স্রোতস্বিনী আজ নদীয়া জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। সমস্ত দিন তার হাঁফ ছাড়বার সময় নেই। নিজের অফিসে বসে সকাল থেকে সন্ধ্যে সে সই করে চলেছে নানান গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র। তবে তার জেলার মানুষ কিন্তু ভারী অকৃতজ্ঞ। যে স্রোতস্বিনী তাদের উন্নতির জন্য দিবা নিশি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই স্রোতস্বিনী কে তারা কেবলি অজ্ঞাত কুলশীল ভেবে ব্রাত্য করে। তারা স্রোতস্বিনী কে কোন দিন তার কাজের দক্ষতা দিয়ে বিচার করে নি। বরং সকলেই তার দিকে প্রশ্নের বাণ ছুঁড়ে জিজ্ঞেস করে তার জাতের পরিচয়।
নিজের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সচেতন স্রোতস্বিনী কোনদিন সেই প্রশ্নের উত্তর দেয় নি। সে কেবল স্মিত হেসে এড়িয়ে যায়। কিন্তু সে তার দিকে ছড়া এই প্রশ্নের বণের বিরোধিতাও করে নি। কারণ সে জানে স্রোতের বিপরীতে চলা কতটা কঠিন এবং তাতে কত বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। স্রোতস্বিনীর জীবনে এই বাঁধা প্রথম নয়। তার পদবি থাকা সত্বেও সে ছোটবেলা থেকেই ভাঙতে চেয়েছে এই চিরাচরিত বৈষম্যের ভেদাভেদ। তাই অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে সে আজ স্রোতস্বিনী মুখার্জী থেকে শুধুই স্রোতস্বিনী।
বিদ্যালয় জীবন থেকেই তার এই লড়াইয়ের সূত্রপাত। অভিভাকের সাহায্যে সে খুব অল্প বয়সেই আইনের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু দোরে দোরে ঘুরে ও মেলেনি সাহায্যের হাত। দক্ষ আইনজীবির কাছেও এমন ভাবনা হয়েছিল কলরবের স্বীকার। কিন্তু কোন বঞ্চনা দমাতে পারেনি স্রোতস্বিনীর স্বপ্নকে। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছরের লড়াইয়ের পর আইনের স্বীকৃত পেল স্রোতস্বিনী। কিন্তু সমাজ? সমাজের স্বীকৃতি পাওয়া যে বড় কঠিন। আজ সে উচ্চপদে বসে সমাজের উন্নতির কাজে নিজের জীবন অর্পণ করেছে। কিন্তু এই অকৃতজ্ঞ সমাজ কি কখনো মেনে নেবে তার জীবনের এই নতুন পথচলা কে? তাই আজ ও স্রোতস্বিনী নীরবে হিন্দু-মুসমান, ব্রাহ্মণ- শূদ্রের সীমারেখা কে মুছে ফেলে একত্রে বসবাস করার স্বপ্ন দেখে।