ইহুদি রসিকতা ১ : একটি ভাষার জন্ম : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৫১৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
কয়েকশ বছর সুখে কাটল, তৈরি হল সলমনের মন্দির। কপালে শান্তি নেই, মন্দির ভাঙলেন নতুন রাজা, ইহুদিরা নির্বাসিত হলেন ব্যাবিলনে (আজকের ইরাক)। ঘরে ফেরার অনুমতি পেলেন আরেক সহৃদয় পারসিক রাজার কাছ থেকে। আবার গড়লেন দ্বিতীয় মন্দির। তারপরে জুডিয়াতে রোমান রাজত্ব, বিদ্রোহ। পুনর্বার বিধ্বস্ত হল মন্দির যার পশ্চিম দেয়ালটুকু এখনো দাঁড়িয়ে আছে, যার নাম ক্রন্দনের প্রাচীর (ওয়েলিং ওয়াল / ক্লাগে মাউয়ার)। জেরুসালেমে ইহুদির প্রবেশ নিষিদ্ধ। অতএব আবার পোঁটলা বাঁধো। পথে এবার নামো সাথী।
ইহুদি রসিকতা ৬ : গ্রামে গঞ্জে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৯ জুন ২০২১ | ৩৪৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
জেরুসালেম থেকে ছড়িয়ে পড়া ইহুদি ইউরোপে এলেন স্পেন পর্তুগালে (সেফারদি) এবং রাইন নদী ধরে আরেক দল (আশকেনাজি) গেলেন উত্তরে। নাগরিক অধিকার বস্তুটি মেলে না। পশ্চিম ইউরোপের নানা দেশের দরজা তাঁদের জন্য বন্ধ। এমন সময়ে পোলিশ রাজা পুণ্যবান বলেস্লাভ আমন্ত্রণ জানালেন - ইহুদিদের দিলেন ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, আপন বিচার ব্যবস্থা, জোর করে ধর্মান্তরিত করার বিরুদ্ধে আইনি সমর্থন (কালিস ঘোষণা ১২৬৪)। পরবর্তী চারশ বছরের পোলিশ লিথুয়ানিয়ান রাজত্বে সকল শাসক ইহুদিদের সে অধিকার সসম্মানে রক্ষা করেছেন। ১৫শ শতকে স্পেনে যখন রাজা ফারদিনান্দ ও রানি ইসাবেলার সাদর উৎসাহে কলম্বাসের কল্পিত ভারত আবিষ্কার আর তার সঙ্গে ইহুদি ধর্মান্তর, সংহার ও বিদায় উৎসব চলছে, নরওয়ে সুইডেনের মতো আলোকিত দেশ গুলি অবধি তাদের প্রবেশাধিকার দেয় নি। পোল্যান্ড লিথুয়ানিয়া তাদের স্বাগত জানিয়েছে। স্বাধীনতা ছিল সীমিত, জীবন ধারণ অত্যন্ত কঠিন কিন্তু এই প্রথম ইউরোপ তাদের খানিকটা মানুষের মর্যাদা দিলো।
ইহুদি রসিকতা ৭ : শনিবারে সাবাথে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০৩ জুলাই ২০২১ | ৪৮৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই উনচল্লিশটি বিধান বিস্তৃত হল। জেফ্রি আমাকে বোঝালেন সেটি খুবই সহজ ছিল। এই ধরো বিজলি/ইলেক্ট্রিসিটি। সুইচ টিপলে আলো বা অগ্নির উৎপাদন হল। প্রাথমিক উনচল্লিশটি বিধানে আগুন জ্বালানো মানা। তাই এটির বারণ। মোজেসের আমলে মোটর গাড়ি, বিজলি বাতি, হাওয়াই জাহাজ, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন ছিল না। সাবাথের রীতি নীতি অনুসারে বাতিল হল গাড়ি চালানো বা চড়া, বিজলি বাতি জ্বালানো বা নেভানো টেলিভিশন দেখা ফোন করা বা ধরা। বই পড়তে পারেন অবশ্যই। তবে আইপ্যাড বা স্মার্ট ফোনে নয়। তার সুইচ অন করাটা একটা কাজ!
ইহুদি রসিকতা ৮: মিশপখে বা গুষ্ঠি : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১৭ জুলাই ২০২১ | ৩২৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
ইদিশ ভাষা অসম্ভব চাতুর্যের সঙ্গে এই শব্দটিকে মুক্তি দিয়েছে তার সঙ্কীর্ণতা থেকে। সেখানে মিশপখের ব্যুৎপত্তি ইহুদিয়ানার গণ্ডিকে অতিক্রম করে যায়- তাই মিশপখে আমাদের হিসেবে গুষ্ঠি! ইংরেজিতে ক্ল্যান। লক্ষ্যের ঐক্য থাকলে তার ভেতরে বন্ধু বর্গ পাড়া পড়শি যে কেউ ঢুকে পড়তে পারেন। বৃহত্তর পরিবার! যেমন ধরুন এই দুনিয়ার সব মোহন বাগান সমর্থক আমার আপন গুষ্ঠি, তারা সবাই আমার মিশপখে। গোরা ঘোষকে খুঁজে পেয়েছি নুরেমবেরগে, শিকাগোতে সিরাজুল ইসলামকে। আমরা সবাই এক ডালের পাখি, এক গোয়ালের গরু। একই দলের লোক। হাত ঘড়ির সময়টা আলাদা হলেও মনে পড়ে যায় খেলা শেষ হবার বিশ মিনিট আগে আমাদের সবুজ -মেরুন পতাকা নেমে যাবে (আমাদের কালে যেতো)। সেখানে সকলে এক মন এক প্রাণ।
ইহুদি রসিকতা ১২: ওষুধে ডাক্তারে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩১৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
রোগ থেকে আরোগ্যের এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণের পরাকাষ্ঠা শুনে ডাক্তার হ্যারিস মৃদু হাসলেন। বললেন, ‘আপনাদের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে শুধু নয়, স্নান সবার পক্ষেই একটি আবশ্যিক প্রাত্যহিক অনুষ্ঠান। তবে ইহুদিদের কাছে নয়! তাদের একটা ঐতিহাসিক জলাতঙ্ক আছে! আমি যদি রুগীকে স্নান করতে বলি, সে খুব চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করবে, স্নান করতে হবে কেন? আমার অসুখটা কি এতোই কঠিন?’
এ নিয়ে গল্পের শেষ নেই ।
কারলসবাদ (কারলোভি ভারি, আজকের চেক)
সেখানে মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে খনিজ জল। জলের দ্বারা স্বাস্থ্য – সানুস পের আকুয়াম । এস পি এ - স্পা !
ইলান গেছে জল চিকিৎসার টিকিট কাটতে ।
কাউন্টারের মহিলা : একটা কেন, একসঙ্গে যদি বারোটা টিকিট কাটেন, সস্তা হবে। এগারোটার দামে বারোটা পাবেন ।
ইলান (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ) : আমি কি আর বারো বছর বাঁচবো ?
ইহুদি রসিকতা ১৩: ইজরায়েলে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২০৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
অনেক কিছু বদলে যেতে দেখলাম। নয়ের দশকে জেরুসালেম থেকে বেথলেহেম বা বেথানি (শেষ বারের মত জেরুসালেম আসার আগের রাতটি সেখানে কাটান যিশু) অথবা তেল আভিভ থেকে হাইফা, সেখান থেকে বাস বদলে নাজারেথ যাওয়া যেতো সহজেই। কখনো কোথাও পাসপোর্ট দেখাতে হতো না। প্যালেস্টাইন আর ইজরায়েল যে দুটো আলাদা দেশ তা সব সময় বোঝা যেত না। ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম স্থান সলোমনের ভগ্ন মন্দিরের প্রাচীরের (ওয়েলিং ওয়াল) পাশ দিয়ে ভারা বাঁধার মত সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেছি টেম্পল মাউন্টে, স্বর্ণ মণ্ডিত ডোম অফ দি রক চত্বরে। সেটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম ভূমি। তারপর মুসলিম মহল্লা দিয়ে চলে গেছি গলগথা- যেখানে যিশুকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়। ফিরে এসে লোককে বলেছি একবার জেরুসালেমে যাও – দুই কিলো মিটারের মধ্যে তিনটি মহান ধর্মের ছায়া মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে।
এখন সেটি সম্পূর্ণ অসম্ভব।
এবার মায়াকে নিয়ে বেথলেহেম যেতে পার হতে হয়েছে কাঁটা তারের বেড়া, সুড়ঙ্গের মতো সীমান্ত। বারে বারে প্রমাণ করতে হয়েছে আমাদের পরিচিতি। ডোম অফ দি রকে যাওয়া অসম্ভব – অনেক জায়গা থেকে অনুমতি নিতে হয়। পদে পদে প্রহরী।
ইহুদি রসিকতা ১৫: রণাঙ্গনে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২৩ অক্টোবর ২০২১ | ২৮৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
অন্যদিকে ফ্রান্সের পুরনো ইহুদি বিদ্বেষ তার কণ্ঠ খুঁজে পেলো। কট্টর জাতীয়তাবাদী ফরাসিরা জেগে উঠলেন - ইহুদিদের জন্য ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা, ফরাসি সভ্যতা বিপন্ন । সে ক্রোধ এমনি রুদ্র রূপ নিয়েছিল যে এমিল জোলা আনাতোল ফ্রাঁসের মত মানুষের প্রাণ নিয়ে টানাটানি । একশোর বেশি জেলায় ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ , তাদের সম্পত্তির বিনাশ চলল -পুলিস নির্বাক দর্শক মাত্র ( হিটলারের বয়েস তখন ন বছর , গোয়েরিঙের ছয় : আইখমানের জন্মাতে আট বছর দেরি আছে )। কোন প্রমাণ ছাড়াই পুনর্বিচারে দ্রাইফুসের সাজা আরও দশ বছর বাড়ানো হল । তাঁকে জানানো হল তিনি মুক্তি পাবেন যদি অপরাধ স্বীকার করেন। পাঁচ বছর ডেভিলস আইল্যান্ডের কঠোর জীবনে ক্লান্ত দ্রাইফুস তাতেই সই করে মুক্ত হলেন ( ডাসটিন হফমান অভিনীত পাপিলন ছবিতে ডেভিলস আইল্যান্ড চিত্রায়িত হয়েছে)। সামরিক বাহিনীতে পুনর্বাসন হল দ্রাইফুসের। তিনি জার্মানির বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ।
ইহুদি রসিকতা ১৯: রেস্তোরাঁয় - সেকালে/একালে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৩৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
বাঁকুড়া, বরিশাল হোক আর বার্লিন কি বের্ণ হোক, ভাষা বা শব্দ ব্যবহারের পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব সেই জনগণের ওপরে বর্তায় না। অস্ট্রিয়ান পাবকে বলে বাইসল। জার্মান তাকে চেনে সম্পূর্ণ অন্য নামে ( Kneipe) । আজকের ফরাসি ভাষায় উইক এন্ড বা বিজনেস অনায়াসে ঢুকে পড়েছে (বিশ বছর আগে একজন ফরাসি সি ই ও তাঁর বক্তৃতায় বিজনেস শব্দ ব্যবহার করায় ক্রুদ্ধ রাষ্ট্রপতি শাক শিরাক দ্রুতবেগে সে সভাস্থল পরিত্যাগ করেন)।
জর্জ বারনারড শ বলেছিলেন ব্রিটেন এবং আমেরিকা এই দুটি দেশ একই ভাষার দ্বারা বিভক্ত (টু কান্ট্রিস ডিভাইডেড বাই এ কমন ল্যাঙ্গুয়েজ) । এই বিভাজনের ব্যাখ্যা আমেরিকার অভিবাসনের ইতিহাসে নিহিত। ১৫২০ সালে মে ফ্লাওয়ার জাহাজ যাদের নিয়ে আমেরিকার পূর্ব তটে পৌঁছুল, তাঁরা সবাই ইটন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করে থাকলেও মোটামুটি ইংরেজি বলতেন। পরের কয়েকশ বছর ইউরোপ থেকে যারা এলেন তাঁদের মধ্যে কেবল আইরিশদের মাতৃভাষা ছিল ইংরেজি (কেন যে আমেরিকার কথিত ইংরেজি আইরিশ উচ্চারণের উপর আধারিত হল জানি না। এঁদের বৃহত্তর দলটি আসতে শুরু করেন দেরীতে, আলু দুর্ভিক্ষের পরে, উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি)।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৪৮৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
সম্পূর্ণ ঘটনাচক্রে, একটি অখ্যাত গ্রামে ব্যাঙ্কিং শিক্ষাদানের সুযোগে, আমার যে শুধু পোল্যান্ড-সহ লৌহ-যবনিকার আড়ালে ঢাকা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে প্রথম পরিচয় হল, তা-ই নয়, অ্যালান হার্স্টের মত এক অসাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। সিটি ব্যাঙ্কে যোগ দেবার আগে তিনি আমেরিকার ডেমোক্রাট দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপ এবং আই টি সেল নামক আধুনিক জনসংযোগের তুখোড় মাধ্যম ভোটারদের তখনও অজানা। পার্টির ইস্তাহার, ম্যানিফেস্টো এবং বক্তৃতার ড্রাফট লিখতেন লেখাপড়া জানা ভদ্র মানুষজন। গুজব শুনেছি, উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন নামক এক যুবকের নির্বাচনী ভাষণের খসড়া করেছেন অ্যালান। বত্রিশ বছর বয়েসে ক্লিনটন লিটল রক, আরকানসাসের (মতান্তরে আরকানস’) রাজ্যপালের অফিসে অধিষ্ঠিত হলে, আপন রাজনৈতিক কর্তব্য সমাপ্ত হয়েছে মনে করে অ্যালান ব্যাঙ্কিং-এ এলেন। সিটি ব্যাঙ্কে সিকি-শতাব্দী কর্ম করেন, মুখ্যত উন্নয়নশীল পূর্ব ইউরোপে।
ইহুদি রসিকতা ২০: খ্যাতনামাদের নিয়ে : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০১ জানুয়ারি ২০২২ | ৩২৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
বিগত উনিশটি কিস্তিতে বর্ণিত রসিকতার বেশির ভাগ বক্তা, নায়ক বা খলনায়কের নাম আমাদের অচেনা। কোন গল্পটা কে যে কাকে বলল তা কারো জানা নেই। সবটাই মুখে মুখে প্রচলিত, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ঘরানার মতো। তার ওপর কখনো রঙ চড়ানো হয়েছে, স্থান কাল পাত্র বদলে গেছে। সঠিক ফ্যাক্ট চেকিঙ্গের কোন উপায় নেই। তাতে অবিশ্যি স্বাদের কিছু ক্ষতি বৃদ্ধি হয় নি। কৌতুকের কোন তকমা লাগে না।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৩৩৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
তিরিশ বছর আগে দু দিনের পরিচয়ে হলুদ, ধূলি ধূসরিত ওয়ারশ দেখেছি । রাস্তায় রাশিয়ান লাদা কিছু ট্রাবান্ত গাড়ি। তাদের কেশে যাওয়া ধোঁয়াতে উৎকট গন্ধ - সেগুলো টু স্ট্রোক এঞ্জিনের মোটর। যুদ্ধে আশি শতাংশ ওয়ারশ বিচূর্ণ হয়। সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ কিছু হয়েছে তবে দেওয়ালে অনেকদিন চুনকাম হয়নি।
সেনাটোরস্কা ১৬ নম্বরে আমাদের অফিস । জাতীয় থিয়েটারের প্রায় উলটো দিকে। সে বাড়িও পঞ্চাশ বছর রঙ চুন দেখেনি। রাস্তা থেকে একটা গেট দিয়ে যেন কারো উঠোন পেরিয়ে দোতলায় অফিসে ঢোকা। ঝাকশেভো থেকে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়ে গেছে। সেই যে বেয়াতা, সন্ধ্যেবেলা একাকী ভারতীয়কে প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেখে সন্দিহান হয়েছিলেন, তিনি অ্যালানের খাস সেক্রেটারি। বেয়াতা মিটিং রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন। কর্পোরেট ব্যাঙ্ক আর ব্যাঙ্কিং সম্পর্ক বিভাগ নিয়ে কুল্লে পনেরো জন এলেন আমার বাণী শুনতে ।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি - পূর্ব জার্মানি : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ৩০ এপ্রিল ২০২২ | ৩০১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
আমরা কি অপরাধী? এমনটা গোয়েন্দা সিনেমাতে দেখেছি। যন্ত্রের মত মানুষেরা এসে মানুষের পরীক্ষা নিচ্ছে। কোনো শব্দ নেই। কোনো কথা নেই। পাখিরা ডাকে না সেখানে। আকাশ স্তব্ধ হয়ে থাকে। দুঃস্বপ্নের মত।
ষোল বছর বয়েসে সন্ধেবেলা বিনা বাতিতে বাইসাইকেল চালিয়ে বরানগরের স্কুল থেকে পাইকপাড়া ফেরার পথে চিড়িয়া মোড়ে পুলিশ আমাকে ধরে। অতি স্নেহের সঙ্গে, “এ ববুয়া, বতিয়া বিনা সাইকিল চলাতে হো?” – এই বলে সাইকেলটি বাজেয়াপ্ত করে থানায় জমা করে। সেটি যে থানার জিম্মায় রইল, সেই মর্মে স্বাক্ষরিত একটি চিরকুট হাতে নিয়ে দমদম রোড ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরি। পরের দিন শিয়ালদা কোর্টে দশ টাকা জরিমানা দিয়ে সাইকেল ফেরত পেয়েছি। সে পুলিশকে দেখে ভয় হয়নি। এখানে হল। কোনো অপরাধ না করেও।
চিড়িয়া মোড় থানার পুলিশের মুখটা মানুষের বলে মনে হয়েছিল।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি - পূর্ব জার্মানি ৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৮ মে ২০২২ | ২৭৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
টেলিভিশনে ব্রায়ান হ্যানরাহান যখন এই যুগান্তকারী ঘটনাবলির বর্ণনা দিচ্ছেন, আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছি বারো বছর আগের সেই দিনটার কথা যেদিন আমি পশ্চিম বার্লিনের পতসডামার প্লাতসে একটা কাঠের পাটাতনের ওপরে উঠে প্রথম পূর্ব বার্লিন দেখি । কাঁটা তারের বেড়ার ওপারে ধূসর মাটি, ভাঙ্গা চোরা চ্যান্সেলরির বাড়ি যার নিচে ছিল হিটলারের বাঙ্কার, গোয়েরিঙের হাওয়া অফিস। সে মাত্র বত্রিশ বছর আগের কথা। লোকে কেতাবে পড়ে আমি চোখের সামনে ইতিহাস দেখছি ।
ঠিক এই সময়ে জার্মানি ফিরব ? কাজে? কো ইন্সিডেনসের বাংলা কি ? সমাপতন কি একেই বলে ?
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি - রাশিয়া ১ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৫ জুন ২০২২ | ২১১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একটি বিশাল কাঠের বাড়ির সামনে থামার নির্দেশ পেলাম। বোঝা গেলো এটি মানুষ পরীক্ষা করার কারখানা। তার চত্বরে কয়েকটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ইউনিফরম ধারি পুলিশ ইঙ্গিতে আদেশ করল গাড়ি ছেড়ে অফিসে ঢুকতে। পাঁচ ধাপ সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে যাব, আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হল বহু ভাষায় লিখিত একটি সাবধান বাণীর প্রতি। রাশিয়ান নরওয়েজিয়ান সহ সকল নরডিক, ইংরেজি, জার্মান ও ফরাসি ভাষায় লেখা আছে: এই সীমান্ত চৌকিতে কোন প্রকার ঘুষ দান করা অথবা ঘুষ দান করার প্রচেষ্টা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ছবি তুলতে গেলে রক্ষী বাধা দিলো। আমি পিরকোকে বললাম তার মানে এখানে টাকা দেয়া নেয়ার ব্যবসা চলে। সে চিন্তিত হয়ে বললে আমার কাছে তো রুবল নেই।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি - রাশিয়া ৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩০ জুলাই ২০২২ | ২১৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
মস্কোর বয়েস ন’শ’ বছর। মাত্তর ১৮ শতকে জার পিটার দি গ্রেট এই ভুঁইফোড় শহরটির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম নাম সাঙট-পিটার-বুর্খ (ডাচ)। জার্মান প্রভাবে সেটি হয়ে দাঁড়ায় সাঙট পেটার্সবুর্গ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান শব্দ ব্যবহার জনবিরোধী বিবেচিত হল। নাম বদলে পেত্রগ্রাদ – পিটারের গড়! এই সময় ব্রিটেনেও দু’টি নামের পরিবর্তন হয় একই কারণে। লর্ড বাটেনবের্গ (ফ্রাঙ্কফুর্টের অনতিদূরের গ্রাম) হলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন (বের্গ = পাহাড় = মাউন্ট: বাটেন হল ব্যাটেন)। ব্রিটিশ রাজপরিবারের পরিচয় হাউস অফ হানোভার (জার্মান শহর, যেখান থেকে রাজা জর্জকে খুঁজে এনে সিংহাসনে বসানো হয় ১৮ শতাব্দীতে – পরবর্তী ছয় রাজার ধমনিতে ছিল জার্মান রাজরক্ত, প্রত্যেকে জার্মান বলেছেন) বদলে হাউস অফ উইনডসর। সহজ ব্যবস্থা। জার্মানির সঙ্গে যখন লড়াই চলছে, পিতৃপুরুষের নাম বদলে ইংরেজ সাজাটাই তো বাঞ্ছনীয়।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি - রাশিয়া ৪ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৩ আগস্ট ২০২২ | ২০৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
যে পানীয় প্রস্তুত করার গৌরবে এ দেশ অমরত্বের দাবি রাখে, অকস্মাৎ ছোট ছোট গ্লাসে রাশিয়ার সেই শ্রেষ্ঠ পানীয় আমার সামনে উপনীত হল। গ্লাসের আকৃতি দেখে ভাবলাম, ভদকা তুমি এত ছোট কেনে? সকলেই সেটি দ্রুত পান করলেন। গ্লাসগুলি টেবিল থেকে অদৃশ্য হল মুহূর্তের মধ্যে।
গরুর ঘাস থেকে মানুষের স্টেজে উঠলাম। এবার আগমন আলুসেদ্ধ গোছের কিছু, তার সঙ্গে বাঁধাকপি। সেগুলো টেবিলে রাখা হয়েছে কি হয়নি, কে বা কারা আবার আমার সামনে হাজির করলেন ভদকার ছোট গ্লাস। মানে কী? এঁরা কি এইভাবে কিস্তিতে কিস্তিতে ভদকা পান করেন? প্রশ্নটা ডাক্তার সাহেবের জন্যে জমিয়ে রাখলাম।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি - রাশিয়া ৫ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৭ আগস্ট ২০২২ | ৩১৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪২
যতদূর শুনেছি গলা (গোলাস) খোলার অধিকার বা বাক স্বাধীনতার নাম গ্লাসনস্ত এবং পুনর্গঠন বা পুনর্নির্মাণের নাম পেরিসত্রইকা। অভিপ্রায় নিঃসন্দেহে ছিল সাধু – কেন্দ্রীয় নির্দেশ দ্বারা ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে সমষ্টির শুভ সাধনা করার যে আপাত প্রয়াস চলে এসেছিল স্তালিনের সময় থেকে, সেটির ব্যর্থতা স্বীকার করলেন গরবাচভ। লক্ষ্য – এক স্বচ্ছ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেশের নবনির্মাণ ব্রতে ঝাঁপিয়ে পড়া। এবার ব্যক্তি তার মত প্রকাশের অধিকার পেল। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ, মতান্তরে কেজিবি নিরুদ্দেশ। অন্ধের নগরী, চৌপট রাজা। বাজার থেকে অদৃশ্য হল খাবার। ১৯৯০-এর আগে লাইন দিলে কিছু জুটত। যদিও মস্কোর বাজারে একটা রসিকতা চালু ছিল – কোথাও লাইন দেখলেই মানুষ দাঁড়িয়ে পড়তেন, পরে জানতে চাইতেন এটা কিসের লাইন। জনজীবন বিপর্যস্ত, তার কিছুটা আগেই দেখেছি সেন্ট পিটার্সবুর্গে।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি - রাশিয়া ৬ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২০৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
য়োখেন আমার গভীর সংশয়ের আখ্যান শুনে বললে, জ্ঞান দিও না। ....
এই যেমন তোমরা সিটি ব্যাঙ্ক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার যোগাড় করে আফ্রিকার ঘানা কোকো বোর্ডকে ধার দিচ্ছ, আর সেটা ফেরত পাচ্ছ কোকো বোর্ডের নেসলে প্রমুখ খ্যাতনামা ইউরোপীয় চকোলেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। ঘানা কোকো বোর্ডকে চেনে দুনিয়ার কোন বান্দা? কিন্তু এক বিলিয়ন ডলার দিতে বাজার পিছপা হচ্ছে না – কারণ তারা চেনে নেসলেকে, যারা কোকো থেকে চকোলেট বানায়। কোকো গেছে নেসলের ঘরে। তোমার আমার ছেলেমেয়ের দাঁতের সর্বনাশকারী চকোলেট বেচে তারা ঠিক টাকা দেবে। আমরা সেরকম একটা কিছু করতে চাইছি।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – রাশিয়া ৭ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৯৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
১৯৯৭/৯৮ সালে ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া (আমাদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক) ডলার আর রুবলের বিনিময় মূল্যের একটি মান বেঁধে দিয়েছিল। এক ডলারের দাম ৫ আর ৭ রুবলের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে। যদি রুবলের দাম কমে, বাজার থেকে ডলার কিনে ব্যাঙ্ক অফ রাশিয়া রুবলকে চাঙ্গা করবে। আর যদি রুবল শক্তিশালী হয়ে এক ডলারের বদলে ৫ নয়, ৪ রুবলের দিকে চলে যায়, বাজারে ডলার বিক্রি করে ব্যাঙ্ক রুবলের ভাও আবার পাঁচে নিয়ে আসবে। এর কেতাবি নাম ভাসমান গাঁটছড়া (ফ্লোটিং পেগ) বা ম্যানেজড পেগ। এই ভাবে রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রুবলের মূল্যরক্ষার শপথ নিলো। কাগজ-কলমে এই পদ্ধতি আগ মার্কা শুদ্ধ। কিন্তু এটির শক্তি নির্ধারিত হয় যেকোনো দেশের ডলারের ভাঁড়ারে সঞ্চিত ধন (ডলার) এবং দেয় সুদের হার অনুযায়ী। মাত্র ছ’ বছর আগে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড এইরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করে পাউন্ডের দাম ধরে রাখতে সম্যক ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাঁদের প্রতিরক্ষা প্রয়াস একদিনেই বিধ্বস্ত হয় – কালো বুধবার ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯২। এই জুয়োয় দান দিয়ে জর্জ সোরোস একদিনে এক বিলিয়ন ডলার লাভ করেন।
করমুক্ত : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৩ অক্টোবর ২০২২ | ২২০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
‘রাইনার, এই যে সব মানুষ তোমাদের ব্যাঙ্কের হলঘরে বসেছিলেন, এঁরা কারা? এদের কাউকে ব্যাঙ্কার কেন, এমনকি শিল্পপতি বলেও তো মনে হল না?’
রাইনার বললে, চুপ কর দেখি (জাই রুহিগ)। তুমি কি মনে কর তোমাদের গোষ্ঠীবদ্ধ ঋণের পারিশ্রমিক নিয়ে আমাদের ব্যাঙ্ক চলে? ঘরভাড়া ওঠে না। এখানকার খরচা জান? যাদের দেখলে, তারা আমাদের প্রাইভেট ব্যাঙ্কের গণ্যমান্য মক্কেল। সোজা বাংলায় (এর সরাসরি জার্মান আছে – আউফ ডয়েচ গেজাগট) করপ্রদানের পরিমাণ কমানোর জন্য আমাদের সঙ্গে এখানে কারবার করে। অ্যাকাউন্ট খোলে। টাকা তোলে। জমা দেয়। তারাই আমাদের রুটি রুজির মালিক’।
আমার প্রশ্ন তখনো ফুরোয়নি। আমি বললাম, রাইনার, এদের পোশাক-আশাক, এমনকি সম্পূর্ণ বেমানান স্পোর্টস জুতো দেখলে তো হাঘরে মনে হয়। এরা তোমাদের মূল্যবান মক্কেল? কী গুল দিচ্ছ?’
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – রাশিয়া ৯ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩০ অক্টোবর ২০২২ | ২১৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
“গ্রিগরি, এতক্ষণ আপনি আমি দু’জনেই প্রভূত রেড ওয়াইন পান করেছি। একটা ল্যাটিন প্রবাদ আছে – ভিনো ভেরিতাস। মদ্যে নিহিত আছে সত্য। তাই বলি, আমরা আফ্রিকাতে যাদের সঙ্গে কারবার করি, তাঁদের পূর্ণ সততা সম্বন্ধে সন্দিহান হওয়া স্বাভাবিক। সে সন্দেহ আমাদের আছে। যে ঋণ গ্রহীতাদের কথা বলছেন, নিজেরাও জানেন তাঁদের সততা বিবাদিত। তাঁরা এটাও জানেন যে আমরা ব্যাঙ্কাররা সেই একই সন্দেহ পোষণ করি। সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। তাই যে বৃহৎ খনিজ তেলের ডিলগুলির কথা আপনি ভাবছেন – যেমন এঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, কঙ্গো – সেখানে আমরা সম্যক সাবধানতা পূর্বক ঋণ দিয়ে থাকি। এক পয়সা মারা যায়নি। আমাদের রাশিয়ান অভিজ্ঞতা বলে আপনাদের দেশেও সেই একই সমস্যা। আপনাদের ব্যাবসায়িক কর্মকর্তারা আরমানি স্যুট পরে দারুণ আমেরিকান ইংরেজিতে বক্তিমা দিলেও আমাদের সন্দেহ দূরীভূত হয় না। সেটি প্রকাশ করলে আবার আপনারা ক্ষিপ্ত হন”।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – কাজাখস্তান ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কোনো এক সুপ্রভাতে হয়তো মন ভালো ছিল, তাই প্রকৃতি কাজাখকে দিলেন ইউরেনিয়াম, তামা, শিসে, ক্রোমিয়াম, দস্তা, লোহা, হীরে এবং অগাধ খনিজ তেলের ভাঁড়ার। কিন্তু এই আশ্চর্য ধন সম্পদ খুঁজে দেখেননি, তার পরোয়া করেননি যাযাবর জনতা। সে অমৃত পড়ে রইল আসা যাওয়ার পথের ধারে। এ দেশের মানুষ স্থায়ী ভাবে বাস করতেন না কোথাও। মোঙ্গল রক্ত শরীরে আর মন উড়ু উড়ু। যাযাবরের মত আসা যাওয়া—আজ এখানে, কাল ওখানে। দেশটা এত বড়ো, যে, চরৈবেতি বলে চরে খাওয়ার কোনো অসুবিধে ছিল না।
দীর্ঘ জনযাত্রায় তাঁদের চোখে পড়েছে দেশের বিস্তৃত প্রান্তরে একটি ক্ষিপ্র গতির প্রাণী এখানে ওখানে দৌড়ে বেড়ায়। হেঁটে ক্লান্ত যাযাবরেরা হঠাৎ কোনো এক সময়ে তার ওপর চড়ে বসলেন। সে প্রাণী খুব একটা প্রতিবাদ হয়তো করেনি, করলেও তার কথা লিখে রাখবার মতন ট্রাভেল রাইটার জোটেনি।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – কাজাখস্তান ৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৯৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পনেরো টুকরো হয়েছে। একদা এই পনেরোটি রিপাবলিকের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ছিল রাশিয়ান। কালিনিনগ্রাদে যখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বাজে, পুবে দিওমেদ দ্বীপে তখন পরের দিনের ভোর সাড়ে পাঁচটা – সর্বত্র ভাষা এক। লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া থেকে কাজাখ অবদি সবার নিজস্ব ভাষা আছে, ছিল। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় রাশিয়ান। নইলে রাজ্য শাসন অসম্ভব। যেমন আমাদের শাসকরা চাপিয়েছিলেন ইংরেজি, সেটিকে আমরা আঁকড়ে ধরেছি। বাইরের জগতের পাসপোর্ট এটি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রাঁসোয়া দুপ্লে রবার্ট ক্লাইভকে হারাতে পারলে ফরাসি আমাদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হত!
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – কাজাখস্তান ৫ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আরতুরোস বললে, ‘দেখতে থাক। পাঁচ মিনিটের বেশি যদি লাগে, হোটেলে ফিরে গিয়ে আমার পয়সায় বিয়ার খাওয়াব। কৌতূহল বেড়ে গেল। বিয়ারের জন্য নয়। সপরিবারে পরায়া গাড়িতে কারো লিফট পাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তিরিশ বছর আগে জার্মানিতে হাত দেখিয়ে লিফট জোগাড় করার ভীষণ চল ছিল। নিজে করেছি। তবে সেটা অটোবানে। শহরে নয় -সেখানে সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা আছে, আমেরিকার মতন নয়। কথ্য জার্মানে বলা হয়, বুড়ো আঙ্গুল (প্যার দাউমেন) দেখিয়ে সফর করা। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে হয়তো জার্মানিতে এই যানযাত্রার পদ্ধতি প্রায় বিলীন এখন।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – কাজাখস্তান ৬ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
বিগত তিরিশ বছরে নানান দেশের নানান ব্যাঙ্কিং প্যানেলে বহু জ্ঞানীগুণীর সঙ্গে একাসনে বসে ঘণ্টাখানেক বাক্যালাপ করে পাঁচজনের সঙ্গে আমিও ফিরিতে হাততালি কুড়িয়েছি। এইসব প্যানেল আমারই মত অন্যান্য ব্যাঙ্কের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিঙের ফিরিওলা, কর্পোরেট প্রধান, সরকারি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাঝারি প্রবক্তা, খবরের কাগজের প্রতিনিধি (যাঁরা প্রশ্ন করেন কেতাবি, উত্তরের অর্থ অর্ধেক বোঝেন কিনা সন্দেহ) এমনি সব মানুষদের নিয়ে তৈরি হয়। নির্ধারিত অনুষ্ঠানের আগেই আমরা কনফারেন্স কল (জুম কল আসতে দেরি আছে) করে ঠিক করে নিই প্রশ্নাবলী কী হবে, কে কী বলবে। শ্রোতারা ভাবেন – চার-পাঁচ জন নারী পুরুষ একত্র বসে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা বা বিষয়ের ওপরে কোনো গভীর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দ্বারা মহতী সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – বসনিয়া হার্জেগোভিনা এবং রেপুবলিকা স্রাপসকা ১ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৪ মার্চ ২০২৩ | ১৫৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ক্রোয়েশিয়ান চৌকির পুলিস কিঞ্চিৎ কৌতূহলী। আমার চেহারার সঙ্গে আমার পাসপোর্টের রঙ, গাড়ির নম্বর প্লেট এবং পার্শ্ববর্তিনীর মুখ কোনটাই মেলে না, প্রায় কখনোই। চার দশক কেটে গেছে, পুলিশের বিস্ময় আমাকে আর বিস্মিত করে না। এখন কেবল পরবর্তী সংলাপের অপেক্ষা। পরিচ্ছন্ন ইংরেজিতে জানতে চাইলেন ঠিক কোথায় যাচ্ছি—মস্তার? বললাম, মস্তার যাবো, তবে মেজুগরিয়ে হয়ে। রোদিকাকে দেখিয়ে বললাম ইনি যে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণা মহিলা, একবার মা মেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান!
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – বসনিয়া হার্জেগোভিনা এবং রেপুবলিকা স্রাপসকা ৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ২১৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
বিংশ শতাব্দীর শুরু ও শেষ এইখানে। সারায়েভোতে।
গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের পিস্তলের গুলি—দুটি নয়, বহু কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। খুন কা বদলা খুনের খেলা শুরু হল — চলবে গোটা শতাব্দী জুড়ে। ইতিহাসে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের স্থান বার বার পরিবর্তিত হয়েছে—কারো চোখে তিনি সন্ত্রাসবাদী, কখনো বা জাতীয়তাবাদের পুরোধা। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই সহিংস প্রতিবাদ যে ঘটনাচক্রের সূচনা করল, তা হয়তো বদলে দিয়েছে বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ভবিষ্যতকে।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – বসনিয়া হার্জেগোভিনা এবং রেপুবলিকা স্রাপসকা ৪ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৬ মে ২০২৩ | ১৭৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
জলে ঝাঁপাচ্ছে যে শিশুর দল, তাদের কেউ প্রশ্ন করে তার পরিচয় কী? সে বসনিয়াক না সার্ব না ক্রোয়াট? জিজ্ঞাসে কোনজন? পথের দু-পাশ সবুজে ভরে আছে। আকাশ কী উজ্জ্বল!
বিশ বছর আগে এই রাস্তায় দেখা গেছে ট্যাঙ্কের সারি, জ্বলন্ত বাড়ির আড়ালে আড়ালে স্নাইপারের ছায়া, কখনো আকাশে সারবিয়ান বোমারু বিমান, কোনো বাড়ির উঠোনে বসে সেই বিমানের দিকে বন্দুক তাক করছে এক যুবক। সারি সারি দেহকে একই সঙ্গে গোর দেওয়া হচ্ছে, কোথাও ক্যাথলিক কোথাও অর্থোডক্স ক্রসের নিচে। দু-হাত দূরে মুসলিম মাজার। এই সেদিন।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ক্রোয়েশিয়া (হ্রাভতস্কা) : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২০ মে ২০২৩ | ১৭৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
আগাথা ক্রিস্টির মার্ডার অন দি ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (অ্যান্ড দেয়ার ওয়্যার নান—যা থেকে হিন্দি ছবি গুমনাম—এর পরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্য উপন্যাস) যাঁরা পড়েছেন, অবিলম্বে এই দৃশ্যটি চিনতে পারবেন। প্রথম চলচ্চিত্র ভার্শনটি (১৯৭৪) দেখেছিলাম—তাতে মেগাস্টার কাস্ট: আলবার্ট ফিনি (যাঁকে আগাথা ক্রিস্টি এরকিউল পোয়ারোর চরিত্রে একেবারে পছন্দ করেননি), শন কোনারি, জন গিয়েলগুড, ইনগ্রিড বেরগমান, ভেনেসা রেডগ্রেভ, জ্যাকেলিন বিসে এবং আরও অনেকে। পরে জেনেছি গার দে লেস্ত, প্যারিস থেকে বাইশশো কিলোমিটার দূরের ইস্তানবুলগামী ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ইউরোপের পয়লা দূরপাল্লার ট্রেন। সময় লাগত তিন দিন। সেকালে খুব কম ট্রেন তার আপন দেশের গণ্ডির বাইরে গিয়ে স্টিমের ধোঁয়া ছেড়েছে।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ক্রোয়েশিয়া ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৪ জুন ২০২৩ | ১৩১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
হলফ করে বলতে পারি নিজের চোখে দেখা—কনটিনেন্টাল ব্যাঙ্ক ফ্রাঙ্কফুর্টের অফিসার জামিনদাতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পরে তাঁর বিবরণীতে (কল নোট) লিখছেন: “আমাদের দীর্ঘ মধ্যাহ্ন ভোজনের শেষে, কফি পান করার সময়, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সি-ই-ও জামিনদাতা—হের ফিশার—বললেন, তাঁরা এই কোম্পানির সমর্থনে আছেন ও থাকবেন”। তখন ঠিক কটা বাজে, কোন দিন, কফির আগে না পরে এই রূপ আশ্বাসবাণী দেয়া হয়েছিল, তার ফিরিস্তি দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল কে জানে। জার্মানি ছেড়ে আসার আগেই এই আশ্বাসবাণী যে ঋণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি, তার বহুত নমুনা দেখে এসেছি।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ক্রোয়েশিয়া ৪ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০১ জুলাই ২০২৩ | ১১৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপের ভয়াবহ ধর্মযুদ্ধে আশি লক্ষ মানুষ (ইউরোপীয় জনসংখ্যার দশ শতাংশ) মারা যান। সে সময়ে ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ার সৈন্য ফরাসিদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিধর্মী প্রটেস্টান্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আজকের বিচারে ভাড়াটে সৈন্য কিংবা রাশিয়াতে এই ভাগনারের মতন মারসিনারি হিসেবে। ফরাসি সমর বাহিনির পোশাক পরার অধিকার তাদের নেই - যুদ্ধক্ষেত্রে তারা নামে নিজেদের ইউনিফরম পরে আর গলায় রঙ্গিন রুমাল বেঁধে,আমাদের যুবাকালে দেব আনন্দ যেটাকে স্টাইলে পরিণত করেছিলেন! রুমাল বাঁধার ফলে জ্যাকেটের ওপরের বোতাম থাকে টাইট, সেটি কারণে অকারণে খুলে গিয়ে অস্ত্র চালনায় বাধা সৃষ্টি করে না – এই তাদের ভাষ্য।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ক্রোয়েশিয়া ৫ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৬ জুলাই ২০২৩ | ১২১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
জাগ্রেবের দুই শিল্পী, অলিঙ্কা ও দ্রাঝান একদিন অনুভব করলেন তাঁদের কণ্ঠে জড়ানো গভীর ভালবাসার মন্দার মালিকা ম্লান হয়ে এসেছে – এবার কি খেলা ভাঙার খেলা? ভালবাসার স্বর্গ হতে বিদায় নেওয়ার কাল আসন্ন হলে দ্রাঝান বলেন, “আচ্ছা, আমাদের এই চারটে বছরের প্রেমের, এক অন্তহীন খুশির দিনগুলির স্মৃতি কি হারিয়ে যাবে? তুমি আমি একসঙ্গে হয়তো কিছু কিনেছি, ছবি এঁকেছি তোমার। ভোলার পালা শুরু হলে এই ছবি, ওই পেয়ালা তারা কি চলে যাবে জঞ্জালের স্তূপে?”
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – স্লোভেনিয়া ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৭ আগস্ট ২০২৩ | ১৬৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী—এই আপ্তবাক্যকে অবহেলা করে বাহাদুরি দেখাবার চিরাচরিত বাঙালি অভ্যাস কখনও ত্যাগ করিনি। লিলিয়ানার কাছে শোনা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার এই সুযোগ। বললাম, ভিটেক, যতটুকু জানি – পোলিশ, চেক, স্লোভেনিয়ান একই স্লাভিক ভাষা পরিবারের সদস্য। তফাৎ আছে ব্যাকরণে, বাক্য বিন্যাসে, কিন্তু নিত্যদিনের ব্যবহারের শব্দ প্রায় এক। পোলিশে তোমরা গোনো ইয়েদনা দ্ভা ত্রি, স্লোভেনিয়ানরা গোনে এনা দ্বা ত্রি; পোলিশে কেনা হলো কুপিচ, এরা বলে কুপিতি। কার্ড কেনা নিয়ে কথা। তুমি তো আর দোকানদারের সঙ্গে ব্লেদ শহরের মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা বিষয়ে কোনো আলোচনায় বসছ না!
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – স্লোভেনিয়া ৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
বিসমার্ক দূরের কথা, এঁরা কেউ সাম্প্রতিক ইতিহাসটুকু পড়ে আসেননি। আপাত স্বাধীনতার লম্বা দড়ি ছেড়ে দিয়ে টিটো তো ঠিক সেটাই চেয়েছিলেন – রাজনীতি নয়, অর্থনীতি। লগে রহো ক্রোয়াট আউর সার্ব ভাই। চল্লিশ বছর যাবত হয়তো সেই কারণে শান্তি বজায় ছিল। এবারের বিবাদ অর্থনীতির নয়, জাতীয়তাবাদের। স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতা বাকি ইয়ুগোস্লাভিয়া না হয় মেনে নিল; কিন্তু আসল সমস্যা সার্ব বনাম ক্রোয়াটদের পারস্পরিক শোধ তোলার বাসনা।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – স্লোভেনিয়া ৪ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৬২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
অনেক দূরের যে দুর্গ সেদিন দেখা হয়নি, জুন মাসের এক সূর্যকরোজ্বল দিনে তার প্রাকারে দাঁড়িয়ে ওলেঙ্কা আমাকে ব্লেদ লেকের আখ্যান শোনাচ্ছিলেন। ব্লেদের দুর্গ হাজার বছর আগে জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় হাইনরিখের বানানো। ‘আহা, ১৮৭১ সালের আগে জার্মানদের কোনো দেশ ছিল না গো’ এই গল্প আমরা করে থাকি, কিন্তু ভুলে যাই যে তথাকথিত পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য আসলে ছিল একটি বিশাল জার্মান জমিদারি – সেখানে দাগ ও খতিয়ান নম্বর আলাদা করা ছিল না এই মাত্র। প্রত্যেক সম্রাট জার্মান। তারা সুন্দর জায়গা পেলে মহল বানান, উঁচু জায়গা পেলে প্রতিরক্ষার জন্য দুর্গ। ব্লেদ এই দুইয়ের আশ্চর্য সমন্বয়।
পবিত্র ভূমি ১ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২০ অক্টোবর ২০২৩ | ২৮৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪২
বহু দিন ধরে ঐতিহাসিকরা, তাত্ত্বিকরা উৎস খুঁজতে চেষ্টা করেছেন এই দশকব্যাপী ভয়ানক, বিষময় সংঘর্ষের। কেউ দায়ী করেন অটোমান সাম্রাজ্যের পতনকে, কেউ ব্রিটিশ চক্রান্ত বা ১৯১৭-র বেলফোর ঘোষণাকে, কেউ বা বারংবার ব্যর্থ হওয়া শান্তিপ্রস্তাব অথবা বহু শতাব্দীর বঞ্চনার ইতিহাসকে। সেইসব কূট তর্কের মধ্যেই দ্রুত বদলে যায় জেরুজালেম, ইতিহাসের চিরস্থায়ী রক্তাক্ত রঙ্গমঞ্চ, যা একইসাথে ক্রিশ্চান, ইহুদি ও ইসলাম ধর্মবিশ্বাসী মানুষের পবিত্র ভূমি। কারুর বধ্যভূমি, কারুর নির্বাসন, কারুর বা প্রতিশ্রুত নিজভূম।
ইতিহাসের ক্লাস নয়, একজন সাধারণ মানুষের ডায়রির পাতায় ধরে রাখা সেই আমূল বদলের একটুকরো ছবি, হীরেন সিংহরায়ের কলমে।
পবিত্র ভূমি ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৪৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
“শুনুন, এটা অনুসন্ধানের ইসরায়েলি কায়দা ! প্রথম জন আপনার সঙ্গে কথা বলে দ্বিতীয় জনকে পাঠাবার আগে রিপোর্ট দিয়েছে, আপনি কি বললেন। সেই লিস্টি মিলিয়ে দ্বিতীয় জন আপনাকে চেক করে। থিওরি হচ্ছে আপনি সত্যি বললে প্রতিবার তাই বলবেন, কোন ক্রিয়া পদ বিশেষ্য বিশেষণ একটু ওদিক হতে পারে,আপনার কণ্ঠস্বরে উষ্মা দেখা দিতে পারে। কিন্তু পর পর তিন বার ধারাবাহিক ভাবে মিথ্যে বলাটা শক্ত কাজ। নিরাপত্তার লোকেদের মনে সন্দেহ হলে আপনাকে পাঁচবারও প্রশ্ন করতে পারে। হিথরোতে আপনি ক্লিন চিট পেয়েছেন। যখন বেন গুরিওন হাওয়াই আড্ডায় নামলেন, আপনি একেবারে কোশার মানুষ ! এখন আপনি আমাদের অফিস কেন, এই উলটোদিকের পার্লামেন্টে গিয়ে একবার উঁকিঝুঁকি দিয়ে আসুন না !”
পবিত্র ভূমি ৪ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৬ অক্টোবর ২০২৩ | ২০০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৪
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে এক কোটির বেশি ইহুদির বাস ছিল, মূলত পোল্যান্ড ইউক্রেন লিথুয়ানিয়া হাঙ্গেরি রোমানিয়াতে। হলোকষ্টে ষাট লক্ষ প্রাণ দিয়েছিলেন। প্রাণে যারা বাঁচলেন তাঁরা গেলেন ইসরায়েল এবং আমেরিকায়। আজ ইসরায়েলে বাস করেন সত্তর লক্ষ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ষাট লক্ষ। ফ্রান্স বাদ দিলে বাকি ইউরোপে বাস করেন অত্যন্ত স্বল্প সংখ্যক ইহদি, খুব বেশি হলে লাখ দুয়েক। নাৎসি আমলে খুন খারাবি শুরু হওয়ার আগে অবধি ইহুদিরা অনেক লাঠি ঝাঁটা খেয়েও ইউরোপে বাস করেছেন দেড় হাজার বছরের বেশি, বাসজমির খোঁজে অন্য মহাদেশের উদ্দেশ্যে নৌকো বা জাহাজে চড়েন নি। ইউরোপ তাঁদের সর্বদা দূরে রেখেছে, কখনো শরণাপন্ন প্রতিবেশী হিসেবে নয়। ১২৯০ সালে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম এডওয়ার্ড ঝাড়ে বংশে ইহুদি উৎপাটন এবং বহিষ্কারের প্রথাটি বলবত করেন- সোজা রেড কার্ড !
পবিত্র ভূমি ৫ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৮ অক্টোবর ২০২৩ | ১০৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কতটা বিভক্ত এই দেশ? তেল আভিভ হতে ডেড সী যাবার মোটরওয়েতে বারবার চোখে পড়বে বড়ো অক্ষরে লেখা A B C : এটি কোন বর্ণ পরিচয়ের পাঠশালা নয়। এই অক্ষর মালা নির্দেশ করে কোন অঞ্চল কার তাঁবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু বছর পরেও ব্রিটিশ ফরাসি আমেরিকা এই তিন মিত্র শক্তি শাসন করেছে পশ্চিম বার্লিন। আপনি হাঁটছেন, হঠাৎ দেখলেন একটা মানুষের সাইজে সাইনবোর্ড – তাতে লেখা ‘আপনি ফরাসি সেক্টর পরিত্যাগ করিলেন’। এবার আপনাকে আরেকটি সাইনবোর্ড আমেরিকান সেক্টরে আপনাকে স্বাগত জানায়। মিত্র শক্তির এই দফায় দফায় দেওয়া নোটিসে আপনার চলা ফেরার কোন অসুবিধে হতো না কারণ কেউ আপনার পাসপোর্ট ভিসা পরীক্ষা করতে চায় নি ( যদিও সে ক্ষমতা তাদের ছিল। এক সেক্টর ছেড়ে অন্য সেক্টরে প্রবেশ করলে কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে না, কেবল পুলিশের, সৈন্যের পোশাকটা বদলে যায়। মুশকিল ছিল সোভিয়েত সেক্টর নিয়ে, সেখানে উঁচু দেওয়াল।
পবিত্র ভূমি ৬ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
সাফ সুতরো পবিত্র সমাধির গিরজেতে দেখা দিলো এক ধর্ম সঙ্কট। যিশুকে ঈশ্বরের সন্তান জ্ঞানে বন্দনা করার অধিকার সকল ক্রিস্টিয়ানের। কিন্তু তাদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধল সেই বন্দনার আচরণ প্রক্রিয়া নিয়ে - কে কোথায় কি ভাবে কোন ঘণ্টা বাজিয়ে কোন ধুনো দিয়ে কবার পাখা নেড়ে দিনের মধ্যে কতবার প্রার্থনা করবে তাই নিয়ে লড়াই চলে ; দেবস্থানের ঠিক কোন কোণায় কে দাঁড়াবে তার মীমাংসা হয় নি, এই নিয়ে মারামারি হয়েছে প্রভুর ক্রুশের সামনে। ধর্মের এই কুরুক্ষেত্রের লিগে ছজন প্লেয়ার, ছয় পুরুত, পূজারী পক্ষ – গ্রিক অর্থোডক্স (তাদের গলা সর্বদা উঁচুতে, আমাদের ভাষায় বাইবেল লেখা হয়েছে, বাবা, নইলে কি কেউ জানতে প্রভু এয়েছেন?), আর্মেনিয়ান চার্চ (দুনিয়ার পয়লা ক্রিস্টিয়ান দেশ, যখন বাকিরা পুতুল পুজোয় ব্যস্ত), মিশরের কপটিক (প্রভুর বাল্যকাল কেটেছে আমাদের দেশে), ক্যাথলিক (রোমের সে মহান গিরজে কে বানালো শুনি?), ইথিওপিয়ান চার্চ (সলোমনের বউ আমাগো দ্যাশের মাইয়া), সিরিয়ান চার্চ (ক্রিস্টিয়ানের পয়লা দীক্ষা, দামাস্কাসের পথে?)। প্রত্যেকে চান তাঁদের আপন নিয়ম মাফিক এই গিরজের পরিচালনার ভার এবং চাবি।
পবিত্র ভূমি ৭ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০১ নভেম্বর ২০২৩ | ৯৩৩ বার পঠিত
"ইংরেজের যতোই টেকনিকাল জ্ঞান থাকুক না কেন, জমির মালিক কনস্তানতিনোপেলের অটোমান সুলতান ; তিনি খামখা কূটবুদ্ধি ইংরেজকে রেল লাইন পাতার জন্য জমি দেবেন কেন? তিনি বললেন কেটে পড়ো, দান খয়রাতি করলে রাজ্য চলে না। ততদিনে ইংরেজ সেই লাইনের মাপজোক, এমনকি কোন খানে লাইন পড়বে তার অঙ্ক অবধি কষে ফেলেছে। খরচা হয়েছে, উশুল নেই। এবার তারা নরম সুরে ধর্ম সহিষ্ণু সুলতানের কাছে ইংরেজ (এবং কিছু ফরাসি) আবেদন জানাল, জাহাঁপনা, আপনি ক্রিস্টিয়ান, ইহুদিদের ধর্মস্থলের মেরামত করে দিয়েছেন, আপনার মহিমা অপার। একবার ভেবে দেখুন যাঁদের জন্য আপনার এই অসামান্য অবদান, তাঁদের, মানে ইহুদি ক্রিস্টিয়ান তীর্থযাত্রীদের পুণ্য শহর জেরুসালেমে পৌঁছুনোর পথে অনেক ঝকমারি, জাহাজ থেকে নেমে দুর্গম গিরি পার হতে হয়। সেই সব তীর্থ যাত্রী যদি জাফা (তেল আভিভের পত্তন এই মাত্তর ১৯০৯ সালে ; জাফা অতি প্রাচীন শহর) বা হাইফাতে জাহাজ থেকে নেমে ট্রেন ধরে সিধে জেরুসালেম যেতে পারেন তাহলে যাত্রী সংখ্যা ও সুলতানের তিজউরিতে অর্থাগম বাড়ে (জিজিয়া কর অবিশ্যি ততদিনে উঠে গেছে)। এই কাহিনি শুনে সুলতানের উজির বললেন হঠাৎ ইংরেজ ফরাসি এ তল্লাটে কেন হাজির হলেন তাঁরা নিজের রাজত্ব সামলান গিয়ে। এ হলো গিয়ে ১৮৬৫ সালের কথা।"
পবিত্র ভূমি ৮ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
ক্লাস টেনে পড়ার সময়ে বরানগরের স্কুল থেকে বীণা সিনেমায় টেন কমান্ডমেনটস সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইংরেজি প্রায় কিছুই বুঝিনি ; দুর্দান্ত সব সিনারি মনে থেকে গেছে। বাইবেলের সঙ্গে সেই আমার প্রথম পরিচয়। সে কথা দাভিদকে বলার মানে হয় না। এই গ্রন্থের যে নতুন পুরনো দুটো আলাদা খণ্ড আছে জানি কিন্তু কিছু মানুষ কেবল প্রথমটা পড়েন,দ্বিতীয়টা পড়া মানা আর কিছু মানুষ দুটোই পড়েন সেটা জানতে বহু বছর লেগে গেছে। জ্ঞানোদয় হলো এক ইনটার ব্যাঙ্ক কুইজ কনটেস্টে। আমার দলে গুরকান এন্সারি, তুর্কি এবং জশুয়া কোহেন। একটা প্রশ্ন এলো – যিশুর ভাইয়ের নাম কি? জশের সাহায্য খুঁজলাম। সে বললে বস, আমি তো কেবল আমাদের বাইবেলটা পড়েছি! অন্যটা নয়!
পবিত্র ভূমি ৯ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৫ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৪
মুশকিল হলো ঈশ্বর কাকে কোন কথা দিয়েছেন তার তোয়াক্কা না করে সিদন, টায়ার থেকে (আজকের সাইদা, টায়ার- লেবানন) গাজা অবধি সাড়ে ছশো মাইল ব্যাপী সমুদ্রতীর বরাবর বহু মানুষ বাসা বেঁধেছেন কয়েকশ বছর আগেই। তাঁরা ব্যবসা বাণিজ্যে অত্যন্ত তুখোড়, তাঁদের নৌকো, জাহাজ পাড়ি দেয় বন্দরে বন্দরে। ফিলিস্তিনরা (যা থেকে প্যালেসটাইন শব্দটা এসেছে) সমুদ্র বাণিজ্যে অত্যন্ত সফল, উন্নত জাতি। গাজা ফিলিস্তিনদের বৃহত্তম বন্দর।হঠাৎ দক্ষিণ পশ্চিমের মরুভূমি থেকে হাজির হলেন অজস্র ইহুদি – এটা নাকি তাঁদের প্রতিশ্রুত দেশ। এখানে তাঁরা ডেরা বসাবেন। কে দিয়েছে এই প্রতিশ্রুতি? কোন ঈশ্বর? এ কোন আবদার? বললেই ছেড়ে চলে যাবেন তাঁদের বাপ পিতেমোর ভিটে?
পবিত্র ভূমি ১০ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ | ১১১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
উনিশশ আটচল্লিশে প্যালেস্টাইনের তিন ভাগ করে দিয়ে ইংরেজ বীরদর্পে পশ্চাদপসরণ করে – ভাগ ঠিক সমান হয় নি, খানিকটা পেলো ইসরায়েল, খানিক প্যালেস্টাইন এবং ইস্ট জেরুসালেম সহ বাকিটা জর্ডান। তারপরে যে আরব ইসরায়েলি লড়াই হলো (ইসরায়েল যাকে বলে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ) তার শান্তিচুক্তি অনুযায়ী নতুন করে এক সীমারেখা টানা হয় – আরমিসটিস লাইন অফ ১৯৪৯। সাতষট্টির যুদ্ধে জর্ডান হারাল তার অংশ, প্যালেস্টাইন পরিণত হলো ইসরায়েলের অঙ্গরাজ্যে। রাষ্ট্রসংঘের আধ ডজন রেসোলিউশন সত্ত্বেও ইসরায়েল সাতষট্টি সালের স্ট্যাটাস কো বজায় রেখেছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক কথাটা বারবার শোনেন - সেটা ওই জর্ডান নদীর পশ্চিম কুল বলে, পূর্বে জর্ডান দেশ।
ভোলবদল : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
একদিন খাবার টেবিলে আলাপ হল পেটার এবং ডাগমারের সঙ্গে, তারা হামবুর্গ থেকে এসেছে। এমনি ছুটিতে কতজনের সঙ্গেই তো পরিচয় হয় কিন্তু এরা একটু অন্য রকম। ডিনারে পেটার আসে স্যুট পরে, ডাগমার ককটেল ড্রেসে। পরে দেখা গেলো বিচেও তারা রীতিমত ব্রানডেড পোশাক পরে। যুদ্ধের পরে ইয়েন্সের বাবা মা প্রায় এক বস্ত্রে লাইপজিগ থেকে মিউনিক আসেন, অনেক কষ্টে সৃষ্টে একমাত্র ছেলেকে পালন পোষণ করেছেন। ইয়েন্স আঠার বছর বয়েসে ব্যাঙ্কে শিক্ষানবিশি (আউসবিলদুং), তারপর ব্যাঙ্কে কাজ। ইয়েন্স কাজের বাইরে কদাচিৎ স্যুট পরে -মনে প্রশ্ন জাগল এখানে এই ক্রোয়েশিয়ার রেসরটে পেটার স্যুট পরে কেন? আনেলিজে লক্ষ্য করেছে তাদের কথা বার্তার স্টাইল উঁচু মাপের, কেতা দুরুস্ত। সকলকে আপনি বলে, করমর্দন করার কালে ঠিকমত মাথাটি ঝুঁকিয়ে দেয়।
পবিত্র ভূমি ১১ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ | ১৩৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
শহরে ঢুকে বিজয়ী জেনেরাল দেখেন একটা এলাকা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। জানতে চাইলেন, এটা কি? এর পিছনে কি আছে? তাঁকে বলা হলো ‘ঘেটো*। এখানে শহরের দশ হাজার ইহুদি বাস করে। ভেনিসের নাগরিকদের পাশাপাশি তাদের বাস করা মানা’। তিনি বললেন ‘তারা ভেনিসে বাস করে কিন্তু নাগরিক নয়? কামান দিয়ে উড়িয়ে দাও এই দেওয়াল, এখুনি’। দু মাসের মধ্যে ইহুদিদের একঘরে বা আলাদা করার রীতি বর্জিত হলো চিরতরে। ১৭৯১ সালের ফরাসি সংবিধানে ইহুদিদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেওয়া হয়েছিল, ইউরোপে সেই প্রথম।
পবিত্র ভূমি ১২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ১০৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কফির কাপ হাতে নিয়ে রিচারড গোল্ডস্টোনের সামনে হাজির হয়ে সুপ্রভাত জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছেন? বললেন কেপ টাউন। ইতিমধ্যে রোদিকা যোগ দিয়েছে বলতে শুরু করলো সে তাঁর রিপোর্ট পড়েছে, তার মনে হয়েছে অনেক স্পষ্ট কথা সেখানে বলে হয়েছে। বাকি সময়টুকু তিনি আমাদের কথা নিয়ে কাটিয়ে দিলেন, আমরা কে, কোথাকার, কখনো দক্ষিণ আফ্রিকা গেছি কিনা। এই সুযোগে জানালাম কাজে কর্মে তো বটেই, এমনকি ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখতে জোহানেসবুরগ গেছি। বিনীত অনুরোধ জানালাম, আপনার সঙ্গে আমার স্ত্রীর ছবি তুলতে পারি কি? তখুনি রাজি হলেন। তারপর আমরা ফ্রাঙ্কফুর্ট, তিনি কেপ টাউনের পথে। রোদিকা বললে কিছু জিজ্ঞেস করাই হলো না! বললাম দুঃখ পাবার কারণ নেই। আমাদের সঙ্গে কথা বললেন এই ঢের। অমন ডাকসাইটে আইনজ্ঞ বলে কথা।
পবিত্র ভূমি ১৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৩ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
যিশু নামের একজন মানুষের কথা খুব শোনা যাচ্ছে। গুজব তিনি পঙ্গুকে সচল করেন, অন্ধকে দৃষ্টিদান করেন, সাতটা রুটি আর কয়েক টুকরো মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার মানুষকে পেট পুরে খাওয়ান। এই বার্তা রটি গেল গ্রামে শহরে, তিনি এবার জেরিকো আসবেন। জাকেউস এক ধনী ব্যক্তি, তখন জেরিকোর ট্যাক্স কালেক্টর, শহরে বাজারে তাঁকে কেউ পছন্দ করে না। এমন মানুষও কৌতূহলী হলেন- কে এই যিশু? তাঁকে কি আগে ভাগে দেখা যায়? একটা সমস্যা ছিল- জাকেউস মাথায় খাটো। যিশুর ভক্ত গোষ্ঠীর ভিড়ভাট্টার ভেতরে তিনি কি সেই যিশু নামক মানুষটির কাছাকাছি যেতে বা তাঁকে দেখতে পাবেন? জাকেউস একটা শর্ট কাট বের করলেন - শহরের ঢোকার মুখে চৌরাস্তার মোড়ে ছিল একটি সিকামুর গাছ, তিনি সেই গাছে চড়ে বসলেন।
পবিত্র ভূমি ১৫ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ১০৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ঈশ্বর এক্সেল ফাইল খুলে জায়গা জমির চৌহদ্দি আব্রাহামকে দেখিয়ে দিলেন। সেখানে অন্য মানুষজন বাস করছে দীর্ঘদিন- এখন মা কা বা ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে আব্রাহাম এই বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করতে পারেন না। তাঁর লোকবল নেই। ত্রিকালজ্ঞ মুনির মতন ঈশ্বর জানালেন এসব জমি এমনি এমনি পাওয়া যাবে না, লড়কে লেনা হ্যায়। এখন সরজমিন তদন্ত করে যাও, তবে আমি লিখে রেখেছি এ তোমাদের হবে একদিন। তোমার বংশধর লড়াই হত্যা ধ্বংস করে এই কানান দখল করবে, সেটা তোমার একার কাজ নয়।
স্বচ্ছন্দ, নির্লিপ্ত আয়নায় সমকাল : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ০৩ মার্চ ২০২৪ | ১২৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
নিউ ইয়র্কে বলে, ইউ ক্যান টেক দি গার্ল আউট অফ ব্রনক্স বাট ইউ ক্যান নট টেক দি ব্রনক্স আউট অফ দি গার্ল। ভারমুক্ত আমি চলে এসেছি অনেক দূরে ইংল্যান্ডের সারেতে কিন্তু কুণালের লেখা মনে করিয়ে দিল, ‘ইউ ক্যান নট টেক বরানগর আউট অফ মি’। কুণাল আমার চেয়ে অনেক ছোটো হবেন, কিন্তু তিনি আর আমি দেখেছি এক আশ্চর্য উত্তাল সময়কে –দিকে দিকে ছড়ানো লাল আগুনের উত্তাল কলকাতা একাত্তর, সেখানে তিনি অর্থনীতি পড়ছেন, অমর্ত্য সেনের পভার্টি অ্যান্ড ফেমিনের কথা বলছেন আর তুষার রায়! রতন বাবু রোডের, আমাদের তুষারদার ব্যান্ডমাষ্টার অঙ্ক কষছেন ম্যাজিক লুকিয়ে চক এবং ডাস্টার।
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ম্যাসিডোনিয়া ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০২ মার্চ ২০২৪ | ৯৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
মাসিদোনিয়াতে তাঁরা জনসংখ্যার পঁচিশ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি বললেন জনশ্রুতি এই যে মাসিদোনিয়ান সরকার তাঁদের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আলবানিয়ান ভাষা শেখানো হয় না, ছেলে মেয়েদের আলবানিয়ান নাম দেওয়া নিষিদ্ধ, সরকারি দফতরে, আর্মিতে চাকরি জোটে না। ক্লিনটন সরকার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিন্তু আপনাদের জানাতে পারি এটি সম্পূর্ণ অসত্য। মুশকিল হলো প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি এমন সব রাজনৈতিক ইসু তুলে ধরলেন যার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা ছিল না।
এতদিন যে বসেছিলেম : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১৭ মার্চ ২০২৪ | ১৩৬০ বার পঠিত
দু বছর আগে গুরুচণ্ডালির পাতায় কিশোর ঘোষালের আগমন নয় আবির্ভাব হলো। এক বিদ্যুৎচমক। ক্রমশ তিনি আমার হাতে ধরে নিয়ে গেলেন, বর্তমানের আলোয় অতীতকে চেনালেন। সলতে না পাকালে সাঁঝবাতি জ্বলে না। তিনি সেই সলতে পাকানোর পর্বটি দেখালেন সযত্নে। আমার পৃথিবীকে চেনার জানার যে বিশাল ফাঁক ছিল, সেটিকে তিনি অবহিত করালেন, প্রতিটি লেখা পড়ে ভেবেছি – এতো দিন কোথায় ছিলেন?
পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ম্যাসিডোনিয়া ৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৬ মার্চ ২০২৪ | ৭৮৮ বার পঠিত
পাঁচশ বছরের অটোমান রাজত্বে মাসিদোনিয়া কোন রাজ্য (সঞ্জক) ছিল না, ভারদার নদী বয়ে গেছে উত্তর থেকে দক্ষিণে, সেই নদী অথবা প্রধান শহর উস্কুপ (আজকের স্কপয়ে) এর নামেই তার নাম। ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনসের (এন আর সি) প্রশ্ন ওঠে নি, কোনো রাজদপ্তরে পাসপোর্ট জন্মকুণ্ডলীর কাগজ দেখিয়ে প্রমাণ করতে হয় নি, তাঁরা কেউ ঘুসপেতিয়া নন। মাসিদোনিয়ানরা কোন স্বতন্ত্র জনজাতি নয়, আজকের বুলগারিয়া গ্রিস আলবানিয়া সর্বত্র মিলে মিশে বাস করেছেন – তাঁরা সংখ্যালঘু কিন্তু সুলতানের কাছে সবাই প্রজা।
সারেতে থাই নববর্ষ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | স্মৃতিচারণ | ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৮৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
থাইল্যান্ডে দোল নেই। কিন্তু নববর্ষের দিনে আছে জল ছোঁড়াছুঁড়ির খেলা। এপ্রিল মাসে বেজায় গরম। লাওস কামবোদিয়া থাইল্যান্ডের পথে ঘাটে সেদিন জল আক্রমণের ধুম পড়ে যায়; মারো পিচকারি! সেটা ছবিতে মাত্র দেখেছি। আমাদের এই মন্দিরে তার একটা ছোটো এডিশন আছে – এক ভিক্ষু ঝ্যাঁটা দিয়ে সবার মাথায় জল ছড়িয়ে দেন। দুঃখের বিষয় যে থাইল্যান্ড বা লাওসের স্টাইলে আমরা তাঁকে জল কামান দিয়ে আক্রমণ করতে বা তাঁকে পাল্টা ঝাপটা মারতে পারি না! নববর্ষের পরবের অন্য রিচুয়ালগুলি মোটামুটি অনুসরণ করা হয়ে থাকে ন্যাপহিলের অনুষ্ঠানে - যেমন প্রার্থনার পরে ভিক্ষুদের খাদ্য দ্রব্য দান। সকলে আনেন কিছু না কিছু, সার দিয়ে বসে থাকেন দানের জন্য, ভিক্ষু সেটি গ্রহণ করলে পরেই স্থান ত্যাগ করতে পারেন। অল্প বয়েসি ছেলে মেয়েরা বয়স্ক নারী ও পুরুষের পা ধুইয়ে দেন, পিতা মাতার গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক সেটি। পুণ্য অর্জনের আরেকটি পন্থা - বুদ্ধ মন্দির বা স্তূপ নির্মাণে শ্রমদান। মাঠের মধ্যে বালি দিয়ে তৈরি স্তূপ মন্দির আছে, দূরে এক কোনায় রাখা বালির পাহাড়; সেখান থেকে পাত্র ভরে কিছুটা বালি এই নির্মীয়মাণ মন্দিরে পৌঁছে দেওয়াটা একটা সিম্বলিক সহায়তা। নববর্ষের এই দিনে নতুন জামা পরা আবশ্যিক, নিজের বা পরিবারের জন্য অর্থ ব্যয় কম,দান বেশি এবং মদ্যপান বারণ!
স্লোভাকিয়া ২ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৮৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
একদা ইউরোপের মাঝখানে কোথাও বসবাস করতেন স্লাভ জাতি। কালে খাদ্যের অকুলান হলো, নিয়মিত তুরকিক অভিযানে জীবন বিপর্যস্ত–দেড় হাজার বছর আগে ভাগ্য সন্ধানে তাঁরা ইউরোপের তিন দিকে বেরিয়ে পড়লেন। পোল্যান্ডের প্রচলিত লোকগাথা অনুযায়ী তিন স্লাভিক ভাই, লেখ চেখ রুশ গেলেন তিন দিকে–উত্তর দিকে লেখ, পুবে রুশ দক্ষিণে চেখ। লেখ বাসা বাঁধলেন আজকের পোল্যান্ডে (লেখ নামক বিয়ার তাঁর নামকে অমর করে রেখেছে) বেলারুশ; রুশ যেখানে থামলেন সেটি আজকের রাশিয়া, ইউক্রেন (আক্ষরিক অর্থে সীমানা), চেখ ভাই গেলেন দক্ষিণে, আজকের বলকান অবধি। কালক্রমে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করলেন সকলে। পশ্চিমে কেন যান নি তার কোন ব্যাখ্যা পাই নি। হয়তো বর্বর গথ ভিসিগথ জাতির নৃশংস আচরণের কাহিনী শুনেছিলেন অথবা এই তিন অঞ্চলে তাঁরা পেলেন বাসযোগ্য ভূমি; লোভ বাড়ান নি।
স্লোভাকিয়া ৩ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১১ মে ২০২৪ | ১২১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
প্রায় ষাট বছর আগের এই ফলকে বানান অন্য রকম হলেও জওহরলাল নেহরুকে চিনলাম। ইংরেজি বাদে প্রায় কোনো ইউরোপীয় ভাষায় ‘জ’ ধ্বনির সমার্থক কোন অক্ষর নেই। স্লোভাকে ডি জেড দিয়ে সেই ধ্বনি সৃষ্টি করা হয়েছে (জার্মান ভাষায় এই একই ধাঁচে লেখা হয়) কিন্তু নেহরুর পরে যিনি উল্লেখিত,তাঁকে আমরা চিনি অন্য নামে। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধির নাম পরিবর্তন করে তাঁকে গান্ধিওভা বানানো হয়েছে। তাঁরও ছাড় নেই, তাঁকেও পরিচিত হতে হবে স্লোভাক কায়দায়,স্বামীর নামের সাথে ‘ওভা’ যুক্ত হয়ে। বিশ বছর বাদে,১৯৫৮ সালের কার্লোভি ভারি (জার্মান কারলসবাদ,চার্লসের স্নানাগার!) ফিলম ফেস্টিভালে মাদার ইন্ডিয়া ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন নারগিসোভা! এখানে একটু শর্টকাট নেওয়া হয়েছিল,সঠিক আইন মানলে পুরস্কার ফলকে লেখা হতো নারগিস রাশিদোভা (তাঁর বাবার নাম আবদুল রাশিদ) সুনীল দত্তের সঙ্গে ততদিনে বিয়েটা হলে তিনি হতেন নারগিস দত্তভা (প্রসঙ্গত এক মেক্সিকান অভিনেত্রীকে বাদ দিলে কার্লোভি ভারি ফেস্টিভালে নন কমিউনিস্ট দেশের কেউ পাত্তা পেতেন না – নারগিস সেই ট্র্যাডিশন ভাঙ্গেন,এর পরে ১৯৭২ সালে রঞ্জিত মল্লিক ইন্টারভিউ ছবির জন্য বেষ্ট অ্যাকটর এ্যাওয়ার্ড পান)। স্লোভাকিয়াতে ফিল্মের পোষ্টারে,খবর কাগজে,টেলিভিশনে শ্যারন স্টোন হন শারনে স্টোনোভা, মেরিলিন মনরো হয়ে যান মেরিলিন মনরোভা।
স্লোভাকিয়া ৪ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৫ মে ২০২৪ | ৬৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
ব্রাতিস্লাভায় সিটি ব্যাঙ্কের নবীন কর্মী মারেক পটোমা বলেছিল নিজের দেশ না হলে আইস হকিতে স্লোভাক প্লেয়ারদের জায়গা জুটবে না তাই আমরা আলাদা হয়েছি! দেশ ভাগের এর চেয়ে জোরালো যুক্তি আমি অন্তত খুঁজে পাই নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে উইলসন ডকট্রিন মাফিক ইউরোপে স্বায়ত্ত শাসনের যে দাবি উঠেছিল তার ফলে পুরনো অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ বিশেষ মিলে তৈরি হলো চেকোস্লোভাকিয়া, এই মাত্তর ১৯১৮ সালে। ক্যাথলিক ধর্মের প্রাধান্য দুই অঞ্চলে, চেকের সঙ্গে স্লোভাক ভাষা প্রায় ৮৫% মেলে; আমার প্রাক্তন সহকর্মী ইভেতার (এখন আবু ধাবিতে) কাছে গল্প শুনেছি – অফিসে সে কিছু নিয়ে আলোচনা করছে এক চেক কলিগের সঙ্গে। আরেক স্থানীয় সহকর্মী জিজ্ঞেস করে, তোমরা কোন ভাষায় কথা বলছ? ইভেতা বলে, নিজের নিজের মতন, আমি স্লোভাক এবং উনি বলছেন চেক! আমাদের হিন্দি/উর্দু সংলাপের মতন।
স্লোভাকিয়া ৬ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২২ জুন ২০২৪ | ৬৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
কোন একদিন মারটিনে যাবার ইচ্ছে থেকে গিয়েছিল তার সুযোগ একদিন জুটল। কোসিতসে থেকে ব্রাতিস্লাভা যাবার পথে নেমেছিলাম, খানিকটা কাজে খানিকটা কৌতূহলে।
মারটিনে পথ চলতে চোখে পড়ে বাড়ির গায়ে আঁকা প্রকাণ্ড মুরাল। তারা হয়তো কোন গভীর অর্থ বহন করে, জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে নি। দক্ষিণ জার্মানির ব্যাভেরিয়াতে দেখেছি এমনি দেওয়ালজোড়া স্থির চিত্র, যাকে জার্মানে বলে হাওয়াই চিত্রকলা (লুফতমালারাই)। তবে তার সাইজ অনেক ছোটো। হোহে তাতরা বা উঁচু তাতরা পর্বতের নাম শুনেছি জার্মানিতে। সেটা যে ঠিক কোথায় জানতাম না, সে আমলে ফ্রাঙ্কফুর্টের পূর্বে কোথায় কি আছে জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। পূর্ব ইউরোপে আসা যাওয়া শুরু হলে জ্ঞান বাড়লো - আল্পস থেকে যে পর্বতমালা শুরু হয়ে টানা হিমালয়ে গিয়ে মিশেছে ইউরোপে তার নাম কোথাও উলিয়ান আল্পস (স্লোভেনিয়া), তাতরা (স্লোভাকিয়া), কারপাত (রোমানিয়া)। এই অখণ্ড শৈলশ্রেণি স্লোভাকিয়ার উত্তরে পোল্যান্ডের সঙ্গে সীমানা নির্দেশ করে। পোলিশ অংশে আছে জাকোপানে যেটি পোল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কি রেসর্ট, দীর্ঘদিনের পোলিশ বান্ধবী ক্রিস্টিনা প্রতি বছর স্কি করতে যায়। সেই তাতরার দর্শন পেলাম দক্ষিণ প্রান্ত থেকে। মারটিন শহর তার ছায়ায়, তুরেতস নদীর কোলে আশ্রিত (জার্মান নাম তুরতস সাঙ্কট মারটিন) পথ চলতে দূর পাহাড়কে কাছের মনে হয় সঞ্জীবচন্দ্রের পালামউ ভ্রমণ মনে পড়ে। আরও মনে পড়ে জলপাইগুড়ির দিনগুলি – প্রসন্ন দিনে দিগন্তে হিমালয়ের রেখা, কাঞ্চনজঙ্ঘার ইশারা।
স্লোভাকিয়া ৭ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৬ জুলাই ২০২৪ | ৬৫৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ভোরের ফ্লাইট। যখন শহরে ঢুকছি তখন আবছা আলো। ট্যাক্সির জানলা থেকে দেখি আট তলা দশ তলার অ্যাপারটমেনট, ধূসর বর্ণ, বহুকাল দেয়ালে কোন রঙের পোঁচ পড়ে নি। বাতাসে টু স্ট্রোক এঞ্জিনের ফেলে যাওয়া আধ পোড়া পেট্রোলের গন্ধ। আমার হাতের চিরকুটে লেখা ঠিকানা দেখে ট্যাক্সি আমাকে যেখানে নামিয়ে দিলো সেটা একটা টিপিকাল কমিউনিস্ট আমলের পাঁচ তলা অ্যাপারটমেনট ব্লক। কাচের জানলা হয়তো পঞ্চাশ বছরের পুরনো। দু পাশে ফ্ল্যাট, মধ্যিখানে ওপরে যাওয়ার সিঁড়ি। নিচের তলায় একটি দরোজার সামনে লাইন দিয়ে মোটামুটি নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কিছু মানুষ। কেউ কেউ ধূমপানে রত। এতো বছর সিটি ব্যাঙ্কে কাজ করছি ততদিনে অন্তত পঞ্চাশটা দেশে সিটি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ দেখেছি তার সঙ্গে এ একেবারে মেলে না। ঠিক জায়গায় এসেছি কিনা সন্দেহ হলো।
দোতলায় যেতে হবে জানা ছিল (প্রিভে প্রশদিয়ে)। মাঝের সিঁড়ির দরোজায় বেল নেই, পরিচিতি জানানোর ওঠে না। সে সিঁড়ির চেহারা বড়ো বাজারের কোন পুরনো বাড়ির মতো , দেওয়ালে পানের পিকটাই যা নেই। দোতলায় উঠে চমকাতে হলো। হলদে রঙের একটা ঝাঁ চকচকে দরোজার ওপরে সিটি ব্যাঙ্ক লেখা দেখে। এমনকি এন্ট্রি ফোন! বেল টিপলে এক মহিলার কণ্ঠ শোনা গেলো। তিনি ঘণ্টি বাজিয়ে আমাকে দরোজা ঠেলতে বললেন -একেবারে স্টেট অফ দি আর্ট ! যিনি দেখা দিলেন তাঁর নাম ইওয়ানা, এতক্ষণ তিনি আমার পথ দেখছিলেন বলে জানালেন। এক নজরেই বোঝা গেলো এটি একটি স্ট্যান্ডার্ড তিন কামরার কমিউনিস্ট কালের ফ্ল্যাট যার তুল্য দেখেছি সারা পূর্ব ইউরোপে। ঢুকতেই বাঁ হাতে টয়লেট, ডাইনে রান্নাঘর, হলের তিন দিকে তিনটি ঘর । উত্তরে টালিন বা সেন্ট পিটারসবুরগ ( পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি প্রথম পর্ব পশ্য, ছবি সহ) থেকে দক্ষিণে স্কোপয়ে অবধি সমস্ত অ্যাপারটমেনট একই বিশ্বকর্মার প্ল্যান বা মর্জি মাফিক তৈরি। তফাৎ শুধু ঘরের সংখ্যায়, দুই বা তিন । তবে এ ফ্ল্যাটের অন্দরের চাকচিক্য আছে- সিটি ব্যাঙ্ক বলে কথা ! যদি লন্ডন থেকে আমাদের ডেপুটি সিইও ডেভিড গিবসন হঠাৎ এসে হাজির হন , তাঁর কাছে মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না। বাইরেটা দেখেই অবশ্য তিনি মূর্ছা যেতে পারেন।
চেকিয়া এক : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২০ জুলাই ২০২৪ | ৭২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আলাপ জমে গেলো ফ্রান্তিসেকের সঙ্গে। টি টুয়েন্টি নামক দানবের দুরাচার শুরু হবার আগে টেস্ট ক্রিকেটের মাঠে গল্প বেশি জমতো - অনেকক্ষণ যাবত মাঠে কিছুই ঘটে না, স্যাকরার ঠুক ঠাক চলে ব্যাটে বলে। ফুটবলের মাঠে সেটা সম্ভব নয়। তবু খেলার আগে, মাঝে, হাফ টাইমে কিছু কথা। আমরা তাঁকে একাধিক বিয়ারে আপ্যায়িত করেছি, কিছুতেই দাম দিতে দেব না! ভারত ও পূর্ব ইউরোপের ভাইচারা যুগ যুগ স্থায়ী হোক। দুজন ভারতীয়ের সঙ্গে এই ফ্রাঙ্কফুর্টের মাঠে দেখা হবে তিনি ভাবতে পারেন নি! আমার ট্রিভিয়া লাইব্রেরির শ্রীবৃদ্ধির জন্য যত না প্রশ্ন, ভারত সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞানস্পৃহা অনেক বেশি। ততক্ষণে তাঁর টিম আইনত্রাখত ফ্রাঙ্কফুর্টের হাতে বেশ ঝাড় খাচ্ছে, ৩-০ গোলে পিছিয়ে এবং তাঁর মনোযোগ বিভ্রান্ত। তাই প্রস্তাব দিলাম- তিনি যদি চান আমরা একত্র হেঁটে শহরে ফিরতে পারি, এক ঘণ্টার পথ। ট্রামে বেজায় ভিড় হবে। ফ্রান্তিসেক বললেন যদি আমরা তাঁকে ট্রেন স্টেশনের কাছাকাছি অবধি সঙ্গ দিতে পারি তাঁর খুব উপকার হয়, রাতের ট্রেন ধরবেন। সেটাই আমাদের লজিস্টিক, ফ্রাঙ্কফুর্ট হাউপটবানহফের সামনে আমরা বারো নম্বর ট্রাম ধরে বাড়ি ফিরব।
চেকিয়া দুই : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ৭৩৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ইন্টারকমে ফোন করে সেক্রেটারি ক্রিস্টেলকে বলে দিলেন আমার সঙ্গে তিনি আসন্ন অডিট নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত আছেন, কেউ ফোন করে যেন তাঁকে বিরক্ত না করে।
- আপনারা পাবে যখন বিয়ারের অর্ডার করেন, তখন বলেন না ‘আইন পিলস বিটে'?
- হ্যাঁ, মানে সোনালি রঙের যে বিয়ার সেটাই তো, তাকে পিলস বলে।
- পিলস কথাটা এলো কোথা হতে জানেন কি? আমার দেশের প্লজেন শহরের নাম থেকে! দুনিয়া জোড়া বিয়ারের ব্যবসায় এই শহরের নাম জড়িয়ে আছে!
জলে বার্লি ও খামির গেঁজিয়ে বিয়ার বানানোর পদ্ধতিটা অন্তত দশ হাজার বছর প্রচলিত, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো অ্যালকহলিক পানীয়। বিয়ার জলের বিকল্প। মিশরের পিরামিড কর্মীদের বেতনের অংশ ছিল বিয়ার,চার হাজার বছর আগে বিশ্বের অন্যতম আইন প্রণেতা (ল গিভার) হাম্মুরাবির কোডে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিয়ারের বিশেষ ভূমিকা নির্দিষ্ট হয়েছে। রাজা এর উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সামাজিক সম্মান অনুযায়ী দৈনিক বিয়ার বিতরিত হবে ; আমলারা পাবেন পাঁচ লিটার, মজুরেরা দু লিটার।
বিয়ারের ইতিহাসে বোহেমিয়ার বিশিষ্ট অবদান আছে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে, চারটি বিভিন্ন জলধারার সঙ্গমে প্রতিষ্ঠিত ছোট্ট শহর প্লজেনের(জার্মান পিলসেন) আড়াইশো নাগরিককে বিয়ার বানানোর অধিকার দেন বোহেমিয়ান রাজা ওয়েনসেসলাস। প্রাগ শহরের মধ্যমণি আজ ওয়েনসেসলাস চত্বর; তিনি চেকিয়ার রক্ষক সন্ত -প্যাট্রন সেন্ট। কালে কালে নাগরিকরা গড়ে তোলেন আমাদের আমূল দুধের মতন এক বিয়ার সমবায়! কিন্তু সে বিয়ার ক্রমশ মুখে দেওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি একদিন সাড়ে তিন হাজার লিটার বিয়ার প্লজেন শহরের মাঝে এক নর্দমায় ঢেলে দিয়ে নগর পিতারা কোন সুযোগ্য বিয়ার জাদুকরের সন্ধানে গেলেন ব্যাভেরিয়া।
বিয়ার বানানোয় ব্যাভেরিয়ার বিশেষ সুনাম ছিল -তাদের এক রাজা ১৫১৬ সালে শুদ্ধতার আইন প্রচলন করেন-সে মোতাবেক জল বার্লি এবং হপ (এক ধরনের গাছের ফল যা থেকে বিয়ারের তিক্ততা আসে) ছাড়া বিয়ারে কিছুই মেশানো যাবে না, কোন কেমিক্যাল তো নয়ই। ইস্ট অথবা খামির সম্বন্ধে কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নি এই বিধানে। ব্যাভেরিয়াতে সন্তরা বিয়ার গ্যাঁজাতেন গোপনে পাহাড়ের গুহায় অর্থাৎ তাঁদের পদ্ধতি ছিল কোল্ড, বটম ফারমেনটেশান যার স্বাদ অতি উত্তম কিন্তু বর্ণ ছিল ঘোলাটে। প্লজেনের বিয়ার গোয়েন্দারা ভুলিয়ে ভালিয়ে অর্থের প্রলোভন দিয়ে উনত্রিশ বছরের ইওসেফ গ্রোল নামের এক ব্যাভেরিয়ান সাধুকে তিন বছরের চুক্তিতে পাকড়াও করে নিয়ে এলেন। সাল ১৮৪২। খানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ইওসেফ গ্রোল সোনালি রঙের এক অসাধারণ পানীয় প্রস্তুত করলেন – তার নাম দেওয়া হলো প্লজেন্সকি প্রাজদ্রোই। অস্ট্রিয়ান হাবসবুরগ সম্রাটের আমলে প্লজেন শহরের জার্মান নাম অনুযায়ী নগর পিতারা এই বিয়ারের নাম দিলেন পিলসনার উরকেল (পিলসেন আদি উৎস)!
চেকিয়া তিন : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৭ আগস্ট ২০২৪ | ৭২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
সীমানা পেরিয়ে সেথায় যাওয়ার সুযোগ জুটলো এতদিনে! সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে অরটউইন ও আমি হেনরি ফোরডের প্রপৌত্রের কারখানায় বানানো একটি গাড়ি চড়ে যাত্রা শুরু করি এক দেশের পানে যার নাম চেকোস্লোভাকিয়া থেকে সদ্য চেকিয়া নামে পরিবর্তিত হয়েছে।
গাড়িতে বেশিদূর যাওয়ার আগে, একটু অতীতে ফিরে যেতে হবে।
আমার কাছে বোহেমিয়া, চেকিয়া জড়িয়ে আছে একটি পরিবারের সঙ্গে। রাজনীতির বলি হয়ে কয়েকশ বছরের বাসভূমি হারানোর সে কাহিনি বইয়ে পড়ি নি, শুনেছি হের রুডলফ ক্রাইবিখের কাছে। তখন জানতাম না একদিন সেই দেশ সেই মাঠ সেই পথ দেখব নিজের চোখে, অনুমান করতে চাইব ছিন্নমূলের বেদনা। কাজটা সহজ নয়।
কয়েকশ বছর আগে আমাদের পূর্ব পুরুষ রাজস্থান থেকে সুদূর পূবে এই বাংলায় বাসা বেঁধেছিলেন। তাঁদের উত্তর পুরুষ আজও পুজোর সময়ে গ্রামের আটচালায় বসে নক্ষত্রের পানে চেয়ে তাদের স্মরণ করতে পারে। মোড়ল পুকুর, বেলে মাঠ, শাঁখের চক আমি তেমনই দেখেছি যেমন আমার বাবা দেখেছিলেন। র্যাডক্লিফের ছুরিতে যখন পূর্ব বাংলা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন, আমাদের পরিবারের গায়ে পড়েনি তার কোন আঁচ। আমাদের সেই পুকুর মাঠ বাগান থেকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অন্তত যতদিন না কেউ কাগজ চাইবেন বা বলবেন আপনারা তো বিদেশি।
চেকিয়া ৪ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ৬৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
উইল আমাকে নিয়ে গেলো পুরনো প্রাগের মাঝখানে। যে ইহুদি পরিবারের বাড়িতে তেসরা জুলাই ১৮৭৫ সালে শিশু কাফকার জন্ম গ্রহণ করেন, সেটি একদা তৈরি হয়েছিল প্রাগের সেন্ট নিকোলাস গিরজের ক্যাথলিক পুরুতদের বসবাসের জন্যে! ১৮৯৭ সালে ইহুদি ঘেটোর অবসানের সময় সে বাড়ি ভাঙা পড়ে, আজ কেবল মাত্র তার পুরনো দুয়োরটা দেখা যায়। অতএব কাফকার আদি বাড়ি আপনি দেখতে পাবেন না। তাতে কি, প্রাগের সবচেয়ে প্রখ্যাত সন্তানের স্মরণে এই বছর বিশেক আগে পৌরসভা সেখানে বানিয়েছেন কাফকা স্কোয়ার (নেমেসতে ফ্রান্তসে কাফকি)। একদা সেন্ট পিটারসবুরগে আনার সঙ্গে ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট উপন্যাসে দস্তয়েভস্কির কল্পিত রাসকোলনিকভের বাড়ি, উপাসনার গিরজে খুঁজেছিলাম। উইলের সঙ্গে হাঁটলাম কাফকার স্কুলের পথে - প্রথম বিদ্যাপীঠ ডয়েচে কনাবেনশুলে বা কিন্ডারগার্টেন, আজকের মাসনা নামক পথে। মাইসলোভার বাড়ি থেকে কিন্সকি পালাস চত্বরের মধ্যে আলটষ্টেডার ডয়েচে গিমনাসিউম মিনিট কয়েকের পথ। আট বছর বাদে কাফকা গেলেন কার্ল ফারদিনান্দস ডয়েচে ইউনিভেরসিতেতে। সে সময়ে বোহেমিয়ান কার্ল বিশ্ববিদ্যালয় দু ভাগে বিভক্ত - কার্ল ফারদিনান্দে পড়ানোর মাধ্যম জার্মান, অন্যটিতে চেক মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়। সেটিও হাঁটা পথ মাত্র। ধর্ম চর্চা প্রাগের সিনাগগে – তার নামটি বিচিত্র। নতুন-পুরনো সিনাগগ! সারা ইউরোপের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সেখানে সবচেয়ে দীর্ঘদিন প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিতা হ্যারমানের কঠোরতম শাসন উপেক্ষা করে যুবক কাফকা প্রতি শনিবার সিনাগগে হাজরে দিতে অস্বীকার করেন। পিতার সঙ্গে কাফকার নিরন্তর মতভেদ তাঁর ব্রিফে আন ডেন ফাটার (বাবাকে চিঠি) পুস্তকে স্পষ্ট।
চেকিয়া ৫ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
মায়া জানতে চাইলে এই একটা সাদা মাটা ঘরে কি দেখার আছে?
- মায়া, চারশ বছর আগে এখানে দুই বিবাদী পক্ষের একটি মিটিং হয়েছিল।
- কি নিয়ে বিবাদ?
- ধর্ম এবং জমি।
- দুটো আলাদা ধর্মের লড়াই?
- না, ধর্মটা একই, ক্রিসটিয়ানিটি। প্রভু এক, সেই যিশুখ্রিস্ট, কিন্তু পক্ষ দুই – ক্যাথলিক, যারা পোপকে মানে আর প্রটেস্টান্ট যারা বড়ো তরফের পুরোহিতকে মানতে রাজি নয়। তাদের ভজনালয় আলাদা হয়ে গেছে, ফলে গিরজের সম্পত্তিও ভাগ হচ্ছে। এখানে সেই নিয়ে বিতণ্ডা হচ্ছিল কিন্তু দু পক্ষ সহমত হলেন না কাজেই এক পক্ষকে বেরিয়ে যেতে হলো।
- সে তো হতেই পারে।
- আচ্ছা ধরো তোমাদের উওকিং হাইস্কুলে কিছু ছেলেমেয়েকে যদি শিক্ষক ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন, তারা কি ভাবে যাবে?
- কেন, দরোজা দিয়ে! শাস্তি হিসেবে বারান্দার এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকবে।
- ঠিক। কিন্তু এখানে তা হয় নি। ক্যাথলিক হাবসবুরগ রাজার দুই সম্মানিত প্রতিনিধি রাজকীয় চিঠি এনে বললেন ক্যাথলিক জমিতে প্রটেস্টান্ট গিরজে বানানো যাবে না। শুনে প্রটেস্টান্ট বোহেমিয়ান কাউন্ট’রা ক্ষিপ্ত হয়ে দুই রাজপ্রতিনিধি ও তাঁদের সেক্রেটারিকে ওই জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলেন। এর নাম ডিফেনেসট্রেশন অফ প্রাগ*। এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, জানলা দিয়ে মানুষ ছোঁড়ার অগণতান্ত্রিক কায়দা প্রাগ ও বোহেমিয়া থেকে আগেও ঘটেছে। নিচে নেমে গিয়ে দেখাবো ঠিক কোনখানে তাঁরা ভূপতিত হন।
- পতন ও মৃত্যু?
- না, এই উচ্চতা থেকে পড়েও তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান! ক্যাথলিকদের মতে মাতা মেরি তাদের রক্ষা করেন- ফলে হাওয়ায় ভেসে এই তিন জন সুস্থ দেহে নিচে নেমেই ভিয়েনা মুখে পালান। প্রটেস্টান্ট মত অনুযায়ী তাঁরা এই টাওয়ারের গা দিয়ে গড়িয়ে পড়েন এক অশ্ববিষ্ঠা স্তূপে যা বহুকাল কেউ পরিষ্কার করে নি – ফল সফট ল্যান্ডিং! যে যেটা মানবে।
চেকিয়া ৬ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
পোল্যান্ডের একটি গ্রামে কিছু পোলিশ ব্যাংকারকে জড়ো করে আমরা পশ্চিমি মুক্ত অর্থ ব্যবস্থার যে ঢক্কা নিনাদের সূচনা করেছিলাম সেটি নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হয়। স্টচনিয়া গদিনিয়া নামক এক প্রায় দেউলে সরকারি জাহাজ নির্মাতার জন্য সিটি ব্যাঙ্ক যে সামান্য এক কোটি ষাট লক্ষ ডলার বাজার থেকে তুলতে পেরেছিল, সেটিকে পূর্ব ইউরোপের প্রথম আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ডিলের সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে। সেটা ১৯৯৪।
পশ্চিমের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশে অচেনা বাণিজ্য সংস্থায় কিছু ব্যাঙ্ক আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ডলার লগ্নি করার সাহস দেখালেন; আমার উন্মাদনা তখন তুঙ্গে, ফাইনান্সিয়াল টাইমস থেকে গ্রাহাম বওলির ফোন পেয়ে রীতিমত গর্বিত বোধ করি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমরা কিভাবে এই ডিলের ফি নির্ধারণ করেছি। তুলনামূলক দর বা মার্কেট রিডের কোন প্রশ্ন ওঠে না কারণ এ ধরণের ঋণের আয়োজন কখনো হয় নি।
বলতে পারতাম আঙ্গুল গুণে। বলতে হলো বাজারে কোন ডিল না হয়ে থাকলেও আমরা কিছু এমপিরিকাল তথ্যের সহায়তা নিয়েছি। সেটা একেবারে বাজে কথা। ভিত্তিহীন। বাট হু কেয়ারস!
এদিকে আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাটা যে কি, কিভাবে ঘটল সে সব না বুঝেই চতুর্দিকে প্রশংসা কুড়োচ্ছেন, পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানো হচ্ছে। পাবলিকের ধারণা আমরা কোন নতুন স্বর্ণ খনির সন্ধান পেয়েছি। স্বাভাবিক। পশ্চিম ইউরোপে মন্দার বাজার বাড়িঘরের দাম কম, শেয়ার বাজার অতল জলের সন্ধানে ধাবিত ; সেই কিছু বাঁধাধরা খদ্দের, দু পয়সা সুদ বাড়ালে তারা চোখ রাঙ্গাবে। তাই ছাড়িয়া নিশ্বাস, যতো বকরা পুবের মাঠে এই তাদের বিশ্বাস। কিন্তু ব্যাঙ্কের ঋণ যারা মঞ্জুর করেন সেই সব গুরুরা সেটা মানলে তবেই না তাঁরা সে মাঠে নামতে পারেন।
চেকিয়া ৭ : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : ইতিহাস | ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ৪৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
মায়াকে সংক্ষেপে জানালাম চেক আলফাবেটে যদিও অক্ষর বেয়াল্লিশটি, স্বর বর্ণ সাতটি, তারা এই সীমিত স্বর বর্ণগুলি অনেক ভেবে চিন্তে খরচা করেন, যেমন মৃত্যুর প্রতিশব্দ Smrt, শোনায় স্মরত্। এর পিছনে মুখের ব্যায়াম ছাড়া আর কোন যুক্তি আছে জানি না। BRNO উচ্চারণ বরনো অথবা ব্রনো। জার্মানরা অবশ্য এর একটা সহজ ভার্শন রেখে গেছে, ব্রুইন। এই রাজ্যের নাম মোরাভিয়া, চেকে মোরাভা, সেখানে ভাওয়েল আছে মাঝে ও শেষে। জার্মান আরও সহজ, মেহরেন।
মেয়েকে আরেকটা ট্রিভিয়া শোনানোর সুযোগ ছাড়া গেলো না।
চেক ভাষায় আনো (ano, শুনলে নো মনে হয়) হলো হ্যাঁ! আরেকটিমাত্র ইউরোপীয় ভাষায় এমনি গোলমেলে ব্যাপার আছে - গ্রিকে নে মানে হ্যাঁ!
ব্যবসায়ের নামে পূর্ব ইউরোপ বেড়ানোর দিন ফুরিয়েছে। ভিয়েনায় আমার অনাদি ব্যাঙ্কের বোর্ড মিটিং সেরে গাড়ি ভাড়া করেছি চেক সন্দর্শনের বাসনায়। প্রথম স্টপ ব্রুইন, ভিয়েনা থেকে মাত্র একশ মাইল। গাড়িতে বা ট্রেনে দেড় ঘণ্টা (ভাড়া আটশো টাকা!) ইতিহাসে পড়া হাবসবুরগ সাম্রাজ্যের দিগন্ত খুলে যায় চোখের সামনে, তাকে সত্বর চেনা হয়ে যায়। ভিয়েনার শোয়েখাত হাওয়াই আড্ডা থেকে বেরিয়ে শহরে যাবার পথে নির্দেশিকা চোখে পড়ে – এই দিকে প্রাগ, ব্রুইন,ওই বুদাপেস্ত, জাগ্রেবের রাস্তা- হাবসবুরগ রাজত্বের পুরনো জেলা সদর! এককালে কাঁটাতার, ওয়াচ টাওয়ার ছিল এখন সীমানা অবধি নেই। চেনা অচেনা জায়গা পার হয়ে যাই, এমনি হঠাৎ কখন পার হয়েছি আর্কডিউক ফ্রান্তস ফারদিনান্দের স্ত্রী সোফি ফন হোহেনবুরগের পৈত্রিক জমিদারি।
চেকোস্লোভাকিয়া নামের দেশ কোন কালে ছিল না; ছিল কয়েকটি রাজ্য বোহেমিয়া, মোরাভিয়া, চেক সাইলেসিয়া, আপার হাঙ্গেরি (আজকের স্লোভাকিয়া), আটশ বছর পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য, তারপর হাবসবুরগ এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান রাজত্বের (১৮৬৭-১৯১৮) অংশ। আমরা বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়াকে বেশি চিনি, এদের নাম প্রায় একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে থাকে। বোহেমিয়া আয়তনে বড়ো, প্রাগ তার রাজধানী, ব্যাভেরিয়ার সঙ্গে গায়ে লাগা, জার্মান ভাষা সংস্কৃতি ও শিক্ষার পীঠস্থান; মোরাভিয়া আজকের চেক রিপাবলিকের এক তৃতীয়াংশ, রাজধানী বরনো, চেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর,ইউরোপের ষাট নম্বরে।
হাঙ্গেরি এক : হীরেন সিংহরায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১০ নভেম্বর ২০২৪ | ৫৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
নয়ের দশকের প্রারম্ভ থেকে পূর্ব ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলির শিল্প বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশ্বের বাজারে অর্থ সংগ্রহের অভিযানে সিটি ব্যাঙ্ক ছিল পথিকৃৎ। আমার ডায়েরিতে তাই বারে বারে আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণ কেনা বেচার কথা এসেছে । প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঋণ গ্রহীতা উন্নয়নশীল দেশের বাসিন্দা আর ঋণ দাতা অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশের লগ্নিকারক; আজকে যাকে নর্থ সাউথ ডিভাইড বলা হয়ে থাকে (পরে আমরা সাউথ সাউথ বা গ্লোবাল সাউথকে একত্রিত করেছি , যেখানে এক উন্নয়নশীল দেশ অন্য দেশে অর্থলগ্নি করেছে )। সে সময়ে আমরা উত্তরের ধন দক্ষিণে বণ্টন করেছি, অবশ্যই উপযুক্ত সুদ এবং মানানসই পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। দেশ কাল ও খদ্দেরের ক্রেডিট রেটিং ভেদে এই বাণিজ্যের খানিকটা ইতর বিশেষ হয়; বদলে যায় সুদের হার, পারিশ্রমিকের বহর ।