এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সামন্ততন্ত্র, “পরিপক্কতা” ও ভারত 

    Aritra Goswami লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ জুন ২০২৫ | ৪৮ বার পঠিত
  • কমিউনিস্ট মহলে “বিপ্লবী পরিপক্কতা” বলে এক শব্দবন্ধের চল আছে। সাধারণ ভাবে এই “পরিপক্কতা” বলতে উৎপাদন ব্যবস্থার পরিপক্কতাই বোঝানো হয়। সোজা বাংলায়, পুঁজিতন্ত্রের বিকাশ হয়েছে কি না? পুঁজিতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ হ’লে, তবেই সর্বহারা শ্রেণিকে পাওয়া যাবে। এখন পুঁজিতন্ত্রের বিকাশের মাপকাঠি কী? জিডিপি? পার ক্যাপিটা? এইচডিএই? তাহলে বলতে হয়, হাতে গোনা উন্নত দেশেই একমাত্র বিপ্লবী পরিপক্কতা আছে। বিশেষত নর্ডিক দেশগুলিতে। যেখানকার শ্রমিক সবচেয়ে স্বচ্ছল অবস্থায় আছে, তারাই আসল সর্বহারা!

    অনেকে বলবে, ব্যাপারটা এতটা সহজ না। এই যে ভারতের মতো দেশে, অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সাথে যুক্ত, অথচ জাতীয় আয়ের সামান্য অংশই কৃষিজ উৎপাদন থেকে আসে, এটাই বলে দেয় ভারতে পুঁজিতন্ত্রের আসলে বিকাশ ঘটেনি। পাল্টা কেউ বলতেই পারে, কিন্তু সেই প্রবণতা ক্রমশ কমছে, বিশেষত ৯ এর দশক থেকে। ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কৃষিকাজ ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছেন। তারও পাল্টা যুক্তি আছে এবং তা ফেলে দেওয়ার মতন নয়। উদারীকরণের পর ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রের বাইরে কাজের সুযোগ বেড়েছে। কিন্তু তা মূলত পরিষেবা ক্ষেত্রে। উৎপাদনমুখী ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে তেমন নয়।

    সেই কারণেই ভারতকে আধা-সামন্ততন্ত্র বলার দিকে ঝোঁক। এক কথায়, ব্যাপাক অলাভজনক কৃষিক্ষত্র মানেই তা পশ্চাৎপদ! পুঁজিতান্ত্রিক পরিপক্কতা আসেনি, তাই আধা সামন্ততন্ত্র। এখানে “বিপ্লবী”দের কাজ হ’ল, প্রগতিশীল বুর্জোয়াদের সাথে হাত মিলিয়ে পুঁজিতন্ত্রের বিকাশ ঘটানো! এই তত্ত্ব মূলত কমিন্টার্ন বা সিপিআই ঘরানার দলেরাই সবাই মেনে চলে। এমনকি “মাওবাদীরা”ও! তারা মনে করে এ’দেশে বুর্জোয়াদের ঘাড় ধরে সেই বিকাশ ঘটাতে হ’বে, জোট করে নয়, এই যা।
    এখন প্রশ্ন হ’ল সামন্ততন্ত্র কী আর আধা-সামন্ততন্ত্রই বা কী? জমিদারী? জাত-পাত? হিন্দু-মুসলমান? ভারতে কি সামন্ততন্ত্রই বহুযুগ চলে চলেছে? এই এত বছরেও কি সামন্ততন্ত্রের একটুও ক্ষয় হ’ল না? না হ’লেই বা কেন হ’ল না?

    সামন্ততন্ত্রঃ ভারতে ও বাইরে

    প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার, সামন্ততন্ত্র শব্দটি বাংলার সহজাত কোনো শব্দ। ইউরোপের ফিউডালিজম অনুবাদ হিসেবেই এই শব্দের প্রচলণ। যদিও তা আক্ষরিক অনুবাদ নয়। লাতিন শব্দ “feodum” থেকেই “feudalism” শব্দের উৎপত্তি। “Feodum” কথার মানে “জমি”। মধ্যযুগের ইউরোপে, জমির মালিকানা বর্তাত বংশানুক্রমিক ভাবে, ভুস্বামীর হাতে। আর যারা সেই জমির ওপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ করত, তাঁদের ভুস্বামীকে তার পরিবর্তে ভাড়া দিতে হ’ত। ভাড়ার পরিমান ভূস্বামী নিজেই ঠিক করতেন। এবং সেই জমির আইন-আদালতও বলতে গেলে ভূস্বামী নিজেই। সহজ ভাবে বললে, জমির যাবতীয় উদ্বৃত্ত ছিল ভূস্বামীর অধিনস্ত।

    বলাই যায়, feudalism হ’ল একপ্রকার জমিকেন্দ্রিক শোষণ ব্যবস্থা। যেখানে এক শ্রেণির মানুষ বংশ পরম্পরায় জমির মালিকানা ভোগ করত। আরেক শ্রেণি সেই জমিতেই বংশপরম্পরায় খেটে মরত। পরবর্তী কালে ব্যক্তিমালিকানার উদ্ভবও এ’খান থেকেই। ফিউডাল সমাজে জমির মালিকানা ব্যক্তি হিসেবে ভূস্বামী (ও তার বংশ) এর হাতে থাকলেও, তার পণ্যায়ণ হয়নি। অর্থাৎ, সে জমি বেচে পুঁজি সঞ্চয়ের অধিকার ভূস্বামীর ছিল না।

    এবার ভারতে ফিরে আসা যাক। ভারত সম্পর্কে মার্ক্স, প্রাথমিক ভাবে feudalism-এর কথা বলেননি। তিনি ভারত বা চিনের প্রাক্‌-পুঁজিবাদী ব্যবস্থকে feudalism বলে মনে করতেনই না। এর পরিবর্তে তিনি Asiatic Mode of Production নামের এক শব্দবন্ধ ব্যবহার করতেন। অন্তত প্রথম দিকে তো বটেই। Das Kapital-এর প্রথম খন্ডেও এই কথা আছে। প্রশ্ন হ’ল কেন?

    মার্ক্স দেখিয়েছিলেন, প্রাক্‌-পুঁজিবাদী ভারতে (এবং চিনে), শোষণ সে অর্থে জমিকেন্দ্রিক ছিল না। জমির মালিকানা বংশপরম্পরায় কোনো স্থানীয় ভূস্বামী ভোগও করত না। জমির মালিকানা ছিল রাষ্ট্রের হাতে। ভারত ও চিন, নদীমাতৃক কৃষিপ্রধান দেশ। ফলে নদীতে বাঁধ দেওয়া ও সেচের প্রয়োজন প্রথম থেকেই ছিল। যা কোনো স্থানীয় শাসকের পক্ষে একা করে ওঠা কখনই সম্ভব নয়। একপ্রকার এইরকমের বাধ্যবাধকতা থেকেই, ভারতে ও চিনে, ইউরোপের অনেক আগেই, শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সেই রাষ্ট্র তার সামন্তদের মাধ্যমে খাজনা আদায় করত। সামন্তদের জমির মালিকানা ছিল না। তারা ছিল রাষ্ট্রীয় নিয়োজিত। এই কারণেই feudalism এর বাংলা হয়ে দাঁড়ায় সামন্ততন্ত্র। এবং সচেতন ভাবেই দাঁড়ায়।

    এখন মজার ব্যাপার হচ্ছে, মার্ক্সের এই ধারণার মধ্যে অনেক রকমের অস্বচ্ছতা রয়েছে। তিনি ভারতীয় ব্যবস্থাকে সোজা ভাবে, “স্বয়ংসম্পূর্ণ” বলেছিলেন। গ্রামীণ উৎপাদনের মাধ্যমেই গোটা প্রামের চলে যেত। বাইরে থেকে জিনিস আমদানির তেমন প্রয়োজন পড়ত না। তার মানে যে সবাই যে খুব স্বচ্ছল জীবন যাপন করত, তা নয়। কিন্তু কোথাও, শোষিত ও শোষক শ্রেণির মধ্যে এক প্রকার সম্পৃক্ততা ছিল। যে কারণে দীর্ঘসময় যাবৎ এমন ব্যবস্থা টিকে থাকতে পেরেছিল। উল্টোদিকে ইউরোপে ছিল বৈরিতার সম্পর্ক। কারণ তা দাঁড়িয়েছিল জমির মালিকানাকে কেন্দ্র করে। ভারতের জমির মালিকানা ছিল সমষ্টিগত, রাষ্ট্রের অধিনস্থ। এই সমষ্টিবদ্ধতাই শ্রেণিগত বৈরিতা এড়াতে পেরেছিল বলে মার্ক্স মনে করেছিলেন।

    এখন, সামন্ততন্ত্র বলতেই যে সব ধ্যানধারণা আমাদের মাথায় গিজগিজ করে করে আসে, তার সাথে এই বিশ্লেষণ একেবারেই খাপ খায় না। আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাতে সামন্ততন্ত্র বারবার ফিরে আসে, জাত-পাতের হাত ধরে। অথচ, সে সম্পর্কে মার্ক্স, প্রায় কিছু উচ্চারণ করেনি বললেই চলে। এবং পরবর্তী জীবনে মার্ক্স আর “Asiatic mode of production”-এর কথা তেমন বলেননি। ধরে নেওয়া হয়, তিনি ইউরোপ ও এশিয়ার প্রাক্‌-পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে, আর আলাদা চোখে দেখতে রাজি ছিলেন না। তা সত্ত্বেও মার্ক্সের প্রথম দিককার দৃষ্টি ভঙ্গীকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে যে বিভাজন দেখেছিলেন তা বস্তুগত বিশ্লেষণের ফসল। বিস্তীর্ণ কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা ও সুযোগই, ভারতে কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। যা ইউরোপে বুর্জোয়া বিপ্লবের পরেই সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এই তত্ত্বায়ণে অসম্পূর্ণতা ছিলই।

    তাকেই সম্পূর্ণতা দিয়েছিলেন ডিডি কোসাম্বি। An Introduction to the Study of Indian History বইতে কোসাম্বি মেনে নিয়েছেন, ভারতে সামন্ততন্ত্র ছিল। কিন্তু “ভূস্বামীতন্ত্র” তেমন ছিল না। জমির মালিকানা মূলত রাষ্ট্রের হাতেই কেন্দ্রিভূত ছিল। কিন্তু কোসাম্বি দেখিয়েছেন, রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় লাগাম গুপ্ত যুগের শেষেই আলগা হয়েছিল। সেই সুযোগেই ভারতের সামন্ততন্ত্রের জন্ম। এই “সামন্ততন্ত্র” আসলে সম্ভব হয়েছিল দু’ভাবে। ওপর থেকে (feudalism from above): এ’ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিজের থেকে জমি, উচ্চ বর্ণের লোকদের (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্রাহ্মণদের) দান করত। স্বাভাবিক ভাবেই দুর্বল কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র উচ্চ বর্ণকে তোষণ করা দরকারি মনে করত। কারণ কারণ স্থানীয় স্তরে তাদের প্রভাব ছিল ক্রমবর্ধমান। এবং নীচ থেকে (feudalism from below): ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে যখন উচ্চ বর্ণ নিম্ন বর্ণে থেকে জমি ভেট পেত। দু’ক্ষেত্রেই উদ্বৃত্ত জমা হ’ত ব্রাহ্মণদের হাতে। কিন্তু জমির মালিকানা সে অর্থে কখনই উচ্চবর্ণ, ব্রাহ্মণ বা তার পরিবার ভোগ করত না। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সব অনেকক্ষেত্রেই ধর্মীয় সম্পত্তি।

    সুতরাং যাকে আমরা ভারতের “সামন্ততন্ত্র” বলে চিনি, তা ছিল আসলে ব্রাহ্মণ্যবাদ। যেখানে ব্রাহ্মণ শুধু সামাজিক উদ্বৃত্ত ভোগ করত, তাই নয়, সে সমাজের সংস্কৃতি ও মতাদর্শের গঠনও করত। যে মতাদর্শ, বংশানুক্রমিক ভাবে কিছু মানুষকে সম্পদ আহরণের সুযোগ দিত, আর কিছু মানুষকে বাধ্য করত বংশানুক্রমিক ভাবে স্রেফ শ্রম ও সেবা দিয়ে যেতে। ফলে, ভারতীয় “সামন্ততন্ত্র”-এর ক্ষেত্রেই, অর্থনৈতিক ভিত্তি ও সাংস্কৃতিক উপরিকাঠামোর মধ্যে এক আপাত বিচ্ছিন্নতা প্রকট হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যা ছিল সমষ্টিগত মালিকানা, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাই ছিল বংশগত কৌলিণ্যের দাপট! এবং বুঝতে হ’বে এই সাংস্কৃতিক অভ্যেস এতটাই জোরালো ছিল, যা অর্থনৈতিক ভিত্তিরও পুনরুৎপাদন করতে পারতো। কারণ জাতি-বর্ণের নীতি শেষ অবধি কোনো ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ধারণা নয়, কোনো মোক্ষলাভের উপায় নয়, কোনো পূর্বজন্মের পাপের ফল নয়। এটি উৎপাদন-সম্পর্ক নির্ধারণ করে এবং তা বংশতগত ভাবে পুনরুৎপাদন করে।

    ভারতে ব্যক্তিমালিকানার আবির্ভাব

    ভারতে ব্যক্তি মালিকানার আবির্ভাব ঘটে ঔপনিবেশিক শাসনে। সহজাত ভাবে, সমাজ অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাধ্যমে জন্মায়নি। সাবেক ভারতীয়, আমলাতান্ত্রিক, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেই তা এসেছিল। আলথুজার বলেছিলেন, যে কোনো রাষ্ট্রের দু’টি অংশ থাকে। এক হ’ল, নিপীড়নমূলক। অর্থাৎ, সোজা বাংলায় যাকে আমলাতন্ত্র বলি। দুই মতাদর্শগত। অর্থাৎ যা কিছু রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রের বাইরে কিন্তু রাষ্ট্রের নীতির সাধনা করে। মানুষকে রাষ্ট্রের মতো করে গড়েপিটে নেয়। ভারতে কিন্তু সেই মতাদর্শগত রাষ্ট্র কাঠামো কিন্তু ধ্বংস হয়নি। ব্যক্তিমালিকানা আবির্ভাবের পর, স্বাভাবিক ভাবেই তা ব্রাহ্মণ্যবাদী খাতে বইতে শুরু করল। জমির মালিকানা কুক্ষিগত হল উচ্চবর্ণের হাতে। শুরু হল জমিদারতন্ত্রের।

    কিন্তু, তার মানে এই জমিদারতন্ত্র কি ইউরোপীয় ধাঁচের feudalism ছিল? একদমই নয়। মনে রাখতে হবে ভারত কিন্তু ব্যক্তিমালিকানা ও জমির পণ্যায়ণ একই সাথে পেয়েছিল। ফলে, পুঁজির আদিম সঞ্চয়নের (primitive accumulation) সুযোগও একই সাথে শুরু হয়। ভারতের অর্থনীতির ভিত পাল্টাতে শুরু করে। অর্থাৎ, ব্রাহ্মণ্যবাদ আর সামান্ততন্ত্র বা আধা-সামন্ততন্ত্রের প্রতিভূ রইল না।

    বুর্জোয়া মতাদর্শ প্রসঙ্গে

    মার্ক্স তাঁর primitive accumulation তত্ত্বে বলেছেন, কোনো ব্যবস্থাই শূন্য থেকে শুরু হয়না। সামন্ততন্ত্র থেকে যখন পুঁজিতন্ত্রের জন্ম হয়, তখন প্রথম পুঁজিবাদের উৎপাদন-সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল feudalism এর পূর্বধারণা (presupposition) থেকেই। ভূস্বামীর জমি হয়ে উঠেছিল পুঁজির আদিমতম সঞ্চয়নের আধার, আর নিজেদের সবকিছু হারিয়ে ভূমিদাসরাই হয়ে উঠেছিল প্রথম সর্বহারা। এই একই জিনিস ভারতের ক্ষেত্রেও খাটে। এখানে ব্রাহ্মণ্যবাদ হ’ল সেই পূর্বধারণা। যা আদিম সঞ্চয়নের পাশাপাশি, বুর্জোয়া উৎপাদন-সম্পর্কের পুনরুৎপাদন করে যাচ্ছে। ব্রাহ্মণ্যবাদ এখন এক পরিপূর্ণ বুর্জোয়া মতাদর্শ।

    কিন্তু তার মানে কি ভারত বাকি পুঁজিতান্ত্রিক দেশের চেয়ে আলাদা বা “পিছিয়ে”? “পরিপক্ক” নয়? বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ফ্যাশিবাদের উত্থান সেই ধারণা কিন্তু ভেঙে দিচ্ছে। “উন্নত” বুর্জোয়া দেশে কিন্তু এই মতাদর্শগত পূর্বধারণা (ideological presupposition) সামনে চলে এসেছে। আমেরিকায় কালো মানুষ হোক বা ইউরোপে বহিরাগতদের প্রতি বিদ্বেষ কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, বুর্জোয়া মতাদর্শ মানেই আসলে তা প্রতিক্রিয়াশীল পূর্বধারণাই বহন করে চলে। ব্যক্তিমালিকানা ও স্বাতন্ত্রের আড়ালে, আসলে জন্মসূত্রে শোষক ও শোষিত হওয়ার উত্তরাধিকার সুনিশ্চিত করে। ভারত উপনীবেশ-উত্তর দেশ হওয়ায়, এই দ্বন্দ্ব নগ্ন অবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি মাত্র।

    এবার আসি পরিপক্কতার বিষয়ে। পৃথিবীর ইতিহাস থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিই, তাহলে দেখব বিপ্লবী “পরিপক্কতা” আসলে কোনোদিন সাম্রাজ্যবাদের কেন্দ্রে আসেই নি। এসেছে উপনীবেশে ও উত্তর-উপনীবেশে। কারণ বিপ্লবী পরিপক্কতা কোনোদিনই পুঁজির গুনগত ও পরিমানগত উন্নয়নের ওপর নির্ভরশীল নয়। বুর্জোয়াদেরও কোনো দায়ও নেই দেশের বস্তুগত উন্নয়নের। দায় আছে শুধু মুনাফা বাড়ানোর। কাজেই, বিপ্লবী পরিপক্কতা নির্ভরশীল শ্রেণি-দ্বন্দ্বের ওপর। যা ভারতের মত দেশে আরও জোরালো ভাবেই আছে। এবং এখানে যে বুর্জোয়া মতাদর্শ তৈরি হয়েছে, তা নগ্ন ভাগেই ফ্যাশিবাদী।

    ভারতের বুর্জোয়া চরিত্র, কোসাম্বি সেই গত শতাব্দীর ৫ এর দশকেই অনুধাবন করেছিলেন। সিপিআই ও তার উত্তরসূরিরা সেই বিশ্লেষণ গ্রহণ করেনি। এই ২০২৫ এও তারা মনে করে চলেছে ভারত “অপরিপক্ক”, “পিছিয়ে”, “আধা-সামন্ততান্ত্রিক” ইত্যাদি। এর কারণ কি স্রেফ ভ্রান্ত বিশ্লেষণ নাকি “পিছিয়ে” বলতে পারলে, সর্বহারা শ্রেণির কাছে নেতাবাবুদের “জাত” ধরে রাখতে সুবিধে হয়, তা নিয়ে সংশয় জাগে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন