এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়ি চাষের সাতকাহন

    গৌরাঙ্গ নন্দী
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪৩৬ বার পঠিত


  • এক,
    বাগেরহাটের মংলা উপজেলার চিলার রজব আলী শেখ ছিলেন কৃষক। আটষট্টি বছরের জীবনে যিনি চাষের কাজ ছাড়া কিছুই শেখেননি। মাটি ছাড়া মানুষটি আর কোথাও কাজ করেননি। বীজ ছড়িয়েছেন। চারা পুতেছেন। জমি নিড়িয়েছেন। ধান কেটেছেন। ফসল বয়ে নিয়ে গোলাজাত করেছেন। মাটিই দিতো সারা বছরের খোরাক। নিজের সামান্য জমি ছিল। সময়ে-অসময়ে তিনি অন্যের জমিতে শ্রম দিতেন আবার ভাগে চাষ করতেন। আজ তাঁর সব গেছে। কোথায় জন (শ্রম) দেবেন। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া দেহে তিনি চোখের সামনে পরিবর্তনগুলো দেখেন, আর হা-হুতাশ করেন। এই অঞ্চলে আগে এক ধরনের মাসব্যাপী শ্রম দেয়ার কাজ জুটতো। যারা এই কাজ করতো তাদেরকে বলা হতো কিষাণ। ক্ষেতে কাজ করা আর গরু দেখাশোনা করা ছিল কিষাণের কাজ। বছর শেষে পাওয়া যেতো ১০ থেকে ১২ মণ চাল। বছর দশেক আগেই এই ধরণের কিষাণ প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। এখন নতুন নতুন পেশাজীবী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। চিংড়ির পোনা ধরা, পোনা বিক্রি করা, চিংড়ি ঘেরে কাজ করা, ঘের মালিকদের হয়ে মারামারি করা, কাঁকড়ার চাষ করা, কাঁকড়ার ব্যবসায়ী প্রভৃতি। আর হারিয়ে গেছে সবুজ গাছপালা, খাবার পানির সংকট বেড়েছে, মানুষের মধ্যেকার মমত্ববোধ কমেছে, নগদ টাকার ফুলঝুরি বেড়েছে। তিনি বলেন, "পঁচিশ-ত্রিশ বছর পর নানান ওলট-পালট দেখে মানুষ আবারও সেই ধান চাষ করতে চাইছে, ফসল ফলাতে চাইছে, কিন্তু জমি আর কথা শুনছে না; নোনা পানিও আর রোখা যাচ্ছে না। সবকিছু পাল্টে গেছে।'

    দুই,
    আনন্দ বিশ্বাস এক সময় চাষের কাজ করতেন। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালিতে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তাঁর সামান্য জমি ছিল। কৃষক আনন্দ এখন দুঁদে ব্যবসায়ী। জমি চলে গেছে চিংড়ি চাষীদের দখলে। লোকজন ধানের জমি লীজ দিয়েছে চিংড়ি চাষীদের। এখন যেদিকে চোখ যায় শুধু চিংড়ি ঘের। আনন্দ বিশ্বাসের কাছে মাগুরখালীর পরিবর্তন অকল্পনীয়। গ্রামের লোকেরা বলেন, গ্রামটিই বেশ নীচু হয়ে গেছে। চিংড়ি চাষের কারণে ভদ্রা-হাড়িয়া নদীর পলি-মাটি আর গ্রামে এসে পড়ছে না। পলি জমা হচ্ছে নদীর পেটে। একারণে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। হাড়িয়া তো একেবারে শুকিয়ে গেছে। আর উপচে পড়া নোনা পানির প্রভাবে মাগুরখালির মাটি নোনা হয়ে গেছে। বাঁধ দিয়ে নোনা পানি আটকে চিংড়ি চাষ করায় মাটির গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। আনন্দ এ ব্যাপারে প্রকৃতিকে দোষ দেন না। তাঁর মতে, মানুষই এর জন্য দায়ী। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ নিরর। তাঁরা জানেনা চিংড়ি ছাড়া নোনা পানিতে আর কি ধরনের ফসল হতে পারতো। ধান হবে না। কিন্তু কি হবে, তা শিখিয়ে দেননি কেউ। তাইতো বেশি লাভের আশায় এখন পুরো গ্রামটিকেই দখল করে ফেলেছে চিংড়ি ঘের।

    তিন,
    খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লতা গ্রামের অনিমেষ চিংড়ি ঘেরে কাজ করেন। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই। অল্প একটু জমি ছিল। এখন নেই। কিছু জমি বিক্রি করেছেন। বাকিটা চিংড়ি আবাদকারীদের কাছে লীজ (টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেয়া) দেয়া হয়েছে। লীজ দেয়া নিজের জমিতেই তার কাজ করতে হয়। তিনি এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এরা আগে কিছু রীতিনীতি মেনে চলতেন। ভরা পূর্ণিমায় হাল (লাঙ্গল) ধরতেন না। বর্ষার আমাবতিতে (অম্বুবাচি, একটি পার্বন) মাটিতে আঁচড় দিতেন না। মা শীতলার পূজার দিনেও কোন কাজ হতোনা। এখন আর মানুষ সেসব মনে রাখেনা। চিংড়ি চাষে কোন বিরাম নেই। অনিমেষ মাঝে মধ্যে উদাস হয়ে যান। কাজ করতে করতে হাত থেমে যায়। তাকিয়ে থাকেন সামনের দিকে।

    চার,
    খুলনার দাকোপ উপজেলার কামারখোলা গ্রামের হরষিত মন্ডল নোনা পানি আর তুলতে দিতে চান না। তিনি মানুষকে সংঘঠিত করে নোনা পানি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, "বহিরাগতরা এসে বাঁধ কেটে নোনা পানি তুলে জমি দখলে নিয়ে এখানে চিংড়ি চাষ শুরু করে। এলাকার দু'একজন তাদের সহায়তা করেছিল। আর তাদের সঙ্গে ছিল পুলিশ প্রশাসন, সেটা ১৯৮৬-৮৭ সাল। আমরা কোন প্রতিরোধ করতে পারিনি। সামান্য যেসব প্রতিরোধ হয়েছে, সেই প্রতিরোধকারীরা খুন-গুমের শিকার হয়েছেন। কিন্তু বিশ বছর পরে এসে আমরা বুঝতে পারি আমরা সবকিছু হারিয়েছি। তাই এখন নোনা পানি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছি। এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন আর নোনা পানির চিংড়ি চাষ চায় না।'

    সাতকাহন
    স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাতক্ষীরা জেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় প্রথম বাগদা চিংড়ির চাষ শুরু হয়। বিদেশে এর চাহিদা, উৎপাদনে অল্প কষ্ট, কম পুঁজি, বিপরীতে প্রচুর মুনাফার কারণে দিনে দিনে বাগদা চিংড়ি চাষের পরিধি বেড়ে চলে। ক্রমান্বয়ে এই চাষ ছড়িয়ে পড়ে গোটা সাতক্ষীরা উপজেলা; পরবর্তীতে খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা উপজেলায়। ১৯৮০, '৮১ সালের দিকে খুলনা জেলায় চিংড়ি চাষের সম্প্রসারণ ঘটে। এই সময়ের পর পর বাগেরহাট জেলায়ও এই চাষের সম্প্রসারণ ঘটে। চাষের সম্প্রসারণ প্রকৃতপক্ষে, পরের জমি জোর করে দখলে নিয়ে চিংড়ি চাষের ভল যাত্রা।
    প্রথম দিকে এই চাষ ছিল বছরের চার থেকে ছ'মাস ব্যাপী। শুরু হ'ত ধান কাটার পরে নবেম্বর-ডিসেম্বরে, আবার ধান চাষের আগে লবণ পানি সরিয়ে চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা হত। অর্থাৎ ধানের ক্ষেতে লবণ পানি উঠত মাঘের পূর্ণিমায় (ফেব্রুয়ারির প্রথম)। আবার আষাঢ়-শ্রাবণের (জুলাই) আগেই লবণ পানি সরানো হত। কারণ বৃষ্টি নির্ভর আমন চাষের মওসূম বর্ষাকাল। ধীরে ধীরে এ ধারা পাল্টে যায়। চিংড়ি চাষ বারো মাসব্যাপী চাষের ফসল হিসেবে আবির্ভূত হয়। সারা বছর ক্ষেতে নোনা পানি আটকে রেখে চিংড়ি চাষের কার্যক্রম চলতে থাকে।

    উপকূলীয় এই অঞ্চলে বাঁধ ব্যবস্থার পর কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। গড়ে ওঠে একটি কৃষিভিত্তিক সমাজ। নোনা পানিতে চিংড়ি চাষের জন্যে একদার ওয়াপদা (ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড) ও পরে (স্বাধীন বাংলাদেশে) পানি উন্নয়ন বোর্ড -পাউবো'র মাটির বাঁধ কেটে নোনা পানি ক্ষেতে প্রবেশ করানো শুরু হয়। ফারাক্কা বাঁধ ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট-বড় বিশটিরও অধিক নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সাগরের নোনা পানি ফুঁসে উত্তরের দিকে উঠতে থাকে; ধীরে ধীরে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়তে থাকে। নোনা পানির সহজলভ্যতাও চিংড়ি চাষকে সহজতর করে দেয়।

    প্রথমদিকে দখলদার গোষ্ঠী পাউবো'র স্লাইস গেটগুলো দিয়েই নোনা পানি প্রবেশ করাতো। পরে বাঁধ কেটে পানি প্রবেশ করানো শুরু হয়। সহস্রভাগ মুনাফা থাকায় এবং মুনাফার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে টাকাওয়ালারা চিংড়ি চাষের জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে। শুরু হয়ে যায় জমি দখলের পালা। আর বাঁধ কেটে নোনা পানি প্রবেশ করানোর প্রতিযোগিতা। এতে দ্রুত হারে বাড়তে থাকে নোনা পানিতে বাগদা চিংড়ির চাষ। ক্ষেতের জমি পরিণত হয় চিংড়ি ঘেরে। চিংড়ি চাষে অতি মুনাফার জন্য অতি দ্রুতই এলাকার উৎপাদন কাঠামো, জীবনযাত্রার ধরন বদলে যেতে শুরু করে।

    চিংড়ি চাষের উদ্যোক্তারা মানুষের ওপর কি পরিমাণ অত্যাচার অনিয়ম আর জবরদস্তি করেছে তার অপূর্ব বর্ণণা করেছেন কবি রুদ্র মোহম্মদ শহিদুল্লাহ। করি রুদ্র শৈশব ও যৌবনের উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন মংলার মিঠেখালি গ্রামে। দেখেছেন খুলনা ও বাগেরহাট জেলার চিংড়ি চাষের ভল চিত্র। দেখেছেন, কিভাবে এই নতুন পণ্যের চাষের ধাক্কায় পাল্টে যাচ্ছে সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা জনপদের চালচিত্র। বদলে যাচ্ছে গোটা এলাকার দৃশ্যপট। তিনি লিখেছেন -

    ঘেরে ঘেরে ঘেরাও হইলো চারিদিক,
    ঘেরের ঘোড়া চলছে ছুটে দিগি¦দি্‌ক?
    অল্প পুঁজি বেশী লাভ, চতুরপাশে চিংড়ির চাষ।
    (ওরে) জল্পনা কল্পনা কতো করছে বৈজ্ঞানিক?
    হারে হারে হাড়িয়া, নিচ্ছে সবই কাড়িয়া।
    (ওরে) রেজেস্ট্রি করিয়া মনের চৌহদ্দী নাই ঠিক?
    এতো দিলাম ভেড়ি বাঁধ, তবুতো মেটেনি সাধ।
    (ওহো) শরীর চালায় যারা যারা জীবনের সবদিক?
    বাগদা নিলো ফলাইয়া, জমিন গেছে তলাইয়া।
    (ওরে) জীবনডা জ্বালাইয়ে খাইলো যতো ঘের মালিক?
    পানিতে নেই গুণ বেগুণ বাতাস গেলো পূবের কোণ
    ডাউলে চাউলে হয় খেচোড়ী তল্লাটে নাই ভিড়?

    চিংড়ি ঘেরের মালিক আর তাদের পোষা মাস্তানরা গ্রামের মানুষের ওপর বেপরোয়া নির্যাতন চালিয়েছে। খুন-রাহাজানি, লুন্ঠন, নারী ধর্ষণ হয়ে দাঁড়ায় নিত্যদিনকার স্বাভাবিক ঘটনা। এসব এলাকা হয়ে ওঠে অপসংস্কৃতি, অশ্লীল আচার-আচরণ আর বিকৃত রুচির গানবাজনার যেন এক অবাধ লীলাত্রে। তৈরী হয় এক একজন সন্ত্রাসী গডফাদার। যারা নামে-বেনামে অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের পোষে। যাদের প্রধান কাজ চাঁদাবাজি করা, চিংড়ি বিরোধীদের শায়েস্তা করা, প্রয়োজনে গুম-খুন-ধর্ষণ করা। অন্যদিকে, প্রান্তিক চাষী ও বর্গাচাষীদের দারিদ্‌র্‌য পৌঁছে যায় চরমে। প্রান্তিক কৃষিজীবী অথবা ভূমিহীন কৃষিজীবী পরিবারের নারীরা নদীতে চিংড়ি পোনা ধরতে শুরু করে। আর ঐসব পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কেউ কেউ চিংড়ি ঘেরের কাজ নেয় আর অধিকাংশরা ছোটে সাগরে পোনা ধরতে। বেকারের সংখ্যা বাড়ে। বেকার-কর্মহীন যুবকের দল পতঙ্গের মত ছুটে গিয়ে সন্ত্রাসীদের দলে নাম লেখায়।

    খুলনা শহর সংলগ্ন বটিয়াঘাটা থানায়ও ব্যাপক চিংড়ি চাষ হয়। কাজীবাছা-পশুর নদীর বামদিক এবং কাজীবাছা-নলুয়া-পশুর নদীর দণিদিকের গোটা দ্বীপের ন্যায় গ্রামগুলোর সকল ধানের জমিতে এর চাষ বি¯তৃত। দু'চার-দশ-বিশ বিঘা জমির মালিকেরা জমি লীজ দেওয়ার জন্য কোন টাকা পায়না। তবে লীজ দিতে বাধ্য হয়। ডিড (চুক্তি) করে জমি দিতে হয়। তা না হলে রাস্তায় বেরুনো যায়না। এই দ্বীপ সদৃশ গ্রামগুলোর একটির নাম "বিরাট'। এই "বিরাট' গ্রামের নিরর দিনমজুর মঞ্জিল শেখ।অক্স তিনি আপন মনে মুখে মুখে জারী গান রচনা করেন, নিজের সুরে গেয়েও শোনান মানুষদের। তিনি অনেক জারীগানের রচয়িতা এবং গায়ক। তাঁর একটি জারী গানে চিংড়ির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বর্ণণা ধরা পড়েছে এভাবে -

    এই দেশের বড়লোক যারা
    বাগদা'র টাকা খাইচ্ছে তারা
    গরীব লোকের মরণ সারা।
    বিলি (বিল) আছে পানি ভরা
    গরু-বাছুরের জীবন হারা
    এবার নাড়ার কুঁড়ে হইছে সারা
    গরীব লোকের মরণ সারা।
    যদি দু'টো বাগদা চুরি করবা
    জেলখানায় যাইয়ে রুটি খাবা
    বিচার-আচার চাইলে পরে
    তিনশ টাকা জরিমানা
    মাইয়ে মদ্দের ইজ্জত দিবা
    গরীব লোকের মরণ সারা।
    যদি শোনে খাসির কথা
    খালের গোড়ায় লোক ধরেনা
    দুইখেন গোশত খাইলে পরে
    আট বছরের ডিড করে
    এদিক-ওদিক তাকায় না
    গরীব লোকের মরণ সারা।
    চালের দাম যেমন তেমন
    তরকারীর দাম দিচ্ছে ঠেলা
    গরীব লোকের মরণ সারা।

    অনিয়ম, দখলবাজি, মারামারি, হাঙ্গামা নিয়েই চিংড়ি চাষ এগিয়েছে। প্রতিদিন চিংড়ি চাষের এলাকাও বেড়ে চলে। নোনা পানির বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি দাপটের সঙ্গে গোটা দেশে মিষ্টি পানির গলদা চিংড়ির চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। আর উপকূলীয় পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা এলাকায় যেখানে আগে নোনা পানির বাগদা চিংড়ির চাষ হতো না, সেখানেও আজকাল এর চাষ শুরু হয়েছে। এতো কিছুর পরেও আমাদের দেশে এর উৎপাদন বিশ্বের মোট উৎপাদনের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ। বলা হচ্ছে, বিশ্বের মোট উৎপাদনের মাত্র আড়াই ভাগের মত চিংড়ি আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়।

    বছর বছর লবণ পানিতে চিংড়ি চাষের ফলে মাটিতে লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। লবণ চুইয়ে এক তে হতে আর এক ক্ষেতে যেতে থাকে। যিনি চিংড়ি চাষ করেন না, তার তেও লবণে সিক্ত হয়। বিশাল এলাকার ধান ক্ষেতের একটি অংশে একবার চিংড়ি চাষ শুরু হল -পরবর্তী বছর আরও জায়গা নিল, এভাবে একসময় সকল ধানের ক্ষেতে, চিংড়ির ক্ষেতে রূপান্তরিত হয়। মাটি ও পানিতে লবণের মাত্রাতিরিক্ততার কারণে মাটিতে অন্য ফসল উৎপাদনে ভাটা পড়েছে।

    কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, বর্তমানে চিংড়ি চাষের এলাকা সাতীরা, খুলনা, বাগেরহাট জেলার তিন লাখ হেক্টরেরও বেশী জমি লবণাক্ত। সাতীরায় এক লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ত। এই জেলার শ্যামনগর উপজেলার ৩৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি লবণাক্ত। এখানকার কৃষি জমির প্রায় ৮৮ ভাগই লবণাক্ততায় আক্রান্ত। উপজেলাগত হিসাবে এরপরই রয়েছে সাতীরার আশাশুনি এবং খুলনা জেলার কয়রা ও পাইকগাছার অবস্থান। এসব উপজেলার কৃষি জমির ৮০ ভাগই লবণাক্ততায় আক্রান্ত।
    শুধুমাত্র নদীর পানি এবং মাটি নয়; খাল, বিল, পুকুরের পানিতেও লবণাক্ততা বেড়েছে। বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা। এখানকার গাছপালা, পশুপাখি সবই নোনায় বিপর্যস্ত। বাগেরহাটের বিখ্যাত ফসল নারিকেল ও সুপারি প্রায় শেষ হতে চলেছে। গ্রামের সবুজ উধাও। নেই পশুসম্পদও। গোচারণ ভূমি নেই, গবাদিপশু কিভাবে থাকবে? গবাদিপশুর সংকটের কারণে দুগ্‌ধজাত খাবার খুব কম পাওয়া যায়। যা পাওয়া যায় তা গুণে ও মানে নিম্নস্তরের। যেকারণে এখানকার শিশু ও নারীরা স্বাভাবিক অপুষ্টির শিকার। এ অঞ্চলের উদ্ভিদগুলি অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বিবর্ণ, ধূসর। শাক-সবজি ও মাঠের ফসল কমে যাচ্ছে। সুন্দরবনও পড়েছে লবণাক্ততার করাল গ্রাসে। এতে সুপেয় পানির সমস্যা বাড়ছে। জেলে-কুমোর-কৃষিজীবী প্রভৃতি পেশাজীবী গোষ্ঠী তাঁদের পেশা হারাচ্ছে। কাজ হারাচ্ছে।

    একথা ভাবার কোন কারণ নেই যে, চিংড়ি চাষের শুরুর পর্বে সাধারণ মানুষ এর বিরোধিতা করেনি। বিরোধিতা করেছিল। বিশেষ করে অল্প জমির মালিক, প্রান্তিক ও উদে চাষী, ভূমিহীন-দিনমজুর প্রত্যেকে এ চাষের বিরোধিতা করে। ১৯৯১ সালের ১০ আগস্ট সরকারের কাছে দাকোপের জনগণের প থেকে এক স্মারকলিপি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, চিংড়ি চাষ দাকোপের সাধারণ মানুষ, ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক বা জমির মালিক কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। জনসাধারণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘের তৈরা করা হচ্ছে, যা কারও জন্য কোন শুভ ফল বয়ে আনবে না।

    পানি উন্নয়ন বোর্ড -পাউবো কর্তারাও চিংড়ি চাষের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁরা সেই সময়ে এক রিপোর্টে বলেন, ঘের মালিকরা অবৈধভাবে যেখানে-সেখানে ভেড়ীবাঁধ কাটছেন এবং সষ্টউইসগেটের পানি ওঠানামা করাচ্ছেন। এইভাবে চিংড়ি চাষ করায় উপকূলীয় বাঁধ নির্মানের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। বাঁধের উদ্দেশ্য ছিল অধিক ফসল ফলানো এবং জনগণকে জলোচ্ছাসের কবল থেকে রা করা। এ ব্যাপারে প্রকৌশলীরা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপকে লিখিতভাবে জানিয়ে এবং ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেও কোন ফল পায়নি।

    চিংড়ি ঘেরের মালিকরা অবশ্য পিছিয়ে ছিলোনা। চিংড়ি চাষীরা বলেছে, চিংড়ি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। চিংড়ি রপ্তানী করে দেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। তারা বলেছে, এখন আর পাট নয়, চিংড়ি চাষেই সোনা ফলছে। তাদের পোস্টারের শ্লোগান ছিল ঞ্ছচিংড়ি চাষে সোনা ফলে, পাট গেল রসাতলেঞ্জ। আরও বলেছে, চিংড়ি চাষের বিরোধিতার পিছনে বৈদেশিক ষড়যন্ত্র কাজ করছে। ধান উৎপাদনের জন্যে যারা হা-হুতাশ করেছে, তাদের বোঝানো হয়েছে, হাতে টাকা থাকলে চাল কিনে আনা যাবে। অবশ্য ২০০৭ সালে টাকা নিয়ে দেশে দেশে ঘুরেও চাল কিনতে পারেনি দেশের সরকার।

    চিংড়ি চাষে সংঘাতের পর্বটি একেবারে কম নয়। সাতীরা জেলায় চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে বড় ধরণের সংঘাতের উদাহরণ একটু কম। খুলনায় সংঘাতের উদাহরণ রয়েছে বেশ। বাগেরহাটের রামপালে এ ধরণের সংঘাত খুবই সহিংস। স্থানীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার মতে, ১৯৯৪ সালে চিংড়ি চাষ মওসূমে (জানুয়ারি- আগস্ট) রামপাল থানা এলাকায় প্রতিমাসে কমপে দুটি খুন হয়। প্রায়শই এর কারণ উদঘাটিত হয়না। বেওয়ারিশভাবে লাশের সন্ধান মেলে কোন রাস্তা, বাঁধ বা ঝোঁপের আড়ালে।

    আশির দশকে যখন শত শত একর জমি দখলে নিয়ে চিংড়ি চাষের কাল, জমির মালিকদের বাধা যখন কোন কাজে আসেনি, জাতীয় স্তরে সময়টি তখন এরশাদীয় সামরিক স্বৈরাচারের পর্ব। রাজনৈতিক আনুকূল্যও পেয়েছে ঐসব দখলদাররা। বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জনকারী হিসাবে রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃক সমর্থন পাওয়া ঐসব দখলদার চিংড়িচাষীরা বেপরোয়াভাবে অল্প জমির মালিক, প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন কৃষকদের জব্দ করতে অস্ত্রবাজদের ব্যবহার করেছে। শহর থেকে ভাড়া করে নিয়ে গেছে গুন্ডাদের। তাদের জন্যে বোমা তৈরীর মালমশলা জোগাড় করে দিয়েছে, হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে।
    দখলদার চিংড়ি চাষীদের পৃষ্ঠপোষকতায় এইসব অস্ত্রবাজরা গ্রামে গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নারীদের নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে। চিংড়ি চোর আখ্যা দিয়ে মানুষদের নির্মমভাবে পিটিয়েছে। থেমে থেমে বোমার শব্দ করে তাদের অবস্থান জানান দিয়েছে। আর এই শব্দে হারিয়ে গেছে নানা রঙের-বর্ণের ছোট-বড় পাখি। এখানকার দানা শস্যের ওপর ভর করে এবং পাশের সুন্দরবনকে আশ্রয় করে যে পীকুল তাদের বসতি গড়ে তুলেছিল, প্রতিকুল পরিবেশে তারা সব হারিয়ে গেছে। কোথায় চলে গেছে তা কেউ জানেনা। চিংড়ি চাষের পঁচিশ-ত্রিশ বছরের সময়কালে এই চিংড়িকে ঘিরেই সামাজিক বিরোধ-সংঘাত আবর্তিত হয়েছে। এই অঞ্চলের সংঘাত-সংঘর্ষের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু এই চিংড়ি চাষ।

    একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে যে, চিংড়ি চাষে এতো খুনখারাবি, নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা কেন ঘটে? প্রকৃতপক্ষে, চিংড়ি চাষে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার সঙ্গে এর সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। এক টাকা বিনিয়োগ করলে এতে আয় হয় আট থেকে দশ টাকা। মহামতি লেনিন দেখিয়েছেন, যেখানে মুনাফার পরিমাণ শতভাগ সেখানে পুঁজি মরিয়া। সেক্ষেত্রে পুঁজি কোন নৈতিকতার ধার ধারেনা। প্রয়োজনে বিনিয়োগের বাধা অপসারণের জন্যে বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তা মানুষ পর্যন্ত খুন করতে পিছপা হয়না। ফলে অনৈতিকতা, জোর-জবরদস্তি সেক্ষেত্রে খুবই একটি স্বাভাবিক ঘটনা।

    খুলনার পাইকগাছায় বাংলাদেশ মাৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নোনা পানি গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত। এখানকার এক সময়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড: এম এ লতিফের মতে, ঐ এলাকায় ৩০০ বিঘা বা ১০০ একরের একটি মডেল ঘেরে বিঘা প্রতি ২৫০০ টাকা হারে হারির টাকা পরিশোধ করে অন্যান্য খরচ মিলে সর্বেক্ষেত্রেমাট ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এই রকম একটি ঘের থেকে ১২০০ মণ ধানও পাওয়া যায়। একরে গড়ে ১২৫ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয়। উৎপাদিত চিংড়ি ও ধান বিক্রি করে সর্বমোট ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পাওয়া যেতে পারে সেই ঈত্র সর্বমোট লাভ পাওয়া যায় ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সন্ত্রাসী ঘের মালিকরা হারির টাকা দেয় না, তাতে লাভের অংশ আরও ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেড়ে যায়। একইভাবে পোনা যদি কিনতে না হয় তাহলে মুনাফা আরও ৭লাখ ২০হাজার টাকা বেড়ে যায়।

    একারণে চিংড়ি চাষ পর্বের শুরুতে জবরদস্তি ছিল একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কৃষি কাজ থেকে উচ্ছেদ হওয়া হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশুরা পানিতে নেমে যে পোনা সংগ্রহ করতো তাও অনেক সময়ে গায়ের জোরে চিংড়ি চাষীরা কেড়ে নিয়েছে। সাধারণ বাজার দরে জমির হারির টাকা ও পোনার টাকা না দিতে হলে ২১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে জোর জবরদস্তি করে চাষ করলে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা মুনাফা হয়। অর্থাৎ মুনাফার পরিমাণ প্রায় ১৭২% ( ১৭২ শতাংশ), এক টাকায় ১৭২ টাকা।
    চিংড়ি ঘেরের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৯০ সালে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বাটকেমারি চিংড়ি ঘের (৬০০ বিঘা) থেকে ৩৬ লাখ টাকা, গিনিরাবাদ (৩৫০০ বিঘা) ঘের থেকে সোয়া কোটি টাকা, কালিয়াকলা ঘের (৩০০০ বিঘা) থেকে ৯৬ লাখ টাকা, নোয়াপাখিয়া ঘের (২০০০ বিঘা) থেকে ৬০ লাখ টাকা এবং কাটাখালি ঘের থেকে ৭৫ লাখ টাকা মুনাফা হয়। এই ঘেরগুলোর কোনোটিতেই জমির মালিকদের হারির টাকা দেয়া হয়নি। যাদের নাম স্বার বা টিপসই চুক্তিপত্রে দেখানো হয়েছে তাদের অনেকের সেগুলো জানেনই না যে তারা টিপসই বা স্বাক্ষর করেছেন। আবার কারো কারো কাছ থেকে রাতের বেলায় অস্ত্রধারীরা এসে ভয় দেখিয়ে টিপসই নিয়ে গেছে। এইসব ঘেরে পোনাও ছাড়া হয় সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে পোনা ছিনতাই করে। এসময়ে স্থানীয় মানুষেরা এই জবরদস্তিমূলক চিংড়ি চাষের বিরুদ্ধে প্রবল গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে। এরই প্রতিক্রিয়ায় বাটকেমারিতে চিংড়ি ঘেরের মালিকদের সশস্ত্র গুন্ডাদের হাতে খুন হন সাধারণ কৃষক জাবের শেখ।
    সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামের হাফিজুর বরিশালের পাথরঘাটা থেকে ৪ লাখ টাকার পোনা কিনে ১৯৯৪ সালের ১৯ মার্চ বাড়ি ফিরছিলেন। পথে চালনার কাছে স্পিডবোট থেকে গুলি করে থামিয়ে তার ট্রলার ছিনতাই করা হয়। সেই পোনা নিয়ে রামপালের একটি ঘেরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ছিনতাইকারী, পোনা ছাড়ার স্থান সকল কিছু জেনেশুনেও পোনার মূল্য চাওয়ার সাহস করেনি হাফিজুর।

    পরদিন ২০ মার্চ চালনা অঞ্চল থেকেই পাইকগাছার ৬টি ট্রলার একইভাবে ছিনতাই হয়। ২৮ ল টাকার পোনা ছিল নৌকা ক'টিতে। এর ফলে পোনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সাতীরার ১০০টি পরিবার একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। একেবারে গভীর সমুদ্রে জলদস্যু স্টাইলে পোনা ডাকাতি। বিরাট গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষায়, এইভাবে "তাফালিং' করে চিংড়ি চাষ করা হয়। হারির টাকা দেয়না, পোনা ছিনতাই করে; নির্যাতন, মারপিট, হত্যা আর ধর্ষণ হচ্ছে উপরি পাওনা। নির্যাতিত বা তিগ্রস্ত কেউই কখনও কোন অবস্থায় পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সহায়তা পায়নি।

    অবশ্য, জমি জবরদখলকারী, পোনা ছিনতাইকারী, চিংড়ি সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তা পেয়েছে। এই অঞ্চলে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, চিংড়িঘের মালিকের বুক পকেটে থাকেন এমপি (মেম্বার অব পার্লামেন্ট) , প্যান্টের দুই পকেটে থাকেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এবং মুঠোর মধ্যে থাকে সন্ত্রাসী বাহিনী। মাত্র ১০০ টাকা, ২০০ টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন হয়। এই ঘের মালিকদের কাছে চিংড়ি ঘেরের লাইসেন্স বা চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি সবই বাতুলতা। তারা কোন কিছুরই কোনো ধার ধারেনা।
    বাটকেমারী সন্ত্রাসের ঘটনা অনুসন্ধানকালে বটিয়াঘাটা থানার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ঐ বছর (১৯৯৪ সাল) থানা এলাকায় কোন চিংড়ি ঘেরের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। অথচ বটিয়াঘাটার প্রায় আট হাজার একর জমিতে সেবার চিংড়ি চাষ হয়। একহাজার টাকা করে হারির টাকা ধার্য করা হয়েছিল, যদি জমির মালিকরা হারির টাকা পেতো তবে আমিরপুর, ভান্ডারকোট, বলিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের লোকজন প্রায় ৮০ লাখ টাকা পেতো।

    পাদটিকা
    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক জায়গায় স্থানীয় মানুষেরা চিংড়ি চাষের পরিবর্তে ধানের চাষ করতে চাইছে। মানুষ নোনা পানি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলছে। তবে রাষ্ট্র এখনও চিংড়ি চাষের পক্ষে, চিংড়ি চাষকে সমানতালে উৎসাহ দিয়ে চলেছে এবং চিংড়ি চাষের পক্ষে একটি নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে, যাতে একটি ধারা রাখা হচ্ছে, যারা চিংড়ি চাষের বিরোধিতা করবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

    ছবি- সায়ন করভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৪৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন