ছক্কা ঋতুপর্ণ : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : অন্য যৌনতা | ৩১ মে ২০১৩ | ৯০০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৭
শিল্প আর শিল্পী নাকি আলাদা। এই আবেগ ভ্যাদভ্যাদে মৃত্যুদিনে সেসব কথা ভাবতে ভালো লাগেনা। এ সব ব্যক্তিগত অনুভূতি বড়ই ব্যক্তিগত। ফিল্ম টিল্ম গোল্লায় যাক, গোল্লায় যাক শিল্পের শবসাধনা, কবিতার বদলে ট্রামে ছেঁচড়ে যাওয়া জীবনানন্দের ডেডবডি মনে পড়ে। সেই দশকে নাকি ওটাই ছিল একমাত্র ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যু। তাকে আপতিক ভাবতে অসুবিধে হয়, যেমন অসুবিধে হয় ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে একজন সফল ফিল্ম মেকারের মৃত্যু। আসলে তো তাঁকে নেই করে দেওয়া হল। টিভিতে, খবরের কাগজে, সোশাল মিডিয়ায় যত কলকাকলি আর হাহুতাশ দেখি, সব শুধু সিনেমা। সিনেমা সিনেমা আর সিনেমা। লোকটা কোথাও নেই। কিন্তু আজ তো সিনেমার দিন না। একটা লোক মারা গেছে। একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। সে শুধু সিনেমা নয়। নিজের আইডেন্টিটিকে সে কখনও সিনেমা দিয়ে ঢাকেনি। মেয়েলি দোপাট্টা পরে কানে দুল ঝুলিয়ে টিভি শোতে এসেছে। যত বয়স হয়েছে তত নরম হয়েছে তার গলার আওয়াজ, আর তীব্রতর হয়েছে তার আইডেন্টিটি। নমনীয়তাকে, নরম স্বরে কথা বলাকে আমরা পুরুষের দুর্বলতা বলে ধরে নিই। কিন্তু ঋতুপর্ণ জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, ব্যাপারটা অতো সোজা নয়। যতগুলো নতুন পুরস্কার ঝুলিতে ঢুকেছে, ততই মেয়েলি হয়েছেন তিনি। ততই নরম হয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বর। মেয়েলিপনাকে শক্তি দিয়ে আগলে রেখেছেন। ছুঁড়ে দেওয়া ইঁটগুলোকে, "লেডিস ফিংগার" তাচ্ছিল্য আসবে জেনেও, আঁকড়ে ধরেছেন ওই মেয়েলি আলখাল্লাকে। সেই নরম সাহস, সেই এফিমিনেট দৃঢ়তা ছাড়া ঋতুপর্ণ নেই। হয়না।
কী করিতে হইবে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ৩১ জুলাই ২০১৩ | ১২৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
যুবকরা যত্রতত্র বাজে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। যুবক বয়স হল খাটনির সময়। হাতের মুঠোয় ধরা জলের মতো যৌবনকে গলে যেতে দেবেন না। রাজ্য প্রগতির পথে গড়গড়িয়ে এগোচ্ছে, রথের রশিতে হাত লাগান। ঘাম ঝরান। যুবকরা স্বামী বিবেকানন্দের পথ অবলম্বন করে ফুটবল খেলুন, যুবনেতাদের অনুসরণ করে প্রোমোটারি করুন, মেয়ে দেখলে সিটি দিন, পাড়ার ক্লাবে তাস পেটান, চোর পেলে পিটিয়ে মারুন, যা খুশি করুন। কেবল আলস্য অভ্যাস করবেন না। গপ্পো থেকেই আসে গুজব। গুজবের সঙ্গে অপপ্রচার, আর অপপ্রচার মানেই চক্রান্ত। অলস মস্তিষ্ক হল মাওবাদীদের কারখানা। হীরকরাজ্যে আলস্য ও চক্রান্ত দুইই নিষিদ্ধ। যুবকরা নিজেরা নিজের মূল্য না বুঝে অকারণ রাজনীতি ও চক্রান্তে জড়িয়ে পড়লে তাদের চোখে আঙুল্ দিয়ে বোঝানো হবে। অলস যুবক দেখলেই নাগরিক কমিটি গড়া হবে। শোধরানোর চেষ্টা করা হবে। তাতেও কাজ না হলে থানায় গিয়ে কড়কে দেওয়া হবে। এর নাম বেলঘরিয়া পদ্ধতি। এর হাত থেকে বাঁচতে হলে পাড়ার ক্লাবে নাম লেখান, নাগরিক কমিটির হয়ে মাতব্বরি করুন, বাড়িতে বসে গীতা পাঠ করুন। মোট কথা গঠনমূলক কাজে ঘাম ঝরান, কারণ কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।
নাগরিকপঞ্জি -- শেষ প্রহর : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ২৮৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
এই যে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ নামক জুজুটি দেখিয়ে গোটা বাঙালি জাতিকেই অভাবনীয় এক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সেই জুজুটি কতটা ঠিক? হিটলারের জার্মানির সঙ্গে এখানেও মোদীর ভারতের অদ্ভুত মিল। পুরো জুজুটাই তৈরি করা হয়েছে গুলগল্পের ভিত্তিতে। ২০১১ সালের জনগণনার বহুপ্রতীক্ষিত অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য অনেক টালবাহানার পর সদ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতবর্ষ মোটেই বাংলাদেশ থেকে আগত বে-আইনী অনুপ্রবেশকারীতে ছেয়ে যাচ্ছেনা। আইনী-বেআইনী মিলিয়ে ২০১১ সালে ভারতবর্ষে বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষের সংখ্যা ছিল ২৩ লক্ষ। মনে রাখতে হবে, এটা শুধু 'বে-আইনী' অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা নয়। বহুসংখ্যক মানুষ আইনী পদ্ধতিতেই ভারতবর্ষে বসবাস করছেন, যাঁদের একটা বড় অংশ আইনসঙ্গত উদ্বাস্তু (সেই সংখ্যাটা বিরাট, যদিও স্বাভাবিক মৃত্যুর কারণেই সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে)। তার মধ্যে একটা বড় অংশেরই বাস পশ্চিমবঙ্গে। ফলে আসামেই ১৯ লক্ষ বে-আইনী বাংলাদেশী অভিবাসী এসে বসে আছেন, এ একেবারেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
শেষের সেদিন : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ এপ্রিল ২০১৯ | ২৫৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
আমার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো বলে আমি কিচ্ছু ভুলিনা। রবীন্দ্র রচনাবলীর কোন খণ্ডে কথা ও কাহিনী, বাড়ির কোথায় ঝুলঝাড়া, কোন ড্রয়ারে মাংস কাটার ছুরি, আমার সব মনে থাকে। ফ্রিজারের পিছন থেকে এক চান্সে থান ইটের মতো পাঁঠার মাংস বার করে ধপ করে রান্নাঘরের সিমেন্টের স্ল্যাবে ফেলে কাটারির সাইজের ছুরি বাগিয়ে তরীকে বলি, আজকে মাংস করব বলেছিলাম না? কেমন মনে রেখেছি অ্যাঁ? হ্যাঁ, স্ল্যাবের উপর ফেলার আগে পাতলা প্লাস্টিক বিছিয়ে নিতেও আমি একদম ভুলিনি
বাংলায় সতীদাহ এবং কয়েকটি ইউরোপীয় আখ্যান : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ আগস্ট ২০১৯ | ২৯০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
বার্নিয়ের খুব স্পষ্ট করে লিখেছেন, যে সতীদাহের সংখ্যা মুঘল রাজত্বে কমে এলেও, 'রাজা'-শাসিত এলাকাগুলিতে এর সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্যরকম বেশি (the number of self-immolations is still very considerable, particularly in the territories of the Rajas, where no Mahometan governors are appointed)। বাংলা ছিল মুঘল সুবার অংশ। ফলে বাংলায় যৌক্তিকভাবে সতীদাহের সংখ্যা কম হওয়াই স্বাভাবিক। অবশ্য এই কম-বেশির কোনো আঞ্চলিক চরিত্রও থাকতে পারে। এই দুই ইউরোপিয়ানের বর্ণনায় অবশ্য সেরকম কিছু ইঙ্গিত না পাওয়া গেলেও মুঘল-শাসিত এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা কম ছিল কেন, এ বিষয়ে তাঁরা একবাক্যে একটি কারণ লিখেছেন। মুঘল এবং মুসলমান রাজত্বে রাজ্যশাসক (সম্ভবত সুবাদার বা ফৌজদার)এর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো সতীদাহ হতনা। তাঁরা প্রথমে যাচাই করতেন, মেয়েটি সম্পূর্ণ স্ব-ইচ্ছায় মরতে চায় কিনা। তাকে সুবেদারের কাছে সশরীরে অনুমতি চাইতে আসতে হত। তারপরেও তাকে বিরত করার চেষ্টা হত নানা উপায়ে (বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে)। তারপরও কাজ না হলে তবেই অনুমতির প্রশ্ন। তাতেও, মেয়েটি নিজে নাবালিকা হলে, বা তার নাবালক সন্তান থাকলে অনুমতি দেবার চল ছিলনা। ফলে জোর করে ধরে জ্বালিয়ে দেবার প্রশ্ন মুঘল রাজত্বে একেবারে ছিলনা বললেই চলে। যেটুকু হত, তা অত্যন্ত সুদৃঢ় স্ব-ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব ছিলনা। কয়েকটি ক্ষেত্রে, বার্নিয়েরের বর্ণনায় পাওয়া যায়, উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে, আগুন জ্বলে যাবার পর মনের জোর হারিয়ে বা যন্ত্রণায় কোনো মহিলা চিতা থেকে নেমে পড়তে চেয়েছেন, সেক্ষেত্রে বাঁশে করে তাঁকে চেপে রাখা হয়েছে। অন্য কয়েকটি বর্ণনায় মহিলারা নিজের হাতে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আগুন জ্বালাচ্ছেন। যেটাই হোক, সজ্ঞান সম্মতি ছাড়া কোনো নারীর জ্যান্ত অবস্থায় চিতায় ওঠা মুঘল শাসনে কার্যত অসম্ভব ছিল।
থোঁতা-মুখ-ভোঁতাকাহিনী : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৭ আগস্ট ২০১৯ | ২৭০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
এক যে ছিল পাখি। সে ছিল মূর্খ ও স্বাধীন। গান গাহিত, শাস্ত্র পড়িত না। লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দাকানুন কাকে বলে, কাকে বলে গণতন্ত্র।
রাজা বলিলেন, 'এমন পাখি তো কাজে লাগে না, অথচ বনের ফল খাইয়া রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।'
গুজরাতি মহামন্ত্রীকে ডাকিয়া বলিলেন, 'কখন পাকিস্তানিরা আসিয়া কী মন্ত্র দেবে ঠিক নাই। তার আগেই পাখিটাকে গণতন্ত্র শিক্ষা দাও'। রাজার ভাগিনাদের উপর ভার পড়িল পাখিটাকে শিক্ষা দিবার।
সুভাষ, গান্ধি ও ত্রিপুরী অধিবেশন : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | ১৩১৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৫
বিরাট উদ্যমের পরেও বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা জয়ী হয়নি। বর্ণহিন্দু আসনগুলিতে কংগ্রেস বিপুলভাবে জিতলেও, মুসলমান আসনে মুসলিম লিগ একেবারেই ভালো করেনি। বেশিরভাগ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টি হয় মূলত মুসলমান চালিত কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ দল, ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টি ( মুফাফফর আহমেদ এবং নজরুল ইসলাম উভয়েই এই পার্টির ঘনিষ্ঠ ছিলেন)। ফজলুল হক কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকারের প্রস্তাব দেন। ১৯০৫ সালের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম উভয়ের প্রতিনিধিত্বে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এবং শুনতে আশ্চর্য লাগলেও গান্ধির নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ দল কংগ্রেস দ্বিতীয়বার ধর্মনিরপেক্ষতার পিঠে ছুরি মারে (প্রথমটি ছিল কেবলমাত্র হিন্দু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত)। কংগ্রেস জানায়, তারা জোট সরকারে অংশগ্রহণ করবেনা, সমর্থনও দেবেনা। ফজলুল হক বাধ্য হন মুসলিম লিগের সঙ্গে জোটে যেতে।
বিক্ষোভ দানা বাঁধছে গোকুলে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০১ জুলাই ২০১৭ | ১১৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
সমস্যা শুরু হয় এর পরে। সচিবালয়ের ওই কর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনাও যথেষ্ট সুন্দর মেজাজে শুরু হয়েছিল। প্রথামতো আলিঙ্গন করার পর, গরুরা প্রধানমন্ত্রীকে তাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী গো-রক্ষায় তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা বলেন। হিন্দি বলয়ের প্রায় সর্বত্র গো-হত্যা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গরুদের আধার কার্ড দেবার তোড়জোড় চলছে। বিভিন্ন বহুজাতিকের সঙ্গে কথা চলছে দুধের মতো গোমূত্রও ঠান্ডা পানীয়ের বোতলে ভরে বিক্রি করার, এবং গোমূত্রের উপর জিএসটির সম্পূর্ণ ছাড়ের কথা ভাবা হচ্ছে। বিশুদ্ধ গোমূত্র আহরণের জন্য বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে বিশেষ ক্যাথিটারও। এ পর্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিস্থিতিই বজায় ছিল। সমস্যা শুরু হয়, এইসব সুখবরে গরুরা আনন্দ পাবার পরিবর্তে বিচলিত হয়ে পড়লে।
ধর্ষণ আইন -- বছর চারেক পরে ফিরে দেখা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ অক্টোবর ২০১৭ | ১৫৯১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ফারুকি সংক্রান্ত রায়ের পর ধর্ষণ আইন এবং আদালতের রায় নিয়ে নতুন করে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। এই লেখাটা ঠিক ফারুকি বিষয়ক নয়। কিন্তু আলোচনা যখন হয়েছে, এবং ধর্ষণের নতুন আইনটির বেশ ক বছর হয়ে গেল, তার এবার একটা পুনর্মূল্যায়নও দরকার, এই জায়গা থেকে কয়েকটা লেখা ফেসবুক গ্রুপে লিখেছিলাম। সেগুলোই একটু নেড়েচেড়ে তুলে রাখলাম। পাবলিক ফোরামের লেখা। একটু তাড়াহুড়োতে। বাক্যগঠন ইত্যাদি বদলালামনা। এক্ষেত্রে বিষয়বস্তুইআসল, এই অজুহাতটুকু রইল।
টিভি সিরিয়াল, মান এবং টিআরপি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ আগস্ট ২০১৮ | ১৭৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
শুরুতেই একটা কথা বলে রাখা ভাল, যে, তার শিল্পগত দিক নিয়ে এখানে একটি কথাও বলা হবেনা। এখানে মূলত চাহিদা, যোগান ইত্যাদি গোদা ব্যাপার নিয়ে কথা হবে। কারণ, যদিও ‘মান’ পড়ে যাবার জন্য অনেকে সিরিয়াল নির্মাতাদের দোষ দেন, অনেকে সৃষ্টিশীলতার অভাবের কথা বলেন, তার কিছু বাস্তব ভিত্তি থাকাও খুবই সম্ভব (আবার নাও থাকতে পারে), কিন্তু মনে রাখা দরকার, যে, যতই শিল্পের তকমা দেওয়া হোক, আর পাঁচটি পণ্যের মতই, টিভি সিরিয়ালও একটি পণ্য। ঠিক কেমন মাল বানাতে হবে, এ নিয়ে টুথপেস্ট বা গাড়ি কোম্পানিরা যেমন বিস্তর গবেষণা করে একটি পণ্য বাজারজাত করে, টিভি সিরিয়ালের ক্ষেত্রেও অবিকল তাই।
হিন্দুস্তানে বামৈস্লামিক ষড়যন্ত্রের স্বরূপ : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১২ মার্চ ২০১৮ | ৩৩০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
হিন্দুস্তানবাসী এই অধার্মিক শাসনকে সহজে মেনে নেয়নি। বাবর মারা যেতেই আর এক ধার্মিক বীর সুর শাহ দেহলি দখল করে নেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তৈরি করেন হিন্দুস্তানের প্রথম হাইওয়ে, জিটি রোড। এই প্রকল্পের আদলেই পরবর্তীতে স্বর্ণ চতুর্ভুজ সড়ক মহাযোজনার সূত্রপাত হয়। দুঃখের কথা এই, যে, এই হিন্দু মহাপুরুষ বেশিদিন রাজত্ব করতে পারেননি। কালিঞ্জর দুর্গের কাছে সন্ত্রাসবাদীরা তাঁকে গান পাউডার দেগে হত্যা করে। পৃথিবীতে সেই প্রথম সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ। রাজস্থানের মরুভূমির এক মরুদ্যানের কাছে এই হামলা হয়েছিল বলে এর নাম ছিল ওয়েসিস অ্যাটাক। নাম বদলে এখন একেই বলা হয় আইসিস আক্রমণ। আইসিসের আক্রমণের প্রথম শহীদ সুর শাহ অযোধ্যার মন্দির পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। কিন্তু খুবই রামভক্ত ছিলেন বলে তাঁর স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয় সাসারামে। সুর শাহের বংশধররাও গুজরাতে চলে যান। মোদী বংশের মত শাহ বংশও সেখানে খুব বিখ্যাত হয়। পরবর্তীকালে এই দুই বংশধররাই বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে সমস্ত পরাজয়ের শোধ তোলেন। গুজরাতি এবং হিন্দি ভাষায় লিখিত 'বাল অমিত' গ্রন্থে এই দিগ্বিজয়ের সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায়।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় – এক অসঙ্গতির উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ আগস্ট ২০১৫ | ৫৬৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭৩
বিষয়টা একটু অদ্ভুতই। বস্তুত ধনঞ্জয়ের উকিলই যখন ধনঞ্জয়ের বয়ানের উল্টো কথা বলেন, তখন মনে হয়, এ যেন শুধু নিয়মরক্ষার খেলা। আখ্যানটি পূর্বনির্ধারিতই আছে। যারা এই আখ্যানের বিরোধিতা করছেন, সে শুধু বিরোধিতা করার জন্য। আসলে তাঁরাও অন্য কোনো আখ্যানে বিশ্বাস করেননা। এবং বিরোধিতাটাও শুধু নিয়মরক্ষার্থে এবং সেটাও পূর্বনির্ধারিত এই আখ্যানেরই অংশ। এই সেই আখ্যান যেখানে উকিল ধনঞ্জয়ের পক্ষের সমর্থন করতে গিয়ে এমন কথা বলবেন, যা, ধনঞ্জয়ের বয়ানকেই মিথ্যে প্রমাণ করে সরকারি আখ্যানের ভাষ্যকে জোরদার করবে। দুজন প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের অসঙ্গতিগুলিকে উপেক্ষা কিংবা সম্পাদনা করে এমন মাপে নিয়ে আসা হবে, যাতে তারা খাপে খাপে মিলে যায় আদালত-স্বীকৃত আখ্যানের সঙ্গে। যেন জিগস পাজল মেলাতে বসা হয়েছে হাতে একটি র্যাঁদা নিয়ে। এখানে সমাধানটি পূর্বনির্ধারিত। যদি কোনো টুকরো না মেলে, তাকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে, কিংবা ছেঁটে করে নেওয়া হবে মাপমতো। বিরোধিতাটাও হতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বার্থে। কিন্তু সেটাও মাপমতো, যাতে সেটা মূল আখ্যানের পক্ষে যায়, বা সরাসরি পক্ষে না গেলেও মূল আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিপজ্জনক না হয়। বিপজ্জনক স্ববিরোধিতাগুলি কেউ কেউ গুরুত্বই পাবেনা আদালত চত্বরে।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় – এক অসঙ্গতির উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ আগস্ট ২০১৫ | ১৭৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২০
এবং এখান থেকেই শুরু হয়ে যায় এই কাহিনীর অসঙ্গতি। সলিল বসুচৌধুরির সঙ্গে এই অভিযানের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন ছাতনা থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর প্রণব চ্যাটার্জি। তিনিও আদালতে এই অভিযানের একটি বর্ণনা দেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ীও তাঁরা ধনঞ্জয়ের বাড়ি পৌঁছন মাঝরাতের পরে এবং পাশাপাশি তিনটি বাড়ি সার্চ করেন। ধনঞ্জয়কে কোথায় পাওয়া যায়? তাঁর বর্ণনানুযায়ী একটা খড়ের চালের বাড়ির সামনে ছিল একটা খড়ের চালের বারান্দা। ধনঞ্জয় লুকিয়ে ছিল সেই বারান্দার ছাদে।
বারান্দার ছাদ আর খড়ের গাদার পিছন নিশ্চয়ই এক জায়গা নয়। তাহলে ধনঞ্জয়কে গ্রেপ্তার আসলে কোথায় করা হয়েছিল? যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞাসা করলে কি আসল উত্তরটা পাওয়া সম্ভব? আদালতে ধনঞ্জয়কে এই প্রশ্নটি করা হয়েওছিল, যে, সে কি জ্যাঠার বাড়ির খড়ের গাদার পিছনে লুকিয়ে ছিল এবং সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে? ধনঞ্জয় তার উত্তরে স্পষ্ট করেই জানায়, সেটা ঘটনা নয়। সে ছিল তার বাড়িতে। তার স্ত্রীও ছিল সঙ্গে।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় – এক অসঙ্গতির উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ আগস্ট ২০১৫ | ৫৬৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৭
আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ আগমনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে লিখে ফেলা এই প্রতিবেদনের সঙ্গে রামধনির খারিজ হওয়া বয়ান হুবহু মিলে যায়। এই মিল আপতিক বা সাজানো হওয়া কঠিন, কারণ সংবাদপত্রের প্রতিবেদকের পক্ষে বহুদিন পরে রামধনি আদালতে গিয়ে কী বলবেন সেটা আন্দাজ করা অসম্ভব। যেটা সম্ভব, সেটা হল, রামধনি হয়তো আদালতে সত্যি কথাই বলছিলেন। এটি অবশ্য একটি সম্ভাবনাই, কিন্তু সেটা ফেলে দেবার মতো নয়। এবং আদালতে সংবাদপত্র প্রসঙ্গটি আসেইনি। রক্তের দাগের প্রসঙ্গটি অবশ্য এসেছিল। হাইকোর্টে ধনঞ্জয়ের কৌঁসুলী প্রশ্ন তোলেন, যে, এই নৃশংস খুনের(হেতালের শরীরে ২১ টি আঘাত ছিল) পরেও কোনো সাক্ষীই কেন ধনঞ্জয়ের হাল্কা রঙের জামাকাপড়ে কোনো রক্তের দাগ দেখতে পায়নি? সরকারপক্ষের আখ্যানে এর কোনো উত্তর নেই। বিচারক রায়দানের সময় এই ধাঁধার সমাধান করেন এই ভাবে, যে, যেহেতু খুনের আগে ধর্ষণ হয়েছে, তাই খুনের সময় ধনঞ্জয়ের শরীরে জামাকাপড় ছিলনা। এবং সেখানে রক্তের দাগ লাগার তাই কোনো প্রশ্নই নেই।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় – এক অসঙ্গতির উপাখ্যান (চতুর্থ পর্ব) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২২ আগস্ট ২০১৫ | ৩৪০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
এখানেই এই উপাখ্যান শেষ হতে পারত। কিন্তু মানুষের মৃত্যর পরও তার ছায়া থেকে যায়, আর উপসংহারের পরেও থেকে যায় পরিশিষ্ট। ২০১৩ সালে শঙ্কর কিষ্ণরাও খাড়ে বনাম স্টেট অফ মহারাষ্ট্র মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার পূর্বতন মৃত্যুদন্ডের সিদ্ধান্তগুলি খতিয়ে দেখে। ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সেই মামলার রায়ের কিয়দংশ উদ্ধৃত করা হয়। এটা কোনো আপতিক ঘটনা নয়, যে, আমরা আগের পরিচ্ছেদে ওই মামলার যেদুটি অনুচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি, সুপ্রিম কোর্টও উদ্ধৃত করে সেই দুটি অনুচ্ছেদ থেকেই। এবং তারপর এক লাইনে মন্তব্য করা হয়, “Prima facie, it is seen that criminal test has not been satisfied, since there was not much discussion on the mitigating circumstances to satisfy the ‘criminal test’.”
খুব ছোটো করে এর মানে এইরকম, যে, ধনঞ্জয়ের শাস্তিদানের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সেই পারিপার্শ্বিকতাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা দন্ডদানের পরিমাপ বাড়ায় (অ্যাগ্রাভেটিং সারকমস্ট্যানসেস)। যাতে দন্ডদানের পরিমাপ কমে, সেই পারিপার্শ্বিকতা (মিটিগেটিং সারকমস্ট্যানসেস) কে দেখা হয়নি। দার্শনিকভাবে দেখলে, এও এক পূর্বনির্ধারিত আখ্যানের একরকম স্বীকৃতি, যার চাপে কিছু পারিপার্শ্বিকতাকে উপেক্ষা করা হয়, আর কিছু পারিপার্শ্বিকতাকে দেওয়া হয় অধিকতর গুরুত্ব।
মোদীবিরোধী রাজনীতি -- একটি প্রাথমিক খসড়া : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ জুন ২০১৪ | ৩৭৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৩
...রাজনীতিতে দীর্ঘকালীন জয়-পরাজয় শুধু একটি ভোটে নির্ধারিত হয়না। হয় দীর্ঘকালীন অ্যাজেন্ডা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে। যাকে বলা হয় মেরুকরণ। নির্বাচনে বিভিন্ন দলের হাজার হাজার অ্যাজেন্ডা থাকে। কিন্তু জনসমাজে সবকটিই গুরুত্ব পায়না। অল্প কয়েকটিই পায়। অর্থাৎ, জনতার চর্চার, তর্কের মূল বিষয় থাকে সীমিত সংখ্যক কিছু অ্যাজেন্ডা। যাকে ঘিরে মেরুকরণ তৈরি হয়। রাজনীতির দীর্ঘকালীন লক্ষ্যে তিনিই জয়লাভ করেন, যিনি নিজের অ্যাজেন্ডাকে জনতার অ্যাজেন্ডা হিসেবে তৈরি করতে পারেন (উল্টো ভাবে বলা যায়, জনতার অ্যাজেন্ডা তাঁর অ্যাজেন্ডা হয়ে ওঠে -- এর মধ্যে ডিম আগে না মুর্গি আগে, সে আলোচনায় এখানে ঢুকছিনা)। সেই অ্যাজেন্ডাকে ঘিরেই জনসমাজ এবং বাকি দলগুলি আবর্তিত হয়। পক্ষ ও বিপক্ষ নির্মিত হয়। স্বল্পমেয়াদে এটি সবসময় অ্যাজেন্ডা-রচয়িতার ভোটে জয় নির্ধারিত করে তা নয়, কখনও সখনও তিনি হেরেও যেতে পারেন, যদি মেরুকরণে উল্টো দিকের পাল্লার ওজন বেশি হয় (যদিও সাধারণভাবে সেরকম হয়না)। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে জাতি ও অন্যান্য দলগুলিকে নিজের অ্যাজেন্ডার চারপাশে আবর্তিত করতে পরা সাফল্যের একটি বড়ো সোপান...
কলকাতার কানাচে ২ -- নিউজ চ্যানেল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ০২ এপ্রিল ২০১১ | ১২৬৯ বার পঠিত
একথা ভাবলে ভুল হবে, স্রেফ আঁতেল সাহিত্য আর গ্রুপ থিয়েটার নিয়েই নিউজ চ্যানেলের সমস্ত মাথাব্যথা। এই জাতীয় এলিটপনাকে কবেই নিউজ চ্যানেল ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে। ভোটে যেমন, টিআরপিতেও তেমনই একজন দর্শকের একটিই ভোট। তিনি রোগা না মোটা, লম্বা না কালো, আঁতেল না হাড়হাভাতে, তাতে কিস্যু যায় আসে না। এই ব্যাপারে নিউজ চ্যানেল পরিপূর্ণ উত্তরাধুনিক। শিল্পের কোনো রকম হায়ারার্কিতেই তার বিশ্বাস নেই। তাই শুধু এলিট সাহিত্য বা শিল্প নয়, জনতার দীর্ঘ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারও আজ বাংলা নিউজ চ্যানেলেরই হাতে। নতুন মোড়কে বাংলা লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ বিস্মৃতপ্রায় ফর্মকে তারা তুলে এনেছে জনতার দরবারে, যার নাম খেউড়। এবং এর অবিরত পরিবেশনায় বাঙালি দর্শককুলকে করে তুলেছে মুগ্ধ ও মোহিত।
কলকাতার কানাচে - ১ : সেক্টর ফাইভ পর্ব : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ২৮ মার্চ ২০১১ | ১২৮৬ বার পঠিত
দোকানগুলো অবধি নেমে এসেছে রাস্তায়। সরু রাস্তা আরও সরু হয়েছে। এবং সেখানে পিলপিল করছে লোক। রোগামোটালম্বাসরু। লাইন দিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে দিয়ে নানা রোমহর্ষক কায়দায় এঁকেবেঁকে অটো চলেছে। আমাদের ছোটো অটো চলে আঁকেবাঁকে। অফিস টাইমে তাতে টার্জান থাকে। বাসরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। নড়েওনা চড়েওনা। কন্ডাক্টররা চিল্লাচ্ছে, রিক্সারা ভেঁপু বাজাচ্ছে, গাড়িরা তেড়ে হর্ন দিচ্ছে, আর বাকিরা শাপশাপান্ত করছে। রাস্তার হরেকরকম দেশি-বিদেশী গাড়ির ভিড়। সিগনালের বালাই নেই। একেকটা মোড়ে জনা ছয়েক করে পুলিশ আর হোমগার্ড আকাশের দিকে লাঠি উঁচিয়ে আছে। গাড়িরা খানিকটা সার দিয়ে চলেই যেখানে খুশি নাক গুঁজে দিচ্ছে। উল্টো দিকের রাস্তা থেকে তখন আরেকগুচ্ছ গাড়ি এসে হাজির হচ্ছে। সবাই মিলে হর্ন দিচ্ছে, খিস্তি করছে, আর যেখানে সেখানে নাক গুঁজে জটটা আরও খোলতাই করে তুলছে।
পুজোর হুজুগ ৩ -- পুজোয় চাই : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৫ অক্টোবর ২০১১ | ১০৭০ বার পঠিত
পুজোর সময়টা একটু ব্যস্ত থাকব। তেমন কিছু না, একটু ঘুরতে হবে আর কি। নানা বেড়াতে-টেড়াতে নয়। ওসব সুখ কি আর কপালে আছে? সাধ করে তো আর যাচ্ছি না। এই বুড়ো বয়সে কোথায় পায়ের উপরে পা তুলে আয়েস করব, লোকজন এসে প্রণাম টনাম করবে, অনেকদিন তো হল এবার একটু প্রধানমন্ত্রী হন স্যার বলে সাধবে, তা নয়, আবার রথে চড়তে হচ্ছে। না না কলা-টলা বেচতে যাচ্ছি ভাববেন না। ওটা বজরং দলের ডিপার্টমেন্ট। গদা হাতে ল্যাজ লাগিয়ে লাফাবে, কলা-টলা বেচবে। হই-হল্লা করবে। ওসব ছোটোখাটো জিনিস নিয়ে আমি মাথা ঘামাইনা।
পুজোর হুজুগ ১ -- পুজোর থিম, থিমপুজো : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৩ অক্টোবর ২০১১ | ১৩৩৮ বার পঠিত
পুজোর জগতেও এবার এসে গেল পরিবর্তন। ষষ্ঠীর দিন এক বাংলা চ্যানেল জানালেন, এবার ফোকাসে পরিবর্তন। আর কলকাতা-কলকাতা নয়। এবার পুজো গোটা বাংলার। এবার পুজো বৃহৎ চেতনার। বঙ্গ চেতনা ও মানবচেতনার। ছোটোখাটো ইস্যুতে থিমকে আর বেঁধে রাখা যাচ্ছেনা যাবেনা। হাওড়ার পুজো কমিটির প্রধান জানালেন, তাঁদের এবারের পুজোর থিম জঙ্গলমহল, সাঁওতাল সমাজ ও নাগাল্যান্ড। জঙ্গলমহল আর ভূমিপুত্র না হয় বোঝা গেল, কিন্তু নাগাল্যান্ড কেন? না, নাগাল্যান্ড সরকার তাদের ভূমিপুত্রদের নিয়ে যে ধরনের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, বাংলার সরকার দশকের পর দশক ধরে তার কানাকড়িও করতে পারেননি। এই জ্বলন্ত ইস্যুকেই তাঁরা তুলে ধরছেন তাঁদের থিমে। অন্যদিকে সল্টলেকের পুজো কমিটির প্রধান জানালেন, তাঁদের এবারে থিম নারীশক্তি। যিনিই ত্রাতা, তিনিই মাতা। ভাবছেন সে আর নতুন আর কি হল? দেবী দুগ্গা তো এমনিতেই নারী শক্তি। কিন্তু শুনতে সোজা হলেও আসলে ব্যাপার ততটা নয়, এসব বুঝতে হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও বৃহৎ পরিপ্রেক্ষেতির প্রেক্ষাপটে। এ নারী তো সে নারী নয়। এ যে পরিবর্তিত নারী।
উমাকান্ত মাহাতো : গুলিযুদ্ধে মৃত? : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ | ১৩২৮ বার পঠিত
এই মৃত্যু নিয়ে চাপান উতোর চলছিলই। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি জানিয়েছিলেন, যে, গভীর রাতে ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে ছোট পারুলিয়ার জঙ্গল এলাকায় গুলির লড়াই-এ উমাকান্তের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে জনগণের কমিটির তৎকালীন সম্পাদক মনোজ মাহাতো (অধুনা নিখোঁজ) দাবী করেছিলেন, গুলিযুদ্ধ নয়, বরং ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে উমাকান্তকে। সম্প্রতি মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ বা মাসুমের একটি "ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট' এই বিতর্কে আরও একটি মাত্রা যোগ করেছে।
কলকাতা কালচার (পর্ব এক) - পুস্তক পরিচয়, কী কিনি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ৩১ অক্টোবর ২০১০ | ১২৩৭ বার পঠিত
এতদিন মল প্রাঙ্গণে গিয়ে যাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়তেন, কী কিনবেন, আদৌ কি কিছু কিনবেন, নাকি কাঁধখোলা সুন্দরীদের দেখে-টেখেই বাড়ি চলে আসবেন, এই নিয়ে কনফিউশনে জর্জরিত হতেন, কফির দাম কেন দেড়শো টাকা আর চুল কাটতে ছশো টাকা দেবার কোনো মানে আছে কিনা এই নিয়ে মানসিক অন্তর্দ্বন্দ জীর্ণ হতেন, তাঁদের জন্য সুখবর। আর চিন্তা নেই। মুদ্রণের বাজারে এসে গেছে সুবিখ্যাত পত্রিকা গোষ্ঠীর নবতম অবদান - "কী কিনি"। নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। "বিকিনি"র সঙ্গে ধ্বনিগত মিল থাকলেও আসলে এটি কোনো হেঁজিপেঁজি বস্তু নয়, যে কিনলেন, পরে ফেললেন আর কিস্তিমাত। এটি একটি সিরিয়াস অ্যাফেয়ার। "বিকিনি", নয়, "কী কিনি"। পরা নয় পড়তে হয়। রীতিমতো মাসিক পত্রিকা। লম্বা-চওড়া। আকারে মোটামুটি চোদ্দ ইঞ্চি বাই দশ ইঞ্চি। আর প্রকারে কেনাকাটার এনসাইক্লোপিডিয়া বিশেষ।
চক্রান্ত চক্রান্ত : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৮ জুন ২০০৯ | ২৩৩৩ বার পঠিত
চক্রান্ত একটা আছেই, কারণ, কেস খুবই গোলমেলে। একদিকে ভারত সরকার গোটা দেশে মাওবাদীদের নিষিদ্ধ করার পর সিপিএমের বড়ো কর্তা প্রকাশ কারাত বড়ো গলায় জানালেন, যে, তাঁরা এই নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে তাঁর দলের মুখ্যমন্ত্রী সেই আইনে লোককে বাটাম দিয়ে জেলে পুরছেন। একদিকে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশক্রমেই নিষিদ্ধকরণের প্রস্তাব, অন্যদিকে আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, আসলে কেন্দ্র নামক অবোধ শিশুকে সিপিএম ন্যাজে খেলাচ্ছে। একদিকে বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিন্দায় মুখর, অন্যদিকে প্রখ্যাত বিদ্রোহী গায়ক-সাংসদ কবীর সুমন চুপচাপ ঘরে বসে গান-বাজনা করছেন। একদিকে "মাও-মমতা-মহাজোট' এর অভিযোগ, অন্যদিকে "মাওবাদ-টাওবাদ সব সিপিএমের চক্রান্ত'। একদিকে "অপারেশন লালগড়' নামক যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আপামর মিডিয়ার সমর-বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠা, অন্যদিকে জঙ্গল মহলে মিলিটারি বুটের পদচারণা। খবরের কাগজে পড়া যাচ্ছে, যে, মাওবাদী দমনে মার্কিন উপগ্রহ প্রযুক্তিরও নাকি সাহায্য নেওয়া হয়েছে, যথারীতি, মার্কিনবিরোধিতার পেটেন্ট নেওয়া আজিজুল হক সে ব্যাপারে নীরব।
সুশীলবাবুর মানেবই (দ্বিতীয় ভাগ) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : মায়া মিডিয়া | ১৪ জুন ২০০৯ | ১২৭৩ বার পঠিত
পন্ডিতরা শিল্পায়নের দুই ধরণের সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন। একটি বাংলায় অন্যটি ইংরিজিতে। একটি পিপলস ডেমোক্রেসিতে অন্যটি আনন্দবাজারে। ইংরিজি তাত্ত্বিক শ্রী প্রকাশ কারাত,পিপলস ডেমোক্রেসিতে এ বিষয়ে লিখেছেন, "কলকাতার পার্শ্ববর্তী পাঁচটি জেলায় করা একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যে, বন্ধ কল-কারখানা আর রুগ্ন শিল্পগুলিতে ৪১০০০ একর এমন জমি পড়ে আছে, যা কোনো শিল্প সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছেনা।অএই সমস্ত জমি পুনরুদ্ধার করলে, তা, অনেকগুলি উদ্দেশ্যকে সিদ্ধ করতে পারে। এই সমস্ত জমিগুলিকে বিক্রি করে সেই অর্থে রুগ্ন শিল্পগুলির পুনুরুজ্জীবন ঘটানো যেতে পারে, বা কর্মচারীদের বকেয়া বেতন মেটানো যেতে পারে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্প, বা অন্যান্য শিল্পসংস্থাকে বাকি জমি দেওয়া যেতে পারে। এইরকম জমিগুলি দশকের পর দশক ধরে আইনী জটিলতায় অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে।"
নারী প্রসঙ্গে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৯ জুলাই ২০০৯ | ১১৫৩ বার পঠিত
সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে সনাতন ভারতীয় পদ্ধতিতে "কন্যাদান' এর এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল। "মুখ্যমন্ত্রী কন্যাদান যোজনা' নামক একটি সরকারি প্রকল্পে সম্প্রতি বিয়ে দিয়ে উদ্ধার করা হল ১৫১ জন দু:স্থ মহিলাকে। গত ২৬শে জুন। বেণীর সঙ্গে মাথার মতো, বিয়ে দিয়ে কন্যা উদ্ধার করার পাশাপাশি আরেকটি সামাজিক কর্তব্যও মধ্যপ্রদেশ সরকার পালন করলেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বিয়ের উপযুক্ত কিনা জানার জন্য, প্রতিটি কন্যার "পরীক্ষা' নেওয়া হল রীতিমতো সরকারি উদ্যোগে। যে-সে পরীক্ষা নয়, প্রতিটি বিবাহেচ্ছুক নারীর "কুমারীত্ব' পরীক্ষা করা হল একদম পাশ-করা স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞদের দিয়ে। খবরে প্রকাশ, যে, জনৈকা পরিক্ষার্থিনী সামান্য ট্যাঁফোঁ করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, যে, পরীক্ষায় না বসলে বিয়ের আসরে এϾট্রর কোনো প্রশ্নই নেই। ফেল করলে কি হবে, সেটা অবশ্য স্পষ্ট করে বলা হয়নি, কিন্তু ফেল করলে কি হয়, সে তো ক্লাস ফাইভের নাদান বালকও জানে।
শাইনিং ইন্ডিয়া, কালো ভারত : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ অক্টোবর ২০০৯ | ১৩১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
অবস্থা উদ্বেগজনক, সন্দেহ নেই। ছত্রধর মাহাতো দিয়ে শুরু। তারপর রোজই ধরপাকড় চলছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, যে, এখন থেকে মাওবাদী বলতে শুধু জঙ্গী কার্যকলাপ নয়, জঙ্গীদের প্রতি মতাদর্শগত সমর্থনও বোঝাবে। ফলে যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা মাওবাদীদের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন যুগিয়ে চলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও একই ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এর কয়েকদিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব এবং পুলিশ অফিসাররা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যে, মাওবাদী বা জনসাধারণের কমিটির মধ্যে বিশেষ পার্থক্য তাঁরা দেখছেন না। গ্রেপ্তারের পর ছত্রধর মাহাতোকে জেরা করে জনসাধারণের কমিটিকে সাহায্য করেছেন এরকম বহু মানুষের নাম পাওয়া গেছে। এবং সহায়তাকারী এই সমস্ত যেকোনো লোকের বিরুদ্ধেই কেন্দ্রীয় বে আইনী কার্যকলাপ নিরোধক আইন (ইউএপিএ) মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। শুধু ঘোষণাতেই ব্যাপারটা থেমে নেই। গ্রেপ্তার চলছে। বন্ধ করা হচ্ছে ছাপাখানা। এই লেখা লিখতে লিখতেও আরও কিছু গ্রেপ্তার হয়ে যাবে, সন্দেহ নেই।
ভাবনার নিষ্ক্রিয়তা, নিষ্ক্রিয়তার ভাবনা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১০১৮ বার পঠিত
মার্কসবাদী হই বা না হই, আমরা যখন আমাদের খসড়া নীতিমালাটি তৈরি করি, তখন ঠিক এই ‘আশু’ কর্তব্যের কথাটিই আমাদের মাথায় ছিল। অন্য কিছু না। আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গবাসী হন, আপনি ডান হোন বা বাম, ব্যবস্থাপন্থী বা ব্যবস্থাবিরোধী, প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী, কিছু ন্যূনতম জিনিস বোধহয় এখনই করা যায়, যা এই ব্যবস্থার মধ্যেও মানুষকে কিছু স্বস্তি দেবে। এবং সেই কাজ করা যায় এই ব্যবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে, বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য নির্বিশেষে। আমাদের খসড়ায় ঠিক সেই টুকুই আছে। এর পরে বাকি কথোপকথনের চিন্তা, বাকি তাত্ত্বিক আদানপ্রদান তো করাই যাবে। সে প্রস্তাবও খসড়াতেই আছে। অর্পিতা এই আদানপ্রদানে অংশগ্রহণ করেছেন এবং করছেন। সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ।
বইমেলায় পুলিশের হামলা
: সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ২৪৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
যতবার,যতজন, শান্তভাবে কথা বলতে গেছেন, প্রতিবারই পুলিশ প্রায় বিনা প্ররোচনায় একই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একের পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ যে আচরণ করে, যে ভাষায় কথা বলে, এবং যে পরিমান মারধোর করে, বইমেলার সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তা অভূতপূর্ব। প্রায় অর্ধশতকের বইমেলার ইতিহাসে কলঙ্কলেপনের জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ।
এ জিনিস বইমেলায় কখনও হয়নি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫৩১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
পুলিশকে কিছু কথা বলতে যাচ্ছেন কেউ। তর্কাতর্কি হচ্ছে। পুলিশের দিক থেকে যেহেতু বলার কিছু নেই, তাই তাঁরা কিছুক্ষণ বাদেই তেড়ে এসে তুমুল মারধোর করছেন দু-চারজনকে, এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ঘোষণা করছেন, গ্রেপ্তার করা হল। আমার দিকেও তেড়ে এসে ঘুষি চালিয়ে দেন এক পুলিশ মহাবীর। যদিও, আমি শান্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু করিনি। স্লোগান-টোগান তো দূরস্থান। হিন্দুত্ববাদী কোনো হামলাকারীর গায়ে বলাবাহুল্য একটুও আঁচড় পড়েনি। পুলিশের তর্জন-্গর্জন, মার-্ধোর শুধু একপক্ষের উপরেই বর্ষিত। এবং পুরোটাই পরিচালিত হয় নীল কোট পরিহিত একজন পুরুষ ও সাদা পোশাকের একজন মহিলা অফিসারের নেতৃত্বে। তাঁরা বস্তুত জনতাকে প্ররোচিত করছিলেন। যে ভঙ্গীতে কান্ডটা করছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে, পুরোটাই ইচ্ছাকৃত। হয় তাঁরা মব কন্ট্রোলের কিছুই জানেন না, কিংবা জানেন, কিন্তু তাঁদের গেরুয়াকরণ সুসম্পন্ন হয়েছে।
আমেরিকার করোনা, পাবলিকের হাতে কেবল পেনসিল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | খবর : টুকরো খবর | ২৫ মার্চ ২০২০ | ৩৪৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
এর মধ্যে যেটা জানা, তা হল চাকরি বাকরি হারানোর মধ্যেই লাফিয়ে বাড়ছে করোনার কেসের সংখ্যা। সিএনএনএর সঞ্জয় গুপ্তার মতে, এখন যে তথ্য জানা যাচ্ছে, সেটা আসলে দুসপ্তাহ আগের। এবং কার্যত সংখ্যাটা প্রতিদিনই দ্বিগুণ হচ্ছে। ফলে সংখ্যাটা এখন কোথায়, এবং কোথায় গিয়ে ঠেকবে, বলা কঠিন। অবশ্য, এসবই খুব বেশি হলে আন্দাজ। আসল সংখ্যা কী, তার মাপ কী, কী অভিঘাত, কেউই জানেন বলে মনে হচ্ছেনা। প্রভূত রোগির আশঙ্কায় নিউ-ইয়র্কের গভর্নর জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে একটি ভেন্টিলেটার দিয়ে দুজন রোগির চিকিৎসা করে দেখা হবে। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে নতুন এবং জটিল। চিকিৎসা নিয়ে অন্যান্য জটিলতাও আছে। যথেষ্টই আছে। আমেরিকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা সরকারি নয়, পুরোটাই বীমানির্ভর। বীমাকোম্পানিরা জানিয়েছে, যে, করোনার পরীক্ষা হবে বিনামূল্যে, কিন্তু চিকিৎসার খরচ পুরোটা তারা বহন করবেনা। এখন শোনা যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রে পরীক্ষাও বিনামূল্যে হচ্ছেনা। অর্থাৎ কাগজেকলমে পরীক্ষা বিনামূল্যেই বটে, কিন্তু তার সঙ্গে সার্ভিস চার্জ, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফি, ইত্যাদি হাবিজাবি যোগ করে, কাউকে নাকি ৩০০০ ডলারও বিল করা হয়েছে।
জাতীয় বিপর্যয় ও যুক্তরাষ্ট্রের দায় : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ মে ২০২০ | ৫৫৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
কেন্দ্র হল জমিদার, যাদের কাছে এ রাজ্যের অস্তিত্ব কেবল খাজনা আদায়ের সময়ে, এ বাস্তবতা বহুদিনের। ফলে আজ কেন্দ্রীয় সরকারের মুখে কুলুপ, সর্বভারতীয় মিডিয়ার অভ্রংলিহ নীরবতা, নতুন কিছু নয়। আকাশ থেকে পড়ারও কিছু নেই। এটাই চালু পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে আমরাও মেনে নিয়েছি এবং স্বীকৃতি দিয়েছি। মেনে নিয়েছি, যে, করের টাকা আসলে কেন্দ্রের প্রাপ্য, রাজ্যের কাজ হল কাকুতি-মিনতি করা। বাবু দুটো কলামুলো দিন না। বাবু কখনও দিয়েছেন, কখনও দেননি। আমরা এই লাথিঝাঁটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি। হিন্দুস্তানকে জাতি, দিল্লির মিডিয়াকে "জাতীয়" মিডিয়া, লুঠকে ন্যায়সঙ্গত এবং হাত কচলানোকে ভবিতব্য মনে করেছি। "বঞ্চনা" নিয়ে খিল্লি করেছি। বলিউড আর ক্রিকেট দেখে নিজেকে মূল ধারার ভারতীয় প্রমাণ করতে চেয়েছি। কিন্তু সবই একতরফা। আমরা দিল্লির অপরাধের ঘটনায় গর্জে ওঠাকে মূল ধারায় ঢোকার উপায় ভেবেছি, দিল্লির স্লোগান আওড়ানোকে "কুল" ভেবেছি, দিল্লির আবহাওয়ার বিপর্যয়কে সারা ভারতের বিপর্যয় ভেবেছি। সবেতেই "জাতীয়" মিডিয়া ধোঁয়া দিয়েছে। কারণ জমিদারের সমস্যা গোটা তালুকের সমস্যা।
বিপাকে চিন : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৯ জুন ২০২০ | ৫৩৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাঝারি মাপের কারখানার মালিক জানান, 'ভারতের সরকার যে শুধু তার শ্রমিকদের দেখভাল করে তা নয়, বিদেশী শ্রমিকদের প্রতিও দয়ালু। সে কারণেই আমরা ভারতপন্থী'। তিনি আরও জানান, যে, চিনা সরকার স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা করতে উদ্যোগী না হলেও ভারত থেকেই এসেছে এক কোটি ফেস্টুনের অর্ডার। যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে ছাপা হচ্ছে। কলকারখানা আবার জেগে উঠেছে। শ্রমিকরা পাচ্ছেন ওভারটাইম। এখনকার মতো সংকট মিটল বলেই আশা করা যাচ্ছে।
আমফান, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গের পাওনা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ জুন ২০২০ | ৪০৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
বিভিন্ন প্রকল্পে কতটুকু পাওয়া যাবে, তাকেই বলা হয় অনুদান। ১৯৯০ দশক পর্যন্ত বাম সরকারের মন্ত্রীরা, বিশেষ করে অশোক মিত্র যে অভিযোগগুলি করেছেন, তার মর্মার্থ একটিই, যে, এই রাজ্যের নিজস্ব উপার্জনের সমমূল্যের এই টাকা রাজ্যে ফিরে আসেনা। একে তাঁরা বঞ্চনা বলেছেন। অভিযোগ সত্যি হলে ৫০ বছরের লুণ্ঠন বললেও অত্যুক্তি হয়না।নতুন শতাব্দীতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে অর্থ কমিশন কেন্দ্রের আয়ের একটি অংশকে সরাসরি রাজ্যের হাতে অনুদান হিসেবে ফেরত দেবার কথা জানায়। কতটুকু দেওয়া হবে, সেই ভগ্নাংশটি সময়ের সঙ্গে বদলেছে।
নায়কোচিত : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৯৬ বার পঠিত
টালিগঞ্জের নায়করা অফিস টাইমে মেট্রোরেলে চড়ে বিক্ষোভ দেখাতে গেছেন, তাঁদের জন্য মেট্রোরেলের চাট্টি কামরা বে আইনী ভাবে সংরক্ষিত ছিল, যাত্রীরা সেখানে উঠতে গেলে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে যাঁরা বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন, তাঁরা চক্রান্তকারী। জনমানসে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাই তাঁদের একমাত্র কাজ। তাঁরা ভুলে গেছেন, নায়করা হলেন জাতির মুখ। ফিল্মে রোমান্স এবং অ্যাকশন করে তাঁরা জগৎ উদ্ধার করেন। একাই একশ জনের মহড়া নেন, পিটিয়ে দেশের শত্রুদের প্যান্টুল খুলে দেন, সোজা কথা? সত্যি কথা বলতে কি, তাজমহল, শচীন তেন্ডুলকার আর বলিউড ছাড়া দেশে আছেটা কি? পার্লামেন্ট আর রাষ্ট্রপতিভবন? ছো:।
মিডিয়া মনস্কতা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১১০৮ বার পঠিত
বাংলায় চুরি ক্রমশ: বাড়ছে-- মরুদ্যান শুকিয়ে গেল বলে। হপ্তা দুই আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর গোঁফচুরি হয়ে গেল। একটি বন্ধুত্বের সাইটে ছবি-টবি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর একটি "ফেক' প্রোফাইল বানিয়েছিলেন জনৈক যুবক, তাই নিয়ে মিডিয়ার হুল্লোড় যেন যৌবনের জলতরঙ্গ, রুধিবে কার পিতৃদেব। মুখ্যমন্ত্রীর আইডেন্টিটি চুরি হয়ে যাচ্ছে, সম্মানহানি হচ্ছে, রাজ্যের ভাবমূর্তি ম্লান হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে শুরু করে থেকে শুরু করে কোনো কোনো গপ্পের গোরু "ইহা একটি চক্রান্ত' পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তাও কপাল ভালো, এর মধ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত কেউ দেখতে পাননি। (অবশ্য দেখতে পেলেও নির্ঘাত চেপে গেছেন, এই শিল্পায়নের বাজারে মার্কিন বহুজাতিক নিয়ে প্রশ্ন তোলার বুকের পাটা আর কোন বাপের ব্যাটার আছে?)
সমষ্টির স্বার্থ : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১১১৩ বার পঠিত
পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের উপদ্রব বেড়েছে আর বিহারে নাকি ডাকাতের। বিশেষ করে ব্যাঙ্ক ডাকাতের। বিহার পুলিশের বড়োকর্তারা এই নিয়ে একাধিক গম্ভীর মিটিং এবং তৎসহ প্রচুর চা, বিড়ি, সরকারি পেট্রোল এবং টিএ বিল খরচার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, যে, আসলে দোষটা মোবাইল ফোনের। কেন মোবাইল ফোন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা দক্ষিণমেরুর পেঙ্গুইনদের এ ব্যাপারে কেন দায়ী করা হচ্ছেনা, সে নিয়ে বিশদ তথ্য না পাওয়া গেলেও, সংবাদে প্রকাশ, ব্যাঙ্কে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, যে, ডাকাতরা ডাকাতির কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। যুক্তি মারকাটারি সন্দেহ নেই।
ফলেই পরিচয় : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৪৮ বার পঠিত
নেপালের আকাশে নাকি এখন লাল তারা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। স্বৈরাচারী রাজা পিছু হঠেছেন। ক্ষমতাচ্যুত হলেন বলে। এখন একদা বিপ্লবীদের হাতে গণতন্ত্রের বিজয়পতাকা। দীর্ঘদিনের বিরাট লড়াইয়ের শেষে এসেছে বিজয়। বিজয়ী বীররা তাই নামিয়ে রেখেছেন অস্ত্র। সেই অস্ত্রের পরিমান এতই বেশি, যে, ভারত থেকে পাঠানো হয়েছে অস্ত্র রাখার কন্টেনার। সেখানে অস্ত্রশস্ত্র জমা রাখার পর তালা বন্ধ করে একটি চাবি নিয়েছেন প্রচন্ড। অন্য ডুপ্লিকেট চাবিটি ঠিক কার কাছে জমা আছে, সেটা এই মূহুর্তে জানা না গেলেও, এই আনন্দের মূহুর্তে আমরা আর সেসব নিয়ে মাথা ঘামাবোনা। আজ আনন্দের দিন। আজ বহুদিন পরে বিজয় এসেছে ফিরে। আজ আমরা, অর্থাৎ আমি আর আমার চিরপুরাতন পাড়াতুতো প্রেমিকা খেঁদি , হলইবা রিমেক, শাহরুক খানকে দেখব মন দিয়ে।
বই ও ময়দান : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০১৬ বার পঠিত
সেন্টিমেন্ট নিয়ে এঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বাঙালির সংস্কৃতি স্থানবিশেষের উপর নির্ভরশীল নয়, বলে এঁরা মাইক ফোঁকেন। ময়দানপ্রেমীদের পিছনে ছুরি মেরে অবলীলায় সল্টলেকে দৌড় দেন, এবং অলৌকিক ক্ষমতাবলে এমন একটি বইমেলার উদ্বোধন করে দেন, যেখানে একটিও বই নেই। এছাড়াও, বইহীন বইমেলায় প্রবেশ করতে হলে যে কোনো টিকিট লাগবেনা তা বুক ঠুকে জানিয়ে জনসাধারণকে কৃতার্থ করেন।
সুস্থ প্রতিযোগিতা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৮১ বার পঠিত
আমেরিকা মহাদেশে এখন প্রতিযোগিতার হাওয়া। এমনিতেই আমেরিকায় বচ্ছর বচ্ছর একটি মেগামোচ্ছব কাম মহাপ্রতিযোগিতা হয়, যার নাম অস্কার। দুনিয়া জোড়া ফিল্ম দিগগজদের নাক সিঁটকানোর পরেও আহা, তাহার গ্ল্যামার বেড়েই চলেছে। এবং নিয়ম করে প্রতি বছর শোনা যাচ্ছে, একটি ভারতীয় সিনেমা এবার "বিশ্বজয়ী' হবেই। কার বিশ্ব, কে জয় করে, এসব কূট প্রশ্ন তুলে জিনিসটাকে ঘুলিয়ে দেবার দরকার নেই, মোদ্দা জিনিসটা যা হচ্ছে, বচ্ছরভর ঢাক বাজছে, ঢোল বাজছে, সাতমন তেল পুড়ছে, কিন্তু রাধিকা নাচিতেছেনা, দিনশেষে মার্কশিটে গোল্লা নিয়ে হাসি-হাসি মুখে (হাসি-হাসি, কারণ অংশগ্রহণটাই আসল, জয় নয়) বাড়ি ফিরছে যুগন্ধর হিন্দি সিনেমা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি, প্রতিযোগিতার শেষে "ভালো খেলিয়াও পরাজিত' তকমা নিয়ে ফিরছে কি যেন একটা ভারতীয় সিনেমা।
জনতার দরবার : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০২৩ বার পঠিত
পশ্চাদ্দেশ দেখানোর ঐতিহ্য আমাদের বহুদিনের। সেই পুরাকালের কথা, যখন একাই মঞ্চ কাঁপাতেন সুমন চাটুজ্যে আর তাঁর বাক্যগুলি যাদুকরের ছুরির মতো মঞ্চ থেকে উড়ে এসে আমাদের বুকে বিঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে লক্কা পায়রা উড়িয়ে দিত, সেযুগে একদা সুমনবাবু অকস্মাৎ মঞ্চে পিছনঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন, ও বলেছিলেন, ওমুক সংবাদপত্রের শ্রী অমুক চন্দ্র অমুক, এই দেখুন আমার পশ্চাদ্দেশ। বলাবাহুল্য, সাংবাদিকটি সেদিন প্রেক্ষাগৃহের প্রথম সারি আলো করে বসে ছিলেন। সুমনের যুক্তি ছিল অতীব সিম্পল। আপনাদের আছে সংবাদপত্র, আমার আছে মঞ্চ। কাগজে আপনি যা খুশি লেখেন, কোনো জবাবদিহি করেননা, মঞ্চেও আমি যা খুশি করব। কোনো জবাবদিহিতে বাধ্য নই। আহা, যেন, তোমার আছে বন্দুক, আর আমাদের আছে ক্ষুধা। মনে আছে, এই আঁভাগার্দ বিপ্লবীয়ানায় মুগ্ধ ও হতচকিত আমরা, কাগজে কাগজে প্রতিবাদের ঝড়কে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে সে যুগে কত বিমোহিত করতালিতে ভরিয়ে দিয়েছি প্রেক্ষাগৃহ, আর যাদুকরের ঝোলা থেকে বেরোনো পায়রারা উড়ে গেছে এদিক-সেদিক দুনিয়াদারির পথে।
চুমু কান্ড : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০২৬ বার পঠিত
চুমু কান্ডের পর এখন কিষ্কিন্ধাকান্ড -- শিল্পা শেঠি আর রিচার্ড গেরের বংশদন্ড। যদ্দুর যা জানা যাচ্ছে, প্রকাশ্য মঞ্চে এই যুগলের চুম্বনের দৃশ্যে ব্যথিত হয়ে জনৈক আইনজীবী জয়পুরে একটি জনস্বার্থ মামলা ঠুকেছিলেন। সেই মামলার শুনানিতে কোর্টে চুমু খাবার দৃশ্যখানি মাগনায় দেখানো হয়। সত্যযুগ হলে এর পর অগ্নিপরীক্ষা এবং সীতার পাতালপ্রবেশ হত। কলিযুগ বলে অন্য ব্যবস্থা, মেরেকেটে তিন মাসের জেল -- ভিডিও ক্লিপিং খুঁটিয়ে দেখে জনৈক বিচারক জানিয়েছেন, যে, এটি অত্যন্ত যৌন উত্তেজনাপূর্ণ আচরণ। অতএব অবিলম্বে রিচার্ড গেরেকে হাজতে পোরা প্রয়োজন। আর শিল্পার ভূমিকাও অত্যন্ত নিন্দনীয়, কারণ শিল্পা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করে গেরেকে প্ররোচিত করেছেন, অতএব তাঁকেও সমন ধরানো প্রয়োজন।
সমকাম : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৬৫ বার পঠিত
বিপ্লব শেষ করে নেপালের মাওবাদীরা ক্রমশ: ক্ষমতার জুতোয় পা গলাচ্ছেন। নেপালের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের দায়িত্ব হাতে পেয়েছেন মাওবাদী মন্ত্রী কৃষ্ণ বাহাদুর মাহারা। এতদিন টিভিতে নেপাল সুন্দরী প্রতিযোগিতার সরাসরি সম্প্রচারের তুমুল বিরোধিতা করে আসার পর, দপ্তরের দায়িত্ব হাতে পেয়েই মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, বাস্তব পরিস্থিতির পর্যালোচনার পর, সম্প্রচার বাতিল করা সম্ভব নয়। দুর্জনে দাবী করেছেন, যে, বাস্তব পরিস্থিতি বলতে এখানে সরকারি চ্যানেল আর সুন্দরী প্রতিযোগিতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিকেও বোঝানো হচ্ছে।
বৃহত্তর স্বার্থ : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১১২২ বার পঠিত
অবশেষে হুগো শাভেজও পথে এলেন। বোঝা গেল, ক্ষমতার নাম আসলে বাবাজি। এবং বিকল্প টিকল্প নয়, তার পথ আসলে একটিই। মাসখানেক আগে ব্যান করা হল ভেনিজুয়েলার জনপ্রিয়তম টিভি চ্যানেল গুলির মধ্যে একটিকে, যার নাম রেডিও ক্যারাকাস টেলিভিশন বা সংক্ষেপে আরসিটিভি। টেকনিক্যালি অবশ্য ঠিক ব্যান না, ভেনিজুয়েলা সরকার আরসিটিভির সম্প্রচারের লাইসেন্স রিনিউ করেনি মাত্র। নি:সন্দেহে ব্যানের চেয়ে জিনিসটা শুনতে ভালো, কিন্তু সুনামি শব্দটা শ্রুতিমধুর বলে তো আন্দামানের লোকজনের তাতে কিছু উপকার হয়নি। তাই হরেদরে ব্যাপারটা একই হল, কারণ আইনত: লাইসেন্স বিনা ভেনিজুয়েলার আকাশে কোনো ফ্রি চ্যানেল সম্প্রচার করা অসম্ভব।
সিকো : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৩ জুন ২০০৭ | ১৩৭৬ বার পঠিত
কানে স্ট্যান্ডিং ওভেশন পাবার পর, অবশেষে আমেরিকা জুড়ে শুভমুক্তি পেতে চলেছে, মাইকেল মুরের নবতম ছবি সিকো। এবার তিনি আক্রমণ করছেন আমেরিকার হেলথ কেয়ার সিস্টেমকে। এবং সেই নিয়ে যথারীতি আমেরিকা তোলপাড়। চ্যানেলে চ্যানেলে মাইকেল মুর। ওপ্রা উইনফ্রির সঙ্গে মাইকেল মুর। সরকার আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, ভয় পাচ্ছেন? সুইট একটি হাসি হেসে মাইকেল জানালেন নট অ্যাট অল। সানফ্রানসিস্কোয় দশ হাজার নার্স মিছিল করছেন স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে। সঙ্গে কে? কে আবার, মাইকেল মুর। বিভিন্ন টক শো তে উপস্থিত হবার ফাঁকে টুক করে ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে এক আধখানা মিটিং সেরে নিচ্ছেন, কে আবার মাইকেল মুর।
সুশীলবাবুর মানেবই : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৫ নভেম্বর ২০০৭ | ১০০৩ বার পঠিত
মানুষ কয় প্রকার? প্রকার টকার নেই, চন্ডীদাস বলেছিলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য। মহামতি মার্কস বলিয়াছিলেন, দুই প্রকার -- শোষক ও শোষিত। কিন্তু এসব আসলে ভুলভাল কথা। চন্ডীদাস আউটডেটেড, মার্কস বুলশিট। শোষক-শোষিত, ডান-বাম, এমনকি সিপিএম-তৃণমূল, এইসব এখন চুকে-বুকে গেছে, "হার্মাদ' কবি সোজা-সাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষ আসলে দুই রকম -- সুশীল ও হার্মাদ।
দশটি বিধান : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২৭ এপ্রিল ২০০৮ | ১১৩০ বার পঠিত
কুড়ি-কুড়ি ক্রিকেটের মাঠে টু-পিস-পরিহিতা চিয়ারগার্লরা নাচিতেছে দেখিয়া অকস্মাৎ মরালিটির মেজদার ঘুম ভাঙিয়া গেল। চোখ খুলিয়া মেজদা দেখিলেন খেলাধুলা লাটে উঠিয়াছে। খেলার মাঠে উর্বশী-রম্ভারা শরীর খুলে নাচিতেছে, রেশম ত্বকে পিছলে যাচ্ছে আলো আর স্টেডিয়াম-ভর্তি ভুখা জনতা চোখ দিয়ে গপাগপ রেশমি কাবাব গিলছে। দিকে দিকে অনাচার। সোডোমি। হিপি-হিপিনি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সমকাম। পাঙ্ক কালচার, নুডিস্ট কলোনি, বিকিনি-বালিকা। দেশ জুড়ে নারীমাংসের মোচ্ছব। ভারতীয় সংস্কৃতির সাড়ে সব্বোনাশ। পাপের পাত্র উপচীয়মান, মানবকুলের আর রক্ষা নাই।
কার্লোস ডিলুনা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ মে ২০০৬ | ৯২৩ বার পঠিত
"আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি কাউকে ঘৃণা করিনা। আমার পরিবারকে আমি ভালোবাসি। মৃত্যুদন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত সকলকে জানাবেন, তারা যেন হাল না ছাড়ে, বিশ্বাস রাখে।'' - এই ছিল মৃত্যুদন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কার্লোস ডিলুনার শেষ অফিসিয়াল বক্তব্য। খুনের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় টেক্সাসের একটি আদালত। প্যানকিউরিক ব্রোমাইড ইনজেক্ট করে সেই মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা কার্যকরী করা হয় ১৯৮৯ সালের সাতই ডিসেম্বর। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে এই জাতীয় দার্শনিক উক্তি সত্ত্বেও, যাজক ক্যারোল পিকেট জানাচ্ছেন, মৃত্যুর ঠিক আগে কার্লোস ভয় পেয়েছিল। হাসতে-হাসতে জীবন দিতে বা নিতে পারে, এমন কোনো পেশাদার খুনীর মতো না, নাইন্থ গ্রেডের স্কুলছুট এই যুবকটিকে তখন মৃত্যুভয়াক্রান্ত এক স্কুলবালকের মতো লাগছিল। তখন তার বয়স ছিল সাতাশ। দন্ডাজ্ঞায় লেখা ছিল - নাম: কার্লোস ডিলুনা। জাতিতে হিস্পানিক। চুলের রঙ কালো। উচ্চতা পাঁচ আট। ওজন একশ পঁচাশি পাউন্ড। চোখের রঙ বাদামী।
ব্লগ - একটি ব্যানকাহিনী : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ জুন ২০০৬ | ১০১৫ বার পঠিত
ভারত সরকার নাকি সতেরোখানা ওয়েবসাইট/ ব্লগসাইটকে ব্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুক্তি চমৎকার। নেট আসার পর উগ্রপন্থী কার্যকলাপ নাকি হাতের মোয়া হয়ে গেছে। অতএব, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, এই ব্যান দরকারী। সরকারী সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্তির কোনো সম্পর্ক সাধারণত: খুঁজে পাওয়া যায়না, নচেৎ প্রশ্ন করা যেত, ব্লগ সাইটের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার ঠিক কি সম্পর্ক? আর ব্লগ ব্যান করে জাতীয় নিরাপত্তাই বা কিকরে বাড়ানো যায়?
আজ রবিবার : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ নভেম্বর ২০০৬ | ১০২০ বার পঠিত
সাদ্দাম হুসেনের ফাঁসির হুকুম হল আজ। রবিবার। নভেম্বর পাঁচ। দুহাজার ছয়। আমার বৌ এসে বলে খবরটা। টিভিতে শুনে। "সাদ্দামের ফাঁসির রায় বেরিয়ে গেছে"। এইরকমই বলে। বলার ভঙ্গী শান্ত, স্বরে কোনো ওঠাপড়া লক্ষ্য করা যায়না। ক্যান্সারের রোগীর মৃত্যুসংবাদ লোকে যেভাবে দেয়, অবিকল সেরকম। টোন শুনেই বোঝা যায়, প্রত্যাশিতই ছিল। এরকমই হবার কথা ছিল। গাছ থেকে আপেল খসেই পড়েছিল। সেই বৃন্তচ্যুত আপেল আজ ভূমিস্পর্শ করল। খবর বলতে এইটুকুই। ব্যস। আমারও বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া হয়না। এমনিতেই আগের দিন রাত থেকেই ঘাড়ে অসহ্য ব্যথা। শোবার দোষে।
আদালত ও কয়েকটি মেয়ে (পর্ব -১) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ মে ২০০৭ | ১২৬৯ বার পঠিত
১৭৮৯ সালের কথা, অর্থাৎ, যে বছর ফ্রান্সে বিপ্লব হল। জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে লন্ডনের ওল্ড বেইলি কোর্টে তোলা হল এক গরীব লন্ডনবালিকাকে। তার নাম মেরি ওয়েড। কোর্টে তোলার সময় তার বয়স ছিল দশের কিছু বেশি। মেয়েটি রাস্তায় ভিক্ষে করত। যদিও তার মা আদালতে জানান, যে, মেয়েকে ভিক্ষে করতে তিনি শেখাননি। অন্য বড়ো মেয়েদের পাল্লায় পড়ে মেয়ে নিজেই বখে গিয়েছিল, আর মা পিছন ফিরলেই সে তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ত ভিক্ষের কাজে। ভিক্ষা করার জন্য অবশ্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। হয়েছিল, অন্য এক অপরাধে, ওল্ড বেইলি কোর্টের আইনী দস্তাবেজ অনুযায়ী তার নাম, "থেফট উইথ ভায়োলেন্স : হাইওয়ে রবারি' ।
আদালত ও কয়েকটি মেয়ে (পর্ব -২) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ জুন ২০০৭ | ১৩৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এবার একটু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি খতিয়ে দেখা যাক। বছরটা বাস্তিল পতনের, আগেই বলা হয়েছে। ইংল্যান্ডে তখন "পাগলা' রাজা তৃতীয় জর্জের রাজত্ব। ব্রিটেন আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে হার স্বীকার করেছে কয়েক বছর আগে। বছর পনেরো আগে, ১৭৭৫ সালে এসে গেছে জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন। গ্রেট ব্রিটেনে শুরু হয়ে গেছে বহু আলোচিত শিল্পবিপ্লব। লন্ডন, লোকসংখ্যার বিচারে, বিশ্বের বৃহত্তম শহরে পরিণত হতে চলেছে। অষ্টাদশ শতকের শুরুতে, লন্ডনের জনসংখ্যা ছিল ছয় লক্ষ, আর ১৭৫০ সালে সাত লক্ষ। এই সংখ্যা ১৮০০ সালে যা পরিণত হয় দশ লক্ষে, এবং ১৮৫০ সালের মধ্যে কুড়ি লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। অথচ, অষ্টাদশ শতক ইংল্যান্ডের ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে
নামাবলী : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ আগস্ট ২০০৭ | ৮৬৮ বার পঠিত
তবে বলি কি, এইসব ঝামেলায় গিয়ে লাভ কি,একটু "আমাদের" মতো হোনই না। চুলের রঙ করে ফেলুন বাদামী। চোখে পরুন কনট্যাক্ট। ইংরিজি ফরাসী বা জার্মানে কথা বলুন, উচ্চারণে আনুন ঠিকঠাক অ্যাকসেন্ট। চামড়ার রঙ নিয়ে কি করবেন শিওর না, তবে "সন্দেহজনক" নাম একদম রাখবেন না। মধ্যপ্রাচ্যে থাকবেন না। পারলে মুসলিম হবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় বোম মেরে প্রিএম্পটিভ মেজার হিসাবে গোটা মধ্যপ্রাচ্যটাই উড়িয়ে দিতে পারলে। চেষ্টা চলছে, তবে সেটা যতদিন না হচ্ছে, একটু কষ্টে কাটান। প্লিজ বেয়ার উইথ আস।
গুগল, গুগল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৯১১ বার পঠিত
সম্প্রতি, এই ২০০৭ সালের জুন মাসে, গুগলের বড়োকর্তার এক বক্তব্য নিয়ে একটি খুচরো বিতর্ক হয়ে গেল। দূর পাল্লায় গুগলের লক্ষ্য কি, সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গুগলের চিফ এক্সেকিউটিভ এরিক স্মিট বলেছিলেন, যে, এমন একদিন আসবে, যখন মানুষ আর শুধু ইন্টারনেট থেকে পড়া, দেখা, বা জানার বস্তু খুঁজে বার করার জন্য সার্চ করবেনা, বরং, আরও কিছু "অতি-ব্যক্তিগত" প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে।
নতুন শিক্ষানীতি, বাংলা ভাষা টিকবে? : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা | ৩০ জুলাই ২০২০ | ১৮৩৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮৭
গুজরাল এবং জাফরি কমিটি এ ব্যাপারে যা সূত্র দিয়েছিল, তা হল এইঃ
হিন্দিভাষী রাজ্যে শিখতে হবে তিনটি ভাষাঃ ১। হিন্দি (সংস্কৃত সমেত), ২। উর্দু বা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা, ৩। ইংরিজি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষা।
অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে যে ভাষাগুলি শিখতে হবেঃ ১। আঞ্চলিক বা স্থানীয় ভাষা। ২। হিন্দি। ৩। উর্দু বা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা। ৪। ইংরিজি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষা।
অর্থাৎ, কার্যত, হিন্দি এবং ইংরিজি শেখাটা প্রতিটি ভারতীয় শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক।
জলতলে রোহিণী শুয়ে আছে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ অক্টোবর ২০০৭ | ৮৯৩ বার পঠিত
এটি একটা মেয়ের গল্প। যাকে আমি চিনিনা। বা যাকে আমি চিনি। যাকে চোখে দেখেছি, কিন্তু অন্ধকারে। চিনি, কিন্তু ছায়ামূর্তিকে যেভাবে চেনে মানুষ, সেইভাবে। জলতলে শুয়ে থাকা রোহিণীর মুখ যতটুকু চেনা যায়, ততটুকুই।
দীর্ঘতম ছায়া : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ নভেম্বর ২০০৭ | ৯৫২ বার পঠিত
নন্দীগ্রামের পরে শুনলে মনে হতে পারে ইয়ার্কি মারা হচ্ছে। কিন্তু একথা সত্য, যে, ১৯৭৭ এ ক্ষমতায় আসার পর সিপিআইএম এর প্রাথমিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি ছিল, বিরোধী পার্টির কর্মী-সমর্থক-নেতাদের উপর কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবেনা। ৭২ থেকে ৭৭, সিপিআইএম এর মতানুসারে, লুটপাট দাঙ্গাহাঙ্গামা নয়, এ রাজ্যে চলেছিল "আধা-ফাসিস্ত" সন্ত্রাস। সিপিআইএম এর হিসাবে, এই সন্ত্রাসে রাজ্যজুড়ে তাদের ১১০০ কর্মী খুন হয়েছিলেন। ঘরছাড়া হয়েছিলেন আরও অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ।
ভ্যালেনটাইনের প্রাক্কালে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ | ১০৫৮ বার পঠিত
প্রেম করার, প্রেমে পড়ার আগে পড়ে ফেলুন এই বিশ্বপ্রেমের গাইডবুক। জেনে নিন, কি করবেন, কি করবেন না। সংযম অভ্যাস করুন - প্রেম করবেন পরে। আগে ইন্দ্রিয় জয় করুন, সংযমী হন। স্মরণে রাখবেন স্বয়ং কবিগুরু বৌকে ভাই (ছুটি) বলে ডেকে গেছেন। জাতির পিতা নেহাৎই এমনি-এমনি পিতা হওয়া যায়না বলে কষ্টেশিষ্টে একটু চুপচাপ ফুলে ছাপ দিয়েই আজীবন সংযম প্র্যাকটিস করেছেন। ভুলবেন না আমরা জাতির পিতার সন্তান, কবিগুরু আমাদের ধ্রুবতারা, ব্রহ্মচর্য আমাদের রক্তে। সতত: বিপ্লব বলতে বাতেলা বুঝবেন আর প্রেম বলতে ব্রহ্মচর্য।
বেসু প্রসঙ্গে : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ মার্চ ২০০৮ | ৯১৩ বার পঠিত
পুরাতন বিই কলেজ, অধুনা বেসুতে যা ঘটে চলেছে, তা একই সঙ্গে ট্র্যাজিক এবং হাস্যকর। বেসু যখন জ্বলছে, কর্তৃপক্ষ তখন ডুগডুগি বাজাচ্ছেন। ক্যাম্পাসে রক্তারক্তি চলছে, বাইরে থেকে পেশীশক্তির আমদানি হচ্ছে অবাধে, ক্রমশ: জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষকরাও, আর কর্তৃপক্ষ অতন্দ্র শার্লক হোমসের ন্যায় কে বা কারা "বেসুকে নন্দীগ্রাম হতে দেব না' বলে এসএমএস চালাচালি করছে,তার রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যস্ত। দুইদল ছাত্রের মধ্যে মারপিট হচ্ছে, সমাধানের সহজ উপায় কি? কর্তৃপক্ষের মতে সোজা উপায় হল দশটার সময় হস্টেল শুদ্ধু ছেলেকে ঘাড় ধরে কলেজ থেকে বার করে দাও। বাস ভাড়া করে হাওড়া আর শিয়ালদা স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে এসো। এবার নিজের ম্যাও তারা নিজেরা সামলাক
আদিবাসী বিদ্রোহ -- কিছু প্রাসঙ্গিক কথা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ নভেম্বর ২০০৮ | ১০০২ বার পঠিত
কেন্দ্রীয় শুল্ক বিভাগের কর্মচারী অভিজিৎ সিংহের বাড়িতে পুলিশ আসে ২০০২ সালের জুলাই মাসে। "জনযুদ্ধ' গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত, এই অভিযোগে এক বৃহস্পতিবার মধ্যরাত্রে দমদম নাগেরবাজারের ফ্ল্যাট থেকে এই ৩২ বছরের যুবককে "তুলে' নিয়ে যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ। "গ্রেপ্তার' নয়, "তুলে নিয়ে যায়'। ধৃতের স্ত্রী মানসী সিংহ জানান, "বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে। দরজা খুলে দেখি দুজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে। তাঁরা জানান, ওঁরা পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে আসছেন। সেখানকার এক জনযুদ্ধ নেতার ডায়রিতে নাকি আমার স্বামীর নাম পাওয়া গেছে। তাই ওঁরা আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে যেতে চান। আমি ওঁদের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাই।
শুরু হয়ে গেছে স্ট্রিপটিজ, আমাদের রাতের উৎসব : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৭ নভেম্বর ২০০৪ | ১৩৪৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
ফিরে এসে দেখি আমার থার্মোডিনামিক্স, মেশিন ডিজাইন আর ফ্লুইড মেকানিক্স বই তিনখানা বেচুরা বেচে দিয়েছে। দরজা খুলে রেখে যাওয়াই আমার ভুল হয়েছিল। তিন তলায় বেচুর ঘরে গিয়ে দেখি বই বেচার পয়সায় জমিয়ে মেহফিল বসেছে। যেতেই সবাই হই হই করে ওঠে এসো এসো এসো। বেচু বলে থার্মোডিনামিক্স বইটা বেঁচে গেছে, নিয়ে যাবি? আমাদের এই তিনতলা হোস্টেলে সবকটা ছেলে জাতে মাতাল হলেও তালে আল্লারাখা, সুপার অব্দি। মাথা গরম করলে ফাঁকতালে মালটাও ফসকে যেতে পারে, তাই ওদের সঙ্গেই বসে যাই।
নেট বিষয়ে দুটি লেখা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০৭ নভেম্বর ২০০৪ | ১১৩৪ বার পঠিত
পরীক্ষার খাতা হলে এই লেখা এই ভাবে শুরু করতে হত, যে বর্তমান যুগকে বলে তথ্যবিপ্লবের যুগ। কিন্তু এটা পরীক্ষার খাতা নয়, আর ইন্টারনেটও শুধুমাত্র তথ্যের বন্যা নয়। বিশেষ করে আমরা যারা নব্বইয়ের দশকের আগে একটু আধটু রাজনীতি/লেখালিখি/চিন্তাভাবনা করতাম, সোভিয়েত ব্লকের পতন, খোলা অর্থনীতি কেব্ল টিভি উইন্ডোজ নাইন্টিফাইভ পেরিয়ে ইন্টারনেট পর্যন্ত যাত্রা শেষে যারা উত্তর আধুনিকতার বিভিন্ন খোঁয়াড়ে আশ্রয় নিয়েছি, তাদের কাছে, ইন্টারনেট উত্তর আধুনিক দুনিয়ার বিজ্ঞাপনের এক আকর্ষণীয় মডেল সুন্দরী।
নেট, এক অতিকথা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০১ ডিসেম্বর ২০০৪ | ১৪০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই বিশেষ ধরণের অস্তিত্বকে আমরা বলতে পারি রিকার্সিভ অস্তিত্ব। রিকার্শন একটি বিশুদ্ধ কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ নির্মান, যা একটি বিশেষ প্রকারের ডেফিনিশনকে সূচিত করে। এ এমন এক ধরণের সংজ্ঞা,যা নিজেই নিজেকে ইনক্লুড করে। অর্থাৎ জীবনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আপনি যদি বলেন, জীবন্ত বস্তুর ধর্মই হল জীবন,তাহলে সেটি একটি রিকার্সিভ ডেফিনিশন,কারণ এখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যে জীবন্ত বস্তুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আপনি বলবেন, যার জীবন আছে সেই জীবন্ত। অর্থাৎ জীবনের এই সংজ্ঞায় আপনি জীবনের সংজ্ঞাকেই ইনক্লুড করেছেন, এবং এটি একটি রিকার্সিভ সংজ্ঞা।
শিল্প -- একটি ব্যক্তিগত ম্যানিফেস্টো... : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ জুন ২০০৬ | ১১৮৮ বার পঠিত
শিশুটি ক্ষিধে পেলে খেতে চায়, ঘুম পেলে শুতে। আর বাকি সময় সে প্লাগপয়েন্টের ফুটোয় ঢুকিয়ে দেয় ললিপপের কাঠি। পাশের প্লাগেঁ জে রাখে অন্য আরেকখানা ক্যান্ডি -- রচিত হয় সিমেট্রি। সে ড্রয়ারে ভরে রাখে জুতো, মোজার ভিতর বাদামভাজা। ছোট্টো পুতুলকে বসিয়ে রাখে কালো চেয়ারে, সোফার উপরে রাখে একলা কুকুরছানাটিকে। টিভির পাশে থাকে চামচ, জুতোর ফিতে, ক্যাসেটের খাপ। মেঝেতে ছবির ফ্রেম, পেনের রিফিল, এবং সানগ্লাস, পাশাপাশি। টেবিলের উপরে থাকে ঝর্ণাকলম আর তোবড়ানো কোকের বোতল ।
পাইথনের গপ্পো : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ১০৩৬ বার পঠিত
গোলমালটা ঠিক কিভাবে শুরু হল বলা খুব কঠিন। কলম্বিয়ান ছেলেটা একটা পাইথন পুষেছিল, সেটাও কারণ হতে পারে। এভাবে বললে অবশ্য ডাক্তারকেও দোষ দেওয়া যায়, কারণ কালো ইঁদুরের বদলে সাদা ইঁদুর খাওয়ানোর প্ল্যানটা ডাক্তারেরই ছিল। নেট ঘেঁটে দেখেছিল, যে, কালোর চেয়ে সাদা ইঁদুরের পুষ্টিগুণ নাকি বেশি।
ন্যানো বিষয়ক : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৩ জুন ২০০৮ | ১০৫৬ বার পঠিত
ন্যানো একটি গৃহপালিত গাড়ি। ইহার চারটি চাকা, একটি স্টিয়ারিং, একটি ইঞ্জিন। লেজ বা ডিকি নেই। বসার জায়গা চারজনের হলেও বসতে পারবেন মিনিমাম পাঁচজন জনতা, এই জন্য একে জনতার গাড়ি বলা হয়। জনতা মানে জনতা পার্টি নয়, জনতা মানে মুষ্টিবদ্ধ হাত। জনতা মানে গোবিন্দার ছবি। জনতা মানে রক্তের রঙ লাল, ওয়েভ লেংথ চারশো ন্যানোমিটার। জনতা মানে ক্ষমতা। জনতা মানে ইতিহাস।
কয়েকটি সিরিয়াস কবিতা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কাব্য | ০১ মার্চ ২০০৯ | ১১৮১ বার পঠিত
কবির গোপন ডায়েরি থেকে উঠে এল জীবনের প্রতিটি ধাপে যাপনের অসহ্য বেদনার গোপন ও গম্ভীর শিলালিপি। গম্ভীর, কারণ নিষিদ্ধ কামনা ও প্রত্যাখ্যানের উপাখ্যান ব্যতিক্রমহীনভাবেই সিরিয়াস। গোপন, কারণ, কবি লিখেছেন, 'প্রণয় প্রকাশ হলে হয় লোকনিন্দা / রাধার প্রণয় আছে প্রকাশের বৃন্দা'।
স্লোগানেই আত্মসমর্পণের জন্মদাগ : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৪ আগস্ট ২০২০ | ৭৩১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
মধ্যরাতের স্বাধীনতা মিথ্যা, এ ঘোষণা ঘটে উঠেছিল যে ভাষায়, সে ভাষা আমাদের নয়। আমাদের, বাঙালিদের নয়। এমন কথা বললে প্রাদেশিকতার দায় এসে পড়ে বটে, কিন্তু প্রাদেশিকতা কি তত দূষ্য? একটা উত্তর দিচ্ছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুজোর হুজুগ -- পুজোর থিম, থিমপুজো : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ অক্টোবর ২০১১ | ১৪৭০ বার পঠিত
পুজোর জগতেও এবার এসে গেল পরিবর্তন। ষষ্ঠীর দিন এক বাংলা চ্যানেল জানালেন, এবার ফোকাসে পরিবর্তন। আর কলকাতা-কলকাতা নয়। এবার পুজো গোটা বাংলার। এবার পুজো বৃহৎ চেতনার। বঙ্গ চেতনা ও মানবচেতনার। ছোটোখাটো ইস্যুতে থিমকে আর বেঁধে রাখা যাচ্ছেনা যাবেনা। হাওড়ার পুজো কমিটির প্রধান জানালেন, তাঁদের এবারের পুজোর থিম জঙ্গলমহল, সাঁওতাল সমাজ ও নাগাল্যান্ড। জঙ্গলমহল আর ভূমিপুত্র না হয় বোঝা গেল, কিন্তু নাগাল্যান্ড কেন? না, নাগাল্যান্ড সরকার তাদের ভূমিপুত্রদের নিয়ে যে ধরনের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, বাংলার সরকার দশকের পর দশক ধরে তার কানাকড়িও করতে পারেননি।
উল্টে গেছে পাল্টে যান, সোশাল মিডিয়াযুগের রাজনীতি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১০৬৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৪
যতবার আপনি নিজের ধারণার পক্ষে আওয়াজ তোলেন, ততবারই আসলে আপনি তথ্য সরবরাহ করেন বিপক্ষের প্রচারের হাতে। আপনি নিজেকে চিনিয়ে দেন। বিপক্ষ আপনাকে প্রচারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। আপনি নিজের জগত তৈরি করে তাতে বসবাস করতে থাকেন, বিদ্রোহ, বিপ্লব করতে থাকেন। আপনার বন্ধুবৃত্তের ছোট্টো বৃত্ত তাতে আপনাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। বিপক্ষ এসবে হস্তক্ষেপ অবধি করেনা। বরং তাদের প্রচার আরও নিখুঁত হয়ে ওঠে। আপনি আপনার বৃত্তে বন্দী হয়ে থাকেন, আপনার এলাকার সম্পূর্ন বাইরে বিপক্ষের প্রচার চলতে থাকে, চুপচাপ। আপনি জানতেও পারেননা। এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য একমাত্র আপনার। কারণ আপনি জেনেবুঝেই সমস্ত তথ্য তুলে দিয়েছেন ওই সর্বগ্রাসী ব্যবস্থার হাতে
বাংলা সিনেমা লাটে উঠল কেন? : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ৯১৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
সোজা চোখে দেখলে, বাংলা সিনেমা একরকম করে যে ধ্বংস হয়েছে, তার কারণ বাজার নয়, কারণটি রাজনৈতিক। বস্তুত একটি পদ্ধতিগত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাংলা সিনেমার 'কলকাতা ঘরানা'টিকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর তাঁত শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন সম্পন্ন হয়েছিল ৩০ বছরের মধ্যে। সঙ্গে ছিল মন্বন্তর, এবং কিছুদিনের মধ্যেই হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর, ৩০ বছরের মধ্যে সিনেমা শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন হয়ে গেছে, এবং একটু আগে থেকে হিসেব করলে মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, সবই ছিল সঙ্গে, শুধু কালানুক্রমটি একটু উল্টে পাল্টে গেছে।
গুরুভার বহন করুন : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ | ৫১৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
বাংলা ভাষায় গুরু অনেক কিছুতেই প্রথম। অবাধ কমিউনিটি থেকে দত্তকের ধারণা পর্যন্ত। বিষয়টিকে আমরা আরও কয়েক ধাপ সামনে এগিয়ে জনতার দ্বারা তৈরি জনতার মাধ্যম হিসেবে গুরুকে দাঁড় করাতে চাইছি। উইকিপিডিয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ ধরণের নিরীক্ষা কিছু হলেও, বাংলা সামাজিক মাধ্যম, প্রকাশনা এবং ওয়েবজিন হিসেবে গুরুর এই পরীক্ষানিরীক্ষা আমাদের জানামতে প্রথম। আর কেউ এ পথে হেঁটেছেন কিনা আমরা জানিনা, খুব সম্ভবত নয়। তাই কারও অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সুযোগ আমাদের নেই। এই নতুন দ্বীপভূমিতে আমরাই প্রথম অভিযাত্রী। এ রাস্তায় পরে হয়তো অন্য কেউও হাঁটবেন, কিন্তু রাস্তা তৈরির দায়িত্ব আমাদেরই। একেই আমরা বলি গুরুদায়িত্ব।
আব্বাসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তিনটি বা দুটি কথা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৫ মার্চ ২০২১ | ৮৫৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪১
বামরা অনেকদিন মাটির কাছাকাছি লোককে ফোকাসে আনেনি। টিভিতে যে মুখগুলি, সবই শিক্ষিত। যেটুকু নড়াচড়া, তাও শিক্ষিত অংশটিকে নিয়েই। কেন, সে অবশ্য বোঝা মুশকিল, দেবলীনা হেমব্রমের মতো নেত্রী থাকতেও। কিন্তু সে অন্য কথা। যে কোনো কারণেই হোক, আব্বাস, এই কাঁচা আনকোরা মাটির গন্ধটি সরবরাহ করছেন। তিনিই এখন পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের প্রতিভূ।
নন্দীগ্রামের সেই রাত -- সম্পাদকের বক্তব্য : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৯ মার্চ ২০২১ | ১৬০৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১৩
টেকনিকালি উদ্ধৃতির মধ্যের বক্তব্যের সরাসরি কোনো দায় নেবার প্রয়োজন না থাকলেও (যিনি বলেছেন, সেটা তাঁর দায়), নৈতিক দায়িত্বের কিছুটা নিশ্চয়ই লেখক এবং সম্পাদকের উপর বর্তায়। সে দায়, অবশ্যই স্বীকার করা দরকার। করছিও। ভবিষ্যতে, আশা করি, যুদ্ধপরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না, হলে, অবশ্যই এই শিক্ষা কাজে লাগবে। কিন্তু একই সঙ্গে এটুকুও মাথায় রাখতে হবে, যে, পরিস্থিতিটি যুদ্ধক্ষেত্রেরই ছিল। ক্ষয়ক্ষতি, খুন-জখম, মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ, সব মিলিয়েই। যে সরকারি দল যুদ্ধক্ষেত্রের হত্যালীলার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল নিজের রাজ্যের অধিবাসীদের, তারও সেই ভয়াবহ অপরাধ স্বীকার করার সময় হয়েছে। এই লেখাটির যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁরা এই প্রসঙ্গটি পুনরুত্থাপন করেছেন যখন, তখন আশা করি, এই বিষয়টিও মাথায় রাখবেন।
মদীয় মতদানপ্রকল্প : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৩ এপ্রিল ২০২১ | ৩৭০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
যোহন বলিলেন, মানুষের যা অসাধ্য কাজ, কেমন করে সাধিব তা আজ। প্রভু বললেন, মনুষ্যের কথা ছাড়। পশ্চিমে তাকাও। বিস্তীর্ণ গোবলয় থেকে দেখ নিয়ে আসছি কেন্দ্রীয় বানরসেনা। এ বাহিনীতে প্রবেশ করতে গেলে সুললিত রাষ্ট্রভাষা জানা আবশ্যক। কোনো বঙ্গীয় যিহাদি এর মধ্যে প্রবেশে সমর্থ নয়। এরা কর্তার ইচ্ছায় কর্ম ও হুপহাপ করে। ব্যবহার কর। শব্দের মাধ্যমে ধর্মপ্রচার না হলে বজ্রপাতের ব্যবস্থা কর।
কুমুদি, কেবলী, জয়ন্তী অধিকারী : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৮৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
এ নয়, কুমুদি, অর্থাৎ জয়ন্তী অধিকারি, কেবল কেবলির কথাই লিখেছেন। আসলে তো তিনি কেমিস্ট্রির পন্ডিত। ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। রীতিমতো গম্ভীর প্রবন্ধও লিখেছেন বিস্তর। গুরুতেই লিখেছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারি, কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে নিয়ে। কিন্তু তিনি এমনই কেবলিময়, যে, চোখে দেখার আগে, এসব বিশ্বাস করা ছিল কঠিন। যেমন কঠিন ছিল বিশ্বাস করা, যে, কুমুদি আর নেই। জলজ্যান্ত জয়ন্তী অধিকারি হঠাৎই একদিন দিল্লি শহরে নেই হয়ে গেলেন। দিল্লি শহর দাঁড়িয়ে রইল শুধু খটখটে কুতুবমিনারকে নিয়ে।
যিনি গেলেন, তিনি অবশ্য ডঃ জয়ন্তী অধিকারি। ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। কেবলি তো অজর অমর অক্ষয়। তার মৃত্যু নেই। নামে কেবলি হলেও আসলে যে স্মার্ট, স্কলারশিপ পেয়ে রিসার্চ করে। কটকট করে কথার উত্তরও দেয়। সত্তরের দশকের সবুজ শাড়ি পরা সেই মেয়েটি কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের পাশ দিয়ে এখনও তো হেঁটেই যাচ্ছে, সবুজ শাড়ি পরেই। অবিকল একই রকম ভঙ্গীতে।
হতে হতেও হলনা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ০৯ নভেম্বর ২০২১ | ৩৭১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
ভাল ক্যামেরা হাতে নিয়ে “গ্রাম দেখাব” বলে শুট করতে গ্রামে চলে গেলে গ্রাম হয়তো ভালই দেখা যায়, কিন্তু সিনেমা তো ঠিক ফোটোগ্রাফির প্রদর্শনী নয়। নায়ককে "যাও বাবা, চোঙা ফুঁকে পাড়ার লোককে চাট্টি ভালোভালো কথা শুনিয়ে এস" বলে উপন্যাসের মাঠে খেলতে নামিয়ে দিলে যেমন ভালো সাহিত্য হয়না, তেমনই সিনেমা বা সিরিজ ভাল হতে গেলে ড্রোনে চড়ে ফোটোগ্রাফিক গ্রামদর্শনের চেয়ে অধিক কিছু প্রয়োজন। বস্তুত এ সিরিজে ড্রোনের ব্যবহার এত বেশি, যে, পরিচালককে নির্দ্বিধায় ড্রোনাচার্য আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দৃশ্যশ্রাব্যের কুরুক্ষেত্রে, এমনকি "ভালো খেলিয়াও পরাস্ত" হতে গেলেও সঙ্গে কিছু কুশলী অস্ত্রচালনাও প্রয়োজন। ন্যূনতম যেটুকু দরকার, তা হল টান-টান, নির্মেদ চিত্রনাট্য। পরিচালনা এবং সম্পাদনার ক্ষেত্রে একাধারে দরকার মমত্ব এবং কঠোর ও নির্মম কুশলতা।
মন্দার -- ম্যাকবেথ তুইই রাজা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৬ নভেম্বর ২০২১ | ৫০৪৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
হইচইয়ের 'মন্দার' নামক এই সিরিজ দেখতে বসে, সমকালীনতা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই থাকেনা একদম প্রাথমিক কিছু দৃশ্যের পর। দেখা যায় সমুদ্রতীর, দেখা যায় মোটরসাইকেল। দেখা যায় পোলানস্কিসুলভ 'আধুনিক' হিংস্রতা। সিরিজের একদম শুরুতে সমুদ্রতীরে ডাইনি এবং তার চেলা যখন মাছকে গেঁথে ফেলে বর্শায়, সেই দৃশ্যের সঙ্গে পোলানস্কির প্রথম দৃশ্যের অদ্ভুত মিল। আলোর তফাতটুকু বাদ দিলে স্কটল্যান্ড এবং বঙ্গের সমুদ্রতীর একদম এক হয়ে যায় মরা মাছ আর মরা সৈনিকের ছটফটানিতে। ডাইনিদের পদচারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানে। পোলানস্কির সিনেমায় ঘোড়সওয়াররা টগবগিয়ে আসে সৈকতে। মন্দারে ঘোড়া নেই, তার জায়গায় আছে মোটর সাইকেল। ধূধূ সমুদ্রসৈকত দিয়ে মন্দার মোটরসাইকেল চালিয়ে যায় পিছনে একজন আরোহীকে নিয়ে।
আমাদের স্ক্রিনশট সভ্যতা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বলবই | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ | ৩৬৫৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
... এই লাইনে এ লেখার সমালোচনা হওয়া খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। হয়নি, সেটাই এই লেখার উপজীব্য। হয়নি, কারণ, একটা বড় অংশের লোক, যাঁরা হইচই করছেন, তাঁরা উপন্যাস এবং গল্প, কোনোটাই পড়েননি। কী পড়েছেন? না, ফেসবুক আর আনন্দবাজারের চিঠি। কনিষ্কর অভিযোগ, শ্রীজাতর উত্তর। হয় প্রোফাইলে গিয়ে পড়েছেন, কিংবা তাও নয়, স্ক্রিনশট পেয়েছেন, হাতের গোড়ায়, এবং চোখ বুলিয়ে উদ্ধার করেছেন। এরকমও লোকজন গর্ব করে বলছেন, যে, দু’পক্ষের বক্তব্যই পড়লাম, অমুকেরটা আমার বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। অতএব অমুক চোর (অথবা নয়)। এ যেন, “জানলার বাইরে কি বৃষ্টি পড়ছে?” – এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলছেন, “গুগল আর ইয়াহু দু’জনেরই বক্তব্য পড়লাম। আমার জানলার বাইরে বৃষ্টি পড়ছে কিনা, এ ব্যাপারে ইয়াহুর বক্তব্যই অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হল”।
আদানির বন্দর : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৬ নভেম্বর ২০২২ | ২৭১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
ক্রিশ্চান গোষ্ঠীর সঙ্গে বিজেপির সংঘাতের ইতিহাস নতুন না। গ্রাম স্টেনের কথা হয়তো অনেকেই মনে রেখেছেন। কিন্তু এখানে যে জিনিসটি নতুন, তা হল বিজেপির অ্যাজেন্ডার রাজনৈতিক সম্প্রসারণ। গোটা ভারতবর্ষে ইতিমধ্যেই বিজেপিকে রুখতে নরম-হিন্দুত্বের ঝোঁক দেখা যাচ্ছিল। তৃণমূলের গণেশ-পুজো থেকে শুরু করে কেজরিওয়ালের কাগজের নোটে লক্ষ্মী-গণেশের ছবি ছাপানোর প্রস্তাব পর্যন্ত। কিন্তু সংখ্যালঘুর 'দাঙ্গা' বাধানোর পরিকল্পনাকে রুখতে বিজেপি মডেলে হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরা, বিজেপির গণমঞ্চের নিচে আসা, এটা বিগত কয়েক দশকে এই প্রথম দেখা গেল। এর পরে কাউকে আদৌ বিজেপি-বিরোধী কেন বলা হবে, সেটা একটা প্রশ্ন। কংগ্রেস নেতা বেনুগোপাল, একে 'অশুভ আঁতাত' বলেছেন। রাজ্যপালের চাপের সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত করেছেন। যদিও তাঁর পার্টির অবস্থানও প্রশ্নচিহ্নের ঊর্ধ্বে না। আদানির বরাতপ্রাপ্তি কংগ্রেস জমানাতেই।
আকবরী নববর্ষ এবং তারিখ-ই-কাজিয়া : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | বিতর্ক | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ২৩২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
বাঙালির নববর্ষ নিয়ে অদ্ভুত কিছু বিতর্ক উত্থাপন করা হয়েছে। কে এই নববর্ষের উদ্গাতা—আকবর, নাকি শশাঙ্ক? এর পুরোটাই চলছে, প্রায় হাওয়ায় হাওয়ায়—হোয়াটস-অ্যাপ প্রচার যেমন হয়। তাই ঝট করে একবার দেখে নেওয়া যাক, আইন-ই-আকবরি-তে এই নিয়ে কী লেখা আছে।
নাটকঃ ইব্রাহ্মিন লোদি : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ১০ মে ২০২৩ | ২৭৬৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সূত্রধর ১: (টেনে-টেনে) অনেক অনেক বছর আগের কথা। অনেক দূরে এক দেশ ছিল। সে দেশে বড় বড় ক্ষেত, লম্বা লম্বা নদী, উঁচু-উঁচু পাহাড়, আর গভীর-গভীর সমুদ্র। সেখানে গোলা-ভরা ধান, নদী-ভরা জল, গোয়াল-ভরা গরু, গাছ ভরা হনুমান।
সূত্রধর ২: (থামিয়ে) ছোটো করে বল না। এত লম্বা করলে লোকে পালাবে।
সূত্রধর ১: (বিরক্ত হয়ে) লোক জমবে বলেই তো লম্বা করছি। অ্যানাউন্সমেন্টের কী বুঝিস তুই। সব ধর-তক্তা-মার-পেরেক নাকি? যাই হোক। (আবার শুরু করে) সেখানে ছিলেন এক রাজা। রাজা যেমন বড়, তেমনি ধার্মিক।
সূত্রধর ২: (থামিয়ে) রাজার দুই রানী। সীতা আর গীতা। রানীদের গা ভরা গয়না, প্রজাদের পকেট ভরা মায়না। কোথাও কোনো অভাব নেই, কেউ করেনা বায়না।
সূত্রধর ১: (আরও বিরক্ত) তোদেরকে কে স্টেজে তুলে দেয় রে? প্রজাদের পকেটে কোনো পয়সা নেই।
সূত্রধর ২: অ্যাঁ? তবে খায় কী?
সূত্রধর ১: প্রজারা টাকার কলে লাইন দেয়। রোজ কিছু করে করে টাকা ছাড়া হয়। যারা পায়, তারা খায়। যারা পায়না, তারা পরেরদিন আবার লাইন দেয়। রাজা এসেই সব মোহর বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলেন।
সূত্রধর ২: কেন?
সূত্রধর ১: যাতে লোকেরা মোহর নিয়ে অপচয় না করতে পারে।
সূত্রধর ২: সব টাকা এখন রাজার ভান্ডারে? হেবি বুদ্ধি তো।
সূত্রধর ১: তোর মতো গাড়ল হলে কি আর রাজা হত? রাজত্ব হত?
সূত্রধর ২: আর রানী?
সূত্রধর ১: ওরে পাঁঠা, এ রাজার কোনো রানী নেই।
সূত্রধর ২: এ বাবা, বিয়ে করেনি? দেখতে বাজে?
সূত্রধর ১: দেখতে বাজে? ছাতির মাপ জানিস? ইয়াব্বড়ো ছাতি। এত বড়, যে, বৌকেও ভয় পায়না। একজন বৌ আছে, কিন্তু সে রানী নয়। আলাদা থাকে।
কুন্দেরা কি আদৌ প্রাসঙ্গিক : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১৩ জুলাই ২০২৩ | ১৬১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কাফকা কেন এখনও প্রাসঙ্গিক, এবং পূর্বইউরোপেও ভীষণভাবে সমসাময়িক, তা নিয়ে কুন্দেরা একদা একটি লম্বা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সে পূর্ব ইউরোপ অবশ্য আর নেই। কুন্দেরাও আর নেই। তাই এবার আমাদের লেখার সময়। ওইসব পুরোনো পুরোনো লেখা, যার বহুলাংশই সোভিয়েত-যুগ নিয়ে লেখা, সেসব কি আদৌ প্রাসঙ্গিক আর? মার্কেজ, কুন্দেরা আর একো, এই তিনজন আমাদের যৌবনের বিদেশী হিরো ছিলেন, হলিউডি ক্লিন্ট ইস্টউড যেন, কিন্তু সেটা তো কুন্দেরা পড়ার কোনো কারণ হতে পারেনা। সেই সোভিয়েত নেই, সেই বার্লিন পাঁচিল নেই, সেই লৌহ-যবনিকা আর নেই, এমনকি প্রাহার সেই বসন্তও আর নেই। তাই, কেন কুন্দেরা?
নুনু যখন শনাক্তকরণের চিহ্ন (পর্ব ১) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : স্বাধীনতা | ১৭ আগস্ট ২০২৩ | ৭৩৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
- আপনারা তো প্লাস্টিক সার্জারি করেন।
- করি। আপনার না অন্য কারো?
- আমার।
- নাক সোজা করতে গেলে ২৫ লাখ। গাল তোবড়াতে গেলে ৩০। অবিকল পড়া মুখস্থের মতো বলে মেয়েটা, মেয়ে না কলের পুতুল কে জানে। - ঠোঁটও ঠিক করি। কিন্তু মেলদের ওটা লাগেনা। - আপনার বাজেট কত?
মনির গলা কেঁপে যায়। - মানে, মুখে না, একটু নিচে।
- ঘাড়, গলা, এগুলোয় হবেনা। ওগুলো ভগবান দিয়েছেন। যা দিয়েছেন তাই নিয়েই খুশি থাকুন। ওখানে আমরা হাত দিইনা। বুকে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করি। সেটাও আপনার লাগবেনা। ভুঁড়ির ফ্যাট বার করে দেওয়া যায়। রেট কত চেক করে বলতে হবে। তবে সিক্স প্যাক হবেনা। ওটা আপনাকে নিজেকেই বানাতে হবে।
- মানে, ভুঁড়িও না। তলপেটের সাইডটা।
- বুঝিয়ে বলুন।
চোখ-কান বুজে মনি বলে ফেলে - ওই জেনিটালস সাইডটা। আঃ। বলে ফেলে কী আরাম।
নুনু যখন শনাক্তকরণের চিহ্ন (পর্ব ২) : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : স্বাধীনতা | ১৮ আগস্ট ২০২৩ | ৩৯১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
বাড়ি ফিরে আরেক প্রস্থ ঝামেলা। ফ্ল্যাটবাড়ির দরজায়ই বিজনবাবু। সব্য তখনও গাড়ি থেকে নামেনি, ভালো করে নাকি পার্ক করছে। সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে শমিতা, তখনই বিজনবাবু। সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। বয়স্ক মানুষ, ওদিকের ফ্ল্যাটে থাকেন। খুব যে দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তা হয়, তা নয়। কিন্তু আজ শমিতাকে দেখে কীরকম আশ্বস্ত হন মনে হয়। - আপনি বাড়ি ছিলেননা না?
শমিতা বলে, না, এই তো ফিরছি।
- ও। আসলে আমি একটু গিয়েছিলাম।
- কোথায়?
- আপনাদের ফ্ল্যাটে। আপনারা কেউই ছিলেননা না?
শমিতা একটু অবাক হয়ে বলে, এই সময় তো কোনোদিনই আমরা থাকিনা।
- সে তো জানি। বিজনবাবু চিন্তিত গলায় বলেন। - আসলে ওদিকে একটা আওয়াজ পেলাম। ভাবলাম চোর-ডাকাত নাকি। একবার নক করে দেখি। যা দিনকাল।
উনিশে এপ্রিল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১৭০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
মীরজাফর তো শুনে হাঁ। কুচ মানে? এ কি রাজকার্য না ফুক্কুড়ি, যে সক্কালবেলা একটু মেজাজ খারাপ হয়েছে বলে লালমুখোদের সঙ্গে একদম যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে? রাজা-বাদশাদের খেয়ালকে একটু তোয়াজ করতে হয়—সবাই জানে, কিন্তু এই আস্ত গাছপাঁঠাটা যেমন আহাম্মক, তেমনই বদমেজাজি—রাজনীতি তো বোঝেই না, আদবকায়দাও না। নবাব না হনুমান বোঝা মুশকিল, ওদিকে ধড়িবাজি আছে দুশো আনা। কোন এক ভাগাড় থেকে তুলে এনে মোহনলালকে মহারাজা বানিয়ে মাথার উপর বসিয়েছে, সেটা আবার ওর চেয়েও এককাঠি বাড়া। সে মালটা বিষ খেয়ে অবশ্য এখন আধমরা, দরবারে নেই—এই এক রক্ষে।
শ্রী শ্রী উনিজি কথামৃত : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় ও কণিষ্ক
বুলবুলভাজা | লঘুগুরু | ২৪ মে ২০২৪ | ৪১৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
প্রকাশিত হলো দুই মলাটে বৈদ্যুতিন উনিজি কথামৃত।
লিখেছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, এঁকেছেন নবীন শিল্পী কণিষ্ক। শিল্পীর সম্পর্কে বেশি জানা যায়নি, তিনি রাতের অন্ধকারে মেলবক্সে ছবির বান্ডিল ফেলে দিয়ে গেছেন। জানিয়েছেন উনিজির প্রতি অনুগত থাকতে চাইলে মাথা বর্জন করা ভালো, আর অনুগত থাকতে না চাইলে গর্দান যাওয়ার সম্ভাবনা, সুতরাং আগে থেকে মুন্ডু বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়।
নামিয়ে নিন, ছড়িয়ে দিন - উনিজি কথামৃত - পিডিএফ সংস্করণ।
ভারতীয় রেলের 'কবচ' কুণ্ডল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ভিডিও গুরু | ১৯ জুন ২০২৪ | ১৬০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
রেলসুরক্ষা ব্যবস্থা কবচ নিয়ে হইহইয়ের কোনো শেষ নেই। দুর্ঘটনারও কোনো শেষ নেই। এই বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে রেলমন্ত্রী কবচের উন্নতির কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ৩০৪০ কিলোমিটার রেলপথে অপটিকাল ফাইবার বসানো হয়েছে, বসানো হয়েছে ২৬৯ টা কবচ টাওয়ার। ওদিকে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পরে, আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত চার বছরে ঘটেছে ছাব্বিশটা রেল দুর্ঘটনা। কবচ প্রবর্তনের আগে এত দুর্ঘটনা দেখা যেত কী? বা এর ভগ্নাংশও? সম্ভবত না। তাহলে কবচে আদৌ কি কারো কোনো লাভ হচ্ছে?
সহজ উত্তর হল, হ্যাঁ, হচ্ছে। ২০২৩ সালে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সে পর্যন্ত কবচের জন্য খরচা হয়েছিল ৩৫১ কোটি টাকা। আর ২৩-২৪ সালের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭১০ কোটি টাকা। দুটোকে যোগ করলে হয় ১০৬১ কোটি টাকা [২]। কোথায় যায় এই টাকা? কীভাবে খরচ হয়? কবচের প্রযুক্তি ভারতের সরকারি সম্পত্তি হলেও, ব্যাপকহারে এর যন্ত্র কিন্তু সরকার বানায়না। বানায় বেসরকারি কোম্পানিরা। তাদের বরাত দেওয়া হয়। এদের ইংরিজিতে বলা হয় ওইএম বা অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার। সেই বরাতেই যায় এই টাকার সিংহভাগ।
বুলডোজার, হকার আর শপিং মল : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৯ জুন ২০২৪ | ১২৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
মন্দা কাটার পর ২০১১ সাল নাগাদ শুরু হয় দ্বিতীয় বিপ্লব। মল তৈরি হতে থাকে দ্রুতগতিতে। বড়, মাঝারি শহরগুলো ছেয়ে যেতে শুরু করে মলে। একটা হিসেব পাওয়া যায়, যে, ২০১৭ সালে, গোটা ভারতে ৬০০ টার মতো মল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এর বেশিরভাগটাই ২০১১র পরে। মলগুলো নানারকম ছিল, কিন্তু যদি কেউ ২০১১র পরের মলগুলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য মনে করে দেখেন, তো মনে করতে পারবেন, এগুলো আগের মলগুলোর থেকে আলাদা। নতুন মলগুলোয় এবং পুরোনো গুলোও বদলে ফেলা হয় এমন ভাবে, যে, সেগুলো আর শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, সময় কাটানোর জায়গা হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত, অজস্র রেস্তোরাঁ, খেলার জায়গা এবং অবশ্যই একটি মাল্টিপ্লেক্স। আন্দাজ করা যায়, মলের দোকানগুলো জিনিস বেচলেও, মলগুলো আসলে বিক্রি করছিল জীবনযাত্রার ধরণ। শনিবার বা রবিবার মধ্যবিত্তরা সময় কাটাতে মলে আসবে, মলগুলোই হবে গন্তব্য, এবং লোকে এসে পড়লে পয়সা তো খরচ করবেই, এইটাই ছিল লক্ষ্য।
ভারত সরকার, প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে, এই পুরো প্রক্রিয়াটার পিছনে ছিল, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই পুরো সময়টাতেই বিক্রির ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের নিয়মকানুন শিথিল করা হয় এবং মলগুলোর একটা বড় অংশই ছিল বিদেশী পুঁজির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে হঠাৎ একদিনের ঘোষণায় ভারতে চালু করে দেওয়া হয় নোটবন্দী। নগদ টাকায় লেনদেন কার্যত দীর্ঘদিনের জন্য খোঁড়া হয়ে যায়। একই সময় চালু হচ্ছিল ই-কমার্সের নানা ব্যবস্থা, অ্যাপ, এবং টাকাহীন লেনদেনের নানা ব্যবস্থা। নোটবন্দীর ক্ষেত্রে কারণ দেখানো হয়েছিল, কালো টাকা উদ্ধার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়েকবছর পরে দেখা যায়, প্রায় কোনো কালো টাকাই উদ্ধার করা যায়নি, ফলত গোটা নোটবন্দীকেই একটা বৃহৎ কেলেঙ্কারি বলা যেতেই পারে। এই সময় সরকারকে সরাসরি দেখা গেছে অ্যাপ দিয়ে লেনদেনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে। সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, অ্যাপ, বড় খুচরো কোম্পানি, এবং মলগুলোর সুবিধা করে দিতেই এই সিদ্ধান্ত। শুধু এদেরই সুবিধা করে দিতে নিশ্চয়ই না, আরও অনেক সুবিধাভোগীও অবশ্যই ছিল, কিন্তু এরা যে সেই তালিকার অন্তর্গত, সে নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই।
স্বামী জ্ঞানবৎসল এবং মহিলারা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ভিডিও গুরু | ০১ জুলাই ২০২৪ | ১৪৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
একটা ভিডিও ক্লিপ বাজারে এসেছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের কোনো এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যেটা কলকাতায় হচ্ছিল, সেখানে এক স্বামীজি আছেন বলে দর্শক আসনের সামনের দিক থেকে সব মহিলাদের তুলে পিছনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটা মোবাইলে তোলা। কথা ভালো শোনা যাচ্ছেনা। কিন্তু কোনো মহিলা যে সামনের সারিতে বসবেনা, এটা ঘোষণা করা হচ্ছে, সেই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ভিডিওর সত্যমিথ্যা অবশ্য আমরা যাচাই করিনি। কিন্তু এর তো খবরও বেরিয়েছে।স্বামীনারায়ণ মন্দিরের স্বামী জ্ঞানবৎসলকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করে আনা হয়। তিনি খুব সম্ভবত মহিলাদের মুখ দেখেননা। তাই তিনি আসার আগেই আয়োজকরা সামনের সারি থেকে সব মহিলাদের তুলে পিছনে পাঠিয়ে দেন। শুধু তাইই না, খবরে এও বেরিয়েছে, ব্যাকস্টেজে যে মহিলারা কাজ করছিলেন, তাঁদেরও পাঠিয়ে দেওয়া হয় পিছনের সারিতে।
বাংলা ভাষা : সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১০০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
কলকাতা উচ্চ আদালতের বেশ কিছু শুনানি এখন ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। আমি বেশ কটা দেখেছি এবং শুনে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। বাদী-বিবাদী সবাই বাঙালি। দুই-তিন-চার-পাঁচজন উকিল, যাঁরা তর্কবিতর্ক করছেন, সবাই বাঙালি। বিষয়বস্তু বাংলার। কিন্তু পুরোটাই হচ্ছে ইংরিজিতে। কালো কোট পরে উকিলরা বিচারকের সামনে এসে নানারকম বিচিত্র উচ্চারণে ইংরিজিতে সওয়াল করছেন। বাংলায় কোনো অপরাধ হয়েছে, কোনো বাঙালি মেয়ের উপর অত্যাচার হয়েছে, বাংলার কোনো হাসপাতালে ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন, বিচারপ্রার্থীরা আদৌ কিছু বুঝছেন কিনা তার তোয়াক্কা না করে সবটাই ইংরিজিতে। শুনলে মনে হয়, এখনও ইংরেজ জমানা চলছে, আর ছন্দ করে 'কিউকাম্বার শসা, প্লৌম্যান চাষা' মুখস্থ করছেন।