এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইদবোশেখি  ইদবোশেখি

  • স্বপ্নের জাদুকর

    হীরেন সিংহরায়
    ইদবোশেখি | ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ৭০৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়



    “আর একটা কথা। আমি নিজেকে একান্ত ভাগ্যবান মনে করি এই ভেবে যে এই জীবনে দু জন অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষকে চেনার সৌভাগ্য হয়েছে। একজন আপনি আর দ্বিতীয় ব্যক্তি এই পত্র বাহক” ।

    প্যারিসের কন্টিনেন্টাল এডিসন কোম্পানি অফিসের কর্তা চার্লস ব্যাচেলরের চিঠিটি পড়া শেষ হলে টমাস আলভা এডিসন মানুষটিকে আবার ভালো করে দেখলেন। দীর্ঘকায়, জামা কাপড় ধূলি ধূসরিত, এলিস আইল্যান্ডে জাহাজ থেকে নেমে আমেরিকা প্রবেশের অনুমতি পেয়েই ব্যাচেলরের লেখা পরিচয় পত্র হাতে সিধে চলে এসেছেন এডিসনের কাছে। জানিয়েছেন এই সমুদ্র যাত্রায় তাঁর সর্বস্ব খোয়া গেছে, এখন সম্বল পকেটের চারটি সেন্ট। তাঁর নাম নিকোলা টেসলা। বয়েস আঠাশ।


    নিকোলা টেসলা


    এই কপর্দকশূন্য মানুষটির সঙ্গে তাঁর তুলনা করেছেন চার্লস?

    টমাস আলভা এডিসন কখনো স্কুলের মুখ দেখেননি, বারো বছর বয়েসে ট্রেনে কখনো লজেন্স কখনো খবরের কাগজ বেচে জীবন ধারণ করেছেন কিন্তু এখন এই চল্লিশ পেরুনোর আগেই তিনি আমেরিকার কেন, বিশ্বের এক ডাকসাইটে আবিষ্কারক নামে খ্যাত। মাত্র বছর দশেকের ভেতরে দিয়েছেন ইলেকট্রিক বালব, সে এতো সস্তা ‘যে ভবিষ্যতে কেবল ধনীরা মোমবাতি জ্বালাবেন’, পাওয়ার জেনারেটিং প্লান্ট, ফোনোগ্রাফ, এমন কি মর্স কোডের টেলিগ্রামকে ছেপেছেন কাগজে যাতে সেটি সত্ত্বর প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায়। তাঁর পেটেন্টের সংখ্যা অগুনতি। নিউ জার্সিতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মেনলো পার্কের বিশাল ল্যাবরেটরিতে কয়েকশ নবীন বৈজ্ঞানিক তাঁদের গবেষণায় মগ্ন। দূর দূর থেকে মানুষজন আসেন বিজলি বাতির খেলা দেখতে, বছর গেলে মিলিয়ন ডলার কোম্পানির আয় বাঁধা। হেনরি ফোর্ডের সঙ্গে তাঁর ওঠা বসা। ইনভেস্টররা চেক হাতে নিয়ে তাঁর বসার ঘরে অপেক্ষা করেন।

    বয়েসে তাঁর চেয়ে অন্তত বছর দশেকের ছোট, মুখোমুখি দাঁড়ানো এই মানুষটি হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের দক্ষিণে ক্রোয়েশিয়ায় জন্মেছেন, গ্রাতস টেকনিকাল কলেজে পড়েছেন, ডিগ্রি অর্জন করেননি কিন্তু ক্লাসরুমে প্রফেসরের ইলেকট্রিকাল মডেলের ত্রুটি দেখিয়ে সেটি সংশোধন করে দিয়েছেন। প্যারিসে চাকরিতে যোগ দেবার সময় নিকোলা টেসলা জানিয়েছিলেন তাঁর সিভিতে জেনে শুনেই একটি বিষয়ের উল্লেখ করেননি; হাবসবুর্গ রাজত্বের আইন অনুযায়ী দু বছরের বাধ্যতামূলক মিলিটারি সার্ভিস এড়িয়ে ক্রোয়েশিয়ার পাহাড়ি গ্রামাঞ্চলে অজ্ঞাতবাস করেছেন, জানাজানি হলে তাঁর নামে অস্ট্রিয়ান সরকার হুলিয়া জারি করতে পারে তবে প্যারিসে নয়! বইয়ের পোকা ছিলেন তিনি। সময় কাটাতে মার্ক টোয়েনের সব বই জোগাড় করে পড়েছেন।* সঙ্গে ছিল ভলতেয়ারের সমগ্র রচনাবলী, ছোট হরফে ছাপা একশটা বাঁধানো বই প্রচুর পরিশ্রমে সবটা পড়ে ফেলে লেখেন, ‘এমন দানবীয় কাজ আর কখনো নয়!’

    অবাক হয়ে চার্লস জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি ফরাসি জানেন, বলেন এমন ভালো যে আপনার সহকর্মীরা আপনাকে ফরাসি মনে করেন। তা, ইংরেজিটাও জানেন? সলজ্জ হেসে টেসলা জানান তাঁর পাঠক্রম ছিল জার্মানে, সেই সঙ্গে ইংরেজি ও ইতালিয়ান শিখে নিয়েছিলেন।

    পোর্ট হিউরন, মিশিগানের টমাস আলভা এডিসন ইংরেজি ছাড়া আর কোন ভাষা জানতেন না –তাঁর এলেম অন্যত্র। চার্লস লিখেছেন নিকোলা টেসলা সে অবধি কোন বিরাট কিছু আবিষ্কার করেননি কিন্তু তাঁর মেধা সাধারণ মানদণ্ডে মাপা যায় না। তিনি ঘুমের ভেতরে ভাবেন, স্বপ্নের ভেতরে একটা মেশিন বানিয়ে ফেলেন, তার ভুল ত্রুটি থাকলে ঘুম ভাঙ্গার আগে সেগুলোকে সারিয়ে কাজের যোগ্য বানিয়ে দেন। দিস্তে দিস্তে ফুলস্ক্যাপ কাগজের পাতায় স্কেচ আঁকা ল্যাবে গিয়ে আঠারোটা এক্সপেরিমেন্ট করে কোন প্রোটোটাইপ বানানো তাঁর কাজ নয়। ল্যাবরেটরিতে যখন যান, স্বপ্নে দেখা মেশিনটি তৈরি করেন, কেবলমাত্র আবিষ্কারের আনন্দে। সেটা শুনে এডিসন খুব খুশি হতে পারেননি; তিনি নিজে কাজ করেন ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতিতে, ছবি এঁকে নয়, আঠারো বার বানিয়ে ও ভেঙ্গে তাঁর যন্ত্র পাতিকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন। তবে সেই যন্ত্র যদি কোন বাণিজ্যিক মুনাফা না আনতে পারে তাহলে এডিসন সেটিকে আস্তাকুঁড়ে পাঠান।

    চার্লসের উচ্চ প্রশংসা কেবল মাত্র নিকোলা টেসলার স্বপ্নের জাদুর ওপরে আধারিত ছিল না ।

    কন্টিনেন্টাল এডিসন একটি ফরাসি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, টমাস এডিসনের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি বাজারে বিক্রি করে, তাঁর নাম ব্যবহার করে। নিকোলা টেসলা সেখানে কাজে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কোম্পানি একটি বাণিজ্যিক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। ফ্রান্সের আলসাস প্রদেশে (সেটি তখন প্রাশিয়ার অঙ্গরাজ্য, এলসাস) এডিসন কোম্পানির একটি পাওয়ার স্টেশন স্থাপনা সমারোহে বার্লিন থেকে এসেছেন সম্রাট ভিলহেলম; ব্যান্ড বাদ্যির মধ্যে ফিতে কেটে তিনি যেই সুইচ অন করেছেন তৎক্ষণাৎ প্রলয় এবং অগ্নিকাণ্ড! ক্রুদ্ধ সম্রাট কোন মতে আপন প্রাণ বাঁচিয়ে দ্রুতবেগে সভাস্থল পরিত্যাগ করেন, সেই সঙ্গে পাওয়ার স্টেশনের পেটেন্ট বাতিলের নির্দেশ দিয়ে যান। বহু মূল্যের সেই কনট্র্যাক্ট হারালে প্যারিসের দোকান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চার্লস ব্যাচেলর তখন তাঁর নবীনতম কর্মীকে বললেন, এটা সারাতে পারবেন ? আমাদের পেটেন্টটা বাঁচিয়ে যদি পাওয়ার স্টেশনের কাজটা করে দিতে পারেন, আমাদের কোম্পানি যথাযোগ্য পুরস্কার দেবে।

    এক মাস দিন রাত্তির খেটে নিকোলা টেসলা জ্বলে যাওয়া পাওয়ার সিস্টেমের খোল নলচে বদলে সেটিকে চালু করে দিলেন। খুশি হয়ে প্রাশিয়ান সরকারের দফতর হতে এডিসন কোম্পানির পেটেন্টটি পুনর্বহালের আদেশ পাওয়া গেলো। এবার নিকোলা টেসলা ফরাসি মালিকদের কাছে প্রতিশ্রুত সাম্মানিক চাইতে কাজ ফুরলে পাজি এই আপ্তবাক্যের সত্যতা প্রমাণ হল পুনরায়। কর্তৃপক্ষ বললেন, কাজের জন্য তো মাস মাইনে দেওয়া হয়। তার বাড়তি কেন দেওয়া হবে?

    প্যারিসে তাঁর কাজের সম্যক কদর না পেয়ে নিতান্ত ক্ষুণ্ণ হয়ে নতুন ভবিষ্যতের সন্ধানে আটলান্টিক পাড়ি নিউ ইয়র্কে হাজির হয়েছেন। চার্লস খানিকটা অপরাধ বোধ থেকে অথবা হঠাৎ দয়া পরবশ হয়ে একটি পরিচয় পত্র লিখে দিয়েছেন - এখন যদি এডিসন তাঁর কাজের সুযোগ দেন।


    মেনলো পার্কের ল্যাবরেটরি


    টমাস এডিসন প্রায় তৎক্ষণাৎ নিকোলা টেসলাকে তাঁর মেনলো পার্কের ল্যাবরেটরিতে নিয়োগপত্র লিখলে পরে অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ভাবনা মুক্ত হয়ে নিকোলা মহোৎসাহে কাজে যোগ দিলেন। দু জনের কেউ সেদিন জানতেন না শিগগির এই দুই প্রতিভা এক সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হবেন, পদার্থ বিজ্ঞানের ইতিহাসে যার নাম দুই বিদ্যুৎ তরঙ্গের লড়াই (ওয়ার অফ টু কারেন্টস)।

    ৯ জুলাই ১৮৫৬ সালে ঠিক মধ্যরাতে নিকোলা টেসলার জন্ম হয় এক সার্বিয়ান পরিবারে, ক্রোয়েশিয়ার স্মিলিয়ান গ্রামে। সে রাতে আকাশে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুতের ঝলক ইঙ্গিত দিয়েছিল এই শিশু একদিন খেলবে বিদ্যুতের খেলা, নিশীথবেলা (যদিও আমার যাওয়া হয় নি, অসম্ভব তুষার ঝরা দিন ছিল কিন্তু জাগ্রেব থেকে গাড়িতে জাদার যাবার পথে দেখেছি নিকোলা টেসলার জন্মস্থান স্মিলিয়ান গ্রামের সাইনবোর্ড)। পিতা মিলুতিন অর্থোডক্স গিরজের ধর্মযাজক, মা জর্জিনা সংসারের কাজে লাগে এমন সব জিনিস বানাতেন। অসাধারণ স্মরণ শক্তি তাঁর, সার্বিয়ান ধর্ম গ্রন্থ ও মহাকাব্য কণ্ঠস্থ ছিল। তিন মেয়ে দুটি ছেলে, নিকোলার সাত বছর বয়েসে বড়ো ভাই ঘোড়া থেকে পড়ে মারা যায়।

    স্কুলে পড়ার সময়ে তাঁর ফিজিক্স শিক্ষকের কাছে বিদ্যুতের প্রথম পাঠ পড়েই নিকোলার মন চলে গেছে সেদিকে; ইতিমধ্যে কাগজ নয়, মানসাঙ্ক দিয়ে ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসের সমাধান করেন। এত দ্রুত কঠিন অঙ্কের উত্তর দেন যে তাঁর শিক্ষকরা সন্দেহ করেন নিকোলা উত্তরগুলো টুকেছে! স্কুল শেষ হলে নিকোলা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যেতে চান; বাবার ইচ্ছে পুত্র অর্থোডক্স গিরজেয় তাঁর পদাঙ্কে ধর্মচর্চায় যোগ দিক। পিতা পুত্রে বিবাদ যখন তুঙ্গে এমন সময় কলেরায় আক্রান্ত হলেননি কোলা। পিতা মিলুতিন গিরজেয় হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন রোগ থেকে সেরে উঠলে নিকোলার ইচ্ছেয় কোন বাধা না দিয়ে তাকে হাবসবুর্গ রাজাদের প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রাতসের টেকনিকাল কলেজে পাঠাবেন। গ্রাতসের পাঠ শেষ হবার আগেই বাবা মিলুতিন মারা গেলেন। শোক সন্তাপের অবসানে তাঁর কাকারা কিছু টাকা জোগাড় করে নিকোলাকে বললেন, তোমার বাবার ইচ্ছে ছিল তুমি আরও লেখাপড়া করো, এবার যাও প্রাগে, চার্লস ফার্দিনান্দ ইউনিভার্সিটি; কিন্তু বিধি বাম, যতদিনে নিকোলা প্রাগ পৌঁছুলেন সেখানে ভর্তির শেষ তারিখ পার হয়ে গেছে। খাতায় নাম উঠবে না। অদম্য নিকোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট বিভাগে কাজ জোগাড় ফেললেন, সেই সুযোগে ফিজিক্সের ক্লাসে পেছনের বেঞ্চে বসে লেকচার শোনেন, বিশ বছর বাদে ফ্রান্তস কাফকা সেই একই সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসরুমে যাবেন।


    নিকোলা টেসলার জন্ম ভিটে , ডাইনে মিলুতিন টেসলার গিরজে


    ডিগ্রি জুটবে না জেনে এক বছর বাদে প্রাগ ছাড়া মনস্থ করলেন। স্মিলিয়ানে ফিরবেন না, এবার কাজ খোঁজা শুরু। হাতে হাবসবুর্গের ছাপ মারা পাসপোর্ট, উত্তরে ইউক্রেন থেকে দক্ষিণে দুব্রভনিক অবধি যেখানে খুশি যেতে পারেন, ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিটের কোন বালাই নেই। প্রথম কাজ জুটল বুদাপেস্টের রাজকীয় টেলিফোন একসচেঞ্জে, যন্ত্রপাতি তদারক ও কলকব্জা সারানো।

    অফিসের ছুটির পরে একদিন পেস্টের পার্কের মাঝ দিয়ে হাঁটছেন, সূর্য ডুবু ডুবু, পাশে দানিউব, ওপারে বুদার পাহাড় – ঘুমে নয়, জাগরণে নিকোলা টেসলা দেখলেন একটি ঘুরন্ত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, সেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে একমুখী নয়, যার তরঙ্গ বদলাবে গতি ও দূরত্ব –অল্টারনেটিং কারেন্ট (AC)! ডাইনামো, ট্রান্সফরমার দিয়ে, এক পলিফেজ সিস্টেম, একই অঙ্গে অনেক রূপ! সে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যাবে দূর থেকে দূরে, অল্টারনেটিং কারেন্ট যেন এক মহা শক্তিশালী, উদ্ধত ক্ষিপ্র ঝঞ্ঝা যার রূপ বদলে দেওয়া যায় যেখানে সেখানে, একই সঙ্গে তরঙ্গকে পোষ মানানো যায়-একি মায়া, লুকাও কায়া?

    মেনলো পার্কে বয়ে যায় খোলা হাওয়া, অজস্র যুবক যুবতি বন্ধনহীন সৃষ্টির নেশায় মশগুল, ভাবনার পথভোলার বাধা নেই। ড্রেস কোড নেই, যে যেমন খুশি সেজে আসে, ঝাঁপিয়ে পড়ে এই কর্মযজ্ঞে। নিকোলা লক্ষ করলেন এডিসন ও তাঁর বাহিনী দিবারাত্র কাজ করেন, রাত বিরেতে ডেস্কে খাবার চলে আসে সবার জন্য। সুইগি বা ডেলিভারু অ্যাপ তৈরি হবার একশ বছর আগে মেনলো পার্কে বাইসাইকেল নিয়ে প্রস্তুত থাকত তরুণ কর্মী বাহিনী, আশে পাশের পরিবারের সঙ্গে চুক্তি মতো গরম খাবার হাজির করতো বিজ্ঞানীদের সামনে। এডিসন ডেস্কের নিচে বা অফিসের টেবিলের তলায় ঘুমোন। তাঁর কোন হবি নেই, খেলা ধুলা সঙ্গীত বা থিয়েটার কোন কিছুতেই তাঁর আগ্রহ নেই। শয়নে স্বপনে তাঁর ডিরেক্ট কারেন্ট!

    বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের কাজে টমাস এডিসন প্রভূত অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। তিনি নিকোলা টেসলাকে প্রথম টাস্ক দিলেন- ডিরেক্ট কারেন্ট ডাইনামো দিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়নের। নিকোলা সেটি করতে সক্ষম হলে, পঞ্চাশ হাজার ডলার বোনাস পাবেন। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে নিকোলা ডাইনামোর কার্যক্ষমতা বাড়ালেন। এবার বোনাস?

    তাঁর একটি ক্রুর নির্মম পরিহাসের কারণে টমাস আলভা এডিসন অমর হয়ে আছেন। নিকোলা বোনাস প্রসঙ্গ তুললে তার উত্তরে এডিসন বললেন, “টেসলা, তুমি আমাদের আমেরিকান ঠাট্টাটা বুঝতে পারোনি” (টেসলা ইউ জাস্ট ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড আওয়ার আমেরিকান হিউমর )।

    দু বছরের মধ্যে দুই দেশে দুবার প্রতারিত হয়ে নিকোলা টেসলা দ্বিতীয়বার পদত্যাগ করলেন।

    জীবনের শেষ দিন অবধি টমাস এডিসন স্বীকার করেছেননি কোলা টেসলাকে চলে যেতে দেওয়াটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল।

    কারখানায় ও রাস্তাঘাটে আরক লাইটিঙের প্রস্তাব নিয়ে নিউ ইয়র্কের কয়েকজন ব্যবসায়ী নিকোলা টেসলাকে অংশীদার করে একটি কোম্পানি খাড়া করলেন, শেয়ার কেনার পয়সা টেসলার নেই তিনি বেতন পাবেন নামমাত্র। তবে শেয়ার সার্টিফিকেট মাফিক আংশিকভাবে কোম্পানির মালিক হবেন। তাঁর নিজের শেয়ার বিক্রি করতে গিয়ে টেসলা জানলেন সেটি একেবারে মূল্যহীন, একটি ধাপ্পা।

    তৃতীয় বার প্রতারিত হলেন টেসলা। রাজ কাপুর অভিনীত বাসু ভট্টাচার্যের তিসরি কসম ছবিটি কারো মনে থাকতে পারে।

    এবার তিনি আক্ষরিক অর্থে পথে নামলেন ।

    পকেট শূন্য। কোথা থেকে সেদিনের অন্ন জুটবে ভাবতে ভাবতে নিউ ইয়র্কের পথে হাঁটছেন, দেখেন রাস্তায় মাটি খোঁড়া হচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রমে কখনো কুণ্ঠিত ছিলেন না, এগিয়ে গিয়ে বললেন তিনিও কাজ করতে চান। মজুরদের সর্দার টেসলার পরিচ্ছন্ন পোশাক দেখে অট্টহাসি হাসলেন, তারপর বললেন, ঠিক আছে, সাদা শার্টের হাতটা গুটিয়ে নিয়ে এই গাড্ডায় নেমে কোদাল চালাও। দিনের শেষে দু ডলার মজুরি পেলেন। দিন যায়। মজদুরদের সর্দার তাঁকে ঠিকই চিনেছিলেন। কদিন বাদে দুপুরে একপাশে ডাকলেন, নিজের খাবার ভাগ করে নিয়ে বললেন, ‘ তুমি তো এ কাজ করার জন্য জন্মাও নি। এখানে ভিড়লে কেন? অভাবে? চলো আমার সঙ্গে।’

    ইতিহাস সেই মানুষটির নাম মনে রাখেনি ।

    সর্দার চিনতেন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের এক বড়ো সায়েবকে, টেসলাকে নিয়ে গেলেন তাঁর কাছে। সেই মিস্টার ব্রাউনের সামনে হাজির হয়ে দুটো কথা বলতেই তিনি টেসলার হাত ধরে বললেন, ‘ কোথায় ছিলেন এতদিন? আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি’; আরেকজন পার্টনারকে নিয়ে যার স্থাপনা করলেন সেটি নিকোলা টেসলার নামাঙ্কিত প্রথম প্রতিষ্ঠান, টেসলা ইলেকট্রিক কোম্পানি, সাত দিন আগেও যে রাস্তায় তিনি মাটি কোপাচ্ছিলেন তার অনতিদূরে।

    একশ কুড়ি বছর বাদে দুই ক্যালিফোর্নিয়ান, মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টারপেনিং, টেসলা মোটরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনা করবেন এবং অচিরে এলন মাস্ক নামক এক দক্ষিণ আফ্রিকান তার কর্ণধার হবেন। সেটা আরেক ইতিহাস।

    অল্টারনেটিং কারেন্টের সাফল্যের কাহিনি যতোই ছড়িয়ে পড়ল, টমাস এডিসন ততই তার বিরুদ্ধে প্রচারে ব্যস্ত হলেন। এ সি অত্যন্ত বিপদজনক, ডি সির লো ভোল্টেজ, তার ছুঁলে প্রাণহানি হবে না কিন্তু এ সির তার ছুঁলেই পঞ্চত্ব প্রাপ্তি সুনিশ্চিত (আমাদের বাল্যকালে উত্তর কলকাতায় ঠিক এই কাহিনি চালু ছিল )। এ সি যে কি ভয়ঙ্কর সেটা প্রমাণ করার জন্য এডিসন প্রকাশ্যে কুকুর বেড়াল এমনকি নিউ ইয়র্কের কোনি আইল্যান্ডে টপসি নামের একটি দুষ্টু হাতিকে বিপুল জনসমক্ষে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মরতে দেখালেন(টপসি হত্যাকাণ্ড ফিল্মে রেকর্ড করা হয় )। কারণটা অন্তত গদ্যময়। এডিসন নিজের এবং নিবেশকদের বিপুল অর্থ লগ্নি করেছেন ডিরেক্ট কারেন্ট ব্যবসাতে, সেটাকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

    ১৮৮৮ সালে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিকাল এঞ্জিনিয়ারদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অল্টারনেটিং কারেন্টের ব্যবহারিক উপযোগের বিষয়ে নিকোলা টেসলার বক্তৃতা শুনে চমৎকৃত হয়ে জর্জ ওয়েসটিংহাউস দেখা করতে এলেন ৩৩ নম্বর সাউথ ফিফথ এভেনিউতে টেসলার ল্যাবোরেটরিতে। তিনি বুঝেছিলেন অল্টারনেটিং কারেন্টের পথেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের ভবিষ্যৎ নিহিত। তিনি টেসলার পেটেন্ট ব্যবহারের দক্ষিণা হিসেবে পাঁচ লক্ষ ডলার দিলেন এবং একটি রয়ালটি চুক্তি স্বাক্ষর করলেন – টেসলা সিস্টেমে উৎপাদিত প্রতি হর্স পাওয়ারের জন্য টেসলার প্রাপ্য হবে এক ডলার।

    টেসলা যেখানে যাবেন কপাল যাবে সঙ্গে।

    একদিকে এডিসনের অপপ্রচার, অন্যদিকে দেশের ব্যবসায়ে মন্দা- ওয়েসটিংহাউসের টাকা ফুরিয়ে আসছে। তিনি বুঝলেন টেসলাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রাখতে পারবেন না। টেসলাকে বললেন এই অবস্থায় আমি হর্সপাওয়ার পিছু এক ডলার রয়ালটি আপাতত দিতে পারবো না আপনি কি অন্য কোন সমাধানে রাজি হবেন?

    তাঁর ফিফথ এভিনিউয়ের অফিসের ডেস্কের ড্রয়ার খুলে টেসলা সেই চুক্তিপত্রটি হাতে নিয়ে টুকরো টুকরো ছিঁড়ে বাতাসে উড়িয়ে দিলেন; বললেন আমি চাই বিশ্বজুড়ে অল্টারনেটিং কারেন্টের ব্যবহার হোক, বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে পড়ুক। স্তব্ধ বিস্ময়ে জর্জ ওয়েসটিংহাউস মনে মনে তাঁকে হয়তো প্রণাম করলেন। সেদিন টেসলা বলতে পারতেন রয়ালটি আমার প্রাপ্য, আপনাকে দিতেই হবে অথবা বলতে পারতেন কম করে দেবেন বা কিছুদিন পর দেবেন। বললেন, না আমি কিছুই চাই না ।

    অঙ্ক কষে পরে দেখানো হয়েছে এক হর্স পাওয়ার উৎপাদনের জন্য এক ডলার কেন পঞ্চাশ সেন্ট পেলেও টেসলা সেই আমলে বিলিওনেয়ার হতে পারতেন।

    খ্যাতি এলো। এডিসনকে বাতিল করে টেসলার টেকনোলজিতে আলো জ্বলল ১৮৯৩ সালের শিকাগো ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে। তিন বছর বাদে তাঁরই পদ্ধতিতে নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকে উৎপাদিত জলবিদ্যুতে বাইশ মাইল দূরের বাফেলো শহরও হল আলোকিত।

    মারকোনির অনেক আগেই বেতার তরঙ্গ নিয়ে কাজ করেছেন টেসলা; মারকোনিকে পেটেন্ট দেওয়ার বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা করেছিলেন। বহু বছর বাদে আমেরিকান আদালত তার মান্যতা দেয়। শেষ পর্যন্ত টেসলা বলেন, “মারকোনি লোকটা ভালো,কাজ করে যাক। সে ইতিমধ্যে আমার সতেরোটা পেটেন্টের জোরে রেডিও চালু করেছে।”

    ১৯০৯ সালে মারকোনি পেলেন নোবেল পুরস্কার ।

    ১৯১২ সালে নোবেল কমিটি এডিসন ও টেসলাকে পদার্থ বিদ্যায় নোবেল প্রাইজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে টেসলা বলেন এডিসনের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি কোন পুরস্কার গ্রহণ করবেন না।

    বিজ্ঞানে টমাস এডিসনের অবদান, তাঁর ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ওপরে আধারিত একাগ্র কর্মনিষ্ঠার বিষয়ে টেসলার গভীর শ্রদ্ধা ছিল, তাঁর কর্ম পদ্ধতির ওপরে নয়। আমেরিকার ইতিহাসে এডিসন অতুলনীয় উদ্ভাবক কিন্তু টেসলা মনে করতেন এডিসনের কাজের পদ্ধতি এমন অদক্ষ যে তাঁকে যদি খড়ের গাদায় একটা ছুঁচ খুঁজতে বলা হয়, তিনি কক্ষনো ভাববার চেষ্টা করবেন না যে ছুঁচটা কোথায় থাকতে পারে। তিনি প্রত্যেকটা খড় উলতে পালটে দেখবেন ।

    “আমি কাছ থেকে তাঁর কাজকর্ম দেখে ভেবেছি তিনি খানিকটা ভেবে চিন্তে কাজ করলে তাঁর পরিশ্রমের ৯০% বাঁচাতে পারতেন”।

    নোবেল কমিটি দু জনকে আলাদা করে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান করবেন না। অতএব টেসলার নামের পাশে ঢ্যাঁড়া কেটে দিলেন। হয়তো মারি কুরি ছাড়া একমাত্র নিকোলা টেসলা দু দুবার নোবেল পুরস্কার পাবার অধিকারী ছিলেন ।

    এই অসামান্য প্রতিভাকে পিছু ধাওয়া করেছে দুর্ভাগ্য। একদিন তাঁর ল্যাবোরেটরি পুড়ে গেলো আগুনে। কতিপয় শুভানুধ্যায়ীর সাহায্যে কেটেছে দিন। জীবনের শেষ নটি বছর তিনি বাস করেছেন ম্যানহাটানের এইটথ এভনিউতে হোটেল নিউ ইয়র্কারের তেত্রিশ তলায়। সাতাশ নম্বর তাঁর বেডরুম, আঠাশ নম্বর বসার ঘর। বিজলি বেচে অগাধ ধনের অধিকারী টেসলার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ জর্জ ওয়েসটিংহাউস নীরবে সে ব্যয় বহন করেছিলেন।


    হোটেল নিউ ইয়র্কার


    শেষ কয়েক বছর প্রতিদিন আধ মাইল হেঁটে ব্রায়ানট পার্কে গিয়ে পায়রাদের দানা খাওয়াতেন, নিজে যেতে না পারলে হোটেলের কোন কর্মীকে পাঠাতেন ।

    কয়েক বছর আগে ব্রায়ান্ট পার্কে দাঁড়িয়ে মায়াকে বলেছিলাম চোখ বন্ধ করো, ভাবো যে নিকোলা টেসলা আমাদের জীবনে আলো জ্বেলে দিয়েছেন, তিনি ঠিক এইখানে দাঁড়িয়ে আছেন, পায়রাদের মাঝে, তোমারই সামনে কিন্তু তুমি দেখতে পাচ্ছ না।

    একদিন সকাল বেলায় ৩৩২৭ নম্বর ঘরে বেল বাজানো সত্ত্বেও কোন সাড়া না পেয়ে হোটেল পরিচারিকা নিজের চাবি দিয়ে দরোজা খুলে দেখেন নিকোলা টেসলা ঘুমের মধ্যে চলে গেছেন আরেক জগতে ।

    ষাট বছর আগে যেমন একদিন নিউ ইয়র্কে এসেছিলেন, তেমনই কপর্দকশূন্য হয়ে বিদায় নিলেন, রেখে গেলেন সাতশো পেটেন্ট, মাথার ভেতরের ফাইলে হাজার স্কেচ নিয়ে স্বপ্নের যাদুকর মহাকালের কোলে চলে গেলেন।

    বরফ পড়ছে সকাল থেকে, নিউ ইয়র্কের পথ ঘাট সাদা হয়ে আছে।

    সেদিন ৮ ই জানুয়ারি, ১৯৪৩। নিকোলা টেসলার বয়েস হয়েছিল সাতাশি।

    পুনশ্চ

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে তখন। আমেরিকান নাগরিক এবং পাসপোর্টধারি হলেও নিকোলা টেসলা জন্মসূত্রে সার্বিয়ান। অতএব তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র এফবিআই ঘরের দরোজা ভেঙ্গে নিকোলা টেসলার যাবতীয় কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে, আশি বছর বাদেও তার কোন সন্ধান মেলেনি ।

    নিকোলা টেসলা নিজের কথায়

    আমার ভাবনাকে দেখি মনের ভেতরে, সেটাকে গড়ে তুলি, অদল বদল করি, সেই যন্ত্রকে চালাই নিজের ইচ্ছেমত ।

    ঈশ্বর এবং ফিজিক্স এক।

    ভবিষ্যৎ

    বর্তমান তারা দখল করে রেখেছে, ভবিষ্যৎ আমার।

    একদিন আমরা মানুষের প্রতি মানুষের যে নৃশংসতা দেখব সেটা আমাদের আজকের চিন্তার বাইরে।

    দুনিয়ার কোথায় কি ঘটছে তা জানতে মানুষ এতো ব্যস্ত থাকে যে তার আপন মনের গভীরে কি ঘটছে তার খবর রাখে না।

    আজ এই শতাব্দীতে সকল সভ্য দেশ তাদের আয়ের মোটা অংশ খরচা করে রণসজ্জায়,অল্প পরিমাণ শিক্ষায়। আমার আশা এই যে অন্তত একবিংশ শতাব্দীতে উলটোটা হবে ।

    জিনিয়াস একটি পাসপোর্ট। সে নিজেই তার বাসযোগ্য দেশ খুঁজে নেয়।

    বিবাহ

    আবিষ্কারক বা উদ্ভাবকদের বিয়ে করার সময় থাকে না। মনে হয় না ইতিহাসে কিছু বিবাহিত লোকেরা কিছু সম্পন্ন করেছেন

    তুমি যা চাও সেটা ভালোবাসা নয়, ভালোবাসা তাই যা তুমি দিতে পারো ।

    ভাবের ঘরে চুরি

    ওরা আমার আইডিয়া চুরি করেছে করুক, আমার কোন দুঃখ নেই। দুঃখ শুধু এই যে তাদের নিজস্ব কোন আইডিয়া নেই।

    কিছু ক্ষুদ্র বুদ্ধির ঈর্ষা পরায়ণ লোক ভাবতেই পারে তারা আমার পথ আটকেছে, আমার কাছে তারা রোগের বীজাণু মাত্র ।

    মানুষের সকল ঘৃণাকে যদি বিদ্যুতে বদলে দেওয়া যায়, সারা দুনিয়া আলোকিত হবে।

    হয়তো আজকের অর্থনীতিবিদদের কথা মনে রেখে নিকোলা টেসলা বলেছিলেন

    আজকের বৈজ্ঞানিকরা এক্সপেরিমেন্ট নয়, বোর্ডে অঙ্ক কষে এমন সব মডেল খাড়া করেন যার সঙ্গে জীবনের কোন যোগ নেই।

    ****


    দেশ কোথায় গো তোমার বন্ধু

    আথেন্স, ইথাকা থেকে শুরু করে স্মিরনা (আজকের ইজমির ) অবধি সাতটি শহর একদিন ইলিয়াডের হোমারকে আপন সন্তান বলে দাবি করেছিল। নিকোলা টেসলা জন্মসূত্রে সার্বিয়ান, মাতৃভাষা সার্বো -ক্রোয়াট কিন্তু তিনি ছিলেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের প্রজা। সার্বিয়া তখন সম্পূর্ণ আলাদা দেশ। ১৮৯৪ সালে তিনি একবার ট্রেনে বেলগ্রেড যান, গোনা গুনতি ৩১ ঘণ্টা সেখানে ছিলেন! জাগ্রেব ও বেলগ্রেডে নিকোলা টেসলা মিউজিয়াম দেখেছি , বেলগ্রেডে নিকোলা টেসলা এয়ারপোর্টে নেমেছি, সার্বিয়ার দ্বিতীয় শহর নিস, ওবরেজ, মোরাভিতসায় এবং ক্রোয়েশিয়াতে তাঁর নামে একশ দশটি রাস্তা আছে, নোভি সাদে গ্রীষ্মে টেসলা ফেস্ট হয় ।


    নিকোলা টেসলা মিউজিয়াম, বেলগ্রেড


    নিকোলা টেসলা মিউজিয়াম, জাগ্রেব


    দুই দেশের একই দাবি - নিকোলা টেসলা আমাদেরই লোক!

    রুম নাম্বার ৩৩২৭

    ম্যানহাটানের এইটথ এভিনিউতে দি নিউ ইয়র্কার হোটেলের ৩৩২৭ নম্বর ঘরে নিকোলা টেসলা মেমরিবিলিয়া পরিবৃত হয়ে রাত্রিবাস করা যায়!



    টেসলার মৃত্যুস্থলে বসানো ফলক


    অপরাধ স্বীকার

    ইকনমিকসের মতো ধোঁয়াটে বিষয় পড়ার বিভ্রান্ত জ্ঞান ও ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়ে আমাদের যুগ থেকে অনেক এগিয়ে থাকা এই ক্ষণজন্মা কালপুরুষকে সামান্য কিছু শব্দে ধরবার চেষ্টা কেবল ধৃষ্টতা নয়, এটি একটি অপরাধ। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি ।

    আগ্রহী পাঠকের পাতা ওলটানোর সুবিধার্থে

    ম্যান আউট অফ টাইম মার্গারেট চেয়নি

    দি ম্যান হু ইনভেনটেড দি
    টুয়েনটিইয়েথ সেঞ্চুরি রবার্ট লোমাস

    মাই ইনভেনশনস নিকোলা টেসলা

    *তাঁর অজ্ঞাতবাসের পঁচিশ বছর বাদে মার্ক টোয়েনের সাক্ষাৎ পরিচয় হলে নিকোলা টেসলার গল্প শুনে “মিস্টার ক্লেমেন্স এতো হেসেছিলেন যে তাঁর চোখে জল এসে যায়”।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইদবোশেখি | ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ৭০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেশ মুখার্জী | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১৯542512
  • অত্যন্ত সুলিখিত নিবন্ধ। পড়ে খুব আনন্দ পেলাম। 
     
    ওনার এই  কথাটি  নিদারুণ সত্য - মানুষের সকল ঘৃণাকে যদি বিদ্যুতে বদলে দেওয়া যায়, সারা দুনিয়া আলোকিত হবে। 
  • | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৩৯542513
  •  পড়তে পড়তে গায়ে কাঁটা দিল। এমনিতে অনেকটাই জানা, কিন্তু আপনার উপস্থাপনা এত চমৎকার যে পড়তে ভারী ভাল লাগে। আর ওই কোরিলেট করা, যেমন কাফকাকে দিয়েছেন এইটে দারুণ। একটা বড় ছবি চোখে ভাসে। 
  • উত্তম ভট্টাচার্য | 2405:201:8008:b126:43c3:b019:5018:***:*** | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪০542514
  • অসাধারণ এক গল্প। অসাধারণ এক জীবন ইতিহাস । অত্যন্ত মুন্সিয়ানা র সাক্ষী। এক অজানা গল্প। লেখক ও প্রকাশক সকলে কেই অভিনন্দন।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:০০542515
  • নিকোলা টেসলা, তাঁকে নিয়ে হীরেনদার লেখা, সাথে রমিতের অলংকরণ - অত্যন্ত ভালো লেগেছে। 
  • Debanjan Banerjee | 2409:4060:21e:f3e9:efa2:8442:4366:***:*** | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:০১542516
  • অসাধারণ হয়েছে হিরেনদা l আচ্ছা ১৮৯৩ সালে যে শিকাগো মেলার আলো জ্বলেছিলো টেসলার উদ্ভাবনে , এখানেই কি বিবেকানন্দের বক্তৃতা হয়েছিলো ? 
  • প্রতিভা | 2401:4900:1c65:4660:6dc0:61d6:e666:***:*** | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৪৬542521
  • হে মহাজীবন !  সত্যিকারের ভাগ্যপীড়িত, কিন্তু ভাগ্যের ওপর বিজয়প্রাপ্ত মানুষ এক! 
     
    নিকোলা টেসলার এই ছবিটাই আমাদের পাঠ্য বইয়ে ছিল। তখন কি আর এত কথা জানতাম! 
  • হীরেন সিংহরায় | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৪৭542522
  • সমরেশ , দ , উত্তম , অমিতাভ , দেবাঞ্জন 
     
    সকলকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।  ইকনমিকসের মত ধোঁয়াটে বিষয় পড়ে রবং তার চেয়ে কম বুঝে আবিষ্কারক নিকোলা টেসলাকে নিয়ে লিখতে যাওয়াটা অসম্ভব দুর্বুদ্ধির ব্যাপার ! তাই মানুষ টেসলাকে ধরবার চেষ্টা করেছি কিছুটা।  আমার ছোট মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ( এ লেভেল ) বিজ্ঞান পাঠ করে টেসলার গল্প করেছে , মোহিত হয়ে তখনই কিছু পড়তে আরম্ভ করি । ঘটনাচক্রে নিউ ইয়র্কের ব্র্যায়ানট পার্কে যাই এবং জাগ্রেব ও বেলগ্রেড ।  প্রাগে গিয়ে মনে হয়েছিল আচ্ছা এখানেই তো কাফকা ও টেসলা দুজনে ক্লাসে বসেছেন ! 
     
    দেবাঞ্জনের প্রশ্নের উত্তরে জানাই, ১৮৯৩ সালের  যে শিকাগো ওয়ার্ল্ড ফেয়ারকে  টেসলা আলোকিত করেছিলেন , সেখানেই স্বামী বিবেকানন্দ ধর্ম সম্মেলনে দাঁড়িয়ে  মাই আমেরিকান সিস্টারস অ্যান্ড ব্রাদারস ভাষণ দিয়েছিলেন।  দু দিন বাদে নিকোলা টেসলা স্বামীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন । দিন চলে গেল, কতো যে লেখার  আছে, কিছুই বলা হল না । 
  • Debanjan Banerjee | 2409:4060:21e:f3e9:efa2:8442:4366:***:*** | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:২০542524
  • অনেক ধন্যবাদ দাদা l লিখতে থাকুন আরো l 
  • জয় | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৪৪542529
  • হীরেনদা, কি অসাধারণ লিখেছেন! আমার অত‍্যন্ত প্রিয় চরিত্র। ধন‍্যবাদ।
    টেসলা যেন আমাদের কাছে অধিরথসূতপুত্র কর্ণের মতো, তাঁর জীবনের বানীই যেন “আমি রব নিষ্ফলের, হতাশের দলে॥” 

    আন্ডারডগ, পাগল বিজ্ঞানী যাঁর প্রতিভা অনেক সময়ই সময়ের থেকে এগিয়ে, আর সেই জন‍্যই বুঝি উপেক্ষিত; আদর্শবাদী, অ‍্যান্টি কর্পোরেট (এডিসনকে ভিলেন বানাই সেই বাইনারি আমরা-ওরা হিসেবে) আবার ট্রাজিক, নাটকীয় জীবন, কপর্দকশূন‍্য হয়ে মৃত‍্যু সবই আমাদের কাছে টেসলাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। 

    ১৯১২ সালের ফিজিক্সে নোবেল পুরস্কার পান গুস্তাফ গ‍্যালেন, লাইটহাউসের আলো সুইচ অন অফ করার সোলার ভাল্ব আবিষ্কারের জন্য। আর যাইহোক এই আবিষ্কারে নোবেল পাওয়ার মত নোবেলিটি নেই। টেসলা-এডিসনকে দেওয়া হবে; টেসলা এডিসনের সঙ্গে নেবেন না; নোবেল কমিটি টেসলা-এডিসন বিতর্কে জড়াতে চায়না ইত‍্যাদি ব‍্যাখ‍্যার জন্ম হয়। সত‍্যি মিথ‍্যে মিথ সব গুলিয়ে যায়। ১৯১৫ সালেও বোধহয় আরো একবার এদুজনকে নোবেল দেওয়া হবে, তাঁরা নেবেন না, এমন গুজব রটে। সত‍্যি হল টেসলা আর এডিসন কেউ নোবেল পাননি। সত‍্যি হল ১৯১৭ (নাকি ১৯১৬) টেসলা এডিসনের নামাঙ্কিত এডিসন মেডেল নেন অ‍্যামেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং থেকে। তবে নাকি অনেক অনুরোধ উপরোধের পরে, নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও। বহু পরে দুই ভিন্ন বছরে এডিসন ও টেসলা নোবেল নমিনেশনের জন‍্য আটত্রিশটি ভোটের মধ‍্যে একটি করে নমিনেশন পেয়েছিলেন। 

    দাদা, মাফ করবেন, পন্ডিতি ফলাচ্ছি না। মেরি কুরি ছাড়াও জানতাম পাওলিং আর ফ্রেডরিখ স‍্যাঙ্গার পেয়েছিলেন নোবেল দুবার। গুগুল বলছে জন বারডিন ও দুবার নোবেল পেয়েছেন। রেডক্রসের কথা বাদ দিন- তিনবার পেয়ে বসে আছে।

    হীরেনদা, পেটেন্ট বহুত ঘাঁটা ব‍্যাপার। এই সম্পর্কিত আইন কোর্ট কেস যেমন গোলমেলে তেমনি আকর্ষণীয়। আপনাকে অনুরোধ করছি এই নিয়ে লিখুন। মার্কোনিকে টেসলা কোর্টে নিয়ে গেছেন পেটেন্ট ইনফ্রিন্জমেন্টের জন‍্য। মার্কোনি মামলা করেছেন ইউ এস গভর্নমেন্টের বিরুদ্ধে একই কারণে। শেষ পর্যন্ত রায় গেছে মার্কোনির পক্ষে, কোর্ট তবে টেসলার অবদানও স্বীকার করে। আরেকটি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট কেসে তিনপক্ষ লড়েছিল- আমেরিকা, ইউকে গভর্নমেন্ট আর এক জার্মান কোম্পানি, ঐ লং রেণ্জ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ে। টেসলা, কোথাও পড়লাম মাসিক ১০০০ ডলার (ঠিক পড়েছি নাকি গাঁজা) নিয়ে জার্মান কোম্পানিটির পক্ষে কোর্টে সওয়াল করেছেন। 

    আমার ধারণা, হীরেনদা, টেসলা মূলত থিওরেটিক‍্যাল ছিলেন, পরের দিকে আরো কল্পনাপ্রবণ। কবি টাইপের ছিলেন (১৮৮৪তে যখন আমেরিকায় প্রবেশ করেন তখন পকেটে চার সেন্টের সঙ্গে ক’পাতা কবিতাও নাকি ছিল)। ইলেকট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং ভালো জানতেন, বোধহয় প্রায় গোটা ইউরোপ জুড়ে ইলেকট্রিক‍্যাল রিপেয়ারিং করে বেরিয়েছেন (নানা ভাষা জানতেন বলে বোধহয় কোম্পানি তাকেই সর্বত্র পাঠাত)। পরের দিকে কি ওয়ারলেস  এনার্জি, টেলিফোর্স ওয়েপনারি (আচ্ছা, আমার প্রশ্ন যিনি সবাইকে বিনি পয়সায় বিদ্যুৎ দিতে চান, তিনি এত ভয়ঙ্কর অস্ত্র বানাতে চাইতেন কেন?) রিসার্চে গিয়ে আরো থিওরিটিক‍্যাল হয়ে পড়েন? তাই কি ইনভেস্টররা মুখ ফিরিয়ে নেন। যুদ্ধ/ ইকোনমিক ডাউনটার্নও কারন হতে পারে। 

    হীরেনদা, আমার আরেকটা ব‍্যাপারে খটকা আছে। ১৮৮৪তে যখন আমেরিকা আসেন তার আগেই ইউরোপে থাকতেই(প‍্যারিসেই কি ওনার ল‍্যাব ছিল?) অল্টার্নেট কারেন্টটা ছকে ফেলেছিলেন। ১৮৮৮তে ওয়েস্টিংহাউসকে পেটেন্ট বিক্রি করে দিয়েছেন। ১৮৯০ সাল নাগাদ টেসলা কয়েল। ভুল বললে ঠিক করে দেবেন প্লীজ, রেডিও/ টেলিট্রান্সফারের পূর্বজ। এই সময় তাঁর বয়স কত চৌঁত্রিশ বা পঁয়ত্রিশ। আরপর দীর্ঘ ৫০ বছরে তেমন কোন টেসলার আবিষ্কার দেখেছে কি পৃথিবী? গল্প, ভবিষ্যতে কি হওয়া উচিত তা নিয়ে অনেক শুনেছে তবে। নিজে নাকি প্রতিবছর জন্মদিন পালন করতেন ঘটা করে, সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রায়। এই স্বপ্ন শোনানোর জন‍্য নবীন সাংবাদিকদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন, নিউজপেপার এডিটরদের জন‍্য তেমনি দুঃস্বপ্ন। 

    সারা জীবনই প্রায় হোটেলে হোটেলে কাটিয়েছেন। একে বিল মেটাতে পারতেন না। তার উপর পায়রা প্রীতি (আচ্ছা উনি শুনি জার্মোফোব ছিলেন, পায়রা পেয়ার হল কিকরে?) হোটেলের পরিচ্ছন্নতার পক্ষে অনুপযুক্ত। এক হোটেল থেকে উৎখাত হয়ে আরেক হোটেলে যেতেন। 

    হীরেনদা, মার্ক টোয়েন আর টেসলার আলাপচারিতার টাইম লাইনটা একবার দেখুন। ১৮৯০-১৮৯৩। মার্ক টোয়েন ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে অজ্ঞাতবাসে যান ১৮৯৫-১৯০০)

    এফ বি আই টেসলার কাগজপত্র যা বজেয়াপ্ত করে সেগুলো খুঁটিয়ে দেখেন MITর প্রফেসর ড: জন জি ট্রাম্প (এখানেও ট্রাম্প, ডোনাল্ডের কাকা) বলেন এ সমস্ত পাবলিকের হাতে পরলে ক্ষতির কোনও সম্ভাবনা নেই। ২০১৬তে কিছু, ২০১৮তে কিছু ডিক্লাসিফাই হয়। টেসলার নথিপত্র পরে তার ভাগ্নে সাভা কোসানোভিচ-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়, যিনি একজন যুগোস্লাভ কূটনীতিক। এগুলো বেলগ্রেডে নিকোলা টেসলা মিউজিয়ামে (১,৬০,০০০-রও বেশি মূল নথি, প্রযুক্তিগত গবেষণাপত্র এবং চিঠিপত্র) আছে বলে পড়ছি। কনস্পিরেসি থিওরি বলে আসল কাজের নথিপত্র মোটেই ছাড়া হয়নি। 

    তবে যাই হোক টেসলা স্মরনীয় হয়ে থাকবেন আধুনিক সভ্যতার অন্যতম জনক হিসেবে “He didn’t win the Nobel, but he won history.”
     
    আবারো ধন‍্যবাদ ইতিহাসের এই অসামান্য চরিত্রকে ধরার জন্য আপনার নিজস্ব বৈঠকী গদ‍্যে।
  • Tesla & USSR | 51.159.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৫৩542530
  • ইউএসএসআর সম্পর্কে নিকোলা টেসলা: "রাশিয়ানরা ভাগ্যবান - তাদের সমাজতন্ত্র এবং স্ট্যালিন আছে"
     
    বিখ্যাত সার্বিয়ান যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী নিকোলা টেসলা , যিনি একজন প্রাকৃতিক মার্কিন নাগরিক হয়েছিলেন, তাকে যথাযথভাবে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা উদ্ভাবক এবং বিজ্ঞানী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। 
    তাঁর রাজনৈতিক ধারণা সম্পর্কে জ্ঞান খুবই সীমিত , শান্তি ও বোধগম্যতার একটি পৃথিবীর আদর্শবাদী - মোটামুটি সূক্ষ্ম - কল্পনা ছাড়া। 

    সর্বোপরি, টেসলা (১৮৫৬-১৯৪৩) বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এবং উল্লেখযোগ্য ভূ-রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের সময়ে বেঁচে ছিলেন , যখন পুঁজিবাদ তার সর্বোচ্চ, সাম্রাজ্যবাদী পর্যায়ে পৌঁছেছিল । তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বেঁচে ছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মারা যান , তীব্র সাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতার ফলে তার নিজের দেশ ভেঙে পড়তে দেখেছিলেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, তিনি ১৯১৭ সালের মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব , প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পুঁজিবাদী সংকট ( মহামন্দা , ১৯২৯-১৯৩৩), ইউরোপে নাৎসিবাদের উত্থান , ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ধীরে ধীরে পতন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান দেখতে বেঁচে ছিলেন ।

    তথ্য স্বাধীনতা আইনের অধীনে, এফবিআই ২০১৬ সালে টেসলা সম্পর্কিত প্রায় ২৫০ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করে , এরপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত আরও দুটি প্রকাশ করা হয় (১)। ফেডারেল ব্যুরোর বেশিরভাগ নথিতে সার্বিয়ান-আমেরিকান বিজ্ঞানী একটি কণা-রশ্মি অস্ত্র ( "ডেথ রে" ​​নামে পরিচিত) আবিষ্কার করেছিলেন কিনা তা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে যা সম্ভবত ওয়াশিংটনের শত্রুদের , বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে পড়তে পারে । 
    এফবিআই কর্তৃক ঘোষিত নথিপত্রে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের সাথে নিকোলা টেসলার কোনও সম্পর্ক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি , কেবল তার ভাগ্নে সাভা কোসানোভিচ , যিনি টেসলার মৃত্যুর সময় (১৯৪৩) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যুগোস্লাভিয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ছিলেন। অধিকন্তু, আর্কাইভগুলি একটি স্মারকলিপি প্রকাশ করেছে যা ইঙ্গিত করে যে " নিকোলা টেসলা " নামে একজন ব্যক্তি ("c" অক্ষর দিয়ে, "k" অক্ষর দিয়ে নয়) ১৯২২ সালের ৪ জুন ম্যাসাচুসেটসের স্প্রিংফিল্ডের অরেঞ্জ হলে ফ্রেন্ডস অফ সোভিয়েত রাশিয়া সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি কি নিকোলা টেসলা আবিষ্কারক ছিলেন, নাকি একই নামের কেউ ছিলেন?

    বাস্তবতা হলো, সার্বিয়ান উদ্ভাবকের সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদের সাথে কোন আদর্শিক বা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল কিনা তার কোন উল্লেখযোগ্য প্রমাণ নেই । যাইহোক, ২০১৭ সালে রাশিয়ায় প্রকাশিত একটি বই, যার শিরোনাম ছিল " আমি অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে পারি " (Дневники. Я могу объяснить многое, Москва, ২০১৭)। এটি আমাদের সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক নির্মাণের প্রতি টেসলার ইতিবাচক মনোভাবের একটি আভাস দেয়।

    প্রাসঙ্গিক সারাংশে যাওয়ার আগে, এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বইটি, যা একটি স্মৃতিকথা, সাংবাদিক এবং টেসলার দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই, যার নাম স্টিভান জোভানোভিচ , দ্বারা সম্পাদিত হয়েছিল। জোভানোভিচ, যিনি জোসিপ টিটোর স্ত্রী জোভাঙ্কা বুদিসাভলজেভিচের মামাতো ভাই বলে অভিযোগ, দাবি করেছেন যে তিনি এফবিআইয়ের আর্কাইভগুলিতে অ্যাক্সেস পেতে সক্ষম হয়েছেন এবং মূল্যবান তথ্য উদ্ধার করেছেন।

    তা সত্ত্বেও, এটা নিশ্চিত করা যায় না যে বইটিতে অন্তর্ভুক্ত স্মৃতিকথাগুলি খাঁটি - তবুও, নিঃসন্দেহে এগুলিতে বিশেষ ঐতিহাসিক আগ্রহ রয়েছে যা আরও গবেষণাকে উদ্দীপিত করে।

    বইটি থেকে কিছু নির্বাচিত সারাংশ এখানে দেওয়া হল (2):

     
     
     
    আমি প্রায়শই আফসোস করি যে সেই সময় আমি রাশিয়ার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছিলাম (3)। তখন কোনও পার্থক্য ছিল না। ইতিমধ্যে, ইউএসএসআর-এর আবির্ভাবের সাথে সাথে, সবকিছু আমূল পরিবর্তিত হয়েছে, এটি এখন বিশ্বের অন্যান্য অংশের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। সংবাদপত্রগুলি এটি নিয়ে নোংরা কথা বলে, কিন্তু যারা সেখান থেকে আসে তারা অবিশ্বাস্য কথা বলে। আমি সোভিয়েত বিজ্ঞান ব্যবস্থা দ্বারা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলাম। তাদের বিজ্ঞানীদের বেতন এবং প্রয়োজনীয় কাজের পরিবেশ প্রদান করা হয়। তারা দৈনন্দিন দায়িত্ব থেকে মুক্ত, কেবল বিজ্ঞানের উপর মনোনিবেশ করে। তাদের কে অর্থায়ন করবে তা নিয়ে ভাবতে হয় না। যখন রাষ্ট্র, একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, আপনার পিছনে থাকে এবং কোনও ধনী ব্যক্তি না থাকে যে যে কোনও মুহূর্তে তার মন পরিবর্তন করতে পারে - এটি নির্ভরযোগ্য। আমি প্রায়শই ভাবি যে আমি কীভাবে ইউএসএসআরে যাব, যদি আমি 15-20 বছরের ছোট হতাম। আমার মস্কো যাওয়ার সুযোগ ছিল , আমার এখনও আছে, কিন্তু এত বড় পদক্ষেপের জন্য আমার বয়স অনেক বেশি। উপরন্তু, আমি যে কাজটি শুরু করেছি তা ছেড়ে দিতে পারি না, যা আমার সবচেয়ে বড় আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি হতে পারে..."।

    "আমি রাশিয়ার পরিস্থিতি সাবধানে পর্যবেক্ষণ করছি। আমি প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নেওয়ার চেষ্টা করি, সংবাদপত্র থেকে নয় যেগুলো অবিরাম প্রকাশিত হয়। আমি রাশিয়ান বিপ্লবকে সমর্থন করি কারণ এটি পৃথিবীর এক-ষষ্ঠাংশের উপর সততার নীতি ঘোষণা করেছিল । সোভিয়েত ইউনিয়ন অবিশ্বাস্য পরীক্ষার মুখোমুখি হয়, কিন্তু দেশটি তাদের পরাস্ত করতে প্রস্তুত। রাশিয়ানরা ভাগ্যবান - তাদের সমাজতন্ত্র এবং স্ট্যালিন আছে। একজন জ্ঞানী নেতার সাথে সুখী মানুষ। আমি রাশিয়ানদের ঈর্ষা করি এবং আমার স্বদেশীদের জন্য দুঃখিত যারা তিনজন এলোমেলো লোক দ্বারা শাসিত..."

    "যদি আমি অর্ধ শতাব্দী পিছনে যেতে পারতাম, আমি এক সেকেন্ডের জন্যও ভাবতাম না, আমি মস্কো যেতাম এবং ব্যাচেলর (৪) এবং এডিসনকে নরকে পাঠাতাম। আমার ছোট লাইব্রেরিতে, আমি অক্টোবর বিপ্লবের উপর লেখাগুলির একটি সংগ্রহ একটি বিশিষ্ট স্থানে রাখি যা স্কভিরস্কি (৫) আমাকে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন। আমি প্রায়শই সংগ্রহে ফিরে আসি এবং সেই দেশ সম্পর্কে সহানুভূতির সাথে চিন্তা করি যেখানে আমি যেতে পারি না। বার্ধক্যের অনেক সুবিধা আছে, তবে দুটি অসুবিধাও রয়েছে - দুর্বল স্বাস্থ্য এবং আত্মার সাথে চিন্তাভাবনা: "আমি এতে কখনই সফল হব না"। "যদি আমার সন্তান বা নাতি-নাতনি থাকত, তাহলে আমি সম্ভবত তাদের সুখের জন্য ইউএসএসআর-এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতাম। "

    "সোভিয়েত জনগণের উপকারে আসলে আমার কোনও আফসোস নেই । অন্যদিকে, জার্মানদের কাছ থেকে আসা সহযোগিতার সমস্ত প্রস্তাব আমি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি । তাদের দৃঢ়তা দেখে আমি অবাক হয়েছি, যা চরিত্রের শক্তি থেকে নয় বরং একগুঁয়েমি থেকে উদ্ভূত। আমি খুব ভালো করেই জানি আধুনিক জার্মানি কী প্রতিনিধিত্ব করে। আলবার্ট আইনস্টাইন এবং তার অভিবাসনের উদ্দেশ্য শোনা যথেষ্ট। আমরা বিজ্ঞানের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করতে পারি, কিন্তু রাজনীতিতে নয়। ইউএসএসআরের বিরুদ্ধে জার্মান-জাপানি চুক্তি উদ্বেগের কারণ। তবে, আমি নিশ্চিত যে এই বিশ্বের কোনও শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাজিত করতে পারবে না। বিপ্লবের পরপরই যদি তারা মস্কোর নতুন শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করতে না পারে, তবে তারা এখনও পারবে না।"

    "ভেনমের সাথে একটি প্রকল্পে কাজ করার সময়, আমি খুব ভালো করেই জানি যে প্রাপ্ত ফলাফলগুলি কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলি মূলত সামরিক শিল্প দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল। আমি কখনই এটি পছন্দ করিনি কারণ আমি স্বভাবতই একজন শান্তিপ্রিয় ব্যক্তি এবং যেকোনো যুদ্ধের বিরোধী। বহু বছর আগে, আমাকে অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগদান থেকে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমি নীতিগতভাবে এটি করেছি, ভয়ের কারণে নয়। হত্যার চিন্তাও আমার কাছে ঘৃণ্য। শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতি, যেমন মাতৃভূমির প্রতিরক্ষা, আমাকে বন্দুক তুলে অন্যদের গুলি করতে বাধ্য করতে পারে। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিকে রক্ষা করা, যা বছরের পর বছর ধরে আমাদের উপর অত্যাচার করেছে, আমার মনে হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য কাজ করতে আমি লজ্জিত নই। শীঘ্রই বা পরে আমেরিকান সামরিক বাহিনীকে হিটলারের মুখোমুখি হতে হবে কারণ এই ধরনের জারজকে কেবল একটি ঐক্যবদ্ধ বিশ্বের যৌথ পদক্ষেপের মাধ্যমেই পরাজিত করা যেতে পারে। আমি নিশ্চিত যে শীঘ্রই একটি নতুন বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে এবং এটি জার্মানরা শুরু করবে, ঠিক যেমন গতবার। দুর্ভাগ্যজনক বিংশ শতাব্দী! আমরা তার উপর অনেক আশা রেখেছি, এবং তিনি মানবতার জন্য অনেক দুর্দশা এনেছেন এবং চালিয়ে যাবেন।" এই শতাব্দীর একমাত্র ইতিবাচক দিক হলো রুশ বিপ্লব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সৃষ্টি । ১৯১৮ সালের ভবিষ্যদ্বাণী আমার খুব ভালো করে মনে আছে। শুরুতে সবাই বলেছিল যে বলশেভিকরা কয়েক মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকবে না। পরে, মাসগুলি বছরে পরিণত হয়। বিশ বছর কেটে গেছে, এবং বলশেভিকরা এখনও ক্ষমতায় আছে! বিশ বছর! শুরুতে, পুরো বিশ্ব বিপ্লবীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, এখন তারা তাদের চিনতে পারে এবং তাদের সাথে সহযোগিতা করে। স্ট্যালিন যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতেন তবে আমি খুব খুশি হতাম। তাকে দেখার আমার খুব ইচ্ছা, কিন্তু আমার স্বাস্থ্য আমাকে এত দীর্ঘ ভ্রমণ করতে দেয় না।"

    "হয়তো জার্মানরা আমাকে বুঝতে পারবে, কিন্তু আমি কখনোই তাদের সাথে সহযোগিতা করব না। আমি সবসময় বার্লিনের প্রস্তাবগুলো না ভেবেই প্রত্যাখ্যান করতাম। অস্ট্রিয়ান এবং জার্মানদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, তারা একইভাবে অন্যান্য জনগণকে নির্যাতন করতে উপভোগ করে। জার্মান বিজ্ঞানী এবং বুদ্ধিজীবীরা যে পাগল হিটলারের ইচ্ছার কাছে সম্পূর্ণরূপে অধীনস্থ, তা জার্মানদের সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। আমি তাদের বুঝতে পারি, হিটলারের প্রচারিত বিশ্ব শাসনের ধারণায় তারা মুগ্ধ হয়েছিল। তাদের সাম্রাজ্যে, অস্ট্রিয়ানরা একে অপরের সাথে মানুষের মতো আচরণ করত, অন্যান্য জনগণ কেবল তাদের পায়ের তলার ধুলো ছিল। আমি যখন সেখানে থাকতাম, তখন তারা আমাকে প্রতিদিন কোন না কোনভাবে মনে করিয়ে দিত যে আমি একজন সার্ব।"

    "আমি বিশ বছর ধরে নিয়মিতভাবে সোভিয়েত বিজ্ঞানীদের কাছে আমার ধারণাগুলি পাঠাচ্ছি। তবে, ধন্যবাদ পত্র ছাড়া আমি কখনও কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তর পাইনি। এটা সম্ভব যে ইউএসএসআর নেতৃত্ব অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ত, তাই আমার নথিপত্রগুলিতে উৎসর্গ করার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। লেনিনের বিদ্যুতায়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে আমার সন্দেহের কারণে তারা ক্ষুব্ধ হতে পারে। সেই সময়ে, বিশ্বযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের পরে, রাশিয়ার মতো একটি বিধ্বস্ত দেশ মাত্র 10 বছরে 30 টি শক্তিশালী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে তা সত্যিই অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। পরে আমি স্বীকার করেছিলাম যে আমি ভুল করেছিলাম এবং স্কভিরস্কিকে ব্যক্তিগতভাবে আমার ক্ষমা প্রার্থনার চিঠিটি স্ট্যালিনের কাছে পৌঁছে দিতে বলেছিলাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল এবং বলেছিলেন, "পরিকল্পনাটি এতটাই দুর্দান্ত ছিল যে এমনকি হার্বার্ট ওয়েলসও এতে বিশ্বাস করেননি।" আমি লজ্জিত যে আমি তখন লেনিনকে বিশ্বাস করিনি। যখনই কেউ আমার ধারণাগুলিতে বিশ্বাস করে না, তখনই আমি লেনিনের বিদ্যুতায়ন পরিকল্পনার কথা মনে করি।"

    "মস্কোর সম্মেলনে, চার্চিল ইউরোপে পশ্চিম ফ্রন্টের উদ্বোধন পরবর্তী বছর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। একটি সাধারণ ব্রিটিশ অবস্থান, একটি উপযুক্ত মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করা এবং তারপরে "কেকের সবচেয়ে বড় অংশ" দাবি করা। এবার চার্চিলের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না। ইউএসএসআর অনেক আগেই বিশ্বের কাছে তার মহত্ত্ব প্রমাণ করেছে এবং আবারও তা প্রমাণ করবে। হ্যারিম্যান সম্মেলনে পটভূমিতে ছিলেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনীতিকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে। আমি প্রায়শই ভাবি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার অক্ষ শক্তিগুলিকে ধ্বংস করতে বা ইউএসএসআরকে যতটা সম্ভব দুর্বল করতে আগ্রহী কিনা। অভিশাপ ভণ্ড কূটনীতি। এটা কি সবার কাছে স্পষ্ট নয় - হিটলার এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব যত তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেবে, তত তাড়াতাড়ি তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। আমার স্বদেশীরা অবিশ্বাস্যরকম কঠিন পরিস্থিতিতে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এবং চার্চিল রাশিয়ানদের সাহায্য আগামী বছর পর্যন্ত স্থগিত রাখছেন। রাজনীতিবিদদের জন্য মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে অলসভাবে বসে থাকা সহজ। তারা জানেন না যে প্রতি মিনিটে যুদ্ধে কত মানুষ মারা যায়।"

    “এখন আমি খুশি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমার নতুন অস্ত্র প্রকল্প উপেক্ষা করেছে। এটি সম্ভবত হিটলারের বিরুদ্ধে নয়, বরং সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হত। হিটলার কেবল বিশ্ব আধিপত্যের প্রতিযোগী । ইউএসএসআর আরও অনেক কিছু। এটি অন্য একটি পৃথিবী, এমন একটি দেশ যা তার অস্তিত্ব দিয়ে মানবতার কাছে প্রমাণ করে যে সম্পূর্ণ নতুন নীতির উপর বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব। তারা এখানে কমিউনিস্টদের সাথে যেভাবে আচরণ করে, তা থেকে স্পষ্ট যে তারা তাদের কতটা ভয় পায়। সোভিয়েত নাগরিকদের সাথে যোগাযোগের কারণে, আমি ইতিমধ্যেই এফবিআইয়ের সাথে তিনটি কথোপকথন করেছি। তারা আমার সাথে কিছুই করতে পারে না, কিন্তু তারা এখনও একটি অপ্রীতিকর ছাপ ফেলে। আমি, এমন একটি দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক যে নিজেকে স্বাধীনতার শীর্ষস্থান হিসাবে উপস্থাপন করে, আমি অপরিচিতদের সাথে এমন বিষয় নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হই যার কোনও ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না । তারা আমার সাথে গুপ্তচরের মতো কথা বলেছিল। 
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন সার্ব কী আশা করতে পারে? কেবল একটি ভুল বোঝাবুঝি। এমন একটি পৃথিবীতে বসবাস করা কঠিন যেখানে সম্মান এবং মর্যাদা শব্দটি ডলার শব্দটি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। আমি আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছি, কিন্তু আমি "বাড়িতে" বোধ করিনি। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহত্ত্বকে অস্বীকার বা হ্রাস করছি না, আমি কেবল বলছি যে এটি এমন একটি দেশ নয় যেখানে আমি থাকতে চাই। এখন আমার জীবন পরিবর্তন করার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে যা শেষ হয়ে আসছে। আমি কেবল সত্যটি বলছি এবং দুঃখের সাথে মনে আছে ব্যাচেলরের কথাগুলি যা আমাকে আমেরিকা যেতে বাধ্য করেছিল। আমি আমার জীবনে দুটি অপূরণীয় ভুল করেছি: আমি একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং রাশিয়ার পরিবর্তে আমেরিকা গিয়েছিলাম। আমি কিছুই পরিবর্তন করতে পারি না, তবে ভুল স্বীকার করি, এটি কখনই খুব বেশি দেরি হয় না।"
     
    এন. মোটাসের লেখা নোট

    (1) http://vault.fbi.gov/nikola-tesla
    (2) নিকোলা টেসলা। ডায়েরি। লা মোগু ওবিয়াসনিট মনোগো, জাউজা, মস্কো ২০১৮।
    (৩) টেসলা ১৮৮৪ সালের জুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন
    (৪) চার্লস ডব্লিউ. ব্যাচেলর, উদ্ভাবক এবং টমাস এডিসনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
    (5) বরিস স্কভিরস্কি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত, 1922-1932।
  • Kishore Ghosal | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৪৫542533
  • অপূর্ব আলোকপাত, হীরেনদা। অনেক কিছু জানলাম।  
  • হীরেন সিংহরায় | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪১542535
  • জয় 
     
    জয়

    ভুলগুলি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। জেমস কোলার  তাঁর বইতে ১৯১২ এডিসন / টেসলার নোবেল লড়াইয়ের কথা লিখেছেন যেটি আমার আর একবার দেখে নেওয়া উচিত ছিল;  কমিটি দুজনকে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু দু জনের বিবাদের ফলে কাউকেই দিলেন না ! মারকোনি আর এডিসন প্রসঙ্গেই আমার দ্বিতীয় ভ্রান্তি  উৎপন্ন , বলতে চেয়েছিলাম মারি কুরির আগেই তিনি  দু বার নোবেল প্রাইজ পেতে পারতেন কিন্তু সেটাও ভুল হতো কারণ কুরি দ্বিতীয় বার পান ১৯১১।   তাঁর পরে অবশ্যই দ্বিমুকুট পেয়েছেন পাউলিং বারদিন জাঙ্গার শারপ্লেস,  রেড ক্রসকে একাসনে বসানো যায় না !   

    মারকোনি / টেসলার আইনি বিবাদ কোর্ট কাছারি একটা বিশাল লম্বা কাহিনি ( লোমাসের ম্যান হু ইনভেনটেড টুয়েনটিইয়েথ সেঞ্চুরি ) , বিশদে যেতে চাই নি।

    ইউরোপে তাঁর কোন ল্যাব ছিল বলে এমন  তথ্য পাই নি , ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি  কাজ করেছেন, অত্যন্ত কম সময় , হাঙ্গেরি , প্রাশিয়ান আলসাস এবং ফ্রান্সে। ২৮ বছরে আমেরিকা যাত্রা ।  

    টাইম লাইন ঠিকই বলেছ,  , ১৮৮৮ ওয়েসটিংহাউস, তারপরে টেসলা কয়েল; এটা অবশ্য বলা ঠিক হবে না শেষের পঞ্চাশ বছর কোন কাজ দিয়ে যান নি । যেটা নিয়ে লেখা উচিত ছিল ; ১৯০১ সালে  লঙ আইল্যান্ডে ওয়ারডেনক্লিফ টাওয়ার দুনিয়ার ইতিহাসে প্রথম ওয়ারলেস কমুনিকেশান প্রচেষ্টা ; ১৯১৩ তে বাতিল।

    একটা কথা আমার অনেক বার মনে হয়েছে – ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে যারাই নোবেল পেয়েছেন, তাদের মূল কাজটা চল্লিশের আগেই সারা হয়ে গেছে ! পেতে দেরি হয়েছে অনেকের , যেমন মাক্স বর্ণ – স্বয়ং আইনস্টাইন তাঁর সুপারিশ করলেন ১৯২২ সালে, পেলেন ১৯৫২ সালে!  এ বিষয়ে তিনি একা নন !

    টেসলাকে জার্মানোফব ঠিক বলা যায় না , তিনি জার্মান মাতৃভাষার মতো বলতেন কিন্তু সেটা  অস্ট্রিয়ান জার্মান!

    আমার লেখাতে বলেছি, দু হাজার শব্দে নিকোলা টেসলাকে ধরা যায় না , কিন্তু আবেগ আমাকে আচ্ছন্ন করে।  মেয়ের সঙ্গে ব্রায়ানট পার্কে পায়রার ভিড়ে যেন তাঁকে দেখেছি।  
  • Sara Man | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১২:০৬542538
  • অসাধারণ লেখনী। 
  • জয় | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫৯542539
  • হীরেনদা 
    আপনার লেখার কোন বিকল্প নেই। বার বার পড়ি। 
    যেমন অর্জুনের তুলনায় কর্ণকে, তেমনই এডিসনের তুলনায় টেসলার ট্রাজেডি আকর্ষণ করে। 
    আচ্ছা আপনি এমন কোন ব‍্যখ‍্যা পেয়েছেন- চার্লস ব‍্যাচেলর (আদতে ইংরেজ) তো এডিসনের ডান হাত ছিলেন। বছর তিনেকের জন‍্য এডিসন তাঁকে ইউরোপের মাথা করে পাঠান। তিন বছর বাদে যখন ব‍্যাচেলর আমেরিকা ফেরত যান,তখন তিনি সঙ্গে টেসলাকে আমেরিকায় আনার বন্দোবস্ত করেন। 
    টেসলা এডিসন মেরকেটে বার দুই মুখোমুখি হয়েছিলেন। সঙ্গত কারণেই হবে- টেসলা  এডিসন আর ব‍্যাচেলরকে সারাজীবন শত্রু ঠাউরেছেন।
     
    আমি কোথাও পেলাম টেসলার <Germophobia> কথা! কতটা সত‍্যি কতটা গাঁজা কে জানে। আপনার লেখায় পাই কনস্ক্রিপশন এড়াতে একটা সময় জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরেছেন। জীবনে অনেকবার পেটের তাগিদে মিনিয়ল কাজ (আপনার লেখায় মাটি খোঁড়ার কাজ)। তাঁর <germs>/ধুলোবালি নিয়ে খুঁতখুঁতানি থাকার ব‍্যাপারে আমি সন্দিহান। এটা আমার ভুল- অমন লেখা উচিত হয় নি।
     
    আরেকটা ব‍‍্যাপার খেয়াল করেছি টেসলা সাতাশি বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর পরিনত বয়সের ছবি এত দূর্লভ কেন? 
     
    নাকি তাঁর জীবদ্দশায়তেই লোকে তাকে ভুলে গেছিল?(এমনটা আগেও হয়েছেঃগ্রাতসের শেষ বছরে নাকি জুয়া (এবং নারী)য় আসক্তি তাঁর ডিগ্রিতে ফেল করার কারণ/ তারপর তিনি হারিয়ে যান বেশ কিছুদিন / সবাই ভেবেছিল নদীতে ডুবে মারা গেছেন/ কোনো এক বন্ধু আচমকা দেখে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাবার কাছে ফেরত আনেন; কিংবা কনস্ক্রিপশনের ভয়ে আদাড়ে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো)। 
    বোধহয় এই অসাধারণ মেধাবী লাজুক মানুষটি হারিয়ে যেতেই চাইতেন বারবার। আমরাই ওঁর উপযুক্ত ছিলাম না। এখনও হয়েছি কি। এখনও ইন্টারভিউতে বলিয়ে কউয়েরাই বেশী সফল। যো দিখতা ওহ বিকতা। কে কত জোরে নিজের ঢাক পেটাতে পারে।
     
    আসল উন্নতি তখনই হবে যখন টেসলার মতো মুখচোরা অকোয়ার্ড মানুষদের আমরা পেছনে ঠেলে দেব না।
  • হীরেন সিংহরায় | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৫৯542541
  • জয়

    ব্যাচেলর প্রথম লোক যিনি টেসলাকে চিনেছিলেন এবং ঠকিয়েও ছিলেন ! সেই অপরাধবোধ থেকেই তাঁর সেই চিঠির দুটি লাইন যা দিয়ে আমার লেখা শুরু করেছি । এডিসনের মেনলো পার্ক অফিসে টেসলা এক বছর কাজ করেন ( ১৮৮৪-১৮৮৫ ) ।  ডি সি ডাইনামো নিয়ে কাজ করে বোনাস আশা করেছিলেন ,এডিসন কোথার খেলাপ করলেন তাঁদের দেখা সাক্ষাৎ অনেকবার হয়েছিল ধরে নেওয়া যেতে পারে ।

    তুমি কিছু ভুল বলো নি টেসলা অসম্ভব ছুঁচিবাইগ্রস্ত মানুষ ছিলেন , বারে বারে হাত ধুতেন -  নিউ ইওরকার হোটেলে ডিনারের সময় ন্যাপকিন দোয়ে প্রতিটি কাঁটা ছুরি চামচ প্লেট মুছে নিয়ে খাওয়া শুরু করতেন !  একটা অসাধারণ বর্ণনা পেয়েছি

    এডিসনের  অস্বাস্থ্যকর স্বভাবের তীব্র নিন্দা করেছেন

    Edison had no hobby, cared for no sport or amusement of any kind and lived in utter disregard of the most elementary rules of hygiene. There can be no doubt that, if he had not married later a woman of exceptional intelligence, who made it the one object of her life to preserve him, he would have died many years ago from consequences of sheer neglect.

    যে বছর দুজনের দেখা হয় সেই বছরেই এডিসনের প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন ।(এডিসন কিন্তু একটা জুতসই সাবজেক্ট! লিখলে হয়)।
     

    কিন্তু সেই  টেসলা জীবন ধারণের জন্য  নিউ ইয়র্কের রাস্তায় মাটি খুঁড়েছেন ।

    তোমার মন্তব্য সঠিক, গ্রাৎসে পড়ার সময়ে টেসলা জুয়ো খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন , বাবা বেঁচে, অর্থোডক্স গির্জায় ( ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ায় তার তুল্য পুরুত বিরল) জজমানি করে নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছেন! ডিগ্রি না পাওয়ার সেটা  কারণ হতে পারে , আমার সূত্র তাই বলে।  প্রাগের ব্যাপারটা দৈব দুর্বিপাক। 

    হক কথা , টেসলার বেশি বয়েসের  ছবি জাগ্রেব বা বেলগ্রেডেও  দেখি নি ! এটা ভাবিনি তো !  
  • জয় | 82.39.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:২৬542542
  • লিখুন দাদা! 
    এডিসন, ফোর্ড, গুডইয়ার তিন ইয়ার দোস্ত একসঙ্গে মাছ ধরছেন। ছবিটা ভাবুন। তাঁরা ব্যক্তিগত আলাপচারিতা করছেন (সংস্কৃতে ভাটাচ্ছেন) আর পৃথিবীর ভবিষ্যৎটা বদলে যাচ্ছে দুমদাম করে!!!
  • এডিসন | 173.62.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৩৯542561
  • এডিসন অবশ্যই জুতসই সাবজেক্ট - বারবার টাকা বানাচ্ছেন টাকা হারাচ্ছেন, বিজ্ঞানী গিয়ে হলিউডে টাকা ঢালছেন - প্রকৃত অঁতপ্রেনারদের মত। এদিকে টেসলার মত ন্যাচারাল ট্যালেন্টও বলা যাবে না মনে হয়! 
    খুবই নাটকীয় জীবন! 
     
  • প্রশ্ন | 173.62.***.*** | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৪৮542562
  • হীরেনবাবু ফ্রেডরিক Sanger কে কি "জাঙ্গার" বললেন? 
    বায়োকেমিষ্ট্রি - মলিকিউলার বায়োলজিতে - যুগান্তলারী ​​​​​​​কাজ ​​​​​​​করা (DNA RNA molecule নিয়ে ​​​​​​​কাজ ​​​​​​​করা pioneer দের ​​​​​​​একজন) এই ​​​​​​​ব্রিটিশ মানুষটির ​​​​​​​নামের ​​​​​​​শেষ ​​​​​​​অংশকে ​​​​​​​কি ​​​​​ওভাবে ​​​​​​​ডাকাই সঙ্গত? ​​​​​​​
     
  • হীরেন সিংহরায় | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ২০:০৮542563
  • প্রশ্ন 
     
    সাঙ্গার বা সাংগরকে জাঙগার ন ম দেওয়াটা সমীচিন হয় নি। এটা আমার স্লিপ অফ দি ফিংগার অথবা সব দোষ অভ্রর। আমি  তাঁর আত্মার এবং আপনার সদাশয়তার কাছে মার্জনা প্রার্থনা করি।
  • জয় | ২২ এপ্রিল ২০২৫ ২১:২৪542568
  • এহে হে জ্ঞানের বহর দেখাতে গিয়ে তুমুল ছড়িয়েছি- বলতে চেয়েছিলাম "এডিসন, হেনরি ফোর্ড আর হার্ভে ফায়ারস্টোন" (গুডইয়ার নন)এর কথা!
    ছো ছোঃ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন