এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • অন্য দেশের পাখি - ১৮

    শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১৪৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছবি: রমিত
    ১৮


    যখন চোখ মেললো মুড়কি, মাথাটা ধরে আছে। আশপাশে কয়েকটা অচেনা মুখ। মাথাটা অনেকটা ঝুঁকিয়ে যে দেখছে ওকে, তার চোখেমুখে উদ্বেগ স্পষ্ট। অনভ্যস্ত ইংরিজিতে লোকটা প্রশ্ন করল ওকে, গূড? গূড ফীলিং?

    মুড়কি বোঝবার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে। হাসপাতাল তো নয়, কোন বাড়িই হবে। তাহলে ফল্গুদি আর উল্কিদি কোথায়? আর এই লোকগুলোই বা কারা? তারপর মনে পড়তে শুরু করে তার। মিস্টার শ্যাভেজের সঙ্গে কক-অব-দ্য-রক দেখে ফিরছিল তারা নৌকোতে। পারের প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে যখন তখন জোরে একটা শব্দ হলো, তারপর কেউ একটা চেপে ধরলো ওর গলা। তারপর আর মনে নেই কিছু। কারা এই লোকগুলো? কী করে এই লোকগুলোর কাছে এসে পৌঁছোল সে?

    যে লোকটা খোঁজ নিচ্ছিল ও ভালো আছে কিনা, সে একটা তরল কিছু খেতে দিল ওকে। একটু ঝাঁঝ, একটু বুনো বুনো গন্ধ, বোধ হয় কোন শেকড়বাকড়ের রস হবে। কিন্তু খাওয়ার পর এক মুহূর্তেই যেন কমে গেল মাথা ধরাটা। মুড়কি বললো, ইয়েস, গূড। বাট হোয়ার অ্যাম আই?

    হোম, হোম। আওয়ার হোম ইয়োর হোম।

    হোয়ার আর মাই সিস্টার্স?

    ইয়োর সিস্টার্স নো আইডিয়া। দিস ইজ আইল্যাণ্ড, তাকিলে। ইউ সেফ হিয়ার। উই ফ্রেণ্ডস।

    উই ফ্রেণ্ডস বলেই লোকটা গলায় হাত দেয় মুড়কির, ওর গলায় পরা বাঁদরের দাঁতের মালাটা, যেটা সেই শিম্পাটিয়া গ্রামে আশানিঙ্কা-মাৎসিগোঙ্কাদের মেয়েরা পরিয়ে দিয়েছিল ফল্গু-উল্কি-মুড়কিকে যখন ওরা গিয়েছিল এসপিণ্ডোলোর সঙ্গে তাদের গ্রামে, সেটা আঙুল দিয়ে ছোঁয় সে। মুড়কি বোঝে ওকে অভয় দিচ্ছে লোকটা। এসপিণ্ডোলো বলেছিলেন ওই মালা পরিয়ে ওখানকার মেয়েরা ওদের আশানিঙ্কা-মাৎসিগোঙ্কা গোষ্ঠীর সভ্য করে নিয়েছিল সেই দিন থেকে। সেই মালাটা যে লক্ষ্য করেছে লোকটা, সেটা সে বোঝাবার চেষ্টা করছে। ফ্রেণ্ড, ফ্রেণ্ড – আরো দুবার মুখেও বলল সে।

    মুড়কি বুঝল, এখনই কোন বিপদের আশঙ্কা নেই তার। কিন্তু তার মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। কী করে সে এই লোকগুলোর মধ্যে এসে পৌঁছোল সেটা বুঝতে হবে, জানতে হবে ফল্গুদি-উল্কিদিই বা কোথায়।

    যে ঘরটায় ও শুয়ে আছে সেখানে প্রায় ওরই বয়েসী একটা মেয়ে ঢোকে হঠাৎ। এগিয়ে এসে মুড়কির একটা হাত ধরে মেয়েটা, অন্য যারা মুড়কির আশপাশে দাঁড়িয়েছিল – এমনকি যে ফ্রেণ্ড বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিল মুড়কিকে, সে-ও – ত্রস্ত সরে যায় মুড়কির কাছ থেকে। মেয়েটা আস্তে আস্তে ধরে ধরে ওঠায় মুড়কিকে, তারপর ওর হাত ধরে যে বিছানাটায় ও শুয়েছিল তার প্রায় উল্টোদিকে একটা দরজা খুলে ঢুকিয়ে দেয় ওকে, নিজেও ঢোকে ওর সঙ্গে। যে ঘরটায় মুড়কি শুয়েছিল সেই ঘরের দেয়াল-মেঝের মতোই এই ঘরের দেয়াল-মেঝেও, কিন্তু অবাক হয়ে ও দেখে, ঘরটায় একটা কমোড, হাত ধোয়ার বেসিন একটা আর এমনকি একটা শাওয়ারও। শাওয়ারের পাশে একটা ছোট সোপ-স্ট্যাণ্ড, সেখানে সাবান, পাশের ব্র্যাকেট-এ তোয়ালে আর খানিকটা চাদরের মতো দেখতে একটা ভাঁজ-করা কাপড়।

    নিজে পরে আছে যে পোশাকটা সেটাকে দেখিয়ে মেয়েটা ভাঁজ-করা কাপড়টা তুলে নেয় হাতে। নিজের গায়ে জড়িয়ে মুড়কিকে বুঝিয়ে দেয় কী ভাবে কাপড়টা পরতে হবে। তারপর একটু হেসে, ঘরটার দরজা ভেতর থেকে কী ভাবে বন্ধ করতে হবে সেটা বুঝিয়ে, ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে।

    বাথরূমে মুড়কি এখন একা। এতক্ষণ ধরে যারা ওর আশপাশে ছিল, তারা যে কোন একটা জনজাতির লোক তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি মুড়কির। এমনকী এই মেয়েটাও। কিন্তু এদের বাড়ির বাথরূমে এই আধুনিক ব্যবস্থা দেখে সে অবাক। মুড়কি কিছুতেই বুঝতে পারে না কীভাবে সে এখানে এসে পৌঁছোল। জঙ্গল থেকে পাখি দেখে নৌকোয় ফিরতে ফিরতে হঠাৎ একটা জোর শব্দ, এবং তার গলায় একটা হাতের চাপ – এইটুকুই মনে আছে তার। তাহলে কি কোন দুর্ঘটনা ঘটেছিল? ওকে বাঁচিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে এখানকার মানুষ? সে ক্ষেত্রে উল্কিদি আর ফল্গুদির কী হলো? নাকি ওকে অপহরণ করা হয়েছে? অপহরণ? কোথা থেকে? কোথায় সে ছিল অপহরণের মুহূর্তে? তাকে যদি অপহরণই করা হয়ে থাকে, তাহলে ফল্গুদি আর উল্কিদি এখন কোথায়? কী করছে তারা ওর উদ্ধারের জন্যে? নাকি ওরাও অপহৃত?

    বাথরূম থেকে বেরিয়ে মুড়কি দেখে, যে মেয়েটা ওকে সব দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল সে চুপ করে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজে নিজে মুড়কি পরেছে ওদের পোশাক, মেয়েটা ভারী খুশি। মুড়কির হাত ধরে আবার বিছানায় বসায় মেয়েটা। তারপর বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। যখন ফেরে, ওর হাতে পেতল জাতীয় কোন ধাতুর থালা একটা, তাতে নানারকমের খাবার। আলু সেদ্ধ, আস্ত দুটো মাছ – খানিকটা মাগুর জাতীয় – বরবটির মতো দেখতে কিছু একটা গোল থালাটার নানা দিকে রাখা, আর মাঝখানে যেটা সেটা দেখে ওর মনে হল সেদ্ধ করা গম। মেয়েটা নিজে খেতে শুরু করল, ইঙ্গিতে মুড়কিকে বোঝাল ওকেও খেতে হবে সেই একই থালা থেকে। মুড়কির অবিশ্যি তাতে কোন অসুবিধে নেই, স্কুলে টিফিন-ব্রেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে একসঙ্গে খাবার অভ্যেস ওর আছেই, আর এই মেয়েটাকে বন্ধু ভাবতে মন্দ লাগছে না।

    খাওয়া হয়ে গেলে মেয়েটার সঙ্গে বাইরে বেরোয় ও, আর বেরিয়েই মন ভালো হয়ে যায়। হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে, ঠিক মানুষের তৈরি পাকা রাস্তার মতো কোন রাস্তা নেই, কিন্তু সবাই হেঁটে হেঁটে পায়ে-চলা রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে অনেক। রাস্তায় কিন্তু গাড়ি-ঘোড়া, বা এমনকি সাইকেলও নেই একটাও। দূরে দূরে ছোট ছোট বাড়ি, প্রত্যেকটাই খানিকটা খড়ের মতো কিছু দিয়ে ছাওয়া। ওদের দেখতে পেয়ে নানা বয়েসের ছেলেমেয়েরা দৌড়োতে দৌড়োতে আসে, সবায়েরই ইচ্ছে মুড়কির সঙ্গে বন্ধুত্ব করে একটু। মুড়কির তাতে আপত্তি নেই মোটেও, কিন্তু ওদের মধ্যে একজনও এমনকি ভাঙা ভাঙা ইংরিজিও বলতে পারে না। সবাই মিলে বেশ খানিকটা হাঁটার পর একটা ফাঁকা জায়গায় ওরা বসে। যেখানে বসেছে সেখান থেকে যে দিকেই তাকায় মুড়কি দেখতে পায় জলরাশি। এটা কি সমুদ্রের মধ্যে কোন দ্বীপ? নীল জল, ছোট ছোট ঢেউ, কিন্তু একটাও নৌকো বা স্টীমার গোছের কিছু দেখতে পায় না। ছেলেমেয়েগুলো এর মধ্যে জমিতে দাগ টেনে যে খেলা খেলতে শুরু করেছে তা মুড়কির অতি-পরিচিত এক্কাদোক্কা বা হপ্‌ স্কচ। এই খেলা কি সারা পৃথিবীতে সব বাচ্চাই খেলে?

    এই খেলাধুলো বন্ধুত্ব চলতে চলতেই হঠাৎ অদ্ভুত এক কাণ্ড। একজন মাঝবয়েসী লোক বোধ হয় যাচ্ছিল রাস্তা দিয়ে, ওদের দেখতে পেয়েই প্রচণ্ড চিৎকার শুরু করল সে। আর শুধু চিৎকারেই সে খুশি নয়, ছুটে এসে মুড়কির হাত ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে সে নিয়ে চলল। লোকটার মুখটা এক মুহূর্তের জন্যে দেখল মুড়কি, একটু যেন চেনা! তারপর ওর মনে পড়ে যায়। আজ যখন জ্ঞান ফেরার সময় উদ্বিগ্ন মুখে একজন ঝুঁকে পড়ে দেখছিল ওকে, তখন এই লোকটা তার পাশেই ছিল। মুড়কিকে যখন প্রায় টানতে টানতে নিয়ে আসছে লোকটা, তখন তার পেছনে বাচ্চারাও চলছে দেখে ভারী অখুশী সে, ধমক-ধামক দিয়ে তাড়িয়ে দিল বাচ্চাগুলোকে।

    সেই পুরোনো বাড়িটা, যে বাড়ি থেকে মুড়কি বেরিয়েছিল ওর বন্ধু মেয়েটার সঙ্গে, সেখানেই লোকটা ফিরিয়ে আনল ওকে, আর যে ঘরের বিছানায় শুয়ে ওর জ্ঞান ফিরেছে আজ, সেই ঘরে সেই বিছানাতেই ওকে প্রায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিল সে। তারপর কোন কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বাইরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে।

    একটু ভয়ই পেয়েছে মুড়কি, লোকটা এমন করছে কেন? ওর ভাষা মুড়কি বোঝে না, কাজেই মুড়কিকে টেনে আনতে আনতে বিড়বিড় করে ও কী বলছিল তা বোঝার কোন উপায়ই নেই মুড়কির। যদি ধরে নেওয়া যায় কোন একটা দুর্ঘটনা থেকেই উদ্ধার করে মুড়কিকে আনা হয়েছে এখানে, এবং রেখে দেওয়া হয়েছে এই লোকটার তত্ত্বাবধানে, তাহলে ওর এই রাগ দেখাবার কারণ কী হতে পারে? ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই মুড়কিকে ওর বাড়িতে রাখা হয়নি, তাহলে ও তো মুড়কিকে ফিরিয়ে না আনলেই পারতো!

    অবিশ্যি এমন যদি হয় যে লোকটা ওকে অপহরণ করে এনেছে, তাহলে ওর নিজের অধিকার দেখাবার জন্যে বাচ্চাগুলোর সঙ্গ থেকে হিড়হিড় করে ওকে টেনে আনার একটা মানে আছে। এবং নিঃসঙ্গ অবস্থায় নিজের বাড়িতে ফেলে রাখারও একটা অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু তা-ই যদি হয়, তাহলে আজ যখন ওর জ্ঞান ফিরল তখন অতগুলো লোক উদ্বিগ্ন হয়ে লক্ষ্য করছিল কেন ওকে? এই লোকটাও ছিল সেখানে, কিন্তু বিশেষ করে একটা মুখ মনে আছে মুড়কির, যে প্রায় ঝুঁকে পড়েছিল মুড়কির মুখের ওপর, আর জ্ঞান ফিরতেই ওর মালাটাকে ছুঁয়ে, একাধিকবার 'ফ্রেণ্ড' 'ফ্রেণ্ড' উচ্চারণ করে ওকে আশ্বস্ত করছিল কেন? যাকে অপহরণ করা হয়েছে, তাকে অপহরণকারী 'ফ্রেণ্ড' বলে? কিংবা তার অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন হয়?

    এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা কান্নার দমক আসে মুড়কির। নিজের ওপর কর্তৃত্ব হারায় সে। দু চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসা অবিশ্রান্ত ধারা তার মুখ গলা আর বিছানা ভিজিয়ে দেয়। বুক ঠেলে উঠতে থাকে এতক্ষণ সংযত করে রাখা কান্নার শব্দটা। আর সেই শব্দের মধ্যেই ঘুমের অতলে ডুবতে থাকে মুড়কি।

    মুড়কির ঘুম ভাঙে হাতে হেঁচকা একটা টানে। চোখ মেলে সে দেখে ভয়ঙ্কর দেখতে একটা লোক, খালি গায়ে, তার সর্বাঙ্গে আর মুখে লাল কালো আর হলুদের এলো মেলো ছাপ, দু হাতে দুটো সাপ নিয়ে প্রায় উদ্দাম নাচছে তার সামনে। একটু ভালো করে দেখে সে বোঝে, এ সেই লোকটাই, সম্ভবত এ বাড়ির মালিক যে। কিছুক্ষণ পর নাচ থামিয়ে সাপ দুটোকে মুড়কির বিছানায় ওর দু পাশে রেখে দেয় লোকটা। ভয়ে, কিছু না ভেবেই, উঠে বসে মুড়কি। লোকটা দৌড়িয়ে গিয়ে মুড়কিকে জোর করে শুইয়ে দেয় আবার, যথারীতি সাপ দুটো তার দুপাশেই শুয়ে থাকে।

    এমন সময় দরজায় জোর ধাক্কার শব্দ। সকালের সেই উদ্বিগ্ন মুখের লোকটা, তার সঙ্গে আরও চার পাঁচ জন পুরুষ ও মহিলা যাদের চেহারায় স্পষ্ট জনজাতির ছাপ, এবং সকালের সেই মেয়েটা। সাপ দেখতে পেয়ে একজন মহিলা সাপ দুটোকে দু হাতে ধরে নীচে ফেলে দেয়। সাপ দুটো কিলবিল করতে করতে একটা কোণে গিয়ে বসে। তারপর শুরু হয় প্রবল বাদানুবাদ। বোঝা গেল, যার বাড়িতে মুড়কি আছে, সবাই তার বিরুদ্ধে। একটা সময় একজন মহিলা বিছানায় গিয়ে মুড়কির হাত ধরে তাকে বিছানা থেকে নামায়। তারপর ওর হাত ধরেই এগোতে থাকে বন্ধ দরজাটার দিকে।

    রং-মাখা লোকটা দৌড়িয়ে এসে বাধা দেয় মহিলাকে। অন্যরাও ছুটে আসে সেখানে। মহিলার হাত থেকে মুড়কিকে সহজেই উদ্ধার করে সেই 'ফ্রেণ্ড'-বলা লোকটা। তারপর আবার তারই সহযোগিতায় ধীরে ধীরে মুড়কিকে বসায় বিছানায়। রং-মাখা লোকটাকে ডেকে এনে বক্তৃতা দেবার ভঙ্গীতে সে কথা বলে প্রায় মিনিট পনের, এবং তারই মধ্যে অন্তত
    তিন-চারবার মুড়কির গলায় হাত দেয় সে। মুড়কি লক্ষ্য করে, যতবার লোকটা গলায় হাত দেয় তার, ততবারই ঘরের আর সবাই সহমত হয়ে নাড়ায় তাদের মাথা।

    অবশেষে মনে হয় কিছু একটা রফা হল লোকগুলোর মধ্যে। যে মহিলা মুড়কির হাত ধরে বেরিয়ে যাচ্ছিল সে এবং মুড়কির বয়েসী মেয়েটা বেরিয়ে যায়, মিনিট দশেক পর দুজনে মিলে নিয়ে আসে নানারকমের রান্না-করা খাদ্য, কয়েকটা থালাবাটি আর জল। বিছানার ওপর চাদর পেতে খাবারগুলো দুজনের জন্যে সাজিয়ে দেয় মহিলা, মুড়কি আর তার বয়েসী মেয়েটাকে ওরা নির্দেশ দেয় খেতে বসতে।

    খাওয়া হয়ে গেলে মুড়কির সঙ্গে মেয়েটাকে রেখে বাকিরা চলে যায়। ইঙ্গিতটা স্পষ্ট, মুড়কিকে অন্য কোন বাড়িতে নিয়ে যাওয়া চলবে না, ওকে থাকতে হবে এই বাড়িতেই, তবে ওর সঙ্গে থাকবে এই মেয়েটাও। ব্যবস্থাটা ভালোই লাগে মুড়কির। কতদিন ওকে এখানে থাকতে হবে ও জানে না, জানে না উল্কিদি আর ফল্গুদি কোথায় আছে, এমনকী ওরা বেঁচে আছে কিনা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নয় মুড়কি, ও কী ভাবে ফিরবে কলকাতায়, আদৌ কোনদিন ফিরতে পারবে কিনা তা-ও তো অনিশ্চিত – ভেবে কান্না পায় মুড়কির, তবু নিজেকে সংযত করে সে। এই অচেনা দ্বীপে অন্তত এই একটি সমবয়েসী বন্ধু পেয়েছে সে, তার কাছে মান খোয়ানো চলবে না।

    ঠিক গল্প-টল্প যে হতে পারল তা তো নয় – দুজনে দুজনের ভাষাই বোঝে না – তবু হাতের আঙুল ধরে ধরে ইংরিজিতে সংখ্যা গুনতে শেখাল ও ওর নতুন বন্ধুকে। মুখে যে রংচং মেখে এ বাড়ির মালিক ভয় দেখাবার চেষ্টা করেছিল মুড়কিকে, সেই রং রাখা ছিল ঘরের একটা কোণে – জলে তা-ই গুলে ঘরের মেঝেতে খেলা হলো কাটাকুটি, কিছুক্ষণ পর কেউ আর অন্যকে হারাতে পারে না! রাত্তিরে ঘুমও হলো ভালোই।

    যে ঘরে আছে মুড়কি সেখানকার বাথরূমে পোষাবে না ওর বন্ধুটির, সকাল হতেই সে চলে গেল নিজের বাড়ি। আর যেই যাওয়া, প্রায় সেই মুহূর্তেই হাজির যে লোকটাকে সবাই মিলে কাল সরিয়ে দিয়েছিল সে; সঙ্গে একটা কুকুর, একটা মুরগী আর ছুরি একখানা। লোকটাকে দেখেই রাগ হয় মুড়কির, ভয়ও হয় খানিকটা। সে হেসে মুড়কিকে বলল ভাঙা ইংরিজিতে, হাউ মিস? গূড? আর তারপর যে কাণ্ডটা করলো, সেরকম ভয়ঙ্কর নারকীয় খেলা যে কেউ খেলতে পারে, তা ভাবতেও পারে না মুড়কি। ছুরিটা দিয়ে মুরগীর শরীরে একটুখানি আঘাত করে সে, রক্তপাত হয়, রক্তটা সে ফেলে মেঝেতে, তারপর কুকুরটাকে ছেড়ে দেয়। কুকুরটা চেটে চেটে খায় রক্তটা, তারপর আবার রক্তপাত! মুড়কির ইচ্ছে হয় চিৎকার করতে, মনে হয় হাত দিয়ে চোখটা চাপা দেয়, কিন্তু তার পরেই নিজেকে শাসন করে সে। এই নারকীয় খেলায় সে যে একটুও বিচলিত হয়েছে তা বুঝতে দেওয়া চলবে না। যথাসম্ভব স্বাভাবিক মুখ করে সে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে লোকটার দিকে। এমন খেলা চলতেই থাকে, এমন সময় ফিরে আসে তার সঙ্গিনী মেয়েটি। তাকে দেখেই আপন মনে বকবক করতে করতে লোকটা চলে যায় তার কুকুর আর মুরগীটাকে নিয়ে।

    মেয়েটা মুড়কির জন্যে নিয়ে এসেছে একটা টুথব্রাশ আর টুথপেস্টের টিউব একটা। একটা বড় বাটিতে ও এনেছে দুধ। মুড়কি ঢুকে যায় বাথরূমে। তৈরি হয়ে বেরিয়ে দুধটা খেয়ে নেয় সে, তারপর দুজনেই বেরিয়ে যায় বাইরে।

    গতকাল যে ফাঁকা জায়গাটায় এক দঙ্গল ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে খেলাধুলো করতে দেখেছিল, সেখানেই ওরা যায় আজ আবার। স্কুল-টুলে যাবার রেওয়াজ নেই সম্ভবত, কালকের ছেলেমেয়েরা আজও হাজির। একটু-আধটু এক্কাদোক্কা খেলার পর মুড়কিকে ঘিরে জড় হয় বাচ্চারা। যে মহিলা মুড়কির হাত ধরে কাল বেরিয়ে আসবার চেষ্টা করেছিল, কিছুক্ষণ পর সে হাজির। বোঝা গেল মুড়কির যে সঙ্গিনী, তারই মা সে। সে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে সকালের জলখাবার, মাংস দিয়ে তৈরি একরকমের পিঠে, অচেনা একটা ফল, তরমুজ খুব ছোট হলে যেরকম দেখতে হবে খানিকটা সেরকম, টক-মিষ্টি স্বাদ, আর কলা। খাওয়া হয়ে গেলে আবার খেলা।

    কাটাকুটি খেলা শিখে গেছে সবাই, এবার মুড়কি ওদের শিখিয়ে দেয় কবাডি। কিছুক্ষণ খেলাধুলোর পর এক এক করে বাচ্চারা চলে যেতে শুরু করে, মুড়কি বসে বসে ভাবে, এই কি তার জীবনের রুটিন এখন থেকে? যখনই এই চিন্তাটা আসে, হু হু করে বুকের ভেতরটা, গলা ঠেলে উঠে আসতে চায় একদলা কান্না। মুড়কিকে আনমনা দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে তার সঙ্গিনী মেয়েটি, আর একটু কাটাকুটি খেলা হোক!

    জ্ঞান ফেরবার সময় যে লোকটা উদ্বিগ্ন মুখে ঝুঁকে পড়ে মুড়কিকে দেখছিল, গতকাল রং-মাখা সাপ-খেলানো লোকটার সঙ্গে বাদানুবাদে সবচেয়ে সরব ছিল যে, মুড়কি দেখে সে এগিয়ে আসছে তার দিকে, সঙ্গে টাকমাথা খালি-গা একটা লোক। মুড়কির কাছাকাছি এসে টাকমাথাকে দেখিয়ে সে জিজ্ঞেস করে, নো হিম?

    লোকটা মুড়কিকে বলে, সীন মী অ্যাট ম্যালডোনাডো, রাইট?

    ম্যালডোনাডোয় টাকমাথা একজনকে মাঝে মাঝেই ওরা দেখেছে, কিন্তু দেখেছে সব সময়ই পেছন থেকে। ঠিক কেমন দেখতে তাকে সামনাসামনি তা ওরা জানে না। জানে না সে বন্ধু না শত্রু। আর তা ছাড়া এ-ই কি সে? সে লোকটা সব সময়ই বুশ-শার্ট আর প্যান্ট পরতো, এ দাঁড়িয়ে আছে খালি গায়ে।

    মুড়কি বলে, মে বী।

    লোকটার গলায় ঠিক মুড়কির গলার মালাটার মতো একটা মালা। সেটাকে দেখিয়ে ওর সঙ্গী বলে, ফ্রেণ্ড। মাৎসিগোঙ্কা ফ্রেণ্ড। শ্যাল টক।

    ওরা সবাই মিলে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে যায় যে ঘরে মুড়কিকে রাখা হয়েছে সেখানে। লোকটা মোটামুটি ইংরিজি জানে, সে বলে মুড়কিকে, তোমরা যখন শিম্পাটিয়া গ্রামে আশানিঙ্কা মাৎসিগোঙ্কা জনজাতির লোকদের সঙ্গে দেখা করেছিলে, যেখানে তোমাদের মালা দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ঠিক হয় পেরুতে আমি তোমাদের উপর নজর রাখব, আর রোজ তোমরা কেমন আছ জানাব ওদের। তোমরা যেদিন রাত্তির বেলা কক-অব-দ্য-রক দেখতে জঙ্গলে গিয়েছিলে আমি তোমাদের উপর নজর রাখছিলাম। ফেরার পথে তোমাদের নৌকো থেকে তোমাকে চুরি করে তোমাদের শত্রুরা। তারপর তোমাকে এখানে নিয়ে আসে। আমি তোমার ওপর নজর রাখছিলাম, তোমার পিছন পিছন আমিও চলে আসি। তুমি এসেছ কাল, আমি এসেছি আজ। তোমার সঙ্গীরা নিশ্চয়ই তোমাকে খুঁজছে। আমি ফিরে গিয়ে ওদের সঙ্গে দেখা করে তোমার খবর দেব। তুমি কি ওদের কোন চিঠি দিতে চাও? তা হলে আমি সেই চিঠি নিয়ে যেতে পারি।

    মুড়কি বললো, আপনি যে সত্যিই আমাদের বন্ধু তা বুঝব কী করে?

    লোকটা নিজের গলার মালাটা ছুঁয়ে বলে, এটাই আমার প্রমাণ। এ ছাড়া অন্য কোন প্রমাণ এখন আমি দিতে পারব না। তুমি যদি কোন চিঠি না দাও, কোন ক্ষতি নেই। আমি ফিরে গিয়ে যে করেই হোক তোমার সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করব, তোমার কথা জানাব। তুমি চিঠি দিলে তোমার সঙ্গীরা একটু বেশি নিশ্চিন্ত হবে। ওরা কি তোমার হাতের লেখা চেনে? চিনলে, চিঠি দেখে একটু আশ্বস্ত হবে। তবে যা করবে তাড়াতাড়ি কর। তোমাকে যারা চুরি করে এখানে নিয়ে এসেছে, তারা যে লোকটাকে এখানে তোমার দায়িত্ব দিয়েছে সে ভালো লোক নয়। সে যদি জানতে পারে আমি তোমার কাছে এসেছি সে ঝামেলা করবে। সময় বেশি নেই।

    হাতের লেখার কথাটা মুড়কি ভাবে। তার মনে পড়ে যায় ফল্গুদির কাছে পরীক্ষা দেবার কথাটা। হাতের লেখা? বাংলা অক্ষরে ওই কোডে লিখলে চিঠিটা এই লোকটা যে পড়তে পারবে না সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আর আমিই যে লিখেছি সে ব্যাপারে ফল্গুদি-উল্কিদি নিশ্চিত হবে। লোকটাকে সে বলে, কাগজ আছে?

    কাগজ তো নেই, কী হবে? তারপর মুড়কির সঙ্গিনীকে কিছু একটা বলে লোকটা। ওদের ভাষায়।

    ছুটে বেরিয়ে যায় মেয়েটা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে এক টুকরো ব্রাউন পেপার দেয় মুড়কির হাতে। কোন
    খাবার-টাবার কিছু জড়ানো ছিল এই কাগজটায়। তেলজাতীয় একটু কিছু লেগে আছে তাতে। একদিকে একটা ছাপা 'এস্‌' এর অংশ। ঠিক আছে, এতেই লেখা যাবে।

    কাল রাত্তিরেই রং গুলে কাটাকুটি খেলেছিল ওরা। সেই রং আবার গোলা হল। কাঠি গোছের একটা কিছু পড়েছিল মেঝেতে। রঙে সেই কাঠি ডুবিয়ে লিখতে শুরু করে মুড়কি। ও ভালো আছে। ওর কোন সমস্যা নেই। এমন কিছু লেখা চলবে না যাতে ওদের উদ্বেগ হতে পারে। আমি দিব্যি আছি। এখানে সবাই বন্ধু। তোমরা কাজ চালিয়ে যাও।



    চলবে ---
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১৪৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০৬539486
  • উহ ওদিকেই সেই টাকমাথা লোকটা খুন হয়ে গেছে।  
    আবার এক সপ্তাহের অপেক্ষা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন