এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • ম্যাক্স ওয়েবার, প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতা এবং অ্যাড্যাম স্মিথ 

    Anirban M লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ বার পঠিত
  •  
    শুরুর কথা
    অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে মানব সমাজের রঙ্গমঞ্চে তার কনিষ্ঠতর কুশীলব পুঁজিবাদ প্রবেশ করে। ওই রকম সময়েই, ১৭৭৬ সালে, প্রকাশিত হয় অ্যাড্যাম স্মিথের যুগান্তকারী বই ওয়েলথ অব নেশনস । এই বইটিকেই আধুনিক অর্থনীতির প্রথম বই এবং সেই সুত্রে স্মিথকে আধুনিক অর্থনীতির জনক বলে ধরা হয়। স্মিথের বইটি যুগান্তকারী কারণ এই বইতেই প্রথম পুঁজির অর্থনীতি নিয়ে একটি সুশৃঙ্খল, যুক্তিবদ্ধ আলোচনা প্রকাশিত হয়। অর্থশাস্ত্রের আরেকটি ক্ল্যাসিক রিকার্ডোর অন দ্যা প্রিন্সিপলস অফ পলিটিক্যাল ইকোনমি এন্ড ট্যাক্সেশন প্রকাশিত হয় আরও প্রায় চল্লিশ বছর পরে, ১৮১৭ নাগাদ আর মার্ক্সের ক্যাপিটাল প্রকাশিত হয় ওয়েলথ অব নেশনসের প্রায় ১০০ বছর পরে, ১৮৬৭ তে। আমরা অবশ্য রিকার্ডো-মার্ক্সকে আলোচনার বাইরেই রাখবো। এই প্রবন্ধে, আমরা স্মিথকে দেখব ওয়েলথ অব নেশনস প্রকাশিত হওয়ার প্রায় একশ পঁচিশ বছর পরে প্রকাশিত অন্য একটি তত্ত্বের চোখ দিয়ে যার প্রস্তাবনা করেছিলেন আরেক নামকরা সমাজতাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েবার।
    ১৯০৪ সালে প্রকাশিত, প্রোটেস্ট্যান্ট এথিক্স এন্ড স্পিরিট অফ ক্যাপিটালিসম বইতে, ওয়েবার বলেছিলেন যে প্রোটেস্ট্যান্ট প্রাধান্য আছে এমন দেশে পুঁজিবাদ বেশী সফল কারণ প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতা, পুঁজিবাদী সমাজের মূল নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ওয়েবারের বক্তব্য এবং তার নানারকম সমালোচনা ও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নিয়ে আলোচনা করব শীঘ্রই। কিন্তু যদি ওয়েবারের বক্তব্য সত্যি হয় তাহলে সেই প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার ছায়া পুঁজিবাদী অর্থনীতি নিয়ে প্রকাশিত প্রথম বই,  ওয়েলথ অব নেশনসের মূল দর্শনের ওপরেও পড়া উচিত। সত্যি কী তা খুঁজে পাওয়া যায়? অ্যাড্যাম স্মিথের দর্শনে কি সত্যি রেখাপাত করেছিল প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার মূল সূত্রগুলি? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই আমা্র এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য।

    পুঁজিবাদের আত্মা
    স্পিরিট অব ক্যাপিটালিসমের সঠিক ভাবানুবাদ হয়ত হত পুঁজিবাদের নীতি। কিন্তু আমার মনে হল আক্ষরিক অর্থটি সম্ভবত সঠিকতর। আত্মা – যা শরীরকে চালনা করে (অন্তত ভাববাদী দর্শন অনুসারে)। পুঁজিবাদের শরীর চলে কিসে? পুঁজির ক্রমাগত বিনিয়োগে। কিন্তু কেন কেউ ক্রমাগত পুঁজি বিনিয়োগ করে চলবেন? এর একটা বাজার চলতি উত্তর আছে – সীমাহীন লোভ। কিন্তু ওয়েবার সঠিক ভাবেই নির্দেশ করেন যে লোভের সঙ্গে পুঁজিবাদের কোন যৌক্তিক সম্পর্ক নেই। এ কথা ভাবার কোন কারণ নেই যে পূঁজিবাদের আগে পৃথিবীতে লোভ ছিল না – রাশিয়ার পিটার, ইংল্যান্ডের হেনরি বা আমাদের শাজাহান কী সম্পদে আসক্ত ছিলেন না? ওয়েবার বলেন এই যে বিনিয়োগের চির-চলমান চাকাকে সচল রাখে পূঁজিবাদের যে আত্মা তার প্রকৃতি শুধু লোভ নয়। ওয়েবার বলছেন auri sacra fames অর্থাৎ সোনার লোভ একই ভাবে বিদ্যমান ছিল প্রাচীন চিন বা রোমের অভিজাতদের মধ্যে – সোনার লোভ দেশকাল মানে না। কিন্তু একই সঙ্গে ওয়েবার এও বলছেন যে পুঁজিবাদের যে আত্মা তা শুধু ভোগের আকাঙ্খায় চালিত হয় না, তার মধ্যে অন্য কিছু লুকিয়ে থাকে। ওয়েবার দীর্ঘ উদ্ধৃতি দিচ্ছেন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এর লেখা থেকে যেখানে ফ্রাঙ্কলিন বলছেন ক্রমাগত কাজ করে যাওয়া পুঁজিকে সচল রাখে এবং তার বিনিয়োগ তার মালিকের ভবিষ্যত জীবন কে সুনিশ্চিত করে।  একটা কথা এখানে বলে নেওয়া ভাল যে অষ্টাদশ শতকে বসে ফ্রাঙ্কলিন যে পুঁজিবাদের কথা লিখছেন তার চেহারা আধুনিক, বহুজাতিক পুঁজিবাদের থেকে অনেকটাই আলাদা। ফ্রাঙ্কলিন বলছেন, ভোর পাঁচটায় হাতুড়ির আওয়াজ শোনা যায় যে কামারশালে, ঋণদাতারা সেখানে লগ্নি করতে আগ্রহী হয়, অন্যদিকে ব্যবসা মালিককে  যদি পাওয়া যায় বিলিয়ার্ড ক্লাব বা পানশালায়, তাহলে ব্যবসার সুনাম নষ্ট হয় (“The sound of your hammer at five in the morning, or eight at night, heard by a creditor, makes him easy six months longer; but if he sees you at a billiard-table, or hears your voice at a tavern, when you should be at work, he sends for his money the next day; demands it, before he can receive it, in a lump.” (from Advice to a Young Tradesman (written 1748, Sparks edition, II, pp. 87 ff., quoted in Max Weber’s Protest Ethics and Spirit of Capitalism, pg 15) । কিন্তু এই পরিশ্রম প্রবণতার অন্তর্নিহিত চালিকা শক্তি বা আত্মা কে? ওয়েবারের মতে ফ্রাঙ্কলিন বা তাঁর মত আরও পুঁজিবাদী চিন্তকরা এই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রোটেস্টান্টিসমের অন্যতম প্রবর্তক জন ক্যালভিনের লেখনী থেকে। পরিশ্রমী মানুষ রাজাদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে – বাইবেলের এই আপ্তবাক্যকে ক্যালভিন বিশেষ ভাবে প্রচার করেন। ওয়েবারের মতে পুঁজিবাদের টাকা উপার্জন ভোগের আকাঙ্খা দ্বারা চালিত নয়, বরং তা এক অন্তরের প্রণোদনা (যাকে ওয়েবার বলছেন calling) । এই প্রণোদনার ধারণা আছে প্রোটেস্ট্যান্টিসমের অন্যতম প্রবর্তক মার্টিন লুথারের লেখাতেও (জার্মান শব্দটি হল beruf)। এই দুই ধারণাকে মিলিয়ে কীভাবে ওয়েবার প্রোটেসট্যান্ট নৈতিকতাকে মেলালেন পুঁজিবাদের আত্মার সঙ্গে তা আরো বিশদে আলোচনা করব নিচের পরিচ্ছেদে। কিন্তু তার আগে এটা মনে করে নেওয়া দরকার খ্রীস্টান নৈতিকতা ও বূর্জোয়া মুল্যবোধের সম্পর্ক কিন্তু বর্তমান সমাজ বিজ্ঞানেও একটি আলোচিত অধ্যায়। এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন ডেইরেড্রে ম্যাকক্লস্কি তাঁর বূর্জোয়া ভার্চুস গ্রন্থে। তিনি দেখিয়েছেন বূর্জোয়া মূল্যবোধ কীভাবে ভালোবাসা, বিশ্বাস, আশা, সাহস প্রভৃতি নৈতিক গুণাবলীর ওপর প্রতিষ্ঠিত।  অনেকটা ওয়েবারের সুরে সুর মিলিয়েই ম্যাকক্লস্কি দেখান যে পুঁজিবাদকে অসীম লোভের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার যে প্রবণতা মার্ক্স এবং অন্য সমসাময়িকদের লেখায় পাওয়া যায়, তা আসলে একধরণের বাণিজ্য-বিরোধী মানসিকতার প্রতিফলন যার সূত্রপাত অ্যারিস্টটলের লেখায় এবং পুঁজিবাদ অন্য ব্যবস্থার চেয়ে লোভকে বেশী প্রশ্রয় দেয় তার স্বপক্ষে তেমন কোন প্রমাণ নেই। এই আলোচনা অনেক দূর করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা আপাততঃ আমাদের আলোচ্য বিষয়ের দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতায় ফিরি।

    প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতা
    ওয়েবারের মতে সমাজে তিনরকমের মূল্যবোধ দেখা যায় – চিরাচরিত অর্থনৈতিক মূল্যবোধ, অতিরিক্ত ঝুঁকিপ্রবণ ব্যবসায়িক মূল্যবোধ (যাকে ওয়েবার অ্যাডভেঞ্চারার স্পিরিট বলছেন) এবং পুঁজিবাদী মূল্যবোধ। একদিকে চিরাচরিত মুল্যবোধ যেখানে শুধুমাত্র প্রয়োজন মেটানোকেই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে দেখে, ঝুঁকিপ্রবণ মূল্যবোধ সেখানে সর্বাধিক ঝুঁকিগ্রহণের মাধ্যমে ভোগ সর্বোচ্চ করণের লক্ষ্য দ্বারা চালিত হয়। ওয়েবারের মতে পুঁজিবাদী মূল্যবোধ এই দুই-এর থেকেই আলাদা। সেখানে মুনাফা বাড়ানোই শেষ কথা, কিন্তু তার উদ্দেশ্য ভোগ নয়, বিনিয়োগ। এদিক থেকে ওয়েবারের তত্ত্ব কিন্তু নিও-ক্ল্যাসিকাল ইউটিলিট্যারিয়ানিসম থেকে অনেকটাই আলাদা। ভোগের জন্য আয় একভাবে আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু এই যে ভোগ না করে শুধু বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাওয়া, এর চালিকা শক্তি কী? ওয়েবারের মতে এই পুঁজিবাদী মূল্যবোধের মূলে আছে প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতা। কিন্তু এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। ওয়েবার কিন্তু একথা বলছেন না যে সব দেশ-কালে পুঁজিবাদের মূল চালিকা শক্তি প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতা। উনি বলছেন পুঁজিবাদী মূল্যবোধ একভাবে প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধের থেকে কাঠামোগত ভাবেই আলাদা এবং পশ্চিম ইউরোপে পূঁজিবাদের বিকাশ হতে পারত না যদি না সেখানে প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার হাত ধরে ক্রমাগত বিনিয়োগের মূল্যবোধ বিকশিত হত। কিন্তু এই মূল্যবোধের বিকাশ, পুঁজিবাদ বিকাশের অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত, যথেষ্ট শর্ত নয়।
    এখন প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার সঙ্গে পুঁজিবাদী মূল্যবোধের সম্পর্কটা আরেকটু বিশদে দেখে নেওয়া যাক। প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতা মুলতঃ দুটি বিষয়ের সমাহার – জীবনচর্যার নিয়মাবলী এবং সেই নিয়ম অমান্যকারীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা। মনে রাখতে হবে এই শাস্তি মুলতঃ গোষ্ঠীগত ভাবে একঘরে করার ব্যবস্থা, আইন আদালতের শাস্তি নয়। জীবনচর্যার নিয়মাবলীর আবার দুটি মূল ধারা ছিল – কঠোর পরিশ্রমের নীতি এবং ভোগ বিমুখতা (asceticism)। এক্ষেত্রে প্রোটেস্ট্যান্টিসমের দুই প্রধান প্রবক্তা মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) এবং জন ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) এর মতাদর্শের আন্তঃসম্পর্কটা বুঝে নেওয়া দরকার। লুথার বলেছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের মূল কথা হবে প্রণোদনা (calling) এবং ভোগ-বিমুখতা। মনে রাখতে হবে এই দুটি ধারণাই এসেছে রোমান ক্যাথলিক ধর্মাচরণের পদ্ধতি থেকে। কিন্তু ক্যাথলিক ধর্মে প্রণোদনা এবং ভোগ-বিমুখতার অভ্যাস করতে হত সন্ন্যাসীদের। প্রোটেস্ট্যান্টরা তা জনসাধারণের কর্তব্য বলে প্রচার করে।  ক্যালভিন এই দুই জীবনচর্যার নিয়মের সঙ্গে যোগ করলেন পূর্ব-নির্ধারণের তত্ত্ব (predestination) অর্থাৎ, কেউ তার জীবনের শেষে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হতে পারবে কিনা তা পূর্ব-নির্ধারিত। কিন্তু পূর্ব-নির্ধারণের তত্ত্ব এক ধরণের সংশয়বাদের জন্ম দিল, কারণ এর ফলে কোন বিশেষ জীবনযাপনের ধরণ -- তা সে ভোগ-বিমুখতাই হোক বা নিয়মিত গির্জায় যাওয়া – আর স্বর্গপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে পারল না। এই সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে নব্য-ক্যালভিনবাদীরা নিয়ে এলেন প্রমাণের ধারণা। তাঁরা বললেন ইশ্বরের ওপর প্রকৃত বিশ্বাস থাকলে জীবনের শেষে ঈশ্বর প্রাপ্তি হবে আর প্রকৃত বিশ্বাস প্রমাণিত হবে দৈনন্দিন জীবনচর্যার মাধ্যমে। অর্থাৎ, প্রতিদিনের কাজে মনোযোগ এখন ইশ্বর বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। এখান থেকে ওয়েবার সওয়াল করলেন যে ভোগ-বিমুখতা এবং দৈনন্দিন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ঈশ্বর সাধনার এই পথ, পুঁজিবাদের ক্রমাগত বিনিয়োগের মুল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যদিও এটাও মনে রাখা দরকার যে ওয়েবার বলেছেন যে প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতা কিন্তু পশিম ইউরোপে পুঁজিবাদের সূচনাকালেই প্রাসঙ্গিক ছিল। পুঁজিবাদ যখন নিজের কাঠামো এবং মূল্যবোধ গড়ে নিল তখন প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার প্রয়োজনও ফুরোল।   এবার আসা যাক এই প্রবন্ধের তৃতীয় এবং মূল অংশে -- দেখা যাক স্মিথকে প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার এই কাঠামোতে কীভাবে আঁটানো যায়।

    অ্যাডাম  স্মিথ, পূঁজিবাদী মূল্যবোধ এবং প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতা
    ওয়েবারের প্রোটেস্ট্যান্ট এথিক্স এন্ড স্পিরিট অব ক্যাপিট্যালিসম প্রকাশিত হওয়ার পরে নানারকমের সমালোচনা প্রকাশিত হয়। এই সমালোচনাগুলির মধ্যে দুটি ধারা বিশেষ গুরত্বপুর্ণ। তার মধ্যে একটি ধারার বক্তব্য হল, ওয়েবার যেভাবে নব্য-ক্যাল্ভিনবাদকে ব্যাখ্যা করেছেন সেটি ভুল। অন্য ধারাটি দেখানোর চেষ্টা করে ওয়েবার যেভাবে প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার সঙ্গে পুঁজিবাদের সম্পর্ক দেখাচ্ছেন সেটি ঐতিহাসিকভাবে ভুল। এই দ্বিতীয় ধারাটির অন্যতম প্রধান লেখক গর্ডন মার্শাল দেখান যে ওয়েবার যে সংযোগের কথা বলছেন তা্র প্রমাণ একমাত্র অষ্টাদশ শতকের স্কটল্যান্ডে কিছুটা পাওয়া যায়। পূঁজিবাদী উন্নয়ন এবং প্রোটেস্ট্যান্টিস্মের সংযোগ সবথেকে রাশিবিজ্ঞান সম্মত ভাবে দেখিয়েছেন সাশা বেকার এবং লুডগার উসম্যান। জার্মান তথ্য ব্যবহার করে তাঁরা দেখিয়েছেন যে যেসব জায়গায় প্রোটেস্ট্যান্টধর্মী বেশী, জার্মানির সেইসব জায়গায় উন্নয়নের মাত্রাও বেশী। কিন্তু যে কারণটি তাঁরা নির্দেশ করেছেন সেটি ওয়েবারের প্রণোদনা-তত্ত্ব (beruf or calling) থেকে আলাদা। বেকার ও উসম্যান দেখিয়েছেন যে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মে শিক্ষার গুরুত্ব বেশী (যেহেতু শিক্ষিত হলে মানুষ নিজেই বাইবেল পড়তে পারবে এবং যাজক নির্ভরতা কমবে) এবং সেই কারণে  প্রোটেস্ট্যান্ট এলাকায় শিক্ষার হার বেশী। প্রোটেস্ট্যান্ট এলাকায় উন্নয়নের মাত্রা বেশী হওয়ার কারণও সেটাই।
      ওয়েবার তত্ত্বের ঐতিহাসিক প্রমাণের পথ ধরেই আমাদের প্রবন্ধে স্মিথের প্রবেশ। প্রোটেস্ট্যান্টিসম যদি সত্যি পূঁজিবাদী বিকাশে সদর্থক ভূমিকা নিয়ে থাকে তাহলে পূঁজিবাদী অর্থনীতির প্রথম তত্ত্বকার স্মিথের লেখায় তার ছাপ থাকে উচিত। বলাই বাহুল্য, অন্য অনেক কিছুর মত, এটাও আমি প্রথম বলছি তা নয়। ক্রিস্টিয়ান এটজ্রোট তাঁর প্রবন্ধে এরকমই একটা বক্তব্য রেখেছেন। ক্রিস্টিয়ানের লেখা থেকে বেরিয়ে আসে যে সমসাময়িকরা স্মিথকে খুব কট্টর ক্যাল্ভিনিস্ট হিসেবে দেখতেন না। খৃস্টান হিসেবে স্মিথ ছিলেন অ-গতানুগতিক। সমাজে চার্চের ভূমিকা সম্পর্কে স্মিথ ছিলেন সন্দিহান। বিভিন্ন চার্চের মধ্যে একমাত্র নব্য-ক্যালভিনীয় চার্চ সম্পর্কেই স্মিথ সদর্থক বক্তব্য রেখেছেন। ওয়েবারের মতে প্রোটেস্ট্যান্টিসমের তিনটি লক্ষণ ছিল যা পূঁজিবাদী মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এগুলি হল, পরিশ্রমী মানসিকতা, ভোগ-বিমুখতা এবং মোক্ষ লাভের জন্য প্রতিযোগিতা। ক্রিস্টিয়ান দেখাচ্ছেন এই তিনটি বিষয়কেই স্মিথ তাঁর লেখায় প্রাধান্য দিয়েছেন। স্মিথ তাঁর থিওরি অব মরাল সেন্টিমেন্ট বইতে বলেছেন যে দূরদর্শী মানুষ বর্তমানে কঠোর পরিশ্রম এবং ভোগ-সঙ্কোচন করেন যাতে তাঁর ভবিষ্যত জীবনে সুস্থিতি আসে। মনে রাখা দরকার যে স্মিথের উদ্যোগপতিরা কিন্তু নিও-ক্ল্যাসিক্যাল উদ্যোগপতিদের মত নন। নিও-ক্ল্যাসিকাল তত্ত্বে উপযোগই শেষ কথা আর উপযোগ আসে একমাত্র ভোগ থেকে। স্মিথের পৃথিবীতে উদ্যোগপতিরা চালিত হন সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে। এছাড়া, নব্য ক্যালভিনবাদীরা মোক্ষ লাভের জন্য যে প্রমাণের কথা বলেন, স্মিথ বর্ণিত বাজার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তা একভাবে পাওয়া যায় কারণ স্মিথের পৃথিবীতে যোগ্যরাই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন।
      ক্রিস্টিয়ানের মতে উপরের তিনটি লক্ষণ দিয়ে স্মিথকে প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার ধারক হিসেবে গণ্য করা যায়। কিন্তু এছাড়াও আরো দুভাবে স্মিথের মধ্যে প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার ছায়া লক্ষ্য করা যায়। তার একটি ঐতিহাসিক আর অন্যটি দার্শনিক। ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদরা সাধারণভাবে খাজনা উপার্জনকারী শ্রেণীর বিরোধী ছিলেন। তাঁরা মনে করতেন খাজনা উপার্জনের পেছনে কোন উৎপাদনশীল কাজ নেই। খাজনা শুধুমাত্র বিনিয়োগযোগ্য মুনাফাকে কমিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির পথ বন্ধ করে দেয়। ঐতিহাসিকভাবে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের উত্থানের পেছনেও এই খাজনা বিরোধিতার একটা বড় ভুমিকা ছিল।  ক্যাথলিক ধর্মের যে যে আচারের বিরোধিতা করে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের উত্থান তার মধ্যে অন্যতম ছিল ক্ষমা বিক্রির অধিকার (indulgence)। এই নিয়মের মাধ্যমে রোমান ক্যাথলিক চার্চ বিভিন্ন পাপের জন্য ক্ষমা বিক্রি করতে পারত। একটু ভেবে দেখলে বোঝা যায় এই ক্ষমা বিক্রির জন্য প্রাপ্ত অর্থ আসলে অর্থনৈতিক খাজনা’র রকমফের। জমির জন্য প্রদেয় অর্থকে আমরা খাজনা বলি। আর জমি ছাড়া অন্য কোন দ্রব্য বা সেবা যার যোগান সীমাবদ্ধ, তার জন্য দেয় বাড়তি অর্থকে বলি অর্থনৈতিক খাজনা। যেমন, নাইকির জুতোর জন্য অ-ব্রান্ড জুতোর থেকে অতিরিক্ত যে টাকা দিতে হয় সেটা অর্থনৈতিক খাজনা, কারণ নাইকির জুতোর যোগান সীমাবদ্ধ। কেউ চাইলে ওইরকম দেখতে জুতো বানাতে পারেন, কিন্তু নাইকির জুতো বানাতে পারবেন না। ঠিক সেরকম, এই ক্ষমা বিক্রির অধিকার ছিল শুধুমাত্র রোমান ক্যাথলিক চার্চের। তাই তার জন্য প্রদেয় অর্থও একরকমের অর্থনৈতিক খাজনা যার কোন উৎপাদনশীলতা নেই এবং যা বিনিয়োগযোগ্য মুনাফার পরিমাণ কমিয়ে পূঁজি সন্নিবেশে বাধার সৃষ্টি করে। নীতিগতভাবে তাই প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের মতই, ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিও ক্ষমা বিক্রির প্রথার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
      খাজনা বিরোধিতার ইতিহাস আরও একভাবে প্রোটেস্ট্যান্ট ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে আছে। পশ্চিম ইউরোপে প্রোটেস্ট্যান্টবাদের উত্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস যার মধ্যে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য ১৫২৪-২৫ এর জার্মানির কৃষক বিদ্রোহ যা কিন্তু খাজনা ও সুদ আদায়কারী যাজক সম্প্রদায়ের বিরূদ্ধেও ছিল। অর্থাৎ, ঐতিহাসিকভাবে, প্রোটেস্ট্যান্টবাদের সঙ্গে সামন্তবাদ বিরোধিতার একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল।
       স্মিথের তত্ত্বের সঙ্গে প্রোটেস্ট্যান্টবাদের এই ঐতিহাসিক যোগ ছাড়াও একটি দার্শনিক যোগও রয়েছে। নীতিতাত্ত্বিকদের মধ্যে স্মিথই প্রথম বলেন যে পুঁজিবাদী সমাজ এমন যেখানে সবাই যদি নিজের ভালো করার দিকে মন দেয়, তাতেই সমাজের মঙ্গল। এই নৈতিক ধারণাটি কিন্তু অভিনব একটি ধারণা। কারণ, সাধারণ ভাবে প্রায় সবধরণের নৈতিকতাই মনে করে যে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করে গেলে তা সমাজের জন্য হিতকারী হতে পারে না। স্মিথ এর Laissez- faire বা মুক্ত বাণিজ্যের তত্ত্ব ঠিক এর উল্টো কথাই বলে। একভাবে দেখলে প্রোটেস্ট্যান্টবাদও এই ধরণের একটি কথাই বলে। ক্যাথলিক ধর্মে (এবং আরো অনেক ধর্মেই) ইহলোকের কাজকে পাপ বলে ধরা হয় যা ঈশ্বরের পথ থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যায়। প্রোটেস্ট্যান্টিসম প্রথম বলল যে নিজের দৈনন্দিন কাজ করার মধ্যে দিয়েও ইশ্বরকে পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্মিথ এবং প্রোটেস্ট্যান্টিসমের মিলটা প্রণিধানযোগ্য – দুই ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র স্বার্থের সন্ধানে নিয়োজিত থাকলে তা এক বৃহত্তর লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। স্মিথের ক্ষেত্রে যেখানে এই বৃহত্তর লক্ষ্য হল সামাজিক মঙ্গল, প্রোটেস্ট্যান্টিসমের ক্ষেত্রে এই লক্ষ্য ঈশ্বরলাভ।

    শেষের কথা
    ম্যাক্স ওয়েবার বলেছিলেন পূঁজিবাদের সূচনায় প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার একটি বড় ভুমিকা আছে। আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখানোর চেষ্টা করলাম প্রথম পুঁজিবাদী তাত্ত্বিক অ্যাডাম স্মিথের দর্শনে প্রোটেস্ট্যান্ট নৈতিকতার ছায়া রয়েছে। কিন্তু এখানে এই সম্পর্ককে যান্ত্রিক কার্য কারণ হিসেবে না দেখাই ভালো। মানে ব্যাপারটা ঠিক এরকম নয় যে প্রোটেস্ট্যান্টিসমের জন্য পুঁজিবাদ এসেছে বা এরকমও নয় যে স্মিথ ছোটবেলায় প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের সংস্পর্শে এসে তাঁর অর্থনীতির তত্ত্ব রচনা করেন। ১৫০০ থেকে ১৮০০ এই তিনশ বছর ইউরোপের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সময় যা পৃথিবীর ইতিহাসেরও মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরকম একটা সময়ে নতুন নতুন ভাবনা আসে, তারা এবার একে অপরের সংস্পর্শে এসে আরো নতুন ভাবনার জন্মদেয়। ভাবনার ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমাদের কাজ সেই যোগসূত্রগুলো চিনে নেওয়া। এই প্রবন্ধটি সেই পথের এক সামান্য পদক্ষেপ মাত্র।

    পাঠসূত্রঃ
    Becker, S. O., & Woessmann, L. (2009). Was Weber wrong? A human capital theory of Protestant economic history. The quarterly journal of economics124(2), 531-596.
    Etzrodt, C. (2008). Weber's Protestant-Ethic thesis, the critics, and Adam Smith. Max Weber Studies8(1), 49-78.
    Smith, A. (2012). Wealth of Nations. Wordsworth Editions
    Haakonssen, Knud (ed.) (2002). Adam Smith: The Theory of Moral Sentiments. New York: Cambridge University Press.
    McCloskey, Deirdre Nansen, 2006. "The Bourgeois Virtues," University of Chicago Press Economics Books, University of Chicago Press, 
    Weber, M. (2001). The Protestant ethic and the spirit of capitalism. Routledge.

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    পত্তাদকাল - %%
    আরও পড়ুন
    বাদামি - %%
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন