ছবি - কচাস
"আপনি পারবেন স্যার। আপনার দ্বারাই হবে।"
মাথার ওপর দিয়ে পুরোপুরি শব্দনিরোধক হলুদ রঙের হেডফোনটা পরে এত মন দিয়ে কাজ করছিলাম যে লোকটার কথাটা যেন ঢং করে মাথার মধ্যে বাজল।
সামনে টেবিল ভর্তি নীল নকশা ছড়ানো। সেদিকে তাকিয়ে আবছা মনে হল, এখন রাত হবার কথা। কদিন ধরেই আমাকে রাতের শিফটে আসতে হচ্ছে। ঘরটা একেবারে ফাঁকা, সবকটা আলো মাথার ওপর জ্বলছে। আমি ছাড়া শুধু দ্বিতীয় ব্যাক্তি টেবিলের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা । যে এতক্ষণ মনে হয় ঝুঁকে পড়ে আমার করা নীল নকশাগুলো দেখছিল । কিন্তু, সে কে?
ওর কথাই বা আমার কানে এল কি করে? এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটির হেডফোনগুলো এরকম প্রচুর শব্দ ওয়ালা বাড়ি তৈরি বা কারখানার মত কাজের জায়গায় শ্রমিকরা ব্যবহার করে। এগুলো গান শোনার জন্য নয়, কোনও ইনপুটের জ্যাক নেই । একেবারে কানের ওপর এঁটে বসে যায়। একবার আঙ্গুল দিয়ে বাঁ দিকের খোলটার ওপর টোকা দিলাম, ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা দেখার জন্য।
"চিন্তা নেই স্যার । সেফটির হেডফোন কাজ করছে। নইলে বাইরে এতরাতে যা আওয়াজ, কালা হয়ে যেতেন এতক্ষণে ।"
"কে আপনি?"
"আমি স্যার, সাইটের লোকাল কন্ট্রাক্টর। আমি আর আমার বিজনেস পার্টনার ব্যবসাটা সামলাই। ওকেও অনেকে নামে চেনে, বিখ্যাত লোক। তবে ওর থেকে আমার নামডাক একটু বেশি, সেজন্য রাতের বেলায় আসি মাঝে মাঝে সাইটে কাজ কর্ম দেখতে। ও দিনের বেলায় আসে । "
লোকটা একটা কালো জামা পরে আছে। সাদা ধুতিতে সোনালী পাড়ের কাজ , দক্ষিণী ছবির খলনায়কদের মত ধুতিটা লুঙ্গির মত করে পড়া। গলায় একটা সোনার চেন। আঙুলে আংটি। লোকাল কন্ট্রাক্টর মানে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ওঠা বসা । কম টাকায় সিন্ডিকেটের ঠিকা নির্মাণ শ্রমিক আর সিমেন্ট বালি পাথরের যোগান দেওয়া। ধুরন্ধর লোক । জমি হাঙ্গরও হতে পারে । এইসব জমি জোগাড় করাতেও অবশ্যই এর এবং এর বিজনেস পার্টনারের বড় ভূমিকা আছে।
"আমার টিমের বাকি লোকেরা কোথায়?"
"এটার উত্তর আমি জানব কি করে স্যার? আমি তো এসে দেখলাম আপনি একা মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।"
"বাইরে আছে?"
"থাকতে পারে। পান খাবেন? জর্দা দেওয়া নেই। "
লোকটা নিজে একটা পান বের করে নিয়ে আমার দিকে একটা পানের বাটা এগিয়ে ধরেছে।
"ধন্যবাদ, আপনি খান। আমি একটু বাইরে যাবো।"
"বাইরে গিয়ে কি হবে? ও কি, হেডফোন খুলছেন কেন?”
বলতে বলতেই আমি হেডফোন খুলে ফেলেছি। সত্যিই এরকম আওয়াজের মধ্যে সেফটি হেডফোন ছাড়া একটানা কাজ করলে কালা হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। এখানে একটা ভবিষ্যতের জনপদ তৈরী হচ্ছে। এটা তারই কানফাটানো আওয়াজ। দরজার দিকে এগোতে এগোতে গলা কানে এল – "বাইরে গিয়ে যা দেখবেন, অবাক হবেন না যেন।"
বাইরে অগুনতি যন্ত্রেরা যেন জেগে উঠেছিল পুরো নির্মাণ সাইট জুড়ে । নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছিল দানবের মত জেসিবি আর বুলডোজার গুলো । চিৎকার করে একটা বড় সিমেন্ট মেশানোর ট্রাক আরেকটা ছোট ডাম্পারকে বকছিল । মাটি ড্রিল করার জ্যাকহ্যামার গুলো নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে ঘুরপাক খেয়ে নাচছিল । কোথায় উধাও হয়ে গেছিল সমস্ত মানুষ ঠিকাদার, কর্মীরা।
পিছন থেকে লোকটার গলা কানে এল – "বিশ্বরূপ কেমন দেখলেন স্যার ? মনে থাকবে?"
এক
এই স্বপ্নটা আসলে অনুপম কয়েক বছর আগে দেখেছিল। গল্পের খাতিরে এবার সেই কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে হবে।
একদিন সকালবেলা ফোনের শব্দে অনুপমের ঘুম ভেঙে গেছিল। ফোনের ওপারে লোপিতার ঘষঘষে গলার স্বর। মোদ্দা কথা - অদ্রিজা নাকি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে। এবার অনুপমকে অদ্রিজার কাজ বুঝে নিতে হবে।
পনেরো কুড়ি বছর আগেও শহরের এই বিশেষ অঞ্চলের কোনও অস্তিত্বই ছিল না। এখানে মাটির তলায় যে কি আছে কে জানে! এখানে যারা ফ্ল্যাট কিনে থাকে সবাই এসেছে বাইরে থেকে। আগে কি ছিল সেই গল্প বলার মত কেউ নেই। হয়ত ফাঁকা মাঠ ছিল। এখন এ শহরের হাওয়ায় কান পাতলেই শোনা যায় এই শহরটা দিন দিন লম্বা হচ্ছে, উচ্চতায় বেড়ে যাচ্ছে, ফ্ল্যাটের চড়া দাম। এ শহরে জলের অভাব, হাওয়ায় কালো ধোঁয়া, তাও রোজ উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। কলেজে অনুপমরা পড়েছিল আদর্শ শহরের ল্যান্ডস্কেপ হবে সমান। খুব বেশি হলে দোতলা বা তিনতলা বাড়ি। থাকার জন্য এই উঁচু উঁচু বাড়ি তখন থেকেই তার একেবারে না পসন্দ।
শহরের এই বিশেষ অঞ্চলে কাজ করার জন্য আছে একটা বিশাল টেক পার্ক আর থাকার জন্য লম্বা লম্বা গজদন্তমিনারের সারি। পুরোটাই পরিকল্পিত। লোকেরা রাতের বেলা মিনারে থাকবে আর দিনের বেলা কাজ করবে টেক পার্কে। বাচ্চাদের স্কুল, বড়দের নাইটক্লাব ইত্যাদি সবই আছে এই অঞ্চলের ভেতরই, যাতে এখান থেকে কাউকে বেরোতে না হয়। পিছন দিকে আরও আরও মিনার তৈরি হচ্ছে, অঞ্চলের পরিধি বেড়ে চলেছে। সেসব নির্মীয়মাণ মিনারদের মাথায় দিন রাত এক লাল চোখ দানবের বিশাল লম্বা হাতের মত ক্রেনগুলো ঘোরে।
লোপিতা, অনুপম, অদ্রিজাদের আর্কিটেক্ট অফিস এরকম নানা বড় বড় পরিকল্পিত উপনগরী আর টেক পার্কের নকশা বানায়। সেই নকশা অনুযায়ী সব বানিয়ে ফেলার পর টেক পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ যারা করে তাদের নখদর্পণে থাকতে হয় বিদ্যুতের এবং ইন্টারনেটের তার মাটির তলায় কোথা দিয়ে গেছে, জলের পাইপ, অফিসবাড়ির ভেতরে সেন্ট্রাল এসির ভেন্ট কোথায় , এই সমস্ত খুঁটিনাটি। যেহেতু এই টেক পার্কের বয়স পাঁচ বছর হয়নি, তাই নির্মাতা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী একজন আর্কিটেক্টকে ততদিন পর্যন্ত এখানে থাকতে হবে যদি রক্ষণাবেক্ষণের কারুর কোনও কাজ করতে গিয়ে নীলনকশা বুঝতে সমস্যা হয়। পাঁচ বছর পর পুরোটাই নির্মাতার দায়িত্ত্ব । আর্কিটেক্টদের ছুটি।
টেক পার্কটা তৈরী হয়ে যাবার পর এতদিন অদ্রিজাই সেই কাজ সামলাত। এখন অনুপমকে সামলাতে হবে। এখানে অনুপমের বসার জায়গা অ্যাডমিন বিল্ডিংয়ে, যা টেক পার্কের একেবারে পিছন দিকে ছোট একটা বাড়ি । টেক পার্কের সমস্ত বাড়ির প্রতিটি তলার খুঁটিনাটি নীল নকশার কপি জমা থাকে তাদের এই অফিসে, দরকার হলেই দেখে নেবার জন্য।
কালকেই অদ্রিজা অনুপমকে শেষবারের মত কাজ বুঝিয়ে দিয়ে, নিজের আই ডি কার্ড শ্রেড করে চলে গেছে। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে অনুপম কয়েক দিন আগে ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নের কথা ভাবছিল। ঝিম কাটাতে কফি খাওয়া দরকার। অফিস ঘরের ভেতরের কাঁচের দেওয়ালের মধ্যে দিয়ে সে দেখতে পাচ্ছিল, বাইরে লবিতে তার রেখে আসা কাপে যেন খক খক করে কেশে কিছুটা ক্যাপুচিনো উগরে দিচ্ছে কফি মেশিন।
কফি ভর্তি কাপ আনার জন্য সে যখন উঠে পা বাড়াল, তখনও কেউ জানত না কয়েকদিন বাদেই আচমকা এক অতিমারী আবহে সরকারি নির্দেশে অচল হয়ে যাবে দেশ।
টেক পার্কের অফিসবাড়ি গুলো রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হলেও ডেটা সেন্টারগুলো বন্ধ করা যায় নি। পার্কের ইলেক্ট্রিক্যাল সাব স্টেশনটা আর ডেটা সেন্টারগুলো আপৎকালীন পরিষেবার মধ্যে পড়ে। পুরো টেকপার্কের মেইনটেন্যান্স টিমের জরুরী অনলাইন মিটিং হয়েছিল । ডেটা সেন্টার আর ইলেক্ট্রিক্যাল টিমের কয়েকজন করে রোজই আগের মত শিফটে যেতে হবে। অনুপমের ব্যাপারটা ধোঁয়াটে, সে গেলেও হয় না গেলেও হয়। কিন্তু ফোনে যেন তাকে দরকার হলেই পাওয়া যায়। যারা গাছপালা ছাঁটত, অফিসবাড়ির বাইরে লিফটে করে কাঁচ পরিষ্কার করত, অফিসবাড়ির ভেতরে ধুলো টানত যন্ত্র চালিয়ে, কফি মেশিনে নতুন দুধের প্যাকেট ঢেলে দিয়ে যেত, সেই ঠিকা কর্মীদের আপাতত আর কোনও কাজ ছিল না।
ফোন পেলে কোনো কোনো ভোরবেলা 'এসেনশিয়াল ওয়ার্কার' স্টিকার লাগানো বাইকে চতুর্থ থেকে পঞ্চম গিয়ার বদলাতে বদলাতে অনুপম পেরিয়ে যেত একের পর এক লম্বা উড়ালপুল। মাঝে মাঝে রাতের শিফটেও যেতে হত তাকে। শুনশান পার্কে গাড়ি রাখার জায়গাগুলো ফাঁকা খাঁ খাঁ। পার্কের মাঝখানে আছে একটা বিশাল ফোয়ারা, তখন বন্ধ। তার শুকনো চাতালে গিয়ে কিছুক্ষণ অনুপম বসে থাকত। চাঁদের আলোয় ভুতুড়ে বাড়ির মত তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকত কয়েকশো অফিসবাড়ি। ডেটা সেন্টারগুলো সবই মাটির নীচে, ওপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না। সেখানে পর পর স্টিলের র্যা কগুলো ঠেসে দাঁড় করিয়ে রাখা। ইথারনেটের হলুদ তারের জঙ্গল। সেখানে লাখ লাখ নীল আর সবুজ এলইডি আলো জোনাকীদের মত প্রতি সেকেন্ডে একশোবার জ্বলছে আর নিভছে।
অনুপম বাড়ি ফেরার সময় দেখত নির্মাণ অসমাপ্ত রেখেই মিনারগুলোর ওপরের ক্রেন থেমে গেছে। নিভে গেছে তাদের লাল চোখ। তার বদলে সারারাত এই শহরের বাকি সমস্ত মিনারের জানলায় জানলায় জ্বলে থাকছিল আলোরা। সমস্ত মানুষ তখন বাড়িতে বন্দি, নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে তারা বাড়ি থেকে কাজ করে যাচ্ছিল, তাদের রাত জাগা দীর্ঘায়িত হচ্ছিল।
দুই
অতিমারির অনেকগুলো ঢেউ ওঠা নামার পর শেষমেশ একসময় ধীরে ধীরে সব নিয়ম শিথিল হল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হল এবং রাস্তায় ফিরে এল মানুষের ভিড় । অত্যাশ্চৰ্য ভাবে অল্প কিছুদিন আগের সেইসব থেমে থাকা দিনই স্বপ্ন বলে মনে হয় এখন। একাকী নিঃশব্দ দাঁড়িয়ে থাকা সেই ক্রেনগুলো দিন রাত এক করে আবার লাল চোখে তাদের হাত ঘোরাতে শুরু করে।
থিকথিকে ভিড়ে মাঝে মাঝে অনুপমের সেই ধূধূ তেপান্তরের মাঠে কাঁচ আর লোহার আরশিনগর গড়ে ওঠার স্বপ্ন মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই পুরো সাইট জুড়ে দানবীয় যন্ত্রদের জীবন্ত হয়ে ওঠা। সেই স্বপ্ন দেখার পর থেকেই অনুপম জানে, একদিন এ সব আকাশছোঁয়া বাড়ির ইতিহাস মাটির গভীরে চলে যাবে। স্তুপাকৃত যন্ত্রদের ওপর দিয়ে চলে যাবে বুলডোজার, তারপর তাদেরকে মাটির সঙ্গে চেপে সমান করে দেবে রোডরোলার। জীবাশ্ম জ্বালানীর মত ডেটা জমে থাকবে সেই মাটির নীচে। পৃথিবীতে এক যুগ শেষ হয়ে গেল। অতিমারী যেন তারই সংকেত ছিল। এবার সেই যন্ত্রদের আশ্চর্য নতুন যুগ শুরু হবে। অনুপম অদ্রিজা লোপিতাদের মত ময়দানোদেরকে দিয়ে সেই পুড়ে যাওয়া সময়ের জমিতে নতুন ভাবে গড়ে তোলানো হবে ভবিষ্যতের সব ইন্দ্রপ্রস্থ।
এই অফিসে অনুপমেরও শেষ দিন আজ। সে হাঁটতে হাঁটতে পার্কের পনেরো নম্বর অফিস বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আজকের রোস্টার অনুযায়ী এখন এই বাড়িটা পরিষ্কার হওয়া শুরু হবে। লিফট ধরে দশতলায় উঠে এসে সে তার পায়ের নীচে বিছিয়ে থাকা কাঁচ আর ধাতুসভ্যতার খাণ্ডব বনের গাছেদের শেষবারের মত দেখে নিচ্ছিল।
ঠিকা কর্মীরা আবার ফিরে এসেছে পার্কে, পরিষ্কার করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা এনেছে বড় বড় সমস্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এবং টাইলের মেঝে পরিষ্কারের জন্য ছোট ছোট গাড়ি। বাইরের সার্ভিস লিফটে চড়ে দুজন সবজেটে কাঁচে ছুঁড়ে দিচ্ছে সাবানজলের বুদবুদ,তারপর স্ক্রাবার দিয়ে মুছে নিচ্ছে সাদা ফেনা। ভেতরে, হাজার হাজার বন্ধ অফিস যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে অনুপম চারদিকে তাকায়।প্রতিটি নির্জীব যন্ত্রের গা থেকে সচল যন্ত্রগুলো সযত্নে পেশাদার হাতে শুষে নিচ্ছে এতদিনের জমে থাকা ধুলো।
টেক পার্কের কয়েকশো বাড়িতে শুয়ে বসে থাকা, ধ্যানমগ্ন এই লক্ষ লক্ষ যন্ত্রেরা যেন জানত দ্বিগুণ বেগে তাদের সুসময় ফিরে আসবে আবার। তারা সবাই যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কবে মানুষ এসে আবার তাদের মত বুনো যন্ত্রদের দিকে তাকাবে, হাতে তুলে নেবে, বল্গা পরিয়ে পোষ মানাবে। ফ্লোর থেকে বেরিয়ে আসার সময় লিফটের বোতাম টিপে অপেক্ষা করতে করতে চোখ বন্ধ করে কান পাতলে অনুপম যেন শুনতে পায়, চারটে লিফট নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। তারা সবাই খুশি, আবার এইসব বাড়িতে ফিরে আসবে মানুষ, তাদের ভেতর চড়বে।
অফিসঘরে ফিরে এসে দেখল পলাশ তার জায়গায় বসে আছে। লোপিতা পলাশকে এখানে পাঠিয়েছে নলেজ ট্রান্সফারের জন্য। একমাস ধরে অফিস এসে তাকে অনুপমের থেকে ধীরে ধীরে কাজ বুঝে নিতে হয়েছে। কাল থেকে পলাশকেই অনুপমের কাজ সামলাতে হবে।
"চললে? এরপর কি?"
"আরবান প্ল্যানিং নিয়ে মাস্টার্স করতে যাচ্ছি। "
"বাহ। লোপিতা তো বলল আমাকে এখানে পাঁচ ছমাস কাটিয়ে দিতে। তারপর আরও দুটো বড় টেক পার্কের ডিজাইন শুরু হচ্ছে, সেই টিমে ঢুকিয়ে দেবে। "
"ভালই তো। আমাকেও টোপ দিয়েছিল। কিন্তু আর ইচ্ছে নেই, আরও আগেই পড়তে চলে যেতাম। প্যানডেমিকের জন্য এখানে আটকে গেলাম দুবছর।"
"অল্প দেরি হলেও আর কি, এখনো যে বেঁচে আছি, সেটাও তো বিশ্বাস হয়না মাঝে মাঝে। আমারই তো তিনবার হল অসুখটা। কি সব দিনকাল গেছে। "
আজ যাবার আগে অনুপমকে তার অফিসের আইডি কার্ডটা শ্রেড করতে হবে। সে ব্যাগ গুছিয়ে তাদের অফিসঘরের এক কোণে রাখা শ্রেডারটার দিকে তাকাল। এতদিন ধরে সমাধিস্থ থাকা শ্রেডারটাও যেন তখন ধীরে ধীরে জেগে উঠে সশব্দে নড়তে শুরু করল, কারণ এবার তার অনুপমের আইডি কার্ডটা ছিঁড়ে খেয়ে ফেলার সময় এসেছে।