ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৫৬১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ডেভিড লিভিংস্টোন। ঊনবিংশ শতকের স্কটিশ চিকিৎসক, অকুতভয় অভিযাত্রী, দাসব্যাবসা-বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য ও খ্রিশ্চান ধর্মের প্রসারের পক্ষে অন্যতম প্রবক্তা। শোষোক্ত দুই উদ্দেশ্যেই ১৮৪১-এ ইওরোপ, আমেরিকার কাছে সম্পূর্ণ অজানা আফ্রিকায় তাঁর অভিযান শুরু। মানচিত্র তৈরি। লেখালিখি। বিপুল খ্যাতি। কার্যত ব্রিটেনের জাতীয় হিরো। ১৮৬৯ থেকে সব স্তব্ধ। সম্পূর্ণ বেপাত্তা। জল্পনার শেষ নেই। পাক্কা দু’ বছর। আসরে নামল মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউইয়র্ক হেরাল্ড। এই কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা ছুটলেন নবীন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। তারপর? এ কাহিনি সেই রোমহর্ষক খোঁজের। স্ট্যানলের বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৬ আগস্ট ২০২১ | ২০৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ত্রয়োদশ শতকের প্রাচীন শহর কাওলের ধ্বংসাবশেষ। একেই সম্ভবত স্ট্যানলে দুর্গ বলছেন
এমবুয়ামাজি থেকে প্রায় ষাট মাইল দক্ষিণে, মাফিয়া বা মনফিয়া দ্বীপের বিপরীতে রুফিজি নদীর সবচেয়ে উত্তরের মুখ: এর থেকে আরও এক ডিগ্রি দক্ষিণে গেলে পড়বে কিলওয়ার বিখ্যাত বন্দর, দাস ব্যবসায়ীদের বিখ্যাত আড়ত। মৃমা নামের এই ভূখণ্ডটি সভ্য বিশ্বের দৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আজকের দিনে যখন দাসেদের প্রশ্নটি বহু উত্তেজিত আলোচনার কেন্দ্রে, তখন আমাদের সকল মনোযোগ এখানেই প্রবলভাবে জড়ো হওয়ার দরকার। আমাদের কাছে এই অঞ্চলের গুরুত্ব তার বন্দরগুলির কারণে – মোম্বাসা, বুয়েনি, সাদানি, হুইন্ডে, বাগামোয়ো, কাওলে, কনডুচি, দার সালাম, এমবুয়ামাজি ও কিলওয়া – আফ্রিকার অভ্যন্তরে ধরে আনা, চুরি করে আনা বা কেনা দাসেদের তিন-চতুর্থাংশ এখান থেকেই বিদেশে পাঠানো হয়। এই কথাটা মনে রাখা উচিত।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৬১৪ বার পঠিত
কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছি যে সাদা মানুষেরা এখানকার লোকদের 'মুলুঙ্গু' বা আকাশের দেবতার ভাষা শেখাচ্ছে, তাদের কিভাবে ফসল বপন করতে হয় বা ফসল কাটতে হয় বা বাড়ি বানাতে হয় তা শেখাচ্ছে , শেখাচ্ছে কিভাবে আরও স্বচ্ছন্দে থাকা যায়— মোদ্দা কথা, তাদের সভ্য করে তুলছে। আর পুরোন কাদেতমারের লোকরা সেই দেখে খুশিতে হাত ঘষছে। তবে কিনা সফল হতে গেলে, একজন নাবিককে যেমন দড়িদড়া সামলানো, পাল গোটানো থেকে হাল ধরা অবধি নৌকা চালানোর সব গুণই রপ্ত করতে হয়, মিশনারিকেও তেমন নিজের সব কাজেই পটু হবে। নরম-সরম মেয়েলি মানুষ হলে চলবে না, জার্নাল-লিখিয়ে বা ঝগড়ুটে তার্কিকও চলবে না, রেশমী-পোশাক-প্রিয় পাদ্রী হলেও হবে না— প্রভুর বাগানের একজন উদ্যমী পুরোদস্তুর শ্রমিক হতে হবে তাঁকে – যেন ডেভিড লিভিংস্টোন বা রবার্ট মোফ্যাটের ছাঁচে গড়া।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৪২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বাগামায়ো ও উসেগুহহার সিম্বামওয়েন্নির মধ্যে আমাদের অভিযান সর্বোচ্চ যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল, সেটা হাজার ফুটের বেশি হবে না, আর কিঙ্গারু হেরার উত্তরে, দিলিমা শীর্ষ নামে যে পাহাড়গুলো পরিচিত, এখানে ওখানে তাদের একেকটা পাহাড়চূড়া বাদ দিলে, মিকেসেহের আশেপাশে ভূমি কিন্তু ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠেছে। টানা সমান্তরাল ঢেউ এর মত, পাহাড়ের শিরগুলো গভীর জঙ্গল বা মসৃণ ঘাসে ঢাকা— ঢালগুলো সুচারুভাবে পশ্চিমদিকে তরঙ্গের তলদেশের গভীরে নেমে যাচ্ছে, এর মধ্যে দিয়েই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে জল বয়ে গিয়ে উঙ্গেরেঙ্গেরিতে পড়ে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৪৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২০৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আমাদের পদযাত্রা এবং অভিজ্ঞতার দৈনন্দিন বিবরণীতে পথচলার সময় সে দেশের প্রকৃতি যেমন ভাবে আমাদের চোখে ধরা দিয়েছে তার একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি। ঘোর মাসিকার মরশুমে আমরা উপকূল এলাকা দিয়ে গিয়েছিলাম। বর্ষাকাল যত গড়ায়, আমরাও ঘাসের উপর বৃষ্টির প্রভাব লক্ষ্য করতে থাকি।
মাসিকা ঋতু শুরুর সময়ে কদাচিৎ হাঁটুর উপরে ঘাস দেখা যেত; কিন্তু বর্ষার শেষের দিকে, তারা লকলকিয়ে পুরো বেড়ে উঠেছে। বর্ষাশেষের মাসখানেক পরে, ঘাসেরা যখন বেশ রোদে ভাজা ভাজা হয়ে যায়, তখন দেশীয়রা ঘাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, আর এর পরের দিনগুলোতে সারা দেশে শুধু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শব্দ শোনা যায়, কাল ধোঁয়ার ঘন আস্তরণে দেশ ঢেকে যায়, এমনকি ধোঁয়ার থেকে রং ধার করে আকাশও কাল হয়ে যায়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৫০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
বর্বর জাতিরা যুগে যুগে যে ভাগ্যের ওঠাপড়া দেখে এসেছে, এই সেগুহহা উপজাতির বিশিষ্ট ও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠাটা আমাদের সামনে সেই ভাগ্য পরিবর্তনের একটা উদাহরণ তুলে ধরে। তিরিশ বছর আগেও সেগুহহারা দেশের একটি সংকীর্ণ অঞ্চলে বসবাস করত। জায়গাটা সাম্বারাদের ও ডোদের দেশের মাঝখানে। উসাগারা পাহাড়ের পূর্বদিকে ডোরা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, কিন্তু দাস-ব্যবসায়ীরা এদের জীবনে ধ্বংস ডেকে এনেছে, এদের সংগঠিত দস্যুদের হাতে তুলে দিয়েছে। দস্যুদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বাসঘাতক মৃমারা, পালিয়ে যাওয়া দাসেরা, জাঞ্জিবারের আইনের চোখে অপরাধীরা, আসামীরা ও অপহরণকারীরা- উসাগারা থেকে সমুদ্র অবধি এলাকার জঙ্গলগুলো এই ধরণের লোকে থিকথিক করত।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৫১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮৩৮ বার পঠিত
তরুণ সাগারারা সুদর্শন তরুণ আফ্রিকান বর্বরের সৌন্দর্যের আদর্শের উদাহরণ। তার মুখের মরা কালো রং হালকা গৈরিক ছোঁয়ায় বাদামীবর্ণের, তার কপালের উপর চার-পাঁচটি উজ্জ্বল তামার মুদ্রার সজ্জা, প্রতিটি কানে কানের লতিগুলোকে টেনে লম্বা করে একটি করে ছোট্ট লাউয়ের গোড়া ঝোলানো, মাথায় সহস্রাধিক তেলচকচকে কেশচূর্ণ পিতল এবং তামার ছোট ছোট টুকরো দিয়ে সাজানো, মাথাটি সুচারুভাবে পিছনে হেলান, চওড়া বুকটি চিতিয়ে রাখা আর সেই সঙ্গে তার পেশীবহুল বাহু এবং সমানুপাতে পা— সৌন্দর্যের প্রতিনিধিই বটে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৬৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৭২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
পয়লা অক্টোবর, দক্ষিণ-নৈর্ঋত কোণ বরাবর চার ঘণ্টা হাঁটার পর জিওয়ানি নামের একটা বড় জলাশয়ের কাছে পৌঁছলাম। একটা বিশালাকার ডুমুর গাছ (স্থানীয় ভাষায় এমকুয়ু), উন্যামওয়েজির বনের দৈত্যাকার গাছগুলোর মধ্যে একটা, তার ছায়ায় একটা পুরানো আধ-পোড়া বেড়া-ঘেরা থাকার জায়গা দেখলাম - এক ঘণ্টার মধ্যে সেটা একটা দুর্দান্ত শিবিরাবাসে রূপান্তরিত হল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৬৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৫১৩ বার পঠিত
সর্দার একজন লম্বা শক্তপোক্ত লোক। তাকে ও তার দলবলকে বসার জন্য বললাম। তারা আমার দিকে, আমার মুখের দিকে, আমার জামাকাপড় ও বন্দুকের দিকে এমন খুশিভরা অবাক চোখে তাকাতে লাগল যে কী বলব! কিছুক্ষণ মন দিয়ে আমাকে দেখল, তারপর একে অপরের দিকে তাকাল, আর শেষে হো হো করে গলা ছেড়ে হেসে উঠল আর আঙ্গুল মটকাতে লাগল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৬৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৭ মার্চ ২০২২ | ১৫০৯ বার পঠিত
যেই ঝোপের একপাশে পৌঁছেছি, তখন দু'জন সন্দেহজনক চেহারার দেশিয় লোক ঝোপের অন্য পাশে এসে পৌঁছল- আমাদের দূরত্ব মাত্র কয়েক ফুট। যেই ঘুরেছি, অমনি তাদের মুখোমুখি। হঠাৎ উদয় হওয়া সাহেবের দিকে আদিবাসীরা এক ঝলক তাকাল, এক মুহূর্তে জন্য যেন ভয়ে পাথর হয়ে গেল, কিন্তু তারপর...
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৭১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ৩১ মার্চ ২০২২ | ১৪৯৫ বার পঠিত
"ওই যে জায়গাটা একটা দমবন্ধ করা সংঘর্ষের প্রায়-সাক্ষী হতে যাচ্ছিল, সেই জায়গাটা ছাড়ার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পরে জিওয়ানিতে পৌঁছলাম। জিওয়ানি, বা হ্রদে কোন জল ছিল না, এক ফোঁটাও না, যতক্ষণ না আমার লোকেদের শুকনো জিভ তাদের মনে করিয়ে দেয় যে জলের জন্য মাটি খুঁড়তে তাদেরই এগিয়ে যেতে হবে ।" - চলছে উজিজির পথে এগিয়ে চলার বর্ণনা। এ পর্বে কাফেলার সদস্যদের কথা এবং এক নির্জলা হ্রদে পৌঁছনর কাহিনি।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৭৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৫ মে ২০২২ | ১৩৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
স্পষ্ট সূর্যের আলোয় আবার বেরিয়ে আসার পরে, শিকারের সন্ধানে আরও খানিকটা হাঁটলাম। এই সময়ে দেখলাম, এমটাম্বু উপত্যকার বাঁদিক ঘেঁষা এই জঙ্গলে একটা বিশাল, লালচে রঙের, অতি ভয়ঙ্কর দাঁতওলা বুনো শুয়োর চড়ে বেড়াচ্ছে। কালুলুকে একটি গাছের আড়ালে মাটিতে শুয়ে থাকতে বললাম, আর আমার সোলার হ্যাট-টা কাছের আরেকটা গাছের পিছনে রেখে দিলাম...
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৭৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১২ মে ২০২২ | ১১০১ বার পঠিত
শিবিরে পৌঁছানোর সামান্য আগে আমি একটা চিতাবাঘের দিকে গুলি ছুঁড়লাম, কিন্তু মারতে পারলাম না, ব্যাটা ছুটে পালাল। রাতভর এমটাম্বু নদীর কাছে সিংহেরা গর্জন করতে থাকল।
ঘন জঙ্গলের গহীন গোধূলিবৎ-ছায়ায় আমরা হাঁটতে থাকলাম।লম্বা পথ হাঁটায় বনের ছায়া আমাদের প্রখর তপনতাপ থেকে রক্ষা করেছিল। পরের দিন আমরা শিবিরে পৌঁছালাম। উজিজি থেকে আগত একদল আরব এই শিবিরটা সদ্যই তৈরি করেছে। তারা এই রাস্তা ধরে উন্যানয়েম্বের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। এতটা আসার পর মিরাম্বো আর আরবদের মধ্যে যুদ্ধের খবরে শঙ্কিত হয়ে তারা ফিরে যায়। আমাদের পথ ছিল রুগুফু নদীর ডানধার ধরে। একটা চওড়া মন্থর জলস্রোত, মাটাটা নলিকা ও প্যাপিরাসের ঝোপে আটকা-পড়া জলধারা । সর্বত্র মোষদের পায়ের ছাপ আর গাদা গাদা নাদা পড়ে আছে। যা সব চিহ্ন তাতে কাছাকাছি যে গন্ডারও রয়েছে তা পরিষ্কার। নদীর কাছেই একটা ঘন গাছের ঝোপড়ার মধ্যে একদল দাড়িওয়ালা, সিংহ সদৃশ বানরের দেখা পেলাম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৭৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৯ মে ২০২২ | ১৪৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
পাথুরে জলখাত ধরে নিচে নামছি তো নামছি। গোটা জায়গাটাই নুড়ি পাথরের ভরা। শেষে আমরা এসে পৌঁছলাম একটা শুষ্ক, পাথুরে উপত্যকায়। আমাদের চারদিকে হাজার ফুট উঁচু সব পাহাড়ের রাজত্ব। যে গিরিখাতটা ধরে আমরা চলছি, সেটা চারদিকে পাক খেতে খেতে নামছে, ধীরে ধীরে আরও চওড়া হচ্ছে আর শেষে এটা ছড়ানো সমভূমিতে পরিণত হয়েছে, তার ঢাল পশ্চিমে। রাস্তাটা, খাত ছেড়ে, উত্তরদিকে একটি নিচু গিরীষিরায় গিয়ে পৌঁছেছে। সেখান থেকে একটা পরিত্যক্ত জনবসতি দেখা যায়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৭৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৬ মে ২০২২ | ১০২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
গোটা সকালটা ফেরিঘাটে ক্যানোর মালিকদের সঙ্গে ফালতু কথায় নষ্ট হল। অবশেষে বেলা পাঁচটায় আমরা মালাগারাজি নদীর বাম তীরে ইহাতা দ্বীপের সামনে পৌছালাম। কিয়ালার পশ্চিমে, দেড় ঘণ্টা দূরে ইহাতা দ্বীপ। ফেরি পারাপারের জন্য শেষমেষ রফা হল আট গজ কাপড় ও চার ফান্ডো সামি-সামি বা লাল পুঁতি, তখনই সেটা দিয়ে দেওয়া হল। এই ছোট, বেঢপ, টলমলে ক্যানোতে মালপত্র-সহ চারজন নদী পার করতে পারে। যাত্রী আর মালপত্র বোঝাই নৌকাগুলোর মাঝিরা যখন তাদের নৌকা নিয়ে রওনা হল, তখন তাদের অন্যদিকেই থেমে থাকার নির্দেশ দেওয়া হল, আর আমাকে অবাক করে, আরও দাবি জানানো হল। মাঝিরা দেখেছিল, যে এর মধ্যে দু’টি ফান্ডো মাপে খাটো, তাই আরও দুটো ফান্ডো অবশ্যই দিতে হবে, আর নাহলে নদী পারাপারের চুক্তি বাতিল। অগত্যা আরও দুটো ফান্ডো দিতে হল, তবে কিনা প্রভূত প্রতিবাদ, বাকবিতন্ডার পরে – এই দেশের যা নিয়ম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৮৫ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৭ জুলাই ২০২২ | ১২০৮ বার পঠিত
১০ই নভেম্বর। শুক্রবার। সমুদ্রের ধারের বাগামোয়ো থেকে ২৩৬তম দিন। আর উন্যানয়েম্বে থেকে ৫১তম দিন। মোটামুটি পশ্চিম-নৈর্ঋত কোণে উজিজি। হাঁটার সময়, ছয় ঘণ্টা।
দারুণ সুন্দর, আনন্দের সকাল। তাজা, ঠান্ডা বাতাস। ধরিত্রী আর তার সন্তানদের দিকে আকাশ ভালোবাসার হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছে। গভীর অরণ্যের মাথায় উজ্জ্বল তাজা পাতার মুকুট; জঙ্গলে ঢাকা নদী পাড়ের পান্না-সবুজ ছায়ায় ছায়ায় এমুকুটির জলস্রোত কলকল শব্দে ছুটে চলেছে, যেন আমাদের চ্যালেঞ্জ করছে, কে আগে উজিজি পৌঁছাতে পারে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৮৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৪ জুলাই ২০২২ | ১২৯৫ বার পঠিত
মাথার টুপি খুলে তাঁকে বললাম: 'ডঃ লিভিংস্টোন, তাই তো?'
‘হ্যাঁ,’ তিনি মৃদু হেসে বললেন, নিজের টুপিটি সামান্য তুলে।
আমি নিজের মাথায় ফের টুপিটা বসালাম, আর তিনিও ফের টুপি পরলেন, আর আমরা দু'জনের হাত আঁকড়ে ধরলাম, তারপর আমি জোরে জোরে বললাম: ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, ডাক্তার, আপনার সঙ্গে দেখা হল।’
তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমিও খুশি যে আপনাকে এখানে স্বাগত জানাতে পারছি।’
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৮৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২১ জুলাই ২০২২ | ১৩৩২ বার পঠিত
কথোপকথন শুরু হল। কী নিয়ে? সত্যি বলছি, ভুলে গেছি। উঁহু! পরস্পরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছিলাম, যেমন ‘আপনি এখানে কীভাবে এসেছেন?’ ও ‘এতদিন কোথায় ছিলেন? - গোটা পৃথিবীর লোক জানে যে আপনি মৃত।’ হ্যাঁ, এভাবেই কথা শুরু হল: তবে ডাক্তার আমাকে কী বলেছিলেন, আর আমিই বা তাকে কী বলেছিলাম, সেসব সঠিক বলতে পারব না, কারণ আমি তো তার দিকে হাঁ করে তাকিয়েই ছিলাম, যে মানুষটার পাশে এখন মধ্য আফ্রিকায় বসে আছি, তাঁর দারুণ চেহারা ও মুখের প্রতিটা দাগ মুখস্থ করছিলাম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৮৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৮ জুলাই ২০২২ | ১৩০১ বার পঠিত
ডাক্তার এবং আমি অনেক কিছু নিয়ে কথা বললাম, বিশেষ করে তার নিজের তখনকার সমস্যাগুলো নিয়ে কথা হল। উজিজি আসার পর যখন তাঁকে বলা হয়েছিল যে তাঁর সব জিনিসপত্র খরচ হয়ে গেছে, আর তিনি এখন গরীব, তাঁর তখনকার হতাশা নিয়েও কথা হল। শেরিফ নামের একটা লোককে রাজদূতমশাই সব জিনিসপত্রের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সে ব্যাটা একটা দো-আঁশলা মাতাল দর্জি, এখন তার কাছে মাত্র কুড়িটা কাপড়ের মতন বাকি পরে আছে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৮৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৪ আগস্ট ২০২২ | ৯৬৯ বার পঠিত
আমি পসরার মূল্য দিয়েছি, ওঁকে সাহায্য করার জন্য এতদূর এসেছি। তবে গত রাতে ওঁকে যতটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে যে, আমাকে যেরকমটা বিশ্বাস করানো হয়েছিল উনি ঠিক ততটা কিপটে, মনুষ্যদ্বেষী নন। স্বল্প কথায় উনি আমাকে অভ্যর্থনা করলেও, আমার সঙ্গে করমর্দন করার সময় যথেষ্ট আবেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ তাঁর পিছু নিলে তিনি যদি সে মানুষের প্রতি এতই বিরক্ত হতেন, তাহলে কি আর আমায় ওই ভাবে স্বাগত জানাতেন?
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১১ আগস্ট ২০২২ | ১১৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
১৮৬৯ সালের অক্টোবরে আমাকে লিভিংস্টোন আবিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মিঃ বেনেট টাকা নিয়ে বসে ছিলেন আর আমিও যাওয়ার জন্য তৈরি। পাঠক, লক্ষ্য করবেন যে আমি কিন্তু সরাসরি তাঁকে খুঁজতে চলে যাইনি। এই কাজ শুরু করার আগে আমার আরও অনেক কাজ ছিল, অনেক হাজার মাইল পেরোতে হয়েছিল। ধরুন যে, প্যারিস থেকে সোজা জানজিবারে পৌঁছে গেলাম, সাত বা আট মাস পরে, সম্ভবত, উজিজিতে আমাকে পাওয়া যেত তাহলে, কিন্তু লিভিংস্টোনকে তখন সেখানে পাওয়া যেত না; তিনি তখন লুয়ালাবাতে ছিলেন; এবার আমাকে তাহলে মান্যুয়েমার আদিম বনের মধ্য দিয়ে, লুয়ালাবার আঁকাবাঁকা পথ ধরে, তাঁকে ধাওয়া করে কয়েক শত মাইল ঘুরে ঘুরে মরতে হত।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৮ আগস্ট ২০২২ | ১৩৭৭ বার পঠিত
ডাঃ লিভিংস্টোনের বয়স প্রায় ষাট, অবশ্য শরীর সেরে ওঠার পরে তাঁকে পঞ্চাশও পেরোয়নি এমন মানুষের মত দেখাচ্ছিল। তাঁর চুল এখনও বাদামী রঙের, তবে রগের কাছে একটা দুটো ধূসর দাগ দেখা যায়; তাঁর গোঁফ-দাড়ি ঘোর ধূসর। প্রতিদিন দাড়ি কামান। তাঁর হালকা বাদামি রঙের চোখ, দারুণ ঝকঝকে; বাজপাখির মতন তীব্র দৃষ্টি। শুধুমাত্র তাঁর দাঁতই তাঁর বয়সের দুর্বলতা প্রকাশ করে; লুন্ডার কঠিন খাদ্য তাঁর দাঁতের সারিটি ধ্বংস করেছে। শিগগিরই একটু মোটা মতন হয়ে গেলেও, তাঁর চেহারা সাধারণের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা, কাঁধটা একটু সামান্য ঝোঁকা। হাঁটার সময় তাঁর পদক্ষেপ ভারী হলেও দৃঢ়, অনেকটা একজন অতি-পরিশ্রান্ত মানুষের মত। একটা নৌবাহিনীর টুপি পরেন, তার ডগাটা অর্ধবৃত্তাকার, এই টুপি দিয়েই তাঁকে সারা আফ্রিকা চেনে। যখন তাঁকে প্রথম দেখি, তাঁর পোশাক তাপ্পি-মারা, তবু অত্যন্ত পরিষ্কার।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯২ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৫ আগস্ট ২০২২ | ১৩৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
যদি তাঁর চরিত্রের ধর্মীয় দিকটি বিবেচনা না করি, ডাঃ লিভিংস্টোনকে জানা সম্পূর্ণ হবে না। তাঁর ধর্ম তাত্ত্বিক ধর্ম নয়, বরং এ এক ধ্রুব, অকপট, আন্তরিক অনুশীলন। কাউকে দেখানোর জন্যও না, উচ্চকিতও না, শান্ত, ব্যবহারিক জীবনে এই সদাজাগ্রত বোধের প্রকাশ। একেবারেই আক্রমণাত্মক নয়। এই বিষয়টা কখনও কখনও বিরক্তিকরও বটে, যদি অপ্রাসঙ্গিক না হয়। তাঁর মধ্যে ধর্মের মাধুর্য বিরাজমান; কেবল ভৃত্যদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহারই না, স্থানীয় গোঁড়া মুসলমান বাসিন্দাদের প্রতি, তাঁর সংসর্গে আসা সকল মানুষের প্রতি আচরণেই তাঁর ধর্মভাবের প্রকাশ। তীব্র মেজাজ, উদ্যম, প্রাণবন্ত স্বভাব আর সাহসের অধিকারী লিভিংস্টোন এটা ছাড়া অবশ্যই নিঃসঙ্গ, কঠোর প্রভু হয়ে উঠতেন। ধর্ম তাঁকে পোষ মানিয়েছে, তাঁকে একজন খ্রিস্টান ভদ্রলোক বানিয়েছে: অমার্জিত, একগুঁয়েমিকে পরিমার্জিত, অবদমিত করেছে; ধর্মের প্রভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন একজন অতি কাম্য সঙ্গী ও অতি-প্রশ্রয়দাতা প্রভু - এমন একজন মানুষ হয়েছে যাঁর সঙ্গ বেশ ভাল মাত্রায় উপভোগ্য।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১১৯৩ বার পঠিত
এক রাতে আমার নোট-বই বের করলাম, আর তাঁর মুখ থেকে তাঁর ভ্রমণ সম্পর্কে বক্তব্য শোনার জন্য বসলাম; নিঃসংকোচে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বললেন। তার একটি সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হল। ডাঃ ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৬৬ সালের মার্চ মাসে জাঞ্জিবার দ্বীপ থেকে রওনা দেন। পরের মাসের ৭ তারিখে তিনি সদলবলে কিন্ডিনি বে থেকে আফ্রিকার অভ্যন্তরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁর দলে ছিল বোম্বাই থেকে আসা বারোজন সিপাই, কোমোরো দ্বীপপুঞ্জের জোহানার নজন লোক, সাতজন মুক্তি পাওয়া দাস, আর দু'জন জাম্বেজির লোক। তাদের পরীক্ষামূলক ভাবে দলে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ছটা উট, তিনটে মোষ, দুটো খচ্চর আর তিনটে গাধা। এইরকম মোট ত্রিশজন লোক সঙ্গে ছিল, যাদের মধ্যে বারোজন যেমন সিপাই ছিল, যারা দলকে পাহারা দেবে। তাদের বেশিরভাগই এনফিল্ড রাইফেল দিয়ে সজ্জিত । সেই রাইফেলগুলো বোম্বাই-এর সরকার ডাক্তারকে উপহার দিয়েছিল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে - ৯৫ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৫১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লুন্ডা বা লোন্ডা দেশে পা রাখার পরেপরেই, কাজেম্বে শাসিত এলাকায় প্রবেশ করার আগে, লিভিংস্টোন চাম্বেজি নামের একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ নদী পেরিয়েছিলেন। দক্ষিণের সেই ব্যাপ্ত, বিশাল নদী, যে নদীর নামের সঙ্গে লিভিংস্টোনের নাম চিরকাল জড়িয়ে থাকবে, তার সঙ্গে এর খুবই নামের মিল। ব্যাপারটা সেই সময়ে লিভিংস্টোনকে বিভ্রান্ত করেছিল, আর সেই কারণেই , তিনি এই নদীকে তার প্রাপ্য মনোযোগ দেননি, বিশ্বাস করেছিলেন যে চাম্বেজি তাহলে আদতে জাম্বেজিরই উৎস ধারা, আর তাই তিনি মিশরের যে নদীর উৎসের সন্ধান করছেন, তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই। পর্তুগিজ তথ্যের সত্যতার উপর গভীর বিশ্বাস রাখাই তার দোষ হয়েছিল। এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য তাকে অনেক, অনেক মাসের ক্লান্তিকর পরিশ্রম করতে হয়েছে, অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৯৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৩ অক্টোবর ২০২২ | ৯৩৩ বার পঠিত
উগুহহা বন্দর থেকে একদল ব্যবসায়ীর সঙ্গে তিনি রওনা হলেন প্রায় সোজা পশ্চিমদিকে, উরুয়ার উদ্দেশে। পনের দিন হেঁটে পৌঁছালেন বামবারেতে। এটা মান্যেমার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ হাতির দাঁতের ভাণ্ডার। স্থানীয়রা জায়গাটাকে বলে , মান্যুয়েমা। প্রায় ছ'মাস ধরে তিনি বামবারেতে আটকে রইলেন। পায়ে একটা ঘা হয়েছিল, মাটিতে পা ফেললেই সঙ্গে সঙ্গে তার থেকে পুঁজ-রক্ত বেরচ্ছিল। সেরে ওঠার পরে, তিনি উত্তর দিকে রওনা হন। বেশ কিছু দিন পর লুয়ালাবা নামের এক প্রশস্ত হ্রদ-জাত নদীর পাশে এসে পৌঁছান। এই নদী উত্তর ও পশ্চিম দিকে বয়ে চলেছে। কিছু কিছু জায়গায় আবার দক্ষিণ মুখোও তার চলা। সব মিলিয়ে বেশ গুলিয়ে দেওয়া ব্যাপার। এক থেকে তিন মাইল পর্যন্ত চওড়া নদী। নিজের জেদ ছেড়ে তিনি এর আঁকাবাঁকা গতিপথ অনুসরণ করার চেষ্টা করেন, শেষকালে দেখলেন লুয়ালাবা গিয়ে পড়েছে সরু, দীর্ঘ কামোলোন্ডোর হ্রদে। যেখানে গিয়ে পড়েছে সেই জায়গাটা মোটামুটি ৬° ৩০' অক্ষাংশ। আর একে দক্ষিণে অনুসরণ করে, তিনি আবার সেইখানে এসে পৌঁছেছিলেন যেখানে তিনি লুয়াপুলাকে মোয়েরো হ্রদে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৯৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২০ অক্টোবর ২০২২ | ১১৯০ বার পঠিত
সবাই জানে যে হাতির দাঁতের ব্যবসা কেন্দ্রগুলো নীল নদের পেথেরিকের নামাঙ্কিত শাখা ধরে প্রায় ৫০০ মাইল অবধি ছড়ানো। এই কথাটাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে যখন বলা হয়েছিল যে গোন্ডোকোরো, ৪° উত্তর অক্ষাংশে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুট উপরে অবস্থিত আর এদিকে যে জায়গায় থামা হয়েছিল সেই ৪° দক্ষিণ অক্ষাংশের জায়গাটারও উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ২০০০ ফুটের সামান্য বেশি। দুটো নদীই সমুদ্র থেকে ২০০০ ফুট উঁচুতে, একে অপরের থেকে ৮° অক্ষাংশ দুরে, অথচ দুটোকে এক ও একই নদী বলা হচ্ছে, এই ব্যাপারটা কিছু মানুষের কাছে একটা ভারি আশ্চর্য কথা বলে মনে হতে পারে। তবে বিস্ময় প্রকাশে লাগাম পড়ানো ভাল, এটা বুঝতে হবে যে এই বিপুল, বিস্তৃত লুয়ালাবা মিসিসিপির চেয়েও চওড়া, এটা একটা হ্রদজাত নদী; মাঝে মাঝেই এত বিপুল-পরিমাণ জল একেকটা ছড়ানো হ্রদ তৈরি করে ফেলেছে; তারপর আবার খানিক সরু হয়ে চওড়া নদীর চেহারা নিয়েছে, আবার আরেকটা হ্রদ তৈরি করেছে, আর সে কারণেই, ৪° অক্ষাংশ বা তার থেকেও উত্তরে ডাক্তার আবার একটা বড় হ্রদের কথা শুনেছিলেন।
যতক্ষণ না লুয়ালাবা, যেখানে ডাক্তার থেমেছিলেন আর বাহর গজলের দক্ষিণতম বিন্দু, যেখানে পেথেরিক এসেছিলেন, এই দুটি নদীর উচ্চতা নিখুঁত নির্ভুল ভাবে জানা যায়, ততক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৯৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৩ নভেম্বর ২০২২ | ১১৫১ বার পঠিত
এইভাবে যতদূর সম্ভব গবেষণা করে, এলিফ্যান্টাইন বা তার থেকেও দূরে গিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আর অন্যের মুখের কথা থেকেও এইটুকুই জানতে পেরেছি। এলিফ্যান্টাইন শহর পেরিয়ে আরও উজানে যেতে গেলে এলাকাটা খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে, তাই, এখানে, নৌকার দুদিকে দড়ি বেঁধে এগোতে হয়, যেমনটা লাঙ্গলে বলদ জোতার সময় করতে হয়; কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে গেলে স্রোতের টানে নৌকা ভেসে চলে যায়। এইভাবে চার দিনের পথ চলা। এখানে নীল নদ এঁকেবেঁকে চলে। বারো শোয়েনি পথ এইভাবে চলতে হয়; আর তারপরে একটা সমভূমি আসে, সেখানে নীল নদ একটা দ্বীপের চারপাশে প্রবাহিত হয়; এর নাম ট্যাকোম্পেসো। এলিফ্যান্টাইনের লাগোয়া উজান এলাকায় ও দ্বীপটার অর্ধেকাংশে ইথিওপিয়ানরা বাস করে; বাকি অর্ধেক অংশে মিশরীয়রা থাকে। এই দ্বীপের কাছেই একটা বিস্তীর্ণ হ্রদ রয়েছে, যার সীমানা বরাবর ইথিওপিয়ান যাযাবরদের বাস।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-৯৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১০ নভেম্বর ২০২২ | ১০৮১ বার পঠিত
এই দুটো কাজ সুসম্পন্ন হলে, একমাত্র তারপরই, নীল নদের রহস্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব। হ্রদের থেকে জন্ম নেওয়া লুয়ালাবা নদী অজস্র হ্রদের মধ্যে দিয়ে বিপুল জলধারা নিয়ে যে দুটি দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে, সেই দেশদুটি হল রুয়া (স্পেক যাকে বলেছেন উরুওয়া) ও মান্যুয়েমা। এই নদীর বিপুল জল রাশি দেখলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। ইউরোপ এই প্রথম জানল যে ট্যাঙ্গানিকা ও কঙ্গো নদীর পরিচিত উৎসগুলির মধ্যে লক্ষ লক্ষ নিগ্রো জাতির বসবাস। যে সাদা মানুষেরা আফ্রিকার বাইরে এমন শোরগোল তোলে, তাঁদের এই নিগ্রোরা কখনও চোখেও দেখেওনি, তাদের কথা শোনেওনি। অসাধারণ শ্বেতাঙ্গদের প্রথম প্রতিভূ হিসেবে ডাঃ লিভিংস্টোনকে দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছিল, তিনি মনে হয় তাদের মনে একটা অনুকূল ধারণা তৈরি করতে পেরেছেন।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৭ নভেম্বর ২০২২ | ১০৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আরবরা যে দেশেই যাক না কেন, নিজের জাতের নাম ডোবাতে তারা সবসময় মুখিয়ে থাকে। তবে এর কারণ অবশ্য আরবের প্রকৃতি, গায়ের রং বা জাত নয়, এর একমাত্র কারণ হল কেবলমাত্র দাস-বাণিজ্য। যতদিন জাঞ্জিবারে দাস-ব্যবসা চলবে, ততদিন এই এমনিতে উদ্যমী আরবদের বিরুদ্ধে গোটা আফ্রিকার আদিবাসীদের ঘৃণা জেগে থাকবে। জাঞ্জিবার থেকে আফ্রিকার অন্দরে যাওয়ার মূল পথ বরাবর এই নিষ্ঠুরতার কাহিনীগুলো অজানা, তার কারণ এই যে এখানকার স্থানীয়দের হাতে বন্দুক ছিল, সেই সঙ্গে কীভাবে সেই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে হয় তাও তাদের শেখানো হয়েছিল, আর সেই বন্দুকের ব্যবহারে মোটেই তারা পিছপা ছিল না।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৪ নভেম্বর ২০২২ | ১০৫৩ বার পঠিত
দু'জন আরবও এই ধাতুর আশায় রুয়ার কাটাঙ্গা নামের জায়গাটাতে হাজির; তবে সংকীর্ণ গিরিখাতে খননের বিষয়ে তাদের কিছুই জানা নেই, অতএব তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা খুবই কম। এইসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় আবিষ্কারগুলি করার ঠিক আগে ডাঃ লিভিংস্টোন ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার সঙ্গীরা আর এক পাও এগোতে রাজি নয়। একটা বড় দল ছাড়া তারা এগোতে ভয় পাচ্ছিল; আর, মান্যুয়েমায় দলবল জোগাড় করা সম্ভব ছিল না, ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডাক্তার উজিজির দিকে মুখ ফেরাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০২ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০১৯ বার পঠিত
এটা সত্যিই দুঃখজনক যে, আবিষ্কারকরা যেটাকে অবিসংবাদিত সত্যি বলে জেনেছেন, সেটাও বলতে পারবেন না, বললেই তাঁদের দাগিয়ে দেওয়া হবে যে তাঁরা দেশের ভৌগোলিকদের প্রিয় তত্ত্বগুলির বিরোধিতা করার জন্য দল বেঁধেছেন। বা অভিযোগ করা হবে যে সুপরিচিত তথ্যগুলোকে তাঁরা বিকৃত করছেন। বিদগ্ধ মিঃ কুলি' একজন আরবের কথার ভিত্তিতে একটা গোটা মধ্য আফ্রিকা জোড়া বৃহৎ হ্রদের রূপরেখা এঁকেছিলেন। সেই হ্রদ নিয়াসা, টাঙ্গানিকা ও এন'ইয়ানজা ইত্যাদি বেশ কয়েকটা হ্রদকে জুড়ে রয়েছে। এদিকে লিভিংস্টোন, বার্টন, স্পেক, গ্রান্ট, ওয়েকফিল্ড, নিউ, রোশার, ইয়োন্ডারডেকেন এবং বেকার যখন প্রমাণ করলেন যে, এগুলো একটা না অনেকগুলো আলাদা আলাদা হ্রদ, আলাদা আলাদা নামের, দূরে দূরে ছড়ানো, তখন কেন তিনি একবারও স্বীকার করবেন না যে তিনি ভুল করেছেন?
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১১১২ বার পঠিত
লিভিংস্টোন ও আমি, টাঙ্গানিকা হ্রদের উত্তর প্রান্ত দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করার পরে যদি জিজিদের অযৌক্তিক দাবি বা ভয়ের কাছে নতি স্বীকার করে, রুসিজি নদীর সমস্যার সমাধান না করেই উন্যানয়েম্বেতে ফিরতে বাধ্য হতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দেশে ফিরে সকলের ঠাট্টা তামাশার পাত্র হতাম। কিন্তু জানতাম যে জিজিদের, বিশেষ করে ওই হাস্যকর বর্বর কানেনা সর্দারকে দলে নেওয়ার জন্যেই ক্যাপ্টেন বার্টন ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই আমরা সতর্ক ছিলাম। বুঝেছিলাম যে এই ভৌগলিক সমস্যাটার সমাধানের ক্ষেত্রে এই ধরনের লোকেরা আমাদের কোন সাহায্যই করবে না। আমাদের সঙ্গে কয়েকজন ভাল নাবিক ছিল, খুবই অনুগত। ভাবলাম, শুধু একটা ক্যানো ধার করতে পারলেই সবকিছু ঠিকঠাক হবে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০৫ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০২৩ বার পঠিত
একটা বটগাছের নিচে ছাউনি খাটানো হল; চারপাশে টাঙ্গানিকার হালকা-ধূসর জলরাশি, তার পাশে ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া পাহাড়ের সারি। পাম-কুঞ্জ, কলাঝাড়, সাবু-সহ শস্যখেত দিয়ে সাজানো নিয়াসাঙ্গা গ্রামটি অবস্থিত নিয়াসাঙ্গা নদীর মুখে। তাঁবুর কাছেই গ্রামবাসীদের ছোট-বড় আধা ডজন ক্যানো ছিল। তাঁবুর দরজার সামনেই যতদূর চোখ যায় মিষ্টি জলের রাশি মৃদু বাতাসকে ডাক পাঠাচ্ছে— দূরের উগোমা, উকারাম্বা চোখে পড়ে। ঘন-নীল-শিরা-লাঞ্ছিত মুজিমু দ্বীপপুঞ্জও ফুটে ওঠে চোখের সামনে। আমাদের পায়ের তলায় পরিষ্কার, জলে-ধোয়া নুড়ি, সমুদ্রের অস্থির ঢেউয়ে ভেসে ভেসে কূলে এসে সারি বেঁধে জমা হয়, কোথাও বা স্তূপের আকার নেয়। আমাদের ডাইনে বাঁয়ে পিছনে যে পাহাড়ের রাশি সেগুলো কি দিয়ে তৈরি তা এই পাথরগুলোর থেকেই হদিশ পাওয়া যাবে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ১০৬০ বার পঠিত
আশেপাশের সব জায়গার থেকে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু। মাগালা কেপের থেকে উত্তর দিকে, দুটো পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে হ্রদের জল বয়ে যাচ্ছে। এই পর্বতশ্রেণি দুটো আমাদের অবস্থানের প্রায় ত্রিশ মাইল উত্তরের একটি বিন্দুতে এসে মিলেছে।
মাগালার রুন্ডিরা খুবই সভ্য ভব্য। অবশ্য নিষ্পলক হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেও এদের জুড়ি নেই। তাঁবুর দরজার কাছে ভিড় করে এরা আমাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়েছিল, যেন আমরা অতীব কৌতূহলের বস্তু, আর ঝপ করে উবেও যেতে পারি।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১০৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৮৫৯ বার পঠিত
উজিজি থেকে রওনা হওয়ার নবম সকালে মুগেরের বিস্তৃত ব-দ্বীপ পেরিয়ে গেলাম। সূর্যোদয়ের প্রায় দু ঘণ্টা পরে। মুগেরে নদীর নামেই মুকাম্বা শাসিত পূর্ব দিকের এলাকার নাম। এর তিনটে মুখের দক্ষিণতমটির সামনে এসে দেখলাম জলের রঙটা বেশ আলাদা। নদীর মুখ থেকে পূর্ব-পশ্চিমে একটা প্রায় সোজা দাগ কাটলে দুপাশের জলের রঙের পার্থক্য বেশ চেনা যাবে। দাগের দক্ষিণ দিকে হালকা সবুজ বিশুদ্ধ জল, আর উত্তরে কাদাঘোলা জল, উত্তরমুখো স্রোত স্পষ্ট দেখা যায়। প্রথম মুখটি অতিক্রম করার পরপরই দ্বিতীয় মুখের কাছে পৌঁছলাম আর তারপরেই তিন নং মুখের কাছে এসে পড়লাম, সব কটাই মাত্র কয়েক গজ চওড়া, কিন্তু প্রতিটা স্রোতধারাই পর্যাপ্ত জল বয়ে আনছে । ফলে আমরা সংশ্লিষ্ট নদী মুখের থেকে অনেকটাই উত্তরে, জলের স্রোত বরাবর চললাম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১১০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৯৭৫ বার পঠিত
তার গ্রামে আস্তানা গাড়ার পরেই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে রুহিঙ্গা এসেছিল। অতিশয় সহৃদয় লোক, সবসময়ই হেসে ওঠার কারণ খুঁজছে; সম্ভবত মুকাম্বার চেয়ে পাঁচ - ছ বছরের বড় - যদিও তার নিজের মতে তার একশ বছর বয়স - তবে সে তার ছোট ভাইয়ের মত অত সম্মানিত নয়, আর ভাইটিকে তার নিজের লোকেরা যেমন শ্রদ্ধা-ভক্তি করে, একে তত কিছু করে না। রুহিঙ্গা অবশ্য মুকাম্বার চেয়ে দেশের সম্পর্কে বেশি জানে। আর তুখোড় স্মৃতি শক্তি! খুব বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে তার দেশ সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিল। সর্দার হিসাবে আমাদের যথাযথ সম্মানও দেখিয়েছিল - একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, দুধ আর মধু উপহার দিয়েছিল - আমরাও তার থেকে যতটা সম্ভব তথ্য বের করার চেষ্টা করতে পিছপা হইনি।
রুহিঙ্গার থেকে যা জেনেছিলাম তার সংক্ষিপ্তসার অনেকটা এইরকম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১১৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ৯১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ক্যাপ্টেন বার্টন বলেছেন যে মিঃ ডেসবোরো কুলি মনে করতেন উন্যামওয়েজি শব্দের অর্থ হিসেবে 'বিশ্বের প্রভু' শব্দটাই বেশি যোগ্য। তাঁর মতে, এর বানান অবশ্য 'মোনোমোইজি'। ক্যাপ্টেন বার্টনের কথার চেয়ে আমার নিজের মিঃ কুলির ব্যাখ্যা বেশি পছন্দ, তবুও আমার ধারণা মিঃ কুলির বক্তব্যের থেকেও আলাদা। ন্যামওয়েজিদের থেকে যতদূর যা জানতে পেরেছি, সেই সঙ্গে এদেশের লোকগাথার থেকে আরবরাও যা শিখেছে, সেটা এইরকম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১১৪ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৩ এপ্রিল ২০২৩ | ৭৮৫ বার পঠিত
উন্যামওয়েজিতে মাত্র দুটি জলধারাই নদী নামের যোগ্য। সেগুলো হল উত্তর ও দক্ষিণ গোম্বে। উত্তরের নদীটা কোয়ালা নামে পরিচিত। কখনও কখনও একে ওয়াল্লাও বলা হয়। কুবুগার দক্ষিণে এর উৎসমুখ। উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি বাঁক ঘুরে তাবোরার উত্তরে গোম্বেতে গিয়ে ঢোকে। এখানেও এটা বেশ বড় মাপের, গুরুত্বপূর্ণ একটা নদী। বর্ষার শেষদিকে ভালো হালকা নৌবহর নিয়ে, একজন খুব সহজেই - তাবোরা থেকে আট মাইল বা তারও বেশি দূরের থেকে দলবল নিয়ে নৌকা চেপে সানন্দে টাঙ্গানিকা হ্রদ অবধি ভেসে যেতে পারে; অবশ্যই, যদি সমস্ত উপজাতির লোকেরা ইচ্ছুক হয়। একটা সঠিকভাবে প্রস্তুত অভিযান এইরকমভাবে বিস্ময়কর কাজ করতে পারে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১১৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১১ মে ২০২৩ | ৮০৬ বার পঠিত
প্রথমটা হল সিলুরে, জিজিরা যাকে সিংগা বলে। স্থানীয়দের কথা অনুসারে চার, এমনকি ছ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আমি যেটার ছবি এঁকেছিলাম, সেটা সাড়ে আটত্রিশ ইঞ্চি লম্বা, ওজন দশ পাউন্ড, তবে কিনা এটা ছোট মাছ হিসাবেই বিবেচিত হয়েছিল। অত্যন্ত চর্বিযুক্ত মাছ, পিঠের রং গাঢ়-বাদামী, আর পেটের দিকটা হালকা বাদামী, প্রায় সাদাই হয়ে যাওয়া। এই মাছ আঁশবিহীন। নদীতে হ্রদে যেরকমটা আমরা পেয়ে থাকি, এটা সেই রকমেরই। গোম্বে নদীতে শ’য়ে শ’য়ে এই মাছ ধরা হয়, কাটাকাটি করে শুকানো হয় আর আরব, আচারে-ব্যবহারে মুসলমান হয়ে যাওয়া নিগ্রো ও সোয়াহিলিদের কাছে বিক্রির জন্য উন্যানেয়েম্বেতে নিয়ে যাওয়া হয়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১১৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৮ মে ২০২৩ | ৭৩৮ বার পঠিত
এখানকার উপজাতিরা ধাতুর মধ্যে চেনে বলতে তামা আর লোহা। তামা আসে রুয়া থেকে, আর উপকূলের থেকে। আর রট আয়রন আসে উসুকুমা বা উন্যামওয়েজির উত্তরের এলাকা থেকে, ও উভিরা থেকে। আফ্রিকার অন্দরের বাসিন্দারা যে সমস্ত পিতলের অলঙ্কার পরে, কাফেলাগুলোর সঙ্গে আনা মোটা পিতলের তার থেকে স্থানীয়রা সেই সব গয়না তৈরি করে। যদিও লৌহ আকর প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, এমনকি উন্যামওয়েজি ও উজিজির মধ্যে অনেক জায়গায় মাটির উপরে দেখাও যায়-তবুও তা খুব কমই কাজে লাগে; যদিও উকোনঙ্গো ও উভিনজাতে, স্থানীয়রা আকরিক লোহা গলিয়ে নিজেদের দরকারের লোহা তৈরি করে এমন উদাহরণ আছে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১১৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৫ মে ২০২৩ | ৭২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
উকাওয়েন্দি জায়গাটা দেখা গেল প্রায় জনবসতিহীন। এবড়োখেবড়ো জমি, জঙ্গলে ভরা, অগণিত সূক্ষ্ম জলধারা-জালিকা অঞ্চলের সব জল বয়ে নিয়ে যায়। উর্বর, অজস্র প্রাণী ও উদ্ভিদের ভরা একটা অনুকূল ক্ষেত্র। জন বসতিগুলোর মধ্যে তবু উল্লেখ যোগ্য উত্তরের মানা মেসেঙ্গে বা টাঙ্গানিকার ধারে, পশ্চিম দিকের এনগোন্ডো এবং টংওয়ে; মাঝখানের রুসাওয়া; দক্ষিণে পামবুরু ও দক্ষিণ-পূর্বে উটান্ডা।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১১৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০১ জুন ২০২৩ | ৯৪৪ বার পঠিত
মধ্য আফ্রিকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপজাতি হল ন্যামওয়েজিরা। আমার কাছে একজন ন্যামওয়েজির সৌন্দর্যের আদর্শ হল একজন লম্বা দীর্ঘপদ কালো মানুষ, ভালো মানুষের মতন সদা হাসিভরা মুখ, হাসির ফাঁকে দাঁতের উপরের সারির মাঝখানে একটা ছোট গর্ত দৃশ্যমান। সে যখন বালকমাত্র, তখন তার গোত্র বোঝাতে এই গর্তটা তৈরি করা হয়েছিল। তার গলার থেকে শত শত লম্বা তারের ঝুমকো ঝুলছে; মানুষটা প্রায় নগ্ন হওয়ায় তার গোটা সুন্দর শরীরটা দেখতে কোন অসুবিধা নেই।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৯ জুন ২০২৩ | ৭৩৬ বার পঠিত
ন্যামওয়েজিদের কিছু অদ্ভুত রীতি আছে। একটা বাচ্চার জন্মের পরে তার বাবা পিতা নাড়িটা কেটে ফেলে আর সেটা নিয়ে রাজ্যের সীমানায় গিয়ে সেখানে মাটিতে পুঁতে দেয়। যদি সে জায়গাটা একটি নদী হয়, তাহলে নদীর পাড়ে পুঁতে দেয়; তারপর একটা গাছের শিকড় নিয়ে সে ফিরে আসে, আর বাড়ি ফিরে নিজের দরজার চৌকাঠে সেটা পুঁতে দেয়। তারপর সে তার বন্ধুদের জন্য একটা ভোজের বন্দোবস্ত করে। একটা বলদ বা গোটা ছয়েক ছাগল মারে, পোম্বে বিলোয় সবাইকে। যমজ সন্তানের জন্ম হলে, তারা কখনই একজনকে মেরে ফেলে না, বরং সেটা আরও বড় আশীর্বাদ মনে করে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৫ জুন ২০২৩ | ৬৯৩ বার পঠিত
গ্রামের মাতৃস্থানীয়রা যখন এটা-ওটা-সেটা নিরীহ কথা কানাকানি করে , তখন পরিবারের কর্তাদের পাওয়া যায় ছেলেদের আড্ডায়। সেখানে জিনিসপত্রের দাম, এলাকার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা চলে। সম্ভবত আরো অনেকটা সভ্য দেশে একই ধরণের জায়গায় যতটা বিচক্ষণতা ও বোধের সঙ্গে এই ধরণের আলোচনা হয়, এখানকার আলোচনাও সেই একই গোত্রের। কিন্যামওয়েজি গ্রামের সকলের একত্রিত হওয়ার জায়গাকে ওদের ভাষায় "ওয়ানজা" বা উওয়ানজা বলা হয়। এটা সাধারণত গ্রামের চৌকোনো জায়গার একটেরেতে থাকে। ফাঁকা সময়ে- অবশ্য ব্যস্ততা খুব কমই থাকে - তারা উবু হয়ে বসে ধূমপান করে, আর সম্ভবত মায়েদের মুখে একটু আগে যে আলোচনা শোনা গেছে, সেই একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে । সদ্য আগত সাহেবটি হল সেই বিষয় ।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২২ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২২ জুন ২০২৩ | ৬৯৭ বার পঠিত
উভিনজায় ঢুকতেই যে সম্ভাষণ শুনতে পাই তার থেকেই বোঝা যায় যে এক নতুন উপজাতি, নতুন রীতিনীতির সঙ্গে এবার পরিচিত হতে যাচ্ছি। দুজন ভিনজার মধ্যে প্রথম পরিচয় একটি ভয়ানক ক্লান্তিকর ব্যাপার। পরস্পরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা দুহাত বাড়িয়ে দেয় আর ‘‘জাগো, জাগো’’ বলতে থাকে। তারপরে, একে অপরের কনুই আঁকড়ে ধরে হাত ঘষতে থাকে আর দ্রুত বলতে থাকে, ‘‘জাগো, জাগো, জেগে ওঠো, জেগে ওঠো,’’ যার শেষটা হয় "হু, হু" দিয়ে। তাতে পারস্পরিক তৃপ্তি বোঝায়। মেয়েরা এমনকি কাঁচা বয়সের ছেলেদেরও অভিবাদন করে। সামনে পিঠ ঝুঁকিয়ে, আঙ্গুলের ডগা দিয়ে পায়ের আঙ্গুল ছুঁয়ে। অথবা পাশে ঘুরে, হাততালি দিয়ে বলে, ‘‘জাগো, জাগো, জেগে ওঠো, জেগে ওঠো, হুহ, হুহ’’। পুরুষরাও হাততালি দেয় আর একই শব্দে জবাব দেয়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৯ জুন ২০২৩ | ৫৯৬ বার পঠিত
নিজেদের কালো ভালুক-চামড়া, উজ্জ্বল পারস্য দেশীয় কার্পেট ও পরিষ্কার নতুন মাদুরের উপর গুছিয়ে বসে ভারি আরাম হল। দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে আরামসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমাদের পিকনিকের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে গল্প শুরু হল। লিভিংস্টোন আমাদের রুসিজির যাত্রাকে পিকনিকই বলে থাকেন। মনে হচ্ছিল পুরোন সুখের স্মৃতিচারণ করা দিনগুলো ফিরে এসেছে। যদিও আমাদের বাড়িটা নেহাতই সাধারণ, চাকরবাকরেরাও নেহাতই সামান্য, নগ্ন, বর্বর; তবু উন্যানিয়েম্বে থেকে সেই ঘটনাবহুল যাত্রার পর এই বাড়ির কাছেই আমার লিভিংস্টোনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল— এই বারান্দাতে বসেই টাঙ্গানিকা হ্রদের পশ্চিমপারের বহুদূরের, মনোমুগ্ধকর জায়গাগুলোর সম্বন্ধে তাঁর বিস্ময়কর গল্পগুলো শুনেছিলাম; ঠিক এই খানেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়; আর সেই থেকে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে আর তিনি যখন বললেন যে আমার প্রহরায়, আমার খরচে আর আমারই পতাকার তলায় তিনি উন্যানিয়েম্বে যেতে চান, আমি তো সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে গেলাম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২৪ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৩ জুলাই ২০২৩ | ৭৭৭ বার পঠিত
নিজের চার্টখানা বার করলাম - আমি নিজেই সেটা তৈরি করেছিলাম - তার উপর আমার অটুট ভরসা। উন্যানয়েম্বে যাওয়ার এমন একটা পথ খুঁজে বার করলাম যে পথে একটাও কাপড় নজরানা দিতে হবে না - আর জঙ্গল ছাড়া আর কিছু খারাপ জিনিসও পথে পড়বে না। সেই পথ ধরে চললে ভিনজাদের আর লুঠেরা হহাদের পুরো এড়ানো যায়। আর এই শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ পথটি দক্ষিণে চলেছে জলের ধার দিয়ে দিয়ে, উকারাঙ্গা ও উকাওয়েন্দির উপকূল ধরে কেপ টংওয়ে পর্যন্ত। কেপ টংওয়েতে যেখানে পৌঁছব, সেটা উকাওয়েন্দির ইউসাওয়া জেলার ইটাগা, সুলতান ইমরেরা গ্রামের বিপরীতে ; এর পরে আমরা আমাদের পুরানো রাস্তায় পড়ব। যে রাস্তা ধরে আমি উজিজি যাওয়ার জন্য উন্যানয়েম্বে থেকে পাড়ি দিয়েছিলাম। ডাক্তারকে এই রাস্তার কথা বললাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এর সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যাপারটা বুঝলেন; আর যদি আমরা ইমরেরায় পৌঁছাই, আমার যেমন মনে হয়েছিল, তাহলে তো প্রমাণই হয়ে যাবে যে আমার চার্ট ঠিক না ভুল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৭ জুলাই ২০২৩ | ৮৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
পরের দিনটা কাটল মালাগারজির মুখের বিস্তীর্ণ জলরাশি পেরিয়ে কাফেলার সবকিছু নদীর কয়েক মাইল উত্তরে আমাদের শিবিরে নিয়ে যাওয়ার কাজে। এই নদীটা এমন একটা নদী যেটা সভ্য মানুষেরা ট্যাঙ্গানিকা থেকে উপকূলের দূরত্ব কমানোর জন্য খুব সুবিধাজনক হিসেবে দেখবেন। এই নদী বেয়ে প্রায় একশ মাইল চলে যাওয়া যায়, আর এটা সমস্ত ঋতুতেই যথেষ্ট গভীর থাকে - ফলে উভিনজার কিয়ালা পর্যন্ত সহজেই চলে যাওয়া যায়। আর সেখান থেকে উন্যানয়েম্বে অবধি একটা সোজা রাস্তা সহজেই বানিয়ে ফেলা যায়। মিশনারিরাও ধর্মান্তরের জন্য এলে উভিনজা, উহহা ও উগালায় যাওয়ার জন্য এখান থেকে একই সুবিধা পেতে পারেন। ৩০ তারিখে আমাদের পথ ধরে, কাগঙ্গো, এমভিগা ও কিভোয়ের মনোরম অন্তরীপগুলিকে পেরিয়ে, প্রায় তিন ঘণ্টা নৌকা বাওয়ার পরে খরস্রোতা ঘোলা জলের ইউগুফুর মুখের গ্রামগুলো আমাদের চোখে পড়ল। এখানে আবার আমাদের কাফেলাকে কুমির-বোঝাই নদীর মোহনা পেরোতে হয়েছিল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২৭ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৩ আগস্ট ২০২৩ | ৮৪৮ বার পঠিত
উরিম্বা কাওয়েন্দির একটা বড় জেলা। যদিও একই নামের একটি গ্রামও রয়েছে - সেখানে ইয়োম্বেহের থেকে পালিয়ে আসা লোকেরা থাকে, তারা লোজেরির ব-দ্বীপে বাসা বেঁধেছিল। যদিও রুসিজির দ্বীপের মতোই অস্বাস্থ্যকর জায়গা, তবু তাদের মনে হয়েছিল দক্ষিণ কাওয়েন্দির সুলতান পুম্বুরুর এলাকার আশেপাশের থেকে অনেক বেশি যুতসই। বিজয়ীদের ভালমতো তাড়া তাদের অভ্যাস নাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে হল, কারণ তারা খুব ভীতু আর অপরিচিতদের প্রতি ঘোর অবিশ্বাসী, কোনমতেই তাদের গ্রামে আমাদের ঢুকতে দিল না। অবশ্য সত্য বলতে, যে পচা গলা জায়গাটার উপর তারা আস্তানা গেড়েছিল, সেদিকে এক ঝলক দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমার ধারণা যে একদম ওই এলাকায় —না, দু'পাশেই কয়েক মাইল জুড়ে —একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষের পক্ষে এক রাত ঘুমানো মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। গ্রামের দক্ষিণে যাওয়ার পথে, আমি টংওয়ে উপসাগরের শেষতম দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, কিভাঙ্গা বা কাকুঙ্গু পাহাড়ের উঁচু চুড়ো থেকে প্রায় দেড় মাইল পশ্চিমে একটি উপযুক্ত ক্যাম্পিং-এর জায়গা পেলাম। ডাক্তার যা মাপজোক নিলেন সেই অনুসারে আমরা ৫° ৫৪' দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থান করছিলাম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১২৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১০ আগস্ট ২০২৩ | ৭৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পরের দিন আমাদের কিরাঙ্গোজির নির্দেশ মেনে পূর্ব দিকে এগোলাম; তবে যে রাস্তা দিয়ে সে আমাদের নিয়ে যাচ্ছিল তার থেকে এটাও বোঝাই যাচ্ছিল, যে সে এই দেশটার কিছুই জানে না। যদিও সে এতই বকর বকর করছিল যে মনে হবে যেন সে এনগোন্ডো, ইয়ম্বেহ এবং পুম্বুরুর এলাকাগুলোর সম্বন্ধে একদম দিগগজ পণ্ডিত। কাফেলার মাথার দিক থেকে আমাকে ডাকা হল। তখন আমরা সিধা লোয়াজেরির খর স্রোতে নামতে যাচ্ছি, আর সেটা পেরলেই তিন থাক দুর্গম পর্বতমালা, সেগুলোকে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে পেরোতে হবে। মোটেই আমাদের নির্দিষ্ট পথের দিকে না সেটা।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৯৬৪ বার পঠিত
দশম দিন সকালে আমি দলের সবাইকে আশ্বস্ত করলাম যে আমরা খাবারের কাছেই আছি; অঢেল খাবারের প্রতিশ্রুতি তাদের মধ্যে বিনীতদের উত্সাহিত করেছিল। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা না নিতেও সতর্ক করা হয়েছিল - পাছে আমি রাগের মাথায় মেরে বসি! তাতে সবথেকে পাজিগুলোকে চুপ করানো গিয়েছিল। তারপর বনের মধ্য দিয়ে উত্তর-ঈশান দিক বরাবর চললাম। ক্লান্ত মানুষের দল দুর্বলভাবে, বেদনাদায়কভাবে আমার পিছু নিল। খুবই বেপরোয়া অবস্থা তখন, বেচারাদের নিজেদের জন্য যতটা না দুঃখ হচ্ছিল, আমার তার চেয়েও বেশি করুণা হচ্ছিল; আর তারা হাল ছেড়ে শুয়ে পড়লে তাদের সামনে প্রচুর রাগারাগি চেঁচামেচি করলেও, তাদের গায়ে হাত তোলার কথা তখন স্বপ্নেও ভাবিনি। তাদের জন্য খুবই গর্বিত ছিলাম; কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে এটা খুবই বিপজ্জনক ছিল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৮২২ বার পঠিত
২০ জানুয়ারি, ১৮৭২। আজ আমাদের যাত্রা স্থগিত ছিল। শিকারের জন্য বেরোতে গিয়ে দেখি এগারোটা জিরাফের একটা পাল। এরকম একটার চামড়া পেলে কী ভালই না হত! এমপোকওয়া নদী পেরিয়ে আমি তাদের একজনের দেড়শ গজের মধ্যে আসতে পেরেছিলাম আর এটাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাই; কিন্তু, এটা আহত হলেও, পেড়ে ফেলতে পারিনি।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ৩০ নভেম্বর ২০২৩ | ৯২৬ বার পঠিত
যদিও উপরে বলা এইসব ভাল ভাল জিনিসের আমাদের অভাব ছিল, তবু আমাদের কাছেও লবণে-জারানো জিরাফ ও জেব্রার জিভের আচার ছিল; হালিমাহের বানানো উগালি ছিল; এছাড়া মিষ্টি আলু, চা, কফি, ড্যাম্পার বা স্ল্যাপজ্যাকও ছিল; কিন্তু সেসব খেয়ে খেয়ে মুখে চড়া পড়ে গিয়েছিল। আমার দুর্বল পেট, বিভিন্ন ওষুধ, ইপিকাপ, কোলোসিন্থ, টারটার-এমেরিক, কুইনাইন এইসব খেয়ে খেয়ে বিরক্ত, কাতর। এইসব হাবিজাবি খাবারের বিরুদ্ধে সে প্রতিবাদ করছিল। "ওহ, একটা গমের রুটি!" আমার মন কাঁদছিল। "একটা রুটির জন্য পাঁচশ ডলারও দিতে পারি!"
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩৪ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৬৮৩ বার পঠিত
পরের দিনেও আমরা ওখানেই ছিলাম, এখানে এত বিভিন্ন রকমের পশুর সমাবেশ যে শিকারের পিছনে ধাওয়া করার জন্য আমি খুবই উৎসুক। সকালের কফিপানের পর আমার বন্ধু সেই অ্যামোনিয়া-বোতল খ্যাত মামান্যারার জন্য উপহারসহ কয়েক জনকে পাঠানো হল। তারপরই আমি আরও একবার মাঠের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। শিবির থেকে পাঁচশো গজ দূরেও যাইনি, হঠাৎ আমি ও আমার দলবল খুব কাছেই, সম্ভবত পঞ্চাশ গজ বা তার চেয়েও কম দূরত্বে, একটা সমবেত গর্জন শুনে থেমে গেলাম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩৫ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৮০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
উন্যানিয়েম্বে জায়গাটা এখন আমার কাছে মাটির পৃথিবীতে স্বর্গের মতন। লিভিংস্টোনও কম খুশি নন; তিনি একটা আরামদায়ক ঘরে ছিলেন, উজিজিতে তাঁর কুঁড়েঘরের তুলনায় সেটা একটা রাজপ্রাসাদ। আমাদের ভান্ডারের জিনিসপত্র এসেছে বাগামোয়ো থেকে, দেড়শও বেশি কুলির মাথায় চেপে। কাপড়, পুঁতি, তার ও হাজার-একটা ভ্রমণ সংক্রান্ত লটবহর তো আছেই। এছাড়াও অজস্র ঐহিক বিলাসদ্রব্যে ভরা সে ঘরগুলো। আমারই পঁচাত্তর বস্তা হরেক রকম জিনিস আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী এখন লিভিংস্টোনের হাতে তুলে দেওয়া হবে, নীল নদের উৎসের দিকে তাঁর অভিযানের জন্য।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩৮ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৪ মার্চ ২০২৪ | ৭৬৮ বার পঠিত
উপরের (এর আগের কিস্তিতে প্রকাশিত) চিঠিতে আমার আর নতুন করে জোড়ার কিছুই নেই - এটা নিজেই সব বলে দিয়েছে; তবে তখন আমি ভেবেছিলাম যে এটা আমার সাফল্যের সব থেকে বড় প্রমাণ। আমার নিজের কথা বলতে, আমার তাঁর আবিষ্কার সম্পর্কে এক বিন্দুও মাথাব্যথা নেই, একমাত্র যতক্ষণ না যে সংবাদপত্র আমাকে এই অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিল, তারা সেই বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে। তবে একথা সত্যি যে তাঁর ভ্রমণের ফলাফল সম্পর্কে কৌতূহল ছিল; তবে, তিনি যখন স্বীকার করেছেন যে তাঁর শুরু করা কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি, তখন থেকে আমি স্বেচ্ছায় যতটুকু বলেন তার বেশি এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কুণ্ঠাবোধ করেছি।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৩৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৯ মে ২০২৪ | ৬২২ বার পঠিত
১৩ ই মার্চ। লিভিংস্টোনের সাথে আমার থাকার শেষ দিন চলে এল আর পেরিয়েও গেল। শেষ রাতে আমরা একসঙ্গে থাকব, পরের দিনটাকে তো আর এড়ানো যাবে না! যদিও আমার মনে হচ্ছে, যে-ভাগ্য আমাকে তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে সেই ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি। মিনিটগুলো দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে, জমে জমে ঘণ্টা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দরজা বন্ধ, আমরা দুজনেই নিজের নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। তিনি কি ভাবছেন জানি না। আমারগুলো দুঃখের। আমার দিনগুলো যেন স্বর্গসুখে কেটেছে; নাহলে কেনই বা আমি বিদায়ের ঘণ্টার এগিয়ে আসতে এত গভীর কষ্ট পাব? আমি কি পরের পর জ্বরে ভুগি নি, ইদানীংকালে দিনের পর দিন কাতর হয়ে শুয়ে থাকিনি?
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৬ মে ২০২৪ | ৫৪১ বার পঠিত
১৭ ই মার্চ।—কোয়ালাহ নদীর কাছে পৌঁছালাম, রুবুগার একজন স্থানীয় বাসিন্দা এই নদীকে ন্যাহুবা বলে, আরেকজন বলে উন্যাহুহা। মাসিকা ঋতুর প্রথম বৃষ্টিপাত হল এই দিনে; উপকূলে পৌঁছনোর আগেই আমার গায়ে ছাতা পড়ে যাবে। গত বছরের মাসিকা ২৩শে মার্চ শুরু হয়েছিল, আমরা তখন বাগামোয়োতে আর শেষ হল ৩০ এপ্রিল।
পরের দিন উন্যামওয়েজি সীমান্তের পশ্চিম তুরায় অভিযান থামালাম আর ২০ তারিখে পূর্ব তুরায় পৌঁছালাম; অল্প কিছুক্ষণ পরেই, একটা বন্দুকের জোর শব্দ শোনা গেল, আর ডাক্তারের চাকর সুসি ও হামওয়দা এসে হাজির, সঙ্গে উরেডি ও আমার আরেকজন লোক।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৩ মে ২০২৪ | ৫৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
৩০ তারিখে আমরা খোঞ্জে পৌঁছলাম, মাটির থেকে অনেকটা উঁচুতে দৈত্যাকৃতির সিকামোর আর বাওবাব গাছের পাতার বিশাল চাঁদোয়ার কারণে জায়গাটা উল্লেখযোগ্য। খোঞ্জের সর্দার চারটে গ্রামের গর্বিত মালিক, তার থেকে সে পঞ্চাশ জন সশস্ত্র লোককে এক ডাকে হাজির করতে পারে; তবুও ন্য়ামওয়েজির বাসিন্দাদের প্ররোচনায় এই লোকটা আমাদের ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত ছিল, কারণ আমি তাকে মাত্র তিন ডোটি অর্থাৎ বারো গজ কাপড় হঙ্গা হিসাবে পাঠিয়েছিলাম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪২ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৩ জুন ২০২৪ | ৪১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমাদের শিবির থেকে, আমেরিকান কনসালের কাছে চিঠি দিয়ে তিনজনকে জাঞ্জিবারে পাঠিয়েছিলাম, সেই সঙ্গে 'হেরাল্ড'-এর কাছে টেলিগ্রাফ পাঠানোর জন্যও। রাজদূতকে অনুরোধ করেছিলাম যে তিনি যেন একটা-দুটো ছোট বাক্স ভরে কিছুমিছু বিলাসদ্রব্য দিয়ে লোকদের ফেরত পাঠান যা ক্ষুধার্ত, জীর্ণ, ছ্যাতলাধরা মানুষজন তারিফ কুড়াবে। বার্তাবাহকদের বৃষ্টি- অনাবৃষ্টি, নদী- বন্যা কোনো কিছুর জন্যই থামতে বারণ করা হয়েছিল - যাতে তারা তাড়াহুড়ো করল না আর তারা উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আমরা তাদের ধরে ফেললাম এমন ঘটনা না ঘটে। প্রবল উৎসাহে "ইনশাআল্লাহ, বানা" বলে তারা রওনা দিল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪৩ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২০ জুন ২০২৪ | ৪৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সমস্ত লোক হাতের কাজ বন্ধ করে দিল। সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটা একদিকে বন্যা, আরেকদিকে গুলি দুয়ের চাপে থতমত। সে নিজেই অবাক চোখে পিস্তলটাকে দেখছিল, কিছুক্ষণের মরিয়া চেষ্টার পরে অবশ্য বাক্সটি নিরাপদে তীরে নিয়ে আসতে সফলও হয়েছিল। ভিতরের জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায়, রজব শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। আর কোন কারণেই ফের বাক্সটিকে স্পর্শ না করার হুমকি দেওয়া হল তাকে। তারপর এটা দেখেশুনে পা ফেলা, খুঁতহীন কুলি মাগঙ্গার দায়িত্বে দেওয়া হল।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪৪ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৭ জুন ২০২৪ | ৫০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ভোর পাঁচটার সময় আমরা মাকাটা নদী পেরোতে শুরু করি। কিন্তু এর পরেই ছয় মাইল জুড়ে রয়েছে একটি লম্বা হ্রদ, যার জল মৃদুভাবে ওয়ামির দিকে বয়ে গেছে । এখানে জলস্রোতগুলির সঙ্গম: চারটি নদী এক হয়ে গেছে। কিগোংগোর স্থানীয়রা আমাদের সতর্ক করেছিল যে আমরা যেন এখন পেরনোর চেষ্টা না করি, কারণ এখানে আমাদের মাথার ওপরে জল; কিন্তু আমি সবাইকে শুধুমাত্র একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলাম, আর তারপর নিজেদের পথে চলতে শুরু করলাম।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪৫ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৪ জুলাই ২০২৪ | ৩৯৭ বার পঠিত
১ মে, কিঙ্গারু হেরা। জানজিবারে একটা প্রচণ্ড ঝড়ের খবর শুনেছি। শুনছি যে প্রতিটি বাড়ি ও জাহাজকে নাকি ধ্বংস করেছে। এমনই রটেছে। আর ওই একই বিধ্বংসী ঝড় বাগামোয়ো ও হুইন্ডের উপর দিয়েও বয়ে গেছে। এমনটাই লোকেরা বলছে। তবে এতদিনে আমি মোটামুটি জানি যে আফ্রিকানরা কেমন বাড়িয়ে কথা বলে। তবে দেশের ভিতর দিকে ঝড়ের যা প্রভাব দেখে এসেছি, তার থেকে মনে হয় এটা গুরুতর ক্ষতি করতেই পারে। শুনলাম যে বাগামোয়োতে নাকি শ্বেতাঙ্গরা এসেছে, আমার খোঁজখবর করতে এই দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের তোড়জোড় চলছে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪৬ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৮ জুলাই ২০২৪ | ৩৪৬ বার পঠিত
কিরাঙ্গোজি তার শিঙা বাজাতে থাকল, আস্টলফো১-এর জাদু-শিঙ্গার মতন প্রায় বিস্ফোরণের সম্ভাবনা দেয় আর কি! স্থানীয়রা ও আরবরা আমাদের চারপাশে ভিড় করে এলো। আর সেই উজ্জ্বল পতাকা, যার নক্ষত্রগুলি মধ্য আফ্রিকার বিশাল হ্রদের জলের উপর দুলেছিল, যেটি উজিজিতে দুর্দশাগ্রস্ত, নির্যাতিত লিভিংস্টোনের কাছে ত্রাণের প্রতিশ্রুতি হিসেবে প্রতিভাত হয়েছিল, সে আবার সমুদ্রে ফিরে এলো - ছেঁড়া অবস্থায় তা সত্য, তবে কোন ভাবেই অসম্মানিত নয়- ছিন্ন-ভিন্ন, কিন্তু পূর্ণ-সম্মানে।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪৯ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৭১ বার পঠিত
মিঃ নিউ এর থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ বিদায় নিলাম। তাঁর মহৎ, উচ্চ মার্গের পেশাযাপনের নিরিখে তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে আমার ধারণা উচ্চ। বন্ধুত্বপূর্ণ, সমালোচনার মাধ্যমে তাঁর ছোটখাটো ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিলে নিশ্চয় তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন। উপরের চিঠি থেকে পাঠক ঠিকই বুঝবেন যে ডসন, হেন এবং নিউ-এর সম্পর্ক বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, জাঞ্জিবারে বর্তমান খবরাখবর থেকে যে কোন অপরিচিত লোক ধারণা করবেন যে এই তিনজন ভদ্রলোক পরস্পরের দিকে ছুরি উঁচিয়েই আছেন। তবে এসব আপাত বিরোধ, উপরিতলের ঝামেলা, কোনও গভীর শত্রুতা নয়।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৫০ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৯২ বার পঠিত
আমার নিজের অভিযানের দলকে ভেঙে দেওয়ার পর, ডাঃ লিভিংস্টোনের অনুরোধ অনুযায়ী আমি আরেকটা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ইংরেজ অভিযানে যা কিছু ছিল না, সেগুলো আমি মিঃ অসওয়াল্ড লিভিংস্টোনের দেওয়া অগ্রিম অর্থ থেকে কিনেছিলাম। ইংরেজ অভিযানের ভাণ্ডার থেকে পঞ্চাশটি বন্দুকও নেওয়া হল। সেই সঙ্গে ছিল গোলাবারুদ, উপঢৌকনের বাবদে কাপড়। গোগোদের নজরানা দেওয়ার জন্যও, আবার অভিযানের দলের রসদ যোগানোর জন্যও। মিঃ লিভিংস্টোন তাঁর বাবার স্বার্থে কঠোর পরিশ্রম করেছেন ও তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী আমাকে সাহায্য করেছেন।
ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৫১ : হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ : যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
কাজটার মাহাত্ম্য কোথায়? যাকে খুঁজতে যাওয়া সেই পথিক হারিয়ে যায়নি। তিনি বেঁচে আছেন। যদি তিনি মারা যেতেন, আর তাঁর কাগজপত্র উপজাতিদের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত, তাহলে আমি কাগজের প্রতিটি টুকরো ও তাঁর আবিষ্কারের প্রতিটি বস্তু , তাঁর হাড়গুলি সহ উদ্ধার করে এনে যাদের কাছে সেসব মূল্যবান, তাঁদের হাতে তুলে দিতাম। যে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, সেটা ততটা মহৎ নয় যতটা বুদ্ধির। আমি তাঁকে অসুস্থ, নিঃস্ব অবস্থায় পেয়েছি; আমার উপস্থিতি দিয়ে আমি তাঁকে আনন্দ দিয়েছি, আমার রসদ দিয়ে আমি তাঁকে স্বস্তি এনে দিয়েছি।