রাজনীতি ও যৌনকর্মী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ মে ২০১৯ | ২৯৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৯
আদিম এই পেশাটিতে ঠেলে দেবার পেছনে যদিও দারিদ্র, বিশ্বাসঘাতকতা, ঘর বাঁধবার দুস্তর স্বপ্ন, যা মরিয়াও মরে না-- এইগুলি এবং হিউম্যান ট্রাফিকিং প্রায় একশ পার্সেন্ট দায়ী, তবু কাঁচা পয়সার প্রাবল্য একটা বড় ব্যাপার। অনেক মেয়েই সেই লোভ কাটিয়ে উঠতে পারেনা। আর পুনর্বাসনের নামে তার সামনে যেসব প্রকল্প রাখা হয়, সেগুলোর অবস্থা অতি করুণ। দিনে দশ বার ঘন্টা সেলাই মেশিন চালিয়ে বা বিড়ি বেঁধে সে মাসিক যা ইনকাম করবে সোনাগাছিতে একদিনে তার বহুগুণ বেশি করবে। এই খানে ছোট্ট একটি তথ্য। একজন জনপ্রিয় যৌনকর্মী দিনে গড়ে প্রায় কুড়ি জন খদ্দেরের সন্তুষ্টি বিধান করে। এদের প্রায় প্রত্যেকের টাকায় তার আত্মীয় স্বজন প্রতিপালিত হয়। যেন সব লেডি দস্যু রত্নাকরের জীবনকাহিনী। পাপের ভাগ নয়, টাকার ভাগ চাই।
ডিগিং আদানি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ আগস্ট ২০১৯ | ১৭২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আজ মহামহিম গৌতম আদানির কর্মকান্ডের ওপর নির্মিত ফোর কর্ণারের তথ্যচিত্র ডিগিং আদানি দেখে প্রত্যয় হলো যে এই একটা বিরাট ভুল আমি করেই চলেছি। যেভাবে শকুনের ফিস্টির, মানে পরিবেশ ও মানুষ খাওয়া উন্নয়নের ছবি পরতের পর পরত উঠে এলো স্ক্রিনে, তাতে আমি নিশ্চিত যে এইরকম বহুকেলে ছাপ (লাস্টিং ইমপ্রেশন) রেখে যাওয়া আর কোনো মাধ্যমের পক্ষে বিরল-সম্ভব। যেমন, বেঁটেখাটো গোলগাল ফর্সাপানা একটি লোক, বিন্দুমাত্র হাসলে যার ঠোঁটের দুদিকের কোণ উন্মুক্ত হয়ে থাকে, সেইই হলো সেরা প্রফিটজীবী গৌতম আদানি, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা যার সম্বন্ধে বলেছেন, এমন কোনো কাজ নেই যা সে প্রফিট- মেকিংয়ের জন্য করতে পারেনা। এবার থেকে ধনের দেবতা কুবের আর ঠোঁটখোলা হাসি হাসা আদানি আমার মনে একাকার হয়ে গেল, জেগে রইল শুধু পরমারাধ্য প্রফিট।
অনশনের তিন সপ্তাহ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ২১ মার্চ ২০১৯ | ১২২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
দোলের দিন পাড়ায় প্রভাতফেরি হল। কী সুন্দরী সব মহিলা, সুবেশ পুরুষ, খোল দ্বার খোলের সঙ্গে অভিজাত পদক্ষেপে হেঁটে যাচ্ছেন। যে তরুণের বাইকে চেপে প্রেস ক্লাবে যাচ্ছিলাম সে বলল,দেখছেন রাস্তাও লালে লাল, আর আবীরের গন্ধমাখা। অসাধারণ গদ্য আর কবিতা পড়লাম কিছু। সত্যি অসাধারণ। এমনকি যেখানে ছেলেমেয়েরা অনশনে বসেছে সেখানেও বাঁধানো বেদীর মস্ত গাছে নতুন কচি পাতা। শুধু বাইশ দিনের উপোসে শুকনো মুখগুলোতে বসন্ত অনুপস্থিত। হাতে প্ল্যাকার্ড, রোদ এড়াতে ছাতা আর ফুটপাথে বিছানো ত্রিপলের ওপর ক্ষিদে আর আশাভঙ্গের অভিঘাতে শুয়ে আছেন যারা, তারা এ দেশের হবু শিক্ষক।
পথে এবার নামো সাথী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ মার্চ ২০১৯ | ১০৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
গত ত্রিশ বছরে ভারতীয় শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি বাড়েনি, যদিও তার প্রত্যেক বছর তার গড় উৎপাদনশীলতা বেড়েছে সাত শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে দেশের সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছিল তাদের জন্য একটি ভদ্রস্থ মজুরির ব্যবস্থা করা। তা না করে সরকারি মদতে পুঁজিপতিদের অক্লান্ত চেষ্টা চলছে কি করে স্থায়ী কাজের সুযোগ কমিয়ে সেই কাজগুলোকে ইনফর্মাল বা অসংরক্ষিত ক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া যায়। আরো প্রকটভাবে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে স্থায়ী অস্থায়ী, ঠিকা ও ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের মধ্যে। যদিও এইরকম বেতনবৈষম্য দেশের আইন অনুযায়ী একেবারেই বেআইনী।
একটা শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন পারতো রাশ টেনে ধরতে কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অনেক চেষ্টা করে ট্রেড ইউনিয়নগুলির শক্তি হরণ করা হয়েছে। নিও লিবেরাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সেগুলোর গঙ্গাপ্রাপ্তিই অবধারিত। অথচ দেশজুড়ে শ্রমিক মরণপণ লড়াই দেবার জন্য প্রস্তুত, মারুতি কারখানা, মুন্নারের চা শ্রমিক বা মুম্বাইয়ের সাফাই শ্রমিকরা সেকথা প্রমাণ করে দিয়েছে। কতো প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে তা হয়েছে ! নিও লিবেরাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক পুঁজি চলাচল করে দ্রুত। ভারতে সুবিধে না হলে চীনে বা অন্য কোথাও। ফলে বেশি মিলিট্যান্ট আন্দোলন গড়ে তোলার ঝুঁকি অনেক।
কাশ্মীর-কন্টক : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১১০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
যার হবার কথা ছিল মাথার মণি, সে হয়ে গেল গলার কাঁটা। ভূস্বর্গ কাশ্মীর, তার অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্তিকামী জনগণকে নিয়ে যে কোন রাষ্ট্রের সাধনার ধন হতে পারত। কপালদোষে তাকে নিয়েই গলার কাঁটা বেঁধে যাওয়ার মতো হাঁসফাঁস অবস্থা ভারতের। না পারা যাচ্ছে গিলতে, না ওগরাতে। আর এই দুরবস্থার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের পারস্পরিক অবিশ্বাস, শাসকের ভ্রষ্টাচার, দমন ও শাসিতের মরীয়া বিদ্রোহ, চরমপন্থার জলঘোলা করা এবং অবশ্যই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের লম্বা নাক ঘন ঘন গলানো। দুই দেশই নিজের স্বার্থে যে ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে চলেছে তার নাম কাশ্মীর। তবে এখন আর সে ভূস্বর্গ নয়, রক্তাক্ত, অসন্তুষ্ট এক নরকসদৃশ ঠাঁই যেখানে আত্মঘাতী জঙ্গী নিরাপত্তার ঘেরাটোপ অনায়াসে টপকে বিস্ফোরণে খতম করে দিতে পারে সেনা জওয়ানদের, আবার অন্যদিকে পাঁচশর বেশি নিরপরাধ নাগরিক শিকার হন নির্বিচার পেলেট গানের। তাদের মধ্যে শিশু, নারী, বৃদ্ধ অনেক। মৃত্যু, বিকলাঙ্গতা, অবিশ্বাস, সন্ত্রাস আর ষড়যন্ত্র যেখানে রাজ করে সেই ভূখণ্ডই আজকের কাশ্মীর।
এক ডজন গরু - পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ১০০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
একটি উপকারী অহিংস পশুর ওপর প্রথমে মাতৃত্ব ও পরে দেবত্ব আরোপিত হলে তা হয়ে ওঠে রাজনীতির কান্ডারী দের হাতের অস্ত্র, ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গার কারণ ও আক্ষরিক অর্থেই ভোট বৈতরণী পার হবার মাধ্যম। গোরুর বিবর্তন- ইতিহাসের এই অনুসন্ধান ভক্তিভাব না জাগিয়ে প্রশ্নমুখর ব্যঙ্গের ঝিলিকে চোখ ধাঁধাবে এটাই প্রত্যাশিত। সে দিক থেকে শুভাশিস মৈত্রের "এক ডজন গরু ও অন্যান্য"কে ব্যঙ্গ রচনা বলা যেতেই পারে, কিন্তু সংকলনটি শুধু তাই নয়। তোষামুদে পুঁজি , সমাজ, রাজনীতি ও সুবিধাবাদী ভাঁড়- সকলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে শানিত যুক্তি ও মানবিক বিশ্লেষণের চিরকেলে লড়াইয়ের একটা যুদ্ধ -দলিলও বটে।
কেন্দ্রীয় সরকার এবং তথ্যের অধিকারের আইন সংশোধন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ জুলাই ২০১৯ | ১১৭৬ বার পঠিত
২০০৫ সালে আরটিআই এক্ট বা তথ্যের অধিকারের আইন এদেশে চালু হয়। তার পর থেকে স্বাধীন এবং গুরুত্বপূর্ণ এই আইনের বলে তথ্যের অধিকারকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর অসাধ্য সাধন করা হয়েছে। যেমন আদর্শ হাউজিং সোসাইটি স্ক্যাম। কারগিল যুদ্ধে স্বামীহারাদের জন্য বানানোর কথা একটি ছ' তলা বাড়ি, সেটাই কী করে হয়ে উঠল একত্রিশ তলা প্রাসাদ যেখানে মন্ত্রীমহোদয়রা এবং আর্মি অফিসাররা বিলাসবহুল জীবন কাটাবেন, সেটা তথ্যের অধিকার না থাকলে কোনদিনই ফাঁস হতো না। ঠিক তেমনই 2G কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়া। টেলিকম মন্ত্রকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জালিয়াতির জাল বিছিয়ে প্রায় ২ মিলিয়ন অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে লুট করা হয়। এই আইন না থাকলে এই কেলেঙ্কারি কখনো দিনের আলো দেখতে পেতো না।
অত্যন্ত পরিতাপের কথা যে সাধারণ মানুষের হাত থেকে এই কার্যকরী অস্ত্র কেড়ে নেবার জন্য এবার আটঘাট বেঁধেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এবং তাতে তারা সফল, কারণ এই আইনের সংশোধনী সংখ্যার জোরে সংসদের দুইকক্ষেই পাস করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন দন্ডমুন্ডের কর্তারা।
দলিতদলন পতিতপাবন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ জুলাই ২০১৯ | ১০৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এই দেশের মূল অধিবাসী আদিবাসীদের জমি জঙ্গল রক্ষার্থে নানা আইন থাকলেও এদেরকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা খুব সোজা। প্রথমে ল্যান্ড মাফিয়ারা জমির রেকর্ড নিয়ে নানা কারিকুরি করে। হলে ভালো, নয় তো ভয় দেখানো, হাতে অল্প কিছু টাকা গুঁজে দেওয়া, তাতেও কাজ না হলে ভবনদী পার করিয়ে দেওয়া। আর জমি যদি হয় শোণভদ্র এলাকার মতো সোনা উগরানো, মিনেরালসে বোঝাই, তাহলে তো যা খুশি তাইই করবার অধিকার জন্মে যায় উচ্চবংশীয় প্রভুদের। আইনের ফাঁকফোকর এদের ভালোই জানা আছে। সে কারণেই জেলে বিচারাধীন বন্দীদের ৫৩% দলিত আদিবাসী আর মাইনরিটি। অথচ এরা গোটা দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩৯%। জনসংখ্যার অনুপাতকে ছাপিয়ে গরীবের এই জেল ভরার রহস্য আরো একবার উন্মোচিত করল শোনভদ্র ম্যাসাকার।
ধর্ষণ এবং আমরা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৩৫১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৫
ধর্ষণ বলতে যেহেতু আমরা পুরুষ কর্তৃক অনিচ্ছুক নারীদেহের দখল নেওয়া বোঝাচ্ছি, পুরুষের মনোভাব এবং চিন্তাধারার পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তবে সে কতো যুগের কতো সাধনার ফল তা জানা নেই । তথাকথিত শিক্ষার দৌড় দেখা হয়ে গেছে মি টুর দৌলতে। অন্তর্জালে যে পরিমাণ রেপ থ্রেট দেখা যায় তাতে মনে হয় মেয়েদের শায়েস্তা করার ঐ একটি পদ্ধতিই আমাদের শেখা। খুবই লজ্জা হয় যখন দেখি রেপিস্টের ধর্ম তুলে সেই ধর্মের নিরপরাধ মেয়েদের ধর্ষণ করবার ডাক দেওয়া হয়। চিত্তশুদ্ধির প্রচেষ্ট জারি থাকুক, আপাতত আর কিছু করতে না পারি রাষ্ট্র প্রশাসন এবং সমাজের ঘাড় নোয়ানোর জন্য আমরা সমস্বরে চিৎকার তো করতে পারব। সমস্ত ট্যাবু ভেঙে ফেলে প্রত্যেকটি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রবল আলোচনা,উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, চেঁচামেচি । ধর্ষণকে ঘিরে থাকা বোবা নৈশব্দকে ভেঙে ফেলে একেবারে অনর্থ করা যাকে বলে। আমরা এখন পরিষ্কার জানি ধর্ষণ শুধু লালসার কারণে হয়না । মেয়েদের ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবার একটি হাতিয়ার এটি।
না-তারকার পুজো -- সপ্তমী ও ফুলকুমারি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ অক্টোবর ২০১৯ | ১৩৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
এই পুজোতে একজনের কষ্টের কথা শুনে যেন চোখের কাজলের মতো আরো ঘোরা কৃষ্ণবর্ণা হয়ে গেলেন দেবী। তার সঙ্গে আমার আলাপ তো বেশি দিনের নয়। তার গায়ের রঙ কুমারী গাছের ছায়ার মতো, বসন্তের শুরুতে যার ঝাঁকড়া মাথা জুড়ে নতুন পাতার রঙ হয় টকটকে লাল। সে মেয়ের চোখেমুখে কষ্টের কালি। স্বামী সন্তান ঘর, সব সে খেইয়ে লিয়েছে গ্য। সে এক আস্ত ডাইন।
পিনাকী মিত্র বললো অন্য মানুষের পুজোর গল্প চাই, তাইতে আমার মনে পড়ল ফুলকুমারি মেঝেনের কথা। পুরুলিয়ার ফুলকুমারি। তার হাত ধরে গল্প করার সময় একবারও তো মনে হয়নি সে নাকি এক সব-খাওয়া ডাইন, যার নামে তার গ্রাম তো গ্রাম, আশেপাশের গ্রামগুলিও ভয়ে কাঁপে।
না-তারকার পুজো -- সোনা-অষ্টমী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ অক্টোবর ২০১৯ | ১৬২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এটার নাম সোনা-অষ্টমী। মানে সোনাগাছির অষ্টমী। এমনিতেই সারা বছর দ্যাখনদারি রোশনাইতে ভরে থাকে হিজবিজবিজ গলিগুলো। অষ্টমীর দিন তার যৌবন যেন ফেটে পড়ে, কী উদ্দাম, আর কী নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ !
এতো সুন্দর মুখ, ঝলমলে সাজ আর পালিশ করা কথা ! স্বপ্নাকে আধো অন্ধকারে মনে হচ্ছে যেন কোনো রাণী। এই গলি যেখানে বড় রাস্তায় মিশেছে সেখান থেকেই শুরু ছোট ছোট টুনি বালবের চাঁদোয়া। তার আভা এসে ওর গালে পড়েছে। তালাবন্ধ আপনে আপের সেন্টারের দেওয়ালে হেলান দেওয়া মেয়ে অষ্টমী পুজো উদযাপন করবে ব'লে খদ্দেরের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
না-তারকার পুজো -- লোকনবমী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ অক্টোবর ২০১৯ | ১৫১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
পুরুলিয়ার তেলকুপি এক ঘুমন্ত গ্রাম। পুজো নেই, ঢাকের বাদ্যি নেই, তবে মেলা কাশফুল। এখানে গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে গ্রামবাসী নিজে থেকেই বলতে থাকেন, এই হলো গে প্রাচীন তৈলকম্প গ্রাম, হাজার বছর আগে শিখর রাজবংশের রাজধানী। ঐ যে দেখছেন নদীগর্ভে অর্ধপ্রোথিত দেবালয় ওই হ'লো মা মহামায়ার মন্দির। ওই যে বেনাঘাসের বনে মাথা উঁচু ক'রে আরেকটি, ওটি ভৈরবের থান।
আমি জিতেন মাঝিকে বলি, কতো নেবে দাদা নৌকো ক'রে মহামায়ার মন্দিরে যেতে ? একথা জেনেই বলি যে আসলে এইগুলি সবই জৈন দেউল। কালের প্রকোপে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের বলশালী দেবতার চাপে কখন হিন্দুমন্দিরে পরিণত হয়েছে কেউ জানে না। নৌকা যখন চড়ায় ঠেকে, মন্দিরের ভেতর ঢুকে দেখি কোন দেবতা নেই, কিন্তু স্থানীয় অর্চনার ছাপ আছে তেল সিঁদূরে। জিতেন বলে এইরকম অনেক মন্দিরে পশুবলিও দেওয়া হয়।
জে এন ইউ তে ভয়াবহ হামলা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : NRC/CAA | ০৫ জানুয়ারি ২০২০ | ৯১২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৫
আজ মুখোশে মুখ ঢেকে বড় রড হাতে নিয়ে জেএনইউ হস্টেলে ঢুকেছে গুন্ডাবাহিনি, যা ছাত্রদের অভিযোগ অনুযায়ী এবিভিপির। রাষ্ট্রপোষিত গুন্ডা। ফি বাড়ানোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, এনার্সি, সিএএ-র বিরুদ্ধে ছাত্রদের একতা, শাহিনবাগ ধর্ণা,গোটা দেশে বিশাল আন্দোলন, দেশবিদেশে বেইজ্জত হবার অপমান, আর কতো সইবে ফ্যাসিস্ট সরকার।
জেএনইউয়ের অধ্যাপক, ছাত্র নির্বিশেষে আজ তাই রক্তাক্ত। নির্বাচিত ছাত্রসংসদ প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ সাংঘাতিকভাবে আহত। হাসপাতালে ভর্তি। অনেক সহযোদ্ধারও একই হাল। আহত অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন।
জোর করে জয়শ্রীরাম বলানো হচ্ছে, আর তাও নাকি হচ্ছে সংঘপরিবারঘনিষ্ঠ অধ্যাপকের অংুলিহেলনে।
বিবাহ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ২৭৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
ঠিক তখনই মেঘ ফেটে যায় দুভাগে। ঝলমলিয়ে চাঁদ ওঠে আর দৃশ্যমান হয় সারা জগত, কাঁসাইয়ের ধারের প্রাচীন মন্দির, সাদা ফেনার হুল্লোড়, ধানের ক্ষেত আর বাতাসে মাথা নাড়ানো গাছের দল। কালো পর্দা সরিয়ে হঠাতই আবির্ভূত হয় এইসব আর রহস্যময় শতাব্দী প্রাচীন রূপের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চরাচর। কানু বৌকে ডাকতে ভুলে যায়, হয়তো ভুলেই থাকতো যদি না তার চোখে পড়তো নদীর মাঝখানে সাদা চরের কালো পলিথিন কুঁড়ের সামনে কার যেন আবছা ছায়া। প্রথমেই সে ভাবলো মাছচোর। বাবা ভৈঁরোনাথের দিব্বি, আজ ওকে ধরবই, এ কথা ভাবতেই লাঠিটা ঘরে রেখে এসেছে বলে দারুণ দুঃখ হলো কানুর। তবু হেই হেই থাম থাম চিৎকারে সাজোয়ান পা-জোড়া ছুটে চললো এক পাথর থেকে আর এক পাথরে, পড়তে গিয়ে টাল সামলে নিলো কতোবার।
চন্দ্রশেখর আজাদ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জানুয়ারি ২০২০ | ২৮২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
তেত্রিশ বছরের একটা জোয়ান কিন্তু রুগ্ন ছেলে শুয়ে আছে জেলখানার ঠান্ডা মেঝেতে, গায়ে হয়ত শুধু একটা কম্বল। গরাদের ফাঁকে তাকে কড়া নজরে রেখেছে এদেশের কুখ্যাত ট্রিগারহ্যাপি পুলিশ বাহিনী, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমাতে নিজেরাই সরকারি বাস পোড়ায়, গুজরাত মডেলে সংখ্যালঘুর দোকান ভেঙে দামী মাল লুঠ করে। আর দমাদম গুলি ছুঁড়ে শুইয়ে দেয় শিশুদেরও। আটক নাবালকদের সোডোমাইজ করার অভিযোগও ওঠে এদের বিরুদ্ধে।
সোনি সোরিঃ যে লড়াই এখনও চলছে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ নভেম্বর ২০১৭ | ১০৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
বস্তারের যেখানে অত্যাচার, সেখানেই অদম্য সোনি সোরি। স্কুল কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত অসহযোগিতা করলেও নির্যাতিতা মেয়েদের হয়ে মামলা রুজু করেছেন সোনি। পরিষ্কার বললেন, তার গুপ্তাঙ্গে পাথর ঢোকানো পুলিশ অফিসারটি এবার রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পেয়েছে, ওর সদম্ভ চলাফেরা দেখলে বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যায়, মগর ক্যা করু, দেশ কা সংবিধানমে বহোত বিশোয়াস রখতি হুঁ।
না, বন্দুক হাতে তুলে নেবার কথা একবারও ভাবেননি সোনি। বরং একবারই গলা ধরে এলো বাবাসাহেবের এই সত্যিকারের সন্তানের, যখন বললেন তার ভেঙে দেওয়া স্কুলহোস্টেলে পঞ্চাশটি অনাথ বাচ্চা থাকতো যাদের বাবা মায়েরা খুন হয়েছে রাষ্ট্রের পোষা আতঙ্কবাদী সালোয়া জুড়ুমের সদস্যদের হাতে। তাদের কি হল তিনি জেলে যাবার পর জানা নেই, শুধু এই সেদিন গহন বনের ছায়ায় এক গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা শুনে সোনি যখন ছুটে যাচ্ছিলেন দুটি মাওবাদী তার পথ আটকায়। যাবার হুকুম নেই। কথা কাটাকাটি শুরু হতেই বন্দুক হাতে ছুটে আসে আর এক তরুণ, প্রাক্তন শিক্ষিকার পা ছুঁয়ে মাফি মাঙে। এ সেই অনাথদের একজন।
পারিবারিক মহিলা লোক আদালত - যেমন দেখছি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ নভেম্বর ২০১৭ | ৮৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
সত্যিই টিভি সিরিয়ালের এক একটি কেস মহিলা কমিশনে দাখিল হওয়া এক একটি আবেদন। ব্যক্তি আর সমাজ জীবনের জলছবি। মেয়েরা মাথা নীচু করে আর সবকিছু মেনে নিচ্ছেন না। কিন্তু সংসারের কর্ত্রী হয়ে থাকবো এই বাসনা থেকে এখনো বেরোতে পারেননি। স্বামী নিজের বোনকে নিয়ে চলে গেছে, এগারো মাস বাদে ফিরে এসেছে, তবু স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে আবার সংসারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায়। ছেলে ডিপিএসেই পড়ুক চায়। টাকা দেবে কে, একথার উত্তরে একুশ বাইশের মেয়েটি জানায়,
----ওকে রাজারহাট নিউটাউনে সবাই চেনে। সিন্ডিকেট করে ও। এখানকার কাউন্সিলরের ঘর থেকে বেরিয়ে আমায় সেদিন বলছে, কত টাকা পেলে আমায় ছাড়বি ? কুড়ি লাখ, ত্রিশ লাখ ?
আপনারা সিসিটিভি দেখুন। বলেছে কিনা। ও ইচ্ছে করলেই আমার ছেলেকে পড়াতে পারে।
নট ইন আওয়ার নেম : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ জুন ২০১৭ | ১০৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
অল্পবয়সী ছেলেদুটো নড়েচড়ে বসল, চোখ হয়ে গেল ছুরির মতো ধারালো,
- ক্যায়া খা রহা হ্যায় আপ ?
শিক্ষকটির মুখে ফুটে উঠল একটা বোকা, ভ্যাবলা হাসি। সত্যি তো, আমার টিফিন বক্সে উঁকি মেরে কেউ যদি ধমকায়, কি খাচ্ছেন, আমি কি ভোম্বল হয়ে যাবো না ! আরো দুজন আতিশয্যে উঠে পড়েছেন। এরা বাঙালী। চোখ হাসিতে ঝিকমিক, রগচটাদের প্রশ্রয় দিয়ে বললেন,
--গোস্ত খাচ্ছে দাদা। কোন সন্দেহ নেই তায়। আরে পাবলিকমে কিউ খাতা হ্যায় রে ?
এই ছেলেদুটোর আরো বন্ধুবান্ধব আছে ভেতরে। ওদের মুখের শক্ত রেখা আমাকে মনে করিয়ে দিল পানিয়াল পাগলির কথা। মাংসে লেগে ফিরে আসা দুমদাম প্রহারের আওয়াজ।
কী করছি নিজে বোঝবার আগেই একটুকরো মাংস উঠে এলো আমার কাঁপা হাতে।
সর্বজনীন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ৯৬০ বার পঠিত
এইখানে, ঠিক এইখানে তার নাড়ীর ওপর হাত রাখে দুর্বার মহিলা সমণ্বয় সমিতি। আলেকজান্দ্রা কলন্তাই যখন দেহোপজীবিনীর সংজ্ঞা দেন এই বলে যে সে এমন এক ব্যক্তি যে অন্যদের ওপর বেঁচে থাকে, যার শক্তি যৌথতার জন্য ব্যবহৃত হয় না, যে "শ্রমপরিত্যাগকারী", তখন তার সামনে যে বিষয়গুলি অনুপস্থিত থেকে যায় তা হল হিউম্যান ট্র্যাফিকিং, রাজনৈতিক মদত আর ব্যক্তিস্বাধীনতার চূড়ান্তকরণ। হ্যাঁ, তার কথা ঠিক, শুধু উঁচু হিলের জুতোর জন্য এই পেশায় যায় কিছু মেয়ে, কিন্তু সংখ্যায় তারা নগণ্য। গতকালের TOI তে খবর আছে পুণে থেকে উদ্ধার করা এক বাঙালি মেয়ের হাসপাতালে শুয়েও যে আরো চারজনকে উদ্ধার করার কাজে সার্থক হয়েছে একটি এন জি ও র সহায়তায়। একজন বাংলাদেশি মাইনর। কাজ দেবে বলে নিয়ে গিয়ে যে ব্রথেলে বিক্রি করা হয়েছিল তার মালিক এক শিবসেনা নেতা। ভয়ে পুলিশ প্রথমদিকে নিকম্মা হাবভাব করছিল। পরে যাই হোক সাহায্যও করে।
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস আর লোক আদালতে পুতুল : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ মার্চ ২০১৭ | ১১২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আগেই বলেছি মানবীর সংখ্যা লোক আদালতে নগণ্য। পিতৃতান্ত্রিকতা,অবরোধ, অশিক্ষা, গার্হস্থ্য হিংসার বাধা টপকে বাইরের পৃথিবীটা দেখা এখনো শহরের চৌহদ্দির বাইরে গ্রামেগঞ্জের বেশিরভাগ মেয়েদের কাছে স্বপ্ন। লড়াই করতে শিখবে কি ! নিজের ব্যবসা তো দূরস্থান। তাই হঠাৎ কাউকে তেমন দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। যেমন গেল এবারে। আর কাকতালীয়ভাবে সেদিনটা ছিল ৮ই মার্চ।
স্টেট ব্যাংক কার হাতে ? : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৭৩৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪২
তাহলে কি দাঁড়ালো ব্যাপারটা ? স্টেট ব্যাঙ্কের মতো বিশাল মজবুত স্বয়ংভর সংস্থার অংশীদার হবে এই গুণধর রিলায়েন্স। সরকারী অজুহাত, RLI ( reliance industries limited) আর SBI পরস্পরের দোসর হলে রিলায়েন্স জিও র লেটেস্ট টেকনোলজির দ্বারা উপকৃত হবে দুর্গম এলাকার গ্রামীণ মানুষ।
একেবারেই বাজে যুক্তি, কারণ স্টেট ব্যাঙ্ক নিজেই ১,৫০,০০০ কর্মী নিয়োগ করেছে যারা কাজ করছে প্রান্তিক অঞ্চলে। এর ফলে কর্পোরেটটির হাতে বিনা আয়াসে পৌঁছে যাচ্ছে একটা বিশাল কর্মী- নেটওয়ার্ক। কোন বাড়তি খরচ ছাড়াই।
কোচি, কোদাগু, কলকাতা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১০৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
কেরালাতে এবার অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে এবং গত একশ বছরে এরকম বন্যা হয় নি। কিন্তু এই বন্যার পেছনে মানুষের লোভী হাতের ছায়াও বড় গভীর। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা সংরক্ষণ কমিটির চেয়ারম্যান মাধব গ্যাডগিল ২০১১ সালেই সতর্ক করেছিলেন যে উন্নয়নের নামে যত্রতত্র ভারী শিল্প স্থাপন, খনিমুখ খনন চলবে না। বলেছিলেন তথাকথিত উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করতে হবে স্থানীয় জনসম্প্রদায় এবং গ্রামপঞ্চায়েতের অনুমতি নিয়ে এবং তাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে। প্রবল বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও বন্যার এই ভয়াবহতা অনেক কম হত যদি আগেই গ্যাডগিলের কথা শোনা হত। এই কমিটি চেয়েছিল বাস্তুতন্ত্র বৈচিত্রে ধনী পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, যার বিস্তার কেরালা সহ ছয়টি রাজ্যজুড়ে, তাকে পরিবেশ-সংবেদী (Ecologically Sensitive) বলে ঘোষণা করা হোক।
আত্মজা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | ১৩৫৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
সেদিন দেখলাম স্টিয়ারিং একহাতে ধরে আর এক হাত দিয়ে বুকপকেট থেকে মোবাইল বার করল ড্রাইভার। কিন্তু কিছু বলব কি, খুব জোর একটা ধাক্কায় মাথা ফেটে গেল আমার, আর সেটা ভাল করে বোঝবার আগেই জল উঠে এল ঠিক আমার নাকের তলায়। এক সেকেন্ডের খুচরোতে দেখলাম ঘোলা জল রঙ বদলালো লালে। পাঁকের বিশ্রী গন্ধ, দু পা ওপরে, জলের ভেতর মাথা নিচের দিকে করে পড়ছি তো পড়ছি, যেন একটা বিরাট অন্ধকূপ, যার শেষেও আলো নেই। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কী করলে মুক্তি পাব এই তীব্র শ্বাসকষ্ট থেকে ভাবতে ভাবতে আরও অন্ধকারে জড়িয়ে গেল চুল, পরনের শাড়ি উধাও হল। মামাবাড়িতে দেখা ছোটবেলার অনেক ঘটনাই মনে আছে। যে ঘটনাটা ঠিক এখন উঠে এসে লটকে রইল চোখের পাতায় তা হল লোহার শিকে চারদিক বন্ধ একটা ছোট খাঁচা। ভেতরে একটা নেংটি ইঁদুর। ছোটমামা খাঁচাশুদ্ধ সেটাকে চুবিয়ে ধরেছে পুকুরের জলে। সেটা বার বার খাঁচার ছাদের দিকে উঠে আসছে, কিন্তু পুরু সরের মতো জমা জলে থৈ না পেয়ে আবার নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।
দলিত ও বিচারব্যবস্থা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০১৮ | ১১৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
যেটুকু বুঝেছি, বাবু ডঃ সুভাষ কাশিনাথ মহাজন ভার্সেস স্টেট অব মহারাষ্ট্র মামলাটি শুধু সুপ্রিম কোর্টের রুলিং নয়, নিজস্ব গতিপ্রকৃতির কারণেও খুব কৌতূহলদ্দীপক। দলিত চাকুরের কনফিডেনসিয়াল রিপোর্টে ভিত্তিহীন খারাপ কথা লেখার অপমান সহ্য করতে না পেরে দলিত মানুষটি যখন দলিত নিপীড়ন আইনের সাহায্যে মামলা দাখিল করতে চায় তখন তার বড় সাহেব সুভাষ মহাজন সেই অনুমতি দিতে অস্বীকার করে দিনের পর দিন। তখন মহাজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, অথচ তার কিন্তু আগাম জামিন পেতে কোন অসুবিধে হয়না। আগাম জামিনের প্রসঙ্গ মহাজনের আবেদনে ছিলই না, সে চেয়েছিল কেবল মামলা প্রত্যাহার। কোথাকার জল কোথায় গড়ায়, শেষ অব্দি এই মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে আদালত আর্টিকেল ২১, যা কিনা ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলে, সেই ধারা বিচার করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে দুমদাম গ্রেপ্তারির আগে সবারই আগাম জামিনের অধিকার থাকা উচিৎ। সরকারের সরবরাহ করা তথ্য নাকি দেখিয়েছে দলিত ক্লেশ নিবারণী আইনেরও অনেক অপব্যবহার হয়। তাই সুপ্রিম কোর্টের মতে, প্রথমে দলিত অভিযোগের একটি প্রাথমিক তদন্ত জরুরী, তারপর এফ, আই,আর এবং চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে শেষে দরকার নিয়োগকর্তার অনুমতি। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই অনুমতি আসবে পুলিশের সিনিয়র সুপারিন্টেনডেন্ট (SSP)কাছ থেকে। এরপর আদালতে মামলা উঠবে। ভারতীয় বিচারব্যবস্থা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এখনই জগদ্বিখ্যাত। এরপর সে খ্যাতি অন্য গ্রহেও পৌঁছবে এই আশঙ্কা কি সত্যিই অলৌকিক ?
মাওবাদীর জন্ম ও মৃত্যু : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০১৮ | ১০৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিচালক নির্বাচিত সরকার। সে সংবিধান এবং আইন মানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্র আইনী প্রতিষ্ঠান, ফলে দেশের বিপথগামী বা সুপথগামী নাগরিকদের কোন কাজে শাস্তি দিতে হলে সে আইনী সীমা লঙ্ঘন করতে পারবে না। মাওবাদীদের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য নয়, কারণ তারা দেশের সংবিধানকে অস্বীকার করে এবং তাদের প্রতিষ্ঠান ও কার্যকলাপ ঘোষিতভাবে বেআইনি । তারা যদি দেশের শত্রু হয়ে থাকে , তাহলে দেশদ্রোহ আইনে তাদের সাজা দিতে হবে। মিথ্যে এনকাউন্টারে মেরে ফেলা চলবে না , আত্মসমর্পণ করতে চাইলে বুলেটে তার জবাব দেওয়া যায় না । এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচারবহির্ভূত হত্যা যদি সবক শেখাবার সহি রাস্তা হতো তাহলে পঞ্চাশ বছর ধরে এই সমস্যা চলে আসছে কিভাবে ?
একটি গণধর্ষণ ও আদিবাসী আন্দোলন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ আগস্ট ২০১৮ | ৮৯১ বার পঠিত
২০১৭ সালে বিজেপি যখন থেকে অরণ্যের ওপর আদিবাসীর অধিকারের শতাব্দী প্রাচীন আইন বদলাবার জন্য কোমর বাঁধল, কিন্তু বিরোধী দলগুলির মিলিত প্রতিবন্ধকতায় এখনই সেই আইনের কোন সংস্কার করতে পারল না , তখন থেকেই পাথালগড়ি আন্দোলনের ভাবনাচিন্তা। প্রায় একই সঙ্গে ২০০ আদিবাসী গ্রাম সামিল হয় এই বিদ্রোহে , আরও ছত্রিশ হাজার গ্রাম শীগগিরি যোগ দেবে বলে আন্দোলনকারীদের আশা ছিল ,কিন্তু তার আগেই নেমে এল অকথ্য দমনপীড়ন একটি গণধর্ষণকে কেন্দ্র করে । সেটায় বিস্তারিত যাবার আগে পাথলগড়ি নিয়ে আরও দু চার কথা ।
লোক আদালত, নারী ও আদালতের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১৮ | ১১৩৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
যেমন বলি উনিশ বছরের কালো অল্প পোড়া মেয়ে সুখবাঁশির কথা। এমন রোমান্টিক নাম তার বাপ মা কি ভেবে রেখেছিল কে জানে, কিন্তু আটবোনের এক বোন সে ছোটবেলায় ধানসেদ্ধ করার উনোনে পড়ে গিয়ে অল্প পুড়ে যায়। তাতে তার দীঘল চোখ বা সরল মনের কোথাও কোন কমতি হয়নি, কেবল পাত্রপক্ষের তাকে নিতান্ত অযোগ্য ভাবা ছাড়া। তাই ক্লাস এইট অব্দি পড়বার পর গরীব বাপমা তার বিয়ে দেয় নিজেদের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ! ৮০ হাজার টাকা, কাঁসার বাসন, গয়না দেবার পরও বিছানাপত্র দেওয়া হয়নি বলে তাকে শুতে হত মাটিতে।
বিয়ের পর সুখবাঁশি প্রেগন্যান্ট হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলাশহরের এক মেডিক্যাল সেন্টারে। সেখানে 'ছবি' তোলা নির্বিঘ্নে সাঙ্গ(কি করে হয় কে জানে !) হলে তার সব সুখ উবে যায়। স্বামী, শাশুড়ির উগ্র মূর্তিতে হতভম্ব মেয়েটি প্রতিবেশীর কাছে জানতে পারে তার পেটে রয়েছে যমজ বাচ্চা এবং তারা মেয়ে। অত্যাচার চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছলে একদিন তাকে ফ্যানে ঝুলিয়ে দেবার চেষ্টা সে কি করে ব্যর্থ করে বাপের ঘরে পালিয়ে আসে সেকথা এখন নিজেও ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতে পারেনা।
এক নগ্ন দেবতার সান্নিধ্যে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ৮৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
মণীন্দ্র গুপ্তের স্বচ্ছন্দ, অন্য গদ্যে ধরা পড়ে কবিতার জীবন - তার জন্ম, বীজ ও ক্ষেত্র, বৃদ্ধি, প্রজনন, দেহ, ব্যক্তিত্ব এবং মৃত্যু। এই পর্যায়গুলোতে পাঠকের স্বচ্ছন্দ চলনের অভাব কবিতায় প্রবেশের পথকে দুর্গম করে। লেখক তীব্র শ্লেষের সঙ্গে জানান কঠিনপ্রাণ, কঠোর আমলাতান্ত্রিকেরা কবি হবার নিশ্চয়তা থেকে চিরমুক্ত। এই দৃপ্র বলিষ্ঠতা, জ্যা মুক্ত তীরের মতো লক্ষ্যভেদী ভাষা আর বেদুইন টানের কারণে সমালোচকদের মণীন্দ্র গুপ্তকে মনে হয়েছে আদ্যন্ত এক পুরুষ, দুঃসাহসী, সংস্কারমুক্ত, তথাকথিত নারীসুলভ কমনীয়তাবর্জিত। তবু এই অনমনীয় অকাট্য বিশ্লেষণী শক্তিই তার তূণীরের একমাত্র অস্ত্রসম্ভার নয়। কেন লেখেন, এই প্রশ্নের উত্তরে একবার লিখেছিলেন, শুধু মানুষের সঙ্গ নয়, প্রকৃতি এবং বনবাসীদের দেখলে বোঝা যায় অর্থনীতির বাইরে তৃষিত প্রাণ কিভাবে তৃপ্ত হয়। চলে যাবার আগে এইসবই লিখে জানিয়ে যেতে চেয়েছেন।
পুরুলিয়া আর জয়ন্তিয়া : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৩৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
মেঘালয়ের পাহাড়ে প্রায় ৬৪০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ আছে। এদের মধ্যে বেশীরভাগই ভূসম্পত্তির অধিকারীদের দ্বারা যথেচ্ছ উত্তোলিত হয়। অবশ্যই এদের আঁতাত থাকে বড় কোল মাফিয়া, নামী সিমেন্ট কম্পানীগুলো এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। গ্রামের পর গ্রাম জনগণ, কোনও ধনী ভূস্বামী যার জমির অন্তর্গত পর্বতশিরায় কয়লা লুকিয়ে আছে, তার অধীনে অল্প পয়সার বিনিময়ে এই খননকার্য চালিয়ে যায়। দিন দিন ভূস্বামীর কোষাগার স্ফীত হয়, হয়তো চেরাপুঞ্জি মৌসিনরামে বিলাসবহুল পান্থশালার সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু অদক্ষ খনি শ্রমিকের সন্তানরা হামাগুড়ি দিয়ে ইঁদুরের গর্তের মত পাহাড়ের ভেতর কেটে রাখা অসংখ্য সুড়ঙ্গে ঢুকে খালি হাতেপায়ে কালো হীরের খোঁজ চালায়। এদের জন্য বা অন্য শ্রমিকদের জন্য কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা হয় না।
করোনা কৈবল্য : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ মার্চ ২০২০ | ৩২৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
করোনা ছড়ানোতে অশীতিপরদের ভূমিকা একেবারে শূন্য। তাদের ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ নেই, খাদ্যতালিকায় প্যাঙ্গোলিন বা বাদুড় না থাকারই কথা। না চাইলেও তাদের বেশিরভাগই কোয়ারেন্টাইন্ড হয়ে থাকতে বাধ্য। থাকেনও প্রায় বারোমাস। চাহিদা বলতে পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাদ্য, বিশ্রাম, যত্ন, চিকিৎসা আর সবচেয়ে যা অধরা, ঐ কিঞ্চিৎ ভালবাসাবাসি।
এর ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে যৌবনের স্পর্ধা, যা অতিমারীর কালেও ভ্রমণ সূচি বা রাত-জাগা হুল্লোড়ে পার্টি বাতিল করে না । আমাদের বয়স অল্প, আমরা ফিট, আমাদের প্রাণে মরবার ভয় নেই, এই বিবেচনায় যারা অকুতোভয়। তাদের ওপরেই কিন্তু ঝুলছে এই ডেমোক্লিসের খাঁড়া - বয়স্ক প্রিয়জনকে মেরে নিজে বাঁচবে কিনা। সমস্যাটা বুড়োবুড়ি নিকেশ হয়ে গেলে ক্রমশ নীচের দিকে নামবে, বৌ না আমি, কে বেশি বাঁচবার অধিকারী ? আমিই যদি না থাকি তাহলে আমার সন্তানকে রাষ্ট্রের পক্ষে প্রয়োজনীয় করে গড়ে তুলবে কে ?
এই প্রশ্নগুলো আসতে বাধ্য কারণ এই অতিমারী আমাদের সভ্যতার ভিত ধরে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ফিরে আসছে বেঁচে থাকবার অন্ধ আদিম দৌড়, যেখানে বাঁচবার একমাত্র অধিকারী সে, যে সবচেয়ে তন্দুরস্ত বা বলশালী। বাঁচো, শুধু নিজের জন্য বাঁচো, অন্য সমস্ত বিবেচনা তুচ্ছ হয়ে যাক তার কাছে।
রাষ্ট্রের চমক ও নাগরিক সুপারিশ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ এপ্রিল ২০২০ | ৫০৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
আমি বর্তমান শাসককে মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গে তুলনা করতে চাই না, কারণ পরবর্তীতে ইতিহাসচর্চা দেখিয়ে দিয়েছে তুঘলক প্রজারঞ্জক ছিলেন।
তার সমস্ত কল্যাণমুখী কার্যকলাপ নষ্ট হয়ে যায় যত না তাঁর অদূরদর্শিতায়, তার থেকে বেশি অন্য অন্য কারণে, যার মধ্যে সুলতানের মন্দভাগ্যও একটি। আমাদের বর্তমান শাসক তুলনাহীন, একমেব অদ্বিতীয়ম !
নোটবন্দীর সময়ের কথা মনে আছে তো ? কিরকম হাহাকার পড়ে গেছিল চারদিকে ? সবচেয়ে বেশি অসুবিধেয় পড়েছিল এই গরীবগুর্বোরাই, যারা এখন প্রাণ হাতে করে পথ হাঁটছে। রুজি হারিয়ে অনাহারক্লিষ্ট তাদের কান্না এখনো কানে বাজে। ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েই ঢলে পড়েছে কতো লোক।
এবার আবার এই লকডাউন।
ওষুধ, হুমকি ও একটি অন্তর্তদন্ত : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ এপ্রিল ২০২০ | ৯৭২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
বেঙ্গল কেমিক্যালসের কর্মচারী ইউনিয়ন ত্রিধাবিভক্ত। দুটির মাথায় শাসকদলের দুই মহারথী। একজনের দৌড় বিধানসভায় ,তো আর একজনের পার্লামেন্টে। আর একটি ইউনিয়ন বামপন্থীদের। তিনটে ইউনিয়ন এক হয়ে মামলা লড়ে তবে বেচে দেবার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে পারে। কিন্তু অদম্য সরকার বাহাদুর দেশের লাভজনক সংস্থাগুলিকে বিক্রি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই সিঙ্গল বেঞ্চের এই রায়ের বিরুদ্ধে আবার আবার ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করা হয়েছে। সে মামলার এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তার আগেই আবার বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তির যে লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে তড়িঘড়ি করে, তাতেও জ্বলজ্বল করছে বেঙ্গল কেমিক্যালসের নাম । সাব জুডিস বলে একটা কথা আছে কি আমাদের আইনি ডিকশনারিতে ? তার অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পরিষ্কার তো ?
জল : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ২৭৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
চাঁদ সেদিন সরু হতে হতে সুতোর মতো, যেন সেদ্ধ ডিম ফালি করা যাবে তা দিয়ে। নিমগাছটায় রাতজাগা কাকের পালক ঝাড়ার আওয়াজ কানে এল আন্নুর। রাত কতো হল কে জানে, সাতদিন পার করে আজও দিলদার ফিরল না। আপসোস। পাশের ঘর থেকে ক্রমাগত ধর্ষণের হুমকি আর দেওয়ালে লাথি মারার আওয়াজ এই সবে থামলো। ঝুলে পড়া তলপেট খালি করতে যাবার এই তো সময়। আন্নু খসে পড়া ওড়না তুলে মাথায় দেয়। খোলামাঠে উদোম হয়ে বসার সময়ও মাথার কাপড়টি ঠিক রাখতে হবে। নাহলে রীত ভঙ্গ হয়। বাহারে দুনিয়া, বাপ ছেলে এক নারীকে ভোগ করলে, টাকা দিয়ে মেয়ে কিনে তাকে ভঁইসার মতো খাটালে, কোন রীত ভাঙে না, দুনিয়া উলটে যায় শুধু মাথায় কাপড় না থাকলে !
মে দিবসের ডাক : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ মে ২০২০ | ৩০৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
মুম্বাই এটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। মার্চের শেষ হপ্তাতেও পজিটিভ কেস পাওয়া যাচ্ছিল কেবল উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত এলাকাগুলিতে। হয় তারা বিদেশ প্রত্যাগত বা বিদেশ থেকে আসা কারো সংস্পর্শদোষে দুষ্ট। কিন্তু এই একমাস বাদে ছবিটা সম্পূর্ণ পালটে গেছে। পশ এলাকা গুলিতে রোগী ক্রমশ কম, গরীব বেশি পজিটিভ। এখন ধারাভিতে ৩৪৪, কিন্তু বড়মানুষদের ওয়ার্ডগুলি থেকে মাত্র ৬৫ টি কেস রিপোর্টেড হয়েছে। বস্তিগুলির ঘর ছোট, গাদাগাদি বেশি, জল কম, কমন টয়লেট। করোনার মহা স্ফূর্তি। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে BMC পুলিশকে বেছে বেছে বস্তিগুলিকে সিল করে দিতে বলেছে।
আমি /আপনি হলে বাড়ি ফেরবার জন্য মরিয়া হয়ে পড়তাম না ? বসে থাকতাম কবে রাজ্য কেন্দ্রের নির্দেশে নোডাল অথরিটি গড়ে আটকে পড়াদের লিস্ট বানাবে, সেইজন্য ?
পিপিই ও পুষ্পবৃষ্টি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ মে ২০২০ | ৩৪৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
যারা জেলাশহর বা সদরে পরিবারের সঙ্গে বাস করে তাদের রোজ দীর্ঘ জার্ণি, এমনিতেওকাজের লম্বা সময়, ওষুধ পত্রের অপ্রতুলতা ছাড়াও অন্যন্য হাঙ্গামাও পোহাতে হয়। যেমন নিবিড় গ্রামে রোগী দেখতে যাবার সময় হাতির পথ জুড়ে দাঁড়ানো বা পাহাড়ি ঝোড়ায় হঠাত হরপা বান আসা। এ ছাড়া অশিক্ষা ও নানা কুসংস্কারের সঙ্গে লড়াই। এই সবটা এরা করে বর্তমান সময়ের নিরিখে অতি অল্প টাকার বিনিময়ে। যেমন আশাকর্মীরা প্রতিমাসে ফিক্সড স্যালারি পায় ৩৫০০ টাকা। তারপর কিছু ইন্সেন্টিভ আছে, যেমন গর্ভিণীকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে কেস প্রতি ৩০০ টাকা পায়। এ এন এম রা আরো কিছু বেশি পেলেও পরিশ্রমের তুলনায় কিছুই না।
পর্দা ফাঁস : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ মে ২০২০ | ৬৩০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
করোনা অতিমারীকে অবৈধভাবে শ্রমিক আটকে রাখার একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রেনে সোশাল ডিস্ট্যান্সিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গ্রামে পৌঁছলে চোদ্দ দিন আইসোলেশনের ব্যবস্থা ছিল। বরং শ্রমিককে কাজের জায়গায় যে ভাবে রাখা হয়,খুপরি ঘরে গাদাগাদি করে অনেকজন,বা ঘিঞ্জি বস্তিতে ,তাতেই করোনা বেশি ছড়াবার কথা। রাতারাতি তার জন্য বিল্ডার স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা ,রোগ প্রতিহত করবার মতো ব্যবস্থা করে দেবে এটা ভাবাও বাতুলতা।শ্রমিক নিজেও এই ভয়টি পাচ্ছে। একে তো তার অন্নাভাব। কেরালা ছাড়া কোন রাজ্যই পরিযায়ীদের জন্য সন্তোষজনক ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি। উপরন্তু মৃত্যুভয়। দেশগাঁও থেকে বহুদূরে,আপনজনের মুখ না দেখে দূর নির্বাসনে মরতে কারই বা মন চায় ! তাই ঘড়ি মোবাইল বেচেও সে ট্রেনভাড়ার যোগাড় করেছে। কেউ সেটা বহন করলে ঠিক আছে, না করলেও কোনো পরোয়া নেই। এই ঐকান্তিক ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে কোন স্পর্ধায় তার চলাচলকে অপ্রয়োজনীয় ( unnecessary travel) বলা হচ্ছে ?
আমপানে সাম্পান ভাসানো এ দেশের রাজনীতি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ মে ২০২০ | ৩৯১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
আই টি সেল যা করে যাচ্ছে তা ক্ষমার অযোগ্য। একে তো বাবা মহাদেব কা গুসসা বলে ধর্মীয় রঙ চড়াচ্ছে। সঙ্গে আছে চূড়ান্ত অসংবেদনশীল সব মিম। কোনটায় আমপানের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাচ্ছে এইরকম দেখানো হচ্ছে, কোনটায় মুখ্যমন্ত্রী ও আমপানকে মিলিয়ে হরেক মজাক। হাসি মশকরা করবার এই কি সময় ! যে বাঙালিরা এতে খুশি হচ্ছে, হাসছে, তারা জানে না পুড়ে মরবার আগে লেলিহান অগ্নিশিখাকে পতঙ্গের বড়ই লোভনীয় মনে হয়।
ওদিকে রাজ্যপাল আর ১৮ জন সাংসদ দুপুর গড়িয়ে গেলেও চুপ। মুখে কোনো রা নেই। তবে কি এটাই এ দেশের রাজনীতির প্যাটার্ণ হয়ে গেল যে বিরোধী পক্ষ চূড়ান্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে চূড়ান্ত বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে যাবে ? সংসদে দাঁড়িয়ে বলবে, এই রাজ্য সরকারকে কোনো ত্রাণ দেবার দরকার নেই ?
খাটা পায়খানা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ মে ২০২০ | ৩৫৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
যথারীতি রঙ্কির পেট ব্যথা চাগাড় দিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে টিনের দরজা বন্ধ করেছে, কিন্তু এমন পেট মোচড়ানো যে শেকল তুলে দিতে পারেনি। কিন্তু আমাশার যেমন হয়, মোচড়াবে, কিন্তু একবারে ক্লিয়ার হবেনা, রঙ্কি কোঁথ পেড়েই যাচ্ছে ,পেড়েই যাচ্ছে, পেট আর পরিষ্কার হয় না। শেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন এসে উপস্থিত হল,অমনি রঙ্কি গোল গোল চোখে দ্যাখে একজোড়া কালো হাত নিচের টিন কাত করে বড় গামলায় উবুড় করছে। ভয়ে রঙ্কি চিৎকার করতে যাবে। দ্যাখে ওপর দিকে মুখ করে হাসছে তিলোয়া, চুলে অব্দি হলুদ হলুদ কী সব, কিন্তু দাঁতগুলো সাদা ঝকঝকে।
হনন (পর্ব ২) : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ জুন ২০২০ | ৪৩৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
অরুণাচলের অন্যান্য ব্যাঘ্র সংরক্ষণ এলাকায় যত বাঘ আছে তার চেয়ে ঢের বেশি আছে দিবাং ভ্যালিতে। অরণ্যের প্রতি ভালবাসা এতো গভীর যে ইদু মিশমি সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের সমাধিতে রাখা থাকে বিভিন্ন শস্য ও বৃক্ষের বীজ সম্বলিত একটি বটুয়া। মৃত্যুর পরেও যেখানে সে যাবে, সেখানেই গড়ে উঠবে গহীন অরণ্য।
গত ২০ শে এপ্রিল ২০২০ করোনা অতিমারিতে ব্যস্ত সাধারণকে অন্ধকারে রেখে একটি ভিডিও কনফারেন্সের পর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এই স্বর্গে বন কেটে গড়ে উঠবে বিশাল এক হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট, দেশের বিশালতমগুলির মধ্যে একটি। এই প্রজেক্টের অঙ্গ হিসেবে সরকারি আস্তিনে লুকোনো তাসের মধ্যে রয়েছে দুটি বিশাল বাঁধ, দীর্ঘ সুড়ঙ্গ, ভূগর্ভস্থ পাওয়ারহাউস, ৫০ কিমি ব্যাপ্ত রাস্তাঘাট। এসব করতে কিছু গাছ কাটা তো অবশ্যম্ভাবী। এই "কিছু"র সংখ্যা হলো ২.৮ লাখ গাছ, যাদের অনেকেরই গুঁড়ির ব্যাস ৮ মিটারেরও বেশি।
নয়া স্কুলশিক্ষা ও দাসত্ব : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২১ আগস্ট ২০২০ | ৩৪২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
অতিমারি এবং লক ডাউনের আড়ালে, পার্লামেন্টকে এড়িয়ে এই নতুন শিক্ষানীতি পাস করিয়ে নেওয়া হল। আয়তনে বিশাল, বাইরেটা কথার ফুলঝুরিতে উজ্জ্বল এই নীতিকে টুকরো টুকরো করে বোঝার চেষ্টা হয়েছে। দেখা হয়েছে কী ভাবে স্কুল লেভেল থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে দাস বানাবার যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। এই নীতির শুরুতেই বলা হয়েছে অতি উচ্চ গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া হবে নার্সারি থেকে ১২ ক্লাস অব্দি ভারতীয় শিশু, কিশোর-কিশোরীকে। বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে, ফলে তার মনমতো করেই তৈরি হল এই পলিসির আগাপাশতলা। তবে টাকা দেওয়া হবে কিন্তু কেবলমাত্র বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রামে। তেমনি একটি প্রিয় প্রোগ্রাম STARS যা আগেই চালু করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ব্যাপারটি কী সেটা অনেকেই জানেন।
প্রাংশু পুরাণ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ১৪ অক্টোবর ২০২০ | ৫১৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
মানসের গলায় কী কিছু উত্তেজনা ! তার হাতের সংকেতে মাথা ডাইনে বাঁয়ে ঘোরায় রিণি। সত্যি বাঁ দিকে বিশাল বেনাবনের কতো কিলোমিটার ভেতরে কে জানে দেখা যাচ্ছে এক ভৌতিক উচ্চতা। যেন এই রোদের আঁচে দূরবর্তী নদীর দিক থেকে ছুটে আসা উষ্ণ বাতাসে লি লি করে কাঁপছে সেই মন্দিরের চূড়ো। রিণি আর তার মাঝখানের প্রান্তর জুড়ে শক্ত মোটা বেনাঘাস। সে শুনতেই ঘাস,দেখতে সরু বাঁশের মতোই গুল্ম,শক্ত আর ছুঁচলো। ভেদ করে যাওয়া এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। ইয়াকুব বলল,বাগালরা গরু চরাবার অসুবিধের জন্য প্রায়ই নাকি শুকনো বেনাঘাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তা হলে অবশ্য অতটা দুর্ভেদ্য হবে না।
যদির কথা নদীর পাড়ে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | খবর : টুকরো খবর | ০৯ জানুয়ারি ২০২১ | ২৯৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
'যদি'গুলোকে সব নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে ভাসিয়ে দেবার সময় এসেছে। কারণ এইগুলিই এদেশের ধর্ষণ সংস্কৃতির শক্ত খুঁটি। গলা তুলে বলতে হবে কোনও যদি নয় আর, সে মধ্যরাত হোক কী ভোরের আবছা, প্রয়োজনে নারী যখন খুশি তখন বাইরে যেতে পারবে। বা ঘরে ফিরতে পারবে। ওড়না নিক না নিক, নারীর পোশাকের কারণে তাকে ধর্ষিতা হতে হয় বলে যারা মনে করে, তারা একান্তই মূর্খের স্বর্গে বাস করছে।
মিছিলের শক্তি- লালকেল্লা কৃষকের : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ২৬ জানুয়ারি ২০২১ | ৬৮৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪২
যদিও একেবারে মধ্যখানে অটুট জাতীয় পতাকার উড়ান, আর হাজার হাজার হাতে উড়ছে অগুন্তি জাতীয় পতাকা, তবুও পুলিশ লালকেল্লার ঝান্ডা নামাতে আবার তৎপর হল। কিন্তু পতাকাদণ্ডে চড়া কি অতো সহজ ! আদর্শ আর মরণপণ প্রতিজ্ঞা যা পারে, বেতনভুক তা অতো সহজে পারে না। সে চেষ্টায় তাই জলাঞ্জলি দেওয়া হল অল্প সময়েই, আবার সাহায্য এসে পৌঁছবে এ-ই আশায়।
চোখে চোখ রাখা সাংবাদিকতা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৩৮৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
অত্যাচার দমন পীড়ন, সবই চলছে চলবে, তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকবেন এই মানুষগুলো, অকুতোভয়, উন্নতশির। ভারতীয় সাংবাদিকতার ওপর যতটা কালি অর্ণব গোস্বামী অ্যান্ড কোং দরাজ হাতে ঢেলেছে, তার থেকেও বেশি কলঙ্ককে ধুয়ে সাফ করতে পারেন কাঙাল হরিনাথের এই সন্তানসন্ততিরা।
দাঙ্গা পরবর্তী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ৩৩২১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
- বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ লড়ছে এমন কিছু মুক্তিসেনা লুকিয়ে আছে ঐ ক্যাম্পগুলোতে। অস্ত্র চালান করা, আন্তর্জাতিক রেডিও স্টেশন অপারেট করা, সবেতে আছে ছেলেগুলো। শিতলখুচি বর্ডার দিয়ে ওরা পারাপার করে। আজ যাদের দেখছো, কাল গেলে দেখবে তাদের মুখগুলো পালটে গেছে। সে যাক, ওদের দেশের স্বাধীনতার লড়াই ওরা কেমনভাবে লড়বে ওরা বুঝবে। কিন্তু খুকি...
- খুকি কী ? খুকি কেমন কইরা আসলো এইসবের মধ্যে ?
মা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে।
- শোনো, তোমার খুকি না হাতে এতোদিন হাতকড়া পরতো, যদি ইন্দিরা গান্ধীর হুকুমে পুলিশ অন্যদিকে তাকিয়ে না থাকতো। রিলিফ দেবার নাম করে চরে যায়, ছেলেগুলোর সঙ্গে মেলামেশা করে। একটি মুসলমান ছেলের সঙ্গে নাকি সম্পর্কও হয়েছে। সারা টাউনে ঢি ঢি পড়ে গেছে তো। আর তার সঙ্গে তুমি মেয়েকে পাঠিয়ে দিলে!
"গাছের পাতার মতো জীবন" : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৯ মে ২০২১ | ৩৪৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
আমরা এই মেয়েদের ঘৃণা করি, সমাজের পাঁক বলে ভাবি। ডাক্তারবাবু আর তাঁর দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটি মাত্র ২৪ বছরের সময়সীমায় আমাদের এই নজর অনেক পাল্টেছিলেন। নারী, মা এবং মানুষ, যৌনকর্মী জীবনের এই তিন অধ্যায় নিয়ে গুরুতে এবং অন্য জায়গাতেও অনেক লিখেছি। ডাক্তারবাবুর সদিচ্ছায় ব্যক্তিগত ভাবে এই লড়াইকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেরেছি। তাই আমি এই নারীদের অত্যন্ত সমীহ করি। আদ্যন্ত লড়াকু না হলে এইরকম একটি নিষ্ঠুরতম পেশায় টিঁকে থাকা অসম্ভব, আরো অসম্ভব সমমনাদের নিয়ে এইরকম একটি সংগঠনে সামিল হওয়া ও তাকে এইভাবে সফল করে তোলা।
খেড়া : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২১ মে ২০২১ | ৩৬৩২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
এইসব অনেক দিন ধরে মিলিয়ে দেখে দেখে তবে ফুলমণি বুঝেছে মানুষের মতোই জঙ্গলের রূপের কোনো ঠিক নাই। সে খালি পালটায়। ঠা ঠা রোদ্দুরে সে একরকম, তো কালো মেঘের নিচে একেবারেই অন্যরকম। রহস্যময়, গহন। আবার শীতের ভোর ভোর খেতখামার, চাষের মাঠে মাকড়সার জালে বিন্দু বিন্দু শিশির আটকা পড়লে জঙ্গল বড় শান্ত, যেন মাহাতো বাড়ির বিয়ার যুগ্যি বড় মেয়েটা।
তাদের শিক্ষকরা সবাই হবেন সলিল বিশ্বাসের সন্তান : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ০২ জুন ২০২১ | ৪৪৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
এদেশটার নাম ভারত, তাই আশা করি না, কিন্তু অন্য দেশে হলেও হতে পারে, হওয়া উচিত, তাঁর ইতালির বারবিয়ানা স্কুলের ছাত্রদের সম্মিলিত চিঠিভিত্তিক গ্রন্থের অনুবাদ, "আপনাকে বলছি স্যার" বইটির অবশ্যপাঠ। অন্তত শিক্ষকদের শিক্ষাদান করবার আগে এ বই পড়াই উচিত। শিক্ষা যখন পণ্য, আর শিক্ষার্থীরা বাজার নামক দাবাবোর্ডে দিব্যি জ্যান্ত বোড়ে, তখন বিকল্প শিক্ষার ওপর এ বই হয়তো কাউকে অন্য পথের সন্ধান দেবে। আরেকজন সলিল বিশ্বাস তৈরি হবেন যাঁর মনন জুড়ে থাকবে বিকল্প শিক্ষা ভাবনা। ব্রাজিলের নিপীড়িতের শিক্ষাবিদ পাউলো ফ্রেইরি হবেন যাঁর দিগদর্শক।
সেন্ট্রাল ভিস্তা এবং লাক্ষাদ্বীপ - পরিবেশের ওপর জোড়া আক্রমণ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ জুন ২০২১ | ৪১১৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
খুবই আশ্চর্যের বিষয়, রাষ্ট্র কোনভাবেই পরিবেশ প্রতিবেশের আরো অবনতি হতে পারে এমন বিষয়কে ছাড়পত্র দেবে না, যদি না পক্ষে খুব শক্তিশালী যুক্তি থাকে, এটা এদেশের পরিবেশ আইনের একেবারে মূল কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট সেন্টাল ভিস্তার ওপর যে রায় দিয়েছে তাতে এর কোনো ছাপ নেই। যদিও পিটিশনাররা সবিস্তারে জানিয়েছিলেন কিভাবে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট এক্টকে কলা দেখিয়ে জমির ব্যবহারে দ্রুত পরিবর্তন করা হয়েছে, কিভাবে হেরিটেজ এবং আর্কিটেকচারাল বিবেচনাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে এবং পরিবেশের পক্ষে এই প্রজেক্ট কতখানি ক্ষতিকারক সে সম্বন্ধে কোনোরকম বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা না করেই এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে,তবুও সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে কোনো পরিবর্তনে বাধ্য না করেই পুরো প্রজেক্টকে ছাড় দেয়। শেষ পয়েন্টটিতে তাদের মনে হয়েছে বৃক্ষ সংরক্ষণের সরকারি প্রতিশ্রুতিতেই কাজ হবে এবং পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে খানকতক স্মগ টাওয়ার বসালেই যথেষ্ট হবে। পরিবেশ ভাবনা এবং দূষণ কমানো যে এক ও অভিন্ন বিষয় নয়, সেটা বোঝার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে বিরল।
মৃত্যু বলো, হত্যা বলো
: প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৭ জুলাই ২০২১ | ৪১৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
মৃত্যু বলতে চাই, মৃত্যু লিখতে চাই। শুরুতে না হয় শেষে, সমস্ত চেতনা জুড়ে থাকার মতো এই মৃত্যুর নিদারুণ অপচয়। যতো জীবনে লগ্ন হবার স্বপ্ন দেখবো, ততোই মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা নিয়ে আসবে স্ট্যান স্বামীর এই অনর্থক মৃত্যু, নির্দয় হত্যা। ভারত রাষ্ট্রকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে কেন সাজানো মামলায় তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, কেনই বা মাওবাদী যোগের মিথ্যা অপবাদ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কর্পোরেটের পথ নিষ্কন্টক করার জন্য আর কতো বলিদান চাই, উত্তর দিতে হবে।
মৌসুমি সমুদ্রের উপকূল, বিদ্যাধরী ও বিবাগী লখিন্দর - অভিজিৎ সেন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ০১ আগস্ট ২০২১ | ৩৪৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
তাহলে অভিজিৎ সেনের এই দুটি উপন্যাসই মানুষকে তার নানা সম্পর্ক, নানা পরিপ্রেক্ষিতের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। রোদে সেদ্ধ চাল শুকোনোর মতো কলম দিয়ে উল্টেপাল্টে আউলা ঝাউলা করে ছাড়ে তার প্রতিটি প্রতিক্রিয়াকে। আদর্শ বা পূর্ণ মানবের দেহরেখা আঁকার কোনো চেষ্টাই করে না, অপূর্ণতা আর অসহায়তার রঙে চুবিয়ে তোলে আমাদের সমস্ত অস্তিত্ব। শেষ করে পাঠক ফুঁপিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু সেজন্য তার লজ্জা হবে না। এই অপূর্ণতার অশ্রুই আমাদের ভবিতব্য!
ক্রিটিক্যালি আচার্য'জ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০২ আগস্ট ২০২১ | ৪০৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
মুশকিল হলো যে মানুষটা সারাজীবন ব্রিটিশ পুলিশের নেক নজরে থাকলেন, যাঁর নামে ঢাউস ফাইল তৈরি হলো আইবি দপ্তরে, তাকে ইংরেজের পোষ্য বললে ঠিক হয় কি? তবু শুনি তিনি নাকি বেঙ্গল কেমিক্যালসে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় নাইট্রিক এসিডের উৎপাদন অব্যাহত রেখে ইংরেজ সরকারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তা খালি ইংরেজ সরকার বলা হচ্ছে কেন, ভাই? মিত্রশক্তি বলে একটা কিছু ছিলো না তখন? নাইট্রিক এসিডের আকালে ভারত থেকে, এই কলকাতা থেকে নাইট্রিক এসিড যোগানো হয়েছে, তা ইস্তেমাল করে মিত্রশক্তি জিতেছে। ভালো হয়েছে। আপনার আমার গ্রেটার, লেসার ইভিল বেছে নেবার স্বাধীনতা আছে, আচার্যের নেই? তিনি কাইজারের তুলনায় ইংরেজকে লেসার ইভিল ভেবেছেন, সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন। এতে এতো আপত্তির কী আছে? নাকি ক্রিটিকালি দেখতে হবে বলেই যা খুশি তাই বলে দেওয়া যায়!
'তবু'র মধ্যে নিরন্তর দোল খায় যে 'পেন্ডুলাম' : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ২২ আগস্ট ২০২১ | ২৭০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
৭৫ বছরে কিছু পাল্টায়নি, কারণ আমাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো অনড় হয়ে আছে ঘৃণার পাহাড়। পাল্টাতে হলে সেটাকে সরাতে হবে। দাঙ্গার আগুন আর রক্ত সত্য, সত্য মানুষের নিষ্ঠুরতা। কিন্তু তাকে পেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো 'তবু', যেগুলোর কাছে যাওয়া খুব কঠিন কাজ। কিন্তু এমন মানুষ তো বিরল নন, যারা দাঙ্গায় সর্বস্ব খুইয়েছেন, কিন্তু তবু সাম্প্রদায়িকতাকে মনে স্থান দেননি। এখনই মনে পড়ছে সদ্য প্রয়াতা সীমা দাসের কথা যাঁর আত্মজৈবনিক "দ্যাশ থেকে দেশে" বইটি প্রচন্ড নাড়া দিয়েছিল। মিহির সেনগুপ্তের সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম, অমর মিত্রের দেশভাগ-বেদনার উত্তরাধিকার পড়লেই বোঝা যায় উভয় পক্ষেরই দাঙ্গা-উত্তর মানসিকতা কী হওয়া উচিত।
এই আগুন ও রক্ত আর ঐ 'তবু'র মধ্যে নিরন্তর দোল খায় যে পেন্ডুলাম তার নাম মানুষের মন। যখন সে থামে, দেখা যায় তা নিশ্চিত
হেলে আছে 'তবু'-র দিকেই।
যে প্রিজমের নাম জীবন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ২৯ আগস্ট ২০২১ | ৩০৫২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
"মেয়েরাই উঠে এসেছে এ বইতে কথার পর কথায়, কিন্তু এ বই শুধু মেয়েদের বই নয়। এর মরমিয়া কথন, বিষয়ের ব্যাপ্তি সবাইকে দিয়ে পড়িয়ে নেবে গল্পগুলোকে। উপরি পাওনা মনস্তত্ত্বের নিখুঁত মিশেল আর শ্লেষের নির্দয় চাবুক। ব্যথা নিরোধক যন্ত্র গল্পটি খুব নাড়া দেয়। দত্তক, একটি মেয়েলি দুপুর, গোধূলিসন্ধি,
সবগুলোই গতানুগতিকতার বাইরে অন্য গল্প। আর রয়েছে কল্পবিজ্ঞান টিট্টিভ । তাকে সার্থক গল্প করে তোলার কাজটি যশোধরা করেছেন অবলীলায়।"
পড়লেন প্রতিভা সরকার
রক্তরাঙা লখিমপুর ও কিছু প্রশ্ন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৭ অক্টোবর ২০২১ | ২৯৭৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
লখিমপুর-খেরি বিজেপির গলায় কাঁটা হয়ে খচখচ করছে। তার কারণ দুটো। প্রথমত বিধানসভা নির্বাচন ঘাড়ের ওপর। এখন এই গন্ডগোল খুনখারাপির কারণে বিজেপি-বিরোধী জনমত আরও না দানা বাঁধে। দ্বিতীয় কারণটিও খুব গুরুতর। লখিমপুর-খেরি উত্তর প্রদেশের সবচেয়ে বড় জেলা, এর অবস্থান রাজ্যের পূর্বদিকে। অতীতে এখানে কৃষক আন্দোলনের অতো বাড়বাড়ন্ত ছিল না, কিন্তু এখন হচ্ছে, তার মানে নতুন নতুন জায়গায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। এতোদিন উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাংশে ৩০টি জেলায় আন্দোলনটি সীমাবদ্ধ ছিল। এখন পূবেও তা যদি ছড়িয়ে পড়ে, সে দাবানল নেভাবে কে? অতএব সামনের কয়েকটি দিন লখিমপুর-খেরি বিজেপির শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে থাকবে এটা একেবারে নিশ্চিত।
পুত্রার্থে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১২ অক্টোবর ২০২১ | ৪৭০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
মা তিনদিন পর সত্যি সত্যি চলে গেল, কিন্তু শ্মশান থেকে ফিরে আগুন ছুঁয়ে বাথরুমে স্নান করতে করতেই বুঝলাম, বুড়ি কোথাও যায়নি। প্রথমেই নাকের পাশটা সুড়সুড় করছিল বলে একটু ঘষে দিলাম। তারপরই আয়নায় তাকিয়ে দেখি, সেখানে এক খয়েরি আঁচিলের জন্ম হয়েছে। ঠিক যেমনটি মায়ের ছিল। এখনো ছোট, কিন্তু ঠিক জানি, এটা তত বড়ই হবে, যত বড় মায়েরটা ছিল। কান্না পেয়ে গেল। ওমা! দেখি, যেমন ভাবে মায়ের ঠোঁট তিরতির নড়ত কান্না চাপার সময়, অবিকল সেই ভঙ্গিতে আমার ঠোঁট নড়ছে। তাজ্জব হয়ে গেলাম, আমার তো কান্না পাবারই কথা নয়, আমি তো রাবার ক্লথের ওপর গু-মুতের তীব্র গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে মা-কে আর আয়াকে বেদম ধমকাতাম আর রোজ চাইতাম বুড়ি এবার আমায় রেহাই দিক!
শুধু আঁচিল বা একরকম ভাবে কান্নার দমক সামলানো নয়, এরপর থেকে অবাক হয়ে দেখলাম আমার প্রতিটা ব্যাপারে মা ঢুকে পড়ছে।
জয় এল কোন পথে : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৯ নভেম্বর ২০২১ | ২৪০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
মোদী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের এ এক অসীম লজ্জা ও অপমানের প্রহর। কারণ কৃষকের দাবি যে মূহুর্তে মেনে নেওয়া হল, সেই মুহূর্তেই এই চরম প্রতিক্রিয়াশীল সরকারকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ইষ্টমন্ত্র – নয়া উদারবাদের বিরুদ্ধে যেতে হল। তাকে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিতে হল, সে কার পক্ষে – আন্তর্জাতিক বৃহৎ ব্যবসার, নাকি দেশীয় মার-খাওয়া কৃষকের। আপাতত বাধ্য হয়ে সে কৃষকের – ভবিষ্যতের কোনো ষড়যন্ত্র যদি না পাশা উলটে দেয়।
তুষার যুগ ও আয়লান কুর্দি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৪১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
না, গত পাঁচশ’ বছরে এমন শীত কেউ দেখেনি, তাপমাত্রা এইভাবে কখনো মুখ থুবড়ে পড়েনি। এই তো সেদিন হঠাৎ ধেয়ে আসা তুষার ঝড় আর বরফ এক রাতে মেরে ফেলেছে ২০০০ সুইডিশ সৈন্যকে – যারা রাশিয়ার সীমান্তে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। ভেনিসে বড় বড় খাঁড়ি জমে এমন হয়েছিল, যে মানুষ তাদের ওপর চলতে গিয়ে দেদার আছাড় খাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে ক্ষুধার্ত নেকড়েরা দলবদ্ধভাবে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। পুরো বাল্টিক সাগর জমে পাথর। সমস্ত নদী জমে পাথর, যানবাহনের অভাবে ব্যবসা লাটে উঠেছে। প্রথম প্রথম লন্ডনবাসী মহা ফূর্তিতে জমে যাওয়া টেমসের ওপর স্কেটিং, খানাপিনা ইত্যাদি করছিল। তারপর অবস্থা দাঁড়াল – ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।
"অরূপ বৃন্দাবন ও অন্যান্য পদ" - পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১০ এপ্রিল ২০২২ | ২৩১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
শব্দখেলায় সোমনাথের পটুত্ব আরও নানা কবিতায় ছাপ রেখে গেছে। ‘মাধব মথুরা মত যাও’ -তে শুধু অনুপ্রাসের চমৎকার ব্যবহারে চমৎকৃত হই না, অবাক দেখি ব্রজবুলির মধ্যে অবলীলায় জায়গা করে নিচ্ছে স্টেশন, গাড়ি, স্টিমার শব্দগুলি। বেখাপ্পা তো নয়ই, বরং অন্য শব্দ বসানো যাবে না এমন অমোঘ। শব্দ বার বার এই পদগুলিতে ব্রহ্ম হয়ে এসেছে, কারণ যে শব্দ, সেইই মাধব!
গুনিন : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৩ মে ২০২২ | ৪৫৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫০
এ তল্লাটে কে না জানে, আজুদের বাড়ির পাশের ঢিবির উত্তর পশ্চিম কোণে চালা পড়ো পড়ো ভিটেয় ঘাপটি মেরে বাস-করা আকালু আসলে এক ভয়ানক গুনিন। যতো গরু ছাগল মরা বাচ্চা বিয়োয়, যতো মেয়েছেলের অসময়ে গর্ভজল খসে, সবের পেছনে ঐ আকালু শালা। ওর নজর পড়লে ফলন্ত লাউ কুমড়ো অব্দি বিলাই কুত্তার শুকনো নাদির মতো খটখটে হয়ে যায়। আবার ভ্যান চালানো ছেড়ে দিয়ে কেউ যদি বিপুল বিষয়আশয়ের মালিক বনে যায় রাতারাতি, ঠিক জানবে তার পেছনে রয়েছে আকালুর দেওয়া মাদুলি আর কবচের কেরামতি।
মাধব গ্যাডগিল, মানুষ ও প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্র : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ জুন ২০২২ | ২৭৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
মাহুতেরা বলাবলি করছিল এই অরণ্য তো কেবল ট্যুরিস্টদের মনোরঞ্জনের জন্য নয়। এটা পাখি,বাদুড়, বাঁদর,কাঠবেড়ালি এবং অন্য অনেক প্রাণীর বসতি। ডুমুর গাছ খুবই উপকারি, কারণ বছরে অনেকবারই এতে ফল আসে আর যখন অন্য কোনও ফল পাওয়া যায় না, তখন শুধুমাত্র ডুমুর ফলে বেঁচে থাকে এমন প্রাণীও আছে। এই যে যথেচ্ছ এই গাছের ডালপালা ভাঙছি, এক মাহুত আরেক জনকে বলল, এতে কিন্তু বনের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে । আমাদের ভেবে দেখা উচিত এটা আমরা চালিয়ে যাব কিনা।
চারটে দশের ঘন্টা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৩ জুন ২০২২ | ২৩৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
চারটে দশের ঘন্টা পড়তে গিয়ে তাই নিজেকেই ফিরে পড়ি। মনে হয় এ কোনো বিশেষ ব্যক্তির স্মৃতি-গাথা নয়, বরং সত্তর আশির দশকে ব্যাপ্ত মফস্বল তার সমস্ত কাহিনি নিয়ে এইখানে জ্যান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ অরহান পামুকের স্মৃতিকথা ইস্তানবুলের মতোই এতে শুধু ব্যক্তি নয়, প্রাধান্য পেয়েছে বিশেষ সময় এবং স্থান। নাই বা হলো সে কোনো বিখ্যাত শহর, কিন্তু মেদিনীপুরের কাঁসাই কী মন্ত্রবলে উত্তরবঙ্গের মানসাই নদীকে স্মৃতির জলোচ্ছ্বাসে মিলেমিশে একাকার করে দিয়েছে।
গভীর নৈঃশব্দে জাত অমোঘ শব্দ আর ছবি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২০ জুন ২০২২ | ২১১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
অব্যর্থ আর অমোঘ শব্দ, শব্দের পর শব্দগুচ্ছ যা জন্ম নিতে পারে কেবল গভীর নৈঃশব্দের মধ্যে আর তাকে রঙে রূপে সাকার করা ছবির পর ছবি। এই যুগলবন্দীর পেছনে যাদের মনন আর শিল্পচেতনা তারা আমার থেকে তো বটেই অনেকের থেকেই অনেক বড় মাপের সৃষ্টিশীল মানুষ, একথা স্বীকারে আমার কোনো লজ্জা নেই। অর্চন মুখার্জির তোলা সব অসাধারণ ফোটোগ্রাফ বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হয়ে তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। তা যে এমনি এমনি নয়, নৈশঃব্দের শব্দগুচ্ছে পাতার পর পাতায় তার অকাট্য প্রমাণ। ভাবনা পরিকল্পনাও তার। আর কথা? নিচের উদ্ধৃতি টুকু পড়ুন। তৃতীয় পরিসরের মানুষের গোটা জীবন কতো অল্প কথায়, কী অপরিসীম ব্যঞ্জনায় বিধৃত হয়ে আছে অভিজিত মজুমদারের কলমে !!
ড্রয়ারওয়ালা কাঠের টেবিল : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ১৭ আগস্ট ২০২২ | ২৮৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৯
সে যাক, এ তো আমার দাদুর গল্প নয়, দেশভাগের কাহিনী, যার গায়ে লেগে আছে, আগুন, হত্যা, অসম্মান আর সব হারাবার টক টক গন্ধ। কিন্তু একথা তো ঠিক, দেশভাগ সম্বন্ধে আমার জ্ঞান পুঁথিগত হয়েও হতে পারেনি ঐ ড্রয়ার দুটির জন্য। আসলে আজকাল স্মৃতি নির্ভর অভিজ্ঞতা, গল্পকাহিনী, এগুলোও ইতিহাসের অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তাই মনে পড়ল ঐ অবিনাশী ড্রয়ার দুটির কথা, যে দুটোতে এখনও রয়ে গেছে মা, ঠাম্মা, দিদা এমনকি প্রতিবেশীদেরও নিজস্ব অভিজ্ঞতা অথবা নিছকই শোনা কথা। টুকরো টুকরো আলাপ এবং প্রলাপ, যাদের জোড়া দিলে উঠে আসে এই উপমহাদেশের একটি বালিকার অকিঞ্চিৎকর শৈশব এবং সেই শৈশবের গায়ে লেগে থাকা এক ভয়ংকর অবিমৃষ্যকারিতার তীব্র গন্ধ। দেশভাগের অনেক পরে জন্ম বলে যে বালিকার পাওনা ছিল একটি নিরুপদ্রব মেয়েবেলা, যে ছিল এইসব ঘটনা থেকে অনেক দূরে, দেশভাগের গল্পকথার অভিঘাত তাকেও ছাড়েনি। চারপাশে মন পালটে দেওয়া, মনুবাদী করে তোলার সমস্ত মাল মশলাই তৈরি ছিল, কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ঐ গল্প ভর্তি গোপন দুটি ড্রয়ার আর সাহিত্যপাঠ। ভাগ্যিস!
অ-মৃত : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০২ অক্টোবর ২০২২ | ৩১১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৩
"ওই দ্যাখ, খাল পরিষ্কার করার একটা লোক পাঁকে পড়ে আর উঠতে পারছে না," কে যেন চিৎকার করে উঠল। সদ্য ঘুম ভাঙা মুখগুলো অমনি একসঙ্গে ঘুরে গেল কাদাজলে ভরা খালটার দিকে। দু'দিন তুমুল বৃষ্টির পর যেটা কানায় কানায় ভরা আর ময়রার দোকানে সদ্য তৈরি গরম রাবড়ির ট্রে-র ওপর থেকে ওঠা অল্প সাদা ধোঁয়ার মতো যার পুরোটা জুড়ে উঠছে তীব্র দুর্গন্ধের ভাপ।
এমনিতেই কেষ্টপুর খালের ধারের বস্তিগুলোর ঘুম ভাঙে অনেক সকালে, কল আর পায়খানার দখল নিয়ে মেয়েদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ঢালু পারে জায়গা প্রচুর, কিন্তু আব্রু নেই। তাই ওখানে কেবল বাচ্চা আর পুরুষ মানুষের ভিড়। ঝগড়াঝাঁটি ক্যালোর ব্যালোর লেগেই আছে।
তার ওপর আবার একটা জলজ্যান্ত মানুষ খালে নেমে দ্রুত পাঁকে ডুবে যাচ্ছে, এই নতুন উত্তেজনায় গোটা বস্তি ভেঙে পড়ল খালের ধারে। কারও হাতে নিমডালের আধ খাওয়া দাঁতন, কেউ সেফটিপিন আটকান ব্লাউজের ফাঁকে ঝুলে পড়া মাই চোষা বাচ্চা কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে, সোমত্ত মেয়েরা নজর আটকাবে বলে ব্রা হীন নাইটির বুকের ওপর আলগোছে গামছা ফেলে রেখে ঝুঁকে পড়ে ডুবন্ত লোকটাকে দেখার চেষ্টা করছে। এর মধ্যেই আবার ঘরের খেয়ে বনের মোষ-চরানেরা দৌড়ে গেল পুজো প্যান্ডালের পাশে রাস্তা আটকে ফেলে রাখা লম্বা বাঁশ আনতে।
জালিয়াঁওয়ালা বাগের জার্ণাল : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
যা ছিল হাহাকার থেকে উদ্ভূত এক বিরাট অনুভূতি-স্থল, দেশপ্রেমের চরম নিশান, তা হয়ে গেল 'বাগান', প্রমোদ-উদ্যান না হলেও ভ্রমণবিলাসীর রম্য কানন! তবে কি পাঞ্জাবেরই একার দায় ইতিহাসের এই রক্ত দিয়ে লেখা অধ্যায়কে অটুট রাখবার? দিল্লি- হরিয়ানা সীমান্তে কিষাণ কিষাণীরা উধম সিং-এর ছবি-আঁকা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে আন্দোলন করেন আর আমরা দলে দলে ছুটি ওয়াগা বর্ডারে, যেখানে দু দেশের ইউনিফর্ম পরা সৈনিকের দল ঝুঁটিওয়ালা মোরগের মতো বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে রোজ অবনমিত করে যার যার দেশের পতাকা। প্রবল করতালি, হাজার মোবাইলের ঝলকে শেষ হয় সেই বিচিত্র নাচনকোঁদন, নকল দেশপ্রেমের উচ্ছাসে আকাশ বাতাস ভরে ওঠে। অথচ জালিয়ানওয়ালাবাগ আমাদের ভ্রমণ সূচিতে কদাচিৎ থাকে, ঘরের শিশুটিকে কখনও বলি না উধম সিং, ভগত সিং-এর কাহিনি! এই সত্যিকারের শহিদ-এ-আজমদের ভুলে গিয়ে নির্মাণ হতে থাকে নতুন শহিদ, ব্রিটিশের কাছে লেখা মুচলেকাকে কার্পেটের নীচে ঠেলে দিয়ে শহিদত্ব আরোপকে নতমস্তকে মেনে নিই।
এইখানে, এই পরিস্থিতিতে আলোচ্য বইটির গুরুত্ব অসীম। খুবই সুলিখিত, অজস্র সাদা কালো ছবিতে সাজানো বইটি হাত ধরে আমাদের নিয়ে যায় সঠিক ইতিহাসের কাছে, সেই অর্থে সত্যেরও কাছাকাছি।
হারিয়ে যাওয়া গল্প : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ০১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৯৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
প্রথমেই যা নিবিষ্ট করে তা হল এই বইয়ের অত্যন্ত সুলিখিত ভূমিকাটি। লেখক পাঠক দুইয়ে মিলেই তো সাহিত্যের সেতু গড়া। "সকলে কি লেখেন? কত নিবিষ্ট পড়ুয়া আছেন, খুঁজে খুঁজে বার করে আনেন সাহিত্যের মণি-মুক্তোগুলি। ভালো পড়ুয়া আছেন বলেই অনেক মহৎ লেখক বেঁচে ওঠেন বিস্মৃতি থেকে।" এইরকম পাঠকেরাই খুঁজে বার করেছেন কতোদিনের হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলি। তাদের অনেকগুলিই বিশ্বমানের, অথচ তাদের স্রষ্টারা আজ বিস্মৃত। এদের সংগ্রহ করে এবং একত্রে সংকলিত করে আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন সাহিত্যিক অমর মিত্র, প্রকাশনার জন্য গুরুচন্ডা৯। আমাদের সাগ্রহ অপেক্ষা থাকে পরবর্তী খন্ডগুলির জন্য, কারণ "এই সংকলন যেন আমাদের বংশলতিকা খুঁজে বের করা। সেই খোঁজের শুরু হলো মাত্র।"
রুহানি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এ এক অদ্ভুত বই। পাতার পর পাতা উলটেও আমি ঠিক করতে পারিনি এ কোন বৃক্ষের ফুল, কোন জনরেঁ এর উৎস। প্রবন্ধ, ইতিহাস, রসনা-রেসিপি, ইদানীং ফুড-ব্লগ নামে যা জগত-বিখ্যাত, শিল্প ও শিল্পীর ওপর কিছু কথা, নাকি কেবলই মনোহরণ দাস্তান বা আখ্যানগুচ্ছ। সব কাননের ফুলের সুবাস পাওয়া যাবে এতে আলাদা করে, আবার প্রত্যেকটি মিলেমিশে একটি নিবিড় কথকতা! বাংলা সাহিত্যে এরকম আর কিছু আছে কি?
সত্যবতী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : দোল | ০৯ মার্চ ২০২৩ | ২৪৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
রাস্তার ধারে ঝুপসি গাছপালাগুলো অব্দি কুয়াশার কম্বল মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটু বাতাস বইলে দেখায় বিশাল দৈত্যের মাথা নাড়ার মতো। ধোঁয়া-ওঠা বুক নিয়ে এলিয়ে পড়ে থাকা নদীর দিক থেকে কেমন একটা গোঁওওও শব্দ ভেসে আসে, যেন কেউ কাঁদে, কষ্টে গা মোচড়ায়, নিজের গলায় নিজের দশ আঙুল চেপে ধরে।
তাতে গা শিরশির করলেও অষ্টমী ভালোই জানে আসল বিপদ লুকিয়ে আছে পেছন বাগে। সে বিপদ যে কখন বিদ্যুতের মতো ঘাড়ের ওপর অব্যর্থ লাফিয়ে পড়বে কেউ জানে না। সে এক আশ্চর্য হলদে আগুনের শিখা, তাকে দেখার আগেই নিজের কানেই শুনতে পাবে নিজের ঘেঁটি ভাঙার মট মট শব্দ, আর কিছু বোঝার আগেই এতো আলহাদের শরীরখানা তেনার কষে ঝুলতে থাকবে। যেন তুমি আর মানুষ নও হে, দাঁত বার করা মরা বেড়াল একটা। শিউরে উঠে অষ্টমী তার কালো ফাটা হাতখানি কোঁকড়া চুলে ঢাকা ঘাড়ের ওপর আলগোছে বুলিয়ে নেয়। রক্ষে কর সোনার বন্ন বনবিবি, মা আমার!
ভয় তাকে পেড়ে ফেলে, হঠাৎ এমন কাঁপুনি দেয় যে শরীরের সমস্ত রোঁয়া খাড়া দাঁড়িয়ে ওঠে।
কাক যখন কাকের মাংস… : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৯ জুলাই ২০২৩ | ২৩২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
কুকিদের একাংশ দাবি করছে যে কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরের ৬টি জেলার ৬৭ হাজার হেক্টর জমি পাম তেল উৎপাদনের জন্য চিনহিত করেছে। বিজেপি সরকারের পেটোয়া শিল্পপতিদের হাতে ঐ জমি যাতে বিনা বাধায় তুলে দেওয়া যায়, সেজন্য দাঙ্গা লাগিয়ে আগে থাকতেই জনজাতিদের হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগও যে অমূলক নয় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের পরস্পরবিরোধী বয়ান। মণিপুরের তথ্য কমিশনার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও গুয়াহাটিতে খুব সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উত্তরপূর্বাঞ্চলের পাম চাষ সম্পর্কিত আলোচনায় হাজির মণিপুরের কৃষি অধিকর্তা ও রাজ্য পাম অয়েল মিশনের উপদেষ্টাকে সামনে রেখে গোদরেজ কম্পানি জানিয়েছে, গত বছরই মোট ৭টি জেলায় পাম চাষের জন্য সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছে। সংখ্যালঘু কুকি অধ্যুষিত চুড়াচাঁদপুর তাদের মধ্যে একটি ( সূত্র, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩শে জুলাই। ২০২৩)। অন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো একটি ভিডিওর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
কবি-কাহিনি : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | সাক্ষাৎকার | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ | ১৯০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
"কারও জন্য কোনো উপদেশ বা পরামর্শ দেবার নেই আমার। তবু যদি একান্তই জোর করেন এইটুকু বলব যে একটা বড় বোধের জায়গা থেকে সরে এসে কিন্তু কবিতা লেখা যায় না। সেই বড় বোধ কী, সেটাও একটা প্রশ্ন। আমাদের প্রকৃত অবস্থান এক অন্তহীন সময়, কালোত্তীর্ণ স্থান-কালের মধ্যে, এই বৃহৎ প্রেক্ষাপটটিকে বোধের মধ্যে রাখতে হবে। সেখান থেকে সরে গিয়ে কেবল চমকপ্রদের দিকে ঝুঁকে পড়লে সে চমক টেঁকে না।”
সীমান্তরেখা : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৯২৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
কলকাতার মানুষজনেরা এইসবের হুজ্জোতির খবর রাখে না। তাদের মন ভুলোবার হরেক চিজ আছে। এইরকম ঝামেলাওয়ালা জায়গায় দুদিনের ছুটি কাটাতেও কেউ আসে না, যতই জাগ্রত তীর্থস্থান হোক না কেন!
এটা একেবারেই সীমান্ত-এলাকা, কাঁটা তারের এ পাশে লাল নিশান ওড়া ভ্রামরী দেবীর মন্দির, খুব জাগ্রত জ্যান্ত তীর্থ, ওপাশে সবুজ মাথাওয়ালা গম্বুজ, সোনা পীরের থান। মানত রাখলে নাকি কেউ খালি হাতে ফেরে না। দুপাশেই যতদূর চোখ যায় সবুজ খেত, যার বুক চিরে দৌড়ে চলে গেছে মানুষ সমান কাঁটাতার। ছুঁচলো কাঁটা, খুব শক্ত তার, আর দবেজ। সেই ছুটন্ত তারের লাইন বরাবর রাতবিরেতে বুটজুতোর মসমস, সন্দেহ জাগলেই ঘন ঘন হুইসিলের আওয়াজ। তবে তাতে কী আর কিছু বন্ধ থাকে! যার যা করার সে তাই করে যায়, কাজের মতো কাজকাম চলে, নদীর মতো নদী বহে যায়। শুধু মাঝেমধ্যে কাঁটাতারের এপাশে ওপাশে আচমকা দুম শব্দের সঙ্গে লাশ পড়ে। চাপা আর্তনাদ, দৌড়োদৌড়ির শব্দ। তারপর সব চুপচাপ।
কী আমাদের জাত আর ধর্মই বা কী! : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৫ মে ২০২৪ | ৯৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
তথাকথিত নীচু জাতের নারীর সঙ্গে তথাকথিত উঁচু জাতের পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তানের জাত কী হবে সুপ্রিম কোর্টে এইরকম একটি কেস উঠেছিল (civil appeal no 654 of 2012, decided on January 18, 2012)।
সুপ্রিম কোর্টের অবজারভেশনের একটি অনুবাদ নীচে রইল।
ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ যদি আদিবাসী এবং অ-আদিবাসীর মধ্যে হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয়, সন্তান পিতার কাস্টেই পরিচিত হবে। এই ধরে নেওয়াটা জোরদার হয়, যদি এইরকম বিয়েতে পুরুষটি উঁচু জাতের হয়। কিন্তু এই ধরে নেওয়া সিদ্ধান্ত হিসেবে কখনই অপরিবর্তনীয় নয়। এইরকম বিয়ের সন্তানের প্রমাণ করার স্বাধীনতা থাকবে যে সে শিডিউল কাস্ট/ ট্রাইবের মায়ের দ্বারা আজন্ম পোষিত হয়েছে। উঁচু জাতের পিতার সন্তান হয়ে সে জীবনে কোনো সুযোগ সুবিধেই পায়নি, উপরন্তু বঞ্চনা, অমর্যাদা, অপমান এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছে, যেমনটি তার মায়ের কাস্টের লোকেরা হয়ে থাকে।
ভ্রমণের বিষ : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ০৫ জুন ২০২৪ | ৯৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
আমি বিদ্যাকে শুধোই, শুধু পাহাড়ের কি কোনো একক দেবতা নেই, যিনি তাকে রক্ষা করতে পারেন লাগাতার ধ্বংস আর নির্বিচার আক্রমণ থেকে? তাকে বলি, সমস্ত পাহাড়ের রাণী যে হিমাচল প্রদেশ তার চেহারা দিনের দিনের পর দিন যেভাবে কুৎসিত হয়ে উঠছে, তা কল্পনাতীত। পাঞ্জাব পেরিয়ে হিমাচলের সীমানায় ঢুকলেই শুধু উন্নয়ন, নির্মাণ, জেসিপি আর ট্রাকের পর ট্রাক! ট্যুরিজম পয়সা আনে, এজন্য রাস্তার পর রাস্তা তৈরি হচ্ছে, সিঙ্গল লেন ডাবল হচ্ছে বিয়াসের পাশে, সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে যাচ্ছে জেসিপি। ধুলোভরা গাড়ি চলার রাস্তাই হয়ত খুব শিগগিরই উন্নয়নের একমাত্র প্রতীক হয়ে উঠবে।
অন্ধ ও বধিরের দেশে? : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৬ জুন ২০২৪ | ১০৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
গুরুচন্ডা৯ প্রকাশিত রসিকার ছেলে উপন্যাসে রোহিত ভেমুলার ছায়ায় গড়া কেন্দ্রীয় চরিত্র রোশনের পাশে আছে ফয়জান, স্বনামে নয়, তার নাম ওখানে ফয়জল। তার মৃত্যুর পর মা ছুটে এসেছেন অতদূর থেকে। তাঁর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ, তার বর্ণনা আছে। সেই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন কাগজের রিপোর্ট ঘেঁটে লেখা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনেকের ইন্টারভিউ নিয়ে তারপর তিলে তিলে গড়া হয়েছে এই দুর্ভাগা তরুণের চরিত্র। তাকে দাঁড় করানো হয়েছে রোহিত ভেমুলার পাশে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায় এই ২০১৬ এবং ২০২২ কে এক সুতোয় গেঁথে ফেলাকে অন্যায়ের প্রবহমানতা দেখাবার পক্ষে খুবই কার্যকরী হয়েছে বলে ভেবেছেন।
আমরা পড়ে দেখতে পারি উপন্যাসের কিছুটা অংশ, যেখানে মায়ের চোখের জল আর প্রবল আকুতি বৃথা হয়ে যাচ্ছে। এমপ্লুরা নামের রাসায়নিক দিয়ে যে নরপশুরা ফয়জানের মৃতদেহ অবিকৃত রাখবার চেষ্টা করেছিল, তাদের নির্লিপ্ততা। রসিকার ছেলে প্রকাশ করে গুরুচন্ডা৯ যে সামাজিক যুদ্ধের সূচনা করেছে, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অমিতাভ চক্রবর্তীদের প্রতিবেদন।
পুস্তক সমালোচনা : স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন, নয়নজোড়া কৌমুদী : প্রতিভা সরকার
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ২৩ জুন ২০২৪ | ৭১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
পুজোর লেখার তাড়া তো রয়েইছে। তাই বলে তো আর হুমড়ি খেয়ে সবসময় লেখা যায় না, তাই লেখা, পড়া, সংসারের কাজ, প্রায়ই বিরাট দেশটার অলিগলি চিনে নেবার জন্য বেরিয়ে পড়ার প্রস্তুতি, এইসবের ফাঁকে ফাঁকে খুব ভালো বই পেলে এখনও গোগ্রাসে পড়ে ফেলি। সেইরকম বইয়ের সংখ্যা দিন দিন আমার দেরাজে বর্ধমান! এবার আসানসোলে বসেই পড়ে নিলাম জয়া মিত্র-দির “স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন” আর তার পরেই একেবারে অন্য স্বাদের আর একটি, অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর “নয়নজোড়া কৌমুদী।”