অলংকরণ: রমিত
১
খবরের কাগজের পাতা খুললেই এখন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বাঙালি হেনস্থার ছবি – গুরুগ্রাম, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এমনকি ঘরের পাশের ওড়িশাতেও। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই ছবির গড়নটি এক। নির্যাতিত মানুষগুলি ধর্মে মুসলিম, তাঁরা খুব স্বল্প মজুরির কোন শ্রমসাধ্য কাজে নিয়োজিত রয়েছেন, এবং তাঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলেন। এই সব অসহায় মানুষগুলিকে কোন প্রমাণ ছাড়াই দেগে দেওয়া হছে বাংলাদেশী বলে, মারধর করে আটকে রাখা হচ্ছে ডিটেনশন সেন্টারে এবং নির্বিচারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। এই প্রক্রিয়াতে আধার কার্ড বা ভোটার কার্ডের মত প্রামাণ্য নথিকেও কোন স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে সব থেকে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে এই বছরেরই অগাস্ট মাসে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশে অথচ তাঁর পরিবার-পরিজন সবাই পশ্চিমবঙ্গেরই বাসিন্দা। কেসটি আপাতত কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন। এর আগে আমির শেখকেও রাজস্থান থেকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে দেশে ফেরানো গেছে মালদার কালিয়াচকে নিজের পরিবারের কাছে। আশা করা যায় সোনালির ক্ষেত্রেও তেমনই কিছু ঘটবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত বিদেশ-বিভূঁইয়ে, পরবার-পরিজনের সহায়তাহীন, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালির অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এই সবকটি ঘটনাতে নিগৃহীত ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক পরিচিতি (বাংলাভাষী, গরিব মুসলমান) ছাড়াও আরেকটি মিল লক্ষ্যণীয় - বাঙালি নির্যাতনের এই ঘটনা গুলি ঘটছে মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এবং বাঙালি নির্যাতনের এই কাজটি সম্পন্ন করছে সেই সব রাজ্যের পুলিশ, স্থানীয় জনগণ নয়। সুতরাং এই সব নির্যাতনের পেছনে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনের ভূমিকা সহজেই অনুমেয়।
ভিন রাজ্যে বাঙালি নির্যাতনের এইসব ঘটনার তীব্র অভিঘাত তৈরি হয়েছে বাংলার রাজনীতিতেও। কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি। এমনিতেই বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বে উত্তর ভারতীয়দের প্রাধান্যের কারণে বাংলায় এরকম একটা প্রচার থাকেই যে বিজেপি অবাঙ্গালিদের পার্টি, যা কিছু বছর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের “বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়” প্রচার কৌশলের সাফল্যের একটি অন্যতম কারণ। রাজ্যে রাজ্যে বাঙালি নির্যাতনের এইসব ঘটনার পরে বিভিন্ন মহল থেকে বিজেপিকে বাঙালি বিরোধী একটি দল হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপিকে আলাদা করে বাঙালিপ্রেমী বলে বিজেপির চরম সমর্থকও মনে করেন না সম্ভবত। আর আমার লেখালিখির সঙ্গে যারা পরিচিত তারা আমাকে বিজেপি সমর্থক বলে ভাববেন বলে মনে হয় না। কিন্তু আমার মনে হয় বিজেপি বাঙ্গালির ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে শুধুমাত্র বাঙালি বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে এটাও অতি-সরলীকরণ। বাঙালি নির্যাতনের রাজনীতির শিকড় আরো গভীর এবং জটিল। সেই প্রসঙ্গে দু'চার কথা বলার জন্য এই প্রবন্ধের অবতারণা।
২
আমার প্রবন্ধের মূল প্রশ্নটি সহজ: বিভিন্ন রাজ্যে বাঙ্গালিদের ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনে বিজেপির কী রাজনৈতিক লাভ হচ্ছে? পরের বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। বাংলা বিদ্বেষী তকমা বিজেপিকে সেই নির্বাচনে খুব সাহায্য করবে এমন নয়। তাহলে লাভ-ক্ষতির হিসেবটা ঠিক কী? আমার মূল বক্তব্য এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে ভারতের সমসাময়িক ভৌগোলিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অর্থনীতিতে। এই প্রবন্ধ সেই বিশ্লেষণের একটি প্রয়াস মাত্র।
মূল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমরা শুরু করব তুলনামূলক সহজ একটি প্রশ্ন দিয়ে। বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী? এই প্রশ্নের সহজ দুটো উত্তর হল: রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং হিন্দুত্ব। এখানে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে সত্যিই কী বিজেপি দুটি বিষয় নিয়ে সমভাবে চিন্তিত নাকি তারা আসলে ক্ষমতা চায়, হিন্দুত্ব শুধুমাত্র সেটা পাওয়ার মাধ্যম মাত্র। এই প্রশ্নের তথ্যভিত্তিক উত্তর দেওয়া কঠিন। তার বদলে দুটি চিন্তা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন। প্রথমত, যদি অন্য কোন পার্টি যদি হিন্দুত্ব অ্যাজেন্ডা পূরণ করে দিত, তাহলে কি বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা ত্যাগ করত? দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কি বিজেপি নেতা কর্মীরা এমন কোন পার্টিতে যোগদান করতে পারেন যারা ধর্মনিরপেক্ষ? প্রথম প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত ভাবেই না। দ্ব্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর নিচের তলার নেতাদের জন্য হ্যাঁ হলেও, বড় নেতা বিশেষতঃ যাঁরা আর এস এস করে উঠেছেন, তাঁদের জন্য না-ই হবে বলে মনে হয়। তাই হিন্দুত্ব এবং ক্ষমতা – এই দুটি বিষয়ই পরস্পরের পরিপুরক এবং বিজেপির রাজনীতির জন্য প্রয়োজনীয়। এতে অবশ্য আশ্চর্যের কিছু নেই। আসলে রাজনৈতিক ক্ষমতার বিষয়টাই এরকম। এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতার পার্থক্য একটু সংক্ষেপে বলে নেওয়া যেতে পারে। যে কোন রাজনৈতিক দর্শন, তা সে মার্ক্সবাদীই হোক বা হিন্দুত্ববাদী, তা আসলে কোন একটি সম্পদ বিন্যাসকে আদর্শ বিন্যাস বলে মনে করে। মার্ক্সবাদীরা হয়ত বলবেন সম্পদ সমাজের সবার মধ্যে সমভাবে বন্টন করতে হবে, হিন্দুত্ববাদী সেখানে বলবেন শুধুমাত্র হিন্দুরাই সব সম্পদের অধিকারী হবে। আমি কোনো দর্শনে বিশ্বাস করি মানে আমি এই বিন্যাসকে আদর্শ বিন্যাস হিসেবে মনে করি। কিন্তু যদি আমি ক্ষমতা চাই তার মানে শুধুমাত্র আমার আদর্শ বিন্যাসটি সমাজে প্রচলিত হওয়া আমার জন্য যথেষ্ট নয়, আমি চাইব সেটি যেন আমার মাধ্যমে হয়। তাই ক্ষমতা আর আদর্শ বিষয়টি একে অন্যের পরিপূরক।
যেহেতু হিন্দুত্ববাদ বিজেপির রাজনৈতিক দর্শনের মূল ভিত্তি, তাই ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপির রাজনীতির একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ধাপ হল একটি সর্বভারতীয় হিন্দু পরিচিতি নির্মাণ। এই সর্বভারতীয় হিন্দু পরিচিতি নির্মাণের ক্ষেত্রে এসেই বার বার হোঁচট খাচ্ছে বিজেপি এবং আমার মতে সাম্প্রতিক বাঙালি নির্যাতনের মূল সূত্রও লুকিয়ে আছে সেখানেই।
মূল প্রশ্নে ঢোকার আগে এই পরিচিতি নির্মাণের প্রসঙ্গটি একটু আলোচনা করে নেওয়া যাক। যেকোন মানুষেরই বিভিন্ন ধরণের পরিচয়জ্ঞাপক চিহ্ন থাকে। যেমন, আমি বাঙালি, হিন্দু, উচ্চবর্ণ এবং পুরুষ। এখন এর মধ্যে কোন একটি পরিচয়কে আমি আমার প্রধান পরিচিতি বলে মেনে নিই যার ভিত্তিতে আমি আমার রাজনৈতিক অবস্থান ঠিক করি। কেউ হয়ত নিজেকে প্রাথমিক ভাবে বাঙালি মনে করেন আবার কেউ হয়ত নিজের বর্ণের পরিচয়কে প্রধান ভাবেন। যে বাঙালি, ব্রাহ্মণ নিজের বর্ণপরিচয়কে প্রধান বলে ভাবছেন তিনি উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণের সঙ্গে নিজেকে সমগোত্রভুক্ত বলে ভাববেন। আবার তিনি যদি নিজেকে প্রাথমিক ভাবে বাঙালি ভাবেন তাহলে তিনি বাঙালি মুসলমানদেরও সমব্যথী হবেন। পরিচিতি নির্মাণের এই প্রক্রিয়া যে শুধু মানসিক তা নয়, একই সঙ্গে তা রাজনৈতিকও। অর্থাৎ, শুধু যে তিনি সমব্যথী হবেন তা নয়, তাঁর পরিচিতি সাপেক্ষে ব্রাহ্মণ বা বাঙ্গালিদের জন্য বিভিন্ন দাবীদাওয়া পূরণের বিভিন্ন আন্দোলনেও তিনি সামিল হবেন। এই ভাবে দেখলে রাজনৈতিক পরিচিতি নির্মাণ আসলে একটি জোট বা কোয়ালিশন নির্মাণ – কখনও সেখানে বাঙালি হিন্দু, বাঙালি মুসলমানের সঙ্গে জোট গঠন করবে আবার কখনও বাঙালি ব্রাহ্মণ, উত্তরপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে জোট তৈরি করবে। সমস্যা হল, পরিস্থিতি ভেদে পুরনো কোয়ালিশন ভেঙ্গে নতুন কোয়ালিশনের জন্ম হয়, তার ফলে মানুষ তার প্রধান পরিচিতিকেও পালটে ফেলতে পারে। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হল বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান যখন সৃষ্টি হয় তার মূল ভিত্তি ছিল ধর্ম। অর্থাৎ, পূর্ব পাকিস্তানের লোকেদের মুল পরিচিতি ছিল তাদের ধর্ম। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই পরিচিতিই পালটে গেল ভাষাভিত্তিক পরিচিতিতে। ১৯৪৭ এ যাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানদের সঙ্গে বেশি একাত্ম বোধ করছিলেন, ১৯৭১ এ এসে তাঁরাই বাঙালি হিন্দুদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ লড়তে নামলেন। বর্তমানে আবার পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যা খবর পাই তাতে মনে হয় সেখানে আবার ধর্মই মূল পরিচিতি এবং রাজনৈতিক চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। যদি একটা চিত্রকল্প ভাবি তাহলে পরিচিতির মানচিত্র যেন একটা ফুটিফাটা জমি। কখনও ফাটলের এক দিকে থাকছে এক আর তিন আর অন্যদিকে থাকছে দুই আর চার, আবার কখনও নতুন ফাটল এসে এক আর চারকে মিলিয়ে দিচ্ছে, অন্য দিকে পড়ে থাকছে দুই আর তিন। নিচে একটি ছোট টেবিলের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। ধরা যাক, দুটি অঞ্চল আছে- উত্তর এবং দক্ষিণ, আর দুটি ধর্ম আছে হিন্দু এবং মুসলিম। দেশে উত্তর ভারতীয় হিন্দুর সংখ্যা ক, দক্ষিণ ভারতীয় হিন্দুর সংখ্যা খ, উত্তর ভারতীয় মুসলিমের সংখ্যা গ এবং দক্ষিণ ভারতীয় মুসলিমের সংখ্যা ঘ। এবার জাতীয় রাজনীতিতে উত্তর ভারতীয় পার্টি দক্ষিণ ভারতীয় পার্টির মোকাবিলা করবে, নাকি হিন্দু পার্টি ইসলামিক পার্টির মোকাবিলা করবে তা ঠিক হবে ক এর সঙ্গে গ এর জোট হচ্ছে নাকি ক এর সঙ্গে খ এর জোট হচ্ছে তার ওপর। যদি ক এর সঙ্গে গ এর জোট হয় এবং খ এর সঙ্গে ঘ এর, তাহলে দেশের মূল রাজনীতিটি হবে আঞ্চলিক পরিচিত ভিত্তিক। কিন্তু যদি ক এর সঙ্গে খ এর জোট হয় আর গ এর সঙ্গে ঘ এর, তাহলে ধর্ম হবে পরিচিতিভিত্তিক রাজনীতির চালিকা শক্তি।
| উত্তর | দক্ষিণ |
হিন্দু | ক | খ |
মুসলিম | গ | ঘ |
এখানে এসে প্রশ্ন উঠতে পারে, কীভাবে তৈরি হয় পরিচিতি তথা কোয়ালিশন? অর্থাৎ, কখন ক জোট করবে খ এর সঙ্গে আর কখনই বা সে জোট করবে গ এর সঙ্গে? এর কী কোন তত্ত্ব থাকতে পারে? এই প্রসঙ্গে আমাদের লেখা একটি গবেষণাপত্র নিয়ে আলোচনা করি যাতে এই এই প্রশ্নের একটি উত্তর আমরা খোঁজার চেষ্টা আমরা করেছি (Bhattacharya et al., 2019)। এই গবেষণাপত্রটিতে আমরা পরিচিতি নির্মাণের একটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখিয়েছি যে কোন অর্থনীতি বিভিন্ন সময়ে আকস্মিক পরিবর্তন বা শকের মধ্যে দিয়ে যায়। এই ধরণের শক এর উদাহরণ হল সবুজ বিপ্লব (প্রযুক্তিগত পরিবর্তন) বা উদারীকরণ (প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন)। এই ধরণের যেকোন আকস্মিক প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন থেকে একদল লোক লাভবান হয় আর আরেকদল লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই লাভ বা ক্ষতি কীসের ওপর নির্ভর করে? অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় কার কাছে কী ধরণের উৎপাদনের উপাদান থাকে তার ওপর। আমরা আমাদের গবেষণাপত্রে দুটি উদাহরণ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সবুজ বিপ্লব এবং উদারীকরণ। সবুজ বিপ্লবের সুফল মূলত পেয়েছে তারা, যাদের কাছে কিছু বিশেষ শস্যের উৎপাদকদের কাছে, যার মধ্যে গম অগ্রগণ্য। অন্যদিকে উদারীকরণের মূল সুফল মূলত যারা উচ্চশিক্ষিত তারাই পেয়েছে। যারা লাভবান হয় তারা চায় এই শকের ফলে সৃষ্ট যে আর্থিক বিন্যাস সেটাই বজায় থাকুক, অন্যদিকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা চায় রাষ্ট্র লাভবানদের ওপর কর বসিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিক অর্থাৎ আর্থিক পুনর্বন্টন করুক । এই প্রক্রিয়ায় লাভবান এবং ক্ষতিগ্রস্ত – এই দুই দল দুটি রাজনৈতিক কোয়ালিশন তৈরি করে। এবার লাভবান এবং ক্ষতিগ্রস্ত দল যদি ভাষা, জাতি বা ধর্ম পরিচয়ের দুটি দলে বিভক্ত থাকে তাহলে সেটাই হয় নতুন পরিচিতি। আমাদের উদাহরণে ফিরি।
প্রথমে আসি সবুজ বিপ্লবের কথায়। সবুজ বিপ্লবের পরে কোন কোন ভৌগোলিক অঞ্চল লাভবান হয় এবং কোন কোন অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের শস্য বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, আমাদের তত্ত্ব অনুযায়ী এর ফলে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উত্থান হওয়ার কথা। এবং বাস্তবত সেরকমই একটি প্যাটার্ন দেখা যায়। সবুজ বিপ্লব প্রকল্পটি অনেকগুলি পর্যায়ে নেওয়া হয় যার প্রথমটি শুরু হয় ১৯৬০-৬১ সালে। প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্পটির নাম ছিল Intensive Area Development Program (IADP) যা ১১টি রাজ্যের ১২ টি জেলায় শুরু করা হয়। এই জেলাগুলি ছিল আলিগড়(উত্তরপ্রদেশ), পালঘাট ও আলেপ্পি(কেরালা), বর্ধমান(পশ্চিমবঙ্গ), কাছাড়(আসাম), লুধিয়ানা(পাঞ্জাব), মান্ড্য(মাইসোর), রায়পুর(মধ্যপ্রদেশ), সম্বলপুর(ওড়িশা), সুরা-বালসার(গুজরাট), তাঞ্জাভুর বা তাঞ্জোর(তামিলনাড়ু) এবং পশ্চিম গোদাবরী(অন্ধ্রপ্রদেশ)। দেখা যায় যে রাজ্যগুলিতে ১৯৬০-৬১ তে সবুজ বিপ্লবের পাইলট পর্ব চালানো হয়, সেই ১২ টি রাজ্যের মধ্যে ৬টি তে (তামিলনাডু, পাঞ্জাব, কেরালা, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে) ১৯৬৭ তে কংগ্রেসকে (যা বৃহত্তর জাতীয় পরিচিতিকে ধারণ করে) হারিয়ে অ-কংগ্রেসি দলগুলি- যারা মূলতঃ বিভিন্ন আঞ্চলিক পরিচিতিকে ধারণ করে- প্রথমবারের জন্য ক্ষমতা দখল করে । ওই তালিকার অন্য একটি রাজ্য মধ্যেপ্রদেশে ১৯৭২ সালে প্রথমবারের জন্য অ-কংগ্রেসি দল ক্ষমতায় আসে। তামিলনাডুতে DMK, পাঞ্জাবে অকালি দল, কেরালায় ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী), উত্তরপ্রদেশে ভারতীয় জনসঙ্ঘ, ওড়িশায় স্বতন্ত্র পার্টি, পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্ট ১৯৬৭ তে এবং মধ্যপ্রদেশে ভারতীয় জনসঙ্ঘ ১৯৭২ এ ক্ষমতায় আসে। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত গবেষণা করেছেন আদিত্য দাশগুপ্ত (Dasgupta, 2018)। আদিত্য দেখাচ্ছেন যেসব জায়গায় সবুজ বিপ্লবের অভিঘাত বেশি সেখানে কংগ্রেসের আধিপত্য কমে স্থানীয় পার্টির নির্বাচনী উত্থান ঘটছে। তবে আদিত্য এই ফল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যে তত্ত্বের অবতারণা করেছে তা আমাদের তত্ত্বের থেকে আলাদা।
আমাদের দ্বিতীয় উদাহরণটি উদারীকরণ এবং নিম্নবর্ণীয় রাজনীতির উত্থান সংক্রান্ত। আমরা জানি যে নব্বই দশকের গোড়ার দিক থেকে বিভিন্ন দলিত এবং ওবিসি (Other Backward Class – OBC) পার্টি যেমন বহুজন সমাজ প[র্টি এবং সাবেক জনতা দল থেকে ভেঙ্গে বেরোন বিভিন্ন পার্টি নির্বাচনী সাফল্য পেতে শুরু করে। এই পার্টিগুলিকে আমরা একত্রে নিম্নবর্ণীয় দল বলে উল্লেখ করব। আমরা দেখেছি যেসব জেলায় উদারীকরণের অভিঘাত বেশি, সেখানে নিম্নবর্ণীয় পার্টিদের ভোট শতাংশও বেশি। এই ফলাফলটিও আমাদের তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদারীকরণের লাভ বেশি পেয়েছে উচ্চশিক্ষিতরা এবং উচ্চশিক্ষিতের ভাগ উচ্চবর্ণের মধ্যে অনেক বেশি। সুতরাং, বাজারের নিয়মে উদারীকরণের লাভ বেশি যাবে উচ্চবর্ণের লোকেদের কাছে। এর প্রতিক্রিয়ায় যেসব জায়গায় উদারীকরণের অভিঘাত বেশি সেইসব জায়গায় নিম্নবর্ণীয়রা রাজনৈতিক ভাবে দলবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পুনর্বন্টন চাইবে। ফলতঃ সেইসব জায়গায় নিম্নবর্ণীয় পার্টিরা রাজনৈতিক ভাবে সফল হবে।
৩
এবার আমাদের মূল বিষয় অর্থাৎ সাম্প্রতিক বাঙালি নির্যাতনের প্রসঙ্গে আসি- এইসব ঘটনাক্রমকে দেখার চেষ্টা করি আমাদের তত্ত্বের আলোতে। আমাদের গবেষণার মূল কথা হল যেকোন আকস্মিক অর্থনৈতিক অভিঘাত একধরণের অসাম্য তৈরি করে– একদল লোক সেই অভিঘাত থেকে লাভবান হয়, অন্যদল ক্ষতিগ্রস্ত। এবার লাভবান গোষ্ঠী এবং ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠী যদি দুটি আলাদা পরিচিতির মানুষ হন, তাহলে সেই পরিচিতিই রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। যদি তাঁরা দুটি আলাদা ভাষাগোষ্ঠী হন, তাহলে দেশে ভাষা রাজনীতি প্রবল হয়ে ওঠে। যদি তাঁরা দুটি আলাদা ধর্মের লোক হন, তাহলে ধর্মীয় রাজনীতি দেশে প্রধান হয়ে দাঁড়ায়।
উদারীকরণ পরবর্তী ভারতে কয়েকটি জায়গা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। শহর হিসেবে মুম্বই আগেই যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল, কিন্তু নতুন অর্থনীতির ভারতে সেটি সারা ভারতের উচ্চশিক্ষিত পেশাদারদের কাছে বিশেষ আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি উঠে এসেছে দিল্লি এবং দিল্লি সংলগ্ন নয়ডা-গুরুগ্রাম এবং অবশ্যই বেঙ্গালুরু। কিন্তু এই সব জায়গায় যে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ তার সুবিধা নিয়ে যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষিত পেশাদাররা যারা আসছেন সারা ভারত থেকেই। স্থানীয়রা তার ভাগ বিশেষ পাচ্ছেন না। অর্থাৎ, উন্নয়নের এই প্রক্রিয়া এক ধরণের অসাম্য তৈরি করছে ভূমিপুত্র এবং বহিরাগতদের মধ্যে। তারই ফলশ্রুতিতে বহিরাগত বিদ্বেষের ঘটনা বাড়ছে মুম্বই বা বেঙ্গালুরুতে এবং বেশিরভাগ সময়েই তা ঘটছে ভাষাকে কেন্দ্র করে। বড় সংঘর্ষের ঘটনা সেরকম ভাবে হয়ত ঘটছে না কিন্তু ছোট ছোট অনেক ঘটনায় তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেমন উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরে পরস্পর হাত মিলিয়েছেন মারাঠি অস্মিতা পুনরূদ্ধারের লক্ষ্যে১ । ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ আশির দশকে শিবসেনার উত্থান কিন্তু হয়েছিল এই মারাঠি পরিচিতিকে কেন্দ্র করে এবং তখন তাঁদের আক্রমনের মূল লক্ষ্য ছিল উত্তর ভারতের হিন্দিভাষী শ্রমিকরা। রাজ এবং উদ্ধবের এই মিটিং-এর খবরটি ২০২৫ এর জুলাই মাসের। এর ঠিক একমাস বাদে অভিনেত্রী কাজল একটি সাংবাদিক সন্মেলনে মারাঠি এবং ইংরিজিতে সব প্রশ্নের উত্তর দেন এবং সাংবাদিকরা তাঁকে হিন্দি বলতে বললে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন২। এই দুটি ঘটনা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক উঠলেও তা নিয়ে খুব বেশি সংবাদপত্রে খবর বেরোয় নি। কিন্তু এরকম বেশকিছু ঘটনা জুড়লে বোঝা যায় অ-হিন্দি ভাষী রাজ্যগুলিতে একটি হিন্দি বিরোধী হাওয়া আস্তে আস্তে জোরদার হচ্ছে। সাম্প্রতিক উন্নয়ন যজ্ঞের অন্য কেন্দ্র বেঙ্গালুরুতেও ছবিটা খুব আলাদা নয়। বহিরাগতদের কন্নড় বলতে হবে এই দাবী জোরালো হচ্ছে ধীরে ধীরে। সেখানেও সাম্প্রতিককালে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যার কেন্দ্রে আছে হিন্দি বিদ্বেষ। এই বছরের জানুয়ারি মাসে বিহারের দুই বাসিন্দা বেঙ্গালুরুর বুকে আক্রান্ত হয়েছেন কন্নড় বলতে না পারার কারণে৩। আমার পরিচিত কিছু বেঙ্গালুরু নিবাসী মানুষদের কাছেও বিভিন্ন ঘটনা শুনতে পাই যাতে কন্নড়ভাষীদের মধ্যে হিন্দি বিদ্বেষের ভাবটি বোঝা যায়। এখানে মনে রাখতে হবে বেঙ্গালুরু বা মুম্বইতে থাকা বাঙ্গালিরাও কিন্তু হিন্দিতেই রোজকার কাজ চালিয়ে থাকেন। তাই হিন্দি যে এক্ষেত্রে গোবলয়ের ভাষা তা নয়, এটি অ-কন্নড় বা অ-মারাঠি হওয়ার চিহ্ন। এই হিন্দি বিদ্বেষ তাই মারাঠি বা কন্নড় পরিচিতি নির্মাণের সঙ্কেত। এটি যে শুধু মহারাষ্ট্র বা কর্ণাটকের জন্য সত্যি তা নয়। দক্ষিণের বেশির ভাগ রাজ্যই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে উত্তর ভারতের তুলনায় অনেক এগিয়ে। অথচ, জনসংখ্যার নিরিখে উত্তরভারত এগিয়ে থাকার কারণে লোকসভার পরবর্তী আসন বিন্যাসের হিসেবে
লোকসভায় বেশি আসন পাবে উত্তর ভারত। বিষয়টি ভালো ভাবে বোঝার জন্য পরের মানচিত্রটি দেখুন। এখানে ২০২২-২৩ সালের রাজ্যভিত্তিক মাথাপিছু আয় (Per Capita Net State Domestic Product) প্লট করা হয়েছে (সূত্রঃ RBI Statistics on Indian States)৪ । যে রাজ্যগুলির রঙ নীল তাদের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। গাঢ় নীল হলে আরো বেশি। হলুদ হলে মাঝামাঝি, কমলা আরো কম এবং লাল সবচেয়ে কম। খেয়াল করুন মোটের ওপর কম আয়ের রাজ্যগুলি উত্তরে, বেশি আয়ের রাজ্যগুলি দক্ষিণে।
দক্ষিণের হিন্দি বিরোধিতার যে হাওয়া তা আসলে আরো বড় একটি পরিচিতি ভিত্তিক দ্বন্দ্বের সূচনা দেয়। সেই দ্বন্দ্ব হল উত্তর ভারত এবং দক্ষিণ ভারতের দ্বন্দ্ব । এই দ্বন্দ্ব বিজেপির হিন্দু পরিচিতি নির্মাণে একটি বিরাট ধাক্কা। আর ঠিক সেই কারণে বিজেপি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ধুয়ো তুলে বাঙালি নির্যাতনে নেমেছে। বিজেপির সর্বভারতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই কৌশলের লাভ অনেক। প্রথমতঃ, যে বাঙালিদের নির্যাতন করা হচ্ছে তারা মুসলমান। এর ফলে একটা অপরের নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে যার পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু পরিচিতি নির্মাণ সহজসাধ্য হয়। একই সঙ্গে এই বাঙ্গালিদের অনুপ্রবেশকারী তকমা দেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় পরিচিতির একটি অপর নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে আখেরে উত্তর-দক্ষিণের দ্বন্দ্ব ঢেকে একটি ভারতীয় পরিচিতি তৈরি করা যায়।
৪
তাহলে মূল কথা কী দাঁড়ালো? অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া উন্নতির কয়েকটি ভরকেন্দ্র তৈরি করেছে এবং উত্তরের তুলনায় উন্নয়নের কেন্দ্রগুলির অবস্থান দক্ষিণেই বেশি। অর্থাৎ, উন্নয়নের বেশির ভাগ কেন্দ্রেরই স্থানীয় ভাষা হিন্দি নয়। এই ভরকেন্দ্রগুলি সারা দেশ থেকে উচ্চশিক্ষিত মানুষদের টেনে আনছে এবং উন্নয়নের বেশির ভাগটাই এই শ্রেণীর পকেটে যাচ্ছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা স্থানীয় ভাষা বলেন না। তাই ক্রমশ ভূমিপুত্র এবং বহিরাগতদের মধ্যে একটা দন্দ্বের ভাব প্রকট হচ্ছে যা কখনও কখনও হিংসাত্মক রূপ নিচ্ছে। কিন্তু এই সমগ্র প্রক্রিয়াটি বিজেপির রাজনৈতিক প্রকল্পকে থমকে দিচ্ছে, আটকে দিচ্ছে সর্বভারতীয় হিন্দু পরিচিতি নির্মাণের প্রক্রিয়া। আমার মতে সাম্প্রতিক বাঙালি নির্যাতন উত্তর-দক্ষিণের দ্বন্দ্বকে ভেঙ্গে এক নতুন অপর এবং এক নতুন পরিচিতি নির্মাণের কৌশল। সেই অর্থে বিজেপি আলাদা করে বাঙালি বিদ্বেষী নয়। তারা যা করছে তার সবটাই সর্ব ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে গৃহীত রাজনৈতিক কৌশল। এতে বাংলা তে তারা ভোট কিছু কম পেতে পারে, আসনও কমতে পারে। কিন্তু সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে সেই ক্ষতি হল ক্যালকুলেটেড লস। আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেই হিসেবের দায় বহন করতে হচ্ছে কিছু গরিব, বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে।
বিজেপির পরিচিতি নির্মাণের এই রাজনৈতিক কৌশলকে প্রতিহত করার একটি সম্ভাব্য পথ বাঙালি পরিচিতির রাজনৈতিক নির্মাণ- যে পরিচিতির নিচে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালি জোটবদ্ধ হতে পারে। কিন্তু বাঙালি পরিচিতি নির্মাণের দুটি সমস্যা আছে। প্রথম সমস্যাটি যেকোন পরিচিতি নির্মাণের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। ঐতিহাসিক ভাবে আমরা দেখেছি যেকোন পরিচিতির নির্মাণের সঙ্গেই বিকশিত হয় তার অপর পরিচিতির প্রতি ঘৃণা – হিন্দু পরিচিতি নির্মাণের সঙ্গে অনিবার্য ভাবেই নির্মিত হয় মুসলিম ঘৃণা, বাঙালি পরিচিতির সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে হিন্দির প্রতি বিদ্বেষ বা ওড়িয়ার প্রতি তাচ্ছিল্য। পরিচিতির নির্মাণ যদি অপরের প্রতি ঘৃণা নিয়ে আসে তবে তার পক্ষে ঘৃণার রাজনীতির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বাঙালি পরিচিতি সৃজনের দ্ব্বিতীয় সমস্যাটি তুলনায় সাম্প্রতিক। উচ্চ ও মধ্যবিত্ত বাঙ্গালির একাংশের মাথায় অনুপ্রবেশ প্যারানইয়া যেভাবে গেঁড়ে বসেছে, তাতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি পরিচিতি নির্মাণ ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই প্যারানইয়ার উদাহরণ আমাদের চারপাশে প্রচুর। সম্প্রতি সেরকমই একটি খবর পড়লাম সংবাদপত্রের পাতায় (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫)৫। খবরে প্রকাশ হরিদেবপুরের এক বাসিন্দা ১০০ নম্বরে ডায়াল করে জানিয়েছেন তাঁদের পাড়ায় যে ছাতা সারাইওয়ালা ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি বাংলাদেশি। পুলিশ এসে সেই ছাতা সারাইওয়ালাকে গ্রেপ্তার করে। অর্থাৎ, অন্য রাজ্যে যে কাজ রাষ্ট্র করছে, এ রাজ্যে সেই কাজ করছে সাধারণ মানুষ, যাঁদের পরিচিতি তাঁরা বাঙালি! রাষ্ট্রের যুক্তিকে আত্মস্থ করে জনগণ যখন রাষ্ট্রের নজরদারির কাজ নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়, তার বিপদ রাষ্ট্রীয় দমনের বিপদের থেকে বহুগুণ বেশি। বাঙালি পরিচিতির রাজনৈতিক নির্মাণ কি সেই বিপদকে প্রতিহত করতে পারবে? আমরা কী সফল হব ঘৃণাহীন বাঙালি পরিচিতি নির্মাণে? এর কোনটিরই উত্তর আমার জানা নেই। কিন্তু প্রশ্নের গুরুত্ব স্বীকার করে নিলে আমরা তার উত্তরও খুঁজে পাব, এরকম আশা চিন্তা বোধকরি খুব অমূলক নয়। অন্তত সেরকম আশা রাখাই যেতে পারে।
তথ্যসূত্র
Bhattacharya, S., Mukherjee, A., Paul, S.K., 2019. Political Economy of Identity Formation: Theory and Evidence from India. https://doi.org/10.2139/ssrn.4819921
Dasgupta, A., 2018. Technological Change and Political Turnover: The Democratizing Effects of the Green Revolution in India. Am. Polit. Sci. Rev. 112, 918–938. https://doi.org/10.1017/S000305541800031X
[৪] https://rbi.org.in/Scripts/AnnualPublications.aspx?head=Handbook+of+Statistics+on+Indian+States