এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  শরৎ ২০২৩

  • গুনাহ! গুনাহ!

    মোহাম্মদ কাজী মামুন
    গপ্পো | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮০২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মেনকার মেয়ের মাগ্গদশ্শক  | যদি এই জীবনের বন্দরে নানাদেশী তরী এসে নোঙর করে | ঘোড়ামারা দ্বীপ | দ্বিষো জহি | কবি যখন পাহাড় হয়ে যায় | ট্রফি | ফকিরি | বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব | কাঠের মানুষ | তাজ ও মাহোল | কবিতাগুচ্ছ | কোন নাম নেই | টিফিনবেলার গান | সান্দ্র ধাতবসঙ্গীত | মশা-ই | গুনাহ! গুনাহ! | রেনেসাঁস থেকে রসগোল্লা সবই কলোনিয়াল | সু-পাত্রের সন্ধান দেবে অঙ্ক | যদি বল প্রেম | যশপতির একদিন | চোদ্দপিদিম | গভীর জল | লেখা-সাক্ষাৎ | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং - পর্ব ১ | কন্যাকুমারী | সিন্ধুতট | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-১ | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-২ | আনন্দ মঠ – ইতিহাসের সন্তান, ইতিহাসের জননী | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ২ | অর্গ্যাজম | কবি-কাহিনি | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ৩ | কমরেড গঙ্গাপদ | বিপজ্জনক খেলা | বেলার বেতার | গভীর অসুখে নিমজ্জিত মণিপুর | আবোল তাবোল | শিউলিরা | বিসর্জন | এক রাজা, দুই কবিরাজ | হাওয়া হাওয়া | ভোলবদল | ধৃতরাষ্ট্র ও দশরথঃ মহাকাব্যের দুই পিতা ও তাদের রাজধর্ম | মারীকথা | দামামা | হাওয়া মোরগের জীবন | পলায়নবাদীর সঞ্জীবনী বটিকা | নিত্যগতি | তিনটি কবিতা | চিত্রকর | যাবার কথা



    ১.

    ছেলেটি হাঁটছে। ভীরু একটা চাহনি। কিছুটা মুচড়ে যাচ্ছে তার দেহ, মাঝে মাঝেই হয়ে পড়ছে ভারসাম্যহীন। কিন্তু এর মাঝেই রাস্তার দু’দিকটা দেখছে সে। এ শহরেরই বাসিন্দা সে, কিন্তু এ সড়ক আর মহল্লা তার অচেনা। রাস্তাগুলি এত সরু, কোথাও কোথাও দুজন লোকেরই হাঁটতে কষ্ট হয়! আর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িঘরগুলি এত বিচিত্র আকার ও রংয়ের, দেখে মনে হয় যেন বইয়ে পড়া রূপকথার কোন দেশ! বড় বড় চোখজোড়া দিয়ে ছেলেটি যখন সেই রূপকথাকে দেখতে থাকে, তখন তার মধ্যে কেউ চাইলে অভিযাত্রীর একটা ছাঁট পেলেও পেতে পারে।

    ছেলেটির সামনেই রয়েছে একজন। তাকে যুবক বললেও বলা যেতে পারে, তবে একজন উঠতি যুবকের যে তরতাজা রূপ, আর প্রাণচঞ্চল ভাব, তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না তার মধ্যে। আর সেও হাঁটছে, তবে ছেলেটির মত রাস্তার দু’পাশে তাকাচ্ছে না। সে হাঁটছে হড়হড় করে। যেন কিসের একটা তাড়া, কোথাও অপেক্ষা করে আছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু! যুবকটির চোখ অবশ্য মাঝে মাঝে ছুটে যাচ্ছে পেছনে, ছেলেটির দিকে।

    ‘আরেকটু জোরে পা চালাইতে পারোস না? পুরুষ মানুষ কি এভাবে হাঁটে?’ ভয় পেলেও ‘পুরুষ’ শব্দটা শুনতে ভাল লাগে ছেলেটির। সে তাহলে আর ছোট্রটি নেই, বড় হয়ে উঠছে! কিন্তু পরক্ষণেই শরম পেয়ে মাথাটা নীচু করে ফেলে! এক সময় কী মনে করে সিনাটা একটু টান করে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয় সে।

    সেই সময়টা, হাইস্কুলে উঠার পর বছর গড়াতে চলেছিল, দিন-রাত ছেলেটির একটাই চিন্তা! কী করে বড় হওয়া যায়! কী করে হাঁটা-চলায়, কথা-বার্তায়, আচার-আচরণে, চোখের চাহনিতে, পেশির সঞ্চালনে - একটা বড় মানুষের ভাবভঙ্গি ফুটিয়ে তোলা যায়! কেন জানি, ছোট থাকতে লজ্জা করত, যেন এর মধ্যে এক কাপুরুষতা আছে! সেজন্যই কিনা লিটন মামা এই সময়টায় যখন তাদের বাড়ি আসত, মামার লগ ধরতে সে দু’হাতের সাহায্যে তেমন করেই বল প্রয়োগ করত, যেমন করি মাঝি বদ্ধ দরিয়ায় লগির সাহায্যে নৌকাকে সম্মুখপানে ঠেলতে থাকে!

    প্রথম প্রথম পরীক্ষা শেষে ঘটনাটা ঘটলেও, এক সময় এর ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ল। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও মামার সাথে ঘুমোতে যাবার আবদার থাকতো মোরসালিনের! তবে লিটন নামের এই যুবকটি কিন্তু তার আপন মামা ছিল না। মায়ের এত দূর সম্পর্কের ভাই ছিল যে, মোরসালিন মনে রাখত পারত না ক্রমটা। লিটন মামা একটা বইয়ের দোকনে চাকরি করত, আর থাকত পুরনো ঢাকার একটি স্যাঁতসেতে মেসে, যার দোতলায় উঠতে উঠতে পিচ-কালো নোনা-ধরা দেয়াল, কড়িবর্গায় রাজত্ব করা ধুলোর পুরু আস্তর, আর পলেস্তরা খসে শ্যাওলা গজানো ইটের কংকালে উঁকি মারা অবশ্য দ্রষ্টব্য ছিল যে কোন পরিদর্শকের জন্য। এছাড়া রয়েছে কাঁথা বালিশের ম্যাড়মেড়ে বাসী গন্ধ। একটা পুরনো দিনের এলিয়ে পড়া আলনা, আর হাঁটু-ভাঙা রঙ-উঠা চৌকির তলা চেপে ধরা একটা ফেটে পড়া বিরস-বিবর্ণ ট্রাঙ্ক। সব মিলিয়ে দমবন্ধ অবস্থা!

    কিন্তু এ পরিবেশটাই এক সময় ভাল লাগতে শুরু করে মোরসালিনের, আকর্ষণ করতে থাকে চুম্বকের মত! আসলে সে বড় হতে চেয়েছিল, আর তার কাছে মনে হত বড় হওয়া বুঝি এমনি - একটা গা ঘিন করা জীর্ণ-শীর্ণ মেসে থাকতে হয়, একা একা ঘুমোতে হয়, রাতে ভূতের ভয় করতে হয় না, নিজের জামাটা নিজেই ইস্ত্রি করতে হয়, ময়লা কাপড়টা নিজের হাতেই কাঁচতে হয়, হোটেলের খরচ বাঁচাতে ও ভেজাল খাবার এড়াতে রান্নাটা নিজেই করতে হয়, আর ঘরদোরটা এলোমেলো রেখে বাইরে বেরিয়ে পড়তে হয় শার্টটা ভালমত প্যান্টে ইন করে, হাতাটা গুটিয়ে, চুলে একটুখানি ব্রাশ করে। বড় হওয়া বুঝি এমনি কিছুটা বুনো, কিছুটা আদিম! আর নিভৃতচারিতার একটুখানি অনুশীলন সেই রূপকথায় পড়া সাধুপুরুষদের মত!

    সত্যি বলতে কি, লিটন মামাকে কিছুটা অনুকরণ করতে শুরু করে দিয়েছিল মোরসালিন! লিটন মামা ছাড়াও আরো অনেক বড়রা ছিল, কিন্তু তারা তো বাড়িতে এসেই নাম ধরে ডাকত না মোরসালিনকে, আর হাতে গুঁজে দিত না চকলেট বা কেক, অথবা, পরীক্ষার ফল বেরুতেই নিয়ে আসতো না মারাত্মক কোন সায়েন্স ফিকশান বা ডিটেকটিভ উপন্যাস। এমনকি ছুটির দিনে যখন মা ব্যস্ত থাকতো রান্নাঘরে, আর বাবা বসত হিসেব নিকেশে সঞ্চয়পত্রের কাগজগুলি নিয়ে, আর একই বাসায় থাকা আপন ছোট মামাটাও চলে যেত বন্ধুদের মাস্তি আড্ডায়, সে সময় যদি মোরসালিনের চোখ-মুখটা ফুলে যেত রক্তবর্ণের আভা ছুটিয়ে, তখন মা তো লিটন মামাকেই ডেকে আনতেন একটুখানি ঘুরিয়ে আনার জন্য - হোক শিশু পার্ক, বা, যাদুঘর।

    কিন্তু এসব নয়, লিটন মামার টানটা বাঁধা ছিল অন্য কোথাও। মামা ছিল গল্পের এক অনন্ত আঁধার! এই যে এত অল্পবয়সেই এত সব কিছু জানা মোরসালিনের আর এ নিয়ে তার কদরের অন্ত নেই বন্ধুদের কাছে, সে লিটন মামার জন্যই। লিটন মামা যখন রাক্ষস-খোক্কস আর রাজা-রানীর গল্পগুলি বলত, তখন তার কণ্ঠে, আর চোখে-মুখে খেলে যেত সেই ছবিগুলো; স্পষ্ট দেখতে পেত মোরসালিন কি করে উজির মশাই ষড়যন্ত্র করছে রাজকুমারকে জব্দ করতে, আর রাজকুমার কী করে সেসব ভুন্ডুল করে দিয়ে জিতে নিচ্ছে রাজকন্যাকে! এতটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে পড়ত সে যে, গল্প শেষ হলেও মামার ছুটি হত না, আরো গল্প চাই! বলতে কী, ধীরে ধীরে মারাত্মক এক গল্পের আফিমে বুঁদ হয়ে পড়ছিল মোরসালিন!

    ২.

    লিটন মামার এভাবেই যেন এক অঘোষিত চাকরি জুটে গিয়েছিল মোরসালিনদের বাসায়। প্রথম প্রথম যখন আসত, তখন এই দূর সম্পর্কের ভাইটির কাছে গাঁয়ের কথা শুনতে শুনতে ভাত বেড়ে দিত প্লেটে তার মা, এবং এ করে গামলার পর গামলা শেষ হয়ে গেলেও মোরসালিনের মা’র হুঁশ হত না। খাওয়া শেষ করে লিটন মামা অবশ্য দাঁতে একটা কাঠি খুচাতে খুচাতে তার বাসার পথ ধরত, আর মোরসালিন মনে মনে ভাবত, কোথায় যাচ্ছে এই রাতে লিটন মামা? সে কি ঘুমোয় না তাদের মত? রাতেও তার কাজ থাকে?

    প্রথম প্রথম এই কৌতূহল থেকেই লিটন মামার পিছু ধরত মোরসালিন। অন্য কেউ হলে হয়ত মারধোরের প্রশ্নটা উঠত, কিন্তু লিটন মামা তার অঘোষিত চাকুরিটা এতটা আনুগত্যের সাথে পালন করতো যে, অভিভাবকেরা যাবার কালে শুধু মোরসালিনের ব্যগটায় একটু উঁকি মেরে দেখত যে বইগুলি ঠিকমত আছে কিনা। তাদের যেন এমনটাই মনে হত, বরং গেলেই ভাল করবে, হয়ত লিটনের কাছে বসে দু’একটা অঙ্ক করবে, অথবা, একটুখানি ভূগোল আর ইতিহাস শিখবে; কিন্তু বাসায় থাকলে তো টিভি দেখেই সময়টা কাটিয়ে দেবে!

    লিটন মামা অবশ্য তার মেসের ঐ দু’শো বর্গফুটের ঘরটাতে পৌঁছেই মোরসালিনকে বই বের করতে বলত। এদিকে জানালার কপাটটা যা লাগাতে গেলেই কড়াগুলো ক্যাচ ক্যাচ করে কেঁদে উঠত সেই পুরাকীর্তির দালানে, তার বাইরে একটুখানি উঁকিঝুঁকি দিয়ে মোরসালিন মামাকে অভয় দিয়ে বলত, ‘তুমি চিন্তা কর না, বই পুরো মুখস্ত আছে আমার, স্কুলের টিচার যেখান থেকেই ধরুক না কেন, আটকাতে পারবে না। তুমি হাতেম তাইয়ের বাকী গল্পটা শুরু করে দাও।‘ কিন্তু লিটন মামা গল্প শুরু করলেও মোরসালিন ইদানিং তাতে কমই প্রবেশ করত, বরং নিজের গল্পে সে আনন্দমুখর সব ভ্রমণ করত, বড় হয়ে কী কী করবে তার আকাশ ও পাতাল ঘুরে আসত! ইদানিং মোরসালিনের এমন হচ্ছিল, যেন নিজের বাসায় মা-বাবার সান্নিধ্যে এই নিজস্ব গল্পগুলো করতে নেই!

    একদিন লিটন মামার গল্পের একটা অংশ তাকে প্রায় চাটি মেরেই বের করে দিল নিজের গল্পরাজ্যটা থেকে। এক যুবরাজ না কি রানিমাতাকে একটি বিশেষ মুহূর্তে দেখে ফেলে আর এক সভাসদের সাথে। এরপর থেকে রানিমাতার সব ভালবাসা উবে যায় নিজের সন্তানের প্রতি। যুবরাজ যেন রাজা না হতে পারে, সেজন্য চলতে থাকে নানা ষড়যন্ত্র, কুটিল কূটনীতি। কিন্তু সেই কূটনীতিতে একটুও আগ্রহ ছিল না মোরসালিনের, তার মন তো পুরো দখল করে রেখেছিল ‘বিশেষ মুহুর্ত’ শব্দটা। সে মিনিটে মিনিটে প্রশ্নটা চড়াচ্ছিল লিটন মামার উনুনে, কিন্তু সেই উনুন বারবারই নিভে যাচ্ছিল একটা সতর্কবাণীতে , ‘এগুলি নিয়া কথা কওন গুনাহ!’ কী আশ্চর্য, মোরসালিনের ইন্দ্রিয়গুলো যেন এরপর সপাং সপাং ঝাঁপিয়ে পড়ল সেই গুনাহরই পাঁকে! হঠাৎ করেই যেন খুলে গেল চেতনার ইন্দ্রপুরী, আর সেখানে গুনগুন রবে ঢুকতে শুরু করল গুনাহর দল!

    লিটন মামা উত্তর না দিলেও মোরসালিন সকাল-সন্ধ্যা ভেবে ভেবে একটা জিনিস বের করে ফেলল; আর তা হল, এই বিশেষ মুহূর্তটা যা রানির ক্ষেত্রে রচিত হয়েছিল, সেসব সাধারণত ঘটে স্বামী-স্ত্রী হলেই। বিষয়টি আরো নিশ্চিত হতে লিটন মামাকে জিজ্ঞেস করার কথাটা মাথায় আসে তার; কিন্তু পরে নিজেরই হাসি পায়, যে লোক এখনো বিয়ে করেনি, তার কাছে বিয়ের বিষয়-আশয় নিয়ে জানতে চাওয়া! লিটন মামার বিয়ে নিয়ে অবশ্য অনেক দিন ধরেই তোড়জোড় চলছে, মোরসালিনের মা’ও মাঝে মধ্যে মেয়ে দেখেছে। কিন্তু সেই তাকেই আবার বলতে শোনা যায়, ‘ছ্যামড়ার কপালডাই খারাপ! নাইলে লম্বা, চওড়া, ফর্সা, শিক্ষিত – আর কী লাগে!’ সত্যি যে, লিটন মামার সেই অর্থে কোন চালচুলো নেই। কিন্তু সে তো পড়াশুনা জানে, আর একটা পুস্তক প্রকাশনা অফিসে চাকরিও করছে, মাস গেলে একটা ফিক্সড রোজগার বাঁধা তার জন্য, সে যতই সামান্য হোক না কেন! কিন্তু মেয়েপক্ষ রাজীই হতে চায় না, এমনকি স্ট্যাটাসে মামার থেকে নীচুতে থাকলেও!

    তবে মেয়েপক্ষ না বলে, মেয়ে বলাই উচিৎ। প্রায়ই দেখা গেছে মেয়ের বাবা-মার সাথে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে, কিন্তু যেই না মেয়ের সাথে সামনা-সামনি পর্বটা পার হয়েছে, আস্তে করে কেশে নিয়ে জানিয়েছে মেয়ের গার্জেন, ‘মাইয়া আরেকটু সময় নিতে চায়, কয় পরীক্ষাডার পরে….।‘ মেয়েগুলি কেন যে পছন্দ করে না লিটন মামাকে, তা মায়ের মত মোরসালিনও বুঝে উঠতে পারে না। তবে সে একটা বিষয় খেয়াল করেছে, যখনই কোন মেয়ে সামনে পড়ে, লিটন মামা যেন কেমন হয়ে যান, তার চোখদুটো কেমন ঘোলাটে আকার ধারণ করে! ধরা যাক, লিটন মামা আরব্য রজনীর নতুন কোন গল্প শুরু করেছেন, তার গমগমে কণ্ঠে সিন্দাবাদ যখন নাও ভাসিয়েছে সাগরের বুকে, জমে উঠেছে সিনেমা, হঠাৎ করেই পড়ে গেছে পর্দা, আর প্রবল একটা ধাক্কা খেয়ে গড়াতে গড়াতে মোরসালিনের চোখ লিটন মামার সাথে গিয়ে পড়েছে জানালার বাইরে, যেখানে হেঁটে যাচ্ছিল আটোসাটো সলোয়ার কামিজ পরা আর ঠোঁটের রেখায় সূর্যের আভা খেলে যেতে থাকা এক তরুণী। সূর্যের সেই আভা অচেনা এক হলদে রশ্মির আকার নিয়ে লিটন মামার চোখে-মুখে এমন বিকিরণ সৃষ্টি করত যে, জ্বলন্ত কড়াইয়ের ঝলসানো মসলার মত ঠিক্‌রে ঠিক্‌রে বেরুত পিলে চমকানো স্ফুলিঙ্গ!

    কেন লিটন মামা এমনটা করত, তা জানা না থাকলেও মেয়েদের প্রতি তার ধারণা যে খুব একটা ইতিবাচক ছিল না, তা আরো আগে থেকেই জানা ছিল মোরসালিনের। দেখা গেল, খুব সুন্দর দেখতে একটি মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে সামনে দিয়ে, তো লিটন মামার মুখ ফস্কে বেরিয়ে এল, ‘এগুলা জাহান্নামি! আল্লাহ পুরুষ জাতির জন্য যতগুলি জাহান্নাম বানাইছেন, স্ত্রীলোকের জন্য বানাইছেন তার দ্বিগুন!’ লিটন মামা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ত, আর তার সাথে থাকলে মোরসালিনকেও পড়তে হত। মাঝে মাঝে যখন লিটন মামা তাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেত, শো’য়ের মাঝে নামাযের সময় চলে এলে, সে উঠে পড়ত মোরসালিনকে নিয়ে, পাশের কোন মসজিদে নামায সের নিয়ে ফের সিনেমা হলে ঢুকতো।

    এই একটা ব্যাপার ছিল লিটন মামার - নামায মিস্‌ না হলেও সে হুজুরদের মত কঠিন ছিল না। একুশ বা বৈশাখ এলে সাত সকালেই মোরসালিনকে নিয়ে হাজির হয়ে যেত রমনার মেলায়। রংবেরংয়ের পোশাকে সজ্জিত, কলহাস্য মুখরিত ভার্সিটির মেয়েরা যখন দল বেঁধে ঘুরে বেড়াত পার্কে, লিটন মামা মোরসালিনের হাতটা ধরে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিত; দুষ্ট যুবকদের মত ভীড়ের মধ্যে গলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে দেখা যায়নি তাকে কখনো। কিন্তু সেই দূর অবস্থান থেকেই মেয়েগুলির দিকে এক নাগাড়ে চেয়ে থাকতো লিটন মামা, আর চোখের দিগন্ত ছাড়িয়ে যখন মেয়েগুলি হারিয়ে যেতে আকাশের ওপারে, আক্ষেপের এক বিপুল ঢেউয়ে উপচে যেত তার কণ্ঠের উপকূল, ‘কেয়ামত ঘনায় আইছে! পরপুরুষের সামনে এমন বেপর্দা থাকা! গুনাহ, গুনাহ! গুনাহর মধ্যে ডুইবা আছে মানব জাতি!’

    মোরসালিন এসব কথার মানে পুরো বুঝতে না পারলেও গুনাহ শব্দটা তার মাঝে পুরুষ হওয়ার বাসনাটা নতুন করে জাগিয়ে তুলত। তার মনে হত, সে একজন পুরুষ যার উপর অর্পিত হয়েছে স্ত্রীলোকের পাপ থেকে পৃথিবীটা উদ্ধারের এক পবিত্র দায়িত্ব! একবার এক পার্কে মোরসালিনকে চিনে বাদাম কিনে দিচ্ছিল লিটন মামা। বিক্রেতা ছিল দুই বেনী করে চুল বাঁধা এক কিশোরী। এক হাতে ঠোঙ্গাটা নিয়ে অন্য হাতে যখন টাকাটা দিতে যাবে লিটন মামা, তখন হঠাৎ কী হল, মেয়েটি মামাকে উদ্দেশ্য করে ‘বদমাইশ, লুইচ্চা’ ইত্যাদি ছুঁড়ে দিতে দিতে অদৃশ্য হল। এদিকে লিটন মামার অস্ফুট স্বরটা বাতাসে ভাঙতে ভাঙতে পিছু নিয়েছিল মেয়েটির, ‘যতই দেমাগ দেখাস, যাবি কই! এই আমাগো কাছেই তো আইতে হইব! তগো বানানোই হইছে পুরুষের জন্য!’

    একজন পুরুষের অনেক কিছু করার আছে, ইচ্ছেমত চাইবার আছে, যতই দিন গড়াচ্ছিল লিটন মামার সাথে, মোরসালিনের মাথায় ততই শেকড় লম্বা করে যাচ্ছিল ধারণাটা! সেজন্যই হয়ত যখন মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে বেড়াতে আসা তার খালাতো বোনটাকে নিয়ে একদিন বিড়বিড় করতে শুনেছিল লিটন মামাকে, ‘মাশাল্লা! কী দুধে আলতা রং! এমন একটা মাইয়া পাইলে জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকে!’, তখনো মামা-ভাগ্নীর সম্পর্ককে ছাপিয়ে মোরসালিনের মাথায় ভর করেছিল পুরুষ, ‘সিনেমায় দেখা নায়ক-নায়িকাদের যেমন বয়েস, লিটন মামা আর চামেলি আপুর বয়েস তো সেরকমই, সুতরাং, এরকম তো হতেই পারে!'

    লিটন মামার আরো অনেক বিষয় ছিল, মাঝে-মধ্যে ভাবালেও মোরসালিন কিন্তু পড়ে থাকতো না ওসব নিয়ে। তার তো দরকার ছিল গল্প, বই, সিনেমা হল, মেলা, স্টেডিয়াম, পার্ক। আর এসব পূরণে লিটন মামার মত আর কেউ ছিল না। ওদিকে লিটন মামারও মনে হয় এসব দরকার ছিল, কিন্তু তার জন্য হয়ত ছিল না কোন সমবয়সী বন্ধু! মোরসালিন বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি, তা না। কিন্তু এমন দৃশ্য তার হরহামেশাই চোখে পড়েছে যে, সমবয়সী চাচা-মামারা লিটন মামাকে সামনে পেলেই ঠাট্রাবিদ্রূপে মেতে উঠছে, হাস্যরসের একটা রোল চিপড়ে চিপড়ে ঝরেছে চারপাশে।

    লম্বা-ফর্সা হলেও লিটন মামা সুদর্শন ছিল না, তার মুখে অনেকগুলো ব্রণের দাগ ছিল, আর পেট-গর্দানের অনুপাতটা বেঢপ টাইপের ছিল। তার কিছু দাঁত বড় ছিল, আর সে যখন হাসত, খুব বোকার মত দেখাত। তার পোশাকগুলি অতটা বিদঘুটে না হলেও একটা শার্ট আর প্যান্ট দিয়েই মনে হয় সপ্তাহ পার করে দিত। তাদের বাসায় এলে না বলতেই বসে পড়ত খাবার টেবিলে। কিন্তু এসব কি যথেষ্ট কারণ মামার সমবয়সী কোন বন্ধু না থাকার? মোরসালিনের মনে হত, আসল কারণটা নিহিত আছে লিটন মামার জ্ঞানে, তার বদান্যতায়! সে যে ছোটদের ভালবাসে, আর সময় দেয়, এটাই পছন্দ নয় তার সমবয়সী বড়দের! উত্তরটা পাওয়ার পর মোরসালিনের আসক্তি আরো প্রবল হয়েছিল লিটন মামার প্রতি! সত্যি বলতে কী, তারও যে বড় বয়সী বন্ধু একটাই ছিল, সমবয়সী বন্ধু অনেক থাকলেও!

    ৩.

    মাঝখানে বেশ কয়েক দিন লিটন মামাকে দেখা যায়নি মোরসালিনদের বাসায়। বড়দের অনেক জিজ্ঞাসা করেও কোন উত্তর পায়নি মোরসালিন। হয়ত কাজের ব্যস্ততা, যেমনি থাকে মোরসালিনের পরীক্ষার ব্যস্ততা! এরপর অনেক দিন বাদে মামা বাসায় এলে তার মুখ থেকেই জানা যায় কারণটা। পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রেইড দিয়েছিল তাদের প্রেসে। মালিককে হাতকড়া পরানোর সময় মামা কাছে ধারেই দাঁড়িয়ে ছিল, বুদ্ধি খরচ করে উধাও না হয়ে বরং কিছু যুক্তি তুলে ধরাকেই শ্রেয় মনে করেছিল! ফলে তাকেও সঙ্গী হতে হয় মালিকের। পরে যখন তদন্ত প্রতিবেদন থেকে তার নাম কেটে দেন সংশ্লিষ্ট ইনভেস্টিগেশান অফিসার কোন সংযোগ প্রমানিত না হওয়ায়, ততদিনে বেশ ক’দিন কেটে গেছে। জেল থেকে সোজা বাসায় চলে এসেছিল লিটন মামা, আর বেহুঁশ পড়েছিল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। সেরে উঠার পর জমানো টাকা দিয়েই চলছে তার, কোন কাজ-টাজ জোটাতে পারেনি এখনো!

    লিটন মামাকে সত্যি খুব শুকনো আর রোগা দেখাচ্ছিল; সে পুলিশের ঘায়ে, না কি, জ্বরের চাবুকে, তা বলা কষ্ট! কিন্তু সত্যি মায়া হয় মোরসালিনের মায়ের, গামলা ভর্তি করে ভাত হাজির করে তার সামনে, সাথে সদ্যই পাকানো দেশি কইয়ের ঝোল। পেট পুরে খেয়ে নিয়ে যখন মেসে ফেরার উদ্যোগ নেয় লিটন মামা, মোরসালিনও সঙ্গী হয়, তবে যতটা না মামার সঙ্গ পাওয়ার লোভে, তার থেকেও মামাকে একটুখানি সঙ্গ দেয়ার ইচ্ছেতে। আসলে এদ্দিন বাদে মেসে যাওয়ার রোমাঞ্চটা মরে গিয়েছিল মোরসালিনের। মেসটিতে প্রবেশ করার পর সে কারণেই হয়ত, গল্প শোনার সেই আদি ও বুনো নেশাটা আর ধরছিল না কিছুতেই। মেসটায় কিছু পরিবর্তন এসেছিল, জানালা-দরজায় লেগেছিল নতুন কিছু কড়া; কাঠ আর ইট সেজেছিল সস্তা কিন্তু নতুন বাস্না ছোটানো রংয়ে। তবে মোরসালিনকে এসব যতটা না আলোড়িত করছিল, পুরনো স্মৃতিগুলো তার থেকে বেশী অস্থির করে তুলেছিল – গহীন এক অরণ্য থেকে কোন অশরীরি যেন তাকে ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছিল!

    ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল, খেয়াল নেই। মাঝরাতে হঠাৎ একটা ব্যথায় কাতরে উঠল সে, ব্যথাটা কোমরের নীচে। কোন পোকা-টোকা হবে হয়ত! পাশেই তাকিয়ে দেখতে পেল বেঘোরে ঘুমুচ্ছে লিটন মামা, তার উল্টোদিকে কাত হয়ে। এরপর ব্যথাটা কমতে শুরু করলে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। কিছু সময় পরে ঘুমটা পুনরায় ভেঙে গেল, আর আগের ব্যথার স্মৃতিটা ফিরে এল। এবার তার মস্তিষ্ক পুরো সজাগ হয়ে উঠল, কোষগুলি যেন তলোয়ার খাড়া করে দাঁড়িয়ে পড়ল! আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আবিষ্কার করতে সক্ষম হল, এপাশ থেকে ওপাশে কাত হতে গেলেই কিছু একটা যেন বাধা দিচ্ছে।

    অন্ধকারেই আবছা করে লিটন মামার ঘুমন্ত চেহারাটা চোখে পড়ল, এবার অবশ্য মামা তার দিকেই পাশ ফেরানো। খুব আস্তে আস্তে কম্পিত কণ্ঠে সে ডাকল মামাকে। কিন্তু যেভাবে ঘুমোচ্ছে সে, একটুও চেতনা আছে বলে মনে হয় না। লিটন মামার সাথে একটা কাঁথাই শেয়ার করেছিল মোরসালিন। ভয়ে ভয়ে নিজের ডান হাতটা যা এতক্ষন বাইরে ছিল, তাকে কাঁথার তলায় নিয়ে গেল সে, আর মুহূর্তের মধ্যেই মেরুদন্ড দিয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল তার! প্রথমটায় বুঝতে না পারলেও, পরে বিষয়টা মাথায় আসতেই, হাত-পা অবশ হয়ে গেল তার, হৃদপিন্ড লাফাতে লাগল সজোরে! একটা রোমশ মাংসপিন্ড খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে তার গোপনাঙ্গ!

    একটু আগে নিজেই জাগাতে চাইছিল তাকে। আর এখন একদম কাঠের মত পড়ে রইল মোরসালিন, সামান্য নড়াচড়াও করল না! এরপর চোখের পাতাটা বুঁজে দিয়ে তার মধ্যেই কাটিয়ে দিল সে বাকি রাতটা। এমনকি ভোর হওয়ার পর যখন আপন মনেই সেই হাত আলগা হল, তখনো সে পাশ ফিরল না।

    ৪.

    ভাল করে ফোটেনি আলো কণিকারা, স্ট্রিট লাইটের হলদে সব ঘা লেগে রয়েছে যেন, ছাড়তে চাইছে না এতটা সময় এক সাথে কাটানোর পর! অবশ্য ইতিমধ্যেই জেগে উঠেছে পুরনো ঢাকার রিকশাগুলি, সরু আর প্যাঁচানো গলিগুলিতে কাঁসার টুংটাং বাজিয়ে তারা জানান দিচ্ছে নতুন এক দিনের।

    পথে নেমে অন্যান্য দিনের থেকে একটু দ্রুত হাঁটছিলেন লিটন মামা, আর মোরসালিনকেও তাড়া লাগাচ্ছিলেন; তার নাকি আজ একটা ইন্টারভিউ আছে, নতুন চাকরির।

    ‘’এত দুর্বল ক্যান! পুরুষ মানুষের মত পা চালাইতে …’’ মোরসালিনকে লক্ষ্য করে বলতে বলতে মাঝপথেই থেমে গেলেন লিটন মামা। তার ঠিক গা ঘেঁষেই চলে গেল ইউনিফর্ম পরা একটি মেয়ে, কোন কলেজে-টলেজে পরে নির্ঘাৎ! মেয়েটির স্কার্ফ গলায় বাঁধা ছিল, মুখে একটা হালকা প্রসাধনীর প্রলেপ! আর গা থেকে বেরুচ্ছিল পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ! মনে হয়, কোন ফাংশান-টাংশান, তাই সাতসকালেই বেরিয়ে পড়া!

    ‘গুনাহ! গুনাহ! এই দুনিয়া গুনাহর মইদ্যে বইসা আছে!’ মেয়েটি রাস্তার বাঁকে অদৃশ্য হতেই লিটন মামার গমগমে কণ্ঠটা কানে আসে মোরসালিনের, মামা তখনো ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে মিলিয়ে যাওয়া বিন্দুটির দিকে!

    গুনাহর ভয়েই কিনা, মোরসালিন দ্রুত পা চালাতে থাকে!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    মেনকার মেয়ের মাগ্গদশ্শক  | যদি এই জীবনের বন্দরে নানাদেশী তরী এসে নোঙর করে | ঘোড়ামারা দ্বীপ | দ্বিষো জহি | কবি যখন পাহাড় হয়ে যায় | ট্রফি | ফকিরি | বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব | কাঠের মানুষ | তাজ ও মাহোল | কবিতাগুচ্ছ | কোন নাম নেই | টিফিনবেলার গান | সান্দ্র ধাতবসঙ্গীত | মশা-ই | গুনাহ! গুনাহ! | রেনেসাঁস থেকে রসগোল্লা সবই কলোনিয়াল | সু-পাত্রের সন্ধান দেবে অঙ্ক | যদি বল প্রেম | যশপতির একদিন | চোদ্দপিদিম | গভীর জল | লেখা-সাক্ষাৎ | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং - পর্ব ১ | কন্যাকুমারী | সিন্ধুতট | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-১ | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-২ | আনন্দ মঠ – ইতিহাসের সন্তান, ইতিহাসের জননী | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ২ | অর্গ্যাজম | কবি-কাহিনি | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ৩ | কমরেড গঙ্গাপদ | বিপজ্জনক খেলা | বেলার বেতার | গভীর অসুখে নিমজ্জিত মণিপুর | আবোল তাবোল | শিউলিরা | বিসর্জন | এক রাজা, দুই কবিরাজ | হাওয়া হাওয়া | ভোলবদল | ধৃতরাষ্ট্র ও দশরথঃ মহাকাব্যের দুই পিতা ও তাদের রাজধর্ম | মারীকথা | দামামা | হাওয়া মোরগের জীবন | পলায়নবাদীর সঞ্জীবনী বটিকা | নিত্যগতি | তিনটি কবিতা | চিত্রকর | যাবার কথা
  • গপ্পো | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৫২525228
  • আশি বছর আগে প্রকাশিত ইস্মত চুঘতাইয়ের 'লিহাফ' (লেপ) গল্পের মেজাজ। গল্পের বুনোট মজবুত। গুনাহের ভয়ে স্বাভাবিক প্রবৃত্তির দমন আর তার ঠিকরে বেরিয়ে আসা বিকৃতি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও আশেপাশে চোখে পড়েছে।
  • রুমি বন্দ্যোপাধ্যায় | 27.13.***.*** | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:০৬525232
  • কঠিন বিষয়। অসাধারণ উপস্হাপনা।
  • বিজয়লক্ষ্মী মুখার্জী | 2409:4070:210b:b242::171e:***:*** | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪৫525249
  • বয়ঃসন্ধির গল্প, সুন্দর অবতারণা। 
  • Falguni Mazumder | ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৪৬525257
  • লিটন মামার সাধ ছিল সাধ্য ছিল না তাই গুনাহের বুলি আওড়াতেন।
  • ইখতিয়ার উদ্দিন | 202.86.***.*** | ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫৩525258
  • খুব ভালো একটা বিষয় এখানে নির্বাচন করেছেন লেখক এবং চমৎকার ভাবেই তা ফুটিয়ে তুলেছেন : বসয় সন্ধি কাল নিয়ে ভাবনা ঠিক এমনই।  তাছড়া সব শেষ এর ঘটনার বর্ননাটাও ঠিকঠাক। 
    তবে কিছু টাইপ মিস্টেক আছে। সম্পাদক মহোদয়কে অনুরোধ করছি পুনরায় চেক করার জন্য হয়তো আমার ভুলও হতে পারে। 
  • দীপেন ভট্টাচার্য  | 172.118.***.*** | ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:০৮525267
  • পুরোনো শহর। বয়োসন্ধি। তরুণ আর একজন। বদ্ধ সমাজ। লেখকের বর্ণীত ঘটনা অনেকের কাছে পরিচিত হবে, সেই অতিপরিচিতকে কাজী মামুন কোনো ছন্দপতন ছাড়াই ধরে রেখেছেন। লেখককে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
  • Riajul Islam | 103.125.***.*** | ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৪৯525271
  • অসাধারণ।
  • ওয়ালি উল্লাহ | 103.59.***.*** | ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:১৮525280
  • প্রকৃতিকে আমরা যখন কোনোদিক দিয়ে আটকিয়ে দেই তখন সেটা দিক পরিবর্তন করে অন্যদিকে ধাবিত হয়, যেটার ফলাফল সবসময় সুখকর হয় না। 
     
    তেমনি শারীরিক চাহিদাও প্রাকৃতিক নিয়মেই একটা সময় থেকে আসা শুরু করে। কিন্তু আমাদের সমাজ সেটা কখনও পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে বিলম্বিত করে অথবা একটা নিষিদ্ধ বস্তু বানিয়ে মোড়কে পুরিয়ে কোনায় রেখে দেই।
     
    এটাই এক সময় অতিপ্রাকৃত ভাবে বিকৃত উপায়ে বের হয়ে আসে.......
  • Md Moshin khan | 37.***.*** | ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ২২:১৯525318
  • স্যার গল্প লেখনীর ক্ষুর অত্যন্ত সুন্দর নিখুঁত। একজন শিশু বাচ্চা বড়দের থেকে সময় ও সংঘ পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা থাকে তাহা  মোরসালিন এবং লিটন মামার মধ্যে ফুটে উঠেছে এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। উক্ত সম্পর্কে মধ্যে শিশুর পড়ালেখার অভ্যাস, ধার্মিকতা ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, সংস্কৃতি মনা হিসেবে গড়ে উঠবে তাহা লিটন মামা ছেলেটির মনে বীজ বপন করেছে।
  • ইয়াসির আরাফাত শুভ | 27.147.***.*** | ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪৫525321
  • ❤️❤️❤️❤️ গল্পটা ভালো ছিল!!! ধন্যবাদ স্যার
    Congratulations 
  • ওবাইদুল্লা | 2401:4900:3a1b:aee5:7d99:ce89:3690:***:*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৩৬525370
  • গল্প বলার স্টাইলটা আলাদাই। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম।
  • | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১১525371
  • এতদিনে পড়লাম। ভাল লেগেছে।
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ০১ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩২525423
  • @রঞ্জন রয় দাদা 
    ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তব্যের জন্য। লেপ গল্পটা কই পাই? খুব ইচ্ছে করছে পড়তে। 

    @রুমি বন্দোপাধ্যায় দিদি 
    অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

    @বিজয়লক্ষ্মী মুখার্জি দিদি
    অনেক ধন্যবাদ। বয়োসন্ধির সময়ের গল্প বটে। তবে গল্পটা মোরসালিনেরই কিনা নিশ্চিত নয় তা। এ গল্প লিটন মামারও হতে পারে যে বয়সন্ধি পেরিয়ে এসেছে। আবার মোরসালিনেরও হতে পারে যেখানে সাপোর্টিভ রোল লিটন মামা। মোরসালিনের পুরুষ হওয়ার ইচ্ছেটা নাগরদোলায় ঘুরেছে - এভাবে দেখলে শেষ পর্যন্ত মোরসালিনেরই গল্প হয়ত। 

    @ ফাল্গুনি মজুমদার
    ধন্যবাদ। সুন্দর পর্যালোচনা। 

    @ইখতিয়ার উদ্দিন ভাই 
    ধন্যবাদ। ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। 

    @ দীপেন ভট্রাচার্য দাদা 
    অশেষ ধন্যবাদ। আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি আপনার এই বিশ্লেষণী মন্তব্য। অনেক শক্তি যোগাল। 

    @রিয়াজুল ইসলাম 
    অনেক ধন্যবাদ ভাই

    @ ওয়ালি উল্লাহ
    অনেক ধন্যবাদ। খুব সুন্দর বিশ্লেষণ। 

    @ মোহাম্মদ মহসিন খান 
    অনেক ধন্যবাদ ভাই পাঠ ও মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকবেন। 

    @ ইয়াসির আরাফাত শুভ
    অনেক ধন্যবাদ ভাই। উৎসাহ জাগানিয়া মন্তব্য। 

    @ওবাইদুল্লা
    অনেক ধন্যবাদ ভাই ইন্সপিরেশানের জন্য।

    @ দ দিদি
    অনেক অনেক ধন্যবাদ উৎসাহ দানের জন্য। 
  • উষস চট্টোপাধ্যায় | 103.175.***.*** | ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০১:০২525431
  • অদ্ভুত সুন্দর, বয়ঃসন্ধিকালের নাড়াচাড়া নিয়ে ভালো একটা কাজ..
  • সুচরিত চৌধুরী | 103.2.***.*** | ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০১:৩৪525434
  • একটি গল্প তখনই সার্থক হয়ে উঠে যখন লেখক গল্পে তার পর্যবেক্ষনকে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এই গল্পের গল্পকার অত্যন্ত সুন্দরভাবে সেটা করতে পেরেছেন। গল্পের সহজ সরল ভাষা গল্পটিকে আরো প্রাণবন্ত করেছে। সেই সাথে একটা রহস্যময়তা পুরো গল্প জুড়ে বিরাজমান ছিল যা লেখকের দক্ষতার পরিচয় বহন করে।
  • সঙ্ঘশ্রী সেনগুপ্ত। | 2401:4900:1c84:3803:18a:4892:2acc:***:*** | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২৮525481
  • গল্প বলার ভঙ্গীটা খুব ভালো লাগলো। বিষয়টাও।  
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৪525743
  • @উষস চট্রোপাধ্যায়,
    অনেক ধন্যবাদ দাদা। মন্তব্যটা উৎসাহ যোগাবে।
     
    @সুচরিত চৌধুরী
    "সেই সাথে একটা রহস্যময়তা পুরো গল্প জুড়ে বিরাজমান ছিল"
    কিশোর মোরসালিনের মাঝের রহস্যপ্রিয়তা ও লিটন মামার রহস্যময়তাকে ধরতে চেষ্টা করেছি দাদা। আমায়  যে এ মন্তব্য কী ভীষণ শক্তিশালী করল! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
     
    @সঙ্ঘশ্রী সেনগুপ্ত
    অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় সঙ্ঘশ্রীদি! খুব উৎসাহিত হলাম।  
  • কালনিমে | 103.244.***.*** | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৭525779
  • খুব ভাল coming of age টাইপ লেখা। চমৎকার
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৫526408
  • মাঝে মাঝে এমন গল্প পড়ার সৌভাগ্য হয় যা আমি একটি নিজস্ব পদ্ধতিতে পড়ি। পুরোটা পড়া হয়ে যাওয়ার পর কিছুটা বিরতি দিয়ে, কয়েক দিনও হতে পারে, হয়, গল্পটি এবার শেষ থেকে পড়তে পড়তে শুরুতে গিয়ে পৌঁছই। এই গল্প সেই রকম একটি। এই গল্পগুলি আমার স্মৃতিতে জায়গা করে নেয়। 
  • ইয়াসমিনা পারভীন | 2409:40e0:48:ccd7:8000::***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৪৯527398
  • সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছ বয়:সন্ধির গল্প। ভালো লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন