লালকেল্লা, ভারতের প্রতীকী শক্তিস্থলে অসংখ্য ট্রাক্টর এবং অগণিত কৃষক। মাথায় পাগড়ি পরা একটা হিলহিলে শরীর অনেক চেষ্টার পর উঠে গেল আকাশের কাছে, টাঙিয়ে দিল কৃষক ইউনিয়নের পতাকা।
যেদিকে চোখ যায় অন্নদাতার ভিড়, ট্র্যাক্টরের ঢের। ছ'সাত ঘন্টার রাস্তায় পুলিশের খণ্ড যুদ্ধ, টিয়ার গ্যাস,লাঠি চার্জ ইত্যাদির পর পুরো দিল্লির সমস্ত সীমান্ত থেকে কৃষকেরা এসে জুটেছেন এইখানে।
মনে পড়ছে সিপাহি বিদ্রোহের কথা। বিদ্রোহীরা দখল নিয়েছিলেন লালকেল্লার। ঘোষণা করেছিলেন বাহাদুর শা জাফরকে ভারতের ভাগ্যবিধাতা বলে। কয়েক মাস কেল্লা ছিল তাদের অধীন। তারপর এই ১৬৩ বছরের মধ্যে আর এমন দৃশ্যের সাক্ষী হয়নি চোখ। আবার এতদিন পর, প্রজাতন্ত্র দিবসের বাহাত্তরতম পূর্তির দিনে সাধারণ প্রজার অধিকারে, অন্নদাতার অধিকারে এ দেশের প্রতীকী শক্তিস্থল!
এ হল প্রজাতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা!
তারা যা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তা প্রমাণ হয়ে গেলে মানুষের ঢল আবার সীমান্তমুখী হবে এমনই আশা কৃষক নেতাদের। কিন্তু দিল্লির সীমানা থেকে এবার একেবারে দিল্লির হৃদয়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে ক্রান্তিলগ্ন তাকে ভ্রষ্ট হতে দেবে তো অন্নদাতারা?
"কালা আংরেজ" ( চন্দ্রশেখর আজাদের বর্তমান শাসককে দেওয়া আখ্যা) কৃষকের এই পতাকা উত্তোলন সহ্য করবে কেন! যদিও একেবারে মধ্যখানে অটুট জাতীয় পতাকার উড়ান, আর হাজার হাজার হাতে উড়ছে অগুন্তি জাতীয় পতাকা, তবুও পুলিশ লালকেল্লার ঝান্ডা নামাতে আবার তৎপর হল। কিন্তু পতাকাদণ্ডে চড়া কি অতো সহজ ! আদর্শ আর মরণপণ প্রতিজ্ঞা যা পারে, বেতনভুক তা অতো সহজে পারে না। সে চেষ্টায় তাই জলাঞ্জলি দেওয়া হল অল্প সময়েই, আবার সাহায্য এসে পৌঁছবে এ-ই আশায়।
রাষ্ট্র যেন মনে রাখে, তার কঠিন ঔদাসীন্যে অনেক রক্তঘাম ঝরেছে। গত দুমাসের পথবাস, প্রবল ঠান্ডা, গৃ্হসুখের বদলে লঙ্গরের রুটি আর ভূমিশয্যা, দেড়শ সাথীর পথকুক্কুরের মতো শোচনীয় মৃত্যু, কে ভুলবে? তাই সূর্য যখন জবাকুসুম, তখন থেকেই দিল্লির সব সীমান্তে তৈরি হবার ধুম। স্নান করে পাগড়ি চড়ানো বা গলায় উত্তরীয় চড়িয়ে জাতীয় পতাকা, সংগঠনের ফ্ল্যাগ উড়িয়ে প্রস্তুত সবাই। শুধু ট্র্যাক্টর নয়, বাইকের পর বাইক, গাড়ি, পায়ে হাঁটবেন বলে তৈরি অজস্র মানুষ। সকাল ৮ টা নাগাদ ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো। টিকরি বর্ডারে সাজোয়ানদের হাতে হাতে উড়ে গেল পুলিশের ব্যারিকেড, সব ফাঁকফোকর দিয়ে পিলপিল করে বেরিয়ে এলেন হাস্যমুখ কৃষকরা। বিশালদেহীর একহাতে এক বিরাট কাঠের লাঙল, আর এক হাতে জাতীয় পতাকা। কারো দুহাতেই জাতীয় পতাকা। চাকা ঘুরতে লাগলো। ওয়াহে গুরু, জয় কিসান, জয় জওয়ান শ্লোগানের পাশে পাশে শোনা যেতে লাগলো দিল্লি চলো ধ্বনি। ব্যারিকেডের ওপরেই মহা সমারোহে জাতীয় পতাকা পুঁতে দেওয়া চলল। যে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রামমন্দিরে ৫ লক্ষের বেশি টাকা চাঁদা দেয়, বহুমূল্য গাড়িতে করে বডিগার্ড পরিবৃত সেই মহামহিমের বিজয় চকে আবির্ভাবের আগে, রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র দিবসের সাজানো কৃত্রিম উদযাপনের আগেই শুরু হয়ে গেল অন্নদাতাদের ট্র্যাক্টর মিছিল, লং মার্চ !
নানগ্লোই এবং মুকারবা চকে রায়ট কন্ট্রোল ফোর্সের লাঠি, টিয়ার গ্যাস ধেয়ে এসেছে প্রতিবাদীদের দিকে। পুলিশের ব্যারিকেডের পেছনে ডাঁই করা পাথরের ছবি গোটা পৃথিবী দেখেছে। তবু সরকারপোষিত মিডিয়া এক বৃদ্ধ নিহাং শিখের পুলিশকে তেড়ে যাবার ছবি দেখিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে কৃষকরা হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল। ওরা জানে না সাদা ঘোড়ায় নীল পোশাকের খালি পা নিহাং শিখ গুরু দি লাডলি ফৌজ - গুরুর ভালবাসার শক্তি। তাই দুর্যোগে মানুষ এবং বিশ্বাসকে রক্ষা করার তাগিদে বৃদ্ধ একা ছুটে যান বিরাট সশস্ত্র বাহিনীর দিকে। একে হিংসা বলে না ভালবাসার দায় বলে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তা ঠিক করুক।
আপাতত গোটা ভারতের চোখ এবং মন লাল কেল্লার প্রাকারে। নানগ্লোইতে নিরস্ত্র অন্নদাতার ওপর এখনো বিকট শব্দে আছড়ে পড়ছে টিয়ার গ্যাসের শেল। ভাঙচুর চলছে ট্র্যাক্টরের ওপর। অসমর্থিত সূত্রে শোনা যাচ্ছে লাল কেল্লার ভেতরে গুলিও চলেছে। বর্ডারে কি ইন্টারনেট পরিষেবা স্তব্ধ?
কিন্তু সিংঘু সীমান্তে আরো হাজার হাজার ট্র্যাক্টর, কৃষকদের নিয়ে এসেই যাচ্ছে বিরামহীন।
কী হবে, কে জানে!
৪-১৫
সব ঠিক হ্যায়! লালকেল্লা দখল হয়েছে।
না, সব ঠিক নেই। সব ঠিক নেই কারণ, দিল্লি আইটিও-র কাছে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে। পুলিশের মারে মৃত্যু, এমন বলা কি বারণ? জেল হবে?
ইয়ে আজাদি...
অম্লান বদন
সঠিক তথ্য এবং বিশ্লেষণ।
সবুজ বিপ্লবের হাই কস্ট ইনপুট এবং মার্কেটের বাড়তি কস্ট সামলাতে কয়েক দশক আগে থেকেই কীভাবে সাবসিডি দিয়ে ম্যানেজ করা হচ্ছে তা নিয়ে আগে লিখেছিলাম।
আপনার শেষ পয়েন্ট:
হ্যাঁ, সরকার খাদ্য সুরক্ষা , পিডিএস এসব থেকে মুক্ত হতে চায়।
শান্তাকুমার কমিটির অনুশংসা।
বোধি
মারুতি কারখানাকে ধানক্ষেত বলিনি তো!
দুটোর মধ্যে কমনঃ
মেজাজে জঙ্গি দুটো আন্দোলনকে কীভাবে মোল ঢুকিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজ উসকে দিয়ে ভেঙে ফেলল। লালকেল্লার ভেতরের ব্যাপক ভাঙচুর নিয়ে বলছি। আর জনৈক কৃষকের মৃত্যুর কমেন্ট নিয়ে আমাকে ধমকাবার আগে মূল লেখিকার কমেন্ট আর একবার দেখ।
আমি সেই কন্টেন্ট বলেছিলাম।
অম্লান বদন,
একটা অনুরোধ; আপনি যদি টইয়ে আপনার আলোচিত প্রশ্ন নিয়ে আমার লেখাটি পড়ে ভুল বা অসম্পূর্ণতাগুলো ধরিয়ে দেন তো ভাল লাগবে। সবসময় শিখতে রাজিঃ))
রঞ্জন
রঞ্জনদা র শিক্ষাক্রম আরেকটু লম্বাহবে। ন্যাশনাল হাইওয়ে 'সারাতে' হবে বলে দরদী উঃ প্রঃ সরকার বলেছেন প্রোটেস্ট তুলে নিতে। সেটা শুনে টিকায়েত বলেছে আবার আন্দোলন করবে। সো মাচ ফর আত্মগ্লানি।
কেউ ই গুটিয়ে যায় নি।
বাব্বাঃ আবাপ আবার বলছে দেশের রাজনীতিতে নয়া মোড় :-))))))))))))))))))))))))))))))))))))
প্রতিভা সরকার বলেছিল জয়ের ডংকা, মামুর বিনি পয়সার কলে বলেছিল, তাই কত্ত ফিডব্যাক। এখন আবাপ বলছে দেশের রাজনীতিতে নয়া মোড়, ওখানে একটু ফিড ব্যাক দিলে ভালো হয় , ওখানে তো অ্যাডভান্স দেওয়া আছে বোধ্হয়:-))))))))))))))))))))))))))))
বোধির মুখে ফুলচন্দন!
পরাজয় শুনতে শুনতে ক্লান্ত । ওর আশাবাদ বিজয়ী হোক।
ট্রাক্টর নিয়ে তেল পুড়িয়ে যারা প্যারেড করতে সক্ষম তারা আর যাই হোক গরিব কৃষক নয়। এদের সাথে সিপাহী বিদ্রোহের তুলনা করাটা ঐতিহাসিক তো বটেই নৈতিকতার দিক থেকেও ভুল এবং ভ্রান্তিকর। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন চাষি আত্মহত্যা করেন। এদের ট্রাক্টর তো দূরে খাবারও নেই। ট্রাক্টর চালিয়ে গুন্দাগিরির সাথে সিপাহী বিদ্রোহ কি করে দেখছেন কি জানি? ভারতের ইতিহাসই তো পাল্টে যাবে! বিজেপি তো সেটাই চায়। বিজেপি তো চায় প্রজাতন্ত্র ধ্বংস হোক। ভারতের পতাকা নামিয়ে গেরুয়া পতাকা তোলাই তো বিজেপির স্বপ্ন।
1 সিপাহী বিদ্রোহে নানাসাহেব , ঝাঁসির রাণী, তাঁতিয়া তোপে, আরা জগদীশপুরের কুঁয়র সিং এরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাতে সিপাহী বিদ্রোহের চরিত্র বদলায়নি।
2 তেমনই সবুজ বিপ্লবের পর পাঞ্জাব হরিয়ানার চাষি আর বাংলার চাষির মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাতে তাদের বিপন্নতা মিথ্যে হয়ে যায়না।
3 ট্রাক্টরওলা চাষিরা লাখ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। গরীব চাষি পরিযায়ী শ্রমিক হয়।
4 এই তিনটে আইন গোটা কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদকের অটোনমি কেড়ে নিিয়েে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিচ্ছে, খাদ্য সুরক্ষা নষ্ট করছে। তাাই এটা সবার লড়াই।
আমাদের বিভিন্ন নিননিছা দের দাবী আদানি বিপিএল । তাই তার সুবিধের জন্য আইন বদল হচ্ছে :-))))
রঞ্জনদা, আমি কিছুই একস্ট্রা আশাবাদী নই। আমি জানি ই না কি হবে। কিন্তু যে আন্দোলন শুরু ই হয়েছে, ল রিপিল করার দাবী নিয়ে, যাতে কিনা স্থানীয় রাজনীতিতে বড় প্লেয়ার রা মূল আন্দোলন্কারী তাদের কে একদিনের কেসে দেশদ্রোহী বলে কেস দিয়ে আন্দোলন ভেঙে দেওয়া অত সোজা না। আর যারা মতামত এর বিভিন্নতার জন্য আলাদা হবে, তাদের ও আলাদা আন্দোলন চালাতে হবে আপাতত। নিজেদের ক্রেডিবিলিটি r জন্য।
এটুকু বোঝার জন্য বহুদিন উত্তর ভারতে না থাকলেও চলে।
ভীত বিমূঢ় কৃষকেরা :-))))
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত