অসম্ভব ত্রিভুজ
---------------------------------------
বিবাহিত জীবনে সবচেয়ে বেশী বার বলা বাক্য মনে হয় “কৈ, আর কত সময় নেবে”? একে অপরের প্রতি নিক্ষিপ্ত
এটা ভার্সাটাইল প্রশ্ন, অনেকটা এ বি ডিভিলিয়ার্সের মতন – টি ২০ খেলতে পারে, টেষ্ট এবং পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ সমান দক্ষতায়। ঠিক তেমনি আপনি উপরের বাক্য হয়ত ব্যবহার করেছেন –
- দোকানে ঢুকেছেন জিনিস কিনতে, জামা কাপড় হলে তো কথাই নেই
- কোথাও বেরুনোর আগে, বিয়ে বাড়ি হলে নির্ঘাত
- টলয়েট কখন খালি হবে জানতে চেয়ে
- রেষ্টূরান্টে মেনু চ্যুজ করতে গিয়ে
সাজুগুজু আর টয়েলেটের ব্যাপারটা একটু বেশি সেনসেটিভ বলে আলোচনায় আনছি না। কিন্তু বাজার করতে গিয়ে, বিশেষ করে রেষ্টুরান্টে খেতে গিয়ে কিভাবে আরো বেশী এফেক্টিভ হওয়া যায় সেই নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে গিয়ে আমি সেই ‘অসম্ভব ত্রিভুজ’ কনসেপ্টটার সাহায্য নিয়েছিলাম। ‘অসম্ভব ত্রিভুজ’ কি জানেন তো? না জানলে সাথের ছবিটা একবার চোখ বুলিয়ে নিনঃ
এটা অসম্ভব ত্রিভুজ, মানে কোন অবস্থাতেই আপনি “সস্তা – ভালো – চটজলদি” তিনটে জিনিস একসাথে পাবেন না! আপনাকে যেকোন দুটো পছন্দ করে ঠিক করতে হবে – অর্থাৎ “সস্তা-ভালো”, “ভালো - চটজলদি”, নাকি “চটজলদি – সস্তা” কি কম্বিনেশন চান?
খেতে যাবার আগে নিজেদের মধ্যে কনসাল্ট করে নিন উপরের তিন কম্বিনেশনের মধ্যে কোনটা চান আপনারা সেদিন। আর সেইমত রেষ্টুরান্ট বা দোকান বেছে নিয়ে সেখানে যান। কনফিউশন কমবে, সস্তা-ভালো-চটজলদি এই তিন জিনিস একসাথে পাবার মরিচিকার পিছনে দৌড়ে সময় নষ্ট করতে হবে না!
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
হেলথি ডায়াট
-----------------------------
রবি ঠাকুর বর্তমান সময়ে ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধখানি লিখলে তাঁর পুরো ফোকাস থাকত ‘হেলথি ডায়াট’ সেই সম্পর্কে আমি নিশ্চিত! স্বাস্থ্যকর খাবার খান – পুষ্টিকর খাবার খান – ডায়াটিং করুন – ডায়াটেশিয়ান-দের সাথে কনসাল্ট করে নিজের প্ল্যান বানান – মানে চারিদিকে যা তা অবস্থা। ডাল-ভাত-মাছ খেয়ে বেঁচে আছি কি করে এত বছর মাঝে মাঝে বিষ্ময়ে অবাক হয়ে যাই! চারিদিকে ‘হেলথি’ ‘হেলথি’ যে আওয়াজ উঠেছে তার থেকে বড় সভ্যতার সংকট অনেক দিন আসে নি।
আমি তো আরো এক ধাপ এগিয়ে বলব আধুনিক সভ্যতার অভিশাপ হল 'হেলথি ডায়াট'।
বেশ কিছু দিন আগে অফিসে আমার বিদেশিনী কলিগ/বান্ধবীর সাথে কফি খেতে গেছি দেখি সেই কফির দোকানে (কফি বিনস্ অ্যান্ড টি লিভস – যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় খুব জনপ্রিয় ‘সি বি টি এল’ নামে) সামনের শোকেসে স্ন্যাকস হিসাবে সমোসা সাজানো আছে। বান্ধবী বলল তাহলে আজকে ইন্ডিয়ান সমোসা খাওয়া যাক। আমার ভিতরটা চিল চিৎকার করে ওকে আটকাতে চাইছে, কিন্তু ভারতীয় হয়ে ভারতীয় খাবারের অপমান হবে বলে আর কিছু বললাম না।
তো যাই হোক, কফি নিয়ে বসলাম আমরা, সমোসা এল – খেলাম – তারপর দেখি আমার সেই বান্ধবী মোবাইলে একটা অ্যাপ খুলে কত ক্যালোরি জমা করল সমোসা খেয়ে তা আপলোড করে নিল! বলল ক্যালোরি হিসেব করে নাকি সে রোজ খাবার খায় এবং ট্র্যাক করে। আমি বললাম এই শেষবার তোর সাথে কফি খেতে আসা! যে খেয়ে দেয়ে খাবারের টেবিলে বসেই ক্যালোরির হিসেব করে তার সাথে এবার থেকে শুধুই প্রফেশন্যাল সম্পর্ক থাকবে –
সেদিন আলোচনা হচ্ছে দুপুরে কোন রেষ্টুরান্টে কি খাবার খেতে যাওয়া যায় – অমৃতা বলল, “হেলথি খাবার সার্ভ করে এমন রেষ্টুরান্টে যাব”! আমি দেখলাম সর্বনাশ, বাড়ির অন্দরমহলে ‘হেলথি’ ঢুকেছে অনিচ্ছা সহ মেনে নিয়েছি – কিন্তু তাবলে রেষ্টুরান্টে খেতে গিয়ে ‘হেলথি’ নিয়ে ভাবনাচিন্তা! আমি বউকে বললাম,
- দ্যাখো, বীনস, অ্যাসপারাগস, স্পিনাচ, ব্রকোলি এই সব তো দিন রাত খাইয়ে খাইয়ে আমাকে প্রায় শুঁয়োপোকা করে ফেললে
- মানে কি বলতে চাইছো
- তেমন কিছুই বলতে চাইছি না, শুধু তোমার নোটিশে আনতে চাইছি যে ঘাস পাতা খেয়ে খেয়ে আমার অবস্থা নিমো স্টেশনের ধারে সজনে গাছে থাকা শুঁয়োপোকা গুলোর মত হয়ে গেছে! দ্যাখোনি তুমি স্টেশনে শুঁয়োপোকা?
- দেখেছি, কিন্তু তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক
- অনেক শুঁয়োপোকা দেখবে মাটিতে নেমে ঘুরে বেড়ায় – অসাবধানে তাদের উপড়ে পা পড়ে গেলে প্যাট করে ফেটে গিয়ে চারিদিকে সবুজ ছিটকে যায়, দ্যাখোনি? এই দ্যাখো আমার হাতের শিরার কি অবস্থা, রক্ত কি সবুজ হয়ে গেছে
কিন্তু বউয়ের সাথে তর্ক করে আর কে কবে জিতেছে! যাওয়া হল এক স্বাস্থ্যকর রেষ্টুরান্টে দুপুরে খেতে। ভিতরে ঢুকেই আমার হয়ে গেল – চারিদিকে সবুজ – এমনকি দেওয়ালেতেও সবুজ ম্যাট লাগিয়ে রেখেছে।
টেবিলে জলের বোতলে শাক পাতা ডুবানো – অমৃতা আমাকে শেখালো এতে নাকি জল ইন-ফিউজড হচ্ছে!
কি খাব এদিকে মেনু দেখে বুঝতে পারছি না। অনেক ভেবে চিন্তে নীচের ডিসটা অর্ডার করেছিলাম
সামনের প্লেট এই খাবার দেখে বউকে বললাম, “স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চেয়েছিলাম, পুরানো প্রস্তর যুগে ফিরে যাবার অভিপ্রায় প্রকাশ করি নি!”
রান্না করতে 'আগুন' নামক কোন বস্তু লাগে এই শেফ ভুলে গিয়েছিলেন!
আমাদের নিমোর জেলে পাড়ার জয়ন্তীর ছাগলগুলোকেও এই খাবার দিলে রিফিউজ করবে মুখ লাগাতে!
বাহ!! দারুন লাগল, এক যায়গায় সব থাকুক, আমাদের মত পাঠকদের সুবিধা হবে।..
জ্জিও সুকি! একখুনি আমার গিন্নিকে পড়াব এবং ছবি দেখাব। কোথায় কষা মাংস খাব ভাবছিলাম।
চক্রবৎ পরিবর্তন্তে।
ছোট বয়সে কচুরিপানা ভেজানো জল অস্বাস্থ্যকর ছিল। এখন সেই জল বোতলে ভরে হেলদি হয়েছে।
ক্ষমতা থাকলে না আপনার নামে একখানা রাস্তার নামকরণ করতাম, গুরু। সেলামগ্রহণ করুন !!
এক্কেবারে ঠিক সুকি । এই সো কল্ড হেলদি খাবার-র জ্বালায় সোশ্যাল মিডিয়ায় হাড় জ্বলে গেলো মাইরি। খেয়ে যেটুকু তথাকথিত স্বাস্থ্য ভালো হয় , পোস্ট-মিল্ ডিপ্রেশনে তার থেকে বেশি খারাপ হয়ে যায়। তার ওপর উপরি পাওনা গিল্ট কনসাসনেস। জীবন ভাজা ভাজা হয়ে গেলো পুরো।
সে কি? ভাত আর শাকের পাশের বস্তুটি তো প্রচন্ড রোমহর্ষক মনে হচ্ছে।
তাছাড়া শাক দিয়েও কিছু উত্তেজক বস্তু ঢাকা আছে বোধ হচ্ছে।
এনি ডে এসব শাকপাতার থেকে বিরিয়ানি ভালো। একদিন যখন মরতে হবেই , তখন প্রানভরে খেয়ে মরাই ভালো।
নাহলে শেষে মরার পরে অভুক্ত , অতৃপ্ত ভুত হয়ে আমিনিয়া বা নিজামের কিচেনে ঘুরঘুর করে বেড়াতে হবে।
হেলথি খাওয়া বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন আমাদের অক্ষদা বাবু। প্যারাফ্রেজিতো ভারসনটা হলো: রাস্তার ধারে ওই কার্সিনোজেন থিকথিক করা তেলেভাজা খাবারগুলো খেলে ক্যান্সারে মরা ভবিতব্য কিন্তু সেগুলো না খেয়ে থাকতে হলে ডিপ্রেশনেই মরে যেতে হবে।
এখন যার যেমন পছন্দ।
সবাই-কে ধন্যবাদ।
অমিতাভদা এবং :|: আমি আপনাদের সাথে একমত। আমার কাকার ছেলে বাড়িতে ভাত খেয়ে ট্রেন ধরে কলেজ যায় বর্ধমান, এবং প্রথম ক্লাসের পরেই পার্কাস রোডে বিরিয়ানী খেতে আসে। যুক্তি একটাই - যদি দুম করে মরে যাই, এই আফসোস যেন নিয়ে যেতে হয় না, ওই দিন বিরিয়ানি খাওয়া হল না! আত্মা অতৃপ্ত থাকবে!
এই খাবার - হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছে, এতই উত্তেজক খাবার ছিল যে শাক দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়েছে :)
ও মা! এরেই কয় হেলদি ডায়েট!
সেরাম কুড়মুড়ে লেখা