

সঞ্জয়ের প্রাত্যহিক প্রভাতি সংবাদ পরিক্রমায় দুঃসংবাদের ঘনঘটা। মহারাজ উদ্বিগ্ন। অথচ অন্তঃপুরে ধর্ম মতি রানি বলছেন এ অন্যায় যুদ্ধ। শতপুত্রে সমর্পিত প্রাণ রাজা ধৃতরাষ্ট্র উত্যক্ত হয়ে বললেন "কী দিবে তোমারে ধর্ম?"
মহারানি গান্ধারী বলেছিলেন, "দুঃখ নব নব"।
ধর্ম তাই যাকে ধারণ করা যায়।
যে ধর্মটি ধারণ করে ইহুদিরা ইউরোপে উপনীত হলেন, তা নিয়ে মহাদেশের বেশির ভাগ মানুষের কোন মাথা ব্যথা ছিল না। ঈশ্বর প্রতিশ্রুত দেশ থেকে বহিষ্কারের পরে ভূমধ্যসাগরের তীর ধরে মিশর মরক্কো হয়ে বহু ইহুদি যখন দ্বিতীয় শতাব্দীতে আইবেরিয়া (স্পেন ও পর্তুগাল) পৌঁছুলেন এবং আরও কয়েক দল গ্রিস পেরিয়ে মধ্য ইউরোপে হাজির হলেন, ইউরোপ তখন নানান পাথর ও পুতুলের বন্দনা করে। ঈশ্বর পুত্রের নাম বা তাঁর হত্যাকারীদের নাম পাতা কিছুই জানে না। রবিবারে গিরজেয় হাঁটু গেড়ে ভজনা করা তো অনেক দূরের কথা। সুদূর আরমেনিয়ার (বিশ্বের প্রথম খ্রিস্টান দেশ) পরে রোম তৃতীয় এবং আয়ারল্যান্ড চতুর্থ শতাব্দীতে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে। আজকের কট্টর ক্যাথলিক পোল্যান্ডে পোপ সম্মানিত হবেন হাজার সাল নাগাদ। শেষ ইউরোপিয়ান দেশ হিসেবে লিথুয়ানিয়া খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করবে ১৩শ শতাব্দীতে। তার অনেক আগেই ইউরোপীয় ইহুদিদের স্বর্ণযুগ দেখা গেছে স্পেনে। মুসলিম রাজাদের দরবারে ইহুদিরা পেয়েছিলেন উচ্চাসন। দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্পে ইহুদিদের অবদান অসামান্য। হিব্রুর পাশা পাশি আরবি ও ল্যাটিন শিখেছিলেন। ভারত থেকে যে জ্ঞান আরব দুনিয়া সঞ্চয় করেছিল তার সঙ্গে ইহুদিরা ইউরোপের পরিচয় করালেন ল্যাটিনের মাধ্যমে। পোপের বারণ ছিল বলে খ্রিস্টানরা আরবি শেখেন নি।
খ্রিস্ট ধর্মের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ইহুদিদের দুর্দিন শুরু হল। গ্রামের চাষা ভুষো একদিন রবিবারে গিরজে থেকে বেরিয়ে পাড়ার ইহুদিদের শাসাল – আমরা সবে জানলাম তোমরা আমাদের প্রভুকে মেরেছো। এবার আমার একদিন কি তোমার একদিন। ইহুদি বৃদ্ধ বোঝাতে চাইলেন আমরা সবাই একটি গাঁয়েই থাকি, এই আমাদের একটি মাত্র সুখ! একসঙ্গে বড়ো হয়েছি। কবে কোন দূর দেশে কি ঘটেছে তাতে আমার বা আমার পরিবারের কোন হাত ছিল না। আজ আবার এ নিয়ে লড়াই ঝগড়া কেন? সে কেস তো এতদিনে তামাদি হয়ে গেছে!
পরবর্তী হাজার বছর ধরে ইহুদি পেটানো, পোড়ানো এবং খ্যাদানো এক জনপ্রিয় ক্রীড়ায় পরিণত হয়েছে। যিশু খ্রিস্টকে ক্রুসে চড়ানোর অপরাধের কলঙ্ক ইহুদিদের মাথায় লাগানো রইল। তার ওপরে ইউরোপের গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় কেউ রটিয়ে দিলো ইহুদিরা খ্রিস্টান শিশুর রক্ত দিয়ে তাদের পুজো আচ্চা করছে (ব্লাড লাইবেল) অথবা তারাই ভয়ঙ্কর প্লেগের (ব্ল্যাক ডেথ) কারণ। আম জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি সোঁটা নিয়ে ইহুদি হত্যায় লেগে গেলো।
খুন কা বদলা খুন।
নাৎসিরা কোনমতেই এই খেলাটির পেটেন্ট দাবি করতে পারে না।
বরং ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার মত আরেকটি নতুন ক্রীড়া উদ্ভাবনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ইংল্যান্ডের প্রাপ্য। জাতি ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত করে কি ভাবে একটা গোটা টিমকে রেড কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করা যায় সে খেলা দেখাল ইংরেজ। সিনাগগ বন্ধ হয়েছে, আত্ম পরিচিতির জন্য ইহুদিদের বিশেষ ব্যাজ পরা আবশ্যক (সাড়ে ছশো বছর বাদে নাৎসিরা এঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)। লন্ডন উইনচেষ্টার ব্রিসটলের হাটে মাঠে অনেক ইহুদি নিধন কাণ্ডের পরে একদিন, ১২৯০ সালে, রাজা এডওয়ার্ড আদেশ দিলেন সব জমি জমা সম্পত্তি ফেলে রেখে ইংল্যান্ডের ইহুদি যেন ক্যালের নৌকো বা ডিঙ্গি ধরেন। দুষ্ট লোকে বলে রাজার কোষাগারে টাকা কম পড়েছিল, তাই তিনি ইহুদিদের ধন বাজেয়াপ্ত করেন। ইহুদি প্রাণে বাঁচলেন বটে তবে ইংল্যান্ড ইহুদি মুক্ত হল (জার্মানে ইয়ুডেনরাইন বা ইহুদি শূন্য – নাৎসিরা অবিশ্যি তাদের শুধু ইউরোপ নয়, গ্যাস চেম্বারের সহায়তা নিয়ে আরও দূরে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন)।
তার দেড় হাজার বছর আগে ইহুদিরা ব্যাবিলনে নির্বাসিত হন। প্রথম শতাব্দীতে রোমানরা তাদের তাড়ায় ইজরায়েল থেকে। সভ্য ইউরোপে এ হেন গন বিতাড়নের ট্র্যাডিশন সৃষ্টি করলো ইংরেজ।
প্রসঙ্গত, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প একটি ইংরেজ আবিষ্কার। ১৮৯৯ সালে দ্বিতীয় বুওর যুদ্ধের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার এগারোটি শহরে সে ক্যাম্প তৈরি করে ইংরেজরা। জার্মানরা পরে এই ব্লু প্রিন্টটির ওপরে খোদকারি করে তাঁদের সহজাত বুদ্ধিমত্তা সহকারে আরও উন্নত মডেল বানান।
আকাশচুম্বী পারানির কড়ি দিয়ে তিন হাজার ইহুদি একবস্ত্রে চ্যানেল পেরুলেন। লন্ডন নগরীর জন সংখ্যা তখন মেরে কেটে চল্লিশ হাজার।
সাড়ে তিনশ বছর বাদে অলিভার ক্রমওয়েল আবার ইহুদিদের আমন্ত্রণ জানাবেন। এসো আমার দেশে এসো। তাঁদের উত্তরসূরিদের দেখেছি আমার পাড়ায়, গোলডারস গ্রিনে, ব্যবসায়িক সাথী হিসেবে লন্ডন সিটিতে।
চ্যানেলের ওপারে সে সময় প্রায় লাখ খানেক ইহুদি বাস করেন, বেশির ভাগ পূবে, আলসাস লরেনে। নবাগত ইহুদিদের কেউ এক গ্লাস জল বা বিয়ার (চা বা কফি ইউরোপে আসতে চারশ বছর দেরি আছে) এগিয়ে দিয়ে " সোআইয়ে বিয়াঁভেনু " বলে আপ্যায়িত করেন নি। ফরাসি রাজা ফিলিপ মোটেও ইহুদি দরদী ছিলেন না। ইহুদিদের মহাজনী ব্যবসায়ের এলেমটা কাজে লাগাতেন। ইতিমধ্যে খোদ প্যারিস শহরে কুড়িটা ঘোড়ার গাড়ি ভর্তি ইহুদিদের পবিত্র ধর্ম পুস্তক তোরা পোড়ানো হয়েছে। অনেক বছর পরে জার্মানরা সেই পদ চিহ্ন ধরে বই পোড়াবেন বার্লিন হুমবোল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের চত্বরে। তবে ততদিনে ইহুদিরা নিজেরাই অনেক লিখে ফেলেছেন। ফলে আরও বেশি বই পোড়াতে হয়।
ফ্লেমিশ যুদ্ধে বহু অর্থব্যয় করে ফিলিপ প্রায় দেউলে হয়েছেন। টাকার চিন্তা মাথায় ঘুরছে। এমন সময়ে জাত শত্রু ইংরেজের ইহুদি সম্পত্তি আত্মসাৎ করে ভাগিয়ে দিয়ে তাদের ধন দৌলৎ সম্পত্তিকে একটি এ টি এম হিসেবে ব্যবহার করার টেকনিকটি আগ্রহ সহকারে লক্ষ করছিলেন ফরাসি রাজা ফিলিপ।
ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টন না হোক ফুটবল খেলাটা ফরাসিরা ইংরেজের কাছ থেকে নিয়েছে। ফেসবুকের সাহায্য ছাড়াই ফরাসি গোয়েন্দাদের অদ্ভুত কৃতিত্ব বলে দেশের এক লক্ষ ইহুদিকে একই দিনে গ্রেপ্তার করে ফুটবলের মত কিক মেরে আপন দেশের সীমা থেকে বহিষ্কৃত করলেন। তার আগে অবিশ্যি বলের হাওয়া মানে ইহুদিদের যাবতীয় অর্থ সম্পদ রাজকোষে ভরলেন। ইউরোপের ইতিহাসে কোন জাতির দ্বিতীয় সামগ্রিক বহিষ্কার। ইংল্যান্ড কাল যা ভেবেছে ফ্রান্স ভাবল বিশ বছর বাদে।
রাইন পেরিয়ে ইহুদিরা হাঁটলেন পুব দিকে।
প্রায় পাঁচশ বছর বাদে, ফরাসি বিপ্লবের দু বছর বাদে ফ্রান্স ইহুদিদের প্রথম পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করবে। ইজরায়েল এবং আমেরিকার পরেই আজ সবচেয়ে বেশি ইহুদির বাস ফ্রান্সে।
গ্রামে গঞ্জের মানুষ ইহুদি মেরেছে ধর্মের নামে। আপন ধর্মে যোগদানের আহ্বান জানায় নি। রাজারা ইহুদি পোষণ এবং বিতাড়ন করেছেন অর্থের কারণে। ধর্মের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক ছিল না। ওয়াল স্ট্রিট ছবিতে গরডন গেকো রূপী মাইকেল ডগলাসের সেই অমর সংলাপ মনে করুন –, অর্থটাই সার, বৎস। বাকিটা বাগাড়ম্বর (ইট ইজ দি বাক কিড। রেস্ট ইজ কনভারসেশান)।
পুরো আখ্যানটা বদলে গেল পঞ্চদশ শতাব্দীতে। এবার এক রাজা ও রানি নামলেন ধর্মান্তকরনের, ধর্ম শোধনের মহান উদ্দেশ্যে।
স্পেন তখন দুটি রাজ্যে বিভক্ত- কাস্তিল (মাদ্রিদ সহ বিশাল মধ্যাঞ্চল) এবং আরাগন (বার্সেলোনা সহ আজকের কাতালুনিয়া)। সতেরো বছর বয়েসি কাস্তিলের রাজা ফারদিনান্দের সঙ্গে আরাগনের আঠারো বছরের ভাবী রানি ইসাবেলার বিবাহে স্পেন ইতিহাসে প্রথম একত্র হল।মুসলিম শাসন অবসানের কাজ সম্পূর্ণ হলে এঁরা ব্রতী হলেন আর এক মহান কাজে- স্পেনকে যথার্থ ক্যাথলিক হতে হবে। পোপ ফরমান দিলেন- এগিয়ে যাও, চরৈবেতি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নাও। জনগণ ক্যাথলিকের রীতি রেওয়াজ মেনে চলছে কিনা তার খবরদারি করো। চল্লিশ দিন যাবত চলবে সে পর্যবেক্ষণ ও সাক্ষ্য গ্রহণ। রীতি অমান্য করলে শাস্তি দাও।
কিছু সাময়িক বিবাদ সত্ত্বেও মুসলিম শাসনে আইবেরিয়া ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতীক। খ্রিস্টান মুসলমান ইহুদি পাশা পাশি বাস করেছেন কয়েকশ বছর। চিত্র কলা বিজ্ঞান দর্শনে অভাবনীয় প্রগতি দেখা গেছে। মুসলিম রাজাদের বিতাড়নের পরে ফারদিনান্দ ইসাবেলা শুধু স্পেনকে একত্র করলেন না, ধর্মের বিশুদ্ধতার জন্য শুরু করলেন এক মহাযজ্ঞ - তার নাম স্প্যানিশ ইনকুইজিশন বা জেরা/ তদন্ত। সেটি চলবে সাড়ে তিনশ বছর ধরে। ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সন্ত্রাসের চলচ্চিত্র। মানুষের প্রতি মানুষের নির্মম অত্যাচার, বিনা বিচারে জেলে পোরা, মানুষকে টঙে বেঁধে আগুন লাগানো, পড়শির সঙ্গে পড়শির শত্রুতা, শহরে শহরে স্টেজ বেঁধে মানুষ পোড়ানো।
এই সাড়ে তিনশ বছরে পৃথিবী পেয়েছে শেক্সপীয়ার, নিউটন, কোপারনিকাসকে, গুটেনবেরগের ছাপাখানা। দেখেছে প্রথম শিল্প বিল্পব। খোদ ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন মারটিন লুথার। অবাক বিস্ময়ে মানুষ দেখেছে মিকেলেঞ্জেলো, রাফায়েল, বত্তিচেলিকে।
স্পেন লেগে রইল ক্যাথলিক ধর্ম পরিশোধনে।
ফরাসি বিপ্লবের সন্ত্রাস রাজ (রেইন অফ টেরর) এক বছর চলে, নাৎসিদের তাণ্ডব বারো বছরের।
বাকি ইউরোপে সমানে চলেছে ইহুদি বয়কট, বিদ্বেষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষেধ। সরকারি চাকরি মেলে না। অবস্থা যথা পূর্বং। কিন্তু স্পেনে তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট হল রাত্রি দিনের সরকারি সন্ত্রাস যা নাৎসিরা আরও দক্ষ হাতে প্রয়োগ করবে একদিন (নাখট উনড নেবেল)।
তথ্যের খাতিরে বলা আবশ্যক স্প্যানিশ ইনকুইজিশন কাউকে রেয়াত করে নি। ক্যাথলিক বলেই ছাড়ান নেই - কতটা ক্যাথলিক তার পরীক্ষা দেওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। সবচেয়ে বেশি কোপে পড়লেন মুসলিম এবং ইহুদি। স্পেন থেকে ইসলামিক শাসন নির্মূল হবার পরে দেশের মুসলিম জনগণকে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হল - তাদের নাম মরিসকো। যারা ক্যাথলিক হতে অরাজি ছিলেন তাঁদের পিটিয়ে উত্তর আফ্রিকায় পাঠানো শুরু হল। স্পেনের দক্ষিণে জিব্রালটার থেকে মরক্কোর তট দেখা যায়! তাই সেই ক্ষীণ জলরাশি টুকু পার হতে সংশয় থাকার কথা নয় মুসলিমদের! অবশ্যই তাদের ফেলে যেতে হল ঘর সম্পত্তি। এ সবই ঈশ্বর পুত্রের নামে – যে বা যারা তাঁর অপার করুণা গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক তাদের শাস্তি নির্বাসন বা মৃত্যু।
স্পেনের সেভিল (ইউরোপের সবচেয়ে বড়ো এবং সুন্দর স্কোয়ার দেখেবন সেখানে) বা করডোবা বেড়াতে গেলে সেখানকার বিশাল ক্যাথিড্রাল দুটো খুঁটিয়ে দেখুন- এক সময় মসজিদ ছিল, এখন ফরম্যাট বদলে গিরজে।এককালের কনস্টানটিনোপল আজকের ইস্তানবুলে পাবেন বিশ্বের বৃহত্তম গিরজে, হায়া সোফিয়া আজ মসজিদ।
১৪৯২ সালের ৩১শে মার্চে প্রকাশিত আল হামবরা ঘোষণায় হাজার বছর যারা স্পেনে বাস করেছেন সেই ইহুদিদের দেওয়া হল দুটি বিকল্প, চার মাসের মধ্যে বেছে নিন - ধর্ম না দেশত্যাগ করবেন। এক লক্ষ ধর্ম আঁকড়ে দেশত্যাগ করলেন। কিছু গেলেন উত্তর আফ্রিকায় (প্রসঙ্গত, তিউনিসিয়ার বর্তমান ট্যুরিজম মন্ত্রী একজন ইহুদি - রেনে ত্রাবেলসি)। প্রাণ হারালেন অনেকে। কিন্তু সন্দেহ দেখা দিল দু লক্ষ ধর্মান্তরিত ইহুদিকে নিয়ে, যাঁদের বলা হতো কনভেরসো (প্রায় এই নামের একটা জুতো বিক্রি হয় আজকাল)। ঘরে ঘরে গিয়ে তদন্ত শুরু হল। এই ধর্মান্তরিত ইহুদিরা কি শুক্রবার রান্না করে রেখে শনিবারে সেটা খান? শনিবারে সাবাথ মানেন? শুয়োর খান? না খেলে ক্যাথলিক হবেন কি করে? লিস্টি লম্বা।
আল হামবরা ঘোষণার ঠিক চার মাস বাদে ৭ই আগস্ট স্পেনের পালোস ডে লা ফ্রন্টেরা থেকে নিনিয়া, পিনটা ও সান্টা মারিয়া নামের তিনটি জাহাজ ছাড়ল ভারতের সন্ধানে, পশ্চিম দিগন্ত অভিমুখে। সেই অভিযানের নেতা জেনোয়া বন্দরের একজন ধর্মান্তরিত ইতালিয়ান ইহুদি।
ক্রিসটোফো কলম্বো। তাঁকে আমরা ক্রিসটোফার কলাম্বাস নামে চিনি।
তরকেমাদা নিযুক্ত হলেন ইনকুইজিশনের অধ্যক্ষ হিসেবে। দু পুরুষ আগে তাঁরা ধর্মান্তরিত হয়েছেন।রাজা রানির আদেশে তিনি এই যজ্ঞের মহা পুরোহিতের স্থান নিলেন। ইনকুইজিশন চলল শুধু স্পেনে নয়, পরবর্তী কালে নেদারল্যান্ড সহ দক্ষিণ আমেরিকার সমস্ত স্প্যানিশ কলোনিতে। এই ভয়ানক ধর্ম সংস্থাপনা ও সংশোধন কাণ্ড যিনি শেষ অবধি থামালেন তিনিও ক্যাথলিক। নাপোলেওঁ বোনাপার্ট। স্পেনের দখল নিয়ে রুখলেন এই বর্বরতা। নাপোলেওঁ ভেঙ্গে দেন মিলান সহ ইউরোপের অনেক ইহুদি ঘেটোর দেওয়াল – তাঁদের আড়াল বা আলাদা করে রাখার তত্ত্বে হানলেন আঘাত। এক সশক্ত রাজ প্রতিবাদ। একছত্র সম্রাট ছিলেন তবে নানা বিষয়ে তাঁর সদিচ্ছার অভাব ছিল না। ওয়াটারলু যুদ্ধে তাঁর পরাজয়ের পরে ইউরোপ ফিরে গেল আগের শতাব্দীতে। ইনকুইজিশন আবার শুরু হল। সে স্প্যানিশ জলতরঙ্গ রুধিবি কি দিয়া বালির বাঁধ?
১৯৬৮ সালে সদাশয় স্প্যানিশ একনায়ক জেনেরালিসিমো ফ্রাংকো নিতান্ত করুণা পরবশ হয়ে ইনকুইজিশনের ফরমানটি সরকারি ভাবে প্রত্যাহার করেছেন। পাঁচশ বছরের সন্ত্রাস শেষ হল। সম্প্রতি জানা গেছে স্পেনের ঠিক কোথায় বাড়িঘর ছিল প্রমাণ করতে পারলে সেই ভাগিয়ে দেওয়া ইহুদিদের স্প্যানিশ পাসপোর্ট দেওয়া যেতে পারে। জায়গা জমি ফেরানোর প্রশ্ন তাঁরা যেন না তোলেন।
বাকি ইউরোপে এসেছে নতুন ভোরের আলো - রেনেসাঁ, রিফরমেশন। উপনিবেশের লুণ্ঠিত ধনের ব্যবহারে তৎপর ইউরোপের শ্রীবৃদ্ধি। কিন্তু সে জগত খ্রিস্টানের। মহাজনী, পুরনো কাপড়ের ব্যবসায়ী ইহুদির পক্ষে বিজ্ঞান দর্শনের পাঠশালায় বা সরকারের উচ্চপদে আসীন হবার সুযোগ নিতান্ত সীমিত অথবা একেবারে নিষিদ্ধ।
একটি মাত্র পথ খোলা – ধর্মান্তকরন। জাদু মন্ত্র বলে চিচিং ফাঁকের মতো দরোজা খুলে যেতে পারে যদি ইহুদি তার আপন ধর্ম ত্যাগ করে প্রভু যিশুর শরণাপন্ন হন।
হাইনরিখ হাইনে বলেছিলেন " ইউরোপের সভ্য সমাজে প্রবেশ পেতে গেলে ইহুদির যে পাসপোর্ট প্রয়োজন তার নাম ধর্মান্তকরন।"
এক সময়ে ধর্মান্তকরন হয়েছিল রাজাদেশে, অস্ত্রবলে। এবার স্বেচ্ছায়। আপন ভবিষ্যতের ভাবনায়।
ইহুদি খুঁজে পেলো আরেক কৌতুকের মাল মশলা।
পুঃ-
কার্ল মার্ক্সের জন্মের আগেই তাঁর পিতা ট্রিয়ার শহরের আইনজীবী ও কয়েকটি আঙ্গুর ক্ষেতের মালিক হ্যারশেল মার্ক্স ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করে প্রাশিয়ান ইভাঞ্জেলিকাল বা প্রটেস্টাণ্ট ধর্ম ও হাইনরিখ নাম গ্রহণ করেন। কার্ল মার্ক্স প্রটেস্টাণ্ট পরিবারে জন্মেছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন ছ বছর বয়েসে।
সে | 2001:1711:fa42:f421:a47e:6c3e:a15:***:*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:২২501687
হীরেন সিংহরায় | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:০৭501693একটা সহজ জবাব হতে পারে ইহুদিরা যীশুকে ক্রুশে চড়িয়েছে ! সেটাই একমাত্র কারণ নয়, হতে পারে না।
জার্মানে একটা শব্দ আছে ফ্রেমডেনআংগসট , অপরিচিতের ভীতি । যে দেশেই তারা বাস করুক না কেন, আলাদা হয়ে রইল। প্রার্থনা শনিবারে করল সেদিন কোন কল কব্জায় হাত দিলো না। শুয়োর খেলো না । তাদের কোন নির্দিষ্ট চেহারা নেই, ভাষা নেই । কিন্তু ওই শনিবারে সিনাগগে গিয়ে কি যে ফিসফাস করে । ওরা কালো লম্বা কোট পরে , ছেলেরা দাড়ি রাখে যে দেশে তারা বাস করে ( ১৭৯১ এর পরে ) এরা যাযাবর নয় – যাযাবর পশু বা ফল ফুরুলে অন্যত্র যায়। এরা যায় না। যে দেশে বাস করে সে দেশের আইন কানুন মেনে তারা শিক্ষা নেয় , ইউরোপীয় সভ্যতার সব সুবিধে আদায় করে । তাদের কোন দেশ নেই , তারা কোন দেশ গড়ে নি, , হাতের কাজ করে না । করে শুধু মাথার কাজ কারণ সেটার সুব্যবস্থা সব দেশেই সহজ লভ্য । বাড়ির ভেতরে বজায় রাখে তাদের আপন চাল চলন। তাদের নিজের নেই সংস্কৃতি , সভ্যতা, আর্ট, শিল্প , সঙ্গীত । সে ধার করে নেয় প্রত্যেক দেশে , প্যারাসাইটের মতো । দু হাজার বছরেও তাদের স্বভাব চরিত্র আচার ব্যবহার কিছুই বদলায় নি কি করে সেটা সম্ভব ? যে কোন জন জাতি বদলায় , মিলে মিশে যায়। দিবে আর নিবে ! কিন্তু ইহুদিরা ধরে থাকে তাদের ধর্ম পুস্তক ।
নাৎসি ইস্তাহার মনে হচ্ছে ?
b | 117.194.***.*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৪০501700
হীরেন সিংহরায় | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৪৭501701
হীরেন সিংহরায় | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৫৫501705
&/ | 151.14.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:১৭501721
aranya | 2601:84:4600:5410:992b:6ff:3270:***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০০501724
:|: | 174.25.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০৫501725
aranya | 2601:84:4600:5410:992b:6ff:3270:***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১৬501726
:|: | 174.25.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৯501729
হীরেন সিংহরায় | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:৫৭501756
শ্রী চতুর্ভুজ
ধৃ ধাতু + মন প্রত্যয় = ধর্ম । ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা । যা ধারণ করে মানুষ সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও পবিত্র জীবনযাপন করতে পারে তাকেই বলে ধর্ম।
আমার মন্তব্য এই সংজ্ঞার ওপর আধারিত ।
একে তো সংস্কৃতে ফাঁকি দিয়েছি ( জার্মান শিখতে গিয়ে বুঝেছি কত উপকার হত সংস্কৃত জানলে )। তাই এখানে কে যে কাকে ধারণ করেছে সেটা আমার বোঝার ভুল হতে পারে আগাম মার্জনা চেয়ে রাখি।
:|: | 174.25.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:১৫501758
হীরেন সিংহরায় | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:২১501761
শ্রী রমিত চট্টোপাধ্যায়
এ বিষয়টি অত্যন্ত বিতর্কিত হতে পারে । মন্তব্য নয়, কিছু তথ্য পেশ করি –
- কুরান ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের মেনে নিয়েছে “ বইতে উল্লিখিত “ মানুষ বলে ( ৫:১৫-১৯ ) – People of the Scripture সকলেই উম্মা ( পরিবার ) ।
- দুই বাইবেলে যে মেসিয়ার আগমনের ইঙ্গিত আছে, মহম্মদ সেই মেসিয়া
- আরব উপদ্বীপে তখন ইহুদির সংখ্যা খ্রিস্টানের চেয়ে বেশি ( মিজরাহি ইহুদি যারা ইজরায়েল থেকে বহিষ্কারের পরে পুব দিকে গেলে)
- আইবেরিয়াতে এই দুই ধর্মের মানুষ এবং খ্রিস্টান পাশা পাশি বাস করলেন ১৫শ শতাব্দী অবধি ধর্মের কারণে ইহুদি নিধন হয় নি
- স্প্যানিশ ইনকুইসিশন থেকে পলাতক ইহুদিদের সাদরে বরণ করলেন অটোমান সুলতানরা আলাদা এলাকায় বাস, ঘোড়ায় চড়া বারণ কিন্তু ইউরোপের মত কোন পোগ্রম , পাইকারি হারে ধর্মের ভিত্তিতে ইহুদি নিধনের কোন রেকর্ড নেই
- সুলতান মেহমেতের অর্থ মন্ত্রী , ব্যক্তিগত চিকিৎসক , টাঁকশালের অধ্যক্ষ ছিলেন ইহুদি
- সারাজেভো গেলে দেখবেন গিরজে সিনাগগ মসজিদ দেড়শ মিটারের মধ্যে সগৌরবে আসীন । অটোমান যুগের সব সিনাগগ আজও অক্ষত ।
- সুন্নত আছে দুই ধর্মে । শুকর বারণ।
- গোলমালটা শুরু হল উনিশ শতকে । রাজনৈতিক কারণে. ইজরায়েলের সৃষ্টি পরে অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে ।
হীরেন সিংহরায় | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:২৩501762
Ayaon Ghosh | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:২৫501773
রাজর্ষি রায়চৌধুরী | 82.27.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:২৪501780
:|: | 174.25.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:০৯501788
হীরেন সিংহরায় | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:৫০501793শ্রী আয়ন ঘোষ
কর্মসূত্রে ( পরে বন্ধু রূপে ) পাওয়া ইউরোপে নিউ ইয়র্কে ইজরায়েলের ইহুদিদের সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা আপনায়ে সঙ্গে মেলে । কিছু ব্যতিক্রম দেখেছি ( আমার লেখা সাবাথ পর্ব দেখুন )- আইনজ্ঞ জনাথান সলোমন সিটি ব্যাঙ্কের লাঞ্চে আপন কোশার খাবার টিফিন বাক্সয় ভরে নিয়ে আসে। শিরা টেনডলার শনিবারে গাড়ি চড়ে । তার মা বলেন সবার সামনে নয় ! মনে আছে ঐন্দ্রিলার বন্ধু ভিকি বলে পিতসা থেকে হ্যাম খুঁটে বাদ দিয়ে খেতে তার কোন অসুবিধে নেই। শনিবারে জেরুসালেম জনশূন্য, তেল আভিভ জাফা গমগম করছে । কিন্তু আপনার আমার মুশকিল হলো ওই স্যাম্পল সাইজ নিয়ে !
আমার ছেলে গত গ্রীষ্মে ইংরেজি পড়ায় হেবরনে। নিয়মিত জেরুসালেমে তার আসা যাওয়া ছিল- তার স্যাম্পল সাইজ বড়ো এবং ফলটা আপনার আমার সঙ্গে মেলে না !
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি জার্মানি এবং পূর্ব ইউরোপ ইহুদিদের যে স্টিরিওটাইপের তকমা দেয় , অ্যাংলো সাক্সনরা তার কাছে নস্যি !
হীরেন সিংহরায় | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:৫৮501794শ্রী রায় চৌধুরী
ধন্যবাদ ! এর একটা ইহুদি ভার্শন আছে । আমি হিটলার পর্বে দিয়েছি
বার্লিন স্পোর্ট পালাসট
হিটলার এই যে দেশের চারিদিকে এতো সমস্যা , এর জন্য দায়ী কে?
কোহেন (পেছন থেকে) অশ্বারোহী আর ইহুদিরা।
হিটলার অশ্বারোহীরা কেন? তারা কি দোষ করেছে ?
কোহেন তাই তো। আমার প্রশ্ন ইহুদিরাই বা কি করেছে ?
হীরেন সিংহরায় | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:০৬501795শ্রী চতুর্ভুজ
ধন্যবাদ । পণ্ডিতের খোঁজে আছি । সিদ্ধান্ত পেলে এখানেই জানাব ।
খানুকার শেষ দিনটা আজ সন্ধ্যেয় ( আমাদের ইংল্যান্ডের হিসেবে ) শুরু হল। সমাপ্তি হবে সোমবার ৬ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের সঙ্গে।
RK | 203.18.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫৬501799
aranya | 2601:84:4600:5410:4802:c636:b402:***:*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৪501800