মাটির ঢেলা শুধুই, তায় আগাছায় ঢাকা।
একমানুষ জমি মাত্র। বেশিরভাগটাই নাবাল। মাঝে মধ্যে পোড় খাওয়া চাষি চষে যায় মাথা, বুক, শরীর… গরমে ঝলসে যাবার আগে
এবারের ফসল ঘরে তোলার সময় হল বলে।
মুখের স্বাদ মত বিচার করবেন …
জানবেন
সব ফলন পেট ভারির জন্যও থাকে না,
কিছু ফলন
নাকেও গন্ধ ছড়ায় …
'সুফি' নাম টা বনেদি ভাবতাম। পরিচয় হবার পর বুঝলাম পুরোটাই ঘন জঙ্গল,সভ্যতার চিন্হ নেই বললেই চলে। থাকলেও আগাছায় ভরা। ভরা সন্ধ্যে বেলায় পা ছড়িয়ে গতর দুলিয়ে শোনায় মাঝে মাঝে
- ' মাস্টার, সালা বদ রক্তে ভরে গেল শরীল টা, চুলকানি খুব, সাদা পুঁজ জমে রোজ, গেলে দিয়ে সুখ পাই খুব...কিরিম টিরিম দে কিছু ...'
বিদিগুচ্ছিরি মার্কা হাসে। রাগ করি না আজকাল, দিয়ে দিই, দিলেও লাভ হয় না। এর আগে হাজারবার দিয়েছি, নিওষ্পরিন, মারকিউড়োক্রম সব। মাখেই না ...
কেউ বলে মাস্টারের দরদ বেশি, কেউ আবার ওর বুকের ছেঁড়া বোতামে আমার চোখের দোষ খোঁজে। আমি গান্ডু সারাজীবন, চোখে কাফের, আমি কি খুঁজি ... কি যে খুঁজি ...কে জানে?
সব নিয়মে হয়েছিল সুফির। শরীরে রক্ত আসা,রক্ত বাড়া, রক্ত শুরু, রক্ত বন্ধ, রক্ত খালাস, সও ওব নিয়মে। সব্বার সঙ্গে লড়ে পুরো টুয়েলভ ডিঙিয়ে তবেই মোহর করলো। গিয়েছিলাম মোচ্ছবে। একবারও তাকায়নি। তরকারিতে ঝাল খুব, আমারও মুখ বন্ধ। মাতব্বর গোছের কেউ একজন বললো শুনলাম, মেয়ে বারো কেলাসের সেরা ছিল, ওপারের বরযাত্রীদের ফিচেল হাসির সাথে রস শুনলাম,
- ' শুনলি ও ফুরকান, বারো ক্লাসের মত গাদন দিস রে ...'
গোস খাইনা, সবেতেই ঝাল খুব, উঠেই এলাম। গাদনের চাপে।
তারপর এগারো বছর, কত কি শিখলাম, মাস্টারি করতে চেয়ে অক্ষর শিখেছিলাম। বাঁচতে গিয়ে শিখলাম শরীর, মন, মাথা, বুক সব। নিজের, সাথে অন্যের। চিনতে পারিনি শুধু সুফি কে। চা বাগানের বাজ পড়া গাছটার নীচে সাদা পুঁজ গেলে বেঁচে থাকা পুটলিটাকে। রাত বিরেতে অন্যের সংসারে ঠান্ডা আগুনে তাপ দেওয়ার কি দরকার ওর বুঝিনি। শুনলাম ট্রাজেডি নেই কিছু। পুরোটাই সায়েন্টিফিক। হেবি আয়রন ডেফিসিয়েন্সি, সাথে পলিসিস্টিক ওভারি, দু বার ফার্স্ট ট্রিমিস্টারেই খালাস। গেরামের ভাষায় হাওয়া লাগা।
আদিবাসী ঝাঁড়ান জোয়ানটা চার ঘণ্টা ঘরে তিন সপ্তাহ ঝাড়লো, আর ওদিকের দাঁড়ি বালা টা এগারো দিন। কার তাগদে তিন নম্বরের টা সেকেন্ড ট্রিমিস্টার পর্যন্ত্য এলো সে হিসেবে কারো জানা নেই। শুধু এইটুকু সব্বাই বুঝলো এ হাওয়ার কোন ঝাড়ান নাই। তারপরেও সব মিথ কে মিথ্যে করেই সুফির যমজ হল। একেবারে যমজ। আর তার কয়েক মাসের মাঝেই ঘরছাড়া। কেউ বলে সালির প্যাটে কিতাব ঘুসেছিল বলে শালী সোয়ামী সংসারে মন নাই, কেউ বলে শালী ধ্যামনা, ঘরজ্বালানি, পর মারানী রেন্ডি...
আমি বুঝি বেশি মিশলে গেরামে বাতাস উড়বে কম, ছড়াবে বেশি।
বৃষ্টিটা থামার জন্যই দাঁড়িয়েছিলাম। সুফিও ঠিক এলো। নোংরা ভেজা পুঁজে ভর্তি শরীর। তবুও তো মেয়েশরীর। সরে এলাম খানিক।
বললো মাস্টার ব্যাগে ফল।
ইঙ্গিতে বোঝালাম হ্যাঁ
বললো খেজুর নিলি রোজা মাসের জন্যি।
এবারেও ইঙ্গিতে বোঝালাম।
বললো ছেলে তোর খুব খুশি হবে, আমারটা হয় খুব।
আর চুপ থাকলাম না। বললাম
রোজা দিস নাকি? যাস ছেলের কাছে?
সাদা পুঁজ ফাটানো বন্ধ করে তাকালো খানিক।
বললো
মাস্টার আমার বুক দেখেছিস?
থতমত খেলাম খানিক
বললো
তোরা চাষ করিস খালি, জমি দেখিস কম।
শুন মাস্টার,
রক্ত শুধু নয়, বুকে দুধও নাই আমার, সেই আট মাসেই দুধ শ্যাষ।
গোলাপি দিদি গুলান বললো রক্ত না বাড়ালে দুধ বাড়বে না।
ছেনা দুটা কে একা বাপ পুষতে পারে না।
সেই থেকেই রোজা দিচ্ছি বুঝলি...
তোরা শুধু পেট খালি রাখিস মাস্টার,
আমার সেই কবে থেকে পেট খালি সাথে মন, সংসারও।
ফুরকান জানে সব। তিনবার পেট খালি করার পর যারা পেটে এলো তাদের পেট খালি রাখি কি করে বল?
চুপ থাকলাম খানিক
বললাম বুঝলাম তোর স্যাক্রিফাইস
তা মান ইজ্জত খসালি কেন? স্কুলে তো ওরকম ছিলি না?
চোখ নামালো খানিক
বললো ইফতারের সময় হল মাস্টার
ঘরে যা, ছুয়াটা তোর চিন্তায়।
বৃষ্টি কমলো
বাইকে স্টার্ট দেবার আগে সামনে এলো একেবারে
বুকের কাছে বুক লাগিয়ে চোখে তাকিয়ে বললো
- মাস্টার? মাগী মা হলেও দোষ আর মা মাগী হলেও? ফুরকান টাও তোর মত, চষে বেশি, বীজ বুনে কম। বেটাছেনার শরীরে তাগদ কমলেই সন্দ বাড়ে বেশি। ম্যায়া মানুষ না হারলে পুরুষ জিতে নাকি মাস্টার? হারলুম তাই, প্যাটের গুলার জন্য। তবে চিটিয়ে রেখেছি ছানাগুলাকে উদের বাপের সঙ্গে। উদের বাপের পালাবার পথ নাই রে। ঘরছাড়া বউয়ের মরদ আবার মোহর করতে পারে, কিন্তু রেন্ডির মরদের মোহর দিবার সাহস নাই কারুর
কি জানি,
এখনো তাকিয়ে আছি সুফির চোখে..
আমি বুঝি কম..
গান্ডু সারাজীবন, চোখে কাফের,
আমি কি খুঁজি ...
কি যে খুঁজি ...
কে জানে?
বাইক স্টার্ট করলাম। হাওয়া যদি আবার উঠে। গা – গেরামে হাওয়া উড়ে কম, ছড়ায় বেশি