প্রাতঃকালে কণ্ঠির মতন একটি বস্ত্রখণ্ড গলায় বেঁধে কর্মস্থলের দিকে যাত্রা করেছি চার দশক যাবত। এর কোনো বাংলা নাম আজও খুঁজে পাইনি; একফালি কাপড়ের টুকরো, গলবস্ত্র একে বলা যায় না। তবে বিহারে থাকার সময়ে শুদ্ধ হিন্দিতে কণ্ঠলঙ্গোঠি বলে একটা নাম চালু ছিল।
টাই।
বিশেষ সান্ধ্য অনুষ্ঠানে স্মোকিং বা কালো রঙের কোট প্যান্ট সাদা শার্ট ও গলায় কালো প্রজাপতি আঁটা পোশাকে মানুষকে পেঙ্গুইন সাজানোটা ইংরেজ জাতির একটি ক্রূর চক্রান্ত। দিনের বেলায় যারা সাদা পোশাকে ক্রিকেট খেলে, তারাই সন্ধ্যেয় সঙ সাজে, তারাই বিবাহে, বিষাদে বা উৎসবে সেই বিচিত্র বেশ পরার অলিখিত ফরমান জারি করে। নিজে ধূমপান করি না, তবু পালা-পার্বণে স্মোকিং ধারণ করতে হয়েছে। সেটা প্রাত্যহিক প্রয়োজনের অঙ্গ নয়। কিন্তু টাই? সে যে রোজকার অনুষঙ্গ, তার জন্যে দায়ী কে? এর কপিরাইট ইংরেজকে নয়, সোপর্দ করতে হয় অন্য এক দেশ ও জাতিকে।
ক্রোয়েশিয়া।
সকালবেলা শার্টের টাইয়ের রং ও তার নট মেলাতে যখন হিমসিম খাবেন, মনের সুখে ক্রোয়াট জাতির শাপ শাপান্ত করেতে থাকুন। এঁরাই পৃথিবীকে টাই নামক উপদ্রবটি উপহার দিয়েছেন: তবে একই সঙ্গে আট বছরের এক বালক রাজাকেও স্মরণ করবেন, যিনি এই কণ্ঠলঙ্গোঠি নিজের গলায় শুধু বাঁধেননি, সভ্য মানুষদের বাঁধবার বিধান দিয়েছিলেন। জাগ্রেব শহরের কেন্দ্রে ইয়েলাচিচ চত্বর থেকে যে সরু রাস্তাটি গরনি গ্রাদ বা উঁচা নগরের দিকে উঠে যায়, তার পাশে একটি চায়ের (ক্রোয়েশিয়ান সহ প্রায় সকল স্লাভিক ভাষায় চা হলো চায়, হিন্দির মতন) দোকানে বসে এক ব্যাঙ্কারের কাছে আমি এই বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান আহরণ করি!
এখানে একটা কৈফিয়ত দেওয়া প্রয়োজন। আমার স্ত্রী আকছার বলেন, ‘মূল বিষয়টা কী, সেটা না হয় শুনি। কোথায়, কোন গলির মোড়ে, সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে না প্লেনে ওঠার পাঁচ মিনিট আগে কে সে কথাটা বলেছে—সেটা জানার কী প্রয়োজন?’ হয়তো ঠিকই বলেন, কীভাবে মনে পড়ল—সেটা কে জানতে চায়? মুশকিল হচ্ছে, আমার স্মৃতির কণা কেমন করে যেন জড়িয়ে থাকে স্থান-কাল-পাত্রের সঙ্গে।
জাগ্রেবচকা ব্যাঙ্কের লুকা বললেন ‘আপনি কি জানেন, প্রায় সারা ইউরোপের অফিসযাত্রী পুরুষ রোজ সকালে আমাদের নাম নেয়—দেশ নয়, আমাদের জাতির?’
শুনে চমকে গেলাম এ দেশের এমন কী মাহাত্ম্য?
‘ইংরেজিতে আপনারা যাকে টাই বলেন, বাকি ইউরোপ তাকে বলে ক্রাভাত বা সেই রকম কিছু বলা হয়’
হক কথা, জার্মানে ক্রাভাতে বলে জানি।
‘শুধু জার্মান কেন, ইতালিয়ান স্প্যানিশ রোমানিয়ান এমনকি গেলিকে যে শব্দটা শুনবেন—সেটা ওই ক্রোয়াট শব্দের কোনো না কোনো অপভ্রংশ। রাশিয়ানরা অবশ্য বেয়াড়া নাম দিয়েছে, গ্লাসতুক। তবে আসল ক্রেডিট ফরাসিদের-তারাই আমাদের পরিচিত করিয়েছে’।
বোকা বাঙালিকে লুকা গুল দেয়নি!
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপের ভয়াবহ ধর্মযুদ্ধে আশি লক্ষ মানুষ (ইউরোপীয় জনসংখ্যার দশ শতাংশ) মারা যান। সে সময়ে ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ার সৈন্য ফরাসিদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিধর্মী প্রটেস্টান্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আজকের বিচারে ভাড়াটে সৈন্য কিংবা রাশিয়াতে এই ভাগনারের মতন মারসিনারি হিসেবে। ফরাসি সমর বাহিনির পোশাক পরার অধিকার তাদের নেই - যুদ্ধক্ষেত্রে তারা নামে নিজেদের ইউনিফরম পরে আর গলায় রঙ্গিন রুমাল বেঁধে,আমাদের যুবাকালে দেব আনন্দ যেটাকে স্টাইলে পরিণত করেছিলেন! রুমাল বাঁধার ফলে জ্যাকেটের ওপরের বোতাম থাকে টাইট, সেটি কারণে অকারণে খুলে গিয়ে অস্ত্র চালনায় বাধা সৃষ্টি করে না – এই তাদের ভাষ্য। দেখা গেল সন্ধেবেলা শিবিরে নাচ গানের সময়েও তারা নানান বর্ণের রুমাল লাগায় গলায়- দিনের বেলার প্রয়োজন, সন্ধ্যার বিনোদনের অঙ্গ। রাজ দরবারে তাদের বাহবা জানানোর জন্য একদিন ভারসাই প্রাসাদ প্রাঙ্গণে এক বালক নৃপতির সামনে তাদের পেশ করা হলো। শোনানো হলো সেই সৈন্যদের শৌর্য গাথা। রাজার বয়েস আট। তিনি কতটা শুনলেন বোঝা যায় নি। তাঁর দৃষ্টি আটকে আছে আগস্টের উজ্জ্বল রৌদ্রে দাঁড়ানো সারিবদ্ধ সৈন্যদের গলায় বাঁধা রুমালের দিকে। আগে এমনটা কখনো দেখেন নি। বালক রাজা পার্ষদকে জানালেন এই রুমালটি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে তিনি সেটি পরিধান করতে চান। ফরাসি সেনারাও যেন তাঁর অনুসরণ করেন। পার্ষদ বললেন ‘অবশ্যই মহারাজ, কিন্তু এর নাম কি তা যে জানি না। ‘রাজা বললেন, ‘কেন, এরা যে দেশের লোক তাদের নামেই পরিচিত হোক ‘। ফরাসিতে সে দেশের নাম ক্রোয়াশি, তা থেকে তৎসম শব্দ জন্ম নিলো: ক্রাভাত। সেখান হতে আজকের জার্মান স্প্যানিশ ইতালিয়ান ইত্যাদি ভাষায় সেই গলায় বাঁধা রুমালের প্রতিশব্দ এসেছে। ইংরেজের কানে শব্দটা কঠিন শোনাল ; অর্থ বজায় রেখে সে খুঁজে নিলো শর্ট কাট, ক্রাভাত বস্তুটা তো বাঁধে তাহলে এটাকে টাই বলা যাক! স্বয়ং রাজা যে বস্ত্রখণ্ডকে আপন কণ্ঠে জড়ালেন সেটি তৎক্ষণাৎ জাতে উঠে গিয়ে সারা ইউরোপের ভদ্রলোকের বৈঠক খানায় ঢুকে পড়েছে -কালক্রমে তার সুরত বদলেছে। প্রথমে যা ছিল ফাঁপানো ফোলানো রেশমের টুকরো পরে সেটি সরু, মোটা বিবিধ আকার নিয়েছে। কখনো চওড়া টাই ছিল ফ্যাশন এখন সেটি প্রায় দড়ির মতন শীর্ণ হয়েছে। রোনালড রেগান বলেছিলেন কোন টাই কখনো তিনি ফেলে দেন নি, কারণ তার স্টাইলটা চাকার মতন ঘোরে আজকে চওড়া টাই যদি জলচল, কাল হয়তো সে ধারণ করবে ক্ষীণ কায়া লক্ষ্য করুন ঋষি সুনাকের অতি রুগ্ন টাই।
মিলানের মন্তে নাপলেওনে এলাকায় খুব সরু সরু রাস্তার ওপরে ফ্যাশনের যে সব দরবারি সহাবস্থান করেন – যেমন এরমেস, কাস্তানিনো, লুই ভুতোঁ অথবা সালভাতোরে ফেরাগামোর মতন কোন ধনী ব্যবসায়ীর কর্পোরেট অফিসে ক্রোয়েশিয়াকে কেউ মনে রেখেছে কিনা কে জানে। তবে ক্রোয়াট জাতি খুব গর্বিত। জাগ্রেব, জাদার, স্প্লিত, দুব্রভনিকে হাজারে হাজারে টুরিস্ট বর্ণময় ক্রাভাত বা টাই কেনেন সুভেনির রূপে!
এই শতকের গোড়ার দিকে লন্ডনের ব্যাঙ্কে যখন প্রথমে কেবল শুক্রবারে, পরে সারা সপ্তাহে ড্রেস ডাউন (যেমন খুশি সাজো) চালু হলো সালভাতোরে ফেরাগামো গুষ্ঠি সঙ্কট আসন্ন মনে করেছিলেন – সুট টাইয়ের বিক্রি কমে যায়। এই দশকে অবশ্য আবার প্রত্যহ সভ্য পোশাক পরে অফিসে যাওয়া শুরু হয়েছে।
ক্রোয়াটদের ইজ্জত বজায় রইলো।
দাবার চাল / শতরঞ্জ কে খিলাড়ি
বেজায় গরমের দিনে জাগ্রেবের ইন্টার কনটিনেনটাল হোটেলে পৌঁছেছি (এখন সেটা ওয়েসটিন)। সে আমলে বিশ্বব্যাপী এই গ্রুপের হোটেলে বছরে তিরিশ রাত্তির কাটালে সিক্স কনটিনেনট ক্লাবের সদস্য পদ জুটত ফিরিতে। আমার নিরন্তর ভ্রমণের দরুন এই পদ অর্জন ও তাঁকে বজায় রাখাটা শক্ত হয়নি। কোন ক্রেডিট কার্ড নয় তবে এর মহিমা অপরম্পার। অটোমেটিক আপগ্রেড- সস্তার ঘর বুক করে সুইট, আলাদা জায়গায় চা জলখাবারের আপ্যায়ন সহ চেক ইন- সকাল দশটায় ঢুকে পড়া - ঘর রেডি, বিকেল চারটেয় গৃহত্যাগ (ইচ্ছে করলে সে সময়টাকেও বাড়িয়ে নেওয়া যেতো) মালপত্র নিয়ে ঘরে পৌঁছে দিয়ে ঘরের সকল কলকব্জা, পরদা খোলা বন্ধের কারিগরি (বিশেষ করে বুদাপেস্টে এখনো সেটি একটি আর্ট- সে গল্প পরে) টি ভি, মিনি বারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া- একেবারে জামাই আদর। সামান সমেত এক যুবক রিসেপশন থেকে হুজুরে হাজির হয়ে আছে। আমাকে এই সাময়িক গৃহকোণটির সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার মানসে এক মহিলাও উপস্থিত। তখনও ঘরে ঢুকতে চাবি লাগে – দরোজা খোলা মাত্র আবদ্ধ গুমোট গরমের পরিচয় পেলাম। মহিলাকে বললাম ‘একটু এয়ার কন্ডিশন চালিয়ে দেবেন ‘? জবাব না দিয়ে যুবক ও মহিলা পরস্পরের দিকে তাকালেন। তাঁদের ইংরেজি সীমিত। এবার সেই মহিলা নীরবে ঘরের বিশাল পিকচার ফ্রেম জানলার দিকে এগুলেন– অগত্যা পিছু পিছু গেলাম। তিনি সে জানলাটি পুরো খুলে দিতেই প্রাণ জুড়িয়ে দিয়ে ভেসে এলো সহজ সাবলীল বাতাস। আমার দিকে চেয়ে হাসলেন – এয়ার কন্ডিশন, ইয়েস?
পরে জেনেছিলাম এয়ার কন্ডিশনার বেশ কিছুকাল যাবত অচল।
জানলায় দাঁড়িয়ে চোখে পড়লো অনেক দূরে একটি বর্ণময় টালির ছাদ- সেখানে যেন অস্পষ্ট দাবার বোর্ড আঁকা আছে! জানা গেল সেটি সন্ত মার্কের গিরজে কিন্তু টালির ওপরে দাবার বোর্ড কেন তা এঁকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, ভাষায় কুলোবে না। এয়ারপোর্টে নেমে ইস্তক দেখছি অমনি দাবার ছকের মতো চৌকো খোপ- পতাকায়, কোট অফ আর্মসে; ফুটবল জার্সিতেও। অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের দুর্বার বাসনা বয়ে বেড়াচ্ছি সারা জীবন। আপাতত প্রশ্নটা সুবিধেজনক পরিস্থিতিতে ছাড়বার জন্য মুলতুবি রাখলাম। হোটেলের সদর দরোজার ওপরে ক্রোয়েশিয়ান পতাকা ভালো করে লক্ষ্য করেছি - ইউরোপের আরও অনেক দেশের মতন সেটিও তে রঙ্গা, লাল নীল সাদা – ওপরে লাল নিচে নীল মাঝখানে সাদা (রাশিয়ান পতাকায় ক্রমটা উলটো, ওপরে সাদা নিচে লাল মাঝে নীল) কিন্তু মধ্যিখানে আবার সেই দাবার ছক, আকৃতিতে আমাদের গ্রামের ধান ঝাড়ার কুলোর মতো। গুণে দেখলাম তেরোটা সাদা বারোটা লাল- একবারে আর্সেনালের কালার কম্বিনেশন! দাবায় চৌষট্টি, রঙ সাদা কালো। তার মানে যদিও মিল আছে, তবু এটি কি দাবার বোর্ড নয়? তখন রাষ্ট্রসংঘের সদস্য সংখ্যা একশো আশি – পতাকার ওপরে নানান প্রতীক দেখা যায়, শান্তির বার্তা নিয়ে ভারতের অশোক চক্র থেকে দুটি কালাশ নিকভ বন্দুক সজ্জিত মোজাম্বিকান পতাকা। এটা কোন বার্তা দেয়?
গুগল তখনও অনেক দূরে (১৯৯৫)। উত্তর পেলাম একটি অপ্রত্যাশিত সূত্র থেকে।
সে যাত্রায় এসেছি আমেরিকান ট্রেড মিশনের সঙ্গে। বিকেল বেলা নাগাদ ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, প্যারিস, লন্ডন থেকে অভ্যাগতজন এসে পৌঁছেছেন। জাগ্রেবের আমেরিকান এমব্যাসি থেকে কেউ আগেভাগে হোটেল লবিতে একটি নোটিস সাঁটিয়ে দিয়ে গেছেন - সন্ধ্যা সাত ঘটিকায়, দলবদ্ধ ডিনারের পূর্বে ককটেলে আপনার উপস্থিতি কাম্য। সেখানে টিম ব্রিফিং দেওয়া হবে।
সবে একটি বিয়ারের গ্লাস হাতে নিয়েছি, আমাদের দল নেতা জো আবির্ভূত হলেন। শুভ সন্ধ্যা জানিয়ে এবং আমাদের নিজেদের ও অন্নদাতাদের নাম পাতা জেনে নেওয়ার পরেই তিনি বললেন জাগ্রেবে নেমে অবধি দাবার বোর্ডের মত কিছু স্কোয়ার হয়তো আপনারা সর্বত্র লক্ষ্য করেছেন। এর পিছনের কাহিনিটা জেনে রাখা ভালো। আপনাদের ক্রোয়েশিয়ান ব্যবসায়িক সহযোগীদের অবাক করে দিতে পারবেন!
ব্যবসা নয়, শুরু করলেন একান্ত অপ্রয়োজনীয় এক ইতিহাসের আখ্যান দিয়ে – জানলাম আমি একা নই, আমার মতন আরও মানুষ আছেন যাঁরা দীন দুনিয়ার তুচ্ছতম বিষয়ে সমান আগ্রহ পোষণ করেন। যে কোন আমেরিকান মিশনের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে দেখেছি তাঁদের টিম লিডাররা নানা রকম আপাত অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বস্তুর সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন, বলেছেন একটু ট্রিভিয়া জেনে রাখুন, কাজে লাগবে! ব্রিটিশ মিশনের নেতা এটিকেটের জ্ঞান দিতে বেজায় ব্যস্ত থাকেন। এটি একান্ত ভাবেই আমার আপন অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে না মিলতে পারে।
আদ্রিয়াতিক সাগরের পশ্চিমে ভেনিস, পূবে ক্রোয়েশিয়া। এদের মধ্যে নানা সময়ে লড়াই লেগেই থাকতো- কভি কোই জিতা, দুসরা হারা! এমনি এক সংগ্রামে হেরে গিয়ে ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত রাজা দ্রঝিস্লাভ ভেনিসের ডিউক (ইতালিয়ান দজে, ভেনিসে গেলে চতুর্দিকে প্রাসাদে সেটা লেখা দেখবেন) পিয়েতরো ওরসেওলোকে জানালেন বারবার খণ্ড যুদ্ধ না করে একটা নক আউট খেলা হোক। আমি জানি আপনি দাবা খেলায় দক্ষ, আমিও দাবা খেলি। আসুন আমরা তিন রাউনড দাবা খেলি, যে জিতবে জমি তার (আজ যাকে আমরা বেষ্ট অফ থ্রী বলি সেটা এক হাজার বছর আগেই চালু ছিলো!)। ইতিহাস বা কিংবদন্তী অনুযায়ী রাজা দ্রঝিস্লাভ খেলার তিন রাউনডেই জিতে আপন রাজ্যসীমা সুপ্রতিষ্ঠিত করেন – দু রাউনড জিতে ক্ষান্ত হননি, ডিউক ওরসেওলোকে মুখ রক্ষার সুযোগ দিয়েছিলেন।। তাঁর সম্মানে ক্রোয়েশিয়া সেই দাবার বোর্ডকে রাষ্ট্রীয় প্রতীকরূপে গ্রহণ করেছে হাজার বছর আগে।
জো বললেন, দুটো জিনিসের উত্তর তাঁর কাছে নেই - চেস বোর্ডের সাইজ কেন ছোটো আর স্কোয়ারের রঙ সাদা কালো না হয়ে লাল সাদা কেন। তবে পুরো এক হাজার বছর ধরে সেই দাবা খেলার স্মৃতি থেকে গেছে ক্রোয়েশিয়ার প্রতীক।
যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আরেক রাজা লড়বার জন্যে চেয়েছিলেন ঘোড়া – এ হর্স এ হর্স, মাই কিংডম ফর এ হর্স! * ঘোড়া মেলেনি, মাটিতে দাঁড়িয়ে সম্মুখ সমরে প্রাণ দিলেন তৃতীয় রিচার্ড।
যুদ্ধে হেরে রাজা দ্রঝিস্লাভ আরেক প্রস্থ লড়তে চাইলেন। অস্ত্র দিয়ে নয়, দাবার চালে। প্রতিপক্ষ তাঁর আপন অহংকারে সে দাবি মেনে নিলেন। দ্রঝিস্লাভ জিতে নিলেন রাজত্ব।
আরেক মহান শতরঞ্জ কে খিলাড়ির কথা মনে হলো - তিনি দাবাকে ভালোবেসেছিলেন কিন্তু দাবা হয়তো তাঁকে সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেয় নি। নওয়াব ওয়াজেদ আলি শাহ মূর্ত হয়ে উঠলেন আমার মনের ভিতরে, জানলার বাইরে এই জাগ্রেবের আসন্ন অন্ধকারে কোথাও কি দেখা যায় লখনউ কি সরজমিন, যেখানে নামবে অওধ কি শাম?
শাম-এ- গম কি কসম