নরোয়র থেকে কালিঞ্জর
১৬.০১.২০ - বৃস্পতিবার: নরোয়র থেকে পৌনে তিনটের লোকাল বাসে সোয়া ঘন্টায় পৌঁছলাম করেরা। এখান থেকেই ১০.১ সকালে শুরু হয়েছিল সেবারের একাকী ভ্রমণ। করেরা থেকে ভাদিয়াকুন্ড হয়ে নরোয়র গেছিলাম ১০০ কিমি। নরোয়র থেকে ছোটখাটো জনপদ হয়ে করেরা ৩৮ কিমি। লোকাল বাস সার্ভিস মধ্যপ্রদেশের লাইফলাইন। করেরা থেকে শেয়ার অটোয় ৫০ টাকায় গেলাম ৫০ কিমি দুরে ঝাঁসি স্টেশন।
পরদিন ভোর ৭:১০ এর ঝাঁসি এলাহাবাদ প্যাসেঞ্জ্যার ধরে যাবো বান্দা জংশন। ফলে রাতটা কাটাতে হবে ১২৫ টাকায় রিটায়ারিং রুমের ডর্মে। বেডও আছে। কিন্তু ট্রেনের রিজার্ভেশন নেই। বুকিং ক্লার্ক বললেন, PNR ছাড়া RR বুক করা যায় না। জানতাম ২০০কিমির বেশী হলে তিন দিন আগে UTS টিকিট কাটা যায়। NTES এ্যাপে দেখলাম ঝাঁসি থেকে বান্দা ১৯২ কিমি। তাই ৪৫ টাকা দিয়ে ২০২ কিমি দূরবর্তী 'দিনগয়াহি'র টিকিট কেটে বুকিং ক্লার্ককে গিয়ে বলি, Travel Authority চাই তো, এই নিন। তিনি বলেন, ভালো আইডিয়া লাগালেন তো! জুতোর ফিতের বাজেটে একাকী ভ্রমণে এহেন সব আইডিয়া জরুরি - ট্রেনে বা গাড়িতে রিজার্ভ করে ঘুরলে জরুরৎ নেই। বুকিং ক্লার্ক নিয়মের দাস, আমার সহায় চালাকফোন। সেই জানালো 'দিনগয়াহি' স্টেশনের টিকিট কাটলে ঝাঁসিতে রাত গুজারতে পারো।
রিটায়ারিং রুমের মহিলা এ্যাটেন্ডান্টের কাছে সকালের ট্রেনের খোঁজ নিতে বললেন, খুব ভীড় হয়, এক ঘন্টা আগে মাঝের লাইনে দেয় ট্রেনটা, তখনই ভর্তি হয়ে যায়। কয়েকবার ধোঁকা খেয়ে এসব খবর দুবার যাচাই করি। স্টেশনে RPF গার্ড বললেন, এমন কিছু ভীড় হয় না। পরদিন ছটায় গিয়ে দেখি ১নং প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে ৫১৮১৮ ঝাঁসি খাজুরাহো প্যাসেঞ্জ্যার। ছাড়বে ৬:৫০. ভাবি এটা গেলে হয়তো দেবে ৭:১০ এর ৫৪১৫৯ ঝাঁসি এলাহাবাদ প্যাসেঞ্জার। দুবার জিজ্ঞাসা করার স্বভাবে এক চাওলাকে শুধিয়ে বুঝি - দুটো মিলিয়ে একই ট্রেন। ছাড়বে ৭:১০এই। পেছনের ঝাঁসি - খাজুরাহো পাঁচটা বগি টিকটিকির ল্যাজ খসার মতো কেটে যাবে মাহোবা জংশনে। সামনের পাঁচটা বগি চলে যাবে এলাহাবাদ। ভাগ্যিস জিজ্ঞেস করলাম। ৮নং বগিতে গিয়ে বসি। প্রায় খালি। সারা পথে চা এলো না তবে ৫ টাকায় মশলাদার ছোলা ভিজে ও ১০ টাকায় চটপটা মটর সেদ্ধ খেয়ে ১৫ টাকায় চলন্ত ট্রেনে পৌষ্টিক প্রাতরাশ হোলো।
ট্রেন বান্দা পৌঁছালো এক ঘন্টা লেটে। বান্দা থেকে UPSRTC এর যে দূরপাল্লার লোকাল বাসে চাপলাম তার চালকের মনে হয় গুরুর বারণ আছে তিরিশের বেশী না তোলার। বা বাসেই কিছু গণ্ডগোল ছিল। সোয়া একটায় ছেড়ে, মাঝপথে নারেইনিতে খানিক জিরিয়ে, সে বাস ৫৭ কিমি দূরে কালিঞ্জর তলহট্টি (পাহাড়ের পাদদেশ) পৌঁছালো চার ঘন্টায়। হোমওয়ার্কের ফলে জানতাম ছোট্ট গাঁও কালিঞ্জরে কোনো থাকার জায়গা নেই। পর্যটকরা ১০০কিমি দুরে খাজুরাহো থেকে রিজার্ভ গাড়িতে দিনে দিনে ঘুরে চলে যায়। তলহট্টি থেকে ছশো ফুট উঁচু পাহাড়ের মাথায় কালিঞ্জর কেল্লার গেট অবধি তিন কিমি। সুন্দর গাড়ি চলার পথ। নরোয়র কেল্লার গেটের গঠনই এমন, ভেতরে গাড়ি যাওয়ার উপায় নেই। কালিঞ্জর কেল্লা ASI এর অধীনে। নরোয়রের মতো ভগ্নদশা নয়। কেল্লার মধ্যেও গাড়ি চলার পথ আছে। সুতরাং গাড়িতে বেড়ানোর অসুবিধা নেই।
সকাল থেকে চা খাওয়া হয়নি। যেখানে বাস থেমেছিল সেখান থেকে পাহাড়ে ওঠার পথ শুরু আধা কিমি দুরে। ওখানে একটা চায়ের দোকান দেখে বসি। ঐ পাহাড়ে বুকে পিঠে মিলিয়ে ১৬ কিলোর দুটো স্যাক নিয়ে উঠতে ভেবে একটু দমে যাই। দোকানীকে বলি ওপরে কোনো গাড়ি যায়না? সে বলে, আপনি এখন ওখানে যাবেন, ইস, একটু আগে পূজারীজি গেলেন জীপে। বললে আপনাকে নিয়ে যেতেন। সকালের দিকে তবু কেউ যায়, এখন সাড়ে চারটে বাজে, এখন কী আর কেউ যাবে, তবু অপেক্ষা করে দেখুন, যদি কেউ যায়।
চা খেয়ে হাঁটা দিই। অপেক্ষা করার থেকে চলতে থাকা ভালো। যদি কোনো গাড়ি যায়, চাইলে লিফট দিতে পারে। ভালো চড়াই। কয়েকবার দাঁড়িয়ে দম নিয়ে গেটে পৌঁছলাম সাড়ে পাঁচটায়। জানুয়ারির ঠান্ডাতেও জামা ভিজে গেছে ঘামে। গেটের গার্ড আমায় কোঁতাতে কোঁতাতে আসতে দেখে কৌতুহলী চোখে দেখে। স্যাক নামিয়ে আলাপ করি বছর সাতাশের গার্ড অজয়ের সাথে। যখন শোনে কলকাতা থেকে প্রায় ষাটের এক বুড়ো সকাল ছটায় ঝাঁসি থেকে বেরিয়ে পড়ন্ত বিকেলে তিন কিমি হেঁটে এসেছে কালিঞ্জর কেল্লা দেখতে - দৃশ্যত অত্যন্ত অবাক এবং বেশ বিচলিত হয়ে পড়ে বলে, বাবুজী, আপনি এখন এলেন! ছটায় তো গেট বন্ধ হয়ে যায়। সাড়ে পাঁচটার পর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
রাত্রিবাসের জুগাড়ী আইডিয়া
গেটের পাশে ৮x৮ সিকিউরিটি কেবিনটা দেখেই মাথায় আইডিয়া স্পার্ক মেরেছে। বলি, এখন ঢুকবো না তো, রাতটা এখানেই কাটিয়ে, সকালে ঢুকবো ভেতরে। অজয় বলে, এখানে থাকার জায়গা বলতে কেল্লার মধ্যে ডাকবাংলো, তার বুকিং হয় বান্দার কলেক্টর অফিস থেকে। চৌকিদার থাকে নীচে। কারুর বুকিং থাকলে তবেই খবর পেয়ে আসে, আমাদেরকেও বলে যায়। আমাদের কাছে কোনো খবর নেই কেউ আসবে? বলি, ডাকবাংলোর বুকিং তো আমার নেই। অজয় বলে, তাহলে কোথায় থাকবেন? সিকিউরিটি কেবিনটা দেখিয়ে বলি, রাতটা না হয় ওখানেই কাটিয়ে দেবো। এমন অদ্ভুত কথা মনে হয় অজয় সেযাবৎ শোনেনি। বলে, ওখানে থাকবেন!? না বাবুজী তা হয় না। এই কেল্লা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একবার রাতে এখান থেকে মূর্তি চুরির চেষ্টা হয়েছিল। সেই থেকে সিকিউরিটি খুব টাইট। ছটার পর এখানে কাউকে থাকতে দেওয়া হয় না।
বলি, আমায় দেখে কী তোমার মূর্তিচোর মনে হচ্ছে? অজয় অসহায় ভঙ্গিতে বলে, ছি ছি বাবুজী, তা নয়, আপনি কেন বুঝতে পারছেন না, এভাবে আপনি এখানে থাকতে পারেন না। CCTV লাগানো আছে। আমার ওপরওলা জানতে পারলে চাকরি যাবে। অজয়ের সাথে কথার মাঝে বাইকে ওরই বয়সী একটি ছেলে এলো নীচে থেকে আর একজনকে নিয়ে। ওঠার সময় দেখেছি এই বাইকটা নামছিল। ওরাও ASI গার্ড। ওর ডিউটি ছিল দিনে। দিনের এক গার্ডকে নীচে ছেড়ে ও অজয়ের জোড়িদার রাতের গার্ডকে আনতে গেছিলো।
অজয় ওকে বলে, শোন বাবুজী কী বলছেন? সে বলে, তাহলে আপনিই আসছিলেন দুটো স্যাক নিয়ে! আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলাম, এই অবেলায় কে আসছে এভাবে। সে বলে, বাবুজী, অজয় ঠিকই বলছে, আপনি এখানে থাকতে পারেন না। আমার ডিউটি শেষ, নীচে যাচ্ছি, আপনি আমার সাথে চলুন, আমার ঘরে থাকবেন, আমার রুমমেট দেশে গেছে, ওর খাটে শুয়ে পড়বেন। বলি, আমি তো ভাই নীচে যাওয়ার জন্য এতোটা উঠিনি, নীচে আমি যাবোনা।
কথাটা নিজের কানেই CAA-NRC নিয়ে হৈচৈয়ের সময় স্ট্যান্ড আপ কবি বরুণ গ্ৰোভারের প্রতিবাদী কবিতা -"হম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে" গোছের শোনালো। তার অনুরণনে "কাগজ আমরা দেখাবো না" শিরোনামে তখন বাংলার কিছু সেলিব্রেটিও ভিডিওতে কবিতার ভাষায় প্রতিবাদ করেছিলেন - স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, কঙ্কনা সেনশর্মা, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আমিও এমন অনড় মনোভাব নেওয়ায় বেচারা অজয় বেশ বিরম্বনায় পড়ে যায়। বলি, তোমার ওপরওয়ালাকে ফোন করে আমার সাথে কথা বলাও না। বলো, লোকটা নাছোড়, জিদ ধরে আছে রাতে এখানেই থাকবে। তিনি যদি না বলেন, চলে যাবো।
কথাটা মনে ধরে অজয়ের। ফোন লাগিয়ে আমায় দেয়। এমন ক্ষেত্রে আমি দুটো পদ্ধতি অবলম্বন করি। এক - এ্যাঁ, ও, ইয়ে, মানে বর্জিত, শ্রাবন্তী মজুমদারের মতো পরিস্কার স্বরে কিন্তু দ্রুত লয়ে একটা সেলফ ইন্ট্রোডাকশন দিই। যাতে সামনের লোক বেশী এদিক ওদিক ভাবার সুযোগ না পায়। তাতে সংক্ষেপে হাইলাইটিত হয় আমার প্রেক্ষাপট, কোথায়, কী পদে কাজ করেছি এবং তা সত্ত্বেও কেন সিকিউরিটি কেবিনে রাত কাটাতে চাইছি। দেখেছি এই কনট্রাস্টই অনেককে বিহ্বল করে দেয়। দুই - ক্ষেত্র বিশেষে ইন্ট্রোটা দিই ইংরেজিতে। তিনশো বছরের কলোনিয়াল লিগেসির ফলে এখনো প্রত্যন্ত এলাকায় অনেকে ভাবে - যে লোক ইংরেজিতে গড়গড়িয়ে সেলফ্ ইন্ট্রো দেয় - সে নিশ্চয়ই "পড়ে লিখে আদমি" - চোর, ছ্যাঁচোর নয়। জন্মগত আপতনে পাওয়া বদনে ইনট্রোটা সামনাসামনি দিলে ইমপ্যাক্ট আর একটু ভালো হয়। যেমন হয়েছিল গোপেশ্বরে কেদারনাথজীর ক্ষেত্রে (এই সিরিজের ৪নং লেখা)। ভাগ্যিস অনেকেই চার্লস শোভরাজের কথা জানে না।
এক্ষেত্রে অজয়ের ওপরওয়ালা সুশীল ভার্গভ, আমায় না দেখে, ফোনে কথা শুনেই নরম হয়ে বলেন, কিন্তু এই ঠান্ডায় ঐ ছোট্ট সিকিউরিটি কেবিনে আপনি শোবেন কী করে? তাকে শোনাই পুরোনো কাসুন্দি, ধূবেলায় দরগাহর চাচাকে যা শুনিয়েছিলাম (এই সিরিজের ৩ নং পর্ব)। বলি, সুশীলজী আমি মাউন্টেনিয়ারিং ট্রেনিং নিয়েছি। পশ্চিমঘাট পর্বতমালায়, পুরুলিয়ায় ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং প্র্যাকটিসে গিয়ে গুহায়, মন্দিরের চবুতরায়, পরিত্যক্ত মাটির স্কুল বাড়িতে বা আকাশের নীচে প্লাস্টিক শীটের সারভাইভাল শেল্টারে রাত কাটিয়েছি। সে তুলনায় এই পাকা সিকিউরিটি কেবিন তো স্বর্গ। এতো গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক স্থান যখন দুজন নাইট গার্ড নিশ্চয়ই রাতে ঐ কেবিনে ঢুকে ডিউটি করবে না। ওটা কেবল বৃষ্টিতে সাময়িক আশ্রয়ের জন্য, তাই না। আমার জন্য চিন্তা করবেন না, I am fully equipped. প্রয়োজন শুধু আপনার অনুমতির। সুশীল বলেন, ঠিক আছে, অজয়কে ফোনটা দিন। বলি, স্পীকার অন আছে, ও পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনেছে। সুশীল বলেন, অজয়, উনকো রহেনো দো। অজয় বলে, জী স্যার। সুশীল বলেন, মুখার্জীসাব, আমি কেল্লার ভেতরে আমন সিং মহলে আছি, কালও সারাদিন ওখানে থাকবো। আপনার সুবিধামতো আসবেন একবার, আলাপ করতে চাই।
সুশীল ভার্গভের বদান্যতায় দুটি রাত নিখরচায় কাটলো সিকিউরিটি কেবিনে। পিছনে টিকিটঘর।
ফোন শেষ হতে অজয় নিমেষে অন্য মানুষ। বলে, বাবুজী, স্যার অনুমতি দিলেন, আর আমার চিন্তা নেই। সত্যি, আমার খুব খারাপ লাগছিল আপনাকে চলে যেতে বলতে। কিন্তু কী করি বলুন, আমি সামান্য গার্ড। বলি, তুমি তোমার ডিউটি করেছো অজয়। আমি কিছু মনে করিনি। এবার দেখাও তো কেবিনটা, আর খাবার জল কোথায় পাবো বলো। সুশীলের সাথে কথার পরিণতি দেখার জন্য দিনের গার্ডটি বাইকে অপেক্ষা করছিল। অনুমতি পেতে, সে বলে, আপনি কেন এখানে থাকতে চাইছেন জানি না। নীচে আমার ঘরে আরামে থাকতে পারতেন, কাল আমি যখন ডিউটি করতে আসতাম, আমার সাথে চলে আসতেন। তবে এখানেই যখন থাকবেন ঠিক করেছেন, তাহলে আমি যাই? নিজের সাথে কিছু বোঝাপড়া অন্যকে বোঝানো মুশকিল। এবং অপ্রয়োজনীয়। বলি, তুমি যে তোমাদের ঘরে আমায় থাকতে বললে, তাতেই আমি খুব খুশী হয়েছি। সুশীলজী রাজি না হলে, যেতামও তোমার সাথে। তা উনি যখন অনুমতি দিলেন, এখানেই থেকে যাই, ভোরবেলাটা দেখা যাবে। তুমি এসো ভাই, কিছু মনে কোরো না, কাল দেখা হবে। ছেলেটি চলে যায়।
অজয়ের জোড়িদার সুভাষ আমার বোতলে জল ভরে এনে পাশে একটা গাছের তলায় আগুন জ্বালতে যায়। রাতে ওরা আগুনের পাশে বসবে। ওখানে হাওয়া একটু কম। কেবিনের একপাশে একটা বিছানা রোল করা ছিল। বলি, সারারাত জেগে থাকা তো মুশকিল, তোমরা হয়তো পালা করে একটু ঝপকি নিতে, আমার জন্য অসুবিধা হয়ে গেল। অজয় বলে, ঠিক বলেছেন, তবে CCTV আছে, দুজনে একসাথে গেট ছেড়ে যাওয়া যায় না। আপনি থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। একপাশে একজন একটু ঝপকি নিয়ে নেবে। অজয় মেঝে জুড়ে চাটাই, কম্বল বিছিয়ে দেয়। তার ওপর আমি পাতি আমার প্লাস্টিক শিট, ম্যাট, চাদর। আশাতীত ভালো বিছানা হয়ে গেল। অজয় গায়ে দেওয়ার কম্বলও দিতে চাইছিল। তার প্রয়োজন নেই, দুটো ফ্লিস ব্ল্যাঙ্কেট আছে আমার, ঐ যথেষ্ট।
বিছানা করে আগুনের ধারে গিয়ে বসি। সবে সাতটা বাজে। বলি, অজয় একটু চা হলে কেমন হয়। অজয় বলে, খুবই ভালো হয়, কিন্তু চায়ের যোগাড় তো নেই, তাহলে বাইকে নীচে যেতে হয়। বলি, আমার কাছে সব আছে, তুমি শুধু একটু জল আর তোমাদের জন্য দুটো কাপ বা গেলাস নিয়ে এসো, আমার একটাই গেলাস। অজয় রীতিমতো পুলকিত হয়। মেসটিন, চা, চিনি, গুঁড়ো দুধ সব ছিলো। ঐ মেসটিনটার সাথে কিছু নস্টালজিয়া জড়িয়ে আছে।
৮৪তে কলকাতায় আলাপ হয়েছিল পর্বতারোহন মহলে এক সুপরিচিত পর্বতারোহীর সাথে - বলাইদা (নাম পরিবর্তিত)। উনিই আমাদের বিয়ের উদ্যোক্তা। ২০১৩তে বলাইদা কলকাতার পর্বতারোহন মহলে আমার পরিচিত দুই দাদাস্থানীয়কে নিয়ে নভী মুম্বাইয়ে আমাদের খারঘরের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তখন আমি ওখানে একাই ছিলাম। আমিই আমন্ত্রণ করেছিলাম। সেবার আমার পুঁচকে মারুতি ৮০০ গাড়িতে আমরা চারজন আটদিন ধরে পশ্চিমঘাট পর্বতে ১১০০ কিমি ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। সে এক স্বপ্নিল ভ্রমণ। সেবারই যাওয়ার আগে বলাইদা ঐ মেসটিনটা আমায় দিয়ে যান স্যূভেনির হিসেবে। ওটা ওনার সাথে পুরুলিয়ায় শৈলারোহণে, হিমালয়ে বহু জায়গায় ট্রেকিং, অভিযানে গেছে। আমার কাছে ওটা একটা হেরিটেজ আইটেম। ২০১৩ থেকে ওটা আমার সাথেও ঘুরেছে অনেক জায়গায়। মেসটিনে জল নিয়ে চাপাই কাঠের আগুনে। বিকেলে এখানে এসে দেখেছি একটি বিস্কুট রঙের মামিডগি আর তার দুটো ছেনু। ছেনুদুটো উত্তাপ নিতে আগুনের পাশে এসে শোয়।
হেরিটেজ মেসটিনে চা হবেছেনু দুটোর মা
বড় করে চা বানিয়ে তিনজনে বসি আগুন ঘিরে। অজয় বলে, বাবুজী, আপনি রাতে কী খাবেন? বলি, এই মেসটিনে দু প্যাকেট ম্যাগী বানিয়ে নেবো। সব জোগাড় আছে আমার কাছে, তাই তো স্যাক একটু ভারী হয়ে যায়। অজয় বলে, ম্যাগী না হয় সকালে খাবেন, আজ রাতে আমার বৌয়ের করা রুটি সবজি খেয়ে দেখুন। বলি, তাহলে তুমি কী খাবে? ও বলে, আজ তেমন ক্ষিধে নেই। সুভাষের কাছেও টিফিন আছে। ওতেই আমাদের হয়ে যাবে, আপনার যতটা ইচ্ছে খান। বলি, বেশ তাই হবে। তবে এতো তাড়াতাড়ি নয়, মাঝরাতে ক্ষিধে পেয়ে যাবে।
চা খেয়ে সুভাষ যায় মেসটিন, গেলাস ধুতে। বারণ করি, শোনে না।
আমি গেটের সামনে চত্বরে একটু এপাশ ওপাশ ঘুরি। কুকুর মানুষ ঘেঁষা প্রাণী। মামি ডগিটা আমার পাশে পাশে আসে, মুখের দিকে কৌতুহলী চোখে তাকায়, ভাবখানা, তুমি কে গো, আগে তো দেখিনি? অনেকটা নীচে কালিঞ্জর তলহট্টি। ছোট্ট জনপদ। তাই বড় শহরের মতো আলোর রোশনাই নেই। আকাশে চাঁদ নেই। ঘন অন্ধকারে নীচে পিটপিট করছে কিছু আলো। নটা নাগাদ অজয়ের বৌয়ের করা তিনটে রুটি আলু পালকের সবজি দিয়ে খাই। বাকি তিনটে রেখে দিই ওর জন্য। ভালো স্বাদ। বছরখানেক বিয়ে হয়েছে। বৌয়ের রান্নার প্রশংসা শুনে দৃশ্যত খুশী হয়। সেই ভোরে উঠেছি। দুশো কিমি প্যাসেঞ্জ্যার ট্রেনে, ষাট কিমি ঢ্যাকারাম বাসে, তিন কিমি হেঁটে ছশো ফুট চড়াই ভেঙে এসেছি। এবার ক্লান্তি টের পাই। বলি, অজয়, আমি তাহলে শুয়ে পড়ছি। ও বলে, হ্যাঁ বাবুজী, আপনি নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়ুন, দরজাটা ভেজিয়ে দিন, খিল দিতে হবে না, আমরা আছি।
সবে ঘুম এসেছিল। তবে আমার ঘুম পাতলা। দরজায় খুরখুর আওয়াজে চোখ মেলি। চত্বরের জোরালো আলোয় দেখি মামিডগিটা ছেনুদুটোকে নিয়ে ভেতরে ঢোকার জন্য মাথা দিয়ে দরজা ফাঁক করে ভেতরে আমায় দেখে থমকে গেছে। আমি অজয়কে আওয়াজ দিই। ও এসে বলে, ভালো ঠান্ডা পড়েছে তো, এরা অন্যদিন ভেতরে ঢুকে শোয়, তাই আজও এসেছিল। ও ওদের তাড়াতে যায়। বলি, তা আসুক না, এক কোনে শুয়ে থাকবে। অজয় বলে, এরা খুব ভদ্র, আপনাকে বিরক্ত করবে না। মামি ডগিটার মুখভাবে মনে হয় যেন বলতে চাইছে, আমি না হয় আগুনের পাশে রাতটা কাটিয়ে দেবো, ছেনুদুটোকে এখানে থাকতে দাও প্লিজ। অজয় গেট ফাঁক করে তিনটেকেই ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা টেনে দেয়। কাল সবে পৌষ সংক্রান্তি গেছে। পাহাড়ের মাথায় ফাঁকা জায়গা। বেশ ঠান্ডা। মোবাইল টর্চ মেরে দেখি এক কোনে ওরা গুটিশুটি মেরে শুয়েছে। মামি ডগিটার চোখে মুখে কৃতজ্ঞতা যেন চুঁইয়ে পড়ছে। ছোট্ট কেবিনে তিনটি সারমেয় সাহচর্যে একটি ক্লান্ত মানুষ পাশ ফিরে শোয়। একটু বাদেই আবার ঘুমে তলিয়ে যায় সে।
কেল্লার প্রেক্ষাপট
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জ্ঞাপনের আগে পাখির চোখে কেল্লার ভৌগোলিক অবস্থানটি বুঝে নিলে সুবিধা হবে।
S-যেখান থেকে পাহাড়ে ওঠা শুরু করেছিলাম 1-হনুমান গেট, যেখান দিয়ে কেল্লায় ঢুকেছিলাম 2-যেখানে সিকিউরিটি কেবিনে দু রাত ছিলাম 3-বড়া দরওয়াজা 4-কোটি তীর্থ তালাও ও সংলগ্ন আমন মহল 5-ডাকবাংলো 6-রাম কটোরা তালাও 7-নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির 8-রেওয়া গেট 9-মাণ্ডুক ভৈরব। 10-বুড্ঢা বুড্ঢি তাল 11-শনিচার তাল 12-ভেঙ্কট বিহারী মন্দির, রাণী মহলকেল্লার উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের ক্লোজ আপ (লেবেলিং নম্বর গুলি একই) আগের ম্যাপে 2 চিহ্নিত স্থানের ক্লোজ আপ। SC - সিকিউরিটি কেবিন। যেখানে দু রাত ছিলাম। OBC- পুরোনো বুকিং কাউন্টার যেখানে টয়লেট ছিল না। NBC- পরে নির্মিত নতুন বড় বুকিং কাউন্টার ও টয়লেট কমপ্লেক্সতৃতীয় শতাব্দীতে গুপ্ত রাজবংশ থেকে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ গ্যারিসন হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ইস্তক - ১৫০০ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে নানা শাসনের দখলে থেকেছে কালিঞ্জর কেল্লা। দুর্গটি কবে নির্মিত হয়েছিল সঠিক জানা যায় না। তবে আগ্রা এবং অউধের ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে উল্লেখ আছে গুপ্ত রাজবংশের সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে কালিঞ্জার দুর্গ জয় করেছিলেন। ASIএর প্রতিষ্ঠাতা আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম কালিঞ্জর কেল্লার প্রাচীনত্ব ও গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর মতে এই কেল্লার নির্মাণ হয় ২৪৯ খ্রিস্টাব্দে। শিবের আর এক নাম কালিঞ্জর (কাল = সময়, জর = ক্ষয়) অর্থাৎ 'সময় ক্ষয়কারী' বা কালজয়ী। কথিত আছে সমূদ্রমন্থনে ওঠা হলাহল পান করে কন্ঠ নীল হয়ে যেতে শিব এখানে এসে সময়কে পরাস্ত করে মৃত্যুকে জয় করেছিলেন। তাই কালিঞ্জর কেল্লা বলতে কালজয়ী কেল্লাও বোঝায়।
কালিঞ্জর কেল্লা নবম থেকে ত্রয়োদশ শতকের মধ্যে চান্দেলা শাসনকালে বিশিষ্টতা লাভ করে। ঐ সময়কালেই তৈরী হয় নিকটবর্তী খাজুরাহো মন্দির সমূহ। চান্দেলা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা যশোবর্মন তাঁর শাসনকালে (৯২৫-৯৫০) কালিঞ্জর দুর্গ জয় করেন, তবে জানা যায় না, কাদের থেকে। তাঁর রাজধানী ছিল খাজুরাহো। তিনিই সেখানে বিখ্যাত লক্ষ্মণ মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন।
১০২৩ খ্রিস্টাব্দে দশমবার ভারত আক্রমণে এসে গজনীর মাহমুদ কালিঞ্জর কেল্লা আক্রমণ করে, প্রচুর লুন্ঠন করে গজনী ফিরে যান। লুন্ঠিত কেল্লার পুনর্দখল নেন চান্দেলা শাসক। ১২০২ সালে কুতুবুদ্দিন আইবক চান্দেলারাজ পারমারদি দেবকে পরাজিত করে কেল্লাটিকে দিল্লি সুলতানেতের অধীনস্থ করেন। কিন্তু ১২১০-১১ সালে আরাম শাহের দুর্বল রাজত্বকালে চান্দেলারাজ এটি পুনরায় দখল করেন।
১৫৪৪ সালের নভেম্বরে দিল্লির আফগান শাসক শের শাহ সুরি কালিঞ্জর কেল্লা জয় করতে বছরখানেক অবরোধ করে রাখেন (Siege tactics)। ২২শে মে ১৫৪৫, নীচ থেকে কামানের গোলা ছুঁড়তে গিয়ে সেটি পড়ে শিবিরে বারুদের গাদায়, হয় প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান শের শাহ। সেই বছরেই শের শাহ পুত্র ইসলাম শাহ দুর্গটি দখল করে কেল্লাবাসী সবাইকে হত্যা করেন। ১৫৬৯ সালে আকবর দুর্গটি দখল করে তাঁর প্রিয় সভাসদ বীরবলকে জায়গির হিসাবে উপহার দেন। বীরবল আমৃত্যু (১৫৮৬) কালিঞ্জর জায়গির ভোগ করেন। বীরবলের অধীনে কালিঞ্জর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।
১৬৮৮ সালে বুন্দেলারাজ ছত্রশাল, মুঘলদের থেকে দুর্গটি দখল করেন। ১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বাহাদুর শাহ (প্রথম) উত্তরাধিকারী সম্রাট হিসেবে কালিঞ্জর কেল্লা খাতায় কলমে ছত্রশালকে প্রদান করেন। কর্নেল মার্টিনডেলের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী ১৮১২ সালে দুর্গ আক্রমণ করলে বুন্দেলারা আত্মসমর্পণ করে। ব্রিটিশ ফৌজ কেল্লায় তাদের সৈন্য মোতায়েন করে। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সময়, ভারতীয় বিপ্লবীরা দুর্গটি জয় করতে কয়েকবার প্রচেষ্টা করেছিল, কিন্তু কালিঞ্জরের দুর্ভেদ্য দেয়াল ভেদ করতে পারে নি। সিপাহী বিদ্রোহের সময় কালিঞ্জর কেল্লা বান্দা জেলার একমাত্র জায়গা যা ব্রিটিশদের দখলে ছিল। কেল্লায় ব্রিটিশ কবরস্থানে শুয়ে আছেন বুন্দেলখণ্ডের প্রথম কমিশনার অ্যান্ড্রু ওয়াউচোপ। ১৯০৪ সাল থেকে দুর্গটি ASI এর অধীনে। দুর্গে মন্দির, পুকুর, মসজিদ, সমাধি ও একাধিক প্রাসাদ আছে। দুর্গে যাওয়ার বেশ কয়েকটি প্রবেশদ্বার ছিল। সুরক্ষার কারণে এখন দুটি মাত্র খোলা। বাকিগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বিশ্বাসে কোটি-তীর্থ জলাশয়ে স্নানে কুষ্ঠরোগের নিরাময় হোতো। কালিঞ্জর দুর্গে জড়িয়ে আছে এহেন নানা ইতিহাস। তবে প্রতি বছর যত পর্যটক খাজুরাহো যায় তার সামান্য ভগ্নাংশও এখানে বা ধূবেলায় আসে না।
কালিঞ্জর কেল্লা দর্শন
সকালে কাঠের আগুনে চা বানিয়ে বিস্কুট দিয়ে খাই। ওরা নেয় না। একটু বাদেই চলে যাবে নীচে। তখন ওখানে জলের ব্যবস্থা থাকলেও টয়লেট ছিল না। বছর দুয়েক পরে হয়েছে। বড় স্যাকটা কেবিনে রেখে ন্যাপস্যাক নিয়ে হাঁটা দিই। ২৫ টাকা টিকিটও লাগে না। ঝোপঝাড় দেখে হালকা হই। টিস্যু দিয়ে ফিনিশিং টাচ দিই। যৌবনে পুরুলিয়ায় বা চুয়ান্নতেও মহারাষ্ট্রে পশ্চিমঘাটে হিল ফোর্ট ট্রেকিংয়ে যাওয়ার অভ্যাসে বিরান জায়গায় আমার টয়লেট না হলেও চলে। ১৬ তারিখ নরোয়রে লজে চান করে বেরিয়েছি। পরবর্তী চান হবে ১৯ তারিখ পান্নায় লজে গিয়ে। শীতে কিছু এসেও যায় না। হিমালয়ে কয়েকবার ট্রেকিংয়ে গিয়ে দিন দশ বারো চান না করেই কেটে গেছে। এসব মানসিক বাধা থাকলে এভাবে বেরোনো যায় না।
প্রায় ছয় কিমি পরিসীমার বেলে পাথরে তৈরী দুর্গ প্রাচীরে ১৩ থেকে ২৬ ফুট চওড়া ও ১৬ থেকে ৪০ ফুট উঁচু মুখ্য প্রবেশপথ "বড় দরওয়াজা" মুঘল স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন। এটি কেল্লার উত্তর দিকে পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত প্রাচীরের মাঝামাঝি কালিঞ্জরের দিকে। অন্য মূখ্য গেটটি দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পান্নার দিকে তাই ওটার নাম পান্না গেট তবে এখন বন্ধ। আমি এসেছি কেল্লার উত্তর-পূর্ব কোনে হনুমান মন্দির গেট দিয়ে। ঐ পথেই একমাত্র গাড়ি আসতে পারে। এছাড়াও কেল্লা প্রাচীরে আছে আলম, গণেশ, চণ্ডী, বুদ্ধভদ্র, লাল, রেওয়া দরওয়াজা ইত্যাদি প্রবেশপথ। অধিকাংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রেওয়া দরওয়াজাটি ছোট। ওটা এখনও খোলা কিন্তু ওদিকে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে গেছে, পাকদণ্ডী পথও ব্যবহারের অভাবে দূর্গম। এছাড়া নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দিরের কাছেই কেল্লার পশ্চিম প্রাচীরে একটা ছোট দরওয়াজা আছে - কটরা গেট - কেবল ভক্তদের আসার জন্য। ও পথে কটরা কালিঞ্জর গাঁও থেকে দু কিমি হেঁটে ও শেষটা সিঁড়ি ভেঙে সরাসরি উঠে আসা যায় মন্দিরে। পূব দিক দিয়ে হনুমান দরওয়াজা হয়ে আসলে প্রায় সাত কিমি পথ। কটরা দরওয়াজা সকালে খোলে ও সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যায় এখানেই একবার চুরির চেষ্টা হয়েছিল বলে রাতে দুজন প্রহরী থাকে।
বড়া দরওয়াজা বড়া দরওয়াজার ওপর থেকে দেখা গেল কাল বিকেলে উত্তরপ্রদেশের কালিঞ্জর থেকে বাঁক মেরে মধ্যপ্রদেশের নরদাহার দিকে চলে যাওয়া সড়কের কোথা থেকে পাহাড়ে ওঠা শুরু করে (লাল তীর), মাঝে কোথায় খানিক জিরিয়ে ছিলাম (সবুজ তীর)। স্মৃতিচারণপ্রিয় আমার ফেলে আসা পথ দেখতে বেশ লাগে।
বড়া দরওয়াজার ওপর থেকে দেখি দক্ষিণে চলে গেছে চওড়া প্রাচীর। সময় থাকলে এই পাঁচিল ধরে হাঁটতেও বেশ লাগে।
কেল্লার মধ্যে ছড়িয়ে আছে নানা ঐতিহাসিক নমুনা। মাঝে মাঝে পথনির্দেশ ফলকও লাগানো আছে। তাই গাইড ছাড়া একাই দিব্যি ঘুরেছি। নরোয়র কেল্লার মতো বাঁশবনে ডোম কানা দশা হওয়ার সম্ভাবনা এখানে কম। আমি যে সিকোয়েন্ন্সে ঘুরেছি তা ছিল বড়া দরওয়াজা, চৌবে মহল, ভেঙ্কট বিহারী (বিষ্ণু) মন্দির, রাণী মহল, মোতি মহল, রঙ মহল, শনিচার তালাও, জাকিরা মহল, পাত্থর মহল মসজিদ, আমন সিং মহল, কোটি তীর্থ তালাও, মৃগধারা, রেওয়া দরওয়াজা, মাণ্ডুক ভৈরব, রাম কটোরা তাল, ডাকবাংলো ও পুলিশ স্টেশন (দুটোই ছিল জনহীন) ও অন্তিমে নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির।
দেখা হয়নি রাঠোর মহল, রাণী বাগ, সীতা পীঠ (পাথরের বিছানা), পাতাল গঙ্গা, পান্ডব কুন্ড, ভৈরব কুন্ড, বহুবল খন্ডেশ্বর, ঝিঝোটিয়া বস্তি, শাহী মসজিদ, বাঞ্চোক মাকবারা, ভরচা চাঁদ, মাজার তাল, বেলা তাল, বুড্ঢা বুড্ঢি তাল, শের শাহ সুরি মাকবারা, হুমায়ুন কি ছাউনি ইত্যাদি। যা দেখেছি তাতেই কেল্লার মধ্যে ঘুরে ঘুরে হাঁটতে হয়েছে প্রায় সাত কিমি। পরে মনে হয়েছে চান্দেরীর মতো কালিঞ্জরেও আর একটা পুরো দিন থাকলে হোতো।
কোটিতীর্থ তালাওয়ের পাড়ে রাজা আমন সিং মহল আমন সিং মহল - ভিতরে ASI সংগ্ৰহালয় তবে দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
সাড়ে এগারোটা নাগাদ আমন সিং মহলে যাই। বাইরে প্রবেশ নিষেধ বোর্ড লাগানো। তবে গেটের পাশে বাইক দেখে বুঝি ভেতরে লোক আছে। বন্ধ দরজার নক করি। একটি প্রহরী লোক যাতায়াতের ছোট দরজা খুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। বলি, আমার নাম সমরেশ মুখার্জী, সুশীল ভার্গবজী দেখা করতে বলেছেন। প্রহরী বলে, কলকাতা থেকে আসছেন তো? মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই। সে বলে, ভেতরে আসুন, উনি আপনার কথা বলে রেখেছেন। ঢুকে দেখি চত্বরে শীতের রোদে চেয়ারে বসে আছেন এক বছর চল্লিশের মানুষ। সামনে আরো দুজন। আমায় ঢুকতে দেখে উনি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, মুখার্জীসাব? নমস্কার করে সম্মতি জানাই। উনি বলেন, সুশীল ভার্গভ। আসুন, বসুন, আপনি নিশ্চয়ই ওদিক থেকে দেখতে দেখতে আসছেন? বলি, ঠিক তাই, সুন্দর, নির্জন জায়গা, এতো কিছু দেখার, তাই একটু দেরী হয়ে গেল। উনি বলেন, ঠিক আছে, কোনো অসুবিধা নেই, গত পাঁচ দিন ধরে আমি এখানেই খুঁটি গেঁড়ে আছি। আমার বদলি হয়ে গেছে দেরাদুন, তাই এখানে যতো আইটেম আছে তা সব রেজিস্টার ধরে মিলিয়ে হ্যান্ডিং ওভার চলছে। আরো দুদিন লাগবে।
আলাপচারিতায় জানা গেল উনি সিভিলে ডিপ্লোমা করে কিছুদিন এদিক ওদিক কাজ করে পরে পরীক্ষা দিয়ে ASI তে এই চাকরিটা পেয়েছেন। কাজের বিশেষ চাপ নেই। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজেরও বিশেষ সুযোগ নেই। Archeological Restoration অন্য ব্যাপার। তার জন্য স্পেশালিস্ট ঠিকাদার, মিস্ত্রি, মজদুর আছে, যারা এই ধরণের কাজে দক্ষ। সুশীলবাবুর কাজ মূলতঃ প্রশাসনিক ও কিছুটা রক্ষণাবেক্ষণের সুপারভিশন। মনে হোলো উচ্চাশাহীন মানুষটি কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির নিশ্চিন্ততায় ভালোই আছেন। অল্পে আত্মসন্তুষ্ট মানুষ জীবনে বেশী কিছু অর্জন না করেও দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন।
হোমওয়ার্ক করে জানতাম কেল্লার মধ্যে চা, জলখাবারের দোকান নেই। তাই দুপুরে মুড়ি, বাদাম, চিকি চিবিয়ে থাকতে হবে। স্টকও ছিলো। কিন্তু সুশীলজীর দৌলতে মুড়ি চিবোতে হয়নি। কথাবার্তার মাঝে এলো নোনতা ও মিষ্টির আয়োজন। সহকর্মীরা ফেয়ারওয়েল দিচ্ছেন। আমিও ভাগ পেলাম। অবশেষে এলো চা। জমিয়ে লাঞ্চ হোলো। একেই হয়তো বলা যায় ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়। সুশীলজী বলেন, বারো বছরের ASI চাকরিতে আপনার মতো বেড়ানোর এমন জুনুন আগে কখনো দেখিনি। আপনাকে তাই মনে থাকবে। অনেকে ঐতিহাসিক স্থানে এসেও মস্তি করে, দেওয়ালে নাম লেখে। রিসার্চ স্কলারদের কথা আলাদা কিন্তু আপনার মতো ভ্রামণিক মনে হয় এসব জায়গায় আসেন প্রাচীনত্বের ফিল নিতে। আপনার সাথে ফোনে কথা বলে কাল আমার এমনই মনে হয়েছিল। তাই আলাপ করতে চেয়েছিলাম। আমার নম্বর রাখুন, ASI এর তত্ত্বাবধানে পূরাতাত্বিক স্থানে বেড়াতে গিয়ে কোনো অসুবিধা ফেস করলে ফোন করবেন। যদি তখন কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি, ভালো লাগবে।
এমন সব সুন্দর মানুষের সাথে আলাপ হওয়া ভ্রমণপথের বিশেষ প্রাপ্তি। ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলি মৃগধারা। কোটীতীর্থ তালাও থেকে মাটির তলা দিয়ে চুঁইয়ে পাথর কেটে বানানো একটা ছোট চৌকো গুহার দেওয়াল বেয়ে জল পড়ছে। দেওয়ালে সাতটি হরিণ খোদাই করা। তাই নাম মৃগধারা।
মৃগধারা
ওখান থেকে পূব দিশায় যাই রেওয়া দরওয়াজার দিকে। ক্রমশ ঝোপঝাড় বাড়ে। ছোট্ট রেওয়া দরওয়াজা মানুষজন, বড় জোর ঘোড়া নিয়ে যাওয়ার যোগ্য। পাল্লা লোপাট। ওদিক দিয়ে কেউ আসে বলে মনে হয় না।
রেওয়া দরওয়াজার পথে ক্রমশ বাড়ে ঝোপঝাড়
পরিত্যক্ত রেওয়া দরওয়াজা
রেওয়া দরওয়াজা থেকে (সবুজ তীর) একটু পূবে এগিয়ে পশ্চিমে তাকিয়ে দেখি সমীহ উদ্রেককারী কেল্লা প্রাচীর
মাণ্ডুক ভৈরব
রেওয়া দরওয়াজা থেকে কিছুটা পূবে পাহাড়ের গায়ে খোদিত মাণ্ডুক ভৈরব। নির্মানে সুক্ষ্মতার, হাত পায়ের আকারে সামঞ্জস্যের অভাব। পায়ে তো মনে হয় গোদ হয়েছে। অদ্ভুত লাগে Garavity Defying অতিকায় উত্থিত লিঙ্গটি দেখে। ঊর্ধ্বরেতাঃ জিতেন্দ্রিয় যোগীর কথা পড়েছি কিন্তু এমন অতিরঞ্জিত, অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ঊর্ধ্বমুখী লিঙ্গ - এযাবৎ কোথাও দেখিনি। উখিমঠে এক ভৈরব পূজারী অষ্টভৈরবের উল্লেখ করেছিলেন - কাল ভৈরব, রুদ্র ভৈরব, অসিতাং ভৈরব, ক্রোধ ভৈরব, চণ্ড ভৈরব, উন্মত্ত ভৈরব, ভীষণ ভৈরব এবং সংহার ভৈরব। নেটে দেখেছি আরো কিছু নাম - কামেশ্বর ভৈরব, অঘোর ভৈরব, সদাশিব ভৈরব, পঞ্চানন ভৈরব, বটুক ভৈরব, কপালি ভৈরব ইত্যাদি। তবে ভৈরব যখন শিবের ভয়ংকর রূপ তখন সদাশিব ভৈরব ব্যাপারটা Oxymoronic লেগেছে। তন্ত্র, পুরাণে জ্ঞানগম্যি নেই বলে ভৈরব তাৎপর্য জানি না। তবে মাণ্ডুক ভৈরব শুনিনি - কালিঞ্জর কেল্লা ছাড়া এযাবৎ আর কোথাও দেখিওনি।
ওখান থেকে উত্তর পূর্বে গেলে বুড্ঢা বুড্ঢি তালে যাওয়া যেতো কিন্তু নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির থেকে উল্টো দিশায় হয়ে যাচ্ছিল। তাছাড়া ঝোপ ঝাড় বেড়ে যাচ্ছে। এসব জায়গায় লেপার্ড থাকা আশ্চর্য কিছু নয়। তাই চললাম উত্তর পশ্চিম দিশায় কেল্লার মূখ্য আকর্ষণ নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির। পিচ রাস্তায় আসতে একটা আইনোভা গাড়ি এসে পাশে দাঁড়ায়। Govt of India বোর্ড মারা। সামনে ড্রাইভারের পাশে স্টেনগান নিয়ে খাকি উর্দির রক্ষী। পিছনে প্রায় ষাটের ভারিক্কি চেহারার ব্যক্তির মুখভাবে ক্ষমতাসীনের দার্ঢ্য। পাশের মহিলার শারীরভাষ্যেও প্রতিফলিত গড়িমা। মধ্য জানুয়ারির সুন্দর আবহাওয়ায়, নির্জন ধূলোহীন পরিস্কার রাস্তায় গাড়ির কাঁচ তোলা - এসি চলছে। সর্র্র করে পাওয়ার উইন্ডো অর্ধেক নামিয়ে ব্যক্তিটি শুধোন - Excuse me, where is Kalinjar Fort? বুঝি না নমুনাটি কেল্লা বলতে কুতব মিনারের মতো কোনো একক ল্যান্ডমার্ক ভেবেছেন কিনা। বলি, You are already roaming inside the fort. উনি, একটু বিব্রত হয়ে বলেন, Oh! Is it so? Well, so what are the things to be seen here? বলি, There are many things to see here but at most of the places vehicle won't go, better you follow this road, it goes to the Nilkanth Mahadev Temple, the prime attraction of this fort. উনি, Okay, thanks বলে চলে যান।
একটু এগোতে দেখি রাম কটোরা তালাও। মসলিন সবুজ পানায় দুর থেকে মাঠ বলে ভ্রম হয়।
ঐ পথেই কিছুটা দুরে ডাকবাংলোর লোকেশনটি চমৎকার। বুকিং পেলে, চৌকিদার রান্না টান্না করে দিলে, এমন জায়গায় দিন চারেক থেকে, আলস্যময় ভঙ্গিতে আশপাশে ঘুরে বেড়িয়ে, শুয়ে বসে, বই পড়ে কাটালে মনের আরাম হয়।
নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির
এর পর এলো দুর্গের প্রধান আকর্ষণ নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির। মনে করা হয় এটির নির্মাণ করেন চান্দেলা শাসক পারমারদি দেব (১১৬৫-১২০৩)। গুহার মধ্যে মন্দিরে আছে ১.৩৫ মিটার উঁচু একটি কালো পাথরের একমুখী শিবলিঙ্গ। ইলোরার মতো পাহাড় কেটে বানানো আয়তাকার গুহাটি কয়েকটি স্তম্ভ দ্বারা সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে, যার গায়ে ঋষি ও ভক্তদের মূর্তি খোদাই করা রয়েছে। মন্দিরের সামনে ছাদহীন মণ্ডপটি চমৎকার। মন্দিরের উপরে পাথর কেটে বানানো একটি জলাধার আছে। তার নাম স্বর্গারোহণ কুণ্ড। তার পিছনে আর একটি পাহাড় কেটে বানানো গুহায় আছে ৭.৩ মিটার উঁচু ১৮টি হাতের একটি কাল ভৈরবের মূর্তি যার উল্লেখ আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরীতে পাওয়া গেছে। স্তম্ভ ও দেয়ালে বেশ কিছু শিলালিপি রয়েছে, যার মধ্যে দ্বাদশ শতকের চান্দেলা শাসক মদন ভার্মার একটি শিলালিপি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শৈলীগতভাবে, পূরাতাত্বিক মতে গর্ভগৃহটি গুপ্ত যুগ এবং মন্ডপ চান্দেলা যুগের বলে নির্ধারিত হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দিরের কিছু অংশ ছবি সহযোগে উল্লেখ করলে মনে হয় মন্দ লাগবে না।
অবশেষে এলাম নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির - কেল্লার অভ্যন্তরের প্রবেশপথ দিয়ে (লাল তীর)। বাইরে থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিক দিয়ে মন্দির পায়ে হেঁটে আসার গেটটি প্রাচীরে সবুজ তীর চিহ্নিত অংশে।
তখন পশ্চিমে সূর্য ঢলতে শুর করেছে
নেমে এলাম মাঝামাঝি - সবুজ তীরটি স্বর্গারোহণ কুণ্ড নির্দেশক নেমে এলাম মন্দিরের সমতলে - গুহা মন্দিরে গর্ভগৃহের বাইরে ছাদহীন মণ্ডপ গর্ভগৃহের দ্বার
গর্ভগৃহে একমুখী লিঙ্গস্বরূপ নীলকণ্ঠ মহাদেব
গর্ভগৃহ থেকে বাইরে দেখলে
মন্দিরের শিরে পাথর কেটে বানানো স্বর্গারোহণ কুণ্ডে মাটি থেকে জল চুঁইয়ে আসে। তাই মার্চেও ভালোই জল। কেউ কখনো চারাপোনা ছেড়েছিল - তখন দেখি স্বাস্থ্যবান কয়েকটি মৎস্য স্বর্গপ্রাপ্তির আগে ওখানে সন্তরন রত
স্বর্গারোহণ কুণ্ডের পিছনে অন্ধকার গুহায় কাল ভৈরব ভাস্কর্য - ফ্ল্যাশ ছাড়া কিছুই আসতো না স্বর্গারোহণ কুণ্ড থেকে মণ্ডপ - পিছনে কেল্লা প্রাচীর
পাহাড় কেটে বানানো আন্দাজ তিরিশ ফুট নীলকণ্ঠ মহাদেব মূর্তি। ঘোর গরমে মাস দুয়েক বাদ দিয়ে বছরভর পাহাড় চুঁইয়ে আসা জল মহাদেবের হলাহলে জর্জরিত নীল কণ্ঠ ছুঁয়ে যায় - বিষের যে বড় জ্বালা - Divine coincidence!! হয়তো এভাবেই দানা বাঁধে ভক্ত জনের ঐশ্বরিক বিশ্বাস
আমি এসেছি ভেতর থেকে লাল তীর চিহ্নিত সিঁড়ি ধরে। বাইরে থেকে আসার ছোট্ট গেট গাছটির পিছনে - সবুজ তীর চিহ্নিত অংশে - যার সামনে এসে গেছেন নাইট শিফটের গার্ড
বাইরে যাওয়ার পথ। কটরা গেট। এখানেও গনেশ মূর্তির উপরাঙ্গের অনুপাতে পা দুটি সুষম নয় - ছোট - থপথপে - সেই মাণ্ডুক ভৈরব মূর্তির মতো - যেন গোদ হয়েছে পায়ে
তুলনায় এই মূর্তিটি সুষম লেগেছে - দৃষ্টি মর্মভেদী! এটি কার চিনতে পারিনি - কেউ জানালে ভালো লাগবে
এই সেই শিলালিপি - পাশে হিরণ্যকশিপু বধ চলছে
পাহাড়ের গায়ে প্রাচীন শিল্পীরা যত্রতত্র পাথরে খোদাই করে নানা শিল্প কর্ম করেছিলেন
নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির দেখে সন্ধ্যায় ফিরে এলাম কেবিনে। আজও নাইট ডিউটিতে আছে অজয়। বলে, বাবুজী, এখানে আর ম্যাগী বানিয়ে কাজ নেই, আজ আমি বেশী করে রুটি সবজি এনেছি, রাতে ঐ না হয় খাবেন। বৌ দিলো। আপনি ওর রান্নার তারিফ করেছেন শুনে খুশি হয়েছে। অজয়কে কিছু বখশিশ দিতে যাই, দু হাত কানে ঠেকিয়ে, জিভ কেটে অস্বীকার করে। বলে আপনি আমাদের মেহমান, এভাবে কষ্ট করে আছেন ভেবেই বরং খারাপ লাগছে। বখশিশ কীসের? তবে কাল চাটা বেশ ভালো বানিয়েছিলেন। যদি আজও করেন, ভালো লাগবে। মুখ হাত ধুয়ে এসে চা করি। কালকের মতোই আগুনের ধারে বসে গল্পগুজব চলে সদ্যপরিচিত ওদের সাথে, কেমন দেখলাম কেল্লা, সুশীলজীর আতিথেয়তার কথা বলি। নটা নাগাদ রুটি সবজি খেয়ে শুয়ে পড়ি। আজ রাতেও মামি ডগিটা ওর ছেনু দুটো নিয়ে ছিল। পরদিন সকালে অজয় বাইকে ছেড়ে দিলো নীচে। দোকানে চা নাস্তা করে একটু পরে বাস আসতে উঠে পড়লাম পরবর্তী গন্তব্যের দিশায়।
চরৈবেতি - চরৈবেতি।
কেল্লায় কয়েকটি মূখ্য দ্রষ্টব্য স্থানের ছবি
চৌবে মহল ভেঙ্কট বিহারী (বিষ্ণু) মন্দির
রাণী মহল
মোতি মহলের বিরান অভ্যন্তরে - ডানদিকে দোতলায় প্লাস্টিক বিছিয়ে শীতের মিঠে রোদে আধ ঘন্টাটাক সুন্দর গড়িয়ে ছিলাম
শনিচার তালাওয়ের ওপারে জাকিরা মহল
জাকিরা মহল
পাত্থর মহল মসজিদ - শের শাহ পুত্র ইসলাম শাহ কালিঞ্জর কেল্লা জয় উপলক্ষে এটি বানিয়েছিলেন ১৫৪৫ সালে। পাশে কোটিতীর্থ স্মারকের অনেক অংশ এই মসজিদ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়
একটি অনামা সৌধ
বুড্ঢা বুড্ঢি তাল - সময়াভাবে যাওয়া হয়নি - নেট থেকে নেওয়া
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।