এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  শনিবারবেলা

  • রসুইঘরের রোয়াক ১৩ - তিলের ক্ষীরশা আর সরা পিঠে

    স্মৃতি ভদ্র
    ধারাবাহিক | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৪৪০০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • তিলের ক্ষীরশা আর সরা পিঠে। সাদা তিল আর নারিকেলের পুর সাথে সরায় ভাজা সাদা চিতই পিঠা।
    দুপুর ঝুপ করে ডুবে যেতে না যেতেই বিকেলটা কেমন ফুরিয়ে যায়। আর ওদিকে সন্ধ্যা হতেই কুয়াশার ঘন পরত আলগোছে আঁকড়ে ধরে উঠোনটাকে।
    রান্নাঘরের বেড়ার সাথে ঝুলে থাকা অল্প আলোর ইলেক্ট্রিক বাতিটাও সেই কুয়াশা ঢেকে ফেলে। কুয়াশার আড়াল থেকে ঘোলা একটা আলো উঠোনের আনাচে কানাচে পৌঁছানোর আগেই অন্ধকারে খেই হারায়।
    মাটির মালসায় জমা হয় শেষ উনুনের কাঠ কয়লার স্তূপ । একটু বাতাস পেলেই দপ করে জ্বলে ওঠে, আধো অন্ধকারে লালচে আলো ছড়ায়।

    ও গিন্নি মালসার ওতো কাছে বসতে নেই, কাঠের চেয়ারে শাল মুড়িয়ে বসে আছে দাদু। একটু পর পর হাতপাখা দিয়ে মালসার কয়লায় হাওয়া দিচ্ছে।
    উঠোনের ঘোলা আলো রান্নাঘরকে যতই অস্পষ্ট করে দিক না কেন, একটু খুটখাট আওয়াজ হলেই আমার মনোযোগ ওদিকে চলে যাচ্ছে।
    আজ সারাবিকেল ঠাকুমা ঢেঁকিতলা ছিল। কুটে রাখা ঝিঙেশাইল চালের গুঁড়ো এখনো ভেজা। বড়ঘরের মেঝেয় পুরোনো কাপড় পেতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুঁড়ো।
    আমি সুযোগ পেলেই সেই গুঁড়োতে আঙুল ডুবিয়ে ছবি আঁকছি। কখনো মানুষ তো কখনো সূর্যমুখী।
    কয়লার আঁচ নিতে মালসার উপরে হাত রাখি। হাতপাখার বাতাসে কাঠ কয়লা দপ করে জ্বলে ওঠতেই দেখতে পাই চালের গুঁড়ো মাখা আমার হাত এখনো সাদা।
    উঠোনের ঘোলা আলো পেরিয়ে মনিপিসি উঠে আসে বড়ঘরের বারান্দায়। হাতে কাঁসার জামবাটি ভরা তেল মাখানো মুড়ি আর পাটালি গুড়। আর তার ঠিক পেছনেই কাঁসার থালে চায়ের কাপ সাজিয়ে মা।

    ও মনিপিসি, ঠাকুমা চা খাবে না?
    মনিপিসি উত্তর দেবার আগেই নস্যি রঙের চাদরটা ভেসে ওঠে উঠোনের কুয়াশা আর ঘোলা আলোর মাঝে। বেতের ধামা কাঁখে মানুষটা। সেই ধামায় ছোবড়া ছাড়ানো নারিকেল।
    ও ঠাকুমা, তুমি চা খাবে না? তাড়াতাড়ি আসো।
    আমার কথার উত্তর দেয় না ঠাকুমা। ধামা বারান্দায় নামিয়ে রেখেই আবার উঠোনের কুয়াশায় মিশে যায়। ঠাকুমার চায়ের কাঁসার গ্লাস মা মালসার আঁচে রেখে দেয়।
    দাদুর রেডিও অনেকক্ষণ কুনকুন করে বেজে চলেছে। এরমধ্যে সন্ধ্যা সাতটার খবর হলো, কৃষি পরামর্শ শেষ হলো, শেষ হলো মাসের নাটক।
    ঠাকুমা এক কুলো তিল নিয়ে কুয়াশা ডিঙিয়ে এখন আবার বারান্দায়। কুলো রেখে আমার পাশে বসতেই দাদু আঁচের মালসাটা ঠাকুমার দিকে এগিয়ে দিলো।
    ও ঠাকুমা, মুড়ি নাও।
    জামবাটি থেকে এক মুঠো মুড়ি ঠাকুমার হাতে দিতেই দাদুর রেডিও গেয়ে ওঠে,
    ' আট কুঠুরি নয় দরজা আঁটা
    মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাটা।'
    আমার মুঠোভরা অতটুকু মুড়ি ঠাকুমার হাত ভরায় না। দু'চারটে মুড়ি আবার এদিক ওদিক গড়িয়েও পড়ে।
    ও ঠাকুমা, এখান থেকে নাও। আমি আমার বাটি এগিয়ে দেই আর শেষে খাবো বলে জমিয়ে রাখা পাটালি গুড়টুকোও।
    ঠাকুমা সে বাটি এড়িয়ে আমাকে আরেকটু কাছে টেনে নেয়। নস্যি রঙের চাদরের ভেতর আমাকে জড়াতে জড়াতে বলে, আমার দিদি খেলেই তো আমার খাওয়া হয়ে যায়, তুমি খাও তো দেখি।

    আমি ঠাকুমার ওমে আরাম পাই। মুড়ির বাটি ফেলে পাটালি গুড় মুখে পুরি। আর ঠাকুমা মালসার আঁচ থেকে চায়ের গ্লাস আঁচলে জড়িয়ে ফুঁ দিয়ে জুড়িয়ে চা খেতে শুরু করে।
    ঠাকুমার ওম আর আয়েসি সময় ফুরিয়ে আসে দ্রুত। সন্ধ্যা গড়ালেও আজ ঠাকুমার ফুরসত নেই যে।
    তা বলে এই জাড়ের সন্ধ্যায় আমাকে কষ্ট দেয় না ঠাকুমা।
    নিজের গায়ের চাদর আমার গায়ে মুড়িয়ে দেয়।
    কিন্তু তাতে আমি ঠাকুমার ওম পাই কই?
    ঠাকুমা উঠে যেতেই চায়ের আসর ফুরিয়ে যায়। ততক্ষণে কুয়াশা আরোও ঘন হয়ে উঠোনের অন্ধকারে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। সেই জমাট বাঁধা অন্ধকারে আস্তে আস্তে নিশুতি হচ্ছে শীতের রাত।
    বারান্দার আঁচের মালসা ঘরে গিয়ে পড়ে। দাদুর রেডিও এবার মনিপিসির দখলে যায়। আর ঠাকুমা নিয়ে বসে তিলের জাঁতা। লাল তিল জাঁতায় ফেলে ঠাকুমা। কয়েকবার জাঁতা ঘুরাতেই বেরিয়ে আসে খোসাবিহীন সাদা তিল। আর সেই সাদা তিল ঝেড়ে বেছে মাটির ডোলায় রাখছে মা।
    সাহাপাড়ার মাদ্রাসা থেকে ভেসে আসছে এশার আযান। রাতের কুয়াশায় ধাক্কা খেয়ে সে সুর আরোও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে।
    ও ঠাকুমা, আর কত সাদা তিল লাগবে তোমার?
    আমি তখন আঁচের মালসা ছেড়ে ওম খুঁজতে মনিপিসির বিছানায়। লেপে পা জড়িয়ে কলেজের বই পড়ছে মনিপিসি।
    লেপের ওমে আস্তে আস্তে চোখ লেগে আসছে আমার।
    ও দিদি, এই তো হয়ে গেলো; তুমি ঘুমাবে না কিন্তু।

    উনুনে আঁচ দিতে ঠাকুমা মাকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেয়। দাদুর রেডিও খুব ঢিমে আওয়াজে তখনও গেয়ে চলেছে,
    নূরজাহান নূরজাহান
    সিন্ধু নদীতে ভেসে
    এলে মেঘলামতির দেশে
    ইরানি গুলিস্তানে...

    সেই সুর ধীরে ধীরে আমার কাছ থেকে সরে যেতে থাকে। চারপাশে নীরবতার দেয়াল আর লেপের ওমে আমি আস্তে আস্তে তলিয়ে যেতে থাকি।
    অনেক পরে জাগি ঠাকুমার ডাকে। উঠোনের সেই ঘোলা আলোয় কুয়াশা তখন আরোও জেঁকে বসেছে। রান্নাঘরের ভেতর আমার আর মনিপিসির পিঁড়ি পড়েছে। আর সামনে দুধভরা কাঁসার বাটি। তাতে পাটালিগুড় আর ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত। সেই দুধের বাটিতে হাত ডুবাতেই আমার সারা হাতে লেপ্টে যায় ননী।
    ও দিদি, তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়ো, কাল সকাল সকাল উঠতে হবে তো।
    কাল কেন সকাল সকাল উঠতে হবে, তা নিয়ে আমার মোটেও আগ্রহ নেই। কীভাবে থাকবে আগ্রহ? আমি তো ভাত মুখে নিয়ে ঝিমাচ্ছি।
    ফেলেছেড়ে ভাত খাওয়া শেষ করে আমি মনিপিসির কোলে উঠোন পেরিয়ে বড়ঘরে আসি। উঠোনের সাদা কুয়াশায় তখন আরোও পরত পড়েছে।
    উনুনের কাজ সেরে ঠাকুমা বড়ঘরে আসার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
    নিস্তব্ধ নিশুতি রাতের গায়ে তখন শুধুই কুয়াশার একচ্ছত্র আলোড়ন।
    প্রতিদিন ভোরের আযানে ঠাকুমার ঘুম ভাঙলেও আজ ভাঙে পূর্ণির মায়ের ডাকে।
    ও জ্যাঠিমা, ফটক খোলেন।
    সে ডাকে ঠাকুমার আগে ভেঙে যায় আমার ঘুম। পূর্ণির মা ভোরবেলায় আসা মানেই বাড়িতে উৎসব। আজ কি উৎসব বাড়িতে? আমি সব প্রশ্ন নিজের ভেতর জমিয়ে রেখেই ঠাকুমার পেছন পেছন ফটকের কাছে আসি।

    উঠোনের সেই সাদা কুয়াশা এখন পেয়ারা গাছের পাতা চুঁইয়ে টুপটাপ ঝরছে। আর ভোরের নিস্তব্ধতায় বারবার আছড়ে পড়ছে দমকা হাওয়া।
    ও দিদি, ঘরে যাও; দেখো কেমন হাওয়া ছাড়ছে।
    হাওয়ার কনকনে ভাব সত্যিই জার বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি আচমকা সব আগ্রহ ফটকের সামনে রেখে বড়ঘরে চলে আসি।
    রান্নাঘরের বেড়ায় ঝুলতে থাকা বাতির টিমটিমে আলো উঠোন পেরিয়ে বড়ঘরে আসার আগে অন্ধকারে ধাক্কা খেয়ে আরোও ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। সেই আলোতে দাদুর কাঠের চেয়ারে আমি কুন্ডলী পাকিয়ে বসে আছি। গায়ে জড়ানো ঠাকুমার পাতলা চাদর।
    পূর্ণির মা উঠোনে গোবরজলের ছরা দিলো, কালরাতের জমা এঁটো বাসন পেয়ারা গাছের তলায় বসে ছাই দিয়ে মেজে নিলো আর এঁটেল মাটিতে পাটের আঁশ দিয়ে উঠোন লেপলো। ওদিকে কলতলা থেকে ঠাকুমা স্নান সেরে ভেজা কাপড়ে দমকা হাওয়ায় কাঁপতে বড়ঘরে এসে সোজা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।
    ও দিদি, মনিপিসিকে উঠতে বলো, আজ কত কাজ আছে।
    ঠাকুমা নেমে এলো পেতলের খাবড়ি, মাটির খোলা আর সরা নিয়ে। তা মেঝেতে রেখেই তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো বাইরবাড়ি। তাঁতঘরের সামনে কলাগাছের ঝোঁপ। সেখান থেকে কলার মাইজ আর খোল কেটে লাল বারান্দায় এনে রাখলো।

    ও ঠাকুমা , আজ কী পূজা?
    বাড়ির গিন্নি জানে না আজ বাড়িতে কী পূজা? মনিপিসি পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
    মনিপিসিটা সবসময় এমন করে! আজ আমার কান্না পায়।
    ঠাকুমা বুঝতে পারে।
    ও দিদি, আজ তিল সংক্রান্তি তো।
    আমার চোখ আনন্দে চকচক করে ওঠে।
    এরমধ্যে মা স্নান করে রান্নাঘরের বারান্দায় নারিকেল কুরাতে বসে গেছে। আর ঠাকুমা বসে যায় নিত্য পূজায়। আমি ঠাকুমার পেছনে গিয়ে দাঁড়াই। তিলক পড়লে ঠাকুমাকে সবসময় কেমন অচেনা মনে হয় আমার।
    নিত্য পূজা শেষ হতেই প্রসাদের দু’টো বাতাসা আমার মুঠোতে পুরে ঠাকুমা রান্নাঘরে ছোটে।
    ততক্ষণে মনিপিসি লাল বারান্দায় আতপ চাল বাটতে বসে গেছে।
    ও মনিপিসি, আলপনা দেবে?
    মনিপিসি বাটা চালের পিটুলি আর ছোট্ট ন্যাকড়া নিয়ে উঠোনে নেমে যায়। আমি ঢেঁকিতলায় গিয়ে বসি। মনিপিসি পিটুলি দিয়ে উঠোনে ধানের গোছা আঁকে, কড়াই-খোলা আঁকে, লক্ষ্মীর পা আঁকে।
    রান্নাঘরের উনুনে পেতলের খাবড়ি ওঠে। আমি উঠোনে মনিপিসিকে ফেলে রান্না ঘরে গিয়ে দাঁড়াই।

    খাবড়িতে সাদা তিল বাটা, নারিকেল আর খেজুর গুড় হাতে মাখিয়ে ঠাকুমা বসিয়ে দিয়েছে। উনুনের আঁচে পড়ে ছ্যাঁক ছ্যাঁক শব্দ করছে । ঠাকুমা অনবরত নাড়ছে তা খুন্তা দিয়ে। তিল-নারিকেলে পাক আসে। একটু পর জ্বাল দিয়ে রাখা ঘন দুধ তাতে মেশায় ঠাকুমা। আবার কিছুসময় নাড়াচাড়া। দুধ শুকিয়ে এলে অল্প এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে দেয় ঠাকুমা।
    ওদিকে মা ঝিঙেশাইল আতপের গুড়োর সাথে লবণ আর অল্প গরম জল মিশিয়ে সরা পিঠার গোলা বানিয়ে ঢেকে রাখে।
    খাবড়ির ক্ষীরশায় পাক চলে এলে ঠাকুমা একমুঠো সাদা তিল ছড়িয়ে নামিয়ে নেয় তিলের ক্ষীরশা।
    এরপর মাটির খোলা ওঠে উনুনে। তাতে বেগুনের বোটায় লাাগানো তেল ঘষে ডাবর হাতা ভরে গোলা ঢালে ঠাকুমা। জলে ভেজানো মাটির ঢাকনা তুলে ঢেকে দেয় খোলা। অল্প একটু জল নিয়ে ছিটিয়ে দেয় মাটির ঢাকনার চারপাশে। গরম ঢাকনায় জলের ছিটা পড়তেই ধোঁয়া উঠে মিশে যায় বাইরের দমকা হাওয়ায়। একটুপরেই ঠাকুমা মাটির ঢাকনা তোলে, সেখানে পেট ফোলা সাদা সরা পিঠে।
    সাদা সরা পিঠা ভাজা শেষ হলে উনুনে এবার ওঠে মাটির হাঁড়ি। সেখানে জ্বাল দেওয়া ঘন দুধ আর ঝোলা গুড়। অল্প ফুটিয়ে তাতে পড়ে কয়েকটি সাদা সরা পিঠা। এরপর বেশ কিছুক্ষণ বলক তুলে ঠাকুমা নামিয়ে ফেলে দুধে ভেজানো সরা পিঠা।
    উঠোনে তখন কলার মাইজ আর খোল পড়েছে আলপনার উপর। আর তাতে পূজার থাল। রান্নাঘর থেকে তিলের ক্ষীরশা আর সাদা সরা পিঠা উঠোনে আসতেই বাতাসে ভাসতে শুরু করে তিলের ঘ্রাণ।
    কালো পাথরের বাটিতে দুধে ভেজানো সরা পিঠে থেকে খেজুর গুড়ের ঘ্রাণও মিশে যাচ্ছে তাতে। মনিপিসি মাটির সরায় খানিকটা ঝোলাগুড় এনে রাখে।

    ও ঠাকুমা, আমার ক্ষিদে পেয়েছে তো।
    সোনা দিদি আরেকটু সময়, আজকের দিনে খোলার পিঠে আর তিলের ক্ষিরশা আগে ঠাকুরকে দিতে হয় যে। ঠাকুমা তাড়াহুড়ো করে প্রদীপ জ্বালায়। দমকা হাওয়ায় তা বারবার নিভে যেতে চায়।
    ওদিকে আকাশে জড়ো হচ্ছে অসময়ের জলমেঘ।
    ঠাকুমা কলার খোলে পিঠা দেয়। তিলের ক্ষীরশা দেয় তার উপর সাজিয়ে। আর তুলসীপাতাও।
    এরপর আঁচল গলায় জড়িয়ে তুলসীতলায় প্রণাম করে ঠাকুমা। ঠাকুমার দেখাদেখি আমিও উপুড় হই। ঠিক তখনই জলমেঘ থেকে বৃষ্টির ফোঁটা পড়া শুরু করে।
    পিঠে আর তিলের ক্ষীরশে নিয়ে লাল বারান্দায় উঠে যায় মনিপিসি আর মা।
    বড়ঘরের মেঝেয় পাত পড়ে সবার সকালের খাবারের। সাদা সরা পিঠে আর তিলের ক্ষীরশা।
    দুপুরের পর হবে পাটিসাপটা, চন্দনকাঠ, তুলসীমালা চালের পায়েস।



    আমি মুঠোয় পুরে তিলের ক্ষীরশা মুখে দেই। ও ঠাকুমা, আমার জন্য ক্ষীরশা রেখে দিও; কাল সকালেও ক্ষীরশা আর সরা পিঠা খাবো।
    দাদু তিলের ক্ষীরশা কপালে ছুঁইয়ে মুখে দেয়। ঠাকুমার দিকে তাকিয়ে বলে, এবারের তিল খুব মিঠা।
    ঠাকুমার চোখেমুখে একটা হাসি খেলে ওঠে।
    উঠোনের আলপনায় অসময়ের বৃষ্টিজল। আর ঝরতে থাকা সে জলে ধুয়ে যেতে থাকে মনিপিসির আঁকা পিটুলির আল্পনা।

    আর ঠাকুমা বিড়বিড় করে ওঠে,
    যদি বর্ষে পৌষে, কড়ি হয় তুষে......


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৪৪০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 97.9.***.*** | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৩:৪১102346
  • সুন্দর সাবলীল লেখা। চলতে থাকুক। ছবিতে সবুজ রঙের স্যাচুরেশন আমার চোখে একটু বেশি লাগে। অবশ্য আমি এক্সপার্ট নই।

  • শক্তি | 2401:4900:110a:2663:0:53:75b0:***:*** | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:৫৩102359
  • অসাধারণ, কতো কী পড়ি, লেখা থেকে এমন সরাপিঠা আর তিল মেশানো ক্ষীরের সুবাস আর পাইনি ।মধু !

  • Dipak Das | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০০:০১102370
  • কিছুদিন ছেদ পড়েছিল। আবার পড়লাম। এবং আবার ভাল লাগল। 


    সরা পিঠে আমাদের এলাকায় আসকে পিঠে নামে পরিচিত। খাবারদাবারের বিষয়ে আমরা বেশ পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের স্বাদ সমানে পাই। আমার পিতৃ-মাতৃকুল পূর্বের। এখন থাকি পুরো ঘটি ঘেরা এলাকায় একলা বাঙাল। মামার বাড়ির চারপাশের বাসিন্দাদের মূল বাংলাদেশে। ফলে দু’তরফের পিঠের স্বাদ মেলে। আমরা এখন মোটামুটি ‘বাটি’। 

  • reeta bandyopadhyay | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:২১102435
  • এ বছর আর হলনা সামনের বছর ক্ষীরশা বানাতেই হবে, টার কথা কখনো শুনেছি বলে মনে পড়েনা, শুনতেই লোভনীয়।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:

Bengali, Article, Food, Traditional
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন