দাঁড়ান। খাওয়াদাওয়াটা ঠিক একটা ইয়ে, মানে ঠাট্টামশকরার ব্যাপার নয়। শুধুই রাজাবাদশার শখের গল্প?? কতরকমের হাড় হিম করা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে সে খবর রাখেন? পিলে চমকানো সাইকোলজিকাল ড্রামাবাজি? লোকায়ত ইতিহাসের একদর্শী অভিজ্ঞানের, ওই একটা কী জানি?
অ্যাকচুয়ালি, এইসব কুটিল প্রশ্ন করে আমি নিজেই হাঁদা বনে যাই। আপনাদের খুব অবাক করে দেব ভেবে ক-টা দারুণ অভিনব কিছু লিখলাম, আর আপনারাও দিস কাইন্ড অব তাচ্ছিল্যের ক্ষুরধার হাসি হেসে বলবেন, ও জিনিস তো আমি তিনবার খেইচি। সেবারে খেলাম মাসাইমারা ফরেস্ট লজে, আর তারপরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাকওয়াটার ক্রিকে আর লাস্ট টাইম নন্দীগ্রামে।
তা হোক। এত প্রাজ্ঞ লোকের ভিড়েও তো দু-একটা লোক থাকতেই পারেন যিনি আমায় ক্ষ্যামা-ঘেন্না করে আমার থেকেই একটা নতুন জিনিস জানবেন। ভক্তি ভরে বলবেন, ‘‘আপনার লেখাটা আমার লিভার ছুঁয়ে গেল।’’
সেটা মাঝে খুব উঠেছিল। পুরো রেস্তোরাঁটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঢুকবার আগে ঘড়ি, মোবাইল ফোন, গয়নাগাঁটি সব জমা দিতে হয়। একজন গাইড এসে ধরে ধরে নিকষ আধাঁরে আপনাদের বসিয়ে দেবে। খাওয়া? ও তো সেট মেনু। আপনার পছন্দ অপছন্দের কোনো সিনই নেই। তারপরে সেই ভরপেট অন্ধকারে আপনার আর কোনো ডিস্ট্রাকশন নেই। পাশের টেবিলে কে আছে সেটা তো দূরের কথা পাশের চেয়ারে কেউ থাকলে শুধু কথাতেই টের পাবেন।
তারপর নিঃসীম ফোকাসিত হয়ে কী খেলেন কিছুই না বুঝে একেবারে নির্বাণের আনন্দ পাবেন। হ্যাঁ, খচ্চা আছে।
আচ্ছা, আপনারা কি নিয়মিত মলিকিউলার গ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে খোঁজখবর রাখেন? মলিকিউলার গ্যাস্ট্রোনমি?
না, এ নিয়ে আমি বিশদ আলোচনা করতে গিয়ে আরও বোকা বনব না। আপনারা, যদি বা নিতান্তই দু-একজন এ বিষয়ে সামান্য উদাসীন থাকেন, তো নিজেরাই রিসার্চ ( উইকি দেখুন মশাই) করে জেনে নিন। মূল ব্যাপারটা হচ্ছে কেমিস্ট্রি। খুব ডাকসাইটে বিজ্ঞানীরা খেটেখুটে নানান এক্সপেরিমেন্ট করে ফরমুলা বার করেছেন। কিচেনে কী নেই? নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর থেকে থাউজেন্ড হর্সপাওয়ারের টেলিস্কোপ। লিকুইড নাইট্রোজেন থেকে পটাসিয়াম সায়ানাইড। দরকার পড়লে আগে আপনার এমআরআই বা অটোপ্সি করে তবেই খেতে দেবে। আর সেই রান্না যখন অদ্ভুত প্লেটে করে পিরিওডিক টেবিলের মতন সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করবে—তখন খাবেন কী মশাই, ভ্যালেন্সিতেই মরে যাবেন।
বা ধরুন, আপনার খুব ইচ্ছে করছে এমন একটা খাবারের দোকানে যাবেন যেখানে লোকে আপনাকে হুলিয়ে ইনসাল্ট করবে, প্রচুর গালমন্দ করবে। কেন? এত অবাক হওয়ার কী আছে? এমন তো আপনি চাইতেই পারেন—পয়সা যখন আপনিই দিচ্ছেন।
মানে ধরুন, সেজেগুজে দুজনায় গেলেন। চেয়ারে বসতে কিছু পরে প্রচণ্ড বিরক্ত মুখে ওয়েটার এসে নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করবে, ‘‘এইজ্জে হোঁদলকুতকুত বাবু, কী গিলতে চান শুনি?’’ আপনার সঙ্গিনী চিজ অমলেট খেতে চাইলে ম্যানেজার পর্যন্ত ছুটে এসে বলবে, ‘‘ওইত্তো, আগাগোড়া ছেষট্টি ইঞ্চি ইসের মতন চ্যাহারা, তার উপর আরও ক্যালোরি চাইতে লজ্জা করে না ইস্টুপিট?” কী? কী ভাবলেন? স্রেফ গুল মারছি? তো নিজেরাই দেখে নিন না। এই তো লিংক দিলাম। মিলিয়ে দেখুন।https://www.thrillist.com/eat/nation/restaurants-who-are-dicks-wieners-circle-dicks-last-resort
আপনাদের মধ্যে যাঁরা উদ্যোগী বীরপুরুষ (না, না বীর-পার্সন) আছেন তাঁরা যদি একটা রেস্টুরেন্ট খোলেন সেখানে গেলেই আপনাকে কেলিয়ে পাট পাট করে দেবে, হয়তো সেখানেও ফ্যাশনিস্তারা ভিড় করবেন। লোকে অ্যাম্বুলেন্সে চেপে সেথায় যাবে।
দেখুন, ভেবে দেখুন।
এখন তো ইলেকশনের সময়। সবাই যে কী খেঁকুড়ে হয়ে আছে সে তো দেখতেই পাচ্ছেন। পার্টিভিত্তিক রেস্তোরাঁও চলবে। যদিও সিজনাল। তবে হাং অ্যাসেমব্লি হলে আরও কিছুদিন। মানে শুধু আপনার পছন্দের পার্টির লোকেদেরই খাবার মিলবে, অন্যদের নয়। পার্টিশন থাকবে, একদিকে দিদিপসন্দ পোলাউ তো অন্যদিকে আব্বা স্যুপ, পাশের ঘরে নাড্ডা ভাজা। শেষপাতে নোটা সন্দেশ।
না, এইরকম পোলিটিকাল খাবার দোকানও পাবেন। যেমতি :
https://www.theatlantic.com/china/archive/2013/11/chongqing-restaurants-serve-cultural-revolution-nostalgia/281100/
আমার এক বন্ধু দু-দশক আগে ওইরকম একটা মাওবাদী রেস্তোরাঁ দেখেছিলেন সিঙ্গাপুরে। উঁকি মেরেই ভয় পেয়ে আলজিভ গিলে টিলে আর ঢোকেননি।
তার থেকে বড়োলোকের শখের খাওয়াদাওয়া অনেক বেশি সেফ। ঠাকুরবাড়ির কে একজন জানি, খেতে ভালোবাসতেন পোশাকি চিংড়ি। ইয়েস, ইয়েস। পোশাক পরা চিংড়ি। একটা বড়ো গলদাচিংড়িকে রেঁধে টেঁধে একটা ছোটো কুর্তা পরিয়ে পরিবেশন করতে হত। সেটা এডিবল কটনের ছিল? সেটা জানা নেই।
নাঃ। আর কোনো রেসিপি টেসিপি দিচ্ছি না রে বাবা। এমনিতেই আপনাদের ও নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই, তায় দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে এইসময়ে সবাই এতই চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আছেন—আচ্ছা বলুন, এখন কি আর প্রবন্ধ না পড়ে রেসিপি পড়বেন?
এইটুকু যে পড়েছেন, এই ঢের।
ভাই ইয়ে রুম, থুড়ি কিচাইন তো শুরু হোতেই খতম হো গ্যয়া ইয়ার।
চূড়ান্ত হয়েছে!! :)))
তবে আহা যদি আরো খান কতক দিতো!
"আপনারাও দিস কাইন্ড অব তাচ্ছিল্যের ক্ষুরধার হাসি হেসে বলবেন, ও জিনিস তো আমি তিনবার খেইচি। সেবারে খেলাম মাসাইমারা ফরেস্ট লজে, আর তারপরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাকওয়াটার ক্রিকে আর লাস্ট টাইম নন্দীগ্রামে।"
- এটা নিশ্চয়ই সেই কুমিরের রোস্টের কথা বলা হচ্ছে। ঠিকই। শেষ নন্দীগ্রামেই খেয়েছিলাম।
এইটুকু যে পড়েছেন সেই ঢের - ;):))))
"ভ্যালেন্সিতেই মরে যাবেন"।
এই লেখা পড়লে কোভিড লজ্জায় মরে যাবে।
অতি অল্প হৈল। ডিডিদা বাক আপ ...
কাম সারছে! খাওনের দোকানে এত্তো লীলা!
ডিডিদার এই সিরিজটা দারুণ হচ্ছে
পড়ছি নিয়মিত। মনখারাপ হলে (এড়াবার যো নেই আর ) পুরোনো লেখাও পড়তে আসি।
ডিডির লেখার অপেক্ষাতেই থাকি। রোজই খোঁজ করি নতুন কোনো লেখা এল কিনা। এই ক্রান্তিকালে ডিডির লেখা মনের উপরে হাসির শান্তিজল দেয়। লিখুন ডিডি।
শোনা গপ্পো ।..কাঠ মিস্ত্রি সারাদিন পর চোলাই গিলে ৫ টাকার পকরী ( বাঙাল ভাষা ) মানে ফুলুরি নিয়ে ঘরে ঢুকছে ।..বৌ ঘুমন্ত ।..জোরে পেঁদে দিলো ( স্ল্যাং ভাষা .. হবেও বা ) ।...মিস্ত্রি :-""আর ফুঁ দিসনে ফুলুরি ঠান্ডা হয়ে যাবে রে """ !!
ভারি উপাদেয়..