রুমামিস
আমি রুমা। একজন সাধারণ মেয়েমানুষ, ইস্কুলে পড়াই আর বাড়িতে সংসার দেখি। আমার কোনও গুণ নেই, এমনকি একটা ডাকনামও নেই। ছিলও না কোনোদিন। নামটাও এত সাধারণ যে উচ্চারণ করতে, বানান লিখতে কেউ কোনোদিন ভুল করে নি। ইস্কুলের ছোটক্লাসে পড়াই। বাচ্চারা চুপ করে পড়া শোনে, তবে সেটা কতটা আমার পড়ানোর গুণে আর কতটা প্রিন্সিম্যামের ভয়ে জানিনা। মাথাও ঘামাই না। ক্লাসে যাই পড়া দিই, সময় থাকলে পড়া নিইও, হোমওয়ার্কের খাতা কারেকশানের জন্য নিয়ে চলে আসি। মানে আসতাম, দিতাম, নিতাম। গত বছরের গোড়ার দিক অবধি এই সবই করতাম। এক বছরের ওপর বাড়ি বসা, ক্লাস-টাস সব অনলাইন। ভিডিও কলে পড়া বলে যাই, জিগ্যেস করি কারো কোনও প্রশ্ন আছে কিনা, ব্যস।
আজকাল মনে হয় আমি বোধহয় মরে গেছি কিন্তু টের পাচ্ছি না তাই আগের মতই কাজকর্ম করে যাচ্ছি। যারা জানে তারা আমায় দেখতে পায় না। আজকে ক্লাস থ্রিয়ের পড়া বলার সময় একবার তাকিয়ে দেখি একটা ইউজার গোল্লার মধ্যে কেবল একটা মোটাসোটা বেড়ালের ল্যাজ। হলদে রঙের ডগার দিকে ঈষৎ সাদা রোঁয়াওলা। ঐখানে শ্রেয়সের থাকার কথা। কোথায় গেল শ্রেয়স? প্রিন্সিম্যাম উপস্থিত থাকেন সব ক্লাসেই। নজর রাখার জন্য। ওঁকে মেসেজ করলাম ল্যাজের স্ক্রিনশট দিয়ে, কিছু বললেন না। মাঝে উঠে ফুন্টুকে খেতে দিলাম,আমার দিকে না তাকিয়েই চুপচাপ খেয়ে নিল। ক্লাসের কলে ফিরে দেখি তিরিশটার মধ্যে প্রায় ষোলো সতেরোটা ইউজার গোল্লায় নানারঙের বেড়ালের মুন্ডু বা ল্যাজ চলে এসেছে। প্রোটিন কম খাওয়া হচ্ছে বোধহয়, রোব্বারে মাংস আনতে বলব।
বিঠ্ঠল ভাউ
আমি বিঠঠল সালকে। চৌমাথার মার্কেটে আমার কয়েকটা দোকান আছে ভাড়া দেওয়া। বাকি দোকানগুলো আগ্রওয়াল ভাইয়ার। সরকার থেকে যেই খবর এলো এই চৌমাথায় মার্কেট হবে, আমি পুরো মার্কেটের টেন্ডার জমা করেছিলাম। পরে দেখলাম আগ্রওয়াল ভাইয়ার সাথে মিলেজুলে মার্কেট বানালে লাভই আছে। লোকাল থানেদার আমার রিস্তেদার টুকটাক গুন্ডাগর্দি আমি সামলে নেব। টাকা পয়সার দিকটা আগ্রওয়াল ভাইয়া দেখে নেবেন। ইলেকশান সিজিনে টাকা লাগে বহুত। তা মার্কেট ভালই চলে, পজিশানটা ভাল। এলাকাটা সিটি পিনকোডের মধ্যে এসে যাওয়াতে এদিকটায় ফ্ল্যাট বহুত বেড়েছে। দশ বারোখানা বড় বড় হাউজিং কমপ্লেক্স, সাথে দুটো বড় ঝোপড়পট্টি, কমসেকম পঁচিশ হাজার লোকের রোজানা সামানের যোগান দেয় এই মার্কেট।
নভরাত্রির সময়টায় ননভেজের দোকানে বিক্রিবাটা বহোত কম, বঙ্গালি, লোয়ার কাস্ট মারাঠি, সাউথি আর মহামেডানরা রোজ কেনে ননভেজ। আন্ডা আর চিকন আমিও খাই, তবে নভরাত্রি আর শাওনে খাই না। দেশগাঁওতে আমাদের পরিবারে কেউ ননভেজ খায় না। হাজার বারোশ মাইল দূরে কে আর দেখছে, মুলগা মুলগি দুটোকে বছরভরই ননভেজ খাওয়াই। ওদের তাকত, দিমাগ দুইই বাড়া দরকার। তা মার্কেটের ননভেজের দোকান আর ভেজ / ননভেজ রেস্টুরেন্ট আমারই, সবজি দুধ কেক পেস্ট্রি বিস্কুটও। গতবছর ওই খতরনাক বিমারি আসার পর থেকেই রেস্টুরেন্ট একেবারে মার খেয়ে গেছে। তবে কাঁচা সবজি, চিকন, আন্ডা আমি হোয়াটস্যাপে অর্ডার নিয়ে হোম ডেলিভারি করিয়ে দিই। মাটনও পাওয়া যায়, ওইটা আমার দোকানের বাইরে এক বঙ্গালি টেম্পোরারি দোকান বানিয়ে বিক্রি করে।
ইসমাইল
আমি ইসমাইল শেখ। মার্কেটের একমাত্র পাঁঠার মাংসের দোকানটা আমারই। বিঠঠল ভাউয়ের দোকানের গা লাগোয়া টিনের দেওয়াল করোগেটেড শিটের ছাদ দিয়ে দোকান বানিয়ে নিয়েছি। নিজে হাতে বোর্ড লিখেছিলাম ‘ইসমাইল’স মিট শপ’। পাঁঠা, খাসি, ভেড়া সবই পাবেন আমার দোকানে। এখানকার নিয়ম মেনে মাংসের দোকানের দেওয়াল মাটি থেকে চার ফুট। দেওয়াল আর ছাদের মধ্যে অনেকটা ফাঁক রাখতে হয় যাতে যে কেউ দেখতে পায় কোন জানোয়ার কাটা হচ্ছে। কোরবানি ঈদের টাইমে ইনিসপেক্টার ঘুরঘুর করে দুইবেলা। বিঠঠল ভাউ অবশ্য দেখে নেয় ওদিকটা, তাই তেমন ঝামেলা কিছু হয় নি এখনও। তবু ভয় লাগে। হোয়াটস্যাপে যা সব খবর দেখি। কবে জানি এসে আমার চপার দিয়েই আমাদের কেটে রেখে যায়! সেরম হলে বাড়ির লোক তো জানতেও পারবে না কোথায় কি হয়ে গেল। করুনা এসে তবু এই ভয়টা কমেছে একটু।
করুনার আগে ভালই বিক্রি হত। এখানে বাঙালি আছে অনেক, সব বড় বড় চাকরি করে, ৭০০ টাকা কিলোর মাংসও এক ঝটকায় দুই আড়াই কিলো কিনে ফেলতে পারে। ভাউয়ের রেস্টুরেন্টে মার্কেটের থেকে ২০% কম রেটে মাংস দিতে হয়, তাও সব মিলিয়ে চলেই যাচ্ছিল। এ সালা বিঠঠল ভাউ বহুত চুতিয়া আছে, দোকানে বিক্রি হোক না হোক ওকে দিনে হাজার টাকা ভাড়া দিতেই হয়। পনেরোশো পার ডে করবে বলেছিল, তা করুনা এসে সব লক ডাউন হয়ে যাওয়ায় আর বাড়ায় নি। রুমামিসের বরটা আরেক হারামি। রোজ এসে একশো দেড়শো টাকা কম করতে বলে, এ কি জমিবিক্রি যে একশো টাকা কম নেব? ভেড়া ছাগলের দাম আছে, কিনে আনার ট্রান্সপোর্ট কস্ট আছে দোকানের ভাড়া আছে, হেল্পারের মাইনে আছে। শুনছি ওই মড়ার অসুখ আবার এসেছে, হেল্পারের দেশের ওদিকে লোকে নাকি ধড়ফড়িয়ে মরে যাচ্ছে, সরকার চেপে দিচ্ছে খবর মিডিয়ায় আসছে না।
নধর কালো পাঁঠা
আমি পাঁঠা, চকচকে কালো একটু নাদুস নুদুস। খুব কচি নই তবে আর বেশি বাড়ার সুযোগ পাব না। ইসমাইলের মাংসের দোকানে আমার ডিম্যান্ডই সবচেয়ে বেশি। এখানে বাঙলার লোক অনেক। ইসমাইল বাঙালি, কোথা থেকে এসেছে কে জানে! চত্বরে অন্য দোকানের মুলাজিমদের সাথে আড্ডায় বলছিল ‘আমরা দুজন বিদিশি সুজজাল্যান্ডের লোক’, ও আর বেকারির ছোকরা। বাকিরা চোখ মটকে হাসছিল। ওদের আড্ডা আজকাল ইসমাইলের দোকানেই বসে বেশি, ওই বদঅসুখটার জন্য সবাই নাকি চারদিক খোলা মাথার ওপরে ছাদওলা দোকান খোঁজে। চারদিক ঢাকা জায়গায় বসতে চায় না। এমনিতে দোকানগুলো আর্ধেকের বেশি লোক ছাড়িয়ে দিয়েছে। ভাউয়ের সবজি, দুধ আর কিরানা, তিনটে বড় দোকানের জন্য দেড়খানা লোক। ননভেজ আর কেকপেস্ট্রির দুটো দোকান সামলায় একজন, ইসমাইলের হেল্পার সুরজ, টুকটাক করে দেয় দরকারমত।
ভেড়ার সাপ্লাই বন্ধ আছে দুই তিনমাস তাই আমাদের ডিম্যান্ড আরো বেশি। আমরা তিনশোজন একটা গাড়িতে গাদাগাদি হয়ে এলাম। জায়গা জায়গাকার পাঁঠা ছাগল একসাথে তুলে ঠিকেদার চালান দিয়েছে। আমার প্রথম মালিকটার কালিপুজোর মানত ছিল, লক ডাউনে সব টাকা ফুরিয়েছে তাই আমায় বেচে দিল। আর কটাদিন বেঁচে নিলাম, কটা জা’গা দেখে নিলাম। এই দোকানে আমরা পাঁচ জন আছি। সুরজ রোজ তিনবার খেতে দেয়। রাতে আমাদের সাথেই শোয় ওরা। সুরজের বাড়ি উত্তরে, পাহাড়ের কাছে কোন গাঁয়ে। শহরে ছিল ক’বছর। তারপর ওরা এলো, একহাতে বড় বড় লাঠির মাথায় আগুন আরেক হাতে চপার চাক্কু নিয়ে। আরেকদলের হাতে ছিল বন্দুক, রাইফেল। সুরজদের ঝোপড়পট্টি চারদিক দিয়ে ঘিরে ওরা মারতে শুরু করেছিল গুদুম গুদুম দুম। আর সব চালে বুলিয়ে দিল আগুন। খড়, কঞ্চি কাগজের চাল, দাউদাউ জ্বলে যায় পলকে।
মেয়েমদ্দ বাচ্চারা পালাতে চাইছিল। ওরা মেয়েদের টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, বাচ্চাদের আগুনে ছুঁড়ে দিচ্ছিল আর মরদদের মাথায় বাড়ি। বলতে বলতে সুরজ কাঁপছিল, গোঙাচ্ছিল। ইসমাইল ওকে জল খাওয়ায়, জিগ্যেস করে লুটেরারা কোন ধ্বনি দেয় নি? সুরজ কেমন চুপ হয়ে যায়, খুব আস্তে বলে ‘আল্লা হু আকবর’ তারপর বাতাসের স্বরে ফিসফিস করে বলে ‘আমি দেখেছি ওদের অনেকের কপালে কমলা টিকা ছিল, লিডারের হাতে প্রধান নৌকরজির ফোটু ছিল’। ইসমাইল ঝাঁকি দিয়ে সোজা হয়ে বসে সুরজের মুখ চেপে ধরে ‘চুপ চুপ। খবরদার এইসব এখানে আর কাউকে বলবি না, আমার জানও চলে যাবে। সুরজ হিক্কা তোলে, মাথা নাড়ায় - না কাউকে বলবে না। সেদিনই ওরা ঠিক করে নেয় হেল্পারের নাম হবে সুরজ। কখনো দুজনে বসে দেশের বাড়ির গপ্প করে। কিছু টাকা জমলে দেশে ফিরবে, একটু জমি কিনবে বাড়ি সারাবে। খেতি জমি বৌ বাচ্চা এইসব।
রুমামিস
কয়েকদিন ইস্কুলে যেতে হয়েছিল ক্লাস টেস্টের রিপোর্ট জমা করতে, অনলাইন খাতার প্রিন্ট আউট নিয়ে নম্বর দিয়ে জমা করতে। প্রিন্সিম্যামের হুকুম। প্রিন্ট আউট নিতে আমার ভুল হচ্ছিল, প্রিন্সিম্যাম রেগে উঠছিলেন। ভূগোলের নয়না ফটাফট প্রিন্টগুলো নিয়ে আমায় দিয়ে নিজেরটা নিতে নিতে জিগ্যেস করল কী হয়েছে? আমি এত অন্যমনস্ক কেন? আমিই কি জানি ছাই কেন! ঠিক ছিল পয়লা বৈশাখে বাড়ি যাবো আমরা। ফুন্টুর বাবার ছুটি নেই, ফুন্টুরও পরীক্ষা পড়ল ওই সময়। এদিকে চারদিক থেকে অসুখ বাড়ার খবর আসছে। বাবা, মা ওদের সাথে কি আর কখনো দেখা হবে? দাদা বৌদি রিন্টুর সাথে? বাবার তিনদিন ধরে জ্বর, মা আজ সকালে বলল। তারমানে খুব বেড়েছে নাহলে বলত না। মা’র গলাও বসা ভাঙা ভাঙা। স্বীকার করল না খালি বাবার কথাই বলল। টেস্ট বুক করেছে, কেউ স্যাম্পল নিতে আসে নি এখনো। বৌদিকে ফোন করলাম, স্যুইচড অফফ।
বেড়ালের ব্যপারটা কাউকে জিগ্যেস করতে কেমন বাধো বাধো ঠেকল। আজকাল কলের প্রায় সবকটা ইউজার গোল্লাতেই নানারঙের বেড়ালের ল্যাজ বা মুন্ডু থাকে, মাঝে মাঝে আবার নিজেদের মধ্যে জায়গা বদলাবদলিও করে। কিন্তু অন্যরা কেউ কি বেড়ালের ল্যাজ দেখে না? ফুন্টুর বাবাকে মাংস আনতে বলছি কবে থেকে। মার্কেটে যায় সপ্তাহে ক’বার, ইসমাইলের পাঁঠার দোকান থেকে অন্তত কিলো খানেক নিয়ে আসলেই হয়। বললেই রেগে ওঠে ‘মোল্লার দোকানের জন্য অত পিরিত কিসের তোমার?’ আশ্চর্য্য কথা! তোমার অত আপত্তি থাকলে হেল্পারটাকে দিয়ে কাটিয়ে আনলেই পার। অন্তত ফুন্টুর কথা তো ভাববে! ভাউয়ের থেকে সেই কটা ডিম আর একগাদা সয়াবড়ির প্যাকেট নিয়ে আসে খালি, চিকেনও আনে না আজ চারমাস। ইস্কুল আমার মাইনেটা কমিয়ে অর্ধেকের কম না করে দিলে আমিই নিয়ে যেতাম। বড্ড ক্লান্ত লাগছে, গা’টাও কেমন ম্যাজম্যাজ করছে।
বিঠঠল ভাউ
বিমারি আর মন্দি একসাথে এসেছে। গতবারের লক ডাউনে মন্দি চেপে বসে। তাও আটকে পড়া লেবারদের খাওয়ানোর জন্য এনজিওওয়ালে অনেক ফান্ড উঠিয়ে খাবার কিনে দিয়েছে, তাতে কিরানা দোকানের বিক্রি কমে নি বরঙ বেড়েছে। প্রথমে দুধ সাপ্লাই আসছিল না, পোলিসওয়ালে গাড়ি আটকাচ্ছিল, দুধের দাম বেড়ে গেল। শুরুতে এলাকার লোক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে বেশি দাম দিয়ে দুধ কিনে নিয়ে গেছে। আস্তে আস্তে যেমন যেমন দাম বেড়েছে লোকে কেনা কমিয়েছে। রুমামিসের বর, ভোরা আঙ্কল, অঙ্কুরজি সব্বার রেস্ত কমেছে, কেনাকাটি কমেছে। এর ওর মুখে শুনেছি এদের কোম্পানিগুলো পগার কমিয়ে দিয়েছে, দোকানে ঢুকে এখন হিসেব করে করে কেনে। অনেকের চাকরি চলেও গেছে। রেন্টেড ফ্ল্যাটগুলো ছেড়ে দিয়ে কতলোক আপনা গাঁও ফিরে গেল। এই মওকায় দুটো ফ্ল্যাট সস্তায় কিনেই রাখলাম। বিমারি কমলে রেন্টে দিয়ে দিতে পারব।
গাঁও সাইড থেকে আবার বিমারির খবর আসছে। গুড়ি পড়ওয়ার পরেই লক ডাউন ডেকে দিল গবমেন্ট, তাউজির আসার কথা ছিল এই সাইডে, আটকে গেল। গিরীশ ভাইয়া সৌদি থেকে ফিরেছে গত মাসে। আজ খবর এল তাউজি তাঈজি ভাইয়া ভাবি ওদের সবার তেজ বুখার। একসাথে সব্বার কী করে হল, আজিব! হাইওয়ের সাইডে আগ্রওয়াল সাহেবের বালাজি অটোমবিলেও বিক্রি খুব কম। সাহেব খদ্দের খুঁজছেন, পেলেই পুরোটা বিক্রি করে দেবেন। প্রধান নৌকরজি ‘সব কা সাথ দিল কা বাত’এ ধৈর্য্য রাখতে বলেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। দাবাই এসে গেছে, পেয়ারে নৌকরজি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বানিয়েছেন এই দাবাই। তাউজিদের ওদিকে দাবাই যায়ই নি এখনো, এদিকেও তো আসে নি। অত দাবাই নৌকরজি কাদের দিয়ে দিলেন? রুমামিসকে দেখো কেমন মাতোয়ালা আদমির মত হেঁটে যাচ্ছে। ‘ম্যাডামজিই সব ঠিক তো হ্যায়?’ যাহ শুনলই না!
চপার
আমি হাড্ডি কাটার চপার। বালি, পাথরে শান দেওয়া ধারালো চকচকে ফলার চপার। ইসমাইলের মাংসের দোকানের প্রধান চপার এখন আমি। আগে ছিলাম সেই উত্তরের বড় শহরে। সুরজ যখন জান হাতে করে পালাচ্ছিল তখন আমাকে তুলে নেয় দুটো ঝোপড়ির ফাঁক থেকে। জন্ম আমার পুবঘেঁষা উত্তরের এক শহরে, সে জায়গা মরচেহীন ইস্পাত দিয়ে নানা সাইজের ছুরি, কাঁচি, চপার, ন্যাপলা ভোজালি, কুফরি তৈরির জন্য বিখ্যাত। ইস্পাতের কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম হয়। আমাকে যে ইস্পেশাল অর্ডার দিয়ে গরু মোষ কাটার জন্য বানিয়েছিল সে নিজে হাতে কোনদিন কিছু কাটে নি। তার দোকানে ছয়টা লোক ছিল হরেক জানবর কাটা, পিস করা, কিমা করার জন্য। এলাকায় গরু খাওয়া বন্ধ হতে মালিক যন্ত্র কিনল, চারটে লোক ছাড়িয়ে দিল। আমি রয়ে গেলাম হেড কসাইয়ের হাতে, ছাগল, ভেড়া কাটতাম। কালে কস্মিনে মোষও।
গরু খাওয়া বন্ধ হলেও কাটা বন্ধ হয় নি, যন্ত্রে কেটে কেমিক্যাল দিয়ে প্যাকেটে ভরে সেলাই করে ঠান্ডা করে রাখত। পরে বড় গাড়ি এসে নিয়ে যেত বাইরের দেশে। হেড কসাই আর একজনে মিলে ডেলি দোকানের মাংস কাটা থেকে বাইরের সাপ্লাইয়ের প্যাকেট বানানো সবই সালটে নিত। মালিক সারাদিন বসে হাতে একটা ছোট চৌকোমত আলোজ্বলা বাক্স, মোবিল বলে, নিয়ে কিসব দেখত। তারপর সেই ঠান্ডার রাত্তিরে মালিক এসে দোকান খুলে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল, কত ছোট বড় ঝুগগি, দাউদাউ আগুন, বন্দুক চলল গুদুম গুদুম গুম। একটা ইয়ামদ্দ কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে একটা মেয়ের হাত ধরে ঝোপড়িগুলোর পিছন দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল, মালিক গিয়ে আমায় তুলে বসিয়ে দিল মদ্দটার গলা বরাবর। গলাটা কেটে দু-আধখানা, ছোট্ট মাথাটা দুফাঁক হবার সময় বাচ্চাটা ‘আব্বাআআ’ চীৎকার দিয়েছিল, আওয়াজটা এখনও আটকে রয়ে গেছে আমার ভেতরে।
রুমার বর
আমি রুমার বর, লোকে আড়ালে বলে ‘রুমামিসের হারামি বরটা’। তা সে লোকে রামজিকেও আড়ালে কত কিছু বলত। ওতে কিছু যায় আসে না। আমি পড়াশোনায় ভালই ছিলাম, যেমন রেজাল্ট হলে চাকরি পাওয়াটা সহজ হয়, সেসব ছিল। বাড়ির কাছে চাকরি পাই নি। তা সে মড়ার দেশে আছেই বা কি? রুমার এতদূরে আসতে একটু আপত্তি ছিল। ওই ঘাসের মত মেয়েমানুষের কথায় কান দেবার বান্দা আমি নই। এখানে আসার পরে অবশ্য ঝামেলা কিছু করে নি। একটা প্রাইভেট ইস্কুলে কাজ খুঁজেও নিয়েছে। করোনা এসে সবকিছু এমন গোলমাল হয়ে গেল! আমার একটা প্রোমোশান ডিউ ছিল গত বছর, সেসব তো হলই না, ওদিকে স্যালারি কমিয়ে দিল ২৫%। প্রধান নৌকরজির ঝোলায় ডোনেশান দেবে বলে আমাদের পাওনা কেটে নিল। ওদিকে কোম্পানি প্রত্যেক কোয়ার্টারে প্রফিট পোস্ট করছে। এই সবে স্যালারি ঠিক হবার কথা হল, আবার সালা সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মোবাইলে দেখলাম গ্রামে গ্রামে নাকি অসুখ ছড়িয়ে গেছে, আরে গ্রামের ছোটলোকগুলো মরুক না! আর এই মোল্লাগুলো চারটে ছটা করে বাচ্চা পাড়ে, পিলপিলিয়ে বাড়ে এত হাসপাতাল আসবে কোত্থেকে? মহান নৌকরজি দিনরাত খাটছেন তাও সালারা এই নেই ওই নেই করে চেল্লাচ্ছে। এই যে ইসমাইলের পাঁঠার দোকান, এক পয়সা দাম কম করে না মোল্লাটা। বিঠঠল ভাউকে বলেওছি আমরা, হিন্দু এলাকায় একটা মোল্লার দোকান কেন? সে শালা চশমখোর ভাড়া নিচ্ছে, ব্যাস চুপ। ওদিকে রুমাও কিরম একটা হয়ে গেছে। সেই কবে থেকে ডিম সয়াবিন লাবড়া, লাবড়া ডিম সয়াবিনের ঘ্যাঁট চলছে। এদিকে ইস্কুলেও কিছু একটা ক্যাচাল পাকিয়েছে। আগের মত ‘রুমামিস আছেন’ করে ফোন আসে না, কীসব বলছিলও যেন। ধোর কে কান দেয় মেয়েছেলের প্যানপ্যানানিতে। ওর বাপ মায়ের খবর আসার পর থেকেই আরো কেমন হয়ে গেল।
ইসমাইল
দিনকাল বড় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য আমাদের জন্য কবেই বা ভাল ছিল? তবু ভাসতে ভাসতে এখানে এসে ভাবছিলাম এখানে বোধয় পার্মানেন থাকা যাবে। অবস্থা যা দাঁড়াচ্ছে পরাণটা বাঁচবে কিনা তাই সন্দেহ। মাটনের ডিমান্ড আছে এখনো, তবে খুব কম। একটা ৬-৭ কিলোর পাঁঠা কাটলে বিক্রি হতে তিনদিন লেগে যাচ্ছে। এদিকে লোকে এসে আগে কাটা পাঁঠা কিনতে চায় না। পাশের দোকান থেকে চিকেনের টাটকা রক্ত এনে মিশিয়ে টাটকা কাটা বলে চালাতে হয়। তাও এক একটা টেঁটিয়া কাস্টমার ধরে ফেলে। ফ্যাশানের কুত্তার জন্যও লোকে আর পাঁঠার নাড়িভুঁড়ি ছাঁট নিচ্ছে না, চিকেনের ছাঁট দিয়েই কাজ চালিয়ে দিচ্ছে। দোকানটা না তুলে দিতে হয়। রুমামিসের হারামি বরটা, ওর বন্ধুরা খুশি হবে। শালা চুগলখোর এসেছিল ভাউয়ের কাছে চুগলি কাটতে। কালো চকচকে মোটকু পাঁঠাটাই বাকি আছে দোকানে। পুরোটা একসাথে বিক্রি না হলে ওকে কাটব না।
সুরজদের দেশের বাড়ির ওখানে গরমেন্টের মাথা একটা কমলারঙের শরবতের বোতল। বোতলটা খতরনাক! ওদিকে গ্রামের পর গ্রাম করুনায় উজাড় হয়ে যাচ্ছে। কোন গ্রামে নাকি পনেরো জন মরে যাবার পর বোতলকে চিঠি লিখেছিল ডাক্তার চেয়ে, বোতল একটা বড় হাতুড়ি আর অনেকগুলো পেরেক পাঠিয়ে গ্রামটা ভেঙে দিয়ে বাড়িগুলো খুলে নিয়ে এসেছে। বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোকে কাছের শহরে বাঁদরের খাঁচায় গাদাগাদি করে ভরে আটকে রেখেছে, পায়ে শেকল হাতে হাতকড়া। খবর রটতেই আশেপাশের গ্রাম থেকে ভয়ে অনেকে পুবের দেশে পালিয়েছে, কেউ কেউ দক্ষিণে। পালাতেও তো টাকাকড়ি লাগে, যাদের নেই তারা মরে যাচ্ছে। প্রধানজির এক শিষ্য, নাচগান করত, তারও অনেক ভক্ত। সে শ্বাস উঠে যাবার পরেও নৌকরজিকে চিঠি লিখে সেরে উঠতে চেয়েছে। তার বৌ শ্বাস ওঠার ভিডিও তুলে হোয়াটস্যাপে ছড়িয়ে সারাতে চেয়েছে। তারপর ধড়ফড়িয়ে মরে গেছে।
রুমামিস
মা’গো ভেন্টিলেটারে বড় কষ্ট নাগো? বাবা তো তোমার কাছে ছিল না, অথচ তোমরা গেলে একইদিনে কয়েক ঘন্টার তফাতে। এত প্রেম ছিল তোমাদের! দেখে ত বোঝা যায় নি কখনো। তোমাদেরও সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয়েছিল। তোমার নতুন বৌ হয়ে আসার গল্প, ঠাকুমার ভালবাসা, শাসন সব গল্পই তো কতবার শুনেছি তোমার মুখে। এত প্রেম কিন্তু বুঝি নি একবারও। আর দাদাও তোমাদের এত্ত আদরের যে তাকেও চারদিনের মধ্যে ডেকে নিলে তোমাদের কাছে! দাদা ছিল তো সেই নাইজেরিয়া, কঅত্ত দূরে, অথচ গেল ঠিক তোমাদের পেছনে পেছনে। তোমাদের কাউকেই আমি একটিবারের জন্যও দেখতে পেলাম না। সরকার থেকেই সবকিছু করল আর সইসাবুদটুকু নিমাইকাকা। তোমাদের প্ল্যাস্টিক মুড়িয়ে প্যাক করে কেবল চোখ, নাক আর ঠোঁটকুই খোলা রেখেছিল। নিমাইকার পাঠানো ছবিতে দেখি তোমার মুখ হাঁ হয়ে দাঁত বেরিয়ে। বড্ড কষ্ট পেয়েছ মা’গো।
আমাকে তোমরা অবশ্য তেমন ভালও বাসতে না। একটা ডাকনামও দাও নি। সেই সেবারে আমি বেড়ালছানা কুড়িয়ে আনলাম, নাম দিলাম পুটুস। বাবা ওর মুখ চেপে ধরে মাটিতে ঠুকে দিল, সেই যে পালিয়ে গেল আর ওকে খুঁজে পেলাম না। ওর পুরো চেহারাটা আমার আর মনে পড়ে না জান। শুধু মুখটা, নাকের ডগায় দুই ফোঁটা রক্ত আর খাড়া হয়ে ওঠা ল্যাজটা। আমায় কাঁদতে দেখে দাদা বলেছিল ন্যাকাইচন্ডী। তবু দাদাই একটু খুঁজেছিল এদিক ওদিক। গঙ্গায় সাঁতার কাটায়ই শুধু বারণ ছিল না। সাঁতার কাটতে কাটতে ওপারের বিশালাক্ষীতলার ঘাট ছুঁয়ে ফিরতাম, দুবার তিনবার পাঁচবার। গপ্পবই পড়া আর গঙ্গায় সাঁতার এই দুটোই ছিল তোমাদের বাড়িতে আমার পছন্দের কাজ। জিম করবেট ছিল সবচেয়ে পছন্দ। কুমায়ুনের মানুষখেকো, রুদ্রপ্রয়াগের চিতা – সেই চিতাটার কথা মনে আছে মা, যে মড়কের সময় মড়া খেয়ে খেয়ে মানুষখেকো হয়ে গেছিল?
মহামারীর সময় লোকের কাছে অত মড়া পোড়ানোর সময় বা দরকারি কাঠকুটো থাকে না, মুখে জ্বলন্ত কাঠকয়লা নদীতে ভাসিয়ে দেয় কিম্বা পাহাড় থেকে নীচের উপত্যকায় ফেলে দেয়। দেয় না আগে দিত। ১৯১৮ সালে। না না এখনই তো দেয়। এটা কত সাল? সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। যেমন পাঁচরকম তরকারি মিলেমিশে লাবড়া হয়ে যায়। কতদিন পাঁঠার মাংস খাই নি। কোনও মাংসই খাই নি। এবার একদিন আমি গিয়ে ইসমাইলের দোকান থেকে পাঁঠার মাংস নিয়ে আসবো। সুরজকে বলব দুই ইঞ্চি মাপের টুকরো করতে আর খানিকটা মেটে দিতে। বড় আলু দিয়ে ঝাল ঝাল তেলভাসা ঝোল। এত আঁশটে গন্ধ কেন? সাঁতার কাটতে জায়গা পাচ্ছি না একটুও, এগুলো কি চারপাশে? উঃ একটুও দম পাচ্ছি না, লম্বা লম্বা প্যাকেটমোড়া ওইগুলো কী আমাকে ঠেসে ধরছে, ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে জলের মধ্যে! এত মড়া! নাম নেই চেহারা নেই শুধু দড়িবাঁধা প্যাকেট। ওইপার কত দূর মা’গো?
চপার
মরণের গন্ধ পাই আমি। আমার জন্মই তো কাউকে মারার জন্য। সাধারণত জন্তু জানোয়ার, মাঝে মাঝে মানুষ, স্বাদ বদলানো খানিকটা। ইসমাইলের দোকানে ছাগল পাঁঠা কমতে কমতে এসে একটায় দাঁড়িয়েছিল। কালো তেল চুকচুকে পুরুষ্টু নধর ওই পাঁঠাটা ছিল অনেকদিন। গোটা মাংসটা বিক্রির উপায় না হলে কাটতে চাইছিল না ইসমাইল। মার্কেটে লোক আসা কমে গেল। কিছু লোক পালিয়ে গেল নিজের গাঁও, অনেকেই পালাতে পারল না। ঝুপঝাপ মরে যেতে লাগল সব। বাঙালিদের মধ্যে কারা যেন মরে গেল, একটা পুরো ফ্যামিলি ছিল বিশ বছরের ছেলেসুদ্ধু। ওদের চেনাশুনারা মিলে পুজোপাঠ আর খাওয়া দাওয়া করল, তখন কাটা হল পাঁঠাটাকে। তার আগের দিন সুরজ বালিতে ঘষে ঘষে আমাকে ধার দিয়ে পাঁঠার পাশেই মেঝেতে রেখে গেল। আর তো জানোয়ার নেই দোকানে। সে রাতে পাঁঠা আমাকে বলে গেছিল কিছু কথা। আগামীদিনের কথা।
ছাগলরা পাঁঠারা অনেক খবর পায়। টাটকা ঘাসেরা খবর দেয় ওদের, পোকারা খবর দেয়, বাতাস খবর দেয়। মরে যাবার আগের রাতে সেসব কিস্যা আমায় বলে গেছে। উত্তরদেশে, পশ্চিমদেশে মহামারী লেগে এত লোকে মরছে যে সারাদিনরাত চলে চলে চুল্লির লোহার দেওয়াল গলে গেছে, মাটিতে কবর দিয়ে দিয়ে আর দেবার জায়গা নেই, কবর খোঁড়ার লোক নেই। তখনো বেঁচে থাকা মানুষরা বডি হয়ে যাওয়া মানুষদের ‘নমামি গঙ্গে’ জপ করে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। নদীর চড়ায় অল্প একটু খুঁড়ে পুঁতে রাখছে। এখন তো আর চিতা নেই, বাঘ নেই, শকুনও প্রায় নেই। রোগাটে কুকুর, কাক আর দুই একটা ভাম বনবেড়াল পেটভরে খাচ্ছে সেসব। কোথাও বা কটা শেয়ালও। নদীপারের ঘাসেরা এসব দেখতে দেখতে হলুদ হয়ে শুকিয়ে গেছে, গুঁড়ো হয়ে মিশে গেছে মাটিতে হাড্ডির সাথে, খুলির সাথে। মিশে যাবার আগে বাতাসের কানে কানে বলে গেছে, দূরের কচিঘাসেদের বলে গেছে।
সিল্কের পাঞ্জাবি আর দামি দামি আঙটিপরা আগ্রওয়াল সায়েব আরো কজন লোককে নিয়ে এসে বিঠঠল ভাউয়ের সাথে পরামর্শ করে অনেকক্ষণ, তারপর ডাকে ইসমাইলকে। আমি দেখি ইসমাইল আর সুরজ বারেবারে আমার দিকে তাকায় আর মাথা নাড়ে ‘না না’। আরো কথা, চোখ পাকিয়ে শাসানো, একতাড়া নোট, একজন পকেট থেকে কমলা রঙের সরবতের বোতলের ছবি বের করে দেখায়। সুরজ ভয়ে সাদা হয়ে যায়। ইসমাইল ঘাড় নাড়ে ‘হ্যাঁ’। আবার ধার দিতে বসে আমাকে। মৃত্যুর গন্ধভরা নিকষ রাত নামে শহরে। বড় ভ্যানগাড়ি এসে দাঁড়ায় ইসমাইলের দোকান ঘেঁষে। একটা করে বডি নামে, ইসমাইল আমায় হাতে তুলে মাথার উপর তোলে নামায় ‘ঠাপ্প ফ্যাঁঅ্যাঁসস’ একটা ভোঁতা শব্দ। বডি সরে যায়, প্যাকেট হয়ে চলে যায় --- আবার আসে, আবার আমায় তোলে নামায় আবার ‘ঠাপ্প ফ্যাঁঅ্যাঁসস’ আবার --- আবার --- রাতের পর রাত।
এই শহরের নদীতে কোনও লাশ ভেসে উঠবে না।
কী ভয়ানক। হাড় হিম করা লেখা।
কাহিনীর সঙ্গে ফর্ম টা গেছে ভাল। নির্লিপ্ত। আরও ভয় বাড়িয়েছে।
ভয়ংকর আর নির্মম ! জীবের থেকে জড়েরাই যেন সত্যি কথা বলল বেশি।
এই গল্প মানুষের পাশবিকতাকে একেবারে নাঙ্গা করে ছেড়ে দিল।
ইতিহাস বইয়ে তো কেবল রাজারাজড়াদের কাহিনী থাকে। আজকাল রাজনীতির লোকজনের কেচ্ছাও থাকে। তাহলে সাধারণের, নিম্নবর্গের মানুষের, মনুষ্যেতরদের ইতিহাস কে লিখবে? সেই দায়টা বোধকরি সাহিত্যিকরা যেচে পড়ে কাঁধে নিয়েছেন। অবশ্যই সব সাহিত্যিক নন্। এখানে যা বর্ণিত হলো সেগুলো জীবন, সেগুলো anecdote, সেগুলো historical evidence। কখনো লাল, কখনো নীল, কখনো কমলা রঙের ইতিহাস বইগুলোর রূপকথার গল্পের বাইরে সত্যিকারের ইতিহাস।
খুবই 'ব্লো অন ইয়োর ফেস' লেখা। অভিনব আঙ্গিক। পড়ে খুব নাড়া খেয়ে গেছি!
শেষ করে দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন
ভয়ঙ্কর গল্প।
ভয়ঙ্কর।
এবং সুন্দর।
( লিখনধারায়)
দ-দি, আমার কেবল নেট বাজ পড়ে বিগড়ে গেছে। ফলে মোবাইল থেকে কষ্ট করে পড়লেও মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনি। অসম্ভব ভালো একটা গল্প। সতীনাথের জাগরীর কথা মনে পড়ছে। আর মনে পড়ছে রমানাথ রায়কে। এই মনে পড়া অবশ্য নিছকই সমাপতন। আপনাকে কুর্নিশ।
পড়তে দেরী হয়ে গেল একদিন। কিন্তু সত্যিই কী বা এসে যায়? চপার একদিন নামবেই, যে বেশেই হোক
স্বাতী, প্রতিভা, কেকে
তোমাদের মন্তব্য পড়ে আরো খানিক অন্ধকার পাকড়ে ধরার চেষ্টা করার উৎসাহ পেলাম। ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা।
তন্বী, রৌহীন,
সময়টা বড্ড দম আটকানো যে।
ইমানুল হক, ধন্যবাদ জানবেন। নতুন পাঠক উৎসাহ জাগায়।
পান্ডব
না পান্ডব, ইতিহাস লেখার দুঃসাহস আমি করি না। ক্ষমতাও নেই। হাতে থেকে যাওয়া ভাঙা কাচের টুকরোয় প্রতিফলিত ছায়াটুকুই দেখি। অন্যকে দেখাতে গেলে তার অর্ধেকই গায়েব হয়ে যায়। তবু...
এলেবেলে
আইব্বাস! আপনি গল্পও পড়েন, তাও আবার না-লেখকদের লেখা! :-)
ফর্মের জন্য হয়ত জাগরি মনে পড়েছে। আমার যদিও লেখার সময় মনে ছিল না। বরং মাই নেম ইজ রেড মনে পড়েছিল দুয়েকবার।
অওড়েছেন এবং জানিয়েছেন বলে ডবল ধন্যবাদ জানবেন।
*পড়েছেন হবে।
আমারও মাই নেম ইজ রেড মনে হচ্ছিলো, এটা ব্ল্যাকের বয়ান, এইটে সেকুরে বলছে। ভয়ঙ্কর সময়কে ধরতে ভয়ঙ্কর ন্যারেটিভই লাগে। পুরোপুরি সফল।
আমার পড়া দময়ন্তীর সেরা গল্প।
মাই নেম ইজ রেডের কথা এসেছে যথাযথ কারণেই। কথক বদলে বদলে যাচ্ছে, প্রাণী বা অপ্রাণী কথকের ভূমিকা নিচ্ছে।
দময়ন্তীর এর আগের কিছু লেখা পড়ে আমার বারে বারে যে লাইনগুলো মনে হয়েছে, আবার মনে হল -আরো বেশি করে মনে এল-
“How to tell a shattered story?
By slowly becoming everybody.
No.
By slowly becoming everything.”
শঙখ, ইন্দ্রাণী
দুঃখিত আগে খেয়াল করি নি এই দুটো মন্তব্য। ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
হ্যাঁ প্রাণীর চেয়েও অপ্রাণীকে কথক হিসেবে ভেবে খানিকটা লিখে ফেলার পরই হঠাৎ নকল সোনার কয়েনটার কথা মনে পড়ে যাওয়ায় খানিক থমকে ছিলাম। তারপর আবার...
অপ্রাণীরা সত্যিই যদি লিখতে বলতে পারত তাহলে না জানি কী সব বলে যেত।