হেমন্ত বললো, আর নয় জয়ি, এবার আমি যাবো।
যাবে মানে? কোথায়?
কোথায় সেটা বলা চলবে না। এটাই তো তোর সাথে কথা ছিলো। প্রপার্টিটা তো এই জন্যেই কেনা হয়েছিলো। এখন তুই যখন এখানেই থাকতে শুরু করেছিস আমাকে তো প্রয়োজন নেই আর। আমি এবার আমার কাজ করবো।
ছোটবেলায় যখন একসাথে থাকতো ওরা সবাই, বাবা কয়েকদিন বাড়িতে থেকেই আবার বাইরে চলে যেতো। বাইরে। এটুকুই বলতো বাবা, এর বেশি আর কিছু নয়। কতো দিনে ফিরবে, কোথায় যাচ্ছে, তেমন কিছু বিপদ-আপদ হলে কোথায় খবর পাঠানো যাবে, এসব কথা বাবা বলতো না কোন দিন, জিজ্ঞাসাও করতো না কেউ। সবাই জানতো, কাজ শেষ হলে বাবা আসবে, খরচপত্রের জন্যে সামান্য কিছু টাকাপয়সা দেবে, দু-একদিন থাকবে, তারপরেই চলে যাবে। আর সেই দু-একদিন যেটুকু কথা বলবে তা শুধু জয়ির সাথে।
কিন্তু সে সব তো ছোটবেলার কথা, এখন তো কত কিছুই বদলিয়ে গেছে !
তোমার কাজ? কী কাজ বাবা? – জিজ্ঞেস করেই ফেলে জয়ি। আসবে না আর?
আসবো না, এটাই আমার ইচ্ছে। তা সত্ত্বেও যদি আসি ফিরে, তাহলে হেরে গিয়ে ফিরবো। সেটা হলে তোরও ভালো লাগবে না, আমারও।
জয়ি কথা বলে না আর। বাবার একটা ব্যাগ গোছানোই ছিলো, কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় হাঁটতে হাঁটতে। জয়ি গেট পর্যন্ত হেঁটে বাবাকে বিদায় দিতে যায় না। বাবা বুঝবে।
তা ছাড়া আজ মাসের শেষ শনিবার। সুকান্তদার আসার কথা। জয়ি এখানে এসে থাকতে শুরু করার কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই এটা চালু হয়েছে। সুকান্তদা প্রতি মাসের শেষ শনিবার আসবে, যে পেশেন্টরা নাম লিখিয়ে রেখেছিলো তাদের প্রত্যেককে দেখবে, তারপর রবিবার সকালেই ফিরে যাবে।
এ-ই খুশিঝোরা দাতব্য চিকিৎসালয়।
হলঘর যে দুটো ছিলো, যেখানে জয়ির ছবির এগজিবিশন হয়েছিলো, তার মধ্যে একটাকে এখন বানানো হয়েছে ডাইনিং হল, লম্বা একটা টেবিল, দু সারি চেয়ার আর ছোট একটা কাঠের আলমারি। আগে যে দুটো অফিস ঘর ছিলো তার মধ্যে একটাকে চিকিৎসালয় বানিয়ে নিয়েছে সুকান্তদা। ডাক্তারের টেবিল, সামনে রোগী আর তার সঙ্গী বসার জন্যে দুটো চেয়ার। একটা চাদর দিয়ে ঘরটা ভাগ করে তার আড়ালে রোগী পরীক্ষার ব্যবস্থা। সেখানে টেবিলের নীচে একটা ওজন নেবার যন্ত্র। ডাক্তারের টেবিলে স্টেথোস্কোপ, একটা কাচের গ্লাসে থার্মোমিটার, প্রত্যেকবার এসেই কোন একটা তরল ঐ গ্লাসে ঢেলে থার্মোমিটারটা তাতে ডুবিয়ে দেয় সুকান্তদা, অন্য একটা গ্লাসে আরও কিছু টুকিটাকি। পাশেই একটা স্ফিগমোম্যানোমিটার, রক্তচাপ মাপার যন্ত্র। সবকিছুই সুকান্তদা নিজে নিয়ে এসে সাজিয়ে রেখেছে, প্রথম যেদিন থেকে জয়ির অনুরোধে এই চিকিৎসালয় চালাচ্ছে সুকান্তদা। কাছাকাছি গ্রাম দুটোর মানুষরা এতদিনে সবাই জেনে গেছে এই ডাক্তারবাবুর কথা। ভীড় সামলাতে হিমসিম খেয়ে যেতে হয়। তাই আগে থেকে নাম লেখানোর ব্যবস্থা। প্রত্যেকবার সঙ্গে করে কিছু ওষুধও আনে সুকান্তদা, ওষুধ কোম্পানির লোকরা ডাক্তারদের যে সাম্প্ল্ দেয় তার থেকে। বাকি ওষুধের ব্যবস্থা করতে হয় রোগীদের নিজেদেরই। জয়িদের বন্ধুবান্ধবরা আর অন্য শুভানুধ্যায়ীরা মাঝে মাঝে কিছু অর্থসাহায্য করে, তার থেকে খানিকটা ব্যবহার করা হয় খুব গরীব যারা তাদের ওষুধ কিনতে। জলধরও মনে রাখে প্রত্যেক মাসে এই দিনটার কথা, সে-ও চলে আসে সাধারণত, সুকান্তদার কাজে যতটা পারে সাহায্য করে।
আজ সুকান্তদার সাথে এসেছে জুঁই আর ওদের বারো বছরের ছেলে শাম্বাদিত্য। শাম্বাদিত্য দার্জিলিঙের সেন্ট পল্স্ স্কুলে পড়ে, ছুটিতে বাড়ি এলে সে মা-বাবার সাথে একবার অন্তত খুশিঝোরাতে আসেই। হেমন্ত দাদুকে তার ভারি পছন্দ। নানা অদ্ভুত জায়গায় ঘুরেছে হেমন্ত দাদু, কতোরকমের যে কাজ করেছে তা বলে শেষ করা যায় না। সেই সব গল্প, আর গল্প করতে করতেই এক-এক মিনিটে মজার মজার ছবি এঁকে ফেলা, তার কাছে বড়ো একটা আকর্ষণ।
শাম্বাদিত্য শুনলো হেমন্ত দাদু নেই, আর হয়তো ফিরবে না। হেমন্ত দাদুর অনেক গল্পের মতো হেমন্ত দাদু চলে গেছে কোথায়, কী কাজ করতে, কেউ জানে না। কিছুক্ষণ পর এসে পৌঁছোয় জলধর কাকু, সে তার মোটর-বাইকে চড়িয়ে শাম্বাদিত্যকে ঘুরিয়ে আনে বান্দোয়ান থেকে, ল্যাংচা আর গুড়ের লাড্ডু খাইয়ে।
জলধর শাম্বাদিত্যকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর সুকান্ত আর জয়ি শুনলো হেমন্তর চলে যাওয়ার কথা। কী করবি এখন? – জুঁই জিজ্ঞেস করে জয়িকে।
কিছু তো করার নেই জুঁইদি, বাবার তো চলে যাওয়ার কথাই ছিলো, এতদিন যায়নি, তাই আমি ভাবছিলাম শেষ পর্যন্ত যাবেই না হয়তো। মুশকিলটা হবে গোরুগুলোকে নিয়ে, আমি তো ওসব কিছুই বুঝি না।
এবার থেকে একটু একটু বুঝতে চেষ্টা কর, বলে সুকান্ত, এমনিতে গোরুর দেখাশোনা করে যে মেয়েটা, অষ্টমী না কী যেন নাম, ও তো মনে হয় ভালোই, তবে তুইও অ্যাক্টিভলি লক্ষ্য রাখ কীভাবে কী করে ও, শিখে যাবি।
কিছুক্ষণ পর পেশেন্টরা আসতে শুরু করে, জলধরের অনুপস্থিতিতে সুকান্তকে ওরই নির্দেশে সাহায্য করতে শুরু করে জয়ি, রঘুনাথ চলে যায় রান্নার ব্যবস্থা দেখতে, জুঁই তার সঙ্গে। আশ্চর্য, ভাবে জয়ি, রঘুনাথ তো একবারও জিজ্ঞেস করলো না কোথায় গেলো হেমন্ত ! এমনকী জলধরও !
পরের দিন সকাল বেলা সুকান্তরা বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরেই একটা এয়ার-কণ্ডিশন্ড্ টাটা সুমোয় চারপাঁচ জন যুবক হাজির। গেটের বাইরে দাঁড়িয়েছিলো রঘুনাথ, গাড়িটা এসে দাঁড়ায় ওর সামনে। ড্রাইভারের পাশে বসেছিলো যে যুবক সে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে রঘুনাথকে, আচ্ছা, খুশিঝোরা এখানে কোথায়?
খুশিঝোরা? আপনারা কী ঝোরাটার খোঁজ করছেন? – প্রশ্ন করে রঘুনাথ।
ঝোরা মানে? খুশিঝোরা শুনেছি একটা প্রতিষ্ঠানের নাম। জয়মালিকা সেন নামে একজন আর্টিস্ট থাকেন সেখানে।
ও, হ্যাঁ, এখানেই তো, বলে রঘুনাথ।
একটু দেখা করা যাবে?
রঘুনাথ বুঝতে পারে না ওদের ভেতরে যেতে বলা উচিত কিনা। বলে, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আমি দেখছি।
রঘুনাথের বর্ণনা শুনে বেরিয়ে আসে জয়ি। ওই যুবকরা ততক্ষণে নেমে পড়েছে গাড়ি থেকে। দুজন দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে, বাকিরা একটু এগিয়ে-পিছিয়ে এধার-ওধার ঘোরাঘুরি করছে।
জয়ি এসে দাঁড়াতে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক দুজন হাত তুলে নমস্কার করে, জয়ি নমস্কার করে বলে, আমিই জয়মালিকা সেন।
আমরা রেকি করতে করতে এখানে এসে পৌঁছেছি, যুবকদের মধ্যে একজন বলে।
রেকি? – জয়ির গলায় একটু বিস্ময়, একটু অনিশ্চয়তা।
মানে, লূকিং ফর আ প্রপার সাইট। আমরা কয়েকদিন ধরে এই অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করছি। গতকাল পর্যন্ত ঘাটশীলাতে ছিলাম। কলকাতা থেকে ফোনে কাল আমাদের বলা হয়েছিলো রবিবার আর সোমবারের দুটো খবরের কাগজ, একটা বাংলা আর একটা ইংরিজি, দেখে নিতে। সেখানে জয়মালিকা সেন নামে একজন আর্টিস্ট আর তাঁর প্রতিষ্ঠান খুশিঝোরার খবর পাবো। আমাদের বস বলেছে জয়মালিকা সেনের সাথে কথা বলতে, আর খুশিঝোরাটাও ভালো করে দেখে আসতে।
আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না, বলে জয়ি, আপনারা আসছেন কোথা থেকে?
ইতোমধ্যে বাকি যুবকরাও এসে দাঁড়িয়েছে। দুজন যুবকের মধ্যে যে এতক্ষণ চুপ করে ছিলো, সে কথা বলে এবার, আমরা আসলে একজন ফিল্ম প্রোডিউসারের হয়ে কাজ করছি। এই প্রোডিউসারের পরের ছবির শূটিং সাইট খুঁজছি আমরা। ডিরেক্টর যিনি, তিনি মনে করেন এই ছবির শূটিঙের জন্যে এই পুরুলিয়া-ঘাটশীলা-চাইবাসা এই সব জায়গাতেই আইডিয়াল সাইটটা পাওয়া যাবে। পরশুদিন আমাদের বস জানালো দুটো কাগজে আপনাকে নিয়ে আর আপনার খুশিঝোরাকে নিয়ে আর্টিক্ল্ বেরিয়েছে। এই পর্যন্ত বলেই যুবকটি অন্য একজনকে বলে, এই, কাগজ দুটো কোথায় রে?
ওদের মধ্যে একজনের হাতে কাগজ দুটো রোল করে রাখা ছিলো। সে কাগজগুলো খুলে বলে, এই তো, দেখুন না।
জয়ি আর্টিক্ল্ দুটো দেখে ওপর ওপর, তার পর বলে, হ্যাঁ, তারপর?
যে যুবকটি কথা বলছিলো জয়ির সাথে সে বলে, আমরা ঠিক করলাম আপনার খুশিঝোরা আর তার আশপাশের জায়গাগুলো একটু দেখে নিই, আর আপনার সাথেও কথা বলা যাক একটু। আমাদের যদি পছন্দ হয় আর আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে এই সাইটটাই আমরা রেকমেণ্ড করবো।
জয়ি বললো, চলুন, আমরা একটু ভেতরে গিয়ে বসি, বসে বসেই কথা বলা যাক।
গেট খুলে দিলো রঘুনাথ, ওদের গাড়িটা সোজা ভিতরে গিয়ে অ্যাসবেস্টসের চালটার নীচে দাঁড়ালো। বাগানে কয়েকটা চেয়ার পেতে দিয়ে চায়ের ব্যবস্থা দেখতে গেলো রঘুনাথ।
তাহলে সিনেমার শূটিঙের সাইট খুঁজছেন আপনারা, জয়ি বলে বসতে বসতে, তাই তো? কী সিনেমা?
কী সিনেমা সেটা কিন্তু এখনই বলা যাবে না।
সেটা বলা যাবে না এখন? আচ্ছা, ধরুন শূটিংটা হলো এখানে, আমরা কী পাবো?
আপনারা কী পাবেন, সেটাও আমরা জানিনা। আমরা রেকমেণ্ড করলে ফাইনাল ডিসিশন নেবেন প্রোডিউসার আর ডিরেক্টর। ওঁরা নিজেরা আসবেন, কথা বলবেন আপনাদের সাথে। পছন্দ হলে, টার্মস অ্যাকসেপটেব্ল্ হলে, কন্ট্র্যাক্ট সই করা হবে। তবে পাস্ট এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলতে পারি, যা আপনারা পাবেন, সেটা অপছন্দ হবে না আপনাদের।
চা এসে যায়। চা খেতে খেতে জয়ি জিজ্ঞেস করে, খুশিঝোরার কথা আগে কখনও শুনেছেন আপনারা?
আমি শুনিনি, বলে যুবকদের মধ্যে একজন, মনে হয় না আমাদের মধ্যে আর কেউই শুনেছে। এই কাগজ দুটো পড়েই যেটুকু জানলাম। জয়ি ওর এগজিবিশনের কথা বলে ওদের, এ ছাড়া বনসৃজনের কাজ, ট্রাইবাল বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখানো আর দাতব্য চিকিৎসালয়।
হঠাৎ যুবকদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করে, এখানে যদি থেকে যেতে চাই আমরা দুদিন, কাছাকাছি অ্যাকোমোডেশন কোথায় পাবো?
এখান থেকে বাঁ দিকে গিয়ে মাইল আষ্টেক দূরে বান্দোয়ান নামে একটা ছোট শহর আছে, সেখানে শুনেছি
পি-ডব্ল্যু-ডি-র একটা ডাক-বাংলো গোছের কিছু আছে, খোঁজ করে দেখতে পারেন। বাঁদিকে না গিয়ে যদি ডান দিকে যান, তিন-চার মাইলের পর সাত-ঘুরুং নদীর কাছে একটা সরকারি ট্যুরিস্ট লজ গোছেরও আছে শুনেছি। এ ছাড়াও যেখানে বসে আছেন সেই চৌহদ্দির মধ্যে চারখানা ঘর আছে, তবে তা কী পছন্দ হবে আপনাদের?
আছে? আপনাদের নিজেদের? তাহলে আর কথা কী?
খাবেন কোথায়?
আপনারা কোথায় খান? সেখানে জুটবে না আমাদের? – বলে ওদের মধ্যে একজন।
জুটতে পারে, সে ক্ষেত্রে আপনাদেরও হাত লাগাতে হবে।
গেস্ট হাউজের জানলা থেকে দেখা যায় ছোট দরজার ওপারে লাগানো নানা ফলের গাছ আর খুশিঝোরার সীমানা ধরে একটানা সোনাঝুরি। সোনাঝুরিগুলো এতদিনে বড়ো হয়ে গেছে, অপূর্ব তার সৌন্দর্য। বিকেলে জয়ির সাথে ওরা হাঁটতে বেরোয়, রাস্তার ওপারে লাগানো নানা গাছের চারা দেখে ওরা, আর সদ্য-সংস্কৃত পুকুরটা। ফেরবার সময় ছোট ঝোরাটার গুনগুনানি শোনা যায়, আর রাস্তার ওপর দেখা যায় ব্যানারগুলো, যেগুলোর কথা কাগজে পড়েছে ওরা, যেগুলো তখনও পথিককে ডেকে অনুরোধ করছে চারাগুলোয় জল দিতে, আর ঘোষণা করছে মানুষের যা বর্জ্য, সমস্ত বনরাজির ভোজ্য তাই ! জল একটু আমরাও ঢালতে চাই ওখানে, বলে ওদের মধ্যে একজন, অসাধারণ আহ্বান আপনার শ্লোগানের।
পরের দিন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওরা জেনে নেয় সবচেয়ে কাছের শহর কোথায়, রেলওয়ে টেশন কতো দূরে। কাছাকাছি কোথায় আছে টেলিফোনের লাইন, পুলিস স্টেশন, মোটর মেকানিক। খুশিঝোরার ভেতরে কতো জনের থাকার ব্যবস্থা আছে, জলের কী ব্যবস্থা আর ইলেক্ট্রিক লাইনের খুঁটিনাটি। খুশিঝোরায় আপাতত যে সব কাজ হয়, মানে বাচ্চাদের ছবি আঁকার ক্লাশ, দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি, প্রয়োজনে সাময়িকভাবে সেগুলো বন্ধ রাখা যাবে কিনা। ওদের মধ্যে দুজন অতি তৎপরতায় এঁকে ফেলে খুশিঝোরার চৌহদ্দির ভেতরের একটা ম্যাপ গোছের, আর বাইরের রাস্তাটা। রাস্তার পাশে চারা-বসানো জমিটা, আর খুশিঝোরা নাম পাওয়া ছোট নদীটাও বাদ পড়ে না। ঐ দুজন যতক্ষণ এই সব ম্যাপ আর ছবি আঁকছিলো, আর একজন ততক্ষণে ক্যামেরায় ছবি তুললো এখানে-ওখানে। শেষ ছবিটা জয়ির, পাশে দাঁড়িয়ে রঘুনাথ।
যুবকের দল এবার ফিরে যাবে। কত পেমেন্ট করবো ম্যাডাম?
আমরা এতদিন এই গেস্ট হাউজে ঠিক পয়সা নিয়ে কোন অতিথি রাখিনি। কোন রেট নেই আমাদের। দিয়ে যান যা আপনারা দিতে চান।
যুবকরা নিজেদের মধ্যে নীচু গলায় কথা বলে একটু। তারপর ওদের মধ্যে সবচেয়ে কম কথা বলছিলো যে সে একটা ব্যাগ খুলে বের করে দুটো একশো টাকার বাণ্ডিল, আর পঞ্চাশ টাকার একটা। বলে, পঁচিশ হাজার। ঠিকঠাক?
জয়ি হেসে বলে, যা দেবেন সেটাই ঠিকঠাক।
আমাদের একটা রসিদ লাগবে কিন্তু।
রসিদ? চিন্তা করে জয়ি, আমাদের রসিদ-টসিদ ছাপা নেই তো। আর একটু ভেবে বলে, লেটারহেডে লিখে দিলে হবে?
হ্যাঁ হ্যাঁ, যথেষ্ট।
ওরা চলে গেলে রঘুনাথকে বলে জয়ি, অনেক টাকা, কী, রঘুনাথদা !
রঘুনাথ কথা না বলে হাসে একটু। জয়ি বলে, মনে হচ্ছে, এখন থেকে শুধু আমাদের মেম্বাররাই নয়, অনেকেই থাকতে চাইবে এখানে। তুমি তো একা সামলাতে পারবে না রঘুনাথদা। একটা হেল্পার যোগাড় করতে পারো?
হেল্পার? এখানে কী কেউ জানে এসব কাজ ? তোমার বাবা আমাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে তৈরি কোরে নিয়েছিলো। তারপর ধরে আসে রঘুনাথের গলা, সে লোকটা তো জানতো না এমন কিছু নেই !
ভালোলাগা