তোমার সাথে সাক্ষাৎ হওয়ায় খুব আনন্দ হচ্ছে। কাপটা ধরো, তোমার প্রিয় দারজিলিং টি । এসো খাটের ওপরে বাবু হয়ে বসে গল্প শুরু করা যাক। কী বল, আমিই শুরু করি।
তারিখটা মনে আছে আমার। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের, এগারো তারিখ। আমি দুপুরের দিকে মাছ ধরা শেষ করে বাড়ি ফিরেছিলাম। ফ্রেশ হয়ে রেডিও চালালাম। সেদিন আমার প্রিয় নাটক, রামলীলা প্রচারিত হবে। সেই নাটকে রামের ভুমিকায় ছিল আমার মামা। এই নাটক আমি মঞ্চে আগে অনেকবার দেখেছি। নাটকের একটা ডায়লগ আমার খুব প্রিয় ছিল। রাম , রাবণকে বলছে, ‘এই রাবণ, সীতাকে ছেড়ে দে, নইলে তর মাথায় ঘোল ঢেলে দেবো’। সেদিন রেডিওর নাটকে এই ডায়লগটিই ছিল না। ভাবছ কেন? আসলে জানো তো, তখন নাটক হতো লাইভ। সেদিন ঘাবড়ে গিয়ে মামা সেই লাইনটি বলতেই ভুলে গিয়েছিল। কী না কী বলে দিয়েছিল। আচ্ছা তোমার কোন নাটক ভালো লাগে?
জানো সেদিন রাতে খুব ঝড় এসেছিল। মনে পড়লো সেদিন আমি নৌকাটি বাঁধতে ভুলে গিয়েছিলাম। এই কারণে আগে দু দুবার আমি নৌকা হারিয়েছি। ঝড় একটু থামলে চটপট ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ঘাটে গিয়ে দেখি নৌকা ঠিক বাঁধা আছে। আমি তো সেদিন নৌকা বাঁধিনি। স্পষ্ট মনে আছে। হঠাৎ দেখলাম নৌকায় একটি ছোট বাচ্চা বাঘ। বাঘ দেখে আমার শরীর ভয়ে কাঁপছিল। বাঘটির দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হল। আহারে এত ছোট্ট বাচ্চা বাঘ। এই ঝড় বৃষ্টিতে বেচারা কষ্ট পাচ্ছে।
জানো তো সেবার মাত্র কদিন আগেই পিছলে পড়ে আমার পা একটু মচকে গিয়েছিল। আবার তাই হল। বাঘটি হঠাৎ আমাকে দেখে আমার দিকে ঝাঁপ দিলো। আমি ভয়ে, উলটে জলে পড়লাম। মাগো মা , পরের দিন যা জ্বর এল। গায়ে, হাতে পায়ে খুব ব্যথা। এই বুড়ো বয়সেও সব মনে আছে। জ্বরের জন্য তো সারাদিন বাড়িতে শুয়ে বসে থাকতে হচ্ছিলো। ভাবছিলাম বাঘটি কী করছে? কোথায় আছে সে? একটু রাত হতেই চুপি চুপি বের হলাম। কোথাও দেখছি না ওকে। ঘাটে এসে দেখি আমার নৌকাটি বাঁধা নেই।আগের বারই দেখেছিলাম বাঁধা আছে, কিন্তু সেবার কিন্তু আমি বাঁধি নি। এই কথা তো আগেই বলেছি । দেখলাম বাঘটি নদীর জলে নিজের মনে সাঁতার কাটছে। বাঘের একটু পেছনেই আমার নৌকায় বসে আছে সহদেব। এই সহদেবের সাথে আমার খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না। সহদেব শিকারি। এলাকায় খুব একটা বেশী থাকে না। আমার নৌকায় চড়ে বাঘের পিছু করছে সহদেব। হাতে ইয়া বড় বন্দুক। বাঘটি তো আপন মনে সাঁতার কাটছে, ও তো জানে না শিকারি ওর পিছু নিয়েছে।
আমি এমনিতে একটু বেশীই ভাবি। কোথায় যেন পড়েছিলাম বিড়াল সাঁতার কাটতে পারে না। বাঘ তো এক ধরণের বিড়ালই। নদীর জলের এই দিকটায় খুব কাদা। বেচারা কি সাঁতার কেটে বাঁচতে পারবে? যা ভাবছি ওর পা কাদায় আটকে গেল। এটাই ওকে বাঁচানোর শেষ সুযোগ। আমি ভালো সাঁতার কাটতে পারি না। এর ওপর আমার পায়েও সমস্যা। এতসব কিছু না ভেবে দিলাম এক ঝাঁপ। বাঘকে সরিয়ে দিলাম। ওইদিকে সহদেব গুলি ছুঁড়েছে। ধুউউম। গুলি এসে লাগলো আমার বাঁ হাতে। কোন ভাবে বাঘটিকে কোলে করে বাড়ি ফিরে এলাম। উফফ হাতে যা যন্ত্রনা। হাসপাতালে যাওয়া, অপারেশন সবই হল। ডাক্তার বললেন আমার এই হাত পুরোপুরি ঠিক হবে না। বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুল বাদে বাকী আঙ্গুল গুলো বোঝাই যায় না দেখো।
যাক অনেক কথা হল। আমি যতদিন হাসপাতালে ছিলাম বাড়ির লোকেরাই বাঘটির দেখাশোনা করেছিল। একটা জিনিস প্রায়ই মনে আসতো, সেদিন নৌকাটি কে বেঁধেছিল? সত্যি বলছি আমি বাঁধি নি। আমার নৌকা অন্য কেউ কেন বাঁধবে? এদিকে বাঘটিকে নিয়েও চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠছিলাম। আসলেই কি ওর খাওয়া দাওয়া ঠিক ভাবে হচ্ছে? ও তো জঙ্গলে থাকতো, সেখানকার পশু পাখী খেত।
আমাদের গ্রামেই পোলট্রির খাবার দাবার বিক্রির একটি দোকান ছিল। ওই দোকানদারকে বললাম বিড়ালদের জন্য বিশেষ কোনও খাবার শহর থেকে পেলে নিয়ে আসতে। ও ক্যাট ফুড জোগাড় করে নিয়ে এল। কোনওদিন ওকে বেলা থাকতে নদীর পাড়ে দিয়ে আসতাম। বিকেলে ওর মুখ দেখেই বুঝতাম বেচারা কিছু খায় নি। এদিকে ক্যাট ফুডের ইনগ্রেডিয়েন্টসে দেখলাম লেখা আছে অন্যান্য সব মাংসাশি খাবারের সাথে সয়াবিন। ও কি এই খাবার খাবে? কী খেতে দেব ওকে? সবদিন এত মাংস জোগাড় করাও তো মুস্কিল। আবার আমাদের গ্রামে মাংস খাবার চল খুব কম। বেশীরভাগ মানুষ বৈষ্ণব। একদিন পাখির দোকানে গেলাম। গিয়ে দেখি একটি খাঁচায় অনেক পাখী। বাঘের খাবারের জন্য কি সবগুলো পাখী কিনে নেবো? অনেক টাকা খরচ হবে। নিজের জন্য ভাবছি না, এমন যাতে না হয়, ওর খাবার কেনার অসুবিধা তৈরি হল। ওই সময় সেই মাসের বেতন প্রায় শেষের পথে । পাখী আর কিনলাম না। ভাবলাম চেষ্টা করি ও মাছ খায় কিনা।
বাড়ির একটা ঘরে ওকে রেখেছিলাম। পরদিন ওর কাছে গেলাম। আমাকে দেখা মাত্রই খুশী হয়ে আমার দিকে ঝাঁপ দিল। এখন আর আমি ভয় পাই না। ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। ওকে কোলে নিয়ে নদীর পাড়ে এলাম। দুজনেই নৌকায় উঠলাম। নৌকা চালাতে শুরু করলাম। অনেকটা দূর পর্যন্ত নৌকা চালিয়ে দেখলাম নদীতে অনেক মাছ সাঁতার কাটছে। মাছ ধরতে চেষ্টা করলাম। মাছ গুলো খুব জোরে সাঁতার কাটছিল। আমি একটা মাছও ধরতে পারলাম না। তাকিয়ে দেখি বাঘ নৌকায় নেই। ভয় পেয়ে গেলাম। কোথায় গেল ও? ও কি জলে নেমে গেল? আমিও নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দিলাম। ও জলে ডুবে যায় নি তো? আমিও জলে ডুব দিলাম। কোথাও ওকে দেখা যাচ্ছে না। নৌকায় উঠে এলাম। কি করবো ভাবছি। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, আমার পায়ে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে? ও নৌকায় কখন পেছনের দিকে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল আমি খেয়ালই করি নি। এদিকে কিছু চিংড়ি ধরতে পেরেছিলাম। ওকে খেতে দিলাম। ও খাচ্ছিল।
বিশ্বাস করো ওকে আমি খুব ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছিলাম। তবে আমি ওকে জঙ্গলে পাঠিয়ে দিতে চাই। ও এখানে মানুষদের সাথে কী করবে? কী খাবে? আবার এক মনে ওকে ছাড়তে চাইছিও না। ওর চোখ গুলো দেখে খুব কষ্ট লাগে। মনে হয় ও কিছু সাহায্য চায় ? কিন্তু কেন ? এর উত্তর আমি জানি না। সেদিন সকালে নদীর পাড়ে ওকে দিয়ে এসেছিলাম । বিকেলে গিয়ে ওকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। কোথায় আমার বাঘ? হারিয়ে গেল? হটাৎ দেখি নদী থেকে দশ বারটা মাছ অনেকটা যেন পিচকিরির মত পাড়ে ছিটকে পড়লো। জল থেকে লাফিয়ে পাড়ে উঠে এল আমার বাঘ। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ও ডুব দিয়েছে দেখে নয়। ও কী করে এই মাছ গুলো ধরল? কোনও বড় বাঘও কি এভাবে মাছ ধরতে পারে? আমার তো মনে হয় না। মানুষও যেটা করতে পারবে না সেটা ও করে দেখিয়ে দিল। ছোট বেলায় স্কুলে মাস্টার মশাই বলতেন প্রানিরাও মাঝে মধ্যে এমন সব বুদ্ধিমত্তা দেখাতে পারে , জেনে অবাক হয়ে যেতে হয়। কী জানি এমনই কিছু কিনা।
এদিকে অদ্ভুত একটি ঘটনা ঘটলো সেদিন। আমি শহরে গিয়েছিলাম। দুপুরের দিকে ফিরেই শুনতে পেলাম আমাদের গ্রামের একটি খবর নাকি রেডিওতে নিউজে বলেছে। গ্রামের অনেকেই বলাবলি করছে। পুরো গ্রামের প্রায় সবাই ইতিমধ্যেই ব্যাপারটা দেখে নিয়েছে। আমাদের গ্রামের হরনাথ বাবুদের উঁচু দালানের ছাদ থেকে নাকি একটি বাচ্চা বাঘ ঝাঁপ দিয়েছে আর সঙ্গে সঙ্গে সে উড়তে শুরু করে দিয়েছে। ও কি আমার বাঘ? রাস্তায় পেলাম রাজকুমার কাকুকে। জিজ্ঞেস করলাম কন দালান থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল বাঘটি। হরনাথ বাবুদের বেশ কয়েকটা দালান বাড়ি আছে। রাজকাকু জানালেন কোন দালানটি। আমি সেদিকে দৌড় লাগালাম। আমি নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে বাঘটি উড়ছে। মাগো মা , আমার মাথা ঘুরছিল। আমার বাঘই উড়ছে। হটাৎ দেখি বাঘটি ভ্যানিস। কোথায় গেল ও? আমি দৌড়ে নদীর পাড়ে যেখানে নৌকা বাঁধি সেখানে চলে এলাম। এসে দেখি ও আমার নৌকায় বসে আরাম করে মাছ খাচ্ছে। যাক মনে শান্তি এল। ও আস্তে আস্তে মাছ খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। ওকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। সেদিন অনেকে আমাদের বাড়িতে এসেছিল।
ভাবনা এল ও যদি বাঘ হয়ে এত উঁচু থেকে ঝাঁপ দিয়ে উড়তে পারে তাহলে আমি কেন পারবো না। সেদিনই আমাদের বাড়ির ছাদে উঠলাম। আমাদের বাড়ি এক তলা। আমার ভয়ে গা শির শির করছিল। আমাকে পারতেই হবে। কীভাবে উড়বো? আমার তো পাখির মত ডানা নেই। বাঘের কোথায় ডানা আছে? আমি ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলাম। সাথে সাথে দেখি আমি উড়ছি। এটা কি মিরাক্যাল? কীরকম যেন বুঝতে পারছিলাম আমার পেটে কাতুকুতু লাগছে। নিচে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমি নিজে উড়ছি না। আমি বাচ্চা বাঘটির ওপরে উপুড় হয়ে আছি আর ও আমাকে পিঠে করে নিয়ে উড়ছে। আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করতে শুরু করলাম। এতো ছোট বাঘ আমাকে পিঠে করে নিয়ে যাচ্ছে, ও যদি ব্যালেন্স হারিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। অনেক লোক দেখছিল। বাঘ সবার দিকে পা নাড়াচ্ছিল, অনেকটা যেন টা টা দেওয়ার মত। আমার একটু একটু করে মজা লাগছিল।
কী বলবো তোমায় ভাই, কিছুক্ষণ পড়ে বাঘ নদীর পাড়ে এসে নামল। আমি ভাবছিলাম ওর কি কোনও সুপার পাওয়ার আছে? আমি ওকে নিয়ে নৌকাতে উঠলাম। নৌকা চালানো শুরু করলাম। হটাৎ দেখি আমার হাতে আর বৈঠা নেই। ভ্যানিস হয়ে গেল। বৈঠা দুটো বাঘের হাতে চলে এল। সামনের পা দুটো বাঘ হাতের মত ব্যবহার করছে। ও খুব জোরে বৈঠা মারতে শুরু করলো। মনে হচ্ছিলো যেন ইঞ্জিন বোটে আছি। বাঘ নৌকা চালিয়েই যাচ্ছে, চালিয়েই যাচ্ছে। থামছেই না। ওর কি হাত ব্যথা হয় না? হটাৎ আমাদের নৌকাটি একটি বড় হাতি হয়ে গেল। সারা শরীর মোটা মোটা সাদা লোমে ঢাকা। আমার তো শুধু অবাক হবার পালা। বাঘ কোথায়? দেখি হাতির শুঁড়ে ও বৃক্ষাসন করছে। ওয়াও এ কী অপূর্ব দৃশ্য। বাঘ সামনের দুটো পা নাকি হাত মাথায় রাখল আর সাথে সাথে হাতিতি একটি পক্ষীরাজ ঘোড়া হয়ে গেল। কী সুন্দর ঘোড়াটি। ঘোড়া আমাদের নিয়ে আকাশে উড়ছিল। হটাৎ কারোর হাসি শুনতে পেলাম। দেখি সূর্য খিল খিল করে হাসছে। অবাক কাণ্ড। সূর্য একটি আগুনের গোলা, কিন্তু ওর মুখের ভেতরে মানুষের মত জিভ আছে। আমাদের ঘোড়া সোজা সূর্যের মুখের ভেতরে ঢুকে গেল। আরেব্বাস, সূর্য যতটা গরম, ওর মুখের ভেতরটা খুব ঠাণ্ডা। আমি তো ঠাণ্ডায় কাঁপছিলাম। বাঘের সাথে আমার চোখাচোখি হল। ওর চোখ থেকে কীরকম একটা লেজারের রশ্মি বেরিয়ে এল আমার দিকে। আমার শরীর ছোঁয়া মাত্রই মনে হল আমার শরীরে কোনও জামা কাপড় নেই। খুব স্বাভাবিক লাগছিল আমার। বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? আমারও হচ্ছিলো না। শরীর থেকে জামা কাপড় সরে গেলেও ঠাণ্ডায়, ঠাণ্ডা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় আমিও তখন বুঝতে পারলাম। সূর্যের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা মাত্র দেখি সামনে একটি জলের বিন্দু। ঘোড়াটিও আমাদের নিয়ে জলের বিন্দুতে ঢুকে গেল। সেখানে দেখি একটি টেবিল রাখা আছে। টেবিলের ওপর একটি লাট্টু ঘুরছে। লাট্টুটিতে বাঘ ছুঁইয়ে দিল আর সেটি একটি স্লিপার হয়ে গেল। আমি স্লিপারটিতে চড়লাম। সাথে সাথে দেখি আমি একটি ঘুড়ির ওপরে যেটা আকাশে উড়ছে কিন্তু কে ওড়াচ্ছে বুঝতে পারছি না। ঘুড়িটা একসময় বড় মেঘ হয়ে গেল। আমি মেঘের ওপর বসে আছি। আমার সাথে বাঘও আছে। ওর মাথায় শেফের মত টুপি। সামনের দুটো পা দিয়ে হাততালির মত কিছু করলো বাঘ। আমাদের সামনে কোত্থেকে জানি একটি বড় কড়াই , হাতা আর চুল্লি এসে গেল। এবার বাঘ সিটি বাজানোর মত শব্দ করলো, সাথে সাথে মুরগির কাটা মাংস এসে পড়লো কড়াইতে। বাঘ রান্না করছিল। অনেকদিন মাংস খাই নি। খুব সুস্বাদু হয়েছিল মাংস। আবার দেখি বাঘ নেই। একটু পড়ে বুঝলাম ও আছে। আমার মাথায় মুখ ঘসছে। আমার শরীর কেমন অবশ হয়ে যাচ্ছে। ও কি জাদুকর ? এতো কিছু কীভাবে করতে পারছে ও? ও কি রিয়েল লাইফ সুপার হিরো? আমি দেখি বাড়িতে। বিছানায়। খুব ঘুম আসছিল।
একদিন বাঘকে নিয়ে নৌকা চালাতে বের হয়েছিলাম। আমার যা হয়, ফিরে আসার সময় নৌকা বাঁধতে ভুলে গিয়েছিলাম। বাঘকে আজকাল ছেড়ে রাখি। ও এদিকে সেদিকে ঘোরে আবার বাড়িতে ফিরে আসে। রাতে যখন মনে হল যে নৌকা বাঁধি নি, ছুটে গেলাম ঘাটে। গিয়ে দেখি আমার নৌকা বাঁধা। এরকম বেশ কয়েক দিন হল। নৌকা বাঁধতে ভুলে গেলে, সেদিন রাতে বা পরদিন গিয়ে দেখতাম নৌকা বাঁধা আছে। আমি ভাবলাম এখন থেকে আর ইচ্ছে করে নৌকা বাঁধবো না, দেখি কী হয়। তাই করলাম। সেদিন ইচ্ছে করে নৌকা না বেঁধে ফিরে এলাম। পরদিন গিয়ে দেখি আমার নৌকা নেই। নদীর পাড়ে একটি চিঠির খাম পড়ে আছে। খামের ওপরে আমার নাম লেখা। আমাকেই লেখা –
প্রিয় বন্ধু ,
আমি তোমাকে ভালোবেসে , তোমাকে খুশী রাখতে কতো কী না করলাম । আজ বুঝলাম তুমি ইচ্ছে করে নৌকা না বেঁধে চলে গিয়েছিলে । ভাবলে অন্য কেউ তোমার নৌকা বেঁধে দেবে । আমার খুব রাগ হয়েছে । আমি রাগ করে তোমার নৌকা নিয়ে জঙ্গলে চলে যাচ্ছি । আশা করি আর দেখা হবে না । তুমি ভুলে যেতে দেখেই আমি নৌকা বেঁধে দিতাম , আর আজ ইচ্ছে করে পরীক্ষা করতে চাইলে । বিদায় বন্ধু ।
ইতি
তোমার বাঘ
খুব কষ্ট লেগেছিল , এরপর থেকে আমি আর স্বপ্ন দেখার কথা ভাবতেই পারি না ।