এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • অন্য দেশের পাখি - ১২

    শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ৩১৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছবি: রমিত
    ১২


    বইয়ে পড়াটা এক ব্যাপার, আর চোখে দেখার অভিজ্ঞতা অন্য। যেটাকে এতদিন ঝুঁটি বলে ভেবে এসেছে অবাক হয়ে মুড়কি দেখলো সেটা ঝুঁটি ঠিক নয়, অর্ধচন্দ্রাকার একটা মুকুটের মতো, ঠিক যেমন পুরোনো দিনে অনেক সৈন্যের শিরস্ত্রাণের উপর থাকতো একটা – মুকুট যেরকম ঠিক সেভাবে নয় – লম্বভাবে বসানো। পুরুষ কক অব দ্য রকের মুকুটটা উজ্জ্বল লালচে-সোনালী রঙের, ঠোঁটের ঠিক ওপর থেকে শুরু হয়ে মাথা পেরিয়ে গলার পেছনটা পর্যন্ত। এই পাখির শরীরের নীচের দিকটা মুড়কি ভেবেছিল কালো, এখন দেখলো কালো শুধু পিছনের দিকটাই, একেবারে লেজ পর্যন্ত পুরোটাই, সামনেটা কিন্তু সাদা, সদ্য-কাচা ভিজে সাদা কাপড়ে নীল দিলে যে রংটা পাওয়া যায়, অনেকটা সেই রকম। আর উপরে যে সোনালী-লালের ঘেরাটোপ – একেবারে মাথার উপরে উষ্ণীষটা সমেত – সেটার বর্ণনা দেওয়া যায় কীভাবে? সিল্কের গেরুয়া চাদর যদি নিজের সিল্কত্ব বজায় রেখেও ভেলভেটের হত, তাহলে বোধ হয় খানিকটা এরকমই দেখতে হত।

    ওদের নৌকো যখন জল ছেড়ে ডাঙা ছুঁলো তখন ওদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে চার-পাঁচ জনের একটা দল, একটু দূরে খোলা জীপের মতো একটা গাড়ি। চার ঘণ্টারও বেশি গভীর রাতের অন্ধকারে নদীতে নৌকোয় আসতে আসতে চোখ খানিকটা অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, নদীর ঘাট থেকে গাড়িটা পর্যন্ত যেতে যেতেই ওরা বুঝলো, এমন জঙ্গল ওরা আগে দেখেনি তো বটেই, অন্ধকারও যে এত ঘন হতে পারে তা ওদের কল্পনাতেও ছিল না। জীপে ওঠার পর শ্যাভেজ বললেন, এই জঙ্গল এত অন্ধকার কারণ সূর্যের আলো জঙ্গলের ভেতরে ঢোকার সুযোগই প্রায় পায় না, চাঁদের বা তারার আলো করবেটা কী! সারা পৃথিবীতে আনুমানিক কোটিখানেক যে উদ্ভিদ, প্রাণী আর কীটপতঙ্গের প্রজাতি আছে তার অর্ধেকই পাওয়া যায় অ্যামাজনের এই জঙ্গলে। লম্বা লম্বা গাছ এখানে এত ঘন যে তাদের পাতাগুলো আকাশে একটার উপর একটা ছড়িয়ে পড়ে ছাতার মতো ঢেকে রাখে আকাশটাকে, আমরা যারা এই ছাতার নীচে থাকি আকাশ দেখতে পাই না, দেখতে পাই না তারাও। এরই মধ্যে আছে অজস্র ফলের গাছ। আমরা যাদের দেখতে যাচ্ছি সেই কক-অব-দ্য-রক এর প্রধান খাদ্য নানারকমের ফল। সাধারণ অবস্থায় এরা একা একাই ঘোরে – মুড়কি যেমন বলছিল বড়ই লাজুক এরা – যেখানে ফলের গাছ দেখতে পায় সেখানেই গাছে বসে ফল খায়। মজার কথা হল ফল যত পায় ততই খায় ঠিকই, কিন্তু হজম করতে পারে না ফলের ভেতরের বীজগুলো! সেই বীজ মাটিতে পড়ে জন্ম নেয় নতুন নতুন গাছ, কাজেই, ফলের গাছের সংখ্যাও যায় বেড়ে।

    এই পর্যন্ত বলে একবার নিজের ঘড়ির দিকে তাকালেন শ্যাভেজ, বললেন, মনে হয় আধঘণ্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছে যাবো আমাদের উদ্দিষ্ট লেকিং-সাইটে, গিয়ে দেখবে জায়গাটা পাহাড়ের পাথুরে ঢালের কাছাকাছি। মুড়কির কাছ থেকে আমরা এর মধ্যেই শিখে নিয়েছি মা-পাখি ডিম ফোটায় পাথুরে ঢালের খাঁজে বাসা তৈরি করে, কাজেই লেকিং সাইটগুলো সাধারণত হয় ঢালের কাছাকাছিই। এই পাথুরে ঢালেও দেখবে প্রচুর ফলের গাছ, পাখিদের বেহজম বীজের দৌলতে।

    ঢালটার থেকে খানিকটা দূরে – যতটা দূরে থাকলে বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে লেকিং-সাইটের দৃশ্য দেখা যাবে কিন্তু পাখিদের বিরক্ত করা হবে না – একটা ওয়াচ টাওয়ার। শ্যাভেজের নির্দেশে টাওয়ারে উঠে ক্যামেরা-বাইনোকুলার নিয়ে পজিশন নিল ওরা।

    শ্যাভেজ বলেছিলেন এ বছরের লেকিং অ্যাক্টিভিটি এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কেন বলেছিলেন এবারে বোঝা গেল। বছরের এই সময়টায় এরই মধ্যে পাতা-খসানোর সময় হয়েছে শুরু। পাতার ছাতা-খোলা জঙ্গলে রাতের বেলায় কেন – এমনকি দিনের বেলাতেও হঠাৎ ঢুকলে হয়তো বোঝা যাবে না সেটা, কিন্তু ওয়াচ-টাওয়ারে উঠে ফলের গাছের দিকে তাকাতেই দেখা গেল ভোরের লালচে আলো এসে পড়েছে গাছের ওপর, আর মাঝে মাঝেই দেখা যাচ্ছে এক-একটা ডাল যা একেবারেই পত্রহীন। সেই পত্রহীন প্রতিটি ডালে অন্তত দুটো করে পাখি, রঙ যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে ওদের গা থেকে। মুড়কিদের জীপ যখন পাহাড়ের ঢালটার থেকে অন্তত মাইল তিন-চারেক দূরে তখন থেকেই প্রবল কোলাহল শুনতে পাচ্ছিল ওরা। যতই ওরা এগিয়ে আসে ততই শব্দের জোর বেড়ে যায়, মুড়কি যেন স্পষ্ট শুনতে পায় সমবেত কণ্ঠের অবিরাম আবৃত্তি: ওঠো রে-এ ওঠো রে-এ ওঠো রে-এ ওঠো রে-এ এই এই এই এই যাই..., ওঠো রে-এ ওঠো রে-এ ওঠো রে-এ ওঠো রে-এ এই এই এই এই যাই...! ফল্গুদি আর উল্কিদিকে বললে ওরা হাসে। এখন ওয়াচ টাওয়ার থেকে এই শব্দের সঙ্গে দেখা গেল পুরুষ পাখিদের নানা রকমের কসরৎ; পিঠ বাঁকিয়ে ঘাড় উঁচিয়ে ডাল থেকে এক পা ঝুলিয়ে ডানা ঝাপটিয়ে নিজের নিজের প্রতিভা আর সৌন্দর্যের প্রদর্শন করছে পাখিরা। শ্যাভেজ বললেন, দূর থেকে বসে লক্ষ্য রাখছে কয়েকটা মেয়ে পাখি। ওরা অবিশ্যি দেখতে পেল না একটাকেও!

    সকাল যখন প্রায় সাতটা, শ্যাভেজ বললেন, এই যে পাখিদের এতক্ষণ অবধি দেখলে, এবার একটা-একটা করে এদের সংখ্যা কমতে থাকবে। মেয়ে-পাখিদের তোমরা দেখতে পাওনি বললে, কিন্তু মেয়ে যে ক'টা ছিল তারা তাদের পছন্দের বরকে এর মধ্যেই খুঁজে নিতে শুরু করেছে। এক-একটা বর-বউয়ের জোড়া এখন পাহাড়ের ফাটলে তাদের বাসায় চলে যাবে, কিছুক্ষণ পরেই পুরুষ-পাখিটা আবার ফিরে আসবে নতুন একটা বউ পাওয়া যায় কিনা সেই সন্ধানে। যাক বা না যাক, যাদের এবারটায় বউ জুটলো না তারা, আর নতুন আর-একটা বউয়ের সন্ধানে ফিরছে যারা, তারা সবাই এই লেকিং-সাইট ছেড়ে বেরিয়ে যাবে আর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই। তারপর ওরা নিজেদের ইচ্ছেমতো আপন মনে ঘুরে বেড়াবে বিকেল পেরিয়ে প্রায় গোধুলির সময় পর্যন্ত। গোধুলিতে আবার ফিরবে ওরা এই সাইটেই। তারপর আবার, মুড়কির ভাষায়, স্বয়ম্বর সভা!

    গতকাল রাতে, শ্যাভেজ বলতে থাকেন, মুড়কি যখন জিজ্ঞেস করেছিল সূর্য ওঠার আগেই কেন পৌঁছোতে হবে লেকিং সাইটে, আমি বলেছিলাম সূর্যোদয়ের সময়েই কক-অব-দ্য-রক সবচেয়ে সুন্দর দেখতে লাগে। সে কথাটা ঠিকই, কিন্তু সেটা সবটা বলা নয়, আসলে ভোরের বেলাই লেকিং-সাইটে আসবার প্রকৃষ্ট সময়। আমরা যদি কোন কারণে না পৌঁছোতে পারতাম ভোরবেলায়, অথবা কপাল যদি মন্দ হতো আর বৃষ্টি হতো জোরে, আর তার ফলে যদি না দেখতে পেতাম কিছু, তাহলে হয়তো সন্ধ্যেবেলায় আর একটা চান্স নেওয়া যেত। কিন্তু আজ আমাদের কপাল ভালোই ছিল বলতে হবে।

    শ্যাভেজের কথায় ওয়াচ টাওয়ার থেকে এবার খুবই অনিচ্ছের সঙ্গে নামতে হলো ওদের। শ্যাভেজ বললেন ওদের নৌকোয় তুলে দিয়ে প্রজেক্টে চলে যাবেন নিজে। কামিলাকে ওয়াকি-টকিতে খবর পাঠিয়ে দেবেন, ওপারে পৌঁছোলে সে গাড়িতে ওদের নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবে।

    রাত জেগে জঙ্গলে ঘোরার আর শয়ে শয়ে কক-অব-দ্য-রক দেখার আনন্দটা যে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় শেষ হবে তা ওরা কল্পনাও করেনি। চার ঘন্টার উপর নৌকো চলেছে, অন্যদিকের পারটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে ওপারে দাঁড়িয়ে-থাকা কামিলার গাড়িটা, গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে কামিলা হাত নাড়ছে ওদের উদ্দেশে, এমন সময় নৌকোটার অর্ধেক ছাদের ওপর মাঝির ক্যাবিনের ভেতর থেকেই বোধ হয় কেমন একটা জোর যান্ত্রিক শব্দ হলো। মাঝির সহকারীরা দৌড়োল ক্যাবিনের দিকে, আর হঠাৎ নৌকোর গতিবেগ গেল অসম্ভব বেড়ে। ব্যাপারটা কী যে হলো বোঝবার আগেই তীব্র গতিতে নৌকোটা এসে আছড়ে পড়লো ঘাট বা জেটি যা-ই বলা যাক সেটার ওপর। গায়ে সেফটি জ্যাকেট আর মাথায় হেলমেট নিয়ে অর্ধবৃত্তাকার আকাশপথে নৌকোর বাইরে ছিটকে পড়লো উল্কি, কাদার মধ্যে মুখটা প্রায় গেঁথে গেল তার। সঙ্গে সঙ্গে প্রায় অ্যাক্রোব্যাটের ভঙ্গীতে লাফিয়ে তার পাশে নামলো ফল্গু, পাড়ের ওপর দাঁড়ানো কামিলা তার ড্রাইভারকে নিয়ে দৌড়িয়ে নেমে এল উল্কি যেখানে পড়েছে সেখানে, মাঝি আর দলবলও এসে পড়ল প্রায় সেই মুহূর্তেই। ধরাধরি করে তোলা হলো উল্কিকে, পারে নিয়ে গিয়ে শোয়ানো হলো তাকে। ফার্স্ট-এইড দেবার অভিজ্ঞতা আছে ফল্গুর, সে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করল, ড্রাইভারকে কামিলা পাঠিয়ে দিলো তার এক ডাক্তার-বন্ধুকে নিয়ে আসার জন্যে।

    একটু একটু করে উল্কির হাত-পা নড়তে শুরু করল যখন, আর তার সঙ্গে শোনা গেল গোঙানির শব্দ, ঠিক সেই মুহূর্তেই ফল্গু খেয়াল করল ব্যাপারটা।

    মুড়কি কোথায়!

    আশপাশে মুড়কির চিহ্ণমাত্রও নেই। ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝে সময় একটুও নষ্ট না করে নৌকোর লোকজনদের সঙ্গে কথা বললো কামিলা। মেয়েটা উধাও হয়েছে তাদের নৌকো থেকেই, তারা এর দায় এড়াতে পারে না। মাঝির ওয়াকি-টকি থেকে শ্যাভেজকেও খবর পাঠানো হলো। নৌকোর অন্য লোকজনরাও ততক্ষণে হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে পাড়ের ধারে নদীর জলে হাতড়াচ্ছে, কাছাকাছি পড়ে গিয়ে কাদার মধ্যে কোথাও গেঁথে যায়নি তো মেয়েটা?

    কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে পৌঁছলেন। ফল্গুর ফার্স্ট এইডে অনেকটাই কাজ হয়েছে, বললেন ডাক্তার। তাঁরই পরামর্শে উল্কিকে কামিলার গাড়িতে তোলা হলো, ডাক্তার চাইছেন ফল্গুও সঙ্গে আসুক। ফল্গু বুঝতে পারছে না কী সে করবে এখন। মুড়কির উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা না করে সে যায় কী করে!

    কামিলা বললো, আপাতত উল্কিকে তার অ্যাপার্টমেন্টেই নিয়ে যাওয়া হোক।

    তবে মুড়কির কী হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না কিছুই। মাঝ নদীতে নৌকো থেকে সে যে পড়ে যায়নি এটা নিশ্চিত। কিছুক্ষণ আগেও উল্কি আর ফল্গুর সঙ্গে সে উত্তেজিত আলোচনা করেছে জঙ্গলের কক-অব-দ্য-রককে নিয়ে। কামিলাও স্পষ্ট মনে করতে পারে নদীর এপারে দাঁড়িয়ে সে নৌকোয় ফল্গু আর উল্কির সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে মুড়কিকে। সেই মুড়কি হঠাৎ উধাও! এখন ফল্গুর মনের অবস্থা কামিলা ভালোই বুঝতে পারছে। ফল্গু যদি এই অবস্থায় আরও কিছুক্ষণ নদীর পারে থাকতে চায়, যদি ভাবতে চায় এখনই কী কী করা দরকার, তাহলে থাকাই ভালো। উল্কির দায়িত্ব আপাতত সে নিজে এবং তার ডাক্তার-বন্ধু নিতে পারবে। একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবুক ফল্গু।

    কিন্তু কী ভাববে ফল্গু? কী করতে পারে সে? চোদ্দ বছরের একটা মেয়েকে নিজের দায়িত্বে তার বাবা-মা-স্কুলের কাছ থেকে নিয়ে এসেছে এই বিদেশে, এখন কী জবাব দেবে সে তাদের কাছে?

    নদীতে এখন ভাটার সময়, জল অনেকটা সরে গিয়ে জেটি থেকে জলের দূরত্ব বেড়ে গেছে অনেকটা। নদীর পার ধরে হাঁটতে হাঁটতে জল-সরে-যাওয়া কাদায় কোন পায়ের ছাপ দেখা যায় কিনা বোঝবার চেষ্টা করল ফল্গু। নাঃ, তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না। নদীর দিকে তাকায় সে, কয়েকটা ছোট ছোট নৌকো – দেখে মনে হয় খালিই বেশির ভাগ – নোঙ্গর করা। ওগুলোর কোন একটায় মুড়কি কি আছে এখন? কেউ কি তুলে নিয়ে গেছে তাকে?

    বিহ্বল অবস্থাটা অবিশ্যি একটু পরেই কেটে গেল ফল্গুর, গত বছর দশেক ধরে নানা রকমের অপরাধীর মোকাবিলা করেছে সে, এখন ঠাণ্ডা মাথায় সমস্ত ব্যাপারটা ভাবা দরকার। কলকাতা থেকে এত দূরে, দক্ষিণ আমেরিকার এই অ্যামাজন অঞ্চলে মুড়কির কোন শত্রু থাকা সম্ভব নয়, আজ মুড়কির কোন ক্ষতি যদি হয়ে থাকে, সেটা যে-ই ঘটাক, তার আসল টার্গেট ফল্গু, মুড়কি নয়। এবং তা-ই যদি হয়, কী উদ্দেশে ওরা এখানে এসেছে অপরাধী সেটা জেনে গেছে এর মধ্যেই। অপরাধীর আসল উদ্দেশ্য ওদের কাজ থেকে বিরত করা, ভয় দেখিয়ে ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া, মুড়কির কোন ক্ষতি করা নয়। এবং তাহলে, মুড়কিকে যা করা হয়েছে তা হলো অপহরণ, আর কিছু নয়। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে মাথাটা পরিষ্কার হয়ে আসে ফল্গুর, চিন্তা করার ক্ষমতা স্বাভাবিক হয়ে আসে, এবং তার স্বাভাবিক প্রবণতার প্রভাবে সে প্রতিজ্ঞা করে, ছোট মেয়েটার উপর এই অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবে সে, আর যে কাজটা করতে এসেছে সেটা তো করবেই।

    কিন্তু মুড়কির বাবা-মা? ফল্গুর বিশ্বাস, মুড়কির কোন ক্ষতি এখনও অন্তত হয়নি। কিন্তু সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে ওর বাবা-মাকে খবরটা না-জানানো কি উচিত হবে? জানায় যদি, যে করেই হোক ওর বাবা-মা এখানে এসে পড়বেন নির্ঘাৎ, এবং অপরাধীদের কাছে হার স্বীকার করে মুড়কিকে ফিরিয়ে এনে মাথা নীচু করে কলকাতায় ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না তখন।

    কিন্তু তবুও, মুড়কির বাবা-মাকে অন্ধকারে রাখাটা কি অনৈতিক হবে না? নিজের চিন্তাশক্তির ওপর যতোই বিশ্বাস থাকুক তার নিজের, কোথাও তার হিসেবে একটুও ভুল হলে সারা জীবন আফশোস করেও নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারবে না সে। অনেক ভেবে ফল্গুর মনে হয় চন্দ্রশেখরের সঙ্গে একটু আলোচনা করে নেওয়া দরকার।

    চন্দ্রশেখরকে ফোন করতে যাবে এমন সময় মাঝি আর তার একজন সহকারী হাজির। মুড়কির ব্যাপারটায় ওরা অত্যন্ত দুঃখিত, বলে ওরা, কিন্তু বোঝাই তো যাচ্ছে জলে পড়েনি মুড়কি। ওরা ওদের যথাসাধ্য খুঁজেছে। এখন যদি হেফা ওদের যাবার অনুমতি দেন। হেফা কথাটা আগে শোনেনি ফল্গু, তবে বুঝতে পারল আমাদের দেশে যেমন যারা নিজেদের নিম্নবর্গীয় বলে মনে করে তারা উচ্চপদস্থ মহিলাকে সম্বোধন করে মেমসাহেব বলে, হেফাও সেই জাতীয় কিছু। সে বললো, আর একটু অপেক্ষা করো তোমরা, যে হেফা গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন আগে, তাঁকে জিজ্ঞাসা করে নিই। কামিলাকে ফোন করে সে।

    কামিলা ফোনটা ধরেই বললো, সে নিজেই ফোন করতে যাচ্ছিল ফল্গুকে, ভালোই হলো ফল্গুই ফোন করেছে। প্রথমেই সে আশ্বস্ত করলো, উল্কি এখন অনেকটাই সুস্থ, উঠে বসেছে, ব্রেকফাস্ট খেয়েছে। তারপর জানায়, শ্যাভেজ খবর পাঠিয়েছেন তিনি মুড়কির খবরটা পেয়েই আরেকটা নৌকোয় রওনা দিয়েছেন, যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছবার চেষ্টা করছেন। ফল্গু যদি চায়, তাহলে ও গাড়ি পাঠিয়ে দেবে, ফল্গু চলে আসতে পারে, শ্যাভেজের সঙ্গে কথাবার্তা কামিলার বাড়িতেই হতে পারে।

    অতি দ্রুত পরবর্তী কর্তব্যগুলো স্থির করে ফেলে ফল্গু। এক নম্বর, এই নৌকোটাকে এখন চলে যেতে দেওয়া যাবে না, আটকিয়ে রাখতে হবে যে করেই হোক। নোঙ্গর করা ছোট ছোট নৌকোগুলো দেখে ওর মনে হয়েছিল, এই নৌকোগুলোর মধ্যে একটাতে মুড়কির বন্দী হয়ে থাকা অসম্ভব নয়। এখন মনে হচ্ছে অন্য নৌকোয় নয়, এই নৌকোতেই কোন চোরা কুঠরী থাকতে পারে, সেখানেই হয়তো বন্দী মুড়কিকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। শ্যাভেজ যতক্ষণ না আসছেন ততক্ষণ এই সন্দেহের নিরসন নেই। তার মানে, নদীর এই পারে অন্তত শ্যাভেজ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে ওর।

    লোক দুটোকে বলে ফল্গু, তোমরা একটু অপেক্ষা করো, হেফা আসছেন, উনি তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান। তারপর যেও তোমরা। তারপর চন্দ্রশেখরকে ফোন করে। কথার মাঝখানে একটাও কথা না বলে চুপচাপ ফল্গু্র সব কথা শুনে যান চন্দ্রশেখর। ফল্গুর কথা শেষ হলে বলেন, আমি তোমার সঙ্গে একমত। আমারও মনে হয় আসল আক্রমণটা তোমার কথা মাথায় রেখেই, মুড়কিকে অপরাধীরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, সম্ভবত এখনও তার কোন ক্ষতি হয়নি। আজকের দিনটা অপেক্ষা কর, এমন কিছু তফাৎ হবে না এক দিনে। আমি ভাবব, তুমিও ভাবো। কাল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমিই ফোন করব কাল।

    নদীর ধারে বসে গেল লোক দুটো, ফল্গুর মনে হলো একটু যেন উশখুশ করছে ওরা। একজন উঠে দাঁড়াল একবার, পকেট থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরাতে গিয়েও ধরাল না। সিগারেটটা আবার পকেটে রেখে বসে পড়লো। পেরুতে এসে অবধি ফল্গু কোন লোককে প্রকাশ্য জায়গায় ধুমপান করতে দেখেনি। এই লোকটাও হয়তো সিগারেট ধরাতে যাচ্ছিলো অন্যমনস্ক ভাবে, খেয়াল হতে রেখে দিল পকেটে। তার মানে লোকটা যথেষ্ট অশান্তিতে আছে। প্রকাশ্যে পেরুর লোকদের যা স্বাভাবিক চলন-বলন, স্বাভাবিক নাগরিক সতর্কতা, এখন এ সব আর মনে নেই তার। ফল্গু লক্ষ্য করে নিজেদের মধ্যে কথা ওরা বলছে ঠিকই, কিন্তু নৌকোয় ওদের সাথীদের মধ্যে ফিরে যাবার বিশেষ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফল্গুকে এখন অতি দুরূহ একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই যে হঠাৎ চুরি হয়ে গেল মুড়কি, এর ফলে সমস্ত ঘটনাটাই কেমন যেন বদলে গেল! এতক্ষণ পর্যন্ত কামিলা বা শ্যাভেজের কাছে ওরা শুধু উৎসাহী ট্যুরিস্টই ছিল, কিন্তু এখন কি সেটা আর বিশ্বাস্য হবে? স্বাভাবিক ভাবেই থানাপুলিশ করার চেষ্টা করবেন ওঁরা, ওঁদের ঠেকিয়ে রাখা যাবে কি আদৌ? না কি ফল্গু এখন অকপটে এই পেরু ভ্রমণের উদ্দেশ্য খুলে বলবে ওঁদের?

    এইসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দূরে ও দেখতে পায় শ্যাভেজকে, নৌকোয়। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত গতিতে নৌকোটা এগিয়ে আসছে। মাঝি ও তার সঙ্গীও দেখেছে ওঁকে, ওরা উঠে দাঁড়ালো। ওরা কি এখন পালাবার চেষ্টা করবে? করে যদি, ফল্গুর কি সেটা নিবারণ করা দরকার? পারবে সে? একা? তার পকেটে রিভলভার আছে একটা, কিন্তু সেটা বের করা কি উচিত হবে?

    নৌকোটা জেটিতে এসে দাঁড়াল যখন লোক দুটো তখনও দাঁড়িয়েই রইল, পালাবার কোন লক্ষণ নেই। উঠে দাঁড়াল ফল্গুও। কাদা পেরিয়ে, সিঁড়ি বেয়ে যখন উঠে আসছেন শ্যাভেজ, লোক দুটো এগিয়ে গেল তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্যে। মুখে নয়, হাত নাড়িয়ে ওদের অপেক্ষা করতে বলে শ্যাভেজ এগিয়ে গেলেন ফল্গুর দিকে: কোন খবর পাওয়া গেল?

    না, কোন খবর নেই এখনো, তবে আপনি বোধ হয় ওই লোক দুটোর সঙ্গে কথা বললেই পারতেন। ওদের সঙ্গে কথা বলেই আন্দাজ করতে হবে পুরো ঘটনাটা।

    জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকাতেই ঝরঝর করে কথা বলতে শুরু করে লোক দুটো।

    গত রাতে নদীর ওপারে পৌঁছে আপনারা চারজন যখন অপেক্ষমান জীপ-এ চড়ে জঙ্গলের ভিতরে চলে যান, তার কিছু পরেই চারজন লোক ছোট একটা নৌকোতে ঠিক আমাদের নৌকোটার পাশে এসে দাঁড়ায়। কোন কথা না বলে লাফ দিয়ে আমাদের নৌকোয় ঢুকে পড়ে লোকগুলো। ওরা সশস্ত্র ছিল, কোন কথা না বলে রিভলভার বের করে ওরা, এবং নির্দেশ দেয় যতটা সম্ভব হাই-স্পীডে নৌকো চালিয়ে যে-দিক থেকে আমরা সদ্য এসেছি সেই দিকেই ফিরতে। প্রায় আধ ঘন্টা চালাবার পর ওরা আমাদের নির্দেশ দেয় একই পথে একই গতিতে আবার ফিরে যেতে। আমরা ওদের নির্দেশ মতো নৌকো চালাই, এবং ফিরে আসি। সমস্ত সময়টুকুই ওদের রিভলভার আমাদের দিকে তাক করা ছিল। ফেরার পর ওদের একজনকে আমাদের পাহারা দেবার নির্দেশ দিয়ে ওদের মধ্যে তিনজন আমাদের নৌকোর বাকি তিনজনকে রিভলভার ঘাড়ে ঠেকিয়ে জঙ্গলের ভিতর নিয়ে চলে যায়। আমরা মনে মনে ভাবছিলাম ওরা আমাদের উল্টো দিকে আধঘন্টা চালিয়ে আবার উল্টো পথে সেই জায়গাতেই ফিরে আসার নির্দেশ দিল কেন। পরে অবিশ্যি বুঝতে পারলাম, ওরা আমাদের নৌকো চালাবার দক্ষতার পরীক্ষা নিচ্ছিল। সে যাই হোক, ওদের নির্দেশ মতো আমরা দুজন অন্য লোকটার নজরদারিতে নৌকোতেই বসে রইলাম। প্রায় আধ-ঘন্টাটাক পর ওরা তিন জন ফিরে এল, কিন্তু আমাদের লোকরা এল না। সব দেখে এবং বুঝেও আমরা কিছু বলতে পারিনি, আমাদের সে সাহস ছিলনা। ওদের আদেশে আমরা আপনাদের ফেরার জন্যে নৌকোয় অপেক্ষা করতে থাকি।

    যে লোকটাকে ওরা আমাদের পাহারা দেবার জন্যে রেখে গিয়েছিল, ফিরে এসে তাকে ওরা নেমে যেতে বলল। খুব সহজ যুক্তি, আসার সময় নৌকো নিয়ে এসেছে পাঁচ জন লোকে, ও যদি একই নৌকোয় ফেরে, তাহলে ফেরার সময় পাঁচ জনের জায়গায় ছ'জন হবে, হিসেবে মিলবে না। আমরা ভাবছিলাম এবার ওদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হবে, হয়তো বা মারামারিও। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে লোকটা বিনা আপত্তিতে নেমে গেল নৌকো থেকে! নামার আগে, আরও আশ্চর্য, ওই তিনজন কিছু না বলা সত্ত্বেও নিজের হাতের রিভলভারটা নৌকোর খোলে রেখে দিয়ে গেল লোকটা। একটাও কথা না বলে সেই রিভলভারটা তুলে নিল ওই তিনজনের মধ্যে একজন।

    ফেরার সময় আপনি এলেন না, এলেও আপনি কিছু বুঝতে পারতেন না, কারণ আপনি তো শুধু আমাদের দুজনকেই চিনতেন পেরু অ্যামাজন রেনফরেস্ট প্রজেক্টের কর্মচারী হিসেবে, বাকিরা তো এমনিতেই ভাড়াটে কর্মী, ওদের তো আপনি এমনিতেই চিনতেন না, আর সেদিন রাত্তিরে অন্ধকারে যাবার সময় ভালো করে ওদের মুখও নিশ্চয়ই দেখতে পাননি।

    আপনারা ফিরে আসার আগেই লোকগুলো আমাদের স্পষ্ট নির্দেশ দিল ওদের তিনজন নতুন লোক যে আমাদের মধ্যে আছে তা যেন আমরা কিছুতেই বুঝতে না দিই। আমরা ভয়ে ভয়ে ছিলাম ফেরার সময় মাঝ-নদীতে ভয়ঙ্কর একটা-কিছু হবে। কিন্তু কিছুই হলো না, যা হলো সবই এপারে এসে, নামার মুখে।

    তোমাদের সঙ্গে বাকি যে তিনজন এসেছে, খুনি তিনজন, তারা এখন কোথায়? – জিজ্ঞেস করলেন শ্যাভেজ।

    সত্যি কথা বলছি হুজুর, আমরা কিছু জানিও না বুঝতেও পারছি না। ছোট মেয়েটা যখন হারিয়ে গেল, আমরা খুঁজব বলে ওদের ডাকতে গেলাম, গিয়ে দেখি একজন তারই মধ্যে পালিয়েছে। তখন আমরা দুজন আর ওদের দুজন – এই চার জন মিলে খুঁজলাম, পেলাম না। তারপর নৌকোয় ফিরেছি, হাত-পা ধুতে ধুতে দেখি বাকি দুজনও পালিয়েছে ততক্ষণে। তখনই এলাম হেফার সঙ্গে দেখা করতে, কিন্তু ওদের পালানোর খবরটা দিতে সাহস পাইনি হুজুর।

    শ্যাভেজ বললেন, তোমরা নৌকোতে ফিরে যাও এখন, যতক্ষণ না আমার কাছ থেকে কিছু শুনছ, নৌকো ছেড়ে বেরোবে না। প্রজেক্টের হেডকোয়ার্টারে আমি জানিয়ে দেব। হয়তো আজ রাতেই প্রজেক্টে ফিরব আমি, সে ক্ষেত্রে তোমরাও ফিরবে আমার সঙ্গে। আর হ্যাঁ, এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেছে, যে মেয়েটিকে পাওয়া যাচ্ছে না সে বিদেশী নাগরিক, কাজেই পুলিশকে জানাতেই হবে। কোন চালাকি করার চেষ্টা কোরো না, তাতে সুবিধে হবে না। অপরাধ যদি না করে থাক, কোন বিপদ নেই, আর অপরাধে যদি সামান্যও অংশ থাকে তোমাদের, তার শাস্তি পেতেই হবে, কোন ভাবেই তার থেকে মুক্তি নেই।

    লোক দুটো নৌকোর দিকে ফিরছে যখন, শ্যাভেজ বললেন, চল তো নৌকোটা একবার দেখে আসি। শ্যাভেজের সঙ্গে ফল্গুও গেল। নৌকোটা ঘুরে ঘুরে দেখল ওরা। নাঃ, মুড়কির চিহ্ণমাত্রও নেই কোথাও।

    শ্যাভেজের ফেরার খবর এতক্ষণে পৌঁছে গেছে কামিলার কাছে, দূর থেকে দেখা গেল কামিলার গাড়ি আসছে এই দিকেই। ফল্গুকে নিয়ে গাড়িতে উঠলেন তিনি।



    চলবে ---
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ৩১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৩০538492
  • বাপস জমে গেছে একদম।
  • kk | 172.56.***.*** | ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২০:২৮538494
  • বাঃ, ঝপ করে সিরিয়াস দিকে শার্প টার্ন নিয়ে নিলো!
  • Kishore Ghosal | ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৩৬538560
  • ঠিক - আচমকা এমন একটা মোচড়...পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন