এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • ছত্তিশগড়ের গেঁয়ো ব্যাংকঃ স্মৃতির কোলাজ ২১

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২২ মে ২০২৫ | ৩৬৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছত্তিশগড়ের গেঁয়ো ব্যাংকঃ স্মৃতির কোলাজ ২১

    ড্রাইভার, গাড়ি রোক্কো, গাড়ি রোক্কো!

    সেদিন কার মুখ দেখে যে উঠেছিলাম!
    চেয়ারম্যান এইচ এম সারদা স্যারের সঙ্গে ব্রাঞ্চ ভিজিট!
    উনি আবার একটু আধটু হিন্দি পত্রিকার রবিবাসরীয়তে না-গল্প না-প্রবন্ধ গোছের লেখা লেখেন এবং স্থানীয় সাহিত্যপ্রেমীদের সঙ্গে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে ভাল বাসেন।

    তিন বছর হল ইন্দিরা গান্ধীর ফরমানে বিলাসপুর -রায়পুর গ্রামীণ ব্যাংক খুলেছে। ছত্তিশগড়ের প্রথম রিজিওনাল রুর‍্যাল ব্যাংক,উনি আমাদের প্রথম চেয়ারম্যান।
    আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, আমাদের ওরিয়েন্টেশন বা হাতে খড়ি — সব ওনার হাত ধরে। সবাইকে নাম ধরে বলেন।

    আমরা, মানে আমি আর আমার ব্যাচমেট সুবেদার যাচ্ছি স্যারের সেপাই- বরকন্দাজ হয়ে অমরকন্টক এলাকার তিনটে ব্র্যাঞ্চ দেখতে — পেন্ড্রা, মারওয়াহি এবং পসান।
    তারপর ফেরার পথ ধরা। স্যারের সঙ্গী শ্রীমান জয়সওয়াল বেলা বিলাসপুরের ছোটমাপের সাহিত্যিক, যিনি খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রার বর্ণনা করতে গিয়ে নারী শরীরের ভুগোলে হাবুডুবু খান।

    পেন্ড্রা ব্র্যাঞ্চ তখনও স্টেট ব্যাংকের জুনিয়র গ্রেডের একজন অফিসারের জিম্মায়।
    উনি লোন-টোন দিতে বিশেষ আগ্রহী নন, কিন্তু খাতাপত্তর একদম সাফসুতরো রেখেছেন। ইনস্পেকশন শেষ হলে সরকারি রেস্ট হাউসে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন পর্বের সময় উনি হাত কচলে জানতে চাইলেন — কবে বনবাস পর্ব শেষ হবে? কবে ডেপুটেশন শেষ করে স্টেট ব্যাংকে ফেরত যাবেন?
    সারদা স্যার তাঁকে বশিষ্ঠের মত আশ্বস্ত করলেন।

    পরের গন্তব্য মারওয়াহী পৌঁছুতে পৌঁছুতে বেলা তিনটে। ম্যানেজার গ্রামীণ ব্যাংকের পাণ্ডেজি। স্যার এক এক করে স্টেট ব্যাংকের অফিসারদের পিতৃগৃহে ফেরত পাঠিয়ে গ্রামীণ ব্যাকের নবাগতদের ম্যানেজারের দায়িত্ব দিচ্ছেন।

    ভাই, আগে সেবিংস অ্যাকাউন্ট খোল, যত পারো। তাতে লেনদেন শুরু করাও।
    একটা ক্রিটিক্যাল মাস হলে তবে উনি লোন শুরু করার সবুজ পতাকা দেখাবেন।
    পাণ্ডেজির সঙ্গে কুছ কাম কী বাত হল। ততক্ষণে চায়-নাস্তা এসে গেল, ওখানকার রসমালাই বেশ নামকরা।
    বেশ ফুরফুরে মনে আমরা পসান ব্র্যাঞ্চের জন্য রওনা দিলাম। তখনও গাড়ি গ্রামের সীমানার বাইরে যায়নি। জয়সওয়াল সবে মাত্র তাঁর নতুন প্রকাশিত ছোটগল্প ‘রেজা ফুলমতী’ নিয়ে কিছু বলা শুরু করেছেন, এমন সময় একটা কর্কশ চিৎকারে সামনের বাবলা গাছ থেকে কিছু পাখি উড়ে গেল।

    -- হেই ব্যাংকওয়ালে! গাড়ি রোক্কো, গাড়ি রোক্কো!

    কী হল রে বাবা! পথে কোন মুরগি বা ছাগলছানাকে চাপা দিয়েছি নাকি? তাহলে ভোগান্তি আছে।
    ওরা গাঁয়ের লোক জড়ো করে গাড়ি আটকে রাখবে, তারপর বেশ কিছু টাকা আদায় করে তবে ছাড়ান!
    স্যারের কথায় পুরু ড্রাইভার পুরু ব্রেক কষল। একটা লুঙ্গিপরা লোক এবং একটি বাচ্চা দৌড়ে দৌড়ে আসছে। গাড়ির সামনে এসে বিচ্ছিরি মুখ ভঙ্গী করে হাত নেড়ে বলল — বাহ্‌ খায়ে পিয়ে ঔর খসকে! পৈসা কউন দেগা? বাহ্‌ চাঁদু, খেয়েদেয়ে সটকে পড়ার তাল!

    সুবেদার গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামে।
    -- কে তুই? কিসের পয়সা?
    -- ন্যাকা সাজছ? এই গাঁইয়ে আমার হোটেল, রামাবতার প্যাটেলকে সবাই একডাকে চেনে। তোমাদের ড্রাইভার দু’ঘন্টা আগে এসে নাস্তা প্যাক করে নিয়ে গেছে। দিব্যি চেটে পুটে খেলে, এখন বলছ কিসের পয়সা?

    সারদা স্যারের মুখ রাগে থমথমে। সাহিত্যিক জয়সোয়ালের সামনে বেইজ্জতি!

    আমি বলি — কেন? ব্র্যাঞ্চে গিয়ে পয়সা চাও। ম্যানেজার দিয়ে দেবে।
    -- আগে তাই হত। সেই ভরসায় গেছলাম চাইতে। নতুন ম্যানেজার পাণ্ডেজি বলল — আমি কেন দেব? যারা খেয়েছে তাদের কাছে চাও।
    -- কত টাকা?
    -- বাইশ টাকা আট আনা।

    সুবেদার ওয়ালেট খুলে পনের টাকা বের করে। আর আমি দশ। দিয়ে বলি — খুচরো দিতে হবে না, এখন যা।

    চেয়ারম্যান বিড়বিড় করেন — ক্যায়সা ক্যায়সা লোক ম্যানেজার বন গয়ে! মিনিমাম সেন্স অফ হসপিটালিটি নেই। কালচারের ফারাক।
    আমি মুখ খুলি,
    -- স্যার এরকম স্যাম্পল তো আপনিই রিক্রুট করেছেন।

    রাগে ওনার মুখে কথা ফোটে না। জয়সোয়ালের মুচকি হাসি। সুবেদার আমাকে ইশারায় মুখ বন্ধ করতে বলে।
    তারপর কানে কানে বলে — দেখিস, কালকেই পাণ্ডে ব্যাটার নতুন পোস্টিং হবে ওড়িষ্যা বর্ডারের আমলিপদর শাখায়।

    ঘন বনের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চলছে। পুরু ড্রাইভার ডিপার জ্বালিয়ে বলে — চিতল হরিণ!
    -- আরে গাড়ি রোক্কো! চিতল নয়, সম্বর হরিণ।

    এবার চেয়ারম্যান সারদার চিৎকার। ব্রেক লাগতেই উনি লাফিয়ে নেমে যান হরিণ দেখতে। তিনটে হরিণ কড়া আলোয় ভ্যাবাচাকা খেয়ে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির মত থমকে দাঁড়িয়ে ছিল। কয়েকটা মুহুর্ত, তারপরেই শুকনো পাতায় খড়মড় শব্দ তুলে হাওয়া।

    এসে গেল পসান ব্র্যাঞ্চ।
    গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা একটা সাদা রঙের পাকা বাড়ির আভাস। খাপরার ছাদ।

    -- কী হল? ব্যাংক বন্ধ? সব ঘুমুচ্ছে নাকি?
    স্যারের গলায় বিরক্তি।

    আমরা সমস্বরে বলি — না স্যার, এখন ছত্তিশগড়ের গ্রামে গ্রামে পাওয়ার কাট। কিন্তু ব্যাংকে হ্যাজাক আছে। একটু আলোর আভাস পাচ্ছি।
    আপনারা গাড়িতে বসুন। অন্ধকারে নামবেন না। সাপখোপ আছে। আমরা গিয়ে হ্যাজাক, হ্যারিকেন জ্বালানোর ব্যবস্থা করি। তারপর আপনাদের নিয়ে যাব।

    আমরা দু’জন এগোতে থাকি। ব্যাংকের অংশে কোন আলো নেই। তালাবন্ধ। কিন্তু গায়ে লাগা স্টাফ কোয়ার্টারে আলোর আভাস যেন!
    আমরা পেছন দিক দিয়ে গিয়ে জানলায় টোকা দিই। দরজা খোলে ম্যানেজার সাহু, রায়পুরের ছেলে। জিওগ্রাফিতে মাস্টার্স করার সময় ইউনিভার্সিটিতে ফোর্থ হয়েছিল।
    সারদা স্যার ভাল অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট অথবা অন্য কোন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে দক্ষতা দেখলে বিশেষ ইম্প্রেসড্‌ হন।

    কিন্তু ভেতরে ঢুকে আমার চক্ষু চড়কগাছ!
    সাহুর বিছানায় চড়ে বসেছে ছ’জন, রামি চলছে জমিয়ে। বিছানার পাশের টেবিলে ভাজিয়ার প্লেট, চানাচুরের প্যাকেট, বিয়ারের বোতল।

    সাহু পরিচয় করিয়ে দেয় — ইনি নতুন ডেপুটি রেঞ্জার, ইনি স্কুলের প্রিন্সিপাল, উনি হেলথ সেন্টারের ডাক্তার। তিনি -- ।
    আমি না চেঁচিয়ে হিসহিস করে বলি — হতভাগা! তোর শিয়রে শমন। চেয়ারম্যান সারদা সাব এসেছেন। গাড়িতে বসে আছেন।
    শিগগির ব্যাংক খোল! পেট্রোম্যাক্স, হ্যারিকেন , মোমবাতি লম্প –যা পাবি সব জ্বালিয়ে দে। ক্লার্কের ঘরে খবর পাঠিয়ে বল এক্ষুণি হাজির হতে।

    সাহু লাফিয়ে উঠে আম্পায়ারের বাউন্ডারি সাইনের মত করে হাত নাড়ে। ঠোঁটের উপর আঙুল রাখে। খেলুড়েদের ইশারা করে কেটে পড়তে। নিমেষের মধ্যে ডাক্তার, রেঞ্জার, প্রিন্সিপাল –পেছনের দরজা দিয়ে হাওয়া।
    আমাদের সঙ্গে সাহু বেরিয়ে এসে স্যারকে স্বাগত ভাষণ দিয়ে আপ্যায়ন করতে চায়, কিন্তু উত্তেজিত হলে তোতলায়। আজও তার ব্যতিক্রম হল না।

    চাপরাশি নন্দকুমার পাশের কোন দোকান থেকে “জুগাড়মেন্ট” করে গোটা দুই হ্যাজাক বাতি জ্বেলে দিয়েছে। এখন গেছে চা আনতে।

    ব্যাংকের হল অপরিচ্ছন্ন। স্যারের একচোট বকাঝকার পর স্যার সুবেদারকে বললেন — যাও ভল্ট রুমে গিয়ে ক্যাশ ভেরিফিকেশন করে এস। আর রায়, তুমি জেনারেল লেজার চেক কর, উইকলি স্টেটমেন্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখ। মোমবাতি নিয়ে এস।

    সুবেদার যে ক্যাশ চেক করতে ভল্ট রুমে ঢুকল, আর বেরোয় না। স্যার বিরক্ত হচ্ছেন।
    আমি জেনারেল লেজার খুঁজে পাচ্ছি না। আর উইকলি স্টেটমেন্টের ফাইল! ক্যাশিয়ার শ্রীমান প্রেমী কেন আসছে না? তাহলেই সব সমস্যার সমাধান!
    কারণ, ম্যানেজার সাহু ভল্টরুমে গিয়ে সুবেদারকে ক্যাশ চেক করাচ্ছে।
    কিন্তু এইসব জঙ্গল এলাকার শাখায় তো বেশি ক্যাশ থাকার কথা নয়! এতক্ষণ লাগে! আর সুবেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে আইন পড়েছে। বেসিক পাটিগণিত ভালই জানে। তাহলে?
    -- রায়, তুমি যাও। দেখ কী হচ্ছে! সাহুকে ডেকে নিয়ে এস।

    গিয়ে আমার ভির্মি খাবার জোগাড়। সাহু মাটিতে আসনপিঁড়ি হয়ে বসে জেনারেল লেজারে পোস্টিং করছে এবং সুবেদার ক্লিন ক্যাশ বুক থেকে ওকে প্রম্পট করছে।
    সুবেদার ফিসফিস করে-সর্বনাশ হয়েছে। সাতদিন ধরে জেনারেল লেজার লেখা হয় নি। তাই আমি লিখিয়ে দিচ্ছি, নইলে সাসপেন্ড হবে। সিরিয়াস ডেরেলিকশন অফ ডিউটি!
    রায়, তুই উইকলি ফাইল নিয়ে স্যারের সামনে রাখ। বল এক্ষুণি আসছে ।

    আমি গিয়ে বলি –মোমবাতির আলোতে অসুবিধে হচ্ছে। কিছু কয়েনসের হিসেব মিলছিল না। আর একটাকার নোট। তবে হয়ে এসেছে, এল বলে।
    ইতিমধ্যে ক্যাশিয়ার-কাম-ক্লার্ক প্রেমী হাজির হয়েছে।

    সাহু এলে স্যার বললেন –জেনারেল লেজার? ক্যাশ বুক?
    সাহু সামনে রাখে। স্যার লেজারের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বল্লেন — ক্যাশ ক্রেডিট বেশি দিয়েছ, কৃষি ঋণ কম। আচ্ছা, ক্যাশ ক্রেডিটের লেজার নিয়ে এস।

    সাহু প্রেমীর দিকে তাকায়। প্রেমী মুখ ফিরিয়ে নেয়।

    -- কী হল? সারাদিন লাগাবে নাকি? কোথায় লেজার?

    সাহু মাথা চুলকোয়।
    -- স্যার, ব্যালান্সিং এর কাজ চলছিল। আমি সেবিংস লেজার, প্রেমী লোন। ওই লেজারগুলো প্রেমী ঘরে নিয়ে গেছে, এক্ষুণি এনে দেবে?
    -- ব্যাংকের লেজার স্টাফ ঘরে নিয়ে গেছে!!! এখানে বসে কাজ করা যায় না?

    স্যারের হার্ট অ্যাটাক হবার জোগাড়।

    প্রেমীর মুখে কথা ফোটে।
    -- আমি তো এখানে বসেই কাজ করছিলাম। সাহু স্যার বললেন — ক্যাশ ক্লোজ হবার পর লেজার নিয়ে বাড়ি যাও। ঘরে বসে ব্যালান্সিং কর। এখানে ওনার বন্ধুরা তাস খেলতে আসবে। এখনই নিয়ে আসছি স্যার।

    চেয়ারম্যান ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। ম্রিয়মাণ স্বরে বলেন –ক্যাশবুকের ফাইনাল ব্যালান্স আর জেনারেল লেজারে ক্যাশ ব্যালান্সের পাতা খোল। সাইন করব।
    খোলার পর আমাদের সবার চোখ কপালে।

    স্যার হিমশীতল গলায় প্রশ্ন করেন — তোমার আজকের ক্লোজিং ব্যালান্স কত?
    -- স্যার, চার হাজার তিন শো আটত্রিশ টাকা সত্তর পয়সা।
    -- বেশ, জেনারেল লেজারের পাতায় কী লেখা আছে পড়।

    সাহু চোখ বুলিয়ে চুপ।

    -- কী হল? তোমারই হাতের লেখা তো, পড়তে পারছ না?

    সাহু চুপ।

    -- রায়, পড়ে বল।
    -- চার লাখ আটত্রিশ হাজার সাতশো টাকা।
    -- এমন ফারাক কী করে হয়?

    কী করে হয়েছে সেটা সুবেদার এবং আমি ঠিকই বুঝেছি।
    শ্যালক সাহু অন্ধকারে মোমের আলোয় তাড়াহুড়ো করে জেনারেল লেজারে এন্ট্রি করতে গিয়ে ডুবিয়েছে, বাঁদিকে দু’ঘর সরে গিয়েছে। হাজারের কলমের সংখ্যা লাখের ঘরে লেখা হয়েছে!

    পুরু ড্রাইভারের কিসসা

    সেই যে সারদা স্যারের পেয়ারের ড্রাইভার পুরু, ওর অনেক গুণ ছিল। গাড়ি খুব ভাল চালাতো, কিন্তু কোন ব্র্যাঞ্চে গেলে অফিসারদের নামিয়ে দিয়ে উৎসাহের সঙ্গে নাস্তা আনতে চলে যেত। আর সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে আধা এক কিলো মণ্ডা-মেঠাই আলাদা করে প্যাক করিয়ে নিত, নিজের জন্যে , বাড়ি নিয়ে যাবে বলে।
    ও চলে গেলে বিল দেখে ম্যানেজারের দল বিরক্ত হত।
    শেষে দু’একজন নালিশ করল এবং পুরুকে সেন্সর করা হল। কিছুদিন সংযত রইল, আবার যে কে সেই।

    পরে জেনেছি ওর বাড়িতে পোষ্য আট জন। প্রথমে ও ছিল হিন্দু বীরেন্দ্র সিং, দুই সন্তানের বাবা। তারপর এক মুসলমান মহিলার প্রেমে পরে মুসলমান হল — আলি ইয়ারজং গোছের সরকারি নাম নিল। এবং আরও ছয় সন্তানের বাবা হল।
    এ তো রিভার্স লাভ জেহাদ!

    মুসলমান ধর্মে মানা নেই বলে দুই সংসার চালিয়ে গেল। আট সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিল। তারপর নিজের মহল্লায় মিউনিসিপ্যালিটির কাউন্সিলর হবার ইচ্ছেয় ফর্ম ভরল, কংগ্রেসের সমর্থন চাইল — কিন্তু স্থানীয় মন্ত্রীজি রাজি হলেন না।

    দ্বিতীয় ব্যাচের অফিসার নেয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় উতরে যাওয়া কিছু ছেলেকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছে। আমি তখব দু’বছরের সিনিয়র। কোন কাজে হেড অফিসে এসেছি।
    কপাউন্ডের বাইরে ফুটপাথের উপর চা-ঘুগনি-পাঁউরুটি-ভাজিয়ার দোকান। খিদে পাওয়ায় বসে গেছি এক প্লেট ঘুগনি নিয়ে। চোখে পড়ছে কিছু নতুন মুখ — ইন্টারভিউ হয়ে গেছে অথবা লাঞ্চের পর সেকেন্ড ব্যাচে হবে। চেহারায় চাপা টেনশন।

    এমন সময় পুরু ড্রাইভারের আবির্ভাব। পাঁচ দশ হাইট, বরাবরের মত ক্লীন শেভড্‌, সাদা গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট এবং মানানসই বুশ শার্ট –ভাল করে ইস্ত্রি করা। আমাকে দেখেও দেখল না। আমি যে স্থানীয় নই, রায়পুর জোনের।
    তারপর চোস্ত উচ্চারণে দুটি আলাপরত ছেলেকে বল — হোয়ার ডু ইউ কাম ফ্রম? টেল মি অ্যাবাউট ইয়োর অ্যাকাডেমিক রেকর্ড।
    নাউ টেল মি — হোয়াই হ্যাভ ইউ চুজন দিস কেরিয়র? দ্যাট টু রুরাল ব্যাংক?
    ছেলেগুলো তুতলে তুতলে কিছু বলল।
    সব শুনে বিজ্ঞের মত বলল — ওকে; হুইচ ব্র্যাঞ্চ উড ইউ প্রেফার? টেল্ মি। আই মাইট সাজেস্ট ইয়োর চেয়ারম্যান। প্লীজ রাইট ইয়োর নেম ইন এ পিস অফ পেপার অ্যান্ড গিভ মি।

    তারপর ওদের পিঠে হাত রেখে দোকানদারের কাছে গিয়ে তিন প্লেট ঘুগনি, পাঁউরুটি আর চায়ের অর্ডার দিল। তিনজনের খাওয়া হলে দৃঢ় পা ফেলে অফিসের মধ্যে ঢুকে গেল।

    সেবার বাঙ্গো হাইডেল পাওয়ার প্রোজেক্টের ল্যান্ড কম্পেনশনের পেমেন্ট নিয়ে কম্পিটিশন — শুধু স্টেট ব্যাংকের সঙ্গে। হেড অফিস থেকে চেয়ারম্যান তাঁর অফিসিয়াল গাড়ি এবং ড্রাইভার পুরুকে সাতদিনের জন্য ধার দিয়েছেন। দুপুরে লাঞ্চের পর আমরা রওনা হব।
    সুবেদার ঘরে গেল জামাকাপড় বদলে আসতে।
    গিয়ে দেখে পুরু ওর বিছানায় ঘুমে কাদা। ওর ঘামে বালিশ ভিজে গেছে। রাগে ওর ব্রহ্মতালু জ্বলে গেল। কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে লাগল।

    কাঁচা ঘুম ভেঙে পুরু লাল কিন্তু করুণ চোখে তাকিয়ে বলল — অমন করে বলিস না ভাঁচা (ভাগ্নে)! আমি ছোটবেলায় বিলাসপুরে তোদের পাশের পাড়ায় থাকতাম। তোর বসন্তা মামার সঙ্গে কত হকি খেলেছি। ও রাইট আউট, আমি সেন্টার ফরওয়ার্ড। অমন করে বলিস না, আমিও তোর মামা হই।
    সুবেদার হতভম্ব।

    পাশের ঘরে গিয়ে আমাকে বলল — হ্যাঁ, খেলে থাকবে। বসন্তা আমার ছোটমামার নাম, ভাল হকি খেলত। লেখাপড়ায় বেশি এগোয়নি। মহা লফঙ্গা ছিল।

    কিন্তু দু’দিন পরেই আমাদের টিমের সঙ্গে পুরুর কথা কাটাকাটি হল। পুরু বলল, -- সেদিন কোরবার রাজকুমার কুঁয়র দেবেন্দ্র প্রতাপ সিং আপনাদের সামনেই আমাকে কত খাতির করে বৈঠকখানায় বসিয়েছিল। পোঁড়ির লালসাহেবও আমাকে ইজ্জত করেন। আজ ছেলেছোকরাদের থেকে কথা শুনতে হল! আল্লাহ্‌ এই দিনও দেখার ছিল!
    বিশু বলল — শুনো পুরু! বেটা কিতনা ভী হো, বাপ কে আন্ডুকে নীচে হী রহেগা।

    পুরুর মুখ ছাইয়ের মত সাদা। টাকমাথা বয়স্ক মানুষটা আমার চেয়ে ফিটফাট থাকে। মুখে পানের খিলি আর মুচকি হাসি।এখন কোন কথা না বলে মাথা নীচু করে বেরিয়ে গেল।
    রাত্তিরে খেতে ডাকলাম। বলল খাবে না। বকুনি শুনেই পেট ভরে গেছে।

    -- আমার সঙ্গে খেতে বসুন। আমি কি কখনও তুই-তোকারি করেছি?
    খেয়ে উঠে পুরু আবার সেই পুরু। একদম চাঙ্গা!
    -- রায়সাব, চলুন পানঠেলা থেকে পান খেয়ে আসি।

    আমি খাই না। তবু গেলাম, জর্দা দেয়া পান কিনে দিলাম।
    এবার ওর মেজাজ শরীফ! বলল, “বোলিয়ে রায়সাব, আপকো কহাঁ ট্রান্সফার চাহিয়ে”?

    সোনী ড্রাইভারের কিসসা
    ব্যাংক একটু বেড়েছে গায়ে গতরে। সারদা স্যার আরও একটা গাড়ি কিনেছেন। নতুন গাড়ির নতুন ড্রাইভার।
    ও সরকারি চাকরি পায় নি, কারণ বড্ড বেঁটে। ডেপুটি কলেক্টর মানতে রাজি নন যে ওর দুই পা ঠিক সময়ে ব্রেক, অ্যাকসিলেটর আর ক্লাচের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে চলবে।

    প্রথম দিনই বকুনি খেল।

    এসেছিল ধবধবে মাখন জিনের প্যান্ট আর চকরাবকরা শার্ট পড়ে, পায়ে লেদার শু।
    চেয়ারম্যান সারদা স্যার কড়া নজরে দেখে বললেন — আমার গাড়ি চালাবে? এই পোষাকে? বাড়ি যাও, যদি কাজ করতে ইচ্ছে করে তাহলে জামা কাপড় বদলে হাওয়াই চটি পরে এস।

    তৃতীয় দিন ফের বকুনি খেল।
    রঙ সাইড দিয়ে একটা মোটরবাইক ওভারটেক করল, যাবার সময় ফাউ হিসেবে সোনী ড্রাইভারকে মায়ের গালি দিয়ে গেল।

    সোনী বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে বজরংবলী মন্দিরের সামনে উঠতি গুন্ডাদের আড্ডার সদস্য। ও দাঁত কিড়মিড় করল। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল — অগলে বার শালে কে উপর গাড়ি চড়া দুংগা!
    সারদা স্যার — গাড়ি রোকো। চাবি দাও আর বাড়ি যাও। আমার গাড়ি দিয়ে তুমি মানুষকে পিষে মারবে!
    অনেক কষ্টে কানটান মূলে ওর চাকরি রক্ষা পায়।

    প্রতিমাসে একশ টাকার লটারি কিনত। আর কোন ব্র্যাঞ্চে গেলে খবরের কাগজ টেনে নিয়ে রেজাল্ট দেখত। পাঁচ বছরে হাজারখানেক লটারির টিকিট কিনেছিল। সাতবার নম্বর লেগেছিল — কিন্তু ওই পঞ্চাশ টাকা, একশ টাকা। সবচেয়ে বেশি পেল একবার — আটশ টাকা।

    আমায় গর্ব করে বলত — আমি না হয় লেখাপড়া শিখি নি। কিন্তু আমার বড়দা নাগপুর সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল। দিদি এম এ পাশ। এখানকার সরকারি স্কুলে ইংরেজি পড়ায়।
    আমার ছোটভাই আই এ এস হবে। কমার্স গ্র্যাজুয়েট, আমার থেকে কোচিং এর পয়সা নিচ্ছে। বড়দা নিজের সংসারে ব্যস্ত।
    আমি ওকে পড়াচ্ছি।
    খুব নাম হবে ওর। জামাকাপড়, কোট — সবকিছুর খরচ দিচ্ছি। ও অনেকগুলো প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় বসছে। তাতে ব্যাংক ড্রাফট , পোস্টাল অর্ডার এসব পাঠাতে হয়। যখন শুকনো মুখে এসে ‘ভাইয়া’ বলে দাঁড়ায়, তখন আমার বুকটা মুচড়ে ওঠে। বলি –আমি আছি, তোর কিসের চিন্তা!

    কয়েক বছর পর ওর ভাই কানাড়া ব্যাংকের ক্লার্ক হল। সোনি গর্বিত। কত মাইনে! কত সুবিধে! স্কুটার কিনেছে। আমি সাইকেলেই থাকব।

    আরও দুটো বছর।

    ভাই বিলাসপুরে প্রাইম জায়গায় গোটা তিনেক প্লট কিনেছে। দাদাকে একটা দেবে? ধ্যাৎ, তাও হয় নাকি!

    এরপর ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হল। সরকারি ব্যাংকের স্টাফ। মোটা দহেজ! সোনী আরও গর্বিত। আমাকে বিয়ের পার্টিতে নেমন্তন্ন করে কার্ড দিয়ে গেল। ওর বড়দি আর প্রিন্সিপাল ভাইয়া সবকিছুর দায়িত্বে।
    আমরা তিনজন গেলাম ওর ভাইয়ের বিয়ের পার্টিতে, উপহার নিয়ে। কিন্তু সোনীকে দেখছি না যে! নিশ্চয়ই কোন দায়িত্বে এদিক সেদিক গেছে।
    পেটপুরে খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ওর ভাই আর বড়দা বড়দিকে বললাম — বলবেন, আমরা এসেছিলাম।

    পরের দিন ও ছুটিতে, নিশ্চয়ই খুচরো কাজে আটকে পড়েছে। তারপরের দিন এল। আমরা ঘিরে ধরে বললাম — এত ভাল বিয়ে! চমৎকার সাজানো হয়েছিল। তুম কহাঁ থে ভাই? কিস জিম্মেদারি সমহাল রহে থে?
    ও হেসে উঠল।

    -- কী জানেন, ভাইয়ের ব্যাংকের কলীগরা এসেছিল, বস এসেছিল। আমার পরিচয় দেবে কী করে? ওর দাদা যে ব্যাংকের ড্রাইভার। তাই বলল-একটু সরে থাকতে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২২ মে ২০২৫ | ৩৬৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    লাল রঙ - Nirmalya Nag
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • জয় | ২২ মে ২০২৫ ২৩:১৫731579
  • "স্যারের সঙ্গী  শ্রীমান জয়সওয়াল বেলা বিলাসপুরের ছোটমাপের সাহিত্যিক, যিনি খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রার বর্ণনা করতে গিয়ে নারী শরীরের ভুগোলে হাবুডুবু খান।" কিংবা "স্যারকে স্বাগত ভাষণ দিয়ে আপ্যায়ন করতে চায়, কিন্তু উত্তেজিত হলে তোতলায়। আজও তার ব্যতিক্রম হল না।"
    অথবা "মুসলমান ধর্মে মানা নেই বলে দুই সংসার চালিয়ে গেল। আট সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিল। তারপর নিজের মহল্লায় মিউনিসিপ্যালিটির কাউন্সিলর হবার ইচ্ছেয় ফর্ম ভরল, কংগ্রেসের সমর্থন চাইল—কিন্তু স্থানীয় মন্ত্রীজি রাজি হলেন না।" বা একেবারে শেষে "কী জানেন, ভাইয়ের ব্যাংকের কলীগরা এসেছিল, বস এসেছিল। আমার পরিচয় দেবে কী করে? ওর দাদা যে ব্যাংকের ড্রাইভার। তাই বলল-একটু সরে থাকতে।"
    গ্রাম ভারতের মধ্যে যে মহাভারতটা আছে- বেদব্যাসের মত তুলে আনছেন, রঞ্জনদা। অসাধারণ লেখনী। জ্জিও গুরু!!
  • জয় | ২২ মে ২০২৫ ২৩:২১731581
  • চিত্র নির্মাণের গুনে  দূরদর্শনের সাদাকালো মালগুড়ি ডে‘স ফিরিয়ে দিলেন রঞ্জনদা! নস্টালজিয়ার জন্য কৃতার্থ থাকলাম দাদা!!
  • Ranjan Roy | ২২ মে ২০২৫ ২৩:২৮731582
  • আমি আপ্লুত। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৩ মে ২০২৫ ১০:৫৮731588
  • অসাধারণ! পটকথা অউর সমবাদ।জীবনের খন্ড চিত্র ।
     
    লেজার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা দেখেছি স্টেট ব্যাংক ফ্রাংক ফুরটে। লেটার অফ ক্রেডিট আর ডকুমেন্ট বাড়ি নিয়ে যেতেন মিলিয়ে চেক করতে!  জানা যেতে হুলুস্থুল ু ব্যাপার।
     
    আজকের ডিজিটাল যুগে কেউ বিশ্বাস করবেন না ১৯৮২ বা ৮৩ সালে মেরিল লিনচ কাস্টমার স্টেট মেনট পাঠানোর সময় সংখ্যার দুটো ঘরের গোলমাল করে ফেলে । ৪০০০০ টা ৪০০০০০ ! ভুল ধরা পড়ার আগে কিছু লোক লাভের গুড খেয়ে নেয়! 
     
    দুটি ব্যাংক সাপ্তাহিক লোন স্টেট মেনটে বিরাট গলতি করে ফেলার জন্য নিউ ইয়র্ক ফেড শংকিত হয়ে পলিসি রেট বাডাতে যায় প্রায়! সেটাও ওই দু ঘর সরে যাবার জন্য !
  • Ranjan Roy | ২৩ মে ২০২৫ ১২:২৫731589
  • হীরেনদা,
    এটা জানার পর আমি আজ মনে মনে 'হকলা' সাহুকে মাফ করে দিলাম।  ছত্তিশগড়ীতে তোতলানো হল হকলানা। 
    তবে ওর অন্য কীর্তি আছে যেগুলো মাফ করা উচিত না।
     তাই ওকে ব্যাংকের বাইরে গিয়ে  নিজের গ্রামে ফার্টিলাইজার ও পেস্টিসাইডের দোকান খুলতে হল। 
    তবে তার আগে ওর বৌ জনপদ পঞ্চায়েতের অধ্যক্ষ হলেন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন