এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • রিল ভার্সেস রিয়েল

    আফতাব হোসেন লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ মে ২০২৫ | ৫৪ বার পঠিত
  • দৈনন্দিন জীবনের সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর জীবনযাত্রা এখন সর্বজনীন। সোস্যাল মিডিয়া যদি সমাজের প্রতিচ্ছবি হয় তাহলে চলুন একবার দেখে নি এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সমাজের অন্তরের ছবি, আমজনতার ডেইলি লাইফ। মোবাইল স্ক্রল করতে করতে আপনার চোখে পড়তেই পারে রাতের আকাশে একঝাঁক আলোর ঝলকানি, মিসাইলের আলো, ছিন্ন ভিন্ন শহর, কিছু বাণিজ্যিক হিন্দি গানের দুই চার লাইন আর সাথে পোস্টদাতাদের কাতর আবেদন তার চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করার।

    কিম্বা, কিছু কমবয়সী ছেলেমেয়েদের আর্মি পোশাকে যুদ্ধ সংলাপের অভিনয় তিরিশ সেকেন্ডের ভিডিওতে, সাথে কোন সিনেমার ব্যকগ্রাউন্ড আবহ আর সেই ভিডিওর প্রতিটি কমেন্টের নিচে পোস্টদাতার প্লে বাটনে পৌঁছানোর জন্য ধন্যবাদ বার্তা। এতদূর পর্যন্ত তাও আপনি সুস্থ্য মস্তিষ্কে এই ধরনের পোস্ট গুলো এড়িয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু ভাবুন এক তিরিশ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখাচ্ছে স্লো মোশনে এক বীর শহীদের মৃতদেহ তার গ্রামে ঢুকছে, গ্রাম জুড়ে হাহাকারের মাঝে টুকরো টুকরো খন্ডে তার পরিবারের বিলাপের ছবি, সাথে কোন সুপারহিট সিনেমার কোন এক কাল্পনিক চরিত্রের বাণিজ্যিক উক্তি। নিমেষে কয়েকলক্ষ ভিউ।

    প্রতিদিনের সোস্যাল যাপনে আশা রাখি প্রত্যেকেই এই সব ঘটনার সাক্ষী প্রতিনিয়ত। অনেকে এড়িয়ে যান, অনেকের ওপর আবার এর তীব্র প্রভাব পড়তে বাধ্য। এই প্রভাবেই এসে পড়ে দেশদ্রোহী, দেশপ্রেমী, টি আর পি কিম্বা ফেক নিউজের মত শব্দগুলো। বিশেষ বিশেষ খবর বা ভিডিও কোন ভাবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠলেই আপনার মত আম নাগরিকের দায় এসে পড়ে সত্য মিথ্যের ওপরে উঠে তাকে সমর্থন করার। না করলেই আপনি সোস্যাল মিডিয়া টার্গেট হয়ে উঠতেই পারেন। যে টার্গেট থেকে ছাড় পাননা জঙ্গিহানার সদ্য বিধবা অথবা দেশের হয়ে স্বর্ণপদক আনা সহ নাগরিকগণও। মিথ্যে খবরের শক্তি বা মার্কেটিং স্ক্লিল এতটাই ভয়ানক ভাবে বিস্তৃত যে আপনি বাড়িতে বসেই আপনার পাশের বাড়ির সত্তর বছরের সঙ্গীকে কোন এক পড়শী রাজ্যের অপরিচিত মানুষের সাত সেকেন্ডের ভিডিওর ভিত্তিতে দাগিয়ে দিতে পারেন দেশদ্রোহী বলে। আপনার বড় হয়ে ওঠা ইতিহাস বই নিমেষে ভুল লাগা শুরু করে তাদের যুক্তিতে যাঁরাই কিনা পাঁচশো টাকার নোটে মাইক্রো চিপের স্বপ্ন দেখিয়েছিল আপনাকে। তারচেয়েও বড় কথা আপনি যখন বুঝতে পারেন আপনি ভুল, তখনও আপনি বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত হতে পারেন না কারণ ততদিনে অন্য কোন হট ফেক নিউজ আবার আপনার মোবাইলে, অন্য কোন জনপ্রিয় রিল ভিডিও আপনার নজরে, আর আবার আপনি আগের পদ্ধতিই অনুসরণ করছেন অভ্যেস বসে। আসলে আপনি এই ফেক নিউজের চক্র বুহে পড়েছেন, যার থেকে বেরোবার পথ একমাত্র শিক্ষা। সঠিক শিক্ষা। কিন্তু সে শিক্ষা আপনাকে দেবে কে ? বড় বিচারপতিগণ বলেই দিয়েছেন এ বঙ্গে শিক্ষক কুল বেশির ভাগই অযোগ্য। সেই অযোগ্য শিক্ষায় শিক্ষিত কাশ্মীরে জমি কিনতে চাওয়া আমজনতা কাশ্মীরের ঘটনায় কাশ্মীর বয়কটের ডাক দিয়ে কাশ্মীর কে আরো অন্ধকারে তলিয়ে দেওয়ার কথা গর্বের সঙ্গে সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন বেমালুম ভুলে যে কাশ্মীর তো ভারতের অবিচ্ছিন্ন। তা মশাই তাহলে কাশ্মীর বয়কটের কথা কেন ? জঙ্গিদের উদ্দেশ্য সফল করাটাও একপ্রকার দেশদ্রোহিতার পরিচয় নয় কি ?

    এবার আসি দেশের চতুর্থ স্তম্ভের ভূমিকায়। দেশের চতুর্থ স্তম্ভ, যা কিনা সমাজ সংস্কারের এক গুরুত্বপুর্ন অংশ হতে পারতেন তাঁরা ব্রেকিং নিউজ আর টি আর পি এর দৌড়ে এতটাই মশগুল যে ভুলে বসেছেন তাদের নূন্যতম নৈতিকতার কথা। সাংবিধানিক অস্তিত্ব অস্বীকার করে ডিমের কুসুম খোঁজ করা মিডিয়ার এই অধঃপতনের কথা স্বীকার করছেন খোদ দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা লিখিত আবেদন করছেন যাতে বিশ্বব্যাপী দেশের সম্মান অটুট থাকে তার।

    কিন্তু এতদিনের অভ্যেস একদিনে বদলানো মনে হয় সম্ভব নয়। এছাড়াও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বৃদ্ধির কারণে, ভুল তথ্য আগের চেয়ে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জনমত এবং আরও অনেক কিছুকে প্রভাবিত করছে, আর এতে অনুঘটকের কাজ করছেন টি আর পি এর লোভে থাকা চতুর্থ স্তম্ভ। যার ফলাফল টেলিভিশনের খবর এখন বাংলা ডেলি ধারাবাহিকের চেয়েও বেশি নাটুকে। তাই বেশিরভাগ সাংবাদিকগণ এক হাঁটু জলে হামাগুড়ি দেওয়াকে কিম্বা লাইভ পজিশনিং সহ সেনা জওয়ানদের সুরক্ষার বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে বন্দুকের সামনে মুখ দেখানো কে রিপোর্টিং ভাবেন।

    ভৌগলিক ভাবে পাশে থাকা, জন্মলগ্ন থেকে ভারতবিরোধী কোন জঙ্গি মদতপুষ্ট রাষ্ট্র ভারতবর্ষের নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে বিপদের হলে ভারতবর্ষ কঠিন হাতে তা দমন করবে এটা স্বাভাবিক। উচিত কাজ ও। রাষ্ট্র, রাষ্ট্র নাগরিকদের সুরক্ষার কথা সবার আগে ভাববে এবং ভেবেছেন তার জন্য রাষ্ট্রকে কুর্নিশ। কিন্তু রাষ্ট্র নাগরিক হিসেবে আপনারও, আপনাদেরও কিছু ভূমিকা থাকে। আর তা পালন করা আপনার দরকারও। অন্তত এই মুহূর্তে। যে বীর সেনানীরা তাদের মায়ের আঁচল আর স্ত্রী সন্তানের সঙ্গ ছেড়ে সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছেন শুধু আপনার সুরক্ষার জন্য, আপনার উচিত তাদের আবেগকে আপনার রিল ভিডিওর কন্টেন্ট করে বিক্রি না করার। যে সহ নাগরিক আপনার মত সাহসী নন, যিনি পূর্ব যুদ্ধ অভিজ্ঞতার বিভীষিকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে দিশেহারা, তাকে কাপুরুষ আখ্যা দেওয়ার আগে নিজে পুরুষ হোন। জঙ্গিদের ধর্ম হয়না কিম্বা সব ধর্মের একই জঙ্গি - এই বিতর্কে আটকে থাকা আপনি এই পরিস্থিতিতে ' শহীদের ধর্ম ' জিজ্ঞাসা করার আগে আর একবার নিজের মুখ আয়নায় দেখুন। আর এসি কিম্বা ফ্যানের নিচে বসে, ড্রিম ইলেভেনে টিম বানিয়ে চিকেন লেগপিসে কামড় বসিয়ে ফেক হোয়াটস আপ বা ফেসবুক কন্টেন্ট শেয়ার করার আগে ভাবুন এটা যুদ্ধ পরিস্থিতি, এন্টারটেনমেন্ট নয়। মনে রাখুন রাষ্ট্র আপনাকে বাঁচানোর সর্বোত্তম চেষ্টায়, কিন্তু নাগরিক কর্তব্য ভুলে যাওয়া আপনারও উচিত না। মনে রাখবেন ' যাঁরা যুদ্ধে যায় ' আর ' যাঁরা যুদ্ধ চায় ' আপনি তাদের মধ্যে কেউ না। রিল আর রিয়েলের এই যুদ্ধে আপনি কোন দিকে তার দায়িত্ব আপনার, আপনারই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন