গতকাল সচ্চিদানন্দের ফেয়ারওয়েল হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা অফিসের, নিরিমিষ ধরণের। সেই বাঁধাগতের বক্তৃতা, জেনারেল ম্যানেজারের ভাল ভাল কথা। সচ্চিদানন্দের মত অফিসার হয় না। ব্যাংক ওর অভাব অনেকদিন অনুভব করবে। ওর দূরদর্শিতা, বিজনেস আনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়, টিম বিল্ড আপ করার ক্ষমতা আজকের নতুন যারা জয়েন করছে তাদের জন্যে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সচ্চিদানন্দ ছিলেন নির্লোভ, নিরহংকার—অনেকটা গান্ধীজির মত।
আমি বোধহয় হাসি চাপতে একটু কেশেছিলাম। সবাই ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিল। জি এম একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলেন। উনি যে ভাট বকছেন সেটা উনি ভালই জানেন। আর এটাও জানেন যে সেটা আমিও জানি। কিন্তু আমি দু’বছর আগে রিটায়ার করে গেছি। এখন ওনার নাগালের বাইরে।
শেষ করার আগে জিএম একটা বহু পুরনো মার্কেটিং নিয়ে পিজে শোনালেন। নতুন ছেলেরা হাঁ করে গিলল।
একবার এক জুতোর কোম্পানি একজন সেলস এগজেক্টিভকে আন্দামানে পাঠালো, জারোয়াদের নতুন পুনর্বাসন বস্তিতে। সে ওখানে পৌঁছে হেড অফিসে টেলিগ্রাম করল—এখানে কোন বিজনেস হবে না। সবাই খালি পায়ে চলাফেরা করে। জুতো কিনবে কে?
কোম্পানি আরেকজনকে পাঠাল—সে নাকি মুশকিল আসান।
মুশকিল আসান ওখানে দু’দিন কাটিয়ে তৃতীয় দিন টেলিগ্রাম করল—এখানে বিশাল পোটেনশিয়াল। একমাস পরে এক জাহাজ জুতো পাঠান। ততদিনে আমি জারোয়া এবং অন্যান্যদের জুতো পরা শিখিয়ে দেব।
সচ্চিদানন্দ হচ্ছেন আমাদের সেই মুশকিল আসান। উনি চাইলে পাথর চিপে জল বের করতে পারেন।
উনি সচ্চিদানন্দকে তিন বছরে তিন বার বদলি করিয়েছিলেন। শহরের কাছে নয়, অনেক দূরে। ছত্তিশগড় রাজ্যের তিন সীমানায় তিনটে জঙ্গল ঘেঁষা ব্র্যাঞ্চে, অজুহাত এখানকার বিজনেস পোটেনশিয়াল কেউ ট্যাপ করতে পারে নি। সচ্চিদানন্দের মত প্রতিভাই পারবে।
এটা আসলে ঢপের যুক্তি। পোটেনশিয়াল ছিল মাত্র একটা ব্র্যাঞ্চে। হ্যাঁ, সেখানে সচ্চিদানন্দ ভেলকি দেখিয়েছিল। বনবিভাগ, সেচ বিভাগ, পূর্তবিভাগের কর্মচারি থেকে শুরু করে সমস্ত স্কুল টিচারদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট নিজের ব্র্যাঞ্চে এনে তাদের থেকে পোস্ট ডেটেড দশটা করে চেক নিয়ে উদার হাতে পার্সোনাল লোন, মোটর সাইকেল লোন এসব দিয়ে এলাকায় হৈচৈ ফেলে দিল। নামমাত্র প্রফিট হত, এখন বেড়ে গেল এক লাফে।
কিন্তু পরের বছর তাকে আবার বদলি করা হল রাজ্যের আরেক মাথায়। আগের বার ছিল মহারাষ্ট্র সীমান্তে, এবার উড়িষ্যা সীমান্তে। সেই একই ঢপের যুক্তি।
জিএম ভদ্রলোক যে সচ্চিদানন্দকে পছন্দ করতেন না তার কারণ অন্য। উনি চাইতেন বিভিন্ন অ্যাসেট ফাইনান্স করলে যেমন ট্রাক, ট্র্যাক্টর, সেচ পাম্প ইত্যাদি --ওদের সেলস অফিস থেকে যে প্রমোশনাল গিফট বা কমিশন পাওয়া যায় তার ভগ্নাংশ দূত মারফত জিএমের ঘরে পৌঁছে যাক।
কেন? ’সব্বাই করে তাই, সব্বাই সব্বাই’।
কিন্তু সচ্চিদানন্দ একেবারে বামুনের ঘরের বিধবার মত। পেঁয়াজ রসুন ছেড়ে দিন, মুসুরি ডালেও অরুচি।
একটু ধাঁধা লাগছে? দাঁড়ান, বুঝিয়ে বলছি।
আমরা হলাম থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। আমি, নটরাজন ও সচ্চিদানন্দ। চাকরির প্রথম দিকেই ইউনিয়ন বানাই। তখন থেকে পরিচয় ও বন্ধুত্ব। আমরা ‘অল ফর ওয়ান, ওয়ান ফর অল’ কসম খেয়েছিলাম।
আমরা জানতাম ঘুষ খেলে ম্যানেজমেন্ট ঠিক জানতে পারবে আর আমাদের ব্ল্যাকমেল করবে। ফলে ইউনিয়ন যাবে চুলোয়। ইউনিয়ন টিকে থাকে অনেকটাই লীডারশিপের ইমেজের উপর নির্ভর করে। সেখানে ম্যানেজমেন্ট চেষ্টা করবে আমাদের মুখে কালি লেপে দিতে, সেই সুযোগ দেয়া চলবে না।
হ্যাঁ, নটরাজনকে মাত্র ৩ টাকা ওভারড্রাফটের চার্জ লাগিয়ে সাস্পেন্ড করা হয়, যদিও সেটা ওর ক্যাশিয়ার মহিলার ভুলের ফসল। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট জানত যে নটরাজন বিধবা বাঙালি সহকর্মীটির প্রেমে পড়েছে। সে মেয়েটিকে ফাঁসাবে না। তাই হল, নটরাজন সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিল এবং দশমাস সাস্পেন্ড হল। এক ইনক্রিমেন্ট স্টপের শাস্তি পেল। শেষে বোর্ডে আপিল করে রেহাই পায়।
তো সচ্চিদানন্দ একেবারে কড়া। কমিশন দূর কী বাত, কোন বিজনেসম্যানের থেকে দীপাবলীর মিঠাইয়ের বাক্সও নেয় না। স্টাফদের বিলিয়ে দেয়। ওর দোষ বড্ড মুহফট। যা ভাবে তাই বলে ফেলে। বর্তমান জিএম ওকে চেনেননি। বারবার দূত পাঠাচ্ছেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এবং ইশারায় একটাই বার্তা।
একদিন সোজা জিএমের চেম্বারে গিয়ে বলে দিল—সরি, আমি ব্যাংকের চাকর, আর কারও নয়। আপনার সেবা করতে অপারগ।
পরের সপ্তাহেই টাইগার রিজার্ভের কাছাকাছি এক ব্র্যাঞ্চে ট্রান্সফারের চিঠি এল। এ নিয়ে আমাদের তিনজনের কোন হেলদোল ছিল না। জানতাম, ব্যাংকের চাকরিতে ট্রান্সফার হল ম্যানেজমেন্টের তুরুপের তাস। ওটার ভয় দেখিয়েই বিদ্রোহীদের কন্ট্রোল করা হয়।
আমরা বুঝেছিলাম ট্রান্সফারের ভয় কেটে গেলে ওদের হাতে কোন তাস নেই।
তবে তিনজনের ধর্মবুদ্ধি একরকম নয়। নটরাজন দীপাবলীর মিষ্টির বাক্স গ্রহণ করেন। আমি নিই নতুন বছরের ডায়েরি ও পার্কার কলম এবং মিষ্টির বাক্স –দোনো!
সে যাকগে, আমি বয়েসে বড়, দু’বছর আগে রিটায়ার করেছি। নটরাজন ছ’মাস আগে, সচ্চিদানন্দ গতকাল। আজ রবিবার আমাদের সেলিব্রেশন।
আমি বিয়ে করি নি, মানে হয় নি। নটরাজনের স্ত্রী চেন্নাইয়ে মেয়ে-জামাইয়ের কাছে বেড়াতে গেছেন। সচ্চিদানন্দের স্ত্রী বলেছেন বেশি রাত না করতে আর পানাহারের মাত্রা না ছাড়াতে।
আমাদের রঁদেভু’র জায়গাটা হাইওয়ের পাশে একটি ধাবা। সেখানেও বৈচিত্র্য। নটরাজনের হুইস্কি, সচ্চিদানন্দের জিন আর আমার শুদ্ধ মহুয়া! এই ঢাবার মালিক আমাদের জন্যে পেছনের আঙিনায় খোলামেলা জায়গায় টেবিল লাগিয়ে দিয়েছে। চাট বলতে বটের বলে একটি হোট্ট পাখির মাংসের নরম কাবাব।
সূর্য অস্ত যাচ্ছে। শীতের সন্ধ্যে দ্রুত নামছে। বড় রাস্তায় এবং ঢাবার হলঘরে উজ্বল আলো। ট্রাক থামছে একটা দুটো করে। ড্রাইভার ও ক্লিনারদের উঁচু গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। একটু পরে ভিড় বাড়বে। কিছু গ্রাহক এদিকেও উঁকি দেবে।
মশার ঝাঁক ভনভন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটা ছোকরা এসে মশা নিরোধক কছুয়া ছাপ আগরবাত্তি জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। বুঝতে পারছি, এখানে আমাদের আয়ু বড়জোর ঘন্টা দেড়েক। তারমধ্যে পাততাড়ি গোটাতে হবে।
আমরা আচমন করার পর হাসিমুখে জিএম মিঃ চান্ডুকা’র এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গের আদ্যশ্রাদ্ধ করলাম। নটরাজন নিজস্ব সুরে দু’কলি ইংরেজি গান শুনিয়ে দিলঃ
“হ্যালো মিঃ চাণ্ডুকা,
নেভার গো টু পাণ্ডুকা।
অর, ইউ উইল লুজ ইয়োর আণ্ডুকা,
উইল বি নোন অ্যাজ গাণ্ডুকা”।
পাণ্ডুকা শ্রীল শ্রীযুক্ত মহেশ যোগীর জন্মস্থান। সেখানে আমাদের একটি ব্র্যাঞ্চ এবং জিএম সেখানে বিশেষ কারণে ঘন ঘন যেতেন।
আমাদের হাসি কি একটু উচ্চগ্রামে? ঢাবার ছোকরা এসে জানতে চাইল কিছু চাই কিনা।
আমরা ঠিক করলাম, কেউ কোন ব্র্যাঞ্চে যাব না। ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিং এবং এটিএমের সুবাদে পেনশন থেকে টাকা তোলা যাবে। পথেঘাটে কারও সঙ্গে দেখা হলে “ভাল তো”? বলে কাটিয়ে দেব।
--কিরে সচি? ব্যাংকের জন্যে মনখারাপ করছে?
--না তো, তোদের? তা হলে আমারও করবে না। মনে আছে তো “ওয়ান ফর অল”?
আমরা দোহার দিই—“অল ফর ওয়ান”।
ছোকরাটা ফের উঁকি মেরে গেল। এবার উঠে পড়তে হয়। কিন্তু সচ্চিদানন্দ যে ফোঁৎ ফোঁৎ করে নাক টানছে। হল কী? বেশি টেনেছে? ধেৎ।
সচ্চিদানন্দ মাথা নীচু করে বসেছিল। হঠাৎ মাথা তুলে বলে—আমার একটা পাপ স্বীকার করার আছে। তুই শোন, নইলে শান্তি পাব না।
আমি হেসে উঠি। বিয়ে করি নি, তাই বলে পাদ্রীঠাকুর হব? ব্যাংকের কোন মামলা? যেটা ম্যানেজমেন্ট জানে না, আমরাও না।
সচ্চিদানন্দ বলতে শুরু করে।
তোদের মনে আছে চাকরির তৃতীয় বছরে আমার পোস্টিং হয়েছিল চারপাড়া গ্রামে। সেখানে অবাক হয়ে দেখেছিলাম হি-হি শীতে মেয়েরা সেগুন গাছ কেটে আগুন পোহাচ্ছে! কাছেই পাহাড় আর নদী, শীতকালে হাত-পা জমে যায়। আর দারিদ্র্য কাকে বলে নিজের চোখে দেখলাম। নারীপুরুষ কারও গায়ে গরম কাপড় নেই। ধুতির খুঁট, গামছা আর চাদর ভরসা।
থাকার ব্যবস্থা হল গুপ্তাজী বলে এক বানিয়ার বাড়িতে। সে মুদি দোকান, বেনামী কাঠের কারবার, মহুয়া শালবীজ বিক্রি এবং চোলাই মদ—সবরকম ধান্ধার সঙ্গে যুক্ত। রাতের খাওয়াটা ওদের বাড়ি থেকে টিফিন ক্যারিয়ার ভরে আসত; দক্ষিণা নামমাত্র।
একদিন বিকেলের দিকে একা বসে আছি। সাদা কাপড় মাথায় একটি মেয়ে এল, কোলে একটি শিশু নিশ্চিন্তে আঙুল চুষছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল—আপনি নতুন মালিক? আপনার আগে যিনি ছিলেন তিনি কোথায়?
--মানে?
--আপনার আগে যে সাহাব ছিলেন? আমি অনপঢ় , লিখতে পড়তে জানিনা। সবাই বলত উপাধ্যায় মহারাজ। ব্রাহ্মণ দেবতা, জনেউধারী। পৈতে আছে।
--তিনি অন্য জায়গায় চলে গেছেন। কী দরকার?
--কত দূরে? আপনি খবর দিতে পারবেন? বলবেন দেব কুঁয়র ওকর বাট জোহত রহী। দেব কুঁয়র ওনার পথ চেয়ে আছে।
আমার মাথা ঘুরতে থাকে। বলছে কী ও? এসবের মানে কী? কড়া চোখে ওর দিকে তাকাই।
হাঊ হাঊ করে কেঁদে ওঠে মেয়েটি। শিশুটিকে আমার সামনে তুলে ধরে।
--সাহাব, এলা মোলা মিলিসে বামন দেবতাকে কিরপা সে। একে পেয়েছি ব্রাহ্মণ দেবতার কৃপায়, তিনি কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন খবর নিলেন না; এখন আমি কী করি?
মেয়েটিকে শান্ত করে মাসের গোড়ায় বিলাসপুরে ফিরে গিয়ে সেই উপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করি। সে হেসেই উড়িয়ে দেয়। বলে কে না কে একটা অখাদ্য মেয়েছেলে, নীচুজাত। ওকে ঘরের কাজে লাগানো হয়েছিল, বাসন ধোয়া, গোবর লেপা এইসব। সে এখন হাবিজাবি গল্প বলে ব্ল্যাকমেল করতে চাইছে! আর তুমি তাতে তাল দিচ্ছ? লজ্জা করে না! আপকো কিউঁ খুজলি হো রহী , শ্রীমানজী?
আমি শান্ত গলায় বলি। এটা একটা মেয়ের ও তার শিশুর জীবনমরণের প্রশ্ন। আপনি বলতে চান মেয়েটার সঙ্গে আপনার কোন শারীরিক সম্পর্ক হয় নি? গাঁয়ের লোকে কিন্তু অন্যরকম বলছে।
--হলেই বা! ওরকম কত হয়, তার মানে কি বাচ্চাটার বাপ আমি? আগে খোঁজ নাও ওই বদচলন মেয়ের আর কার কার সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছিল।
--শুনুন, ডি এন এ মিলিয়ে পিতৃত্ব পরীক্ষা হতে পারে সেটা জানেন? আর আদালত সেই টেস্ট মানে।
--সব জানি, আগে মেয়েটি আমার নামে এফ আই আর করুক, তবে না ডি এন এ টেস্ট? আমি ল’ গ্র্যাজুয়েট।
ফিরে এসে মেয়েটিকে বলি একটা এফ আই আর করতে। মেয়েটি জিভ কেটে বলে --বড় পাপ হবে। উনি ব্রাহ্মণ দেবতা। ওর নামে থানায় নালিশ? না না , সে হয় না। এক কাম কীজিয়ে। আপ মহারাজ কো মেরে সামনে লাইয়ে। একবার ও মেরে বাচ্চে কো গোদী লে লে, ওকর গাল চুম দেঁ। ওউ কুছ নহীঁ চাহিয়ে।
একবার মহারাজ বাচ্চাটাকে কোলে নিন, গালে চুমো দিন। আমি আর কিছু চাইব না।
আমি নিরুপায়, কথা দিই উপাধ্যায় মহারাজকে নিয়ে ওর সামনে হাজির করব। ও মাঝে মধ্যেই আসে, চোখে ব্যাকুল জিজ্ঞাসা। আমি মুখ ফিরিয়ে নিই। একদিন ও কেঁদে ফেলে বলে—বুঝেছি, মহারাজ আর আসবে না। আমাকে ভুলে যাক, নিজের বাচ্চাটাকেও? আমি একা ওকে কী করে বড় করব!
আমার ভেতরে কিছু একটা ঘটে যায়। ওর হাত ধরে ফেলি, বলি কান্না বন্ধ করতে। শেষে বলি, চিন্তা কর না। এই বাচ্চা বড় হবে। আমরা চাঁদা করে তোমায় খরচা দেব। এ আমাদের সবার।
-তারপর?
কাজের চাপে ভুলে যাই। আমার ট্রান্সফার হয়ে যায়। প্রমোশন হয়। কয়েক বছর পরে অডিট করতে চারপাড়া ব্র্যাঞ্চে যাই। তিনদিন থাকি । হঠাৎ মনে পড়ে দেব কুঁয়রের কথা।
জানতে পারি আমার বদলি হয়ে চলে আসার তিন দিন পরে বাচ্চাটাকে নিয়ে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছে।
--বুঝলাম, এতে তোর দোষ কোথায়?
-- কিচ্ছু বুঝিস নি। উপাধ্যায় মহারাজ না হয় সূর্য দেবতা আর ও হল কুন্তী। মহাভারতের গল্প ওকে সইতে শিখিয়েছিল। থাকত কুমারী মাতা হয়ে, বেঁচে থাকত। কিন্তু আমি কেন ওকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখালাম?
আমি ওর পিঠে হাত রাখি।
আমি পাদ্রীবাবা অবতার হয়ে যাই।
--শোন, সবারই এমন গোপন কিছু পাপ থাকে যা সারাজীবন ভেতরে ভেতরে তুষের আগুনের মত জ্বলে—ধিকিধিকি।
নটরাজন সায় দেয়। ওর গলা ভারী। হ্যাঁ, পাদ্রীবাবা। আমিও স্বীকার করতে চাই। কিন্তু আর এক রাউন্ড বলে দাও। নইলে মুখ খুলতে পারব না। কষ্ট হবে।
আমার তখন প্রমোশন হয়েছে, একটা বড় ব্র্যাঞ্চের চার্জ পেয়েছি—কোরবার কাছে আদিবাসী ব্লকে। সেদিন ছিল শনিবার—হাফ ডে। অন্য ছেলেরা সব বাস ধরে বেরিয়ে গেছে স্টেশনের দিকে; উইক এন্ডে বাড়ি যাবে। আমি একা বসে রিজার্ভ ব্যাংকের কোয়ার্টার্লি স্টেটমেন্ট তৈরি করছি। চাপরাশি নেতরাম গেছে মোড়ের দোকান থেকে কিছু ভাজিয়া বড়া নিয়ে আসতে।
--আসব স্যার?
মাথা তুলে দেখি একটি বছর তিরিশের ছেলে ঢুকছে, চেহারায় একটা কিন্তু-কিন্তু ভাব। এসে বসল, খানিকক্ষণ কোন কথা নেই। মনে হল, ছেলেটি আজ কাজের সময়েও দু’একবার উঁকিঝুঁকি মেরে চলে গেছে। হয়ত আমাকে আলাদা করে কিছু বলতে চায়।
--কিছু বলবে?
ছেলেটি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে, কিন্তু মুখে বাক্যি নেই। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সতর্ক হয়। এসব চেনা লক্ষণ। নির্ঘাৎ আমার কোন স্টাফের ব্যাপারে নালিশ করতে চায়, তাই এখন এসেছে। সম্ভবতঃ ঘুষ চাওয়ার। সবাই জানে এসব ব্যাপারে আমি খুব কড়া।
--যা বলার আছে নির্ভয়ে বল।
--আমাকে পাঁচ হাজার টাকা লোন দেবেন?
-ব্যস্? কোন শিকায়েৎ?
--না, না; শুধু পাঁচ হাজার টাকা লোন চাই।
--আচ্ছা, কেন চাই? চাষের জন্য, নাকি দোকানদারি?
ও প্রবল বেগে মাথা নাড়ায়। আমি একটু অবাক হই, একটু বিরক্ত। হাতের কাজ পড়ে আছে, খিদে পেয়েছে। ------ঝেড়ে কাশো, টাকা নিয়ে কী করবে?
--সাহেব, আমি রায়পুরে মীরা দাতারের দরগায় গিয়ে হত্যে দেব।
--এটা কী ইয়ার্কি হছে? তোমার যে দরগায় যেতে হবে যাও, যেখানে ইচ্ছে হত্যে দিতে হয়, দাও। তার জন্যে ব্যাংক কেন লোন দেবে?
ছেলেটা হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে। কী আপদ!
--সাহেব, নইলে আমি মরে যাবো। আমি প্রহ্লাদ দেবাঙ্গন। কারও টাকা মেরে দিই নি। গাঁয়ে সবাই জানে, ব্যাংকের টাকা দশমাসে শোধ হয়ে যাবে। দয়া করুন হুজুর, মীরা দাতারের দরবারে না গেলে আমি মরে যাব।
রায়পুরে মীরা দাতারের দরগা আমি চিনি, হাইওয়ের ঊপরে। বিশাল ভবন, খুব সাজানো গোছানো। ছত্তিশগড়ের বাইরে থেকেও লোকে সমস্যা নিয়ে এসে হত্যে দেয়। দুরারোগ্য রোগ সেরে যায় নাকি। কিন্তু লোন না পেলে ও মরে যাবে কেন?
ছেলেটি চেয়ার থেকে উঠে আমার খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। আমি অস্বস্তির সঙ্গে দেখি ওর কোটরে জ্বলজ্বল করা চোখ, উঁচু হনুর হাড়, অসম্ভব ফর্সা মুখ।
--সাহেব, আমার বৌ। ও হল ডাইন, রোজ রাতে আমার শরীর থেকে রক্ত চুষে নেয়। দিন দিন দুবলা হয়ে যাচ্ছি। আমার কাপড়ের দোকান বন্ধ হওয়ার জোগাড়। অনেক বৈগা ওঝা এসে দেখে গেছে। কোন ফয়দা হয় নি। একমাত্র মীরা দাতারের দরবারে ওই কালাজাদুর কাট আছে। আমি গেলে সেরে যাব। ডাইনের মায়া কেটে যাবে।
আমি ওকে আবার খুঁটিয়ে দেখি। হ্যাঁ, ওর শরীরের হলদেটে রঙ ঠিক স্বাভাবিক নয়। কথা বলতে গিয়ে হাঁফাচ্ছে। ও সুস্থ নয়।
--শোন, তোমার জন্ডিস হয়েছে। খামোকা বৌকে ডাইনি বোল না। যাও জয়সওয়াল ডাক্তারের কাছে। একমাসে সুস্থ হয়ে যাবে। আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। আমি চিঠি লিখে দিচ্ছি – তোমার পয়সা লাগবে না।
ছেলেটা মাথা নাড়ে। আপনি শহুরে লোক, এসব বুঝবেন না। আমাকে কোন ডাক্তার বাঁচাতে পারবে না।
বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল। আমি নিজের কাজে মন দিলাম। না, কোন অন্ধবিশ্বাসকে সাপোর্ট করতে পারব না।
সাতদিন পরে জানতে পারলাম ছেলেটি মারা গেছে।
চাপরাশি নেতরাম বলল-স্যার, কী হত যদি আপনি ওকে পাঁচ হাজার টাকা লোন দিয়ে দিতেন? ওর কাপড়ের দোকানের নামেই দিতেন। হয়ত বাঁচত না, হয়ত মীরা দাতারের ঝাড়ফুঁকে মনে ভরসা পেত। হয়ত বেঁচে যেত। কে বলতে পারে?
নেতরামের কথাটা আমাকে কুরে কুরে খায়। বড় বড় বিজনেসম্যানের লোনও ব্যাড হয়, অনেক বেশি টাকা। এই লোকটার বাঁচার চেষ্টায় পাঁচ হাজার দিলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত? সাইকো-সোম্যাটিক কেসে মনের জোরে অনেক সময় রোগী সেরে যায়। কেন দিলাম না? আমি যুক্তিবাদী বলে?
সবার গেলাস তলানিতে ঠেকেছে। এবার উঠতে হয়। আমি পকেটে হাত দিই কিন্তু সচ্চিদানন্দ আমার হাত চেপে ধরে।
--উঁহু, পাদ্রীবাবা! এখন তোমার কনফেসন, তবে ষোলকলা পূর্ণ হবে। কোন ছাড়ান নেই। আমরা সবাই পাপে জন্মেছি, তাই না?
আমার গল্পটা অন্যরকম। তোরা তো জানিস, ছোটবেলা কেটেছে শহর কোলকাতায়। বয়েস অল্প, সদ্য স্কুলের বেড়া টপকে কলেজে ভর্তি হয়েছি, নামকরা কলেজ। রেজাল্ট মন্দ হয় নি। পাড়ার সবচেয়ে ভাল ছেলে আমি। বাপ-মায়েরা নিজের কুচোদের বলে –ওকে দেখ!
কিন্তু আমার পড়ায় মন নেই। একটা জোয়ার এসেছে ছেলেছোকরাদের মধ্যে। বদলে যাবে সমাজ, বদলে যাবে দেশ । একটা সবপেয়েছির দেশ জন্ম নেবে, অনেক কাজ। তার জন্যে লেখাপড়া আপাতত শিকেয় তুলে রাখতে হবে, ঠিক স্বাধীনতা সংগ্রামের মত।
কিন্তু খালি বকবক করে, চোথা বই পড়ে বিড়ি ফুঁকে চা খেয়ে দিন চলে না। হাতখরচা চাই। একটা টিউশনি পেলে মন্দ হয় না। সবাই করে তো! আমাদের ঠেকের নেতা সজলদা বলল—তোমার হিল্লে হয়ে গেছে। রাস্তার ওপারের একটা বাড়ি আছে না? অনেকখানি খালি জমিতে আম-জাম-কাঁঠালের গাছ, কিন্তু বাড়িটা দাঁত বের করা, বাইরে পলেস্তারা নেই?
--বুঝেছি সমাদ্দারের বাড়ি তো?
--এই তো লাইনে এসেছিস। এবারে মন দিয়ে শোন। বিনীতা বৌদির সঙ্গে কথা বলে এসেছি। ওদের বড় মেয়েটাকে ক্লাস টেন পাস করাতে হবে। মেয়েটা বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে।
--মানে?
--আরে রোজ বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। এদিকে সন্তু বলে একটা ফর্সা ঢ্যাঙাছেলের প্রেমে পড়েছে। বৌদির হাতে ওর একটা চিরকুট ধরা পড়েছে। মেয়েটা, লাবু মানে লাবণি, সন্তুকে লিখেছে “তুমি আমার দেবতা। তোমাকে জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না”। সন্তু চিঠিটা পত্রপাঠ ফেরত দেয়। তাই লাবু বাড়িতে বসে কাঁদছিল, চিরকুট ছিল ওর বইয়ের ভাঁজে।
--উফ্ এই মেয়েকে পড়াতে হবে? কালীদা গো কালীদা!
--ছ্যাবলামি করিস না। সপ্তাহে চারদিন বিকেল পাঁচটায় যাবি। আমার থেকে ট্রিকস্ শিখে নে। সপ্তাহে দুবার করে টেস্ট নিবি। তাহলে ছাত্রী বাধ্য হয়ে পড়বে। দেখবি, বিনী বৌদি এসে তোর সঙ্গে গল্প জুড়বে, বেশি তাল দিবি না, বাধাও না। তাহলে গুড়ের চা আর শসা দিয়ে মুড়ি জুটবে। ওদের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়। ওই পঞ্চাশ টাকা দিতেই কষ্ট হয়।
আমি পড়াতে শুরু করলাম। শুরুর দিকে ভালই চলছিল। মেয়েটা মুখ বুজে থাকে, বেশি কথা বলে না। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ছোট ভাই এবং ছোট বোন খাতা বই নিয়ে এসে সঙ্গে জুড়ে গেল। ওদের হোমটাস্ক একটু দেখিয়ে দিতে হবে। টাকা ওই পঞ্চাশটা। সে যাকগে, আমি দলের সবাইকে অধীরের দোকানে পাঁউরুটি ঘুগনি খাওয়াতে শুরু করলাম। চা আর সিগারেট সজলদার।
কিন্তু মেয়েটা বেয়াড়া।
আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম –টাস্ক করনি কেন? মুখ ঘুরিয়ে নিল।
ছোটভাই বলল-সন্তু। ছোট বোন ফিক্ করে হেসে উঠল।
আমি বললাম—কী ব্যাপার?
--দিদির লাভার সন্তুদা আজ বকে দিয়েছে।
আমি হাসি চেপে কড়া সুরে বললাম—আমি টাস্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করেছি। ছ্যাবলামি করতে নয়। আরেক বার বেয়াড়াপনা দেখলে আর আসবো না। দিদি তোমাদের থেকে বয়সে বড়, সেটা মনে রাখবে।
কথাগুলো ভেতরে গেল। বিনীবৌদি বোধহয় আড়ি পেতে ছিলেন। ওরা চলে গেছে, আমি চা খেয়ে উঠে আসবো এমন সময় ওদের বাবা এলেন লুঙি পরে। বল্লেন—আপনাকে আমাদের কথা একটু বলি।
দেশভাগের আগে পূববাংলার বগুড়া শহরে আমার বড় ওষুধের দোকান ছিল, রমরমিয়ে চলত। বিশ্বযুদ্ধ লেগেছে, চারদিকে আকালের ছায়া। সবকিছু ব্ল্যাক হচ্ছে, এমনকি লাইফ সেভিং ড্রাগও। একদিন একটা লোক এল। বলল ওর পেছনে পুলিশ লেগেছে। ৫০টা পেনিসিলিনের এই বাক্স যদি আমি রেখে দিই। ওকে তিরিশ টাকা দিলেই হবে। তখন একটা পেনিসিলিনের সরকারী দাম চার আনা।
আমি বললাম—রিস্ক আছে, তাই কুড়ি টাকার বেশি দিতে পারব না।
--তাই দিন।
পঞ্চাশটা পেনিসিলিন সাতদিনে প্রতিটি অ্যাম্পুল একটাকা দরে বিক্রি করলাম। সেই শুরু হল। আমার ঘরে লক্ষ্মী এল, বড় মেয়ের জন্ম হল। ব্যস্ এমন পয়া মেয়ে, সাক্ষাৎ লক্ষ্মী ঠাকরুণ। ওর জন্যে লাল কোট, মিছরির জল, আলাদা আয়া। এভাবেই তিনটে বছর গেল। এমন সময় দেশভাগ হল। দাঙ্গার সময় আমার দোকান লুঠ হল, বাড়িতে আগুন লাগল। সর্বস্বান্ত হয়ে এপারে এলাম।
যা এনেছিলাম তা জমি কিনে বাড়ি করতে খরচ হয়ে গেল। বাড়ির বাইরে প্লাস্টার হয় নি। আমি একটা দেশি ওষুধের কোম্পানিতে সেলসের কাজ দেখি। বি এস সি নই, তাই কোন বড় ফার্মাসিউটিক্যাল আমাকে নেবে না।
এদের আগের মত জামাকাপড়, খাবার কিনে দিতে পারি না। ছোট দুজনকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বড় এই পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারছে না। সবকিছুর জন্য আমাকেই দায়ি করছে। যত রাগ সব আমার উপর।
এদিকে রাজনৈতিক আন্দোলনের জোয়ার আসছে। আমি তাতে ভেসে গেলাম। টিউশনে যাই না। অ্যাবসেন্ট হতে হতে ছেড়ে দিলাম।
কিন্তু সামনে পরীক্ষা। একদিন ওর মা খবর পাঠালেন। মেয়েটি বলল—মাস্টারমশাই, সাতদিন পরে সংস্কৃত পরীক্ষা। আপনি যদি-- ।
--আমার সময় নেই, তবে তোমার বইটা দিয়ে দাও, দাগ দিয়ে দেব। সেগুলো মুখস্থ করলে পাশ করে যাবে।
ওর মুখ হাসি হাসি হয়ে গেল।
ছ’দিন পরে কাকিমা বলল—হ্যাঁরে কোথায় ছিলি সারাদিন? লাবু বলে তোর এক ছাত্রী এসেছিল, পরের দিন সংস্কৃত পরীক্ষা। ওর বই তোর কাছে রয়ে গেছে। আমি খুঁজে পেতে ওকে দিয়ে দিলাম। ও বইটার পাতা উলটে বলল—সে কী, স্যার তো কোথাও দাগ দেন নি? --তুই এটা কী করলি?
আমি এতটা বলে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। ঢক ঢক করে জল খেলাম।
দুই বন্ধু প্রতীক্ষায়, এই সাধারণ গল্পে কিসের পাপবোধ?
কোলকাতা ছাড়তে হল। ছত্তিশগড় এসে লেখাপড়া সাঙ্গ করে তোদের সঙ্গে ব্যাংকে যোগ দিলাম। তারপর ফিরে গেলাম কোলকাতায়, একবার দেখে আসি।
সন্ধ্যেবেলা। অষ্টচরণের মিষ্টির দোকানের সিঁড়িতে আগের মতন নরক গুলজার। ঈশ্বরের দুনিয়ায় সবাই ভাল আছে। চাকরি করছে। একজন জেলে গেছল। সে এখন কাটা কাপড়ের দোকান দিয়েছে। কাছেই বাস স্টপ। একজন কেউ হেঁটে আসছে। সামনে তাকিয়ে, আমাদের দিকে যেন ইচ্ছে করে দেখছে না।
আরে, এ তো সজলদা, আমাদের প্রথম যৌবনের গুরু।
চেঁচিয়ে ডাকতে যাব, এক বন্ধু ইশারায় মানা করল। সজলদা এগিয়ে গেল।
--কী হয়েছে?
--ও মেদিনীপুর জেলে দু’বছর থাকার সময় রাইটার হয়েছিল। অন্যদের থেকে আলাদা থাকত। আমরা বয়কট করেছি।
--তাতে কী? সাভারকরও তো আন্দামানে সেলুলার জেলে তেলঘানির ফোরম্যান হয়েছিলেন। জেলে থাকতে বারীন ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ-সবাই কিছু না কিছু করতেন। তোরা না বড্ড গোঁড়া।
সবাই হেসে ওঠে। আচমকা পিনড্রপ সায়লেন্স।
একটি মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে, তাঁতের শাড়ি, লিপস্টিকের ছোঁয়া—ল্যাম্পপোস্টের হলদেটে আলোয় স্পষ্ট।
বন্ধু ফিসফিস করে—চিনতে পারছিস?
আমি বোকার মত মাথা নাড়ি।
আরেকজন বলে-- তোর প্রাক্তন ছাত্রী, বড়বোন। ও হচ্ছে এলপি, মানে লোক্যাল প্রস্টিটিউট। সেন্ট্রাল ক্যালকাটার কোন ম্যাসাজ পার্লারে কাজ করে। এইসময় ঘরে ফেরে। আরেকটু বসে যা। একঘন্টা পরে এখান দিয়ে ছোট বোন যাবে। সে হল আইপি, ইন্টারন্যাশনাল প্রস্। চৌরঙ্গী পাড়ায় ধান্ধা।
আমার গা গুলোয়, বমি পায়। আড্ডা থেকে উঠে পড়ি।
আজও ভাবি, দুনিয়া পাল্টানোর সমাজ বদলানোর ক’গাছি ছিঁড়েছি? কিন্তু যদি দুইবোনকে ফাঁকি না দিয়ে ভাল করে পড়াতাম, তাহলে?
ঢাবার ছোকরা বিল নিয়ে আসে।
সচ্চিদানন্দ জড়ানো গলায় বলে—পাদ্রীবাবা, তোমার নরকেও জায়গা হবে না।