এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ১২

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ মে ২০২৪ | ৩৬৬ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২
    ঈশু বলে, কিন্তু তুই এতোসব জানলি কী করে?”

    সুমন বলে, “প্রশ্নটা সংগত। আমি সাধারণ বাংলা মিডিয়া‌ম স্কুলে পড়েছি। ইংরেজি‌তে নড়বড়ে। অংকে দূর্বল। জয়েন্ট ক্লিয়ার করতে না পেরে ডিপ্লোমা পড়ে ডিগ্ৰি করতে এসেছি। তোরা সোনার টুকরো, সরাসরি ডিগ্ৰি পড়ছি‌স। তোদের থেকে শিক্ষাজীবনে আমি চার বছর পিছিয়ে। তবে সেজন‍্য বিশেষ আক্ষেপ বা হীনমন্যতা নেই। কারণ আমি বুঝি সবার যোগ‍্য‌তা এক নয়। আমি পার্টটাইমে পড়ি, তোদের থেকে বয়সে তিন চার বছর বড়, তাও যে তোরা আমায় প্র‍্যাকটিসে খবর দিস, তাতেই আমি আপ্লুত।”

    তুলি চোখ পাকিয়ে বলে, “যাত্রার মতো মেলোড্রামাটিক ডায়ালগ ঝাড়ছিস কেন - সোনার টুকরো? আপ্লুত? ‌দ‍্যাখ, বন্ধুদের মধ‍্যে এসব শুনতে ভালো লাগে না। তোর অন‍্যের পেছনে লাগা, ক‍্যাম্পফায়ারে প‍্যারোডি, হাজির ইয়ার্কি এসব আমরা এনজয় করি, তাই তোকে ডাকি। এমন প‍্যানপ‍্যান করলে আর ডাকবো না।”
     
    - “এটাই কায়দা করে শুনতে চাইছি‌লাম।”
     
    - “কী?” 

    - এই যে, তোরা আমার কোম্পানি এনজয় করিস।”

    - “করিই তো, তা বলে সেটা বলিয়ে ছাড়বি? পাজি কোথাকার। চাস তো ঢ‍্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করি?”

    তুলির বলার ধরণে চুনি, ঈশু‌র সাথে সুমন‌ও হাসে। এমন সব কথার পিঠে কথায় কখনো কিছু অজান্তে বেরিয়ে আসে। কখনো জমে ওঠা কিছু মিলিয়ে‌ও যায়।

    সুমন বলে, “বারো ক্লাস অবধি পড়াশোনায়  ফিজিক্স আর বায়োলজি ছাড়া আর কোনো বিষয়ে তেমন আনন্দ পাই নি। কিন্তু ডিপ্লোমা পড়তে গিয়ে, ফলিত বিষয় বলে, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং খুব এনজয় করেছি। পরীক্ষা পাশের জন‍্য নয়, ভালো‌বেসে পড়েছি বলে ডিপ্লোমা থার্ড ইয়ারে আমার GPA 4.8/5 ছিল সেবার পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ‌টা পলিটেকনিকের মধ‍্যে হায়েস্ট। হয়তো আমি একা নয়, আরো কেউ পেয়েছি‌ল। প্রফুল্ল‌চন্দ্র পলিটেকনিকে আমাদের ব‍্যাচের ফাইনালে আমি ছিলাম দ্বিতীয় স্থানে। প্রথমে প্রবীর। ও খুব স্টুডিয়াস। তবে কাউকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা‌র মনোভাব‌ আমার নেই। পাঠ‍্য বিষয়ের বাইরে আমায় যা টানে না, তা নিয়ে লেগে থেকে নিজেকে ইন্টেলেকচুয়াল প্রতিপন্ন করার কোনো তাড়না‌ও আমার নেই।”

    “যেমন ধর একজন বলেছিল, ও নাকি এক বছর ধরে আদাজল খেয়ে জেমস জয়েসের ফিনিগানস ওয়েক পড়েছে। সাহিত্য‌বোদ্ধাদের কাছে ওটি ধ্রুপদী ইউরোপিয়ান সাহিত্যে‌ দূর্বোধ‍্য‌তম রচনার তকমা ভুক্ত। জয়েস তাঁর সাহিত্য‌জীবনের ঐ শেষ পরীক্ষামূলক কীর্তি‌টি সতেরো বছর সময় নিয়ে সম্পন্ন করেছি‌লেন। সেটা এক বছরে পড়ে রস উপলব্ধি করতে পারা‌ ধ্রুপদী পাঠক হিসেবে বিশেষ এ্যাচিভমেন্ট। আমার পক্ষে অতো চেষ্টা করে অমন কঠিন ব‌ই পড়া অসম্ভব। কিন্তু মানব চরিত্রে‌র প্রবৃত্তি, প্রবণতা, বিচ‍্যূতি এসব নিয়ে আগ্ৰহ ছিল। তবে তার জন‍্যেও লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করার সময় বা ধৈর্য্য নেই।”

    - “তাহলে এতো সব জানলি কি করে?” আবার বলে ঈশু।

    - “এ ব‍্যাপারে আমি একটু ভাগ‍্যবান। আমাদের পাড়া‌য় দীপ ডাক্তার ছিলেন আর্মি মেডিক্যাল কোরে। আসাম অপারেশনে IED বিস্ফোরণে আহত হয়ে বাঁ পা একটু টেনে টেনে হাঁটেন। স্বেচ্ছায় অবসর নিতে চাইলে আর্মি ছেড়ে দেয়। পার্মানেন্ট কমিশনে ২২ বছর কাজ করেছেন বলে পেনশন পান। পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। অবিবাহিত। পয়সার‌ খাঁ‌ই নেই। আমাদের পাড়ায় GP হিসেবে ছোট একটা চেম্বার খোলেন। রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হলে খবর দিলে আসেন। খুব বেশী পেশেন্ট হয় না। একটু আড্ডা‌বাজ টাইপ। তাই রোগী না থাকলে অনেকবার রাতের দিকে ওনার চেম্বারে গিয়ে আড্ডা দিয়েছি। উনি হয়তো আমায় পছন্দ করতেন। মানবচরিত্রের বৈশিষ্ট্য, বিচ‍্যূতি, যৌনতা এসব নিয়ে আমার প্রশ্ন শুনে দীপদা একদিন বললেন, তোমার নানা কৌতূহল মেটানোর সাধ‍্য আমার নেই। তবে আমি তোমায় একজনের কাছে নিয়ে যেতে পারি। তিনি হয়তো তোমার এসব জিজ্ঞাসা‌র সঠিক জবাব দিতে পারবেন।”

    “কে তিনি?” বলে চুনি।

    “মনোবৈজ্ঞানিক‍ ডঃ সুশীল মজুমদার, দীপদার বিশেষ পরিচিত। একদিন আমায় ওনার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বললেন, সুশীলদা, এ হচ্ছে সুমন, যাদবপুরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ওর মানব চরিত্র, কমপ্লেক্স এসব নিয়ে খুব কৌতূহল। আমায় নানা প্রশ্ন করে। আমি অনেককিছু‌র ঠিকঠাক জবাব দিতে পারি না। আপনি তো আজকাল বাড়িতে‌ই থাকেন প্রায়। যদি মাঝেমধ্যে ওকে আসতে এ্যালাও করেন, ওর কিছু কৌতূহল নিরসন করেন, ওর ভালো লাগবে।”

    “সুশীল‌বাবুর তখন সত্তরের কাছাকাছি বয়স। বছর তিনেক আগে পত্নী বিয়োগ হয়েছে। একমাত্র পুত্র বিদেশে সেটলড্। একা থাকেন। রাতদিনের ডোমেস্টিক হেল্প আছে। এই বয়সেও মাথা শার্প। নিয়মিত পড়াশোনা করেন। মনোবিজ্ঞানের ওপর দেশ বিদেশের জার্নাল আনান। কখনো আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা করতে যান। ছাত্রাবস্থায় গিরিন্দ্রশেখর বসুর সাথে অনেকবার দেখা করছেন‌। সুশীল বাবুর কাছেই শুনেছি গিরিন্দ্র‌শেখরের ফ্রয়েডের ইডিপাস কমপ্লেক্স তত্বে আস্থা ছিলনা তাও প্রাচ‍্যের‍ এক মনোবৈজ্ঞানিক গিরিন্দ্র‌শেখরের সাথে ফ্রয়েডের দীর্ঘদিন ধরে চিঠিতে নানা ভাবনার আদানপ্রদান হয়েছে।”

    “দীপদার রেফারেন্স তো ছিল‌ই, হয়তো সুশীলবাবুর‌ও আমাকে কোনো কারণে ভালো লেগেছিল। তাই সস্নেহে বলেছিলেন, বেশ তো আসবে। আমার পক্ষে যতটা সম্ভব চেষ্টা করবো তোমার কৌতূহল নিরসনের।”

    “কী বিনয়ী ভাব! পেশাগত জীবনের প্রথমে বছর দশেক রাঁচিতে বাকিটা আগ্ৰার ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ এ্যান্ড হসপিটালে কাজ করেছেন, শিক্ষকতা করেছেন। বিদেশে‌র জার্নালে পেপার পাঠিয়েছেন। এমন মানুষ আমায় বলছেন - চেষ্টা করবো। সেদিন মনে হয়েছিল, প্রকৃত পণ্ডিত বা বিসমিল্লাহ খানের মতো ঐশী শিল্পী‌র ভূষণ - বিনয়। যেমন বলেছিলেন নিউটন - আমার জ্ঞান তো সমূদ্রসৈকতের একটি বালুকণা সদৃশ।”

    “আমি সুশীল‌বাবুকে বলেছিলাম, স‍্যার আমার তো দিনে কাজ, রাতে ক্লাস নিয়ে সপ্তাহে পাঁচদিন ব‍্যস্ততায় কেটে যায়। যদি আমি মাসে বার দুয়েক শনিবার সন্ধ্যায় আসি, আপনার সময় হবে?  
     
    উনি বলেছিলেন, এসো, কোনো অসুবিধা নেই। 
     
    পরবর্তী এক বছর, ছেলের কাছে বিদেশ চলে যাওয়ার আগে অবধি অনেকবার ওনার কাছে গেছি। আলোচনা নানা গূঢ় দিশায় চলে গেছে। প্রবীণ মানুষ‌টি একটি বছর বাইশের যুবককে অধ‍্যাপক‌সূলভ নির্লিপ্ত‌তায় মানবমনের নানা জটিলতা, অস্বাভাবিক‌তা, যৌন‍্যতা, বিকৃতি প্রসঙ্গে নির্দ্বিধায় আলোচনা করেছেন। আমার নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। আজ যে তোদের সাথে  এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারলাম তা সম্ভব হয়েছে সুশীল‌বাবুর ডিডাক্টিভ মেথডে বক্তব্য শুনে, কিছু পড়ে, নিজের মনে ভেবে।”

     তবু একে অপরের পরিপূরক

    "এতক্ষণের আলোচনা‌য় আমরা বুঝেছি ব‍্যতিক্রম‌ ব‍্যতীত পুরুষ প্রকৃতি‌গতভাবে স্বভাবে বহুগামী। তার কামবোধ বেশি। নিয়ন্ত্রণ কম। অর্থাৎ সে একটা জলের কলসি। বিড়ের ওপর না থাকলে সামান্য ছোঁয়ায় গড়িয়ে মেঝে জলময় হবে। বিড়েটা হচ্ছে সামাজিক অনুশাসন, ব‍্যক্তিগত নীতিবোধের লাগাম। তুলনায় নারী হচ্ছে জলচৌকিতে রাখা চালের টিন। সহজে ভারসাম্য নষ্ট হয় না। টিন থেকে খাবলা মেরে কেউ চাল তুলে নিতে পারে। ধাক্কা মেরে ফেলে‌ও দিতে পারে। কিন্তু নিজে থেকে তা সচরাচর উল্টে পড়ে না। তবে হ‍্যাঁ, মরচে ধরে ঝরঝরে হয়ে গেলে, তখন সামান‍্য ঠোক্কর খেয়ে‌ও ফুটো হয়ে চাল গড়িয়ে পড়তে পারে।" 

    "পূরাণে আছে সৃষ্টি‌কর্তা ব্রহ্মা‌ কন‍্যা সরস্বতীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাতে উপগত হন। তাই লয়ের দেবতা শিব তাঁকে অজাচারের জন‍্য বিনাশ করেন। তখন আবার ব্রহ্মাপত্নী গায়ত্রী ও কন‍্যা সরস্বতী শিবকে বলেন, হাজার হোক স্বামী, পিতা, ভুল করে ফেলেছে, এবারের মতো মাফ করে দাও। শিব ব্রহ্মা‌কে বাঁচিয়ে তুলে ধমকে দেন, খবরদার, এরকম ভুল যেন আর না হয়। কিন্তু ভুল তো যা হবার তা হয়েই গেছে। ব্রহ্মা‌র শরীর থেকে উদ্ভূত আদিপুরুষ মনু ও আদিনারী শতরূপা ভাইবোন সদৃশ হয়েও স্বামী স্ত্রী রূপে যৌনমিলনের ফলে সৃষ্টি করেন মানবজাতি। লোকমতে তাই মনুর সন্তান‌‌ই মানুষ।"

    "ভাগবত বলছে যৌনক্রিয়া একমাত্র বংশরক্ষার প্রয়োজনেই করা উচিত। আনন্দ উপভোগের নিমিত্তে করলে তা ঈশ্বরে লীন হবার পথে অন্তরায়। যুবতী নারী অগ্নি-স্বরূপা আর পুরুষ ঘৃত-সম ফলে পিতা ও যুবতী কন‍্যার‌ও একান্তে নৈকট‍্য কাম‍্য নয়। তাতে অগ্নিকান্ডের সম্ভাবনা। তাই টিকিধারী সমাজপতিদের মতে নারী‌ হচ্ছে নরকের দ্বার‌। সেই যত নষ্টের মূল।"

    "পুরুষ নিজের আসক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলে‌ সেটা দোষের কিছু নয়। যেন ডায়াবেটিসের রোগী গবগব করে কমলাভোগ খেয়ে মিষ্টির দোকানীকে‌ই চোখ রাঙাচ্ছে, তুমি কেন চোখের সামনে শোকেসে সাজিয়ে রেখেছো হে? তথাকথিত মহান মানব সভ‍্যতা এহেন নানা একপেশে সামাজিক অনুশাসন ও নড়বড়ে নীতিবোধ নির্ভর করে বহমান। এই কারণেই নাস্তিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা‌য় পড়েছি - মনু নামক ব‍্যক্তি‌টি ছিলেন ওনার দু চক্ষের বালাই‌। এমন সামাজিক পরিস্থিতি‌তেই নিয়ত নৈকট্যে বসবাস নারী পুরুষের। তাই ঘটে যায় কিছু সমাজ নির্ধারিত নিয়ম হতে বিচ‍্যূতি। তবে ব‍্যতিক্রম‌ই নিয়মের পরিচায়ক। মনে রাখতে হবে নারী ছাড়া জীবনচক্র অসম্ভব। তেমনি পুরুষ ছাড়াও সৃষ্টি অচল।"

    চুনি বলে, "তুই  তো কথক ঠাকুরের মতো বলছি‌স রে। ঐসব ভাগবত, পুরাণ-টুরাণ পড়েছি‌স নাকি?"

    সুমন বলে, "না রে না, অতো নিষ্ঠা  আমার নেই। এখান ওখান থেকে খামচামারা ধারণা। তার থেকে যতটুকু এই আলোচনা প্রসঙ্গে মনে পড়ছে বলছি। আমার কথা‌র ভিত্তি‌তে কাউকে যেন কিছু বলতে যাসনি। চেপে ধরলে মুশকিলে পড়বি। তুই‌‌ও যদি আমায় কী পুরাণ, কোন পর্ব এসব জানতে চাস আমি স্রেফ উদাস হয়ে যাবো। তবে পুরান, মহাভারত কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং। নানান বিচিত্র ঘটনা ও অজাচারের ছড়াছড়ি। কোথায় লাগে হলিউড, বলিউড ট‍্যাবলয়েড।"

    পুরুষের বাঞ্ছিত আচরণ 

    ঈশু বলে, "এবার মনে হয় আমি বুঝতে পারছি জেঠু, তুই কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা, পৌরাণিক আখ‍্যান, নাটকের চরিত্র, জটিল তত্ত্ব, সার্ভের রেফারেন্স দিয়ে কী প্রতিপন্ন করতে চাইছি‌স। অদম‍্য যৌনতাড়না সম্পন্ন পুরুষ‌ আসলে প্রবৃদ্ধির দাস। তাই অতি নিকট সম্পর্কে‌ও সে দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। সেটা সামাজিক দৃষ্টিতে বিকার হলেও প্রকৃতি‌ই তার মধ‍্যে নানা পদস্খলনের লাইসেন্স দিয়ে রেখেছেন। তাই তার সমস্ত  বিচ‍্যূতি‌ নারী‌র ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখা উচিত, তাই তো?"

    সুমন বলে, "যদি আবার কিলিয়ে কাঁঠাল না পাকাস, তাহলে বলবো, ব‍্যাপার‌টা তুই মোটামুটি ঠিকই বুঝেছি‌স। আমি‌ও বুঝলাম তুই পড়াশোনা‌য় কেন এতো ভালো। কী সুন্দর তুই আমার কথার পাহাড় থেকে সারমর্মটা বলে দিলি। অর্থাৎ যৌনতা অতি আদিম প্রবৃত্তি যার উদ্ভব হয়েছে মানুষের যুক্তিবোধ, নীতিবোধ দাঁনা বাঁধার বহু আগে। যে Libido শব্দটির অর্থ কামেচ্ছা‍ - যেটি একটি ইংরেজি শব্দ হিসেবে ১৯০৯ সালে ফ্রয়েড তাঁর তত্ত্ব ব‍্যাখ‍্যায় প্রথম ব‍্যবহার করেন, সেটি তিনি ধার করেছিলেন ল‍্যাটিন শব্দ Lubido থেকে, যার অর্থ lust বা desire.  ল‍্যাটিনে কিন্তু শব্দটি‌র অস্তিত্ব কয়েক হাজার বছর ধরে আছে।" 

    "প্রাকৃতিক নিয়মে পুরুষের বিচ‍্যূতি হ‌ওয়ায় সম্ভাবনা বেশি। এ পুরুষের অদৃষ্টলিখন ও নারী‌র অভিশাপ। তবে পুরুষের সব বিচ‍্যূতি তো আর প্রকৃতি, প্রবৃত্তি, নিয়তির দোহাই দিয়ে মাফ করা যায় না। উচিত‌ও নয়। তাই সমাজে থাকতে  হলে পুরুষকে‌ও সংযমের অনুশীলন করতে‌ হবে। একটা গোলা পায়রাও কামেচ্ছা জাগলে ঘাড়ের পালক ফুলিয়ে মেয়ে পায়রার চারপাশে ঘুরঘুর করে তার মনোবাঞ্ছা জানায়। লেডি যদি ফুরুর করে উড়ে না পালায় তাহলে তা মৌনং সম্মতি। তবেই তারা মিলিত হয়।"
     
    "তবে দুঃখের এবং লজ্জার বিষয় এই যে, প্রতিটি পুরুষ পায়রা যা বোঝে, অনেক পুরুষমানুষ তা পালন করতে পারে না। পুরুষের বিচ‍্যূতির শাস্তি অবশ্যই হ‌ওয়া উচিত। শুধু বিচ‍্যূতি‌র পশ্চাৎপটটি মনে রাখতে পারলে তা হয়তো  অত‍্যাচারিত নারীর অন্তরে‌র জ্বালা কিছুটা প্রশমিত করতে পারে। তাই এতো ফ‍্যানালাম।  ব‍্যতিক্রম বাদে প্রাকৃতিক নিয়মে পুরুষের তুলনায় নারী শারীরিক ক্ষমতায় অপেক্ষা‌কৃত দূর্বল। তাই নারী‌র ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে জোরপূর্বক যৌনমিলন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এটা পৌরুষের‌ অপমান। যারা এটা বোঝে না তারা কৃমিকীটের‌‌ও অধম।"

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২
  • ব্লগ | ২৩ মে ২০২৪ | ৩৬৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Animesh Chakraborty | ২৫ মে ২০২৪ ২০:১৩532319
  • সত্যিই সমরেশ বাবু, আপনার লেখার শেষ কয়েকটি লাইন একেবারে মনের কোনো অব্যক্ত কথা যেনো মনকে নাড়া দিয়ে দিল। এইভাবে কজন আর তার মনের কথাটা এতো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে সেটা আমার জানা নেই। সেইজন্যই আপনার লেখায় অনেক না বোলতে পারা কথা পোড়ে মনকে নাড়া দিয়ে যায়। অসংখ্য ধন্যবাদ।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৭ মে ২০২৪ ২১:০৪532402
  • অনিমেষ‌বাবু 
     
    সপাট মন্তব্যের জন‍্য ধন্যবাদ। 
     
    এই লেখাটি আমি খেটে, খুব প‍্যাশনেটলি লিখেছি‌লাম। এতে মানবজীবনের কিছু বৈশিষ্ট্য, প্রবণতা, বিচ‍্যূতি নিয়ে এ্যাকাডেমিক নির্লিপ্ত‌তায় আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই এসব প্রসঙ্গে আলোচনা করতে অস্বস্তি‌বোধ করে। তাই হয়তো আমার অকপট এ্যাপ্রোচ আপনার ভালো লেগেছে।
     
    ভালো থাকবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন