোমার ফর্ম ভরার দরকার নেই।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন, স্যার আমি কি সুযোগ পাবো? পরীক্ষা হয়।
আমি বলছি, তুমি সুযোগ পাবে। এই কদিন মন দিয়ে পড়ো।
সাহেবের নাম সৈয়দ মহবুল্লাহ। গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। অসাধারণ পণ্ডিত সৈয়দ শাহেদুল্লাহ ও তৎকালীন বিধানসভার অধ্যক্ষ মনসুর হাবিবুল্লাহর দাদা।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম অসংগঠিত শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলা মানুষ।
পরের দিন ছোটো মামা আমাকে নিয়ে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে নিয়ে গেলেন।
ফর্ম নিয়ে রাতে ফিরলাম মামার সঙ্গে।
দুদিন পর প্রত্যয়িত ইত্যাদি করে জমা দিতে গেলাম। মামা রাস্তা চিনিয়ে দিয়ে এসেছিলেন।
ভোর তিনটায় উঠে তিন কিলোমিটার উঠে ভোর চারটে ৪৫ মিনিটে প্রথম বাস আমাদের ভাষায় ফার্স্ট (ফাস) বাস ধরে বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছাই। তখন সময় লাগতো দেড় ঘণ্টা থেকে দু ঘন্টা। এখন লাগে এক ঘন্টা। এক ঘন্টা বা দেড় ঘন্টা অন্তর বাস। এক কিলোমিটার দূরে যাত্রী দেখা গেলেও হৈচৈ শুনে বাস দাঁড়িয়ে থাকতো। তারপর টায়ারে অজস্র ফকিরি তালি। পাংচার হলো দুবার মাত্র। স্টেশনে পৌঁছে দেখি বিরাট লাইন। আমি কাউন্টারে পৌঁছানোর চারজন আগে কাউন্টার বন্ধ। পরের টায় ছুটে গিয়ে ৩০ জনের পিছনে। কর্ড লোকাল ধরতে বলেছিলেন মামা। কর্ড তখন নাই। মেনে তখন তিন সাড়ে তিন ঘন্টা লাগতো। হালুয়া মানে হাওড়া ও লিলুয়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল ট্রেন।
লোকে বলতে লাগলেন, হালুয়াই খেয়ে নিল রে।
এই লোকগুলোর সঙ্গে এসেছি।
ধাক্কাধাক্কি মারামারি করে লোকে উঠছে। আমিও রোগা প্যাংলা উঠলাম। উঠে দেখি আসন ফাঁকা। ফাঁকা মানে লোক একজন। কিন্তু আসনে দেশলাই কাঠি রাখা। সরিয়ে বসতে যেতেই ধমক। দেখছো না, জায়গা আছে!
জায়গা আছে? কার? দেশলাই কাঠি তো!
বাজে বকো না। তোমার জম্মের আগে থেকেই মান্থলি কাটছি।
যাক, পরে দয়াপরবশ হয়ে কোনে একটু জায়গা দিলেন। তারপর নরেন্দ্রপুর যাচ্ছি জেনে চা খেতে বললেন। চা খাই জেনে বললেন, এই রে। যিনি বসতে বাধা দিচ্ছিলেন, তিনিই আবার বুঝিয়ে দিলেন, নরেন্দ্রপুর কীভাবে যেতে হবে।
তখন নরেন্দ্রপুর সরাসরি যেতো দুটি বাস। ৮০ এ, ৮০ বি। কার্জন পার্কের কাছ থেকে ছাড়তো। লঞ্চে গঙ্গা পার হয়ে দাঁড়িয়েই আছি দাঁড়িয়েই আছি।
আধঘন্টা পর পর বাস। তাও নেই। শেষে জানলাম, গড়িয়া থেকে নরেন্দ্রপুর যাওয়ার রাস্তায় বোমাবাজি হয়েছে। বাস বন্ধ।
এক সহৃদয় মানুষের পরামর্শে অন্য রাস্তায় গিয়ে বাদুরঝোলা হয়ে গড়িয়া পৌঁছালাম। তখন বেলা তিনটে বেজে গেছে। রাস্তায় প্রবল যানজট। টালিগঞ্জ হয়ে আসছি। চারটায় বন্ধ ফর্ম জমা দেওয়ার কাউন্টার। অটোচালকদের কাকুতি মিনতি করি। যাবেন না। সাকুল্যে ১৫ টাকা নিয়ে বেরিয়েছি। ট্রেন ভাড়া বাসভাড়া দিয়েছি। দুবার বাস বদলে গড়িয়া এসেছি। ভোর থেকে কিছু খাইনি।
চরম রোদ। মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে।
ফর্ম জমা দিতেই হবে।
কাউকে অনুরোধ করে কোনো লাভ হলো না।
হাঁটতে শুরু করেছি। পা চলছে না।
আমি খিদে সহ্য করতে পারতাম না। কিন্তু খেতে গিয়ে সময় নষ্ট করছি না। হেঁটে দৌড়ে গড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে যখন পৌঁছলাম তখন আর এক মিনিট বাকি।
ছুটে ছুটে গিয়ে হাজির।
মায়া হলো তাঁর নিলেন।
সেখান থেকে বের হয়ে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে শিক্ষকদের আবাসনে পৌঁছে গেলাম। আমার ছোটোমামার এক বন্ধু ছিলেন। রায়নার মানুষ। অসুবিধা হলে রাতে থাকবেন লিখে দিয়েছিলেন মামা। আগের দিন আলাপ করিয়ে দিয়ে গেছেন।
পৌঁছালাম। তিনি বসে বসেই চিঠিটি নিলেন। পড়লেন।
কোনো উত্তর দিলেন না।
আমি ভাবছি অন্তত এক গ্লাস জল বা কিছু খাবার দেবে।
এতক্ষণ খিদের জ্বালা ভুলে ছিলাম। কিন্তু মন তো জানে, গেলেই খাবার পাবে, বিশ্রাম পাবে।
উনি কোনো উত্তর দিলেন না। ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে এলাম।
বুঝলাম এ এক নতুন দুনিয়ার মাঝে এসে পড়েছো।
আমাদের বাড়িতে কোনো ভিখারিও কোনোদিন না খেয়ে যাননি।
আর আমি?
নিজের ওপর ধিক্কার হচ্ছিল, তার চেয়ে বেশি হচ্ছিল ভয়।
অন্ধকার নেমে আসবে। লোডশেডিং চলে এদিকে। বোমাবাজি নাকি আবার হতে পারে।
গড়িয়া এলাম। সেখানেও তখন বাস বন্ধ।
হাঁটতে হাঁটতে টালিগঞ্জ। উঠতে পারি না বাসে। সব বাসে ঠাঁই ঠাঁই নেই। গ্রামের বাস হলে পেছনে ঝুলতে ঝুলতে যেতাম বা ছাদে।
এখানে নগর কলকাতা
হাওড়া এসে হাজির হলাম রাত পৌনে এগারোটার সময়। টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্মে এসে পেট ভরে আঁজলা করে জল খেলাম।
দু টাকা দিয়ে ছটা লুচি খেলাম। পকেটে আর মাত্র একটি টাকা।
রাত ১১ টা ১০ এ ছিল লাস্ট ট্রেন।
খাচ্ছি আর চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে খাবার।
লুচিবিক্রেতা জিজ্ঞেস করলেন, ও খোঁকা কান্দো ক্যানো? আর লুচি নেবে? পয়সা দিতে হবে না আর।
এতে আমার আরো কান্না পেয়ে গেল। একজন অজানা মানুষ বিহারী খেতে বলছেন, বলছেন, পয়সা আর দিতে হবে না।
আমি ঘাড় নেড়ে বললাম, ধন্যবাদ।
কোন প্ল্যাটফর্ম কিছুই বুঝি না।
ঘোষণা শুনে গেলাম।
গার্ডসাহেবকে বললাম, কোন কামরায় লোক থাকে।
উনি বললেন, বাবা তুমি আমার পাশের কামরায় বসো। কর্ড লোকাল। বারুইপাড়ার পর ফাঁকা হয়ে যাবে। পকেটে পয়সা কড়ি তেমন নেই তো!
ঘাড় নেড়ে বললাম না, শুধু মার্কশিট আর অ্যাডমিট কার্ড আছে।
বললেন, কিছু অসুবিধা হলে চিৎকার করো।
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
বারুইপাড়ার পর শুয়ে পড়লাম।
বর্ধমান ঢোকার আগে ঝমঝম আওয়াজ হয়। ঘুম পাতলা হয়ে গেল। বর্ধমানে এসে দেখি গার্ডসাহেব ডাকছেন।
স্টেশন থেকে বের হচ্ছি।
শুনশান।
কয়েকটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে চুপ করে গেল।
হাঁটতে হাঁটতে পার্কাস রোডে পার্টি অফিস। দাদা পার্টি অফিসের মালেকদাকে বলে রেখেছিলেন।
রাত দুটোয় পৌঁছে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মালেকদা মুখ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, খেয়েছি কি না?
অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বোঝালাম, খাবারের দরকার নেই। ঘুমোতে পেলেই হবে।
বাথরুমে গিয়ে দেখি কলের চেয়ে আমার চোখে বেশি জল ঝরে।
জীবনে আমার সেই প্রথম সারাদিন ভাত না খেয়ে থাকা।