ভোটাভুটি খরচাপাতি
পর্ব ৬
(ভোটে) যদি লাগে টাকা, দেবে ক্রুপ দেবে থুসেন
৯ নভেম্বর ১৯১৮ সালে বার্লিনে অনধের নগরী, চৌপট রাজা ।
নৌ বিদ্রোহ বন্দরে বন্দরে , ভিলহেলমসহাফেন , কীল , হামবুর্গ থেকে নৌসেনা হাঁটছেন বার্লিনের দিকে; মিউনিক এমনকি বার্লিনের নয় কোয়লন নিজেদের স্বাধীন রিপাবলিক বলে ঘোষণা করেছে - পার্লামেন্টের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব তাদের দাবিতে অনড় , সম্রাটের পদত্যাগ চাই । ৯ নভেম্বর ১৯১৮ সকাল এগারোটায় বেলজিয়ামের স্পা থেকে টেলিফোন বার্তায় সম্রাট ভিলহেলম তাঁর পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে ট্রেনে চড়ে নিরপেক্ষ হল্যান্ডের ডুরণ রওয়ানা হলেন ; আর কোন দিন জার্মানিতে পা দেবেন না , বত্রিশ বছর বাদে ভগ্ন মনোরথ সম্রাট সেখানেই ধরণী থেকে চির বিদায় নেবেন।
বার্লিনে রাইখসটাগেরসামনে সমবেত জনতা উত্তাল- এবার তাহলে কি ? পার্লামেন্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট মন্ত্রী ফিলিপ শাইডেমান সমবেত জনতাকে বললেন
“ হোহেনজোলারন সম্রাট পদত্যাগ করেছেন । এই দিনটি জার্মান ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে । জার্মান প্রজাতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক ।
এগারোই নভেম্বর এগারোটা বেজে এগারো মিনিটে প্যারিসের সত্তর মাইল উত্তর পূর্বে কম্পিয়েনে এক নির্জন বনের মাঝে টেনে আনা মার্শাল ফখের নিজস্ব ট্রেনের বগিতে জার্মানি স্বাক্ষর করলো সন্ধিচুক্তি- পশ্চিম রণাঙ্গন হলো নিশ্চুপ।
শুরু হলো নভেম্বর বিপ্লব , পুলিশ দফতর দখল, যুদ্ধ ফেরত ফৌজ – ফ্রাইকরপস - বনাম কমিউনিস্ট বিপ্লবী, স্পারটাসিসট , রোজা লুকসেমবুরগ কার্ল লিবককনেখট – যারা চাইলেন রাশিয়ান স্টাইলে সোভিয়েত গড়ে তুলতে। খুন কা বদলা খুন মুখোমুখি লড়াইয়ে জিতল সরকারি সেনা; পথে পথে রক্তাক্ত অভিযান । ইতিমধ্যে দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে থাকে পাড়া। সরকার প্রাগে পলাতক। জানুয়ারি মাসে বার্লিন থেকে নিরাপদ দূরত্বে , ভাইমারে নতুন সংবিধান রচিত হলো , জার্মানির ইতিহাসে গণতন্ত্রের প্রথম অভিষেক – অজানা অচেনা পথে একটা দেশের প্রথম পদক্ষেপ। এতদিন দেশটা চালিয়েছেন অভিজাত সমাজ এবং বনেদী জমিদারবর্গ ( ইউঙ্কার ) সেখান থেকে এসেছেন সেনাপতি , বিচারপতি ,সমাজপতি এবং অনেক শিল্পপতি। ।
এখন এই নতুন ব্যবস্থায় প্রধান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ এবারট , তাঁর বাবা ঘোড়ার জিন বানাতেন।
গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন এবং সেটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হিসেবে – ষাট হাজার ভোট পেলে একটি সিট। ১৯২০ সালর নির্বাচনে ছাব্বিশটি দল , আশি শতাংশ নাগরিক ভোট দিলেন । নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা মানে ৫০.১% ভোট কোন দল পেলেন না – সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠিত পার্টি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ৩৮%, আসন সংখ্যা ১০৩ ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় কোন জার্মান শহর গ্রামের ওপরে বোমা বর্ষণ হয় নি , শত্রু সৈন্য দেখা দেয় নি দুয়োরে। তাবৎ পরিকাঠামো, রুর এলাকার কয়লাখনি ইস্পাত কারখানা বার্লিনের ব্যাঙ্ক মিউনিকের ব্রুয়ারি হামবুর্গ ব্রেমেনের জাহাজ কারখানা অক্ষত অটুট । ডুসেলডরফ কলোন ডরটমুণ্ডের শিল্পপতিরা যুদ্ধে হারান নি কোন সম্পদ কিন্তু বিজয়ী পক্ষ চাইছেন ক্ষতিপূরণ ( রেপারেশন )-সেটা আসবে তাঁদের ট্যাঁক থেকে। ফ্রান্স বেলজিয়াম তাদের সেনা বসিয়ে রেখেছে রাইনল্যান্ডে , কারখানার দরোজায়, খনির মুখে । দেশে নিরঙ্কুশ অরাজকতা , কমিউনিস্টরা ট্রেড ইউনিয়নকে হাওয়া দিচ্ছে- আমাদের দাবি মানতে হবে ঝাণ্ডা তুলে হেড অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন বিক্ষুদ্ধ জনতা । এবং স্ট্রাইক! প্রাশিয়ান আমলে যা ছিল অকল্পনীয় । দেশ চলত একটা কঠোর ডিসিপ্লিনের শেকলে -সমাজে কারখানায় অফিসে সকলের স্থান ছিল নির্দিষ্ট। সবাই তা মানতেন, সব্বাই করে বলে সব্বাই করে তাই ! কোন বিকল্প ছিল না
অন্য দেশের রাষ্ট্রীয় সৈন্য বাহিনী থাকে; প্রাশিয়াতে রাষ্ট্রীয় সৈন্য বাহিনীর একটা দেশ ছিল।*
জার্মান শিল্পপতিরা কখনো শ্রমিক নেতার মুখোমুখি বসেন নি , সেটা সামলাত স্থানীয় প্রশাসন -বেতনের দাবিতে কেউ অফিসের সামনে দাঁড়ায় নি , জমিদাররা ভূমিহীন কৃষকদের যেমন ইচ্ছে এমনি মজুরি দিয়েছেন। । যুদ্ধের পরে এই এলোমেলো অবস্থার সুযোগে গড়ে উঠেছে কমিউনিস্ট পার্টি যারা রাশিয়ান কায়দার সোভিয়েত বানাতে বদ্ধ পরিকর। সেটা ব্যর্থ হল এক বছর বাদে কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি খুঁটি গেড়ে বসল , পার্লামেন্টের ভোটে প্রার্থী দিলো ।
রুর বার্লিনের বিজনেস ম্যাগনেটরা কথা বলবেন কার সঙ্গে?
তাঁদের আতঙ্ক কমিউনিস্টরা এবার শ্রেণি সংগ্রাম শুরু করবে , তার মানে শিল্পে অশান্তি, খরচা বেশি , বোর্ডরুমে কমিউনিস্ট কর্মীদের অনধিকার প্রবেশ। তাদের ঠেকায় কে ? সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকের রক্ষা করেছেন কিন্তু এই আগ্রাসী শ্রমিকদের হাত থেকে শিল্পপতিদের রক্ষা করে কে ? তাঁরা চান রাজনৈতিক স্থিরতা এবং শ্রমিকদের দাবিয়ে রাখা-যেটা প্রাশিয়ান সরকার করে এসেছেন। তারই ছত্রছায়ায় জার্মান শিল্প, বাণিজ্য অতি দ্রুত উন্নতি করে দুনিয়ার ঈর্ষা অর্জন করেছে। আজ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাঁরা খুঁজছেন একজন বিশ্বাসযোগ্য শক্ত রাজনৈতিক নেতা যার সঙ্গে
এই সফল ধনী ব্যবসায়ীরা আলোচনায় বসে একটা বন্দোবস্ত করতে পারেন – সার আপনি আমার কেসটা দেখুন আমি আপনার ব্যপারটা সামলে দেবো। নৈরাজ্য তখন এমন পর্যায়ে যে জার্মানির অন্যতম ধনী ব্যক্তি ফ্রিতস থুসেন ফ্রান্সের নরমান্দিতে তাঁর বাবার কয়লাখনির মালিকানা পাবার অভিলাষে শত্রুদেশ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নিতেও প্রস্তুত।
নির্বাচন হয়, কোন দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় না। কার সঙ্গে হাত মেলাবেন তাঁরা ? এলো অকল্পনীয় মুদ্রাস্ফীতি , আম জনতা হারালেন তাঁদের সঞ্চয় ; কিন্তু রুর মিউনিক বার্লিনের ধনপতিদের সম্পদ অটুট তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ গেলেন আমেরিকা- সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যের কি হালচাল ? নতুন নতুন যন্ত্রপাতি , কর্ম মুখর কল কারখানা দেখে চমকিত হয়ে দেশে ফিরে বললেন তাঁদেরও চাই ঐ সব খেলনা । কিন্তু তাঁদের স্বার্থ দেখার ও অর্থ সরবরাহের জন্য কেউ নেই ।
এমন সময়ে দক্ষিণ দিক থেকে উদিত হলেন এক অস্ট্রিয়ান নাগরিক , যুদ্ধে কর্পোরাল হয়েছিলেন , দ্বিতীয় শ্রেণির আয়রন ক্রস ঝোলানো থাকে গলায় । মিউনিকের পাবে তাঁর বক্তিমে শুনতে ভিড় জমে যায় ( হোফব্রয় হাউসের তিনতলায় সেই হলটি দেখতে পাবেন ) ; তাঁর মতে জার্মানি একটা জেতা গেমে হেরেছে কারণ সৈন্য বাহিনীর পিছন থেকে ছুরি মারা হয় । তার জন্য দায়ী কমিউনিস্ট , ইহুদি ও কিছু চক্রান্তকারী বিদেশি । ৯ নভেম্বর ১৯২৩ শখানেক লোক যোগাড় করে ব্যাভেরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ব্যর্থ অভ্যুথানের পরে গ্রেপ্তার হলেন সেই নেতা , আডলফ হিটলার । সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল ১৯২৩ সালে কিন্তু কোন অজানা কারণে তাঁর রেহাই হল নয় মাস বাদে । তাঁর বহুল প্রচারিত ( এমনকি দুনিয়ার অনেক সংবাদ পত্রে ) বিচার পর্ব হিটলারকে রাতারাতি পরিচিত করাল সারা দেশে । তাঁর পার্টি, জার্মান শ্রমিক দল ( ডয়েচে আরবাইটার পারটাই ) প্রথম ইলেকশন লড়ে ১৯২৪ সালে, ব্যাভেরিয়ার বাইরে সম্পূর্ণ অচেনা এই দল পেলো ০.১২% ভোট , আসন শূন্য.
পার্টির নাম বদলাল - হলো নাতসিওনাল সোৎসিয়ালিস্তিশে ডয়েচে আরবাইটার পারটাই সংক্ষেপে নাৎসি ( প্রথম দু অক্ষর নিয়ে )। মুদ্রাস্ফীতি ও যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের ঝক্কি কাটিয়ে জার্মান অর্থনীতি দুর্বার বেগে ঊর্ধ্বগামী । হিটলারের অগ্নিগর্ভ বাণী বাজারে কাটে না। ১৯২৮ সালে নাৎসি পার্টি পেলো মাত্র ১২টি আসন। ১৯২৯ সালের অক্টোবরে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার বাজারে লঙ্কা কাণ্ড লাগলে যে ডিপ্রেশন দেখা দিলো জার্মানিতে তার প্রত্যক্ষ ফল দেখা গেলো ১৯৩০ সালের নির্বাচনে - ১৮% ভোট এবং ৯৫টি আসন পেলো নাৎসি দল । কিন্তু কোন দল সরকার গঠনে অক্ষম – শাসন চলে ভাইমার সংবিধানের সেই ৪৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী – রাষ্ট্রপতির ডিক্রি দ্বারা! পার্লামেন্ট যখন সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ, রাষ্ট্রপতি হিনডেনবুরগ চ্যান্সেলরের পরামর্শ অনুযায়ী অথবা তা উপেক্ষা করে আপন ডিক্রি মাফিক দেশ শাসন করেন সেই মোতাবেক ।
প্রসঙ্গত , যতদূর মনে পড়ে ভারতীয় সংবিধানে এই ধরণের একটি ক্লজ আছে- রাষ্ট্রপতি যুক্তিযুক্ত মনে করলে ( মনে করাটাই যথেষ্ট ) বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মতন পার্লামেন্ট ভাঙতে পারেন, ছ মাস নিজের শাসন চালাতে পারেন, নতুন নির্বাচন ফলপ্রসূ নাহলে আবার রাষ্ট্রপতির শাসন । এটি কেউ দেখে দিলে কৃতজ্ঞ হব ।
বার্লিন হামবুর্গ মিউনিকের পথে পথে লাল পতাকা বনাম সাদা কালো স্বস্তিকার লড়াই চলে ( উৎপল দত্তের ব্যারিকেড নাটকটি স্মরণ করুন) দেওয়াল লিখন দেখে জেনে নিতে হয় কাদের পাড়ায় আছেন । তফাৎ এই যে কমিউনিস্ট বা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ছেঁড়া খোঁড়া জামা কাপড় পরে হাতে কেবল পতাকা নিয়ে আওয়াজ তোলে - নাৎসি বাহিনী ব্রাউন ইউনিফরম পরিহিত , হরসট ওয়েসেলের ডি ফানে হোখ ( আমার পতাকা উচ্চে ) গান গেয়ে মার্চ করে লাইন দিয়ে, হাতে লাঠি , কোমরে পিস্তল , যেখানে সেখানে প্রতিপক্ষকে পেটায়, সভা ভাঙ্গে - তাদের উপস্থিতি রীতিমত উচ্চকিত ।
লাইপজিগের এক সভায় (১৯৩০) নাৎসি প্রবক্তা গ্রেগর স্ত্রাসার বললেন , আমরা দশটা আইন পাস করে এই গোলমালের সমাধা করে দিতে পারি – কেউ স্ট্রাইক করলে তাকে গুলি মারা হবে , বাকিরা কোন দেওয়ালের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে চাইবেন না “
দেশের এই টালমাটাল অবস্থায় এক সবল কাণ্ডারির খোঁজে ব্যাভেরিয়ার কিছু ধনী মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন - যেমন কোবুরগের ডিউক, প্রিন্স হেঙ্কেল ভন ডোনারসমার্ক, ব্যাভেরিয়ান শিল্পসমিতির প্রধান প্রিন্স আরেনবেরগ।
১৯৩১ সালে বেশ কয়েকজন জার্মান ব্যবসায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে এলেন- তাঁরা কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার প্রচণ্ড বিরোধী কিন্তু আশ্চর্য হয়ে দেখলেন কিভাবে শ্রমিক কৃষকের সেই সরকার শ্রমিক কৃষকদেরই দাবিয়ে রেখেছে , সেখানে কারো ঝাণ্ডা তুলে মাইনে বাড়ানোর দাবি করার হিম্মত নেই । ঠিক যেমন গ্রেগর স্ত্রাসার বললেন পার্টির নামের ভেতরে সোশ্যালিস্ট শব্দটা আছে বটে কিন্তু সেটা লোক দেখানো মাত্তর।
আরও খানিকটা দূর থেকে নাৎসি জয়রথের অগ্রগতি লক্ষ করছিলেন কয়েকজন শিল্পপতি – তাঁরা চান স্টেবল গভর্নমেন্ট এবং এমন কাউকে যার সঙ্গে ইউ ক্যান ডু বিজনেস উইথ ! মহা ধনপতি ফ্রিতস থুসেন জনান্তিকে বলেছিলেন উদার উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাম্য আছে ,আমাদের ধন সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ নেই ; কমিউনিস্টরা আয়ের সাম্য আনতে পারে কিন্তু আমাদের সম্পদের পরিমাণ শূন্যে দাঁড়াবে । ক্ষমতা যদি কেন্দ্রীভূত হয় আমরা চাইব তার অংশীদার হতে।
২৭শে জানুয়ারি ১৯৩১ ডুসেলডরফের হর্ম্য মণ্ডিত ইন্দুস্ত্রি ক্লুবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফ্রিতস থুসেন সমবেত ধনপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমাদের দেশের ভাবি পরিত্রাতার সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই -ইনি আডলফ হিটলার ।
লম্বা বক্তৃতা দেবার অভ্যেসটি ত্যাগ করে হিটলার মাত্র দশ মিনিট বললেন । তিনি শুরু করলেন
“অনেকে আমাকে বলেন আপনি জাতীয়তাবাদী জার্মানির একক ঢোল বাদক । তাই কি ? আজ এক দেশভক্তের মতন আমি এই ঢোল আবার বাজাতে চাই , জার্মানিকে দিতে চাই এক বিশ্বাস, সেই আস্থা যা জার্মানি হারিয়েছে “ ।
শেষে বললেন
“আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই একটি জাতীয়তাবাদী সরকার । বারো বছর যাবত আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি । আমরা এ দেশের রাজনীতির বিশুদ্ধিকরণ করে এমন একটি দেশ ও সরকার গড়ব যেখানে কোন প্রকারের দেশদ্রোহীর কোন ক্ষমা নেই । যদি কেউ আমাদের এই জাতীয়তাবাদী দেশনীতির বিরোধিতা করেন তাদের কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হবে । বন্ধুত্বের হাত যদি কেউ বাড়ান সেটি আমরা সাগ্রহে গ্রহণ করবো.”
তুমুল করতালি ।
ভাবী একনায়কের সঙ্গে শিল্পপতি ও ধনপতিদের সেতু বন্ধনের প্রারম্ভ
ক্রমশ
*”Some states have an army, the Prussian Army has a state” Voltaire
আউগুস্ট থুসেন স্ত্রাসে ১
ডুসেলডরফ
ফ্রিডরিখ থুসেন (১৮৭৩-১৯৫১ )
পিতা আউগুসট থুসেনের ইস্পাত ও খনিজ সাম্রাজ্যের একমাত্র অধীশ্বর ( জার্মানির ৭৫% আকরিক লোহা, দু লক্ষ কর্মী)। ১৯২৩ সালে হিটলারের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে পাঁচ লক্ষ গোল্ড মার্ক দান করেন -কমিউনিস্ট পার্টির অরাজকতা থেকে নাৎসি পার্টি জার্মান শিল্পকে বাঁচাবেন এই আস্থায় । পার্টি মেম্বারশিপ নম্বর ২, ৯১৭, ২৯২ । মোহভঙ্গ হতে দেরি হয় নি -ইহুদি এবং ক্যাথলিকদের প্রতি দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে হিটলারকে চিঠি লেখেন। ফলং পদচ্যুতি , দাখাউ কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে সাময়িক আবাস। সেই কারণে তাঁর নাৎসি মেম্বারশিপকে ক্ষমা ঘেন্নার চোখে দেখা হয়েছিল । সেই প্রতিষ্ঠান এখন থুসেন ক্রুপ নামে পরিচিত । পরিবারের শেয়ার প্রায় শূন্য , ক্রুপের ২১% । স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ফ্রাঙ্কফুর্টে কাজ করার সময়ে জয়েন্ট ম্যানেজার হ্যারমান এরেনবেরগারের সঙ্গে ডুসেলডরফ অফিসে যেতাম । রিসেপশনের দেওয়ালে তাঁর ছবি দেখেছি । আমার আলোচনার পার্টনার ছিলেন ফ্রিডহেলম বাবেরসকে । কোন কোম্পানীকে তিনি সবসময় "আউটফিট "বলতেন যেমন স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া একটি আউটফিট !
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।