প্লেটের দিকে তাকিয়ে সেদিন সর্বপ্রথম যার মুখটা ভেসে উঠল তিনি আর কেউ নন আমাদের ক্লাশ ইলেভেনের বায়োলজি স্যারের। স্যারের বয়স হচ্ছিল, শরীর তেমন সাথ দিচ্ছিল না – তবুও তিনি আমাদের ফিল্ড ট্রিপে নিয়ে গিয়ে গাছ-পালা চেনাবার চেষ্টা করতেন। আমরা কিছুই শিখি নি – সেটা অন্য ব্যাপার, তাতে স্যারের দিক থেকে খামতি কিছু ছিল না।
তো সেদিন প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছি, আর মনে মনে ভাবছি এই প্লেট স্যার সামনে পেলে আর আমাদের কষ্ট করে বর্ধমানে রমনার পার্কে নিয়ে গিয়ে গাছপালা চেনাতে হত না! ক্লাসে বসেই যত অচেনা আর অখাদ্য শাক পাতার বিবরণ সহ পরিচিতি হয়ে যেত!
প্রাথমিক ধাক্কা কেটে গেলে ভাবতে বসলাম আরো জটিল প্রশ্ন – এই প্লেট আমার সামনে এল কি করে! আমার সন্দেহের তীর একজনের দিকে যাচ্ছে, কিন্তু না ফেরা পর্যন্ত কনফার্ম করতে পারছি না বলে আরো অস্বস্তি! ট্রাভেল এজেন্টের ছেলেটা এই ভাবে প্রতিশোধ নিল তাহলে! অথচ আমার অপরাধ বলতে তাকে দুই কথা সুন্দর করে শুনিয়েছিলাম যে,
“ভাই তুমি কেমন ট্রাভেল এজেন্ট হে, যে কিনা ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে কানেকটিং ফ্লাইটের অপশন দিয়েছো ৪৫ মিনিটের গ্যাপে?”
আমার কল্পনা করে নিতে কষ্ট হল না যে এর পরে কি হয়েছে! বৃথা আশা মরিতে মরিতেও মরে না, এই ভেবে এয়ারহোষ্টেস-কে করুণ মুখে হাসি এনে জিজ্ঞেস করলাম –
- এই খাবার কি ব্যাপার?
- এটা তো আমাদের স্পেশাল ‘হিন্দু ভেজেটিরিয়ান মিল’ যেমনটা আপনার বুক করা ছিল!
যদিও আমার ট্রাভেল প্রোফাইলে কোন স্পেশাল মিল এর চয়েস দেওয়া নেই – সেটা সেই ছেলেটাও জানতো। কিন্তু ব্যাটা আমার উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য এই খাবারের অর্ডার দিয়ে দিয়েছে!
এদিকে আমার পাশের পাবলিকেরা কেউ স্যামন, কেউ প্রণ, কেউবা স্টেক, ল্যাম্ব এই সব খাচ্ছে – আর আমি বোটানি ক্লাশের স্যাম্পেল কোলের গোড়ায় নিয়ে বসে আছি! সেবারে ফ্লাইট ছিল ‘লুফতানসা এয়ারলাইন্সের’। এমনিতে লুফতানসা-র আতিথেয়তা বিশাল কিছু এমন অপবাদ মনে হয় না জার্মানদেরও কেউ দেবে! তবুও একবার শেষ চেষ্টা দিলাম এয়ারহষ্টেসকে জিজ্ঞেস করে –
- আসলে হয়েছে কি জানো তো, আমার ট্রাভেল এজেন্ট ভুল করে নিরামিষ খাবার অর্ডার করে দিয়েছে। এটা পালটে অন্য কিছু দেওয়া যাবে না।
- আসলে স্যার, আমাদের আজকে ফুল ফ্লাইট তো, তাই মনে হয় না আমিষ খাবার স্পেয়ার কিছু হবে। তবু দেখি চেষ্টা করে।
অনেক সময় খাবার স্পেয়ার থাকলে এরা পালটে দেয় – কিন্তু সেদিন ২৪টা বিজনেস ক্লাসের সীটই ভর্তি। আর আমিষ চয়েস সব কিছু ফুরিয়ে গেছে – এই খবরটাই ফিরে এসে খানিক পরে এয়ারহোষ্টেস দিল।
আমি তখন জাগতিক ব্যাপারের উর্দ্ধে উঠে কত কিছু ভাবছি –
আচ্ছা, উপরে একখানে ছোট্ট হলদে রঙের, এটা কি সর্ষের ফুল? নাকি খলসে ফুল?
বাই দি ওয়ে খলসে ফুল কি হলুদ হয়? শুনেছি সুন্দরবনের খলসে ফুলের মধু খুব ভালো খেতে!
ও হ্যাঁ, একটা জিনিস তো চিনতেই পারছি। আগেও একটা রেষ্টুরান্টে দিয়েছিল সাইড ডিস হিসেবে খেতে – আমাদের দিকে একে ‘গমা’ গাছের ডগা বলে। গরুতে খায়।
সবুজ সস-টাও চিনতে পারছি। আমাদের ওদিকে রেষ্টুরান্টে কাবাব-টাবাব অর্ডার করলে সাথে এই সস-টা দ্যায়। কি দিয়ে বানায় কে জানে! পুদিনা কি? এত বড় এয়ারলাইন্সেও দেখেছো - এই সামান্য জিনিসও কয় পয়সা বাঁচাবার জন্য আউট সোর্স করেছে! তবে জিজ্ঞেস করলে কি আর স্বীকার করবে! বলবে আমাদের স্পেশাল ‘মিন্ট’ সস!
আচ্ছা, তাহলে এই গমা গাছের ডগার তলায় এগুলো কি? এটা তো বাপ আমার চোখ এড়াতে পারবে না! এটা পরিষ্কার সীমের বীজ কুচানো! নাকি সাথে বীন-স্ ও কুচিয়ে দিয়েছে। যাই হোক, দুটো জিনিস চিনতে পেরে মনটা হালকা খুশী খুশী লাগলো।
বেদানার দানা চিনতে পারলাম – লাল লাল গোটা দশেক দানা ছড়িয়ে দিয়েছে। গোটা দশেকই বা বলব কেন? হাতে যখন অনন্ত সময়, কটা দানা দিয়েছে গুণেই দেখা যাক। গুণে দেখলাম, নয়টা দানা দিয়েছে। হু হু বাবা, আমার চোখকে এড়াবে! এই লাইনে অনেক দিন আছি!
দুই কুচো কাজুর পিস দিয়েছে – তবু মন্দের ভালো। সাদা রঙের ওটা কি কোণের দিকে? শুকনো রজনীগন্ধা ফুল মনে হচ্ছে। শুঁকে দেখলাম – না কোন গন্ধ নেই। মানে অন্য কিছু গতিয়েছে রজনীগন্ধার বদলে। লেটুস পাতার ভিতর দিকে এমন সাদা হয় শুনেছি – সেটাই নাকি?
এবার ডান দিকের বাটিতে মনোযোগ দিলাম – উপরে কিছু মুসলি ছড়িয়েছে, নাকি কুমড়োর বীজ? কোলেষ্টেরল কমাবার জন্য যেগুলো আজকাল ডাক্তার-রা বাঙালি-দের বেশী করে খেতে বলে – কিন্তু কোন প্রকৃত বাঙালী সে জিনিস ছোঁয় না! কুমড়োর ফুল পর্যন্ত ঠিক আছে, তাবলে বীজ? খেতে হলে কাঁঠাল বীজ পুড়িয়ে দাও!
বাকি শাকগুলো কি? সেনটেলা এশিয়াটিকা, এপোমিয়া অ্যাকোয়াটিকা, বাসেলা অ্যালবা, আর্টিপ্লেক্স হর্টেনসিস, ট্রিগোনেল্লা ফোটিডিয়াম? ক্লাস টুয়েলভে জীবন বিজ্ঞান পড়ার সার্থকতা ঝালিয়ে নিতে লাগলাম বিজ্ঞান সম্মত নাম গুলো মনে করে! মোটামুটি ধারণা করা গেল – কিন্তু একটা জিনিস ক্লিয়ার হল না। এ-৩৮০ এর ফার্ষ্ট ক্লাসে তো আর ট্রাভেল করছি না যে শাওয়ার নেবার ব্যবস্থা থাকবে! তাহলে খামোকা তেলের শিশিটা দিয়েছে কেন!!
(২)
সেবারে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহরে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে এক সিরিয়ান রেষ্টুরান্টে খেতে ঢুকেছি।
খাবার আগে এই ড্রিঙ্কসটি করেছি অর্ডার - নাম পড়ে কিছুই বুঝি নি, সবচেয়ে এটার দাম বেশী বলেই অর্ডার করেছিলাম।
তা দিয়ে গেলে দেখলাম সরবতের উপরে বেলিফুলের কুঁড়ি, জুঁই, আর গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। আমি ভাবলাম এগুলো খেতে হয় তাই চামচ দিয়ে তুলে কচকচ করে চেবাতে শুরু করলাম।
ইতিমধ্যে ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করল ড্রিঙ্কস কেমন এনজয় করছি।
বললাম, "সবই ঠিক ছিল, কিন্তু ফুলের কুঁড়ি কাঁচা চিবোতে কেমন লাগছে, একটু হালকা রোষ্ট করে দিতে পারতেন!"
সে ছেলে শুনে হুব্বা! "আরে এগুলো আপনাকে কে খেতে বলেছে! এ তো শুধু ডেকরেশনের জন্য"
কি আর বলি! আমাদের দেশে ডাবের জলের সাথে শাঁস তো আর কেউ ডেকরেশনের জন্য দেয় না! বা লস্যির উপরে হালকা ছাঁচ।
(৩) ইউরোপে এসে ইতালিয়ান খবর না খেয়ে ফিরে যাব সেটা তো আর হতে পারে না। তাই সেদিন গেলাম রেস্টুরেন্টে খেতে যার নামটাও বেশ ইতালিয়ান সুন্দর - "লা পিজ্জা এ বেলা"। দেখলাম কয়েকটা কলেজে পড়া আর ছেলেমেয়ে সন্ধ্যাবেলায় রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করছে যেটা বাইরের দেশের প্রায় সবাই করে থাকে।
এদের মেনু আবার ইতালিয়ান ভাষায় লেখা আছে আর বেলজিয়াম ভাষাতে। ইংলিশ মেনুটা হাতের কাছে চট করে পেলাম না দোকানে টুরিস্টদের বেশি ভিড় ছিল বলে।
তাই আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম - "ঠিক আছে, স্টার্টার হিসাবে তাহলে তোমাদের ফেমাস কি ডিশ আছে সেটাই খাওয়া যাক। আজ আমার ভেজিটেরিয়ান খাবার খেতে মন যাচ্ছে"
মেয়েটি জবাবে বললো যে, "এখন তো ভিজিটেরিয়ান খাবার খুব পপুলার হয়ে যাচ্ছে - এমনকি ভিগান খাবারও বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায়"।
তো আমাকে সাজেস্ট করল একটা ডিসের নাম যার ইংরেজি যার উচ্চারণ হচ্ছে "তালিয়েরে ভেজিটেরিয়ান"। বলল এতে নাকি নানা ধরনের স্পেশাল ধরনের সবজি গ্রীল করা থাকবে আর এটা ওদের প্রচন্ড পপুলার। খিদের মুখে মেয়েটিকে বললাম তাহলে এটা এনে দাও
মেয়েটি অর্ডার নিয়ে চলে গেলে আমি একবার মেনুতে চোখ বুলালাম। মেনুর পাশে লেখা ছিল ব্র্যাকেটে এতে দেয়া থাকবে ঝুকিনি, মেলানজানে, ফাঙ্গি প্লুওটরেস, ওলিভ, ক্যাপরাই, ফিয়েরেয়াল্লি ও পেপ্পেরোনি।
মোবাইলে নেট কানেকশন পেলাম না, তাই যাচাই করা হল না কি আসতে চলেছে! অলিভ ছাড়া কোন নামই চেনা ঠেকল না!
কিন্তু নাম দেখে ভাবলাম বিশাল কিছু আসতে চলেছে। মিনিট পনেরো অপেক্ষা করে, দু বোতল কোক জিরো শেষ করার পর টেবিলে এই জিনিস এল!
শেষে গ্রীল করা বেগুন! এর জন্য ইউরোপে এলাম হায়!
মা-কে ফোনে বলাও যাবে না - নিজে যে জিনিস আমাকে খাওয়াতে পারে নি হাজার অনুরোধে, তা আজ বিদেশীরা বিনা বাক্যে খাইয়ে দিচ্ছে শুনলে ছেলে আরো দূরের হয়ে যাচ্ছে বলে কষ্ট পাবে!
(৪)
কথায় নাকি আছে, "বাঁশ তুমি কেন ঝাড়ে, এসো আমার ড্যাস-এ"।
তো আমি বহুকাল ভাবতাম এই ড্যাস মানে হচ্ছে ঘর। কিন্তু আমার বন্ধুরা বলতো যে এখানে ড্যাস মানে ঘর নয়, ঝাড়ের সাথে রাইমিং করে অন্য কিছু! কোনদিন বিশ্বাস করতাম না - হালকা আঁতেল হবার চেষ্টায় উল্টে প্রশ্ন করতাম, "ইহা তোমরা কি বলিতেছো!"
তো সেবারে বেলজিয়ামে ঘুরতে ঘুরতে এক রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকে মর্মে মর্মে বুঝলাম যে ওই ড্যাশ এর জায়গায় ঘর নয় বরং আমার বন্ধুরা যেটা বলত সেটাই হবে।
এই ঝিনুক খাওয়া নিয়ে যে চিরকাল আমি সবকিছু জানতাম এমন নয় বরং প্রথমবার কিছুই জানতাম না। মানে তখন বাঁশ ঝাড়েই ছিল! সে বহুদিন আগের কথা তখন আমি পিএইচডি করতে বিদেশে থাকি আর মাঝে মাঝে কাজে ফ্রান্স যাই পারিস থেকে কিছু দূরে ডিজন নামে এক শহরে।
সে শহরে ইংরাজী প্রায় চলেই না। আর আমার ফ্রেঞ্চ তখন এমন যে সকালে হোটেলে রিসেপসনের মেয়ে "বঁ - জ" (মানে সুপ্রভাত) বললে আমি উত্তরে বলতাম "নো বঁ-জ"। আমি ভাবতাম যে সেই মেয়ে ব্রেকফাষ্ট খাব কিনা জিজ্ঞেস করছে!
একদিন রাত দশটা নাগাদ ল্যাব থেকে ফিরে প্রচুর খিদে পেয়ে গেছে। কি অর্ডার দেবো বুঝতে পারছি না ফ্রেঞ্চ মেনু পড়ে। খিদের চোটে ভাবলাম যে সবচেয়ে বেশি দাম যেটা মেনু কার্ডে সেটাই অর্ডার দেয়া যাক - যেটা আসবে সেটাই খাবো। আধঘন্টা অপেক্ষা করার পর আমাকে এনে দিয়েছিল একটা জামবাটি ভর্তি করে ঝিনুক।
রাত সাড়ে দশটার সময় প্রবল খিদের মুখে এক বাটি ঝিনুক খেয়ে পেট ভরানো যে কি দুঃস্বপ্নের ব্যাপার সে যারা জানেন তারাই জানেন!
সেদিন বাঁশ ঝাড় থেকে নেমে এসেছিল - কিন্তু আমার অজান্তে এটাই ছিল স্বান্তনা।
কিন্তু সেদিন যা হল এ যেন নিজে বাঁশকে ডেকে আনা যেচে! সেই যেন গার্ডিয়ান অব দ্যা গ্যালাক্সি সিনেমায় একজন শিস দিয়ে তীরের মতন একটা কাঠি নাড়াচাড়া করত, আমার কেস প্রায় তেমন!
আপনারা যারা বেলজিয়াম গেছেন তারা অনেকেই দেখেছেন হয়তো বেলজিয়ামের কিছু শহরে খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে সী-ফুড এবং বিশেষ করে ঝিনুক। এমন কি ঝিনুকের ছবি পর্যন্ত চেটানো আছে মেনুতে - মিস হবার চান্স নেই!
আমি ভাবলাম ফ্রেঞ্চ ঝিনুক নিয়ে অমন করেছিল বলে কি বেলজিয়ামের এরাও করবে! নিশ্চয়ই একটু বেশী মাংস দেবে - তবুও শিওর হবার জন্য ঝিনুকের সাথে শামুকও দিয়ে দিলাম! একটা না একটা লাগবেই!
জামবাটি আর শানকি করে দিয়ে গেল শামুক এবং ঝিনুক। তারপর?
তারপর আর কি! বুঝলাম বন্ধুদের বলা ড্যাস- টাই ঠিক।
আর ইউরোতে বিল চুকিয়ে নিজেকে প্রবোধ দিলাম এই বলে যে, এক্সচেঞ্জ রেট এক ইউরো মানে নব্বই টাকা নয়, নয় টাকা!
(৫)
শামুক খাওয়া হল ঝিনুক খাওয়া হলো এবং তার সাথে গেঁড়ি গুগলির নানা ভার্সন। এবার দিনে দিনে আমার লোভ বাড়তে শুরু করল। ব্রাসেলস শহরে প্রধান চত্বরের কাছে রেস্টুরেন্ট গাদা। ভাবলাম শামুক ঝিনুক যখন পাওয়া গেল তাহলে কি আর কুঁচো চিংড়ি কি আর পাওয়া যাবে না!
চোখের সামনে সেই ভেসে উঠল পুরনো দিনের কথা - কুঁচো চিংড়ি দিয়ে বানানো লাউ বা পটল চিংড়ি! এক সময়ে আমাদের দিকে বিয়ে অন্নপ্রাশন থেকে শুরু করে শ্রাদ্ধের পরের আঁশপান্না পর্যন্ত পটল চিঙড়ির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে!
আপনার পয়সা আছে বলেই চিংড়ির সাইজ বিশাল বড় করে ফেলবেন সেটা হবে না! পটল চিঙড়ির চিঙড়ির সাইজ হবে অপ্টিমাম।
যাই হোক, কুঁচোচিংড়ি সন্ধানে রেস্টুরেন্ট থেকে রেষ্টুরান্ট ঘুরছি কয়েকদিন। এই দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করছি দাদা এখানে কুঁচো চিঙড়ি হবে! প্রায় সবাই বলছে বড় চিঙড়ি দিচ্ছি তো তোমায়, তুমি কুঁচো খুঁজছো কেন!
এই বালকদের আর কুঁচো চিঙড়ির মাহাত্ম্য কি বোঝাই! অবশ্য চাইলেও পারতাম না কারণ পটলের ইংরাজি জানা ছিল না!
একদিন খুঁজতে খুঁজতে একটা রেস্টুরেন্টে পেয়ে গেলাম অবশেষে! দোকানের সামনের ছেলেটিকে কুঁচো চিঙড়ি পাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞেস করেছি কি, মানে প্রশ্ন শেষ হয় নি তখনো, সেই ছেলে প্রায় টেনে ঢুকিয়ে নিল - এখানে সব পাওয়া যায় বলে!
সেটা আবার বেলজিয়াম কুজিন! আমার দিক থেকে দেখতে গেলে বেলজিয়াম ক্যুজিনে আলাদা করে কি হয় তেমন জানা নেই! তবে সেদিন কুঁচো চিঙড়ি পাওয়া যাবে বলে এত উত্তেজিত ছিলাম যা আর কিছু না দেখেই - নিয়ে এস সেই ডিস বলে অর্ডার করে দিলাম।
মিনিট কুড়ি পরে এল এই ডিসটা। সাথে আর কিছু নেই! আমি ভাবছি সস কখন আসবে! সসের আশায় বসেই রইলাম কিছুক্ষণ। ভয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারছি না সহজে - এ কে চাষা এল বলে যদি বের করে দেয়!
প্রথমদিকে সেই যে পাউরুটি আর বাটার দিয়ে ছিল, সেই শুকনো পাউরুটি দিয়ে এই চিংড়ি খেলাম। চিংড়ি খেতে ভালো একদম ফ্রেশ- কিন্তু তা বলে একটা ট্যমেটোকে একদম বিবস্ত্র করে তার ভেতর থেকে মাল মশলা বার করে চিংড়ি ভরে দেওয়া!
বিবস্ত্র টমেটোকে টাচ করব কিনা ভাবছিলাম। পাশের চিংড়িগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভাবলাম যে ঠিক আছে, বিবস্ত্র ট্যমেটোকে ডিসটার্ব না করে চামচ দিয়ে তার গর্ভস্থ মালপত্র সরিয়ে নেওয়া যাক।
তবে বুঝলাম যে এই ফিউশন জিনিস অনেক ধরনের হতে পারে - শুকনো রুটি বাটার আর কুঁচো চিংড়ি ফিউশন ডিস সেদিন খুব একটা খারাপ লাগলো না খেতে! অবশ্য কুঁচো চিঙড়ির ডিসটার নাম ৮.৫" বাই ৫" বইগুলির একলাইন সম লম্বা । আমি সাজেষ্ট করে এলাম যে ডিসটার নাম পাল্টে "কুঁচো চিঙড়ির ঝুরো ভাজা" রাখতে। তবে সাজেশন শুনে মুখের যা ভাব দেখলাম, মনে হয় না নাম পাল্টাবে!