২০
অনেক দুঃখের দিন পেরোনোর পরে এবারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে, কারণ অসুখের প্রকোপ কমার দিকে, আর আমরা কলেজের শিক্ষকেরা প্রথম ব্যাচে করোনার টীকাও পেয়ে গেছি। সরকার থেকেই আমাদের নাম রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছিল, শুধু এস এম এস দেখে নির্দিষ্ট দিনে টীকা নিয়ে আসতে হয়েছে। কলেজও খুলেছে। মানে ক্লাস শুরু হয়নি, কিন্তু অফিসের কাজ, পরীক্ষার কাজ কলেজে গিয়েও করা যাচ্ছে, বাধা নেই। নতুন ছেলেমেয়েগুলোকে আসতে বললাম একদিন। কুড়ি সালে যারা ভর্তি হয়েছে, ওদের চোখে দেখিনি এখনও, শুধু গলা চিনি, আর প্রোফাইল পিকচার। ওদের আই কার্ড দেওয়া হবে, আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে অফিসে। আলাদা আলাদা এসে যে যার নিয়ে নিতে পারত বটে, কিন্তু আমরা দু পক্ষই একদিন দেখা করতে চাইছিলাম। মনে খুব আনন্দ ছিল। পুরোনো ছেলেমেয়েগুলোর তো কথাই নেই। তারা ছুতোয় নাতায় কলেজে আসতে শুরু করল। আমরাও পরিকল্পনা করে ফেললাম, যে এবারে ছোট ছোট গ্রুপ করে প্র্যাক্টিকাল কীভাবে শুরু করব! এত দিন বাদে কলেজ খুলে একটাই নতুন জিনিস দেখছি, কলেজের গেটে সবসময়ে মলিন পোশাকের শিশুদের ভিড়, ওরা বিদ্যা নয় খাবার চায়। দু'দশকের কলেজ জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আমাদের প্রথম। এ বারের নতুন ছেলেমেয়েগুলো খুব করিৎকর্মা। যেদিন ওদের পুরো ক্লাসের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম দেখা হল, সেদিনই নিজেরা অল্প করে চাঁদা তুলে শুকনো খাবার কিনে ঐ বাচ্চাদের দিল। ওদের কাজ দেখে আমি খুবই অবাক হলাম, কারণ যুগের চালে আমার ধারণা ছিল যে আধুনিক ছেলেমেয়েরা ভারী আত্মকেন্দ্রিক, নিজের ছাড়া কিছু বোঝেনা। কিন্তু অবাক হওয়ার তখনও কিছু বাকি ছিল।
আমি একটা ফেসবুকের পাতা বানিয়েছিলাম, সেখানে নানা ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা লেখা, আঁকা, মোবাইলে তোলা ফটো, নিজের করা হাতের কাজ, রান্নার ছবি, গান, নাচ বা আবৃত্তির ভিডিও - লকডাউনে যে যা পাঠাত, সেগুলো আপলোড করতাম। এছাড়া ওদের মন ভাল করার অন্য কীই বা উপায় ছিল! বেশিরভাগ তো সব দূরদূরান্তে অজ পাড়াগাঁয়ে বাড়ি, কলেজের কাছে মেস করে থাকে। নিজেরা হাত পুড়িয়ে রান্না করে খায়। একবার একটা পিজি ব্যাচ পাশ করে মেস ছাড়ার আগে আমাদের নেমন্তন্ন করে মাংস ভাত খাইয়েছিল। যা হোক, আলটপকা দু সপ্তাহের লকডাউন হতে দু তিনটে জামাকাপড় নিয়ে সব বাড়ি চলে গিয়েছিল। বই খাতা মেসে পড়েছিল, আর যে ওগুলো নিতে ফিরতে পারবেনা, তা তো স্বপ্নেও ভাবেনি। বাড়িতে বসে লেখা পড়া যে করবে, উপকরণ ছিলনা। আমি যখন বলতাম এই তো রবীন্দ্র জয়ন্তী এসে গেল, কিছু লিখে পাঠাও। অনেকে বলেছিল, ঘরে কাগজ নেই ম্যাডাম। তখন আমি বললাম, যে ওমা! লিখতে বুঝি সব সময়ে কাগজ লাগে? আমি তো মোবাইলে লিখি। তখন আর্জি এলো কোন, জয়ন্তী নয়, শুধু আমাদের জন্য মোবাইলে লিখুন ম্যাডাম। তখন কী লিখি, কী লিখি ভাবতে ভাবতে কলেজের ভূতের গল্প লেখা শুরু করলাম। আমাদের গ্রামের কলেজের পুরোনো বাড়ি, আনাচে কানাচে অনেকে তেনাদের ফিসফিস শোনে। তা সে যা হোক, আমাদের সেই হরেকরকম্বা ফেসবুকের পাতায় প্রকাশের আবেদন জানিয়ে এবারে কিছু ছবি জমা পড়ল। ছবি দেখে আমি তো তাজ্জব, এ কী কাণ্ড!। আবেদনকারীদের পষ্টো জানিয়ে দিলাম, এই ছবিগুলির পিছনের কাহিনীটি বিশদ ভাবে লিখিত হইয়া জমা না পড়িলে, শুধু ছবি প্রকাশিত হইবেক না। ছবিগুলিতে ছিল বড় বড় মুড়ির বস্তা, চিঁড়ের প্যাকেট, বিস্কুটের পেটি, আরও অনেক রকম শুকনো খাবার, আর ছিল কিছু উজ্জ্বল তরুণ মুখের দীপ্তি, সঙ্গে কাঁচা, আধপাকা, ছিটেবেড়ার ঘরের সামনে মলিন বসন মুখে আনন্দের হাসি। কাহিনী জানিয়ে বেশ কটি লেখা জমা পড়ল, কোন লেখায় বেশ বাঁধুনি আছে, কোনটি আবার সাদামাটা, একটু আধটু বানান আর ব্যাকরণের ভুল। সবগুলি খুঁটিয়ে পড়ে মিলিয়ে মিশিয়ে আমি একটি লেখায় বিষয়টি দাঁড় করালাম। তারপরে সমাজ মাধ্যমে প্রকাশের পালা। প্রকাশ তো করবই, এ যে আমাদের গর্বের কাহিনী। ব্যাপারটা এবার খুলেই বলি। নতুন ছেলেমেয়েগুলি সেই যে বাচ্চাদের খাবার দিল, ঘটনাটা সেখানেই শেষ হয়নি। কয়েকজন ঐ বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়ি চলে গিয়েছিল, সরেজমিনে ওখানকার অবস্থা সব দেখে এসেছে। তারপরে হোয়াটস অ্যাপে নিজেরা যোগাযোগ করে টাকার ব্যবস্থা করে সকলে মিলে ত্রাণ দিতে গিয়েছিল। এদের আমরা মাত্র একটা সেমেস্টার অনলাইনে পড়িয়েছি, ওদের ওপরে আমাদের প্রভাব তেমন কিছু তৈরি হয়নি। কিন্তু হয়ত, ইস্কুলের শিক্ষক বা অভিভাবককে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে। পুঁথির বিদ্যা এরা কিছু কম শিখেছে ঠিকই, কিন্তু তাতে কী? জীবন থেকে শিক্ষা তো পেয়েছে। ছবি, লেখা প্রকাশের পরে আমি প্রস্তাব দিলাম, এই যে কাজটা তোমরা নিজের থেকে করলে, এমন হয়তো আরও করবে ভবিষ্যতে - এই কাজগুলোর একটা ছাতার দরকার, তোমরা বরং একটা নাম ঠিক কর। ব্যাস, ফেসবুকের সমুদ্রে আরও একটি পাতা ভেসে উঠল, নাম তার ‘প্রয়াস’। সমুদ্রের ফেনিল তরঙ্গে একটি ছোট ফেনার বুদবুদের কথা কেই বা মনে রাখে, আর কেই বা তার কদর করে - তবু আমাদের জীবনে এই পাতাগুলির স্মৃতি ও প্রভাব অপরিসীম।
কর্ম জগতে ভাল ভাল ঘটনা ঘটছিল বটে, কিন্তু তার প্রভাবে সংসার সীমান্তের আকাশে জমেছে মেঘের ঘনঘটা, বজ্র বিদ্যুতের আভাষ। আমি এতদিন পরে সুযোগ পেয়ে সকাল হলেই ব্যাগ দুলিয়ে মাস্ক এঁটে কলেজে বেরিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সেখানে তো ক্লাস নেবার পারমিশন নেই। তাই বিকেল থেকে সন্ধে রাত অবধি চলছে অনলাইন ক্লাস। এর মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন অড সেমেস্টার অনলাইন পরীক্ষা দেরিতে হচ্ছে, কোই বাত নেহি, প্রশ্নপত্র অন্যান্য বছরের মতই হবে। ভবিষ্যতের ছাত্রছাত্রীরা দেখে বুঝতেও পারবেনা, যে এটা কী পরিস্থিতিতে নেওয়া হয়েছিল। আগের ইভেন সেমেস্টারে কিছু ছাড়ছুড় দেওয়া হয়েছিল নিয়ম কানুনে, এবারে সেসব থাকবেনা। তাই মিটিঙের পর মিটিং চলছে রাত পর্যন্ত। বাড়িতে কন্যা পড়ে থাকে একা। তার ইস্কুল খোলার নাম করেনা। তার অগতির গতি সঙ্গিনী মায়ের তো আজ একফোঁটা সময় নেই তার জন্য। বাড়িতে কেবল সেদ্ধ ভাত রান্না হচ্ছে। লকডাউনে এতদিন বেশ রকম রকম জিভের তারে ঝঙ্কার উঠছিল, সে সব কিছুই বন্ধ। মনে তার অভিমানের পাহাড় আর অনেক জিজ্ঞাসা - কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই তোমার সব, আমি কি কেউই নই? কলেজের ছেলেমেয়েরা যদি আই কার্ড নিতে, অন্য কাজে কলেজ যেতে পারে, তাহলে ইস্কুলে কেন পারেনা? আমি কী বড় হইনি? আমি ওকে রাতে শুয়ে শুয়ে বোঝাই, তোমরা ছোট, কলেজের ছেলেমেয়েদের বয়স আঠেরোর ওপরে, ওদের ছ মাস অন্তর পরীক্ষা - এর কোনটাই তো তোমার নেই। আর তাছাড়া তোমার মত কুঁড়িদের নিয়ে সরকার কী কোন ঝুঁকি নিতে পারে? এক একটি রাত কাটে আফসোসে, আশ্বাসে, তবু নতুন কিছু দিশা পাওয়া যায়না। চারিদিকে সামাল দিতে দিতে, বাকিদের উৎসাহ দিতে দিতে নিজের জোর বুঝি ফুরিয়ে আসে।
কলেজের একটুখানি সুখের পল পলকেই উধাও হল। কারণ আমরা যে প্ল্যান করেছিলাম, অনুমতি সাপেক্ষে প্র্যাকটিকাল ক্লাস শুরু করব, তা আর ফলপ্রসূ হলনা। ভোটের জন্য আমাদের কলেজ অধিগ্রহণ করা হল। আর ভোটের পর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাথায় মাথায় ভেসে এলো মৃত দেহের সারি - মা গঙ্গার স্রোতের জোরে এ রাজ্য ও রাজ্য, এ ঘাট ও ঘাট পেরিয়ে এগিয়ে গেল অনন্তের দিকে। এ যেন এক অদৃশ্য দুষ্টু জাদুকরের দেখানো ভানুমতীর খেল, আজ যে আছে, কাল সে নেই, এই মুহূর্তে যা বর্তমান, পরক্ষণেই তা অতীত। আমার বিয়ে দিয়েছেন যে ম্যারেজ রেজিস্টার, তাঁরা তিন ভাই অকৃতদার - তিনজনেই গত হলেন। যে ইনকাম ট্যাক্সের উকিল ছিলেন বলে, আমার আর হিসেব টিসেব অত শেখা হয়ে ওঠেনি - দরকার পড়েনি কখনও, হঠাৎ শুনি তিনি আর নেই। পাড়ায় একটি অল্প বয়সী ছেলের বিয়ে হয়েছিল সদ্য, লকডাউনের মধ্যেও পরিবারটি কোন বারণ শোনেনি। বিয়ের পরপরই ছেলেটি আর তার বাবা মা - তিনজনেই চলে গেলেন, পড়ে রইল নবোঢ়া বধূটি। এই মৃত্যু মিছিলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আত্মহননের স্তূপ। একদিন বিকেলে পাড়ার সব থেকে নামী মিষ্টির দোকানের প্রৌঢ় মালিকটি আত্মহত্যা করেছেন শুনে চমকে গেলাম, হল কী হঠাৎ? এই তো বেশ ফোন করে দিলেই বাড়ি বাড়ি মিষ্টি পাঠানো শুরু করেছিলেন! ফোনে খবর পেলাম, শ্বশুর বাড়ির গ্রামে রেশন দোকানের মালিক গলায় দড়ি দিয়েছেন। ঘোর কাটতে না কাটতে শুনি আড়বালিয়ার পাশে শুকপুকুরিয়ায় বাবার মামার বাড়িতে আমার এক কাকু মারা গেছেন, আর একজন আত্মহত্যা করেছেন। শুনে বজ্রাহত হয়ে যাই। কদিন আগে বাবার কাজে দুজনের সঙ্গেই তো কত হাসি গল্প হল। জানি জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই, তাই বলে এমনধারা? এ যে সহ্যের অতীত! ল্যাপটপে লেকচার রেকর্ড করব যে - হাত চলেনা, মাথা চলেনা। রাতে ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমের মধ্যে অনিশ্চয়তার, হতাশার, আতঙ্কের অকূল সাগরে কেবল খাবি খেয়ে মরি, প্রাণপণে রশি ফেলে ফেলেও তল মেলেনা আমার। কেবলই মনে হয় - ‘এক বাঁও মেলেনা --- দো বাঁও মেলেনা।’
সকালে নিজেকে সামলাতে আর মেয়ের মন রাখতে বলি, আয় আজ আমরা দুজন মিলে রান্না করি। মেয়েকে ডাকার কারণ একটা আছে। আজ বাজার থেকে হঠাৎ এমন একটা মাছ কর্তা নিয়ে এসেছে, যা এ তল্লাটে বিরল বললেই চলে - কাজরি বা কাজলি মাছ, নরম আর সুস্বাদু।
- এটা আবার কী মাছ গো মা?
- এটা হল চোখে কাজল পরা কাজলি মাছ। চোখের তলাটা দেখ।
- অদ্ভুত তো। আমি মাছ ভাজব।
- না এই মাছটা তুমি ভাজতে পারবেনা বাবু। অভ্যেস নেই তো, ঘেঁটে যাবে। খুব নরম মাছ। একটু খুন্তি লেগেছে কি, ছাল, কাঁটা আলাদা হয়ে যাবে।
- হোক, তাও আমি করব। শিখতে হবে তো!
বেশি আর কথা বাড়াইনা আমি, মাছ ভেজে যদি ওর মনটা ভালো হয়, তো তাই সই।
- এই দেখ কিছুটা মাছ আলাদা করে দিয়েছি, এতে নুন দে, হলুদ দে, এই বাটির পেঁয়াজ কুচো গুলো ঢেলে দে। এক পলা সর্ষের তেল দে। এবারে খুব আলতো করে মাছ আর পেঁয়াজে তেল নুন আর হলুদটা মাখিয়ে দে।
- হয়েছে? দেখো।
- খুব ভালো হয়েছে। এবার দেখ, কড়ায় অল্প করে জল দিয়ে ফুটে উঠেছে। এই ফুটন্ত জলে তুই বাটি থেকে পুরো মিশ্রণটা ঢেলে দে। হাত লাগাবিনা। হাত দিয়ে তুলতে গেলে মাছ ভেঙে যাবে।
- ঢেলেছি।
- বেশ, এবারে টমেটো আর ধনে পাতা কুচি রয়েছে এখানে, ওগুলো দিয়ে, গ্যাস কমিয়ে কড়া চাপা দিয়ে দে।
- তারপর?
- এবারে ঢাকা খুলে এক পলা সর্ষের তেল ওপর থেকে ছড়িয়ে দে।
- দিয়েছি।
- বাঃ, এবারে গ্যাস নিভিয়ে দে।
- তারপর?
- হয়ে গেল তো, কাজলি মাছের বাটি চচ্চড়ি।
- মানে? মাছ ভাজা হবেনা?
- হি হি, হবে তো!
- রান্না তো হয়ে গেল।
- আসলে তুই কাজলি মাছ ভাজবি, সব ভেঙে ছারখার হবে, কাজলি মাছের ঝোল তখন ঝোল না হয়ে ঘ্যাঁট হবে, তাই খানিকটা বাটি চচ্চড়ি করিয়ে রাখলাম। বাকিটা এবারে ভেজে ঝোল হবে।
- মা যা হয় হোক, কাজল পরা মাছ আমি ভাজবই।
- কোন আপত্তি নেই। শুধু কড়ার বদলে ফ্রাই প্যানটা উনুনে চাপাও। তেল কষকষে গরম কর। তেলে ধোঁয়া উঠলে একটা একটা করে মাছ সন্তর্পণে প্যানের ওপরে শুইয়ে দিতে হবে।
- ও মা-আ-আ-আ। তেল চড়বড় করে ছিটকোচ্ছে। তুমি এস।
- হবে হবে, আগুনটা একটু কমিয়ে দে। এই দেখ এইভাবে এক ধার থেকে দে। এবারে আগুনটা বাড়া।
- মাছ ওল্টাতে হবেনা?
- না না আগে ওপিঠটা শক্ত হোক।
- দেখো মা হয়েছে?
- বাপরে তুই তো রেকর্ড করে ফেললি রে, আমি কতবার কাজলি মাছ ভেঙে ফেলে আমার মায়ের কাছে, তোর বাবার কাছে গালি খেয়েছি জানিস?
- হাঃ হাঃ, তবে? এবারে ঝোলটা কী করে হবে বল।
- শর্টে করবি? না লঙে?
- অবশ্যই শর্টে।
- তাহলে কড়ায় একটুখানি তেল দিয়ে তাতে গোটা ধনে আর পাঁচ ফোড়ন হালকা ভেজে নে। তারপরে কাঁচা লংকা, আর ধনে পাতা দে। এই ভাজা মশলা মিনি মিক্সিতে একটু খানি জল দিয়ে বেটে ফেল। কড়ায় আলু আর বেগুন ভেজে নে। নুন হলুদ দে। বাটা মশলা দে। এবারে জল দিয়ে ফোটা। মাছগুলো ঝোলে ঢেলে দে। একটু কাঁচা তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নে।
কাজলি মাছের ঝোল বানিয়ে মেয়ে বিজয়ীর হাসি হাসে। আমিও হাসি। যতই হতাশা আসুক, যতই ডুবি স্বখাত সলিলে, আমি যে তোর মুখ দেখেই বারবার ভেসে উঠি বাবু, কলেজের ছেলেমেয়েরা তো আছে, তবু তোকে নিয়েই সব, তুই কেন বুঝিসনা! আজকাল খুব গান শুনি আমি। আগে শুনতাম না। মোবাইলে মনোবিদের সাক্ষাৎকার দেখে সচেতনভাবে অভ্যেসটা তৈরি করছি - যাই হয়ে যাক, বাঁচতে তো হবে। লড়াই ছাড়া যাবেনা।
".... যদি নিমেষে হারালে
জীবনে পরিপাটি
তবু হেরে যেতে দেবনা।
যদি বেচে দিতে বলে
শিকড়ে বাঁধা মাটি
জেনো আমি বেচতে দেবনা।…..
….আর এভাবেই নরম বালিশে,
তোমার ঐ চোখের নালিশে,
বেঁচে থাক রাতপরীদের স্নান।
ঠোঁটে নিয়ে বেঁচে থাকার গান।"