আপনার লোকেশন ভুল দেখাচ্ছে। আপডেট করে দেবেন। খুঁজে না পেলে রাত্তিরবেলা আমাদের অনেক ঘুরতে হয়। তার ওপর কুকুরগুলো তাড়া করে।
খাবার ডেলিভারি অ্যাপের থেকে শনিবার রাত একটার সময় খাবার দিতে এসেছিল। ইদানীং অফিসে রাতের শিফট করে করে ছুটির দিনেও মৌলিকের ঘুম তো সহজে আসতে চায় না, বরং এরকম বেশি রাতে খাওয়া অভ্যেস হয়ে গেছে। রাত বারোটা বা একটার সময় খিদেতে পেট চুঁই চুঁই করে আর ঘুম ভেঙে ভেঙে যায়। অফিসে থাকলে ক্যাফেটেরিয়া ভরসা। বাড়ি থাকলে নিদেনপক্ষে ফ্রিজ খুলে একপ্রস্থ খোঁজাখুঁজি, কিছু না পেলে মাঝরাতের অর্ডারই সই।
- আপনি তো ঠিক আছেন, কিন্তু এত রাতে যারা খাবার অর্ডার দেয় বেশিরভাগই নেশা করে থাকে। বাড়ি খুঁজে না পেয়ে ফোন করলে জড়িয়ে জড়িয়ে কথা বলে। কত তলার ফ্ল্যাট বোঝাতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ তারা গুনতে বলে।
খাবারের প্যাকেট হস্তান্তর করে বাইকে হেলান দিয়ে রাস্তার সাদাটে আলোর নীচে দাঁড়িয়ে সে হাতের তালুতে ফট ফট করে খইনি বাঁটছিল। পরের অর্ডারের ডাক আসার আগে একটু মৌতাত।
এগারোটার সময় মৌলিকের অফিসের শেষ ডিনার পাওয়া যায়। তারপর শুধু এককোণে কফি, কেক, স্যান্ডউইচ ইত্যাদির কাউন্টারে একজন বসে বাকি রাত ঝিমোয় আর খুচরো প্যাকেটের চানাচুর, মধু মেশানো ওট বার উগরে দেওয়া ভেন্ডিং যন্ত্রগুলোতে সারারাত কাঁচের ভেতর নীল আলো জ্বলে থাকে। কিউ আর স্ক্যান করে টাকা দিলেই প্যাঁচানো স্প্রিং ধাক্কা মেরে কাঙ্খিত প্যাকেটকে নীচে ফেলে দেয়।
রাতে কাজ করা বাধ্যতামূলক নয় অথচ রাতে একজন থাকলে ভালো হয়, সমুদ্রের ওপার থেকে বারো ঘণ্টা এগিয়ে থাকা দেশ থেকে ভেসে আসা এমনই অনুরোধ। এই শিফটে কেউ রাজি হলে প্রতি রাতে অতিরিক্ত টাকা, বিনামূল্যে খাবার এবং যাওয়া আসার গাড়ি পাওয়া যায়। রাত দশটা থেকে ভোর ছটা এই শিফটটাকে দিনের বেলা অফিসের বাকি সবাই বলে গোরস্থানের সময়।
মৌলিকের নিজের যতদূর মনে পড়ে দেরি করে ঘুমোতে যাওয়া শুরু হয়েছিল ক্লাস নাইন টেন থেকে। সকালে উঠতে অসুবিধা, রাত এগারোটা বারোটা অবধি জেগে পড়লে পড়া অনেক বেশি মনে থাকত। এভাবে এমনিতেই কলেজ পেরোতে না পেরোতে ঘুমের ঘড়ি রাত দেড়টা দুটো অবধি অনায়াস সরে যাওয়া। তখন থেকে সারাদিনে ভুলভাল সময়ে চোখ লেগে গেলেই রাতে ঘুম আসতে দেরী হয়। যেমন আগের অফিসে দিনে কাজ করে এসে সন্ধেবেলা একবার নিয়ম করে ঘুম পেত।
কর্তৃপক্ষর প্রস্তাব লুফে নিতে তাই মৌলিকের বেশি দেরী হয়নি। প্রথমদিকে ভেবেছিল রাত দুটো অবধি জেগে থাকা যা ভোর পাঁচটা অবধি জেগে থাকাও একই ব্যাপার।
ভোরবেলা বাড়ি ফেরার শাটল ক্যাবে নামাবার সময় মেয়েদের অফিসের নিয়ম অনুযায়ী শেষে ছাড়া যায় না। চালকের পাশে বসা নিরাপত্তারক্ষী তাদের দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে টর্চ হাতে ফিরে আসে। শেষ স্টপ তাই রোজ মৌলিকেরই। নিরাপত্তারক্ষী আর চালকেরও তাকে নামিয়ে দিয়ে রাতের ডিউটি শেষ। মৌলিক ক্যাব থেকে নেমে দরজার দিকে গেলে তারাও শান্তিতে রাতের শেষ সিগারেট ধরায়। তার পরে নিরাপত্তা কর্মীকে নামিয়ে দিয়ে চালকরা গাড়ি গ্যারেজ করে ঘুমোতে যায়। মৌলিকও কখনো কখনো ওদের সঙ্গে এই ফাঁকা রাস্তাটুকু কথা বলে। ক্যাবচালকরা বলে - এ শহরে হাওয়ায় টাকা ওড়ে। বোনের বিয়ে দিতে হবে বলে রাতের শিফট করা। টাকা বেশি পাওয়া যায়।
এখন কাঁচের দেওয়াল দিয়ে বাইরে তাকালে অফিসের গাড়ি রাখার জায়গায় চাপ চাপ অন্ধকার লেগে আছে। দিনের বেলা হই হট্টগোলে ডুবে থাকা অফিসের এই তলা সন্ধে নামলে খাঁ খাঁ তেপান্তর। এক দিকের লম্বা দেওয়ালে সারা পৃথিবীর নানা সময়রেখার ঘড়ি লাগানো। সান ফ্রান্সিসকো, ন্যু ইয়র্ক, লন্ডন, সিডনি। নিরবিচ্ছিন্ন ২৪ ঘণ্টা শ্রমের সময়। অফিসের এই তলায় যারা কাজ করে, তাদের শুধু ক্যামেরাবিহীন, পুরোনো আমলের মোবাইল নিয়ে ঢোকা নিয়ম। অন্য যাবতীয় মোবাইল বাইরে লকারে জমা রাখা। কেউ যাতে ভেতরের কোনও ছবি না তুলতে পারে সেজন্য এরকম ব্যবস্থা।
এই তলায় অফিসের আরও অনেকে রাতের কাজ করে। কিন্তু অডিটর দল থেকে মৌলিক একাই। বাকি দলদের এ সময়ে শিফট করার নানা কারণ আছে। অনেকে সহজে বিদেশে যেতে চায় বলে কয়েক বছর এই রাতের শিফটে কাজ করে। মৌলিকের জন্য সেসব প্রযোজ্য নয়।
করিডর এমনিতে অন্ধকার। হাঁটতে শুরু করলেই এক এক করে ফ্যাট ফ্যাটে সাদা আলোগুলো জ্বলে উঠতে থাকে মাথার ওপর। সরলরেখায় তারাও অনুসরণ করে মৌলিকের পায়ে চলার পথ। তারপর কিছুক্ষণ বাদে, তার অনুপস্থিতি টের পেলে আবার নিজে থেকে নিভে যায়। চারিদিকে এই কৃত্রিম আলোগুলোর জন্য যতক্ষণ মৌলিক অফিসে বসে থাকে, বুঝতেই পারে না বাইরে এখন গভীর রাত।
মাঝে মাঝে মুখে চোখে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা। কাজের ফাঁকে পুরোনো আমলের হলদেটে স্ক্রিনের মোবাইলে গান। দিনের বেলার সহকর্মীদের সারাদিনের হিসেব ঠিকঠাক অডিট করে সমুদ্রের ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া। রাত দুটোর সময় এক কাপ কফি, দু টুকরো বিস্কিট নিয়ে কয়েক মিনিটের বিরতি। সেসময় গান ছেড়ে মোবাইলে খুটখুট করে সাদাকালো সাপের খেলা। সাপ এক চৌকো ঘরে গোল গোল ঘোরে। এক একখানা কালো বিন্দু খেয়ে খেয়ে সাপ ক্রমশ লম্বা হয়। চার দেওয়ালের মধ্যে ফাঁকা জায়গা ক্রমশ সাপের জন্য ছোট হতে থাকে। দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে গেলেই খেলা শেষ।
- কুম্ভকর্ণর কথা মনে পড়ে?
- সে তো ছমাস ঘুমত, ছমাস জাগত। আমাদের মত তো নয়।
- কোনো কোনও দেশে ছমাস নাকি দিনের আলো থাকে। তারা কি করে ঘুমোয়?
- দিনের বেলা রোদে ঘুমনো যায় না। ভারী পর্দার আড়াল লাগবে।
- অসূর্যস্পশ্যা?
মৌলিক জানে রুদ্রাণী ভুল কিছু বলছেনা। আগুন আবিষ্কারের পর থেকেই সম্ভবত একদল মানুষের এরকম রাতে জেগে থাকা অভ্যেস। অথচ বাকিরা সুন্দর ঘুমোয়।
রুদ্রাণীর কাজ রাতের ফার্মেসিতে। এ অফিসপাড়া তো রাতেও ঘুমোয় না। সেজন্য ওষুধ লাগলে লেজুড় ফার্মাসিও চব্বিশ ঘণ্টা খোলা। কারুর আচমকা শরীর খারাপ লাগলে ডাক্তার, দুটো বিছানার ব্যবস্থাও আছে।
আজ প্রায় একশো দিন হল মৌলিক মাঝ দুপুরবেলা সূর্যের নীচে দাঁড়িয়ে নিজের সবথেকে ছোট ছায়া দেখতে পায়নি কারণ ওই সময়ে সে অঘোরে ঘুমোয়। মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে গেলে ভারী নীল সবুজ পর্দা সরিয়ে দেখে সূর্য একদিকে হেলে আছে। কাঁচের বাড়িদের গায়ে পিছলোচ্ছে রোদ। ছোটবেলায় পড়া ভয়ের গল্পের চরিত্রদের মত, বেশিক্ষণ সেই ঠিকরোনো রোদে দাঁড়ালে তার শরীর থেকে পোড়া ধোঁয়া, রসুনের গন্ধ বেরোতে শুরু করে এবং পায়ের ডিমে ব্যাথা। পর্দা টেনে আপাত অন্ধকারে ফিরে আসা সে মনে প্রাণে চাইছিল বাইরে ভর দুপুরের খরখরে অসহ্য আলোকে ফুঁ দিয়ে দেশলাই নেভানোর মত করে কেউ নিভিয়ে দিক।
অনেকদিন বাদে সন্ধেবেলার এক অফিস পার্টিতে গিয়ে দলের বাকি সবার সঙ্গে কথা হল। সবারই আপসোশ, মৌলিক তাদের দিনের বেলার সঙ্গ ছেড়ে রাতচরা হয়ে উঠেছে। সে দিনের বেলা ফিরতে চাইলে স্বাগত। কিন্তু সে দেখল এক সপ্তাহ রাতের বেলা কাজ তার পরের আরেক সপ্তাহ দিনের, এরকম ঘোরানো শিফট নিলে আরও অসুবিধা হয়। কদিন ওভাবে সকালে গিয়ে সে নিজেই বুঝতে পেরেছিল মাথা টলমল, যখন তখন হাই, চোখ লালচে। রাতে না ঘুমোলে, অসময়ে ঘুম তো পাবেই। ঘুমের আর দোষ কি? তার থেকে রাতের পর রাত জেগে থাকা ভাল।
কিছুদিন একটানা করার পর বমি হত রোজ ভোরের দিকে। আবার একদিন সেই রাতের ফার্মেসিতে গিয়ে হাজির। রুদ্রাণী একটানা রাতের শিফট করতে পারেনি। তার জায়গায় আজ এসময় অন্য কেউ। আর ছিল ডাক্তার।
- শরীরের একটা ঘড়ি হয়, জানেন?
- জানি। কিন্তু মানুষ তো অভ্যাসের দাস, এরকমও বলে।
- তা বলে। তবে সেটাই সব নয়।
- আপনি বলতে চাইছেন ইচ্ছে করে রাত জাগছি?
- একদম। আসলে আপনার ওটা ভাল লাগে। নেশার মতন হয়ে গেছে রাত জাগা। কাজটা অজুহাত। এখন আর আপনি ইচ্ছে করলেও দিনের বেলা জেগে থাকতে পারবেন না। কষ্ট হবে। তবে আপনার অনিদ্রা রোগ হয়নি। দিনের বেলা তো ঘুম হচ্ছে।
- হ্যাঁ দিনের বেলা সুন্দর আট ঘণ্টা ঘুম।
- আমার এককালে হসপিটালের এমারজেন্সিতে নাইট ডিউটি করা অভ্যেস। তার তুলনায় এই ফার্মেসি স্বর্গ। শুধু কি আপনি আমি? পুলিশ, দমকল, হাসপাতাল ডাক্তার, নার্স, দূরপাল্লার ট্রাক, বাস চালক। কত লোক জেগে থাকে রাতের বেলা। জেগে থাকতে হয়। অসুখের মত মানুষের অনেক কিছুই বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত। আপনার কোনও ফ্যামিলি হিস্ট্রি আছে রাত জাগার?
- বাবা রেলে ছিলেন, মাঝে মাঝে রাতের পর রাত লোকোপাইলটের কাজ করতে হত। দুরাত বাদে বাদে বাড়ি ফিরে সারাদিন ঘুমত। আর মা বলত একদম ছোটবেলায় আমি সারারাত জেগে দেয়ালা করতাম, এমনিই মাকে ঘুমোতে দিতাম না।
- কিছু সঙ্ঘ আছে। রাতে যারা ঘুমোতে পারে না তাদের জন্য। কখনো আপনাকে নিয়ে যাব। আরও অনেকের সঙ্গে আলাপ, চেনা হয়ে যাবে। ছুটির দিনে রাতে ঘুমোতে না পারলে ওখানে চলে যাবেন, সময় কেটে যাবে।
মৌলিক ডাক্তারের সামনে রাখা দুধ চিনি ছাড়া কালো কফির কাপ লক্ষ্য করছিল। ডাক্তারও বিশুদ্ধ রাতচরা। কফির নেশা আছে।
এই রাত ভোর হয়ে আসার সময়টাতেই মৌলিক দেখেছে জেগে থাকা সবথেকে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বাইরে সুপারমুন আজ। চাঁদের আলোতেও বারান্দায় পাতা বিন ব্যাগে বসে থাকা তার উজ্জ্বল ছায়া বারান্দার দেওয়ালে পড়ে। অধুনা অফিস ফ্লোরে নিয়মনীতি অনেক শিথিল। রোজ তাকে অফিস যেতেও হয় না , বাড়ি থেকে রাতে কাজ করার সুবিধা পাওয়া গেছে।
এই সবের মধ্যেই সরকার বদলে গেছে। ভোট দিনের বেলা ছিল। রাতচরাদের জন্য রাতের বেলা কোনো ভোটের ব্যবস্থা ছিল না ফলে স্বভাবতই সে ভোট দিতে পারেনি। রুদ্রাণী দিয়েছিল। কিছুদিন আগেই এই নতুন সরকার বলেছে তারা দিনে কাজের সময় আট ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে দশ ঘন্টা করে দেবে।
ডাক্তার তাকে ওষুধ হিসেবে একখানা আলোর বাক্স দিয়েছেন। যেসব দেশে শীতের সময় দিনের পর দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না , সেখানে এরকম সব বাক্স ব্যবহার করে যাদের সূর্যের আলো নিয়মিত দেখতে না পেলে মনখারাপ হয়, তারা। বাক্সটা খুলে তার মধ্যে রোদচশমা পরা মাথা ডুবিয়ে রাখলে দিনের আলোয় জেগে না থাকতে পারা জনিত দুঃখ, পুড়ে যাওয়া তারাবাজি জলভরা লোহার বালতিতে ফেলে নেভানোর মত ছ্যাঁক ছ্যাঁক আওয়াজ করে কমে যেতে থাকে। কিছুক্ষণ বাদে মৌলিক বুঝতে পারে মন হালকা হয়ে যাচ্ছে।
ঘরে একটা কাঁচের ফাঁকা চৌকো বয়াম। আগে যেখানে মাছ পুষত রুদ্রাণী, বিড়াল খেয়ে যাবার পর তার ভেতরে রুদ্রাণীর পোষা দুটো হ্যামস্টার থাকে আর কচ কচ করে সবুজ শাকপাতা খায়। এক ছোট নাগরদোলার মত হ্যামস্টার হুইলে উঠে দৌড়োয়। মাঝে নেমে এসে বিশ্রাম নেয় নারকেল পাতার মেঝের ওপর। তারপর আবার দৌড়োয়। অন্যটা কুণ্ডলী পাকিয়ে লুটোপুটি খায় ঘাসের বিছানায়। সেই সুযোগে অতিকায় চাঁদ জানলা দিয়ে ঢুকে ভেসে আসে ঘরের ভেতর। আলোকিত বয়ামের বাইরের কাঁচের দেওয়ালে এসে বসে এক মথ। বাকি রাত নিশ্চল বসে থাকে। মাঝে মাঝে সে পাখা ঝাপটায় , ঝড় ওঠে অন্য কোথাও।
পাড়ার মোড়ে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুধের গাড়ি। বাদামি প্যাকিং বাক্সে রাতের কারখানায় তৈরি ডিমের পাফ আর স্টিলের ট্রেতে সারি সারি সাদা ক্রিম রোলের মাথায় ছোট লাল বা সবুজ জেলির টিপ। একফালি জমিতে স্তূপাকৃতি স্টোন চিপস আর ইটের পাঁজার সামনে, বাঁশি বাজিয়ে আর লাঠি হাতে সারারাত কলোনিতে চক্কর কাটার পর, জেগে উঠছে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমনো রাতের পাহারাদার।
মাথার ওপর দিয়ে অবিরাম উড়োজাহাজদের আসা যাওয়া। নানা স্তরের উচ্চতায়, নানা দিকে, মসৃণ গতিতে। তারা কেউ একে অন্যের কক্ষপথে প্রবেশ করে না। তাদের মধ্যে অনেকের একটুকরো ছায়াও ভোরবেলার এই শহরের ওপর পড়ে না। কেউ উড়ে যায় এই ভোরবেলা থেকে দুপুরের দিকে, কেউ মাঝরাত থেকে সকালের দিকে নামে। এ সদাব্যস্ত শহরে বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল চব্বিশ ঘণ্টা খোলা।
মানুষ যদি কৃত্রিম আলো তৈরি করতে পারে, একদিন কৃত্রিম অন্ধকারও তৈরি করতে পারবে। হয়ত দিনের আলোয় ঘুমনোর জন্য ব্যবহার করা হবে সেইসব অন্ধকারের বাক্স।
কিন্তু আপাতত বাইরে রাতের বিশ্রাম শেষ করে একটা আস্ত শহর তার সংখ্যাগুরু অধিবাসীদের নিয়ে জেগে উঠছে। স্নান করার পর এই বিশেষ সময়ের সূর্যের আলো আঙ্গুলে স্পর্শ করতেই শরীরের নিজস্ব ঘড়ির নিয়মে মৌলিকের চোখের পাতা ভারী বোধ হয়। মাথার মধ্যে জমে থাকা ঘুমের অন্ধকার হিমবাহ গলে তুলতুলে ঘুম তার সারা শরীর জুড়ে কালো ডানা মেলে নেমে আসতে থাকে।