নবদ্বীপ হালদারের নাম বোধহয় এখনকার প্রজন্ম জানেন না। তার কৌতুক নকশা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল। পাঁঠার গরম আর রসগোল্লায় ইঁদুর পড়া--সব বাড়ির অনুষ্ঠানে বাজবেই।
রসগোল্লার দোকানদারকে, নবদ্বীপ হালদার বলতেন, আমি কি তোমার রসগোল্লার পাত্রে ইঁদুর পড়েছে, কাউকে বলেছি?
আর দুষ্টু লোকেরা বিয়ে বাড়িতে বাজাবেন-- ও সাধের জামাই রে তুই কেন মোর ভাতার হলি না।
একবার এক মাস্টারমশাইয়ের বিয়ে। যে বাড়িতে বিয়ে, সে বাড়িতেই থাকতেন তিনি আশ্রয়স্থল হিসেবে।
সেই বিয়েতে এই গান প্রথম লাইন বাজতেই বন্ধ।
আর একটা গান খুব জনপ্রিয় ছিল, সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী।
কিন্তু এগুলোর পাশাপাশি সিরাজউদ্দৌলা, নটী বিনোদিনী, মা মাটি মানুষ-- পালাও বাজতো।
১৯৭৭-র পর তরুণ অপেরার শান্তিগোপাল অভিনীত 'লেনিন' পালার জয়জয়কার। এই পালা রাশিয়ায় লেনিন পুরস্কার পায়।।
এর সঙ্গে বাজতো শম্ভু মিত্রের গলায় মধুবংশীর গলি', উৎপল দত্তের কন্ঠে নাজিম হিকমতের 'জেলখানার চিঠি'। পাশের গ্রাম উদগড়া সবুজ সংঘ ক্লাব মাইক কেনে, মাঠের ধান পাহারার টাকা বাঁচিয়ে। সেখানে বাবা ওই রেকর্ডগুলো নিজে কিনে দান করেন।
'লেনিন' পালার দাম মনে আছে ২৫ টাকা। আর আবৃত্তির রেকর্ড ১৫ টাকা।
কাজী সব্যসাচীর 'বিদ্রোহী' কবিতা খুব জনপ্রিয় ছিল। ফিরোজা বেগমের দূরদ্বীপবাসিনী প্রায় সবার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
আর পরে এল, তালাত মাহমুদ, মহম্মদ রফির নজরুল সঙ্গীত।
হিন্দির মধ্যে মুকেশের গান খুব প্রিয় ছিল আমার। বাবারও। বাজতো রাজ কাপুরের ছবির গান। আর ছেলে ছোকরাদের আবেদনে ফুল কলি রে ফুল কলি, দম মারো দম, পরে ডিং ডং ডিং।
শোলের গব্বর সিংয়ের সংলাপ মুখস্থ বলতে পারেন না-- এমন কাউকে পাওয়া যাবে না।
শ্যামল মিত্র, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের গান শিবু ভাই বাজাতেন চাঁদনি রাতে।
গোরুর গাড়িতে শুয়ে চাঁদনি রাতে শ্যামল মিত্র গীত চাঁদের সাম্পান গান না শুনলে জীবন বৃথা।
শুনবেন নাকি?
যদিও আজ চাঁদ দেখছি না!