অফিসে ঢুকেই টেবিলের উপর একটা সাদা খাম দেখে সোমেশ্বর। ডাকটিকিট নেই, যে পাঠিয়েছে তার নাম বা ঠিকানা কিছুই নেই। শুধু পেনসিল দিয়ে খামের উপর লেখা এস-বি, সোমেশ্বরের নামের আদ্যক্ষর। তার মানে, কর্পোরেট অফিসের সকালের মেইলে এসেছে।
খামটা খোলে সোমেশ্বর। সাদা কাগজে হাতে লেখা একটা চিঠি। হাতের লেখাটা চেনা নয়, কিন্তু সাদা কাগজের অর্থ হলো, ঠিক অফিশিয়ালও নয় চিঠিটা। কে লিখল?
প্রথম লাইনেই কপালে ভাঁজ পড়ে ওর। য়্যু আর হিয়ারবাই ডাইরেক্টেড...!
চিঠিটার নীচের দিকে এবার ভালোভাবে তাকায় সোমেশ্বর। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা মানবেন্দ্র ত্রিবেদী। ওর নতুন বসের নাম। নামটা লেখাই, ঠিক সই নয়।
দিন কয়েক আগে কটক থেকে এক ট্রাক কাফ্ সিরাপ এসেছে কলকাতায়। ওদেরই কম্পানীর। আনসোল্ড স্টাফ। কর্পোরেট অফিসের নির্দেশ অনুযায়ী কটকের ডিস্ট্রিব্যুটর পাঠিয়ে দিয়েছে কলকাতায়। হঠাৎই এসেছে, সোমেশ্বরের কাছে কোন খবর ছিল না। কলকাতার ডিস্ট্রিব্যুশন ম্যানেজারের কাছেও নয়। লরির ড্রাইভারের কাছে চালান দেখে ডিস্ট্রিব্যুশন ম্যানেজার বুঝতে পারে কটক থেকে ফেরৎ এসেছে মালটা। সোমেশ্বরের এখন যে বস, মানবেন্দ্র ত্রিবেদী, কিছুদিন আগেও সে ছিল চেন্নাইয়ে রিজিওনাল ম্যানেজার। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ আর ওড়িশার দায়িত্বে। প্রোমোশন পেয়ে সে মুম্বইতে গেছে মাস তিনেক আগে। এই কাফ্ সিরাপ ওড়িশায় বিক্রি হয়েছিল তারই আমলে। বোঝাই যাচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি করা হয়েছিল, অবিক্রিত স্টক এখন ওড়িশা থেকে কলকাতায় ফেরৎ পাঠানো হয়েছে তারই নির্দেশে। যদিও বিক্রি করেনি কলকাতার ডিপো, তবুও ফেরৎটা এখানেই। নিয়ম অনুযায়ী সোমেশ্বর লিখিত অনুমতি না দিলে মালটা ডিস্ট্রিব্যুশন ম্যানেজার নিতে পারবে না স্টকে। খবর পেয়ে সোমেশ্বর নেমে আসে নীচে, মালভর্তি ট্রাকটা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কাগজপত্র দেখে বুঝতে পারে, বছর দেড়েক আগে মুম্বইয়ের ওয়্যারহাউজ থেকে সোজা কটকে পাঠানো হয়েছিল কাফ্ সিরাপের একটা বিরাট কনসাইনমেন্ট, এটা তারই একটা অংশ, এবং এই কনসাইনমেন্টের শেল্ফ্ লাইফ, মানে ঠিক ভাবে কাজ করার ক্ষমতা, আর মাত্র দু' মাস। কী ভাবে স্টকে নেবে ও এই মাল, এখন তো বেচাই যাবে না এটা? কী করবে যখন ভাবছে সোমেশ্বর, তখনই মানবেন্দ্রর ফোন এল। এক ট্রাক কাফ্ সিরাপ এসেছে কটক থেকে, ওটাকে স্টকে নিয়ে নাও, কী করতে হবে আমি বলে দেব।
কিন্তু নীয়ার এক্সপায়ারী মাল, কীভাবে স্টকে নেব? – জিজ্ঞেস করে সোমেশ্বর।
কাম অন সোম, য়্যু আর সাচ আ সীনিয়র ম্যানেজার, মানবেন্দ্রর গলায় অসন্তোষ আর ঝঙ্কার, তোমাকে কি শিখিয়ে দিতে হবে কীভাবে নেবে?
আই গেস আই নীড দ্যাট ইনস্ট্রাকশন, ঠাণ্ডা গলায় বলে সোমেশ্বর, ঠিক আছে, এখন ছেড়ে দাও, দেখি কী করতে পারি, পরে কথা বলব।
ডিস্ট্রিব্যুশন ম্যানেজারকে সোমেশ্বর বলে, আপনার ডিপোর বাইরের শেডে রেখে দিন আপাতত, অফিশিয়ালি স্টকে নেবেন না, সিকিউরিটিকে বলবেন একটু নজর রাখতে, দেখি তারপর কী করা যায়।
পরের দিন মানবেন্দ্রর ফোন আবার, বাইরের শেডে রেখেছ শুনলাম, ঠিকই আছে। ফিজিকালি আর সরাবার দরকার নেই, ডিস্ট্রিব্যুশনকে বলো, রেজিস্টারে এন্ট্রি দেখিয়ে পুরো স্টকটাই ইনভয়েস করে দিক নর্থ-ঈস্টে, ওই শিলচর না কী যেন, ওখানকার ডিস্ট্রিব্যুটারের নামে। আজই ডেসপ্যাচ করিয়ে দাও।
সোমেশ্বর বোঝে, ডিস্ট্রিব্যুশন ম্যানেজারের সঙ্গে আগেই কথা বলে নিয়েছে মানবেন্দ্র, ওকে প্রয়োজন শুধু একটা সইয়ের জন্যে। কিন্তু, তার চেয়েও বড় কথা শিলচর। শিলচরের ডিস্ট্রিব্যুটরের সঙ্গে কি মানবেন্দ্র নিজেই কথা বললো? নাকি, সোমেশ্বরকে পেরিয়ে ওরই অধস্তন নর্থ-ঈস্টের এরিয়া ম্যানেজারকে দিয়ে করাচ্ছে কাজটা? যে-কোন রকমের নেশার জিনিসই যথেচ্ছ বিক্রি করা যায় নর্থ-ঈস্টে, এ তো ফার্মা ইণ্ডাস্ট্রীতে সবাই জানে। ওষুধের মোড়কে মাদক হিসেবে কাফ্ সিরাপ অঢেল বিক্রি করা যায় ওখানে, শেল্ফ্ লাইফে কিছু আসে যায় না। এসব ব্যাপার সযত্নে এতদিন এড়িয়ে গেছে সোমেশ্বর, আজ ওর রিজিয়নেও এই সব নোংরামি ঢোকাবে নাকি মানবেন্দ্র? মুখে বলে, কিন্তু ইনভয়েস হবে কী করে? ব্যাচ নাম্বার আর এক্সপায়ারী ডেট ছাড়া ইনভয়েস করা যায় নাকি?
ইয়ার, তুম মুঝে নাদান না সমঝো – টেলিফোনে হাসে মানবেন্দ্র, য়্যু নো হাউ টু ডু ইট, গেট ইট ডান ইয়ার।
কিন্তু করবো কেন? কী প্রয়োজন এভাবে ব্যবসা করার?
কী প্রয়োজন? – মানবেন্দ্রর গলায় এবার উষ্মা, এক ট্রাক স্টক ডেস্ট্রয় করতে গেলে কতো জনের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে ধারণা আছে তোমার? অ্যাণ্ড য়্যু নো ফর সার্টেন ইনভয়েসিঙে কোন কমপ্লিকেশন নেই, কাল শিলচরে মাল পৌঁছোলে পরশু দিনের মধ্যে ভায়া আইজল অ্যাণ্ড মায়ানমার য়্যোর এনটায়ার স্টক উইল ভ্যানিশ ইন সাউদ-ঈস্ট এশিয়া! নো রিস্ক অ্যাট অল! অন দ্য কন্ট্রারী য়্যু উইল আর্ণ আ বোনাস!
সেই জন্যেই তো করতে চাইছি না মানবেন্দ্র, বলে সোমেশ্বর, আওয়ার বিজনেস ইজ হেল্থ্ কেয়ার, নট কেটারিং টু অ্যাডিক্টস।
গ্রো আপ সোম, গ্রো আপ, ধমক দেয় মানবেন্দ্র, ডোন্ট টেক অ্যান আননেসেসারি মর্যাল স্ট্যাণ্ড। বিজনেস ইজ বিজনেস।
আমি কোন মরাল স্ট্যাণ্ড নিচ্ছি না, বলে সোমেশ্বর, আমি শুধু গ্রসলি ইললিগাল অ্যাণ্ড ইমমরাল একটা কাজ করতে অসুবিধে বোধ করছি।
এই ঘটনার পর আজ এই চিঠি। হাতে-লেখা চিঠিতে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কটকের স্টকটাকে অবিলম্বে শিলচরের ডিস্ট্রিব্যুটরকে পাঠিয়ে দিতে। মানবেন্দ্রর হাতের লেখা ও চেনে না, চেনবার কোন সুযোগ কখনও হয়নি, কিন্তু সইও নেই চিঠিতে। সোমেশ্বর মজা পায়, আপন মনে বলে, কাওয়ার্ড!
এই ঘটনার তিন দিন পর মানবেন্দ্রর সেক্রেটারির কাছ থেকে একটা ফোন আসে। সোমেশ্বরকে পরের দিনই মুম্বই পৌঁছোতে হবে। তৈরি হয়ে আসে যেন, বেশ কয়েক দিন থেকে যেতে হতে পারে। প্রেসিডেন্ট হোটেলে যথারীতি বুকিং করা আছে।
হোটেলে চেক-ইন করে ঠিক সাড়ে ন'টায় কর্পোরেট অফিসে পৌঁছোয় সোমেশ্বর। ওকে একটা অফিস দেওয়া হয়েছে, মানবেন্দ্র ত্রিবেদী অফিসটা দেখিয়ে ওকে বললো, আপাতত কোন নতুন অ্যাসাইনমেন্ট নয়, তোমার পুরোনো কাজটাই চালিয়ে যাও এখান থেকে। আর সেক্রেটারী পূলের একটা মারাঠি মেয়ে, নম্রতা নাম, তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, এ-ই তোমার সেক্রেটারির কাজ করবে আপাতত।
একটু আশ্চর্য হয় সোমেশ্বর। মুম্বইয়ের কর্পোরেট অফিস থেকে পূর্ব ভারত সামলানো? এতে অকারণ খরচ বাড়বে, কারণ সোমেশ্বরকে ট্যুরেই থাকতে হবে প্রায় রোজ। এত পয়সা কম্পানী অনর্থক নষ্ট করবে কেন? আর, তার চেয়েও বড় কথা, ম্যানেজারিয়াল কন্ট্রোল যাকে বলে, সেটা তো শূন্যে দাঁড়িয়ে যাবে। অধস্তন ম্যানেজার এবং অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগও প্রায় বিচ্ছিন্নই হয়ে যাবে ধীরে ধীরে, এভাবে কাজ চলে? নাকি, ইচ্ছে করেই সোমেশ্বরকে অপদস্থ করবার জন্যে এই ব্যবস্থা?
দুয়েক দিন পর কলকাতায় ট্যুরে যায় সোমেশ্বর, মানবেন্দ্রকে জানিয়ে যায় ও কয়েকদিন কাটিয়ে আসবে কলকাতায়, কিছু কাগজপত্র-ফাইল নিয়ে আসতে হবে যদি কাজ চালাতেই হয় মুম্বই থেকে। মুম্বইতে ওর অ্যাকোমোডেশনের জন্যে যেন বলে দেওয়া হয় এইচ-আর-কে, আসবার সময় সম্ভৃতাকেও আনবে ও, সে ভাবে হোটেলেও বলে দেওয়া হয় যেন।
ভাবা ছিল যা, কলকাতার অফিসে গিয়ে তা-ই দেখল সোম। ডিস্ট্রিব্যুশন ম্যানেজারকে বিলিং অথরিটি দেওয়া হয়েছে, কাফ্ সিরাপগুলো নেই আর। কলকাতার ম্যানেজারদের ডেকে পাঠাল ও, মীটিং হল, তাদের জানিয়ে দেওয়া হল, এখন থেকে সোমেশ্বর থাকবে মুম্বইতে, লোকাল ম্যানেজারদের দায়িত্ব অতএব বেড়ে যাচ্ছে। মানবেন্দ্রর সঙ্গেও কথা বলে সোম, এ মাসের সমস্ত ইনভয়েসিং শেষ করিয়ে সেল্স ক্লোজিং করেই ও ফিরবে মুম্বই।
রেকর্ড বিজনেস তোমার এ মাসে, মুম্বই ফিরলে ওকে বলে মানবেন্দ্র, কনগ্র্যাচুলেশন্স্।
সে তো হবেই, এক ট্রাক কাফ্ সিরাপের এক্সট্রা বিজনেস আছে না?
আর য়্যু ডিজওনিং দ্যাট পার্ট অব য়্যোর সেল্স্?
আই উইশ আই কুড!
সময় কেটে যায়, তিন মাসেও কোন বদল হয় না পরিস্থিতির। এর মধ্যে সোমেশ্বরের পাকাপোক্ত বদলির খবরটার সারকুলারও বেরিয়ে গেল। সমস্ত মালপত্র – যাবতীয় ফার্ণিচার, টুকিটাকি, জামাকাপড়, বইপত্তর, এমনকি গাড়িটাও – ট্রান্সপোর্ট কম্পানী গোছগাছ করে কলকাতা থেকে নিয়ে এল মুম্বই। পছন্দসই বাসস্থান যতদিন পাওয়া যায়নি – সে-ও প্রায় মাসখানেক হবে, ততদিন হোটেলে থাকল ও আর সম্ভৃতা, তারপর দুই শয়নঘরের একটা ফ্ল্যাটও মিলে গেল। অর্থাৎ, কাজ মূলত কলকাতা অফিসের এক্তিয়ারে হলেও সোমেশ্বর এখন থেকে মুম্বইকর।
কর্পোরেট অফিস আর কলকাতায় পার্থক্য অনেক। কলকাতায় সোমেশ্বরই ছিল বস, অতএব সাধারণভাবে অফিসের চালচলন, ম্যানেজার আর অন্য কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক, ওঠাবসা ইত্যাদি, ঠিক নিয়ন্ত্রণ না করলেও সোমেশ্বরের রুচি আর পছন্দের ছাপও পড়ত তাতে। কর্পোরেট অফিস অন্য রকমের। সেখানে অনেক ডিপার্টমেন্ট, অনেক কমিটি, বিদেশী ভিজিটর্স, নানা রকমের প্রেজেন্টেশন আর পার্টি। বেশির ভাগ কাজের দিনগুলোতেই যেহেতু ট্যুরে থাকে সোমেশ্বর, অতএব নিজের কাজের বাইরের এসব ব্যাপারে ও থাকেই না প্রায়। মুম্বইতে থেকেও এক-আধটা সান্ধ্য পার্টিতে না গেলে চলে না, কাজেই সেটুকুই ওর জনসংযোগ। কিন্তু ওকে যে বিশেষ কেউ লক্ষ্য করে, তা-ও মনে হয়না। নিজের মনে কাজ করে সোমেশ্বর, মাসের শেষে ওর 'কমিটেড' বিলিং নিয়ে সমস্যা হয়না, ফলত আপাত-নিস্তরঙ্গ পেশার জীবন কোন কিছুকে আলোড়িত না করেও চলে যায়।
তিন মাস অন্তর সব রিজিওন্যাল ম্যানেজার আসে মুম্বই, এ নিয়ম বহুদিন চলে আসছে। তিন দিনের মীটিং, তবে কর্পোরেট অফিসে নয়, কোন পাঁচ-তারা হোটেলে অথবা মুম্বইয়ের আশপাশে ইদানিং-গজিয়ে-ওঠা কোন রেসর্টে। আগের তিন মাসের কাজকর্মের পর্যালোচনা হয়, হয় আগামী তিন মাসের বিজনেস প্ল্যান নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা, কর্পোরেট অফিসের কী সাহায্য চাই কোন্ রিজিয়নে – এরকম নানা খুঁটিনাটি। প্রায় প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেরই প্রধানরা অন্তত একদিন উপস্থিত থাকেন এই মীটিঙে, স্বয়ং ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রতিদিনই। এতদিন সোমেশ্বর আসতো কলকাতা থেকে, এবার অবিশ্যি পূর্ব ভারতের প্রতিনিধি হয়েও ও মুম্বইয়ের লোক, নিজের বাসস্থান থেকেই যাতায়াত করে। এরই মধ্যে একদিন লাঞ্চ-ব্রেকে চেন্নাইয়ের রিজিওনাল ম্যানেজার ওকে ডেকে নিয়ে যায় আলাদা করে।
এই ছেলেটি আগে লক্ষ্ণৌয়ে এরিয়া ম্যানেজার ছিল। মানবেন্দ্র মুম্বইয়ে যাবার পর একে প্রমোশন দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে চেন্নাইতে। অন্ধ্রের নানা ডিস্ট্রিব্যুটর অবিক্রিত মাল ফেরৎ পাঠাচ্ছে চেন্নাইতে, প্রায় সবই নীয়ার-এক্সপায়ারী স্টক, ও বুঝতে পারছে না কী করবে। ও শুনেছে ওড়িশা থেকেও এরকম স্টক পাঠানো হয়েছিল কলকাতায়, সোমেশ্বর সেগুলো সবই বেচে দিয়েছে। সীনিয়র হিসেবে ও সোমেশ্বরের কাছে উপদেশ চায় কী করা উচিত এখন।
সোমেশ্বর বলে, আমি কিছুই বেচিনি ভাই, যা করার করেছে তোমার বস মানবেন্দ্র, ওকেই বলো, হী ইজ ভেরি রিসোর্সফুল।
এখানেই একদিন সান্ধ্য পার্টিতে দেখা হয়ে গেল এইচ-আর-ডির ডিরেক্টর বলদেব চৌধুরির সঙ্গে। এটা-ওটা নানা কথার পর বললেন, সাধারণত তুমি ফ্রী থাক কখন? বলেই, খানিকটা যেন নিজেকে শুধরে নিচ্ছেন এমন ভাবে বলেন, তুমি তো শুনেছি প্রায় রোজই ট্যুরে থাক। মুম্বইতে থাক কখন?
সাধারণত প্রতি মাসের পঁচিশ বা তার আশপাশে সেল ক্লোজ করি, রিমেইনিং ডেজ অব দ্য মান্থ অফিসেই থাকি, বলে সোমেশ্বর।
ঠিক আছে, এ মাসের টুয়েন্টি সিক্সথ তোমার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা রইল। অ্যাট অ্যাবাউট ইলেভ্ন্। আগের দিন আমার সেক্রেটারি কনফার্ম করে দেবে।
নির্ধারিত সময়ে এইচ- আর-ডির ডিরেক্টরের অফিসে ঢোকে সোমেশ্বর। চা খাওয়ানো, টুকটাক ভদ্রতার আলাপচারিতা ইত্যাদি শেষ হলে চৌধুরি সাহেব বলেন, তুমি কি মনে কর সোমেশ্বর, এখান থেকে কলকাতা ম্যানেজ করবার জন্যে তোমার অফিস রাখা হয়েছে মুম্বইতে?
ভেরি আনইউজুয়াল, বলে সোমেশ্বর, আমি নিজেই বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা।
য়্যু হ্যাভ বীন আ সাকসেসফুল রিজিওনাল ম্যানেজার সোম, আ ভেরি ইনটেলিজেন্ট পার্সন, তোমাকে আমরা অন্য কিছু একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিতে চাইছিলাম। কিন্তু অনেকেই এখানে মনে করে কর্পোরেট অফিসে তোমাকে রাখাটা...
একটু ইতস্তত করেন চৌধুরি। তারপর বলেন, ইয়োর্স ইজ আ ক্লাসিকাল কেস অব কম্পিটেন্স ইনকম্প্যাটিবিলিটি।
ইনকম্প্যাটিবিলিটি? ভুরু কুঁচকোলেও একটু হেসে জিজ্ঞেস করে সোমেশ্বর, গত বছরেও আমার রিজিয়ন বেস্ট রিজিয়ন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, টুয়েন্টি পার সেন্ট অ্যানুয়াল গ্রোথ, তবুও আমার কম্পিটেন্স কীভাবে ইনকম্প্যাটিব্ল্ উইদ বিজনেস হয়?
নট উইদ বিজনেস, বাট উইদ দি এন্টায়ার আইডিয়া অব বিজনেস। য়্যু হ্যাভ অলওয়েজ বীন আ ডিফারেন্ট কাইণ্ড অব পার্সন সোম, উই নিউ দ্যাট অল দ্য টাইম, কিন্তু হোয়াট ম্যাটার্স আফটার আ সার্টেন লেভেল, সোম, ইজ নট য়্যোর বিজনেস অ্যাক্যুমেন, ইট্স্ য়্যোর অ্যাটিট্যুড টুওয়ার্ডস বিজনেস।
সোমেশ্বর বুঝতে পারে না এ কথার উত্তর কী হবে। বলে, কুড য়্যু প্লীজ ইলাবোরেট?
ইলাবোরেট করার কিছু নেই, বলেন চৌধুরি, ইট ইজ এসেনশিয়ালি হোয়াট য়্যু আর। নৈতিকতা-অনৈতিকতার ব্যাপারে তোমার যেসব নিজস্ব ধারণা সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অনেকের সঙ্গে মেলে না। নট দ্যাট উই আর আনএথিকাল, কিন্তু তোমার কনসেপ্ট অব হোয়াট ইজ নৈতিকতা ইজ ডিফারেন্ট ফ্রম দ্যাট অব আ বিজনেসপার্সন।
এ কথার কোন উত্তর সোমেশ্বরের জানা নেই। সে চুপ করে থাকে।
একটু যেন ইতস্তত করে চৌধুরি বলে ওঠেন হঠাৎ, ক্যান উই সিট টোগেদার অ্যাণ্ড মেক আ সেভারেন্স প্ল্যান?
গো অ্যাহেড স্যর, বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় সোমেশ্বর, নিজেই করুন, আমাকে ডাকবেন না।
বোসো সোম, বলেন চৌধুরি, পার্টিসিপেট করলে তোমার ভালোই হত।
হয়তো, বলে সোম, বাট য়্যু অলরেডি নো আই অ্যাম ডিফারেন্ট।
তুমি কি একটা রেজিগনেশন লেটারে সই করবে?
না স্যর, যেটা আপনি দিয়ে দেবেন সেটা নিয়ে নেব।
ঘন্টা বাজান চৌধুরি। সেক্রেটারি ঢোকে, কথা না-বলে একটু ঘাড় নাড়ান তিনি, সেক্রেটারি বেরিয়ে গিয়েই ফিরে আসে আবার, তার হাতে একটা কাগজ, সঙ্গে জেম্স্ ক্লিপ লাগানো একটা খাম। চৌধুরি হাতে নেন, কয়েক সেকেণ্ড চোখ বোলান কাগজটাতে, তারপর নীরবে দেন সোমের হাতে।
আমরা কালই ফিরে যেতে চাই, বলে সোম, আমাদের টিকিটের ব্যবস্থা কি করা যাবে?
কাল যেও না, কাল তোমাদের কন্ট্যাক্ট করবে প্যাকার্সের লোকরা, তোমাদের সামনেই প্যাক করা ভালো। পরশু মর্ণিং ফ্লাইটের টিকিট তোমাকে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করছি। কাল রাত্তিরে প্রেসিডেন্টে থেকো, বুকিং করা থাকবে।
কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে,। পরের কিস্তির প্রতীক্ষায় ।
খুব ভালো