এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ৯

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ মে ২০২৪ | ৩৪৭ বার পঠিত
  • ডবল টোটকা

    জল খাওয়া‌র পর চুনি ওদের একটা করে ছোট এলাচ দেয়। মুখশুদ্ধি হিসেবে সাথে রাখে ও। সুমন একটা সিগারেট ধরায়। চিন্তা‌র গোঁড়ায় একটু ধোঁয়া দিতে হবে। মনযোগী শ্রোতার উৎসাহের হাওয়ায় ঘুড়ির সুতো তো ছেড়ে যাচ্ছে, গোটাতে পারবে তো? না হলে জট পাকিয়ে একশা হবে। এরপর তো আরো স্পর্শ‌কাতর দিকে যাবে আলোচনা। ওরা নিতে পারবে তো? তবে ভরসা এটাই, এখনো অবধি ওরা শুনেছে নির্দ্বিধায়, কোনোরকম অস্বস্তি প্রকাশ না করে। তাই এমন খোলামেলা আলোচনা  সম্ভব হচ্ছে। ও আবার শুরু করে।

    - "পুরুষদের ব‍্যাপার‌টা সহজে মিটে যাওয়ার পর প্রকৃতি ম‍্যাডাম‌কে ভাবতে হোলো অর্গাজমের তৃপ্তি তো সাময়িক। নারীদের এ ছাড়া আরো কিছু 'পাওয়া' দরকার যাতে তারা গর্ভধারণ ও প্রসব যন্ত্রণা‌র কষ্ট সহ‍্য করে‌ও জীবন-চক্র বজায় রাখার  জন‍্য যৌনসঙ্গমে উৎসাহিত হয়। ম‍্যাডাম তাই মাথা খাটিয়ে বার করলেন মাতৃত্ব নামক এক আবেগ যার আকর্ষণ মাদকাসক্তি‌র থেকেও অপ্রতিরোধ্য। শাবকটির সুস্থ, সবল হয়ে বেড়ে ওঠার দরকার যাতে সেও এই চক্রগতি বজায় রাখতে পারে। ফলে মাতৃত্বের সাথে যোগানো হোলো বাৎসল‍্যরস বা সন্তান স্নেহ। এই দুই টোটকা সহযোগে তৈরী হোলো এক কমপ্লিট প‍্যাকেজ। পশুদের ক্ষেত্রে কাজ ক‍রবে প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি। মানুষ যেহেতু উন্নত প্রজাতির প্রাণী তাই তার ক্ষেত্রে আরো কিছু উপাদান যোগালো মানবসভ‍্যতা। এই প‍্যাকেজে সাঁটা হোলো মহান মাতৃত্বের মহিমার লেবেল। এবার নারী বহু কষ্ট সহ‍্য করতে প্রস্তুত। ক্ষেত্রবিশেষে নারী এর জন‍্য অর্গাজমের মতো চরম‌ আনন্দ ত‍্যাগ করতে‌ও পিছপা হবে না যদি তা গর্ভস্থ ভ্রুণের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়।"

    "মানুষ রপ্ত করলো জন্মনিয়ন্ত্রণের কৌশল‌। পশুদের তা জানা নেই। ফলে সদ‍্যজাত সন্তান একটু বড় না হ‌ওয়া অবধি পুনরায় গর্ভবতী হয়ে পড়লে তার দেখভাল করা অসুবিধা। তাই সদ‍্য পশু-মায়ের যৌনতৃষ্ণা প্রকৃতির নিয়মে কিছুদিন কমে যায়। পুরুষের কিন্তু এসব দায় নেই। প্রকৃতি‌তে প্রাণীদের মধ‍্যে নারীর মাতৃত্বের মতো পুরুষের পিতৃত্ব বা বাৎসল‍্য বোধ প্রবল নয়। তবে ব‍্যতিক্রম‌‌ও আছে। তাই মা এম্পেরর পেঙ্গুইন ডিম পেড়ে চলে যায় সমূদ্রে। আর পু্রুষ পেঙ্গুইন দুপায়ের ফাঁকে সেই ডিম ধরে রেখে পেটের উত্তাপে বাচ্চা ফোটায়। এজন‍্য মেরু অঞ্চলের কঠিন শীতেও দীর্ঘ সময় ভাবী পিতার দল কয়েকমাস কিছু না খেয়ে, শরীরের জমা চর্বি খরচ করে, কয়েক পরতের গোলাকার ফর্মেশনে গায়ে গায়ে সেঁটে দাঁড়িয়ে থাকে - যা আর্কটিক ফিল্ড বায়োলজিস্টদের কাছে Penguin Huddle হিসেবে সুপরিচিত।"


     
    "ঐ জমায়েতে কেন্দ্রের দিকে যারা থাকে তাদের তুলনামূলক‌ভাবে কম ঠাণ্ডা লাগে। কিন্তু যারা একদম বাইরের লেয়ারে থাকে - ঘন্টায় মাত্র ৩০ কিমি বেগে হাওয়া ব‌ইলেও তাদের হয়তো মাইনাস ৬০ ডিগ্ৰি সেলসিয়াস উ‌ইন্ড চিল ফ‍্যাক্টর ঝেলতে হয়। ঐ অবস্থায় বেশীক্ষণ থাকলে - শীত সহ‍্য করার অনন্য ক্ষমতা সত্ত্বেও - এম্পেরর পেঙ্গুইনের‌ও হালত খাস্তা হয়ে যেতে পারে। তাই ক্রমান্বয়ে বাইরের সদস‍্য ভেতরে চলে যায় - ভেতরের সদস‍্য বাইরে চলে আসে।"

    "সূদীর্ঘ মাস তিনেক ধরে - চব্বিশ ঘন্টা - কণ্ঠ নিঃসৃত কোনো আওয়াজের মাধ‍্যমে সংযোগ না করে‌ই কীভাবে ওরা মিলিটারী ডিসিপ্লিনে এমন স্থানবদলের পালা সুচারুভাবে চালিয়ে যায় - জীববিজ্ঞানীদের কাছে তা এক বিষ্ময়। ওরা বোঝে Collectively we can survive - Individually we will perish. তাই তারা সম্মিলিতভাবে Harsh Arctic Winter মোকাবেলা করে। ডিম ফুটে ছেনু পেঙ্গুইন হ‌ওয়ার পর দেখা যায় পিতা পেঙ্গুইনের ওজন বেশ কয়েক পাউন্ড কমে গেছে।"

    "সিংহ‌ও গোষ্ঠী‌বদ্ধ প্রাণী। কিন্তু পুরুষ সিংহের  মধ‍্যে এহেন বাৎসল‍্য‌বোধ দেখা যায় না। বরং কখোনো দলে জন্মানো পুরুষ শাবককে সে মেরেও ফেলে যাতে সে বড় হয়ে তার সঙ্গিনীর দিকে নজর না দেয় বা দলপতি হবার চেষ্টা না করে। তা বলে সে কিন্তু কন‍্যা শাবককে মারে না। প্রাণীদের মধ‍্যে যেহেতু যৌবন দ্রুত আসে ফলে কয়েক বছরের মধ‍্যে কন‍্যাটি যুবতী হয়ে তার সঙ্গিনী হতে পারে। প্রাণীদের মধ‍্যে পিতা-কন‍্যা, পুত্র-মাতা বা ভাই-বোনের মধ‍্যে যৌনসম্পর্ক খুব স্বাভাবিক ব‍্যাপার। Incest বা অজাচার বা অতি নিকট রক্তসম্পর্কে‌র মধ‍্যে যৌনমিলন বর্জনীয় এমন ধারণার উদ্ভব হয় সভ‍্য মনুষ্য সমাজে।"

    ইংকা সাম্রাজ্যের পতন

    "তবে মানবসভ‍্যতার প্রাকলগ্নে কিন্তু বংশরক্ষার জন‍্য গোষ্ঠীর মধ‍্যে যৌনমিলন এবং তা অতি নিকট সম্পর্কে‌র মধ‍্যে কাম‍্য বলে‌ঈ বিবেচিত হতো। কারণ তখন ধারণা ছিল তাতে রক্তের শুদ্ধতা বজায় থাকে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আন্দাজ ১১০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে চারশো বছর ধরে যে ইংকা সাম্রাজ্যের প্রসার হয়েছিল তা ছিল বর্তমান দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর উত্তরে ইকোয়েডর, দক্ষিণে চিলি ও পূবে বলিভিয়ার কিছুটা অংশ নিয়ে দীর্ঘ এলাকা‌য় বিস্তৃত। মূদ্রা, কেনাবেচা, লোহা, লিখিত ভাষার ব‍্যবহার ছাড়াই ইংকা সাম্রাজ্য ছিল সুখে শান্তিতে সমৃদ্ধ। ইংকা রাজবংশের রীতি ছিল সম্রাটের সহোদরা ভগিনী‌ই হবেন তাঁর খাসরাণী এবং তাঁদের প্রথম পুত্রসন্তান‌ হবে পরবর্তী রাজা।" 

    "হুয়াইনা কাপাক ছিলেন ইংকা বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা। নিজের বোনের সাথে বৈধ বিবাহজাত জ‍্যেষ্ঠ পুত্র হুয়াসকার হবেন পরবর্তী রাজা। কিন্তু কিন্তু হুয়াইনা কাপাক করে বসেন একটি ইংকা রীতিবিরূদ্ধ কাজ। কাপাক উত্তরে ইকোয়েডরের কুইটো জয় করলে সে দেশের রাজা মনের দুঃখে‌ মারা যান। সহানুভূতি‌র বশবর্তী হয়ে কাপাক বিয়ে করলেন তাঁর সুন্দরী কন‍্যাকে। তাদের পুত্রের নাম আতাহুয়ালপা। তাতে কোনো দোষ নেই। তখনকার দিনে সব দেশের রাজা বাদশা‌র মতো ইংকারাজের‌ও বৈধ খাসরাণী, মানে নিজের বোন ছাড়া‌ও আরো অনেক রাণী, শয‍্যাসঙ্গিনী, সন্তান থাকতে পারতো। কিন্তু রাজা হ‌ওয়ার কথা ছিল হুয়াসকারের।" 

    "কিন্তু কাপাক কুইটো কন‍্যার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে দক্ষিণে পেরুতে তাঁর রাজধানী কুজকো ছেড়ে উত্তরে কুইটো থেকে‌ই আমৃত্যু চালিয়ে গেলেন শাসনকর্ম। মারা যাওয়ার আগে  কাপাক ইংকা বংশের রীতি লঙ্ঘন করে হুয়াসকারকে দক্ষিণাংশের ও আতাহুয়ালপাকে উত্তরাংশের রাজা ঘোষণা করে গেলেন। প্রোথিত হোলো ধ্বংসের বীজ। দু ভাই যখন খেয়োখেয়ি করে শক্তি‌ক্ষয় করতে রত  তখন সুদূর স্পেন থেকে ১৫৩৩ সালে স্প‍্যানিশ অভিযাত্রী ফ্র‍্যানসিসকো পিজারো তৃতীয় বার এসে হাজির হলেন বহুশ্রুত ইংকা সাম্রাজ্যের অপরিমেয় স্বর্ণসম্পদ হাতানোর লোভে। মাত্র ১৬৮ জন সৈন‍্য নিয়ে কাক্‌সামালকা এসে বিশাল ইংকা সৈন‍্যবাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও প্রথমে কৌশলে ইংকা নরেশ আতাহুয়ালপাকে বন্দী ও পরে হত‍্যা করলেন। স্বয়ং ইংকা নরেশের মৃত্যুর পর মুষ্টিমেয় দুর্ধর্ষ, দুঃসাহসী স্প‍্যানিশ সৈন‍্যদের কামান, বন্দুক ও এযাবৎ না দেখা ঘোড়া‌ নামক প্রাণীর দাপটে ছত্রভঙ্গ, কচুকাটা হয়ে গেল হাজার পঞ্চাশেক ইংকা সৈন‍্য। ওদিকে পিজারো আসার আগেই সৎভাই আতাহুয়ালপার কাছে হেরে গিয়ে কুজকো‌তে বন্দী ছিলেন হুয়াসকার। ইংকা রাজপুরোহিত ভিলিয়াক ভ্‌মু  ষড়যন্ত্র করে হুয়াসকারকে  হত‍্যা করলো যাতে দু ভাই মারা গেলে সে বসতে পারে সিংহাসনে ইংকা‌বংশের বৈধ প্রতিভূ হয়ে। সে গুড়েও হোলো বালি। ইউরোপীয় শক্তি‌র কাছে পরাজিত হয়ে শেষ হয়ে গেল ইংকা সাম্রাজ্য।"

    ঈশু বলে, "ইংকা সাম্রাজ্যের কথা শুনেছিলাম কিন্তু তার পতনের কারণ যে এটা তা জানা ছিল না।"

    সুমন বলে, "আমি‌ও জানতাম না। কিছুদিন আগে প্রেমেনদা‌র একটা অসাধারণ ব‌ই পড়লাম - “সূর্য কাঁদলে সোনা” - সাড়ে চারশো পাতার ব‌ই ঝড়ের গতিতে শেষ হয়ে গেল। তাতেই এসব জানলাম। অজাচার প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনা‌য় আসার আগে এটা ভূমিকা হিসেবে বললাম।"

    অজাচার প্রসঙ্গে

    সুমন বলে, "বহুদিন অবধি নিকট রক্তসম্পর্কে‌র মধ‍্যে যৌনমিলন বা inbreeding এর ফলে সম্ভাব‍্য জিনগত জটিলতা‌র বৈজ্ঞানিক ধারণা‌ ছিল না। জেনেটিক বিজ্ঞানের উদ্ভব‌ও তো হালের ব‍্যাপার। তবু হয়তো কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তি‌তে সমাজে নিকট রক্তসম্পর্কের মধ‍্যে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু প্রাচীনকালের অজাচারের প্রভাব হয়তো মানুষের অবচেতনে আজ‌ও রয়ে গেছে। ভারতের মতো দেশে যৌনতা একটা ট‍্যাবু এবং যৌনসম্পর্কের সুযোগ সুলভ নয়। অথচ প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাভাবিক‌ভাবেই বয়ঃসন্ধিতে হরমোনের প্রভাবে শরীরে, মনে আবিস্কারের উন্মাদনা জাগে।  তখন অনেক ক্ষেত্রে সে বয়েসে প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয় বাড়িতে, কারণ সেখানে সুযোগ বেশি। তা হয় সমবয়সী তুতো সম্পর্কে। মামাতো, মাসতুতো, খুড়তুতো, পিসতুতো ভাই বোনেদের মধ‍্যে। সম্পর্ক যত দুরের হবে মানসিক দ্বিধা‌ হবে তত কম।"

    "আমরা আগের আলোচনা‌য় বুঝেছি মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও অনেক ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির দাস। ক্ষিদে, ভয়, আত্মরক্ষার মতো যৌনতা‌ও একটি basic instinct বা প্রাথমিক প্রবৃত্তি। এর অমোঘ প্রভাব বয়স, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান কোনো কিছু‌র পরোয়া করে না। সবসময় যে তুতো ভাইবোনের মধ‍্যে প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা যৌনমিলনেই সম্পন্ন হবে তার কোনো মানে নেই। মিলন ছাড়াও নিছক আবিস্কার ও উষ্ণতা‌র আদানপ্রদান‌ও হতে পারে।"

    "একসময় প্রাচীন গ্ৰীসে বাৎসরিক নাট‍্য উৎসবে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে প্রতি বছর প্রথম পুরস্কার‌টি পেয়েছেন বিখ‍্যাত নাট‍্যকার সোফোক্লেস। তিনি একশো‌টির‌ও বেশি নাটক লিখলেও 'রাজা অয়দিপাউস' তাঁর সর্বাধিক পরিচিত নাটক। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে এটি পৃথিবীর নানা দেশে অভিনীত ও আলোচিত হয়ে আসছে। প্রাচীন গ্ৰীসের চিন্তাজগতে নিয়তিবাদ ও দৈববাণী‌র প্রবল প্রভাব ছিল। তাই ডেলফির মন্দিরে অনেকেই শুনতে পেতেন‌ নানা দৈববাণী। সেভাবেই প্রাচীন এথেন্সবাসী শুনেছি‌ল এক দৈববাণী - 'এথেন্সের সব থেকে জ্ঞানী ব‍্যক্তি হচ্ছেন সক্রেটিস'। যদিও একমাত্র সক্রেটিস‌ই অনুধাবন করেছিলেন সেই দৈববাণী‌র প্রতীকী মর্মার্থ - তিনি সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী, কারণ  তিনি‌ জানতেন যে তিনি অনেক কিছুই জানেন না।" 

    "তো সেই চূড়ান্ত বিয়োগান্তক নাটকে অয়দিপাউস তাঁর জন্মদাত্রী যোকাস্তাকে বিবাহ করে চার সন্তানের জন্ম দেন। তাদের একজন আন্তিগোনে, যাকে নিয়েও নাটক লিখেছেন সোফোক্লেস। কলকাতা‌য় নান্দীকার গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত‌র পরিচালনায় 'আন্তিগোনে' বহুবার অভিনীত হয়েছে। অবশ‍্য অয়দিপাউস তাঁর মাকে শয‍্যাসঙ্গিনী করেন অজান্তে, নিয়তির অভিশাপে, নিয়তি নির্ধারিত ঘটনাচক্রে। পরে যখন সত‍্য উন্মোচিত হয়, পুত্রের সাথে সহবাসের অপরাধবোধে আত্মহত‍্যা করেন যোকাস্তা। যা দেখার নয় তা দেখার পাপে মৃত যোকাস্তার ব্রোচের পিন দিয়ে নিজের দুটি চোখ‌ অন্ধ করে অয়দিপাউস, থিবেস ছেড়ে চলে যান কন‍্যা আন্তিগোনের হাত ধরে।"

    একটু চুপ করে যায় সুমন। ওরা তিনজনে‌ও চুপ করে যায় ঘটনা বর্ণনা‌র অভিঘাতে। সুমনের মনে পড়ে ক‍্যাসেটে শম্ভু মিত্রের কণ্ঠে শোনা  'অয়দিপাউসের গল্প'। প্রাচীন গ্ৰীসের নাট‍্যশৈলীতে যাত্রাদলের বিবেকের মতো ভূমিকা ছিল কোরাসের। নাটকের শুরুতে এবং মাঝে দৃশ‍্যান্তরে কয়েকজন এসে ঘটনাপ্রবাহের ধরতাইটা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে যেতে‌ন। শম্ভু মিত্র‌ও তাঁর একক অভিনয়ের মাঝে মাঝে ঘটনাচক্রের বর্ণনায় কোরাসের মতো নির্লিপ্ত ভাষ‍্যকার। তবে যখন অনুশীলিত কণ্ঠে অভিশপ্ত অয়দিপাউসের বিকারগ্ৰস্থ বিলাপ করেন, শুনে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। 

    ঈশু বলে, "অয়দিপাউসের কাহিনীটা জানতাম। কিন্তু তুই যেভাবে বিয়োগান্তক পরিণতি‌টা বললি খুব নাড়া দিলো। তোকে ইয়ারকী ফাজলামি মারতেই দেখেছি। কিন্তু এমন স্পর্শ‌কাতর প্রসঙ্গ যেভাবে তুই নিস্পৃহভাবে আলোচনা করলি, আজ তোকে‌ অন‍্যভাবে চিনলাম।"

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ মে ২০২৪ | ৩৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন