এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  শনিবারবেলা

  • পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ১৬ এপ্রিল ২০২২ | ২৭৪১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • এউক শহর


    পোল্যান্ড - শেষ পর্ব


    কেনা বেচা

    লিওপোলড স্টানিস্লাভ ক্রোনেনবের্গ নামক এক পোলিশ ইহুদি (পরে ধর্মান্তরিত) ব্যবসায়ী তামাকের ব্যবসা করে প্রভূত অর্থ অর্জন করেছিলেন। কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি যৌথ মালিকানার ব্যাঙ্ক খুললেন ওয়ারশ-তে, ১৮৭০ সালে। তার নাম ব্যাঙ্ক হানডলোভে, কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক। নাপোলেওঁর দাক্ষিণ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ওয়ারশ ডাচি, পোল্যান্ড নামের কোনো দেশ নেই। সেখানে টাকা ধার দেওয়া ও ব্যাঙ্কিং ব্যবসা ছিল ৯০% ব্যক্তিগত ইহুদি মালিকানায়। সরাসরি না হলেও, ওয়ারশ ডাচি কিছুদিনের মধ্যে বকলমে রাশিয়ান জারের অধীনে। দু’বছরের মধ্যে এই ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হল বার্লিন, মস্কো, সেন্ট পিটারসবুর্গ সহ অনেক পোলিশ শহরে। ব্যাঙ্কটির সমৃদ্ধি ঘটে অতি দ্রুত। জার নিকোলাসের সময় এই ব্যাঙ্কের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল রাশিয়ান সরকারের সামগ্রিক বাজেটের চেয়েও বেশি। সে সময় রাশিয়ান জারেরা রেল লাইন পাতায় ভীষণ আগ্রহী। ব্যাঙ্ক হানডলোভে সেখানেও বিপুল পরিমাণে অর্থ লগ্নি করে।

    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে পূর্ব প্রাশিয়া খানিকটা দখল করে রাখলেও, ১৯১৮ সালে পোল্যান্ড নামক দেশটির পুনরাবির্ভাব ঘটল। এই ব্যাঙ্কটি প্রকৃতপক্ষে পোলিশ সরকারের সকল আর্থিক লেনদেনের কাণ্ডারি হয়ে দাঁড়ায়, বেনামে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। দু’টি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে কোনোদিন দরোজা বন্ধ করেনি। ১৯৪৫ সালে স্বাধীন পোলিশ সরকার স্থাপিত হল। কমিউনিস্ট সরকার ব্যাঙ্কটিকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত করেননি। সে সময়ে ব্যাঙ্কটি পেল দেশের যাবতীয় বিদেশি বাণিজ্য ও মুদ্রা ব্যবসায়ের অধিকার।

    আটের দশকে ব্যাঙ্ক হানডলোভের লন্ডন অফিসে জিয়েরজিনস্কি ছিলেন শাখা প্রধান। কমিউনিস্ট পোল্যান্ডের ব্যাঙ্কিং ব্যবসায়ের সঙ্গে সেই আমার প্রথম সাক্ষাৎ-পরিচয়। কিছু পোলিশ ঋণ বেচার কাজ করি তাঁর সঙ্গে। পরে সেই ব্যাঙ্কের লুক্সেমবুর্গ শাখার সঙ্গে। সিটি ব্যাঙ্কের হয়ে পোলিশ দেনা তাঁকে বিক্রি করে আমরা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছি। আমার যুক্তি ছিল এই, যে, লিখিত সুদের তুলনায় অল্প দরে সেই ঋণপত্র কিনে (ডিসকাউন্ট) তিনি পোল্যান্ডের বিদেশি মুদ্রার খরচ কমানোর কাজে সহযোগিতা করেছেন! মহতী উদ্দেশ্য! এই সঙ্গে আমরাও সিটি ব্যাঙ্কের খাতায় পোলিশ ঝুঁকির পরিমাণ কমাতে সক্ষম হই। লাভ দু’পক্ষের।

    ১৯৯২ সালের পরে পোল্যান্ডে আমার আনাগোনা শুরু হলে, তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ আরও ঘনীভূত হয়।

    যে সিটি ব্যাঙ্কে আমি ১৯৮৫ সালে যোগ দিয়েছিলাম, সেই ব্যাঙ্ক আপনার-আমার সঞ্চয় নিয়ে লোকজনকে ধারদেনা দিয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে, দেশে দেশে শাখা খুলে। প্রথম তিনটি বিদেশি শাখা খোলা হয় যথাক্রমে লন্ডন, কলকাতা (১৯০২), সাংহাই। ইউক্রেনের কিইভ শহরে শততম শাখা খোলা হয় ১৯৯৮ সালে। সিটি ছিল বাণিজ্যিক বা কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক।

    অমলের ধন বিমলকে দিয়ে, তার ঝুঁকিটি কমলকে ধরিয়ে দিয়ে, যে ইন্দ্রজিতরা মালাইটি খান – তাঁদের কেলাবের নাম ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক। আপামর জনসাধারণের কাছ থেকে ডিপোজিট নিয়ে ফাটকা খেলে তিনের দশকে বিশ্বব্যাপী মন্দা আনার জন্য আমেরিকান সরকার এই অশুভ আঁতাতকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। ১৯৩৬ সালে ফরমান জারি হল (গ্লাস স্টিগল অ্যাক্ট) – কমার্শিয়াল না ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক বনতে চান – আগেভাগে জানিয়ে দিন। গাছের খাবেন, তলারও কুড়োবেন – সেটি হতে দিচ্ছিনে। গোল্ডম্যান, মেরিল ইত্যাদি ছ’টি ব্যাঙ্ক ইন্দ্রজিতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল। বাকিরা রইলেন খুচরো ব্যাঙ্ক। এতে করে যে সর্বপ্রকারের আর্থিক বিপর্যয় ঠেকানো গেছে তা বলা যায় না, তবে অন্তত আমেরিকায় তুলনামূলকভাবে স্বল্পসংখ্যক ব্যাঙ্ক দেউলের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

    বাষট্টি বছর বাদে, ১৯৯৮ সালে সলোমন ব্রাদারসের অধিনায়ক স্যানফোরড ওয়াইল রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হলেন। শেয়ার বাজারের কারবারি – প্রভূত অর্থ এবং খ্যাতির অধিকারী। তবে ব্যাঙ্কিংটা তাঁর তেমন আসে না। সে ভার নিলেন তাঁর তৎকালীন সুযোগ্য চেলা, গ্রিক বংশোদ্ভূত জেমি ডাইমন। অনতিকালের মধ্যে ডাইমন বসলেন নবগঠিত সিটি-সলোমন ব্যাঙ্কের ঋণ কমিটির আখড়ায়। এক আভ্যন্তরীণ মিটিঙে সিটির ক্রেডিট গুরুরা তাঁকে বললেন, কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক ঋণের পুরো ঝুঁকিটা বেচে না, তার অনেকটা নিজের খাতায় রাখে এবং সেটা করে অনেক ভাবনাচিন্তা-নিরীক্ষা করে। এই বলে তাঁর হাতে ঋণসংহিতা তুলে দিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, শ্রী ডাইমন সেই সংহিতাটি টেবিল থেকে দূরে ছুঁড়ে ফেলেন। ওটা মানবার কোনো প্রয়োজন তিনি দেখেননি।

    জেমি ডাইমন অধুনা জে পি মরগান নামক ব্যাঙ্কের শীর্ষে অবস্থান করেন।

    একদিন সকালে উঠে স্যানফোরড (কল মি স্যানডি) ওয়াইল রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনকে ফোন করে বললেন ‘ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় বিশ্বে শান্তি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন ওই ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক আর কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের মিলন-বিরোধী পুরোনো আইনটা তামাদি করে দিলে হয় না?’ চায় পে চর্চায় তাঁকে ডাকলেন ক্লিনটন। জানতে চাইলেন, কাকে কিনবেন? তখন উত্তর হল, ‘বৃহত্তম আমেরিকান সংস্থা – সিটি ব্যাঙ্ক’!

    ১৯৯৮ সালে এপ্রিল মাসের চার তারিখে একশো ছিয়াশি বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানটির মৃত্যুঘণ্টা বাজল ওয়াশিংটন শহরে। সেনেটের কলমের খোঁচায় আইন বদলে গেল। ইন্দ্রজিতের কাজ ছিল একের পয়সা দ্বিতীয় বা তৃতীয়কে দিয়ে ফি – মতান্তরে নেপোরূপে দই – টি খাওয়া। এবারে ইন্দ্রজিতের দখলে এল আপনার-আমার জীবনের সঞ্চয়। তখন কি আর জানি, এই মহামানবরা যে মরণখেলাটিতে নামলেন, তাতে সিটি ব্যাঙ্কের সমূহ সর্বনাশ আসন্ন? ১৯৯৮ সালে একটা শেয়ারের দাম ছিল ৫৮ ডলার, ২০০১ সালে চার ডলার। ২০০৭ নাগাদ নিউ ইয়র্কের বাজারে শোনা যেত – কোকের ক্যানের চেয়ে সিটি ব্যাঙ্কের শেয়ার সস্তা! সিটি ব্যাঙ্কের একটা শেয়ারের দাম ৯৮ সেন্ট, কোকের ক্যান এক ডলার। প্রসঙ্গত, একশো কুড়ি বছরের পুরোনো সিটি ব্যাঙ্ক ভারতবর্ষে তাদের খুচরো ব্যবসা হালে বিক্রি করেছে আক্সিস ব্যাঙ্ককে।

    বৃহৎ হস্তির মাহুত দ্বারা চালিত সলোমন ভ্রাতৃবৃন্দ নামক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক আমাদের অধিগ্রহণ করলেন। তাঁরা বড় আকারের পশুবধের শিকারি। তার প্রথম প্রমাণ পেলাম পোল্যান্ডে।

    হিথরো থেকে হাওয়াই জাহাজে ওয়ারশ যাব। সহযাত্রীর সঙ্গে আলাপ হল। নাম বিল, সলোমন ব্রাদারসের কর্মী। আমি সিটি ব্যাঙ্কে কাজ করি শুনে বললেন, আরে আমরা তো তাহলে সহকর্মী! ওয়ারশ যাচ্ছেন, কোথায় মিটিং? জানালাম, পিকেএন নামক তেল কোম্পানির খাজাঞ্চি বা সিএফও-র সঙ্গে। বিল বললেন, ও, আমার মিটিং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলাম, পিকেএনের প্রেসিডেন্ট? বিল বললেন, না, পোল্যান্ডের।

    ক্রোনেনবের্গ পরিবারের সঙ্গে স্যানডি ওয়াইলের পিতৃপুরুষদের কোনো পারিবারিক সম্পর্ক ছিল কিনা জানা নেই, তবে এঁরা সকলেই এক সময়ে পোল্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত ধনী ইহুদি পরিবারের সদস্য ছিলেন। এপ্রিল ১৯৯৮ সালে সিটি অধিগ্রহণের পরে শ্রী ওয়াইলের নজর গেল পোল্যান্ডের দিকে। পূর্বপুরুষের দেশ - ক্রোনেনবের্গের স্মৃতি। তিনি আদেশ দিলেন ব্যাঙ্ক হানডলোভের অধিগ্রহণ করতে, লাগে ডলার দেবে সিটি ব্যাঙ্ক। চল্লিশ বছরের সরকারি শেকল ভেঙ্গে পোল্যান্ড তখন উন্মুক্ত দেশ, বাজারি অর্থনীতিতে পা ফেলছে সাবধানে।

    বিদেশি ব্যাঙ্কগুলিকে আপন শাখা খুলতে দিতে পোলিশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আগ্রহী ছিলেন না। দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে শক্ত পায়ে দাঁড় করাতে চাইলেন তাঁরা। নবাগত বিদেশিরা নিজেদের শাখা না খুলে স্থানীয় ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে মিশে নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করলে ব্যাঙ্কিং পদ্ধতির দ্রুত উন্নয়ন হবে – পোলিশরা নতুন টেকনোলজি, পরিচালন ব্যবস্থা শিখে নেবে সত্বর, যার ক্ষীণ প্রয়াস আমরা করেছিলাম ঝাকশেভোতে!

    সিটি ব্যাঙ্ক সাত বছর আগে পয়লা রাতেই মার্জার মেরে ফেলেছে – আমরা যখন এদেশে ঢুকেছি, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কোনো কড়াকড়ি ছিল না এ ব্যাপারে। তাই ব্রাঞ্চ খোলা গেছে দরখাস্ত করেই।

    ওয়াইল বললেন, সে তো খরগোস ধরা। আমি মারি তো গণ্ডার!

    পোলিশ মৃগয়ার সবচেয়ে বড় শিকারের নাম ব্যাঙ্ক হানডলোভে!

    সিটি ব্যাঙ্ক যখন নিউ ইয়র্কের সলোমন ভাইয়ের দ্বারা অধিগৃহীত হয়েছে, কেউ জানতে চায়নি আমাদের মত এলেবেলে কর্মীদের – সে ব্যাপারে আমাদের কী চিন্তন। জানি না কখন, কে বা কারা এসে আমাদের নথিপত্র দেখেছে, ঠিক করেছে এ ব্যাঙ্ক লইব কিনে। এবার জুতো অন্য পায়ে। আরেকটি ব্যাঙ্কের বইখাতা দেখার সুযোগ হবে। জমিদারি মেজাজে খতিয়ে দেখব – তাদের ভাঁড়ারে কী লুক্কায়িত আছে। ধনরত্ন না নকল খেলনা। বেমক্কা প্রশ্ন করব। এর আগে ইস্তানবুলে একটি তুর্কি ব্যাঙ্কের খাতাপত্র দেখে এবং তাদের প্রত্যাখ্যান করে রাজ সিংহাসনে পদাঘাতের আনন্দ উপভোগ করেছিলাম আমরা। ‘যেনাহং নামৃতা স্যাং কিমহং তেন কুরযাৎ’ যা দিয়ে সিটি ব্যাঙ্কের অমরত্ব লাভ হবে না – তা দিয়ে আমরা কী করব?



    পূর্ব প্রাশিয়ান ব্যাংক নোট – ২৫ ফেনিং

    এর পর যা শোনা গেল, তার সঠিক বর্ণনা আজ নিতান্ত গাল গল্প মনে হবে। আমি সেটুকুই জানাই, যা – নিজস্ব সংবাদদাতা না হোক – অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত – ওয়ারশতে অধিষ্ঠিত তৎকালীন সিটি ব্যাঙ্ক সিইও।

    হানডলোভের সিইও চেজার বললেন, পোলিশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বিধান অনুযায়ী তিনি খাতা খুলে ক্রেতাকে ব্যাঙ্কের হিসেব নিকেশ দেখাতে বাধ্য নন। সিটি ব্যাঙ্ক যদি তাঁর ব্যাঙ্কের হাঁড়ির খবর জেনে নিয়ে কোনো অজ্ঞাত কারণবশত না কিনে চম্পট দেয়? তারা তখন পাঁচ জনের কাছে কানাকানি করে গুজব রটিয়ে ব্যাঙ্ক হানডলোভের প্রভূত ক্ষতি সাধন করতে পারেন। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, যে, সিটি আইনত ব্যাঙ্ক হানডলোভের সকল তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে বাধ্য থাকবে এবং সেই মর্মে খৎ লিখে দেবে। উত্তরে তিনি নাকি জানতে চান, কোন আইন অনুযায়ী – পোলিশ না আমেরিকান। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে সরাসরি আপিল করা হল। তাঁরা চেজারকে সমর্থন করলেন। ব্যাঙ্ক হানডলোভের হিসেবের খাতা যদি খুলেছ, ব্যাঙ্কটি কিনতে হবে! সিটি ব্যাঙ্ক পোল্যান্ডের অধিকর্তা (অ্যালান ততদিনে রাশিয়াতে) একদিন চলন্ত গাড়ি থেকে এই দুঃসংবাদটি আমাদের দিন-দুনিয়ার মালিক স্যানডি ওয়াইলকে জানান। পিতৃপুরুষের দেশ। মালিক বললেন তথাস্তু। কিনে নাও। পরে দেখা যাবে।

    তারপরে খাতাপত্র দেখা আর না দেখা সমান। সভ্য ভাষায় যাকে বলে ডান ডিল।

    কালে কালে এর ফল যা হয়, তা আরেকটা আড্ডার বিষয়।

    চেক সই করে ব্যাঙ্কের দাম চুকিয়ে দেওয়ার পরে খাতা দেখার অধিকার মিলেছে। জেনেশুনে বিষ পান করা হল, তবে কী কিনেছি সেটা বোঝবার চেষ্টা শুরু করলাম। আমার নির্দিষ্ট বিষয় ছিল ব্যাঙ্ক হানডলোভের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। সুযোগ্য সাগরেদ ডানিয়েল লাগল তার তত্ত্বতালাশ করতে। এমন সময় লন্ডন/নিউ ইয়র্ক থেকে যুগপৎ আকাশবাণী হল। আমরা দুই ব্যাঙ্কের কিছু নির্বাচিত মানুষ পাঁচদিনের জন্য একটা নিরালা জায়গায় গিয়ে আপোষে আলাপ আলোচনা করব, যার উদ্দেশ্য দ্বিবিধ – খাতায় লেখা অঙ্কগুলি অধ্যয়ন, তার সারমর্ম উদ্ধার করা এবং আমাদের ভাবী সহকর্মীদের ভাল করে চেনা-জানা। ব্যাঙ্ক কেনা মানে চেয়ার-টেবিল-বাড়িঘর-কম্পিউটার কেনা নয়। সিটি ব্যাঙ্কের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ওয়াল্টার রিসটন বলেছিলেন, ব্যাঙ্কের সম্পদ বাড়িঘর, ফার্নিচার নয়, সম্পদ হল মানুষ, যারা রোজ সকালে ঘুরন্ত দরোজা ঠেলে অফিসে প্রবেশ করে, এক পলকের মধ্যে কারো হৃদযন্ত্র থেমে গেলে যার আসন শূন্য হয়ে যায়।

    পোল্যান্ডের পূর্ব প্রান্তে প্রায় রাশিয়ার গা ঘেঁষে এউক নামক রেসর্টে এই অনুষ্ঠান হবে।

    ডানিয়েল বললে, বাকি জনতা বাসে চড়ে যাচ্ছে যাক। সে আমাকে তার গাড়িতে নিয়ে যাবে। প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার পথ। পূর্ব-উত্তরে। প্রাশিয়ানরা এ অঞ্চলে প্রথম আসেন ১৩শ’ শতাব্দীতে – সেখানে তাদের এককালীন রাজধানী কোয়নিগসবের্গ, আজ রাশিয়ান কালিনিনগ্রাদ। ১৯৪৫ সালে পনেরো হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই ভূখণ্ড রাশিয়াকে দান করেন চার্চিল, রুজেভেল্ট। তখন অবশ্য বলা হয়েছিল – যতদিন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সমাধান খুঁজে না পাওয়া যাচ্ছে, রাশিয়ানরা নাহয় ততদিন এটির প্রতিপালন করুক। এটি এমন এক অঞ্চল, যার সঙ্গে রাশিয়ানদের কোনো ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক নৈকট্য ছিল না, এমনকি ধর্মেরও নয়। তারপরে আশি বছর প্রায় কাটল – চার্চিল, রুজেভেল্ট, স্টালিন – মরদেহ ত্যাগ করেছেন। দেখভাল করার জন্য যে দেশের হাতে এটি সমর্পণ করা হয়েছিল, সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন আজ পঞ্চভূতে বিলীন। রাশিয়ানরা আড্ডা গেড়ে বসে আছে। তাদের ঘাঁটাবে কে?

    কালিনিনগ্রাদ অবলাসতকে বলা হয় এক্সক্লেভ, মাতা রাশিয়ার আঁচলের হাওয়া খেতে গেলে লিথুয়ানিয়া নামক আন-বাড়ির আঙিনা পার হয়ে যেতে হবে।

    এউক শহর (প্রাশিয়ান লিউক) থেকে বর্তমান রাশিয়ান সীমান্ত মাত্র ষাট কিলোমিটার, বেলারুশ সত্তর। দু’হাজার হ্রদে ঘেরা এই অঞ্চলের নাম মাজুরে (জার্মান মাজুরেন)। পুরোনো প্রাশিয়ান প্রবাদ আছে, পৃথিবী তৈরি করার পরে ঈশ্বর দেখলেন খানিকটা জল এখনো বণ্টন করা হয়নি। সেটা তিনি ঢেলে দিলেন মাজুরেতে। আদিগন্ত সবুজ, জলময় এই বিস্তৃত ধরণীতে কোথায় যে একটা নদীর শেষ আর হ্রদের শুরু – তা নাকি বোঝবার উপায় নেই। আক্ষেপের বিষয় এই, যে, আমি গেছি শীতকালে। ডিসেম্বর মাস। আদিগন্ত তুষারের ঢেউ দেখে ভেবে নিতে পারি সেখানে সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙা বাইবে কোনো কিশোর একদিন। ধরণী যখন প্রসন্ন হবেন।



    প্রাশিয়ান লিউক শহর আজকের পোলিশ এউক

    ওয়ারশ থেকে বেরিয়ে রাস্তা ভাল, কিন্তু চারপাশে মৃয়মাণ ধরিত্রী। গাড়ি চলে বরফের ওপরে। অ্যাসফল্ট আছে অনেক গোপন গভীরে। সাদা বরফ কালো হয়ে ছিটোতে থাকে। ন্যাড়া গাছের সারি। আকাশ অন্ধকার। গাড়িতে দেখাচ্ছে বাইরের তাপমান শূন্যের সাত ডিগ্রি নীচে। পার হয়ে যাই ভিসকুফ (ইদিশ ভিশকভ)। ছোট এই শহর দেখেছে রাশিয়ান জার, জার্মান এবং পুনর্বার রাশিয়ান বর্বরতা – ১৯৪০ সালে বারো হাজার ইহুদিকে এক সপ্তাহে নিধন করা হয়। এখান থেকে শুরু পেল অফ সেটলমেনট – ইজরায়েল নামক দেশ দেখা দেওয়ার আগে, বৃহত্তম ইহুদি বাসভূমি। অস্ত্রভ, উমজা, গ্রাজেভো – প্রত্যেক শহর গ্রামের একই ইতিহাস। পোলিশ লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথ, নাপোলেওঁর দাক্ষিণ্যে পোলিশ, তারপরে রাশিয়ান জারের শাসন, পোলিশ, জার্মান, তারপরে আবার রাশিয়ান আবির্ভাব, এবার সোভিয়েত ইউনিয়ন অবতারে।

    ওয়ারশ থেকে উত্তর পূর্বে দু’শ’ কিলোমিটার পার হয়ে, নোভাকি। জারের রাশিয়ান সাম্রাজ্য শেষ, পুরোনো পূর্ব প্রাশিয়া শুরু – ডানিয়েলের কাছে নয়, কিন্তু আমার অনাবশ্যক তথ্যের ভাঁড়ারে এটি মূল্যবান তথ্য! আর এক ঘণ্টা সিধে গাড়ি চালালেই পৌঁছে যাব রাসটেনবুর্গ – নেকড়ের আস্তানা – হিটলারের বাঙ্কার, যেখানে বসে তিনি ১৯৪১ থেকে ১৯৪৪ সাল অবধি যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বাঙ্কারগুলি এমনই শক্ত করে বানানো হয়েছিল, যে পালিয়ে আসার সময় তাদের পুরোপুরি বিধ্বস্ত করা যায়নি, এখনো তারা দৃশ্যমান।

    গাড়িতে বসে গল্পগুজব করছি। ডানিয়েলের বাবা প্রাশিয়ান রাজ দেখেছেন। ডানিয়েলকে বলতেন, আমরা মাঠের গোরু দেখে তার মালিক চিনতাম। জার্মান চাষির গোরু পরিছন্ন। পোলিশ গোরু কাদা মেখে ভূত! পোলিশ-জার্মান সম্পর্কটা খুবই জটিল। প্রাশিয়ান অভ্যুদয় এবং পোল্যান্ডের অস্তিত্ব – এ দুটো একান্ত পরস্পরবিরোধী অবস্থান। হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করার প্রায় আশি বছর আগে বিসমার্ক বলেছিলেন, “পোলিশদের আঘাত কর এমন কঠোরভাবে যাতে তাদের বাঁচবার আশা বিলুপ্ত হয়। আমার সম্পূর্ণ সমবেদনা আছে পোলিশদের প্রতি, কিন্তু আমাদের টিকে থাকতে গেলে তাদের নিধন আবশ্যক”।

    আশা রাখি, আজ এত বছর বাদে এবং বিশেষ করে ব্রাসেলসের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সভাকক্ষে পাশাপাশি চেয়ারে বসে নতুন করে চেনা-শোনা-জানার ফলে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হবে।

    ইংরেজ ভারত শাসন করেছে দীর্ঘদিন, বাস করেছে তাদের আপন ঘেটোতে। ইংরেজকে বড়বাজারে পাঁপড় কিনতে দেখা যায়নি। পুরোনো কলকাতার ম্যাপে চিৎপুরকে কালো শহর বা ব্ল্যাক টাউন বলে চেনানো হয়েছে, সেখানে তাঁরা মশারির সন্ধানে যাননি। অ্যাপারথেইড দক্ষিণ আফ্রিকার বুওর (চাষি) সম্প্রদায় আবিষ্কার করেনি। অক্সফোর্ড শিক্ষিত সিসিল রোডস তার প্রথম এবং প্রখর প্রবক্তা। আফ্রিকানার বা বুওররা সেই প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থাকে আইনি সম্মতি দিয়েছিল মাত্র। আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলে বর্ণবিভাজনের যে প্রথা একশ’ বছরের বেশি কায়েম ছিল, তার সরকারি নাম বিভাজন (সেগ্রিগেশন)। যে নামেই ডাকুন, ব্যাপারটা একই। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে ইহুদিদের বসবাস একটি চিহ্নিত এলাকার মধ্যে সীমায়িত ছিল। আজকের রাজাবাজার বা মেটিয়াবুরুজের মত জাতিগতভাবে পরিশোধিত অঞ্চল গঠনের অনেক আগে।

    এউক দীর্ঘকাল ছিল পূর্ব প্রাশিয়ার অংশ। পোলিশ ভাষার ইতিহাসে এই ছোট শহরের ঐতিহ্য অসাধারণ। ষোড়শ শতাব্দীতে হিয়েরোনিম মালেতসকি এখানে প্রথম পোলিশ পুস্তক প্রকাশনা করেন। তাঁকে পোলিশ ভাষার অন্যতম স্রষ্টা বলে মান্য করা হয়ে থাকে। প্রাশিয়ান রাজত্বে অবশ্য জার্মান আর কেবল রাজভাষা নয়, সেটি কফির আড্ডা থেকে দোকান বাজার সর্বত্র চালু।



    মাজুরে জলময় সবুজ

    প্রাশিয়াতে ইহুদিদের এলাকা স্বতন্ত্র। জার্মান ও পোলিশদের ভেতরে এই প্রকার বিভাজন ছিল বলে জানা যায় না। তাঁদের ব্যবধান সামাজিক সম্মানের, পরিচিতির, অর্থের। বারে বারে মনে হয়, পূর্ব বাংলার কথা। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাস থেকে পূর্ব বাংলায় যে নিষ্ক্রমণ শুরু হয়েছিল পূব থেকে পশ্চিমে, তার সঙ্গে সরাসরি তুলনা করা যায় ১৯৪৫ সালের মে মাসের – যখন কয়েক লক্ষ জার্মান ঘোড়ার গাড়ি, ঠেলা গাড়ি, সাইকেল ও পদব্রজে পূব থেকে পশ্চিমে যাত্রা শুরু করেন। তাঁরা বিতাড়িত হয়েছিলেন আজকের পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, কালিনিনগ্রাদ এবং বেলারুশ থেকে। এখনকার পোল্যান্ডে প্রাশিয়ানদের নিশান মুছে ফেলা হয়েছে। রাস্তার বা শহরের নাম পরিবর্তিত। কৌতূহলী চোখে লক্ষ্য করেছি, পুরোনো বাড়িতে, স্ট্যাচুতে জার্মান লেখা। মাজুরেতে সেই স্বল্প সময়ে কফি হাউসে বা রেস্তোরাঁয় দেখেছি বয়স্ক জার্মান টুরিস্ট মানুষ। পিতেমোর ভিটে দেখতে এসেছেন। স্থানীয় পোলিশ জনতার কাছে সেটা একটু ভীতির কারণ। এরা পুরোনো সম্পত্তি ফেরত পাবার দাবি করবে না তো!

    এউক শহরে ১৮৫৬ সালে ইউরোপের প্রথম হিব্রু ভাষার পাক্ষিক পত্রিকা হা মাগিদ (প্রচারক) প্রকাশিত হয়। নাৎসিরা ক্ষমতায় আসার বহু আগে পূর্ব প্রাশিয়াতে একটি জার্মান পত্রিকা প্রকাশিত হল, যার নাম ইহুদি আধিপত্য। ১৯৩৩ সালের পরে ইহুদিরা এউক ছেড়ে চলে যাওয়া শুরু করেন। কিছু যান দূর সাংহাই। বিয়র্ন নামের এক নরওয়েজিয়ান ইহুদির সঙ্গে কর্মসূত্রে আমার পরিচয় হয়, যার কথা আমি ইহুদি রসিকতা পর্বে লিখেছি। তার মা এউক থেকে সেই সাংহাই যাত্রীদের প্রথম দলে ছিলেন!

    বসন্ত বা গ্রীষ্মে ছুটি কাটানোর পক্ষে এ অঞ্চল নিঃসন্দেহে আদর্শ। একটি প্রকাণ্ড হ্রদের কিনারায় এর অবস্থিতি। বর্তমানে সেটি সম্পূর্ণ জমে আছে। ছেলেমেয়েদের স্কেটিং করার হুল্লোড় পড়ে গেছে সেখানে। শহর কর্তৃপক্ষ অবশ্য আগেভাগে তদন্ত করেন এই জমে যাওয়া হ্রদের ওপর লম্ফ ঝম্প করা সমীচীন কিনা। বেপরোয়া চালকের গাড়ি হ্রদে সলিল সমাধি পায় আকছার।

    আমরা এক চমৎকার হোটেলে বন্দি। ঘরের জানলা দিয়ে, বারান্দা থেকে দেখি – তুষার সমুদ্র।

    ব্যাঙ্ক হানডলোভের মানুষজন কী ভাবছেন? একদা জার্মান, তারপরে রাশিয়ান – এবার কি আমেরিকান শাসন? আমার সন্দেহ নিতান্ত অমূলক নয়। সকাল থেকে দুই ব্যাঙ্কের বিভিন্ন বিভাগের আলোচনা বৈঠক বসে আলাদা আলাদা সভাকক্ষে। সেখানে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মানুষজন পাশাপাশি বসেন, আপন বাণিজ্যের বিষয়ে বার্তা বিনিময় করেন। চিন্তার আদানপ্রদান হয়। দুপুরে বা রাতে খাওয়ার সময় দুই ব্যাঙ্কের লোকেরা আলাদা হয়ে যান – ওরা থাকে ওধারে। ব্যাঙ্ক হানডলোভের মানুষজন বসেন অন্য টেবিলে, বাক্যালাপ করেন আপন ভাষায়। এ তো মহা মুশকিল। এমনি ঘরোয়া পরিবেশই তো মেলামেশা করার প্রকৃত অবসর। এসেছি প্রাণের পশরা সাজাতে। পরস্পরকে চিনতে জানতে। আমরা কি শত্রুপক্ষ নাকি? ভাষার একটা সমস্যা আছে বটে। কিন্তু ভবিষ্যতে মিলেমিশে কাজ করতে হবে! আরম্ভটা মোটেই শুভায় মনে হচ্ছে না! ক’জন মিলে আমাদের ব্যাঙ্কের পূর্ব ইউরোপ বিভাগের অধীশ্বর টমকে এই বার্তা দিলাম। এককালে লৌহ যবনিকার নাম শুনেছি। এখন দেখছি তুষার যবনিকা!

    টম বললেন, এই তুষার গলানোর একটা হাতিয়ার তাঁর জানা আছে। সেটির নাম ভদকা। তিনি নিজে ভদকা নামক বৈতরণীতে সাঁতার কাটতে অপারগ। ডাক্তারের বারণ। আমাদের যদি সে বাধা না থাকে, তাহলে আমরা যেন এই নতুন পাওয়া বন্ধুদের সন্ধ্যায় পাবে আমন্ত্রণ করি। ইংরেজি বলার সঙ্কোচের বিহ্বলতা কাটানোর দায়িত্ব ভদকাকে সমর্পণ করে এক আড্ডায় বসে রাজা- উজির মারবার কাজটাও সহজ হবে। সান্ধ্য পানের যাবতীয় ব্যয় সিটি ব্যাঙ্ক সহর্ষে বহন করবে।

    “অনেকে ব্যাঙ্কের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আপনারা না হয় লিভারটা দেবেন!”

    ভাবলেশহীন মুখে এই সুপরামর্শ দিয়ে তিনি প্রস্থান করলেন তাঁর সাময়িক অফিসের দিকে।

    শেখার কোনো শেষ নেই।

    সেদিন সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন ব্যাঙ্ক হানডলোভের সমতুল্য বিভাগীয় প্রধানকে আমন্ত্রণ জানালাম। সান্ধ্যভোজনের পরে তুষার হ্রদের কিনারায় এক বারে আমরা একত্রিত হব। হঠাৎ বরফ গলে না। তবে উষ্ণতার আভাস মেলে। এটা বোঝা গেল, পোলিশ ব্যাঙ্কাররা কিছুতেই আমাদের প্রথম নামে ডাকবেন না। সেটা প্রচলিত প্রথাবিরোধী। মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু তাঁরা লক্ষ করলেন, আমরা সিটি ব্যাঙ্কের লোকেরা সবাই সবাইকে প্রথম নামে ডাকি। ব্যাঙ্কের ভেতরে তার পদমর্যাদা যাই হোক না কেন। ডানিয়েল আমাদের দলের কনিষ্ঠ পোলিশ সদস্য। সে কাজ করে আমার জন্যে, কিন্তু আমাকে নাম ধরে ডাকে! ব্যাঙ্ক হানডলোভের লোকেদের পোলিশে “পান” (মিস্টার) বা পানা (মিস) সহ পদবি ধরে আর সিটি ব্যাঙ্কের সহকর্মীদের ইংরেজিতে প্রথম নামে ডাকে। হানডলোভের বিভাগীয় কর্তাদের সঙ্গে অধস্তন যারা এসেছেন, তাদের চক্ষু চড়কগাছ! ডানিয়েল আমাকে নাম ধরে ডাকছে! দ্বিতীয় সন্ধ্যায় খানিকটা সমতা স্থাপিত হল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিলেন, যদি নাম ধরে তারে ডাকো, তাহলে কারো অসম্মান হয় না।





    এত বাখানিয়া এ গল্প বলার একটা অজুহাত আছে। হৃদয়ে না হোক, ভাষার দৌলতে অ্যাংলো-স্যাক্সনদের সামাজিক আচরণে থাকে একটা আপাত সমতা। সিটি ব্যাঙ্কের তৎকালীন চেয়ারম্যান জন রিডকে জন বলে ডাকবার অধিকার আমাদের সকলের ছিল। তাতে তাঁর পদমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়নি। আবার ঠিক সেই কারণেই ইউরোপিয়ানদের সাংস্কৃতিক পার্থক্য অ্যাংলো সাক্সনদের চোখে পড়ে না। হল্যান্ড আর সুইডেন বাদে ইউরোপের সর্বত্র আপনি তুমির ব্যবধান আছে। এ সম্বন্ধে অবহিত হলে সামাজিক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। আখেরে সকলেই লাভবান হবেন।

    আডাম মিখালসকি হানডলোভে ব্যাঙ্কের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান। তাঁর সঙ্গে বিশদ আলোচনা হয় প্রত্যহ। কোন দেশে, কার সঙ্গে, কী ব্যবসা, কতটা ঝুঁকি, কোথায় নেওয়া আছে – তা বোঝার চেষ্টা করি। আমরা যত দেখি তত চিন্তিত হই। তাঁরা যে সব দেশে বা সংস্থায় বাণিজ্যিক ঝুঁকি নিয়েছেন, সেগুলি আমাদের পক্ষে ভীতিজনক। যেমন রাশিয়া (১৯৯৮ সালে রাশিয়ান ব্যাঙ্কিং মৃতপ্রায়)। আমাদের সেই শঙ্কা প্রকাশ করেছি সরকারি ভাবে – আপনাদের পাওনা খাতার বিরাট অংশ এই সব দেশের দেনদারদের থেকে ফেরত পাবার কথা – পাবেন বলে মনে করেন?

    একদিন সন্ধ্যায় মিখালস্কি আমাকে এক কোণে বসালেন। তিনি বললেন, আমাদের ঝুঁকির তালিকা দেখে আপনার চিন্তা হচ্ছে। আপনারা খদ্দেরের দেশ, তার রাজনৈতিক অবস্থান, বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ার, ব্যাল্যান্স শিটের হিসেবে ঝুঁকি মাপেন। আমরা একটু অন্যভাবে দেখি। এই যেমন রাশিয়া। সেখানে যেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের পাওনাগণ্ডা আছে, তাদের উচ্চপদের মানুষদের আমরা ব্যক্তিগতভাবে চিনি। নিয়মিত দেখাশোনা হয়। কথাবার্তা হয়। সেটা কি সবটাই সরকারিভাবে? তা নয়। এই যেমন আপনি আমি বসে গল্প করছি, আমি মস্কো বা সেন্ট পিটারসবুর্গে গিয়ে ব্যাঙ্কার, খদ্দেরের সঙ্গে সেইভাবে আলোচনা করি। পরস্পরের সংসারের খবরাখবর রাখি। যেমন ধরুন, তাদের মেয়ে আমাদের জাকোপানেতে স্কি করতে যাবে, আমার ছেলে অঙ্কবিদ্যা শিখতে যাবে মস্কো ইউনিভার্সিটিতে। আপনারা কেউ কি রাশিয়ান বলেন? বলেন না। আমরা বলি। আজকের রাশিয়ার অবস্থা (১৯৯৯) যাই হোক না কেন, আমাদের টাকা মার যাবে না! ক্রমশ জানলাম, পূর্ব ইউরোপের ব্যবসার স্টাইল আমাদের চেয়ে আলাদা। তবে কোনটা ঠিক, তার মীমাংসা কে করবে? লোকসানের কায়দাটা আলাদা হতে পারে, পরিমাণে বিশেষ হেরফের তো দেখিনি।

    আটের দশকের একটি ঘটনা মনে পড়ে। লেবাননে তখন গৃহযুদ্ধ চলছে। ইউনি লিভারের মাইক ডার্বিশায়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা যে লেবাননে সাবান-শ্যাম্পু বেচছেন, তার টাকা ডলারে বা পাউন্ডে ফেরত পাবেন কিনা – তা নিয়ে শঙ্কিত নন? যে সব দেশে মাল বিক্রির ঝুঁকি নিয়ে আপনারা চিন্তিত, সে তালিকায় লেবাননের নাম দেখি না! মাইক হেসে বললেন, আমরা সে দেশে কোনো ব্যাঙ্ক নয়, সরাসরি একটি লেবানিজ পরিবারের সঙ্গে বাণিজ্য করি। যুদ্ধ হোক আর শান্তি বারি বর্ষিত হোক, তারা ঠিক দাম মিটিয়ে দেবে।

    শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম। ইউনি লিভারের মতো কর্পোরেট ব্যাপারি মনে করেন লেবাননের একটি পারিবারিক সংস্থা তাঁদের আস্থার যোগ্য। সবাই তাহলে একই ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রে বিশ্বাসী নন। একই ইস্কুলে এমবিএ করেননি।

    চোখে পড়ে বাণিজ্যিক আচরণের পার্থক্য।

    একদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাজেট প্রসঙ্গ তুললাম। বছরের গোড়ায় সে বছরের ব্যবসা থেকে কেমন লাভ হতে পারে – তার হিসেব হবে। একটি সংখ্যার প্রতি ম্যানেজমেন্টের দৃষ্টি আবদ্ধ করা হয়। সেখানে পৌঁছুতে পারলে মাইনে ও বোনাস বাড়ে। নয়ের দশকে পোলিশ ব্যাঙ্কে বোনাস শব্দটি অপরিচিত ছিল। তাই এ নিয়ে আলোচনা বৃথা। টমাসকে জানালাম, এটা নতুন কিছু নয়, আমার প্রথম কর্মদাতা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বাজেটিং পদ্ধতি শুরু করেন মাত্র ১৯৭২ সালে। টমাস এক সময় বললেন, আপনি যেটা বলছেন, সেটা আমরা জানি, একটু অন্যভাবে। ওয়ারশতে নয়, প্রতি বছর মস্কো যাওয়ার রেওয়াজ চালু ছিল। এ ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হত। তাঁরা বলে দিতেন, এ বছর আয় কতটা হওয়া উচিত।



    ব্যাঙ্ক হানডলোভে

    ডানিয়েল একদিন বললে, আমার একটা কাজ আছে পাশের গ্রামে। জমি কিনব। আমি কি যেতে ইচ্ছুক? রাজি হতে সময় লাগেনি – ক্লাস কাটার স্বভাব বাল্যকাল থেকে রপ্ত করেছি। এউক হতে দশ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট্ট গ্রাম। গোটা দশেক বাড়ি আছে কিনা সন্দেহ। বরফে সম্পূর্ণ জমে যাওয়া একটা লেকের ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ডানিয়েল বললে, “একটা সাবধান বাণী দেব। যেখানে নিয়ে যাচ্ছি, সেখানে তুমি গরিবির একটা কঠিন চেহারা দেখবে”। আমি বললাম, “ডানিয়েল, ভারতীয় দারিদ্র্য দেখে এবং তাকে উপেক্ষা করে বড় হয়। চিন্তার কিছু নেই”।

    তাপমান শূন্যের আট ডিগ্রি নীচে। বরফ মাড়িয়ে গেলাম লেকের ধারে একটি কুটিরে। দরমা-দেওয়া ঘর দেখেছি দেশে। এটি টিন দিয়ে ঘেরা। দরোজাটিও টিনের। ভেতরে এক বয়স্ক দম্পতি। ষাটের ঊর্ধ্বে। আসবাব বলতে একটি ক্যাম্প খাট। দু’টি ভাঙা চেয়ার। জানলার কাছে রান্নার দুটো বাসন। একটা ছোট্ট ইলেকট্রিক হিটার জ্বলছে। সেটি একাধারে উনুন এবং তাপ সরবরাহক। বাইরের তাপমান যদি শূন্যের আট ডিগ্রি নীচে, কুটিরের ভেতরে মেরে কেটে শূন্যের পাঁচ ডিগ্রি নীচে হবে। এটি তাদের বাসগৃহ। এই দম্পতির কাছ থেকে ডানিয়েল কিছু জমি কিনবে। সেই কথা পাকা করতে তার আসা।

    ডানিয়েলকে বলেছিলাম বটে, ভারতীয়কে দারিদ্র্যের ভয় দেখিও না। সেদিন মাজুরের একটি গ্রামের কুটিরে তার আরেক নৃশংস চেহারা দেখলাম। বিতর্কের মুখোমুখি হয়ে বলি, শীতের দেশের তুলনায় গ্রীষ্মপ্রধান দেশের নির্মমতম দারিদ্র্য সমর্থনের অযোগ্য হলেও, অপেক্ষাকৃত সহনীয়। খেতে না পাওয়ার যন্ত্রণা, দু’দেশেই এক। তবে খোলা আকাশের নীচে বা ত্রিপল টাঙিয়ে ফুটপাথে বাস করা আমাদের গরম দেশে সম্ভব। তীব্র শীতের দেশে তা এনে দেয় অনিবার্য মৃত্যু।

    ডানিয়েল কিনল তিন একর জমি। দু’শ’ ডলারের বিনিময়ে।

    নিউ ইয়র্কের ধনীরা কিনলেন ব্যাঙ্ক হানডলোভে। ছ’কোটি ডলারের বিনিময়ে।

    কেনাবেচা সম্পূর্ণ হল।



    ডিসেম্বর ১৯৯৯

    পুঃ পোল্যান্ডে আমার পথচলা শুরু হয় পশ্চিম প্রান্তের ঝাকশেভোতে। সেখান থেকে উত্তর পূর্বে এউকের দূরত্ব ছ’শ’ কিলোমিটার। ডানজিগ থেকে ব্রেসলাউ পাঁচশ’। তারপর সিকি শতাব্দী কেটে গেল। বাণিজ্য নয়, আজ পোল্যান্ডের কিছু মানুষের বন্ধনে বাঁধা পড়ে আছি।

    তার গল্প আরেকদিন।


    ক্রমশ...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৬ এপ্রিল ২০২২ | ২৭৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 120.22.***.*** | ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১৪:৪৪506475
  • আপনার লেখা গুলো থেকে একটা অজানা অচেনা ইউরোপকে একটু চেনার সুযোগ পাচ্ছি। ছোটবেলা থেকে বাংলা ভাগের কষ্টের গল্প শুনে বড়ো হয়েছি। আমার দুদিক থেকেই দাদুরা এসেছিলেন ৪৭ এর পরে। চেনা দেশ , সবকিছু ছেড়ে কলকাতায় এসে কোনোমতে একটা বাড়িতে সমস্ত আত্মীয় স্বজন মিলে স্ট্রাগল করা। ভাবতাম এই কষ্টের ইতিহাস বোধহয় শুধু ভারতের একচেটিয়া। এখন বাইরে থাকার সুবাদে নানা লোকের সঙ্গে কথা বলে আর এই লেখাগুলো পড়ে মনে হয় বহু জায়গা তেই একই ধরণের কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছেন আর যাচ্ছেন। 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৩০506477
  • অনেক ছিন্নমূল জার্মানকে কাছ থেকে দেখেছি। সাতশো বছরের ঘর বাডি একদিনে ছেড়ে এসেছেন  যেমন বালটিকে । তাদের কথা লিখেছি উত্তরের আলোয় অচেনা ইউরোপ বইতে। 
     
    আমার সবচেয়ে প্রিয় জারমান বন্ধু ও তার পরিবার চেক থেকে বিতাড়িত। গল্প অনেক। জারমান স্মৃতি গ্রন্থ লিখছি !
  • Ranjan Roy | ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৫৯506481
  • অভিভূত। 
    অমিতের অভিজ্ঞতা আমারও।
  • dc | 122.16.***.*** | ১৬ এপ্রিল ২০২২ ২২:২১506485
  • এই ট্রাভেলগ সিরিজটা সত্যি অসাধারন। আর তার সাথে ফিনান্স এর ঘটনাগুলো পড়তে আরো ভালো লাগে। 
  • Samrat Chatterjee | 2401:4900:1c33:788d:58c4:8141:8062:***:*** | ১৫ জুন ২০২২ ২৩:৪৪509045
  • আপনার লেখা অসাধারণ   ইতিহাশ সমাজ আর অর্থনীতির এরকম মিশ্রণ আগে পড়ার opportunity হয় নি  ইস্ট ইউরোপ has many contradictions. While one starts sympathising with the German migrants from Prussia/ Baltic or the polish nation, one cannot help but remember the date of the Jews in Poland or in the Pale. And once you start sympathising with the Jews, one cannot ignore the ghettoes and apartheid in Palestine/Israel. মানুষ বড় অদ্ভূত 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৬ জুন ২০২২ ১১:২৭509059
  • অশেষ ধন্যবাদ। 
    আপনার সংগে সম্পূর্ণ সহমত। একই নাটিকা বারবার অভিনীত হয়েছে। অভিনেতৃদের দেশ কাল বদলেছে শুধু। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন