মাঝে মাঝে কাকতলীয় ব্যাপার দেখা যাক বৈকি – সে বিজ্ঞান জগতে হলেও। যেমন দেখা যায় চার্লস মার্টিন হল এবং পল হেরল্ট এর জীবনে। ‘হল-হেরল্ট’ পদ্ধতির জনক এই দুই জন জন্মেছিলেন এই সালে (১৮৬৩), একই বছরে পৃথিবীর দুইপ্রান্তে পৃথক ভাবে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাষণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন (১৮৮৬), আবার দুই জন মারাও গিয়েছিলেন একই বছরে (১৯১৪)। ... ...
প্রতিভাই সব নয় সফল হতে গেলে। কারণ সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যক্তিরা খুব কমই সব থেকে বেশী সফলতা পান। সাধারণভাবে দেখা গেল, মাঝারি-কিন্তু-ভাগ্যবান লোকেরা আরও-প্রতিভাবান-কিন্তু-অভাগা ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি সফলতা পান। সবচেয়ে সফল জনতা তারাই দেখা গেল যাদের প্রতিভা সাধারণ মানুষের গড় প্রতিভার থেকে সামান্য বেশি কিন্তু যারা সারাজীবন অনেক ভাগ্যের সাথ পান। ... ...
১৯৬৩ সালের কথা – “স্টেট মিউচ্যুয়াল লাইফ ইনসিওরেন্স অব আমেরিকা” কোম্পানী তখন সবে অন্য একটা ইনসিওরেন্স কোম্পানীকে অধিগ্রহণ করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই সেই অধিগ্রীহিত কোম্পানীর কর্মচারীদের মানসিক অবস্থা বা ‘মরাল’ তেমন যুতের নয়। তখন সেই বড় কোম্পানীর কর্তারা ভাবতে বসলেন যে কিছু করে কি এই নতুন কর্মচারীদের মরাল এর উন্নতি করা যায়? ডাকা হল তখনকার দিনের বিখ্যাত অ্যাডভার্টাইজ এবং পাবলিক রিলেশন বিশেষজ্ঞ হার্ভে বল-কে। হার্ভের তখন নিজের ফার্ম ছিল ম্যাসাচুয়েটস-এ। তিনি প্রথমে ওই ইন্সিওরেন্স কোম্পানীর প্রস্তাব শুনে ভাবলেন, এ আবার কেমন কাজের অনুরোধ! কিন্তু তবুও বললেন, তিনি ভেবে দেখবেন। হার্ভে-কে খুব বেশী দিন এই নিয়ে ভাবতে হয় নি। ইনফ্যাক্ট যেদিন তিনি এই অ্যাসাইনমেন্টের প্রস্তাব পান, সেই দিনই বিকেলে তিনি ড্রয়িং বোর্ডের সামনে ভাবতে শুরু করে একসময় এঁকে ফেললেন একটা হলুদ বৃত্ত, এবং তার ভিতরে দুটো ছোট বৃত্ত এবং একটি অর্ধবৃত্ত! ... ...
ও বাড়ির দুয়ার থেকে কেউ বলেছিল যেতেই কি হবে আজ? থেকেই যদি যায় বৈঠকখানার ঘরে? আজ রাতে চাঁদ উঠবেনা, চিনতেও চাইবে না কেউ সেই অস্ফুট আলোয় এলোমেলো চুলের ফাঁকে লাল রঙ অসময়ের বর্ষা বাতি নিভিয়ে দিয়েছে অনেকক্ষণ ... ...
ঘুরতে ঘুরতে এক মেডিটেরিনিয়ান রেষ্টুরান্টে ঢুকে পড়লাম হল্যান্ড এবং বেলজিয়ামের মাঝের এক জায়গায়। বেশ খিদে পেয়ে গিয়েছিল যেমন আমার পায় আর কি কাছেপিঠে ভালো রেষ্টুরান্ট দেখলেই। এই রেষ্টুরান্টের রেটিং আবার ৪.৭ পাঁচের মধ্যে, মানে যা তা ব্যাপার নয় আর কি! খেতে গিয়ে মেনু দেখেই বুঝলুম যা তা ব্যাপার কেন নয়! বিশাল বড় কিছু মেনু নয় তেমন – মাত্র চার পাতার! কিন্তু সেই মেনু পড়ে বোঝে কার কি সাধ্য কি খাবার অর্ডার দেওয়া হচ্ছে! এদিকে ডাচ, ওদিকে ফ্রেঞ্চ এবং মাঝে মাঝে ইংরাজী – একেবারে ডেডলি সব কম্বিনেশন! ... ...
সে প্রায় ১১২ বছর হতে চলল, ১৯১২ সালের ১২ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাউথহ্যাম্পটন থেকে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল ‘রয়েল মেল শিপ (আর এম এস) টাইটানিক’। সেই সময়ের সবচেয়ে জমকালো জাহাজের যাতার স্থায়ী হয়েছিল মাত্র দুই দিনের মত। ১৪ই এপ্রিল রাত ১১.৪০ নাগাদ টাইটানিক প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিবেগে গিয়ে ধাক্কা দিল এক বিরাট হিমশৈল-তে যার ওজন ছিল দেড় লক্ষ থেকে তিন লক্ষ টনের মত। তারপর মাত্র দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিট – তার মধ্যেই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গেল সেই সময়ের বিষ্ময়ের প্রতীক টাইটানিক। জলের তাপমাত্রা তখন খুবই কম, চার ডিগ্রীর মত। বিজ্ঞান বলে এই তাপমাত্রায় মানুষের ২০ থেকে ৩০ মিনিটের বেশী বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। টাইটানিকে যাত্রী ছিল ২০০০ এর কাছাকাছি, এর মধ্যে সেই দিন মারা গিয়েছিল প্রায় ১৫০০ এর মত – এবং বেশীর ভাগই প্রবল ঠান্ডা জলে থাকার ফলে। মানে মৃত্যু সেই অর্থে জলে ডুবে ঠিক নয়। ... ...
এখন তো বছরের সেই সময়টা শুরু হয়ে গেছে জাপানে যখন লক্ষ লক্ষ বিদেশী পর্যটক সেই দেশে পাড়ি জমায়। জাপান বছরের মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাসের মধ্যে খুব সময়ের জন্য সেজে ওঠে চেরী ফুলের সম্ভারে, যাকে ওরা বলে ‘সাকুরা’। সেই সাকুরা দেখতেই পর্যটকদের আগমন। আজ তো নতুন বছরের প্রথম দিন, ভাবলাম সেই চেরী ফুলের গল্প ভাগ করে নেওয়া যাক। ... ...
রাস্তার পাশে দেখি ফুল ছড়িয়ে আছে হালকা বেগুনী তার রঙ আকাশের মত নয়, ছাদ জুড়ে উড়তে থাকা চুলের মত নয় সমুদ্র যখন ঠোঁট লবণাত্ব করে, তেমন সন্ধ্যের জলের মতও নয় বরং অনেকটা জামার ভিতরে উঁকি মারা গোপনীয়তার মত ফুলগুলিতে অসতর্ক পা দিয়ে দেখি বড়ই নরম বড়ই নরম সেই বেগুনী রঙ হাঁটু মুড়ে বসে হাতের তালুতে মেখে নিই পেলবতা, চকিতে ছুঁয়ে যাওয়া গোপন স্পর্শগুলি ... ...
বাতাসের সাথে লেগে থাকা জলকণা ঘরে ঢুকে ভিজিয়ে দেয় না ঝোলানো ছবির অলিভ বাগান চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে ইচ্ছে করে সেই নকশা কাটা ধূসর পাতায় আঁকিবুকি করে ফুটিয়ে তুলি নরম পায়ের শব্দ কিংবা গ্রীলের ওপাশে গল্প করতে আসা পশমের ওম ... ...
ভ্রমণ নিয়ে যে বিশাল লেখাপত্র ফেঁদে বসব এমনটা খুব বেশ দিন আগেও ভাবি নি। আর আগে তেমনটা আগে ভাবি নি বলেই মোটা ডায়েরী নিয়ে ঘুরেছি বা ঘুরে এসেই সব লিখতে বসে গেছি – এমনটাও হয় নি। অন্যদিকে দেখতে গেলে গত কুড়ি-পঁচিশ বছরে ঘোরা ঘুরিও কম হল না! এই কুড়ি এত ঘুরেছি যে সেটাই যেন স্বভাবিক এমন ভাবনায় মস্তিষ্ক নর্মালাইজড হয়ে গিয়েছিল! ... ...