তৃতীয় অধ্যায়
হেস্টিংস থেকে আমহার্স্ট – সংস্কৃতের আবাহন, সংস্কৃতির বিসর্জন
ক্রমে ক্রমে দেখা গেল য়ুরোপের বাইরে অনাত্মীয়মণ্ডলে য়ুরোপীয় সভ্যতার মশালটি আলো দেখাবার জন্যে নয়, আগুন লাগাবার জন্যে।
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালান্তর
তদানীন্তন বাংলার প্রচলিত রীতি অনুসারে, প্রতিটি নিজামত (ফৌজদারি) আদালতে অপরাধের মাত্রা অনুসারে শাস্তির বিষয়টা দেখভাল করতেন একজন কাজি, একজন মুফতি ও দুজন মৌলবি। অন্যদিকে দেওয়ানি আদালতে, হিন্দু ও মুসলমান প্রজাদের উত্তরাধিকার, বিবাহ, জাতপাত এবং ধর্মসংক্রান্ত যাবতীয় বিবাদের নিষ্পত্তির জন্য, যথাক্রমে শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ও মৌলবিদের সাহায্য বা পরামর্শ নেওয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। তবে এ বিষয়ে কেবল আদালতের কাজিরাই চূড়ান্ত রায়দানের অধিকারী ছিলেন। তখন রাজস্ব বিভাগের অল্প কিছু কর্মচারী আরবি-ফারসি জানতেন। প্রথম দিকে ইংরেজরা বাণিজ্যের প্রয়োজনে বা দরবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে, এই কর্মচারীদের সাহায্য নিত। পাশাপাশি মৌলবি ও পণ্ডিতদের সাহায্যে নিজেরাও শিখে নিত, কাজ চালানোর মতো ফারসি ও সংস্কৃত। কিন্তু ১৭৬৫-তে দেওয়ানি ও ১৭৭২-এ নিজামতের অধিকার হস্তগত করার পরে, তাদের আরও ভালোভাবে আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত জানার প্রয়োজন হল। তাই ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ বিচারব্যবস্থাকে শাসকস্বার্থে কার্যকর করার জন্য, শাসনকর্তা হেস্টিংস মনোযোগী হলেন আদালতে প্রচলিত ভাষাগুলি দ্রুত শিখে নেওয়ার কাজে।
কিন্তু শুধু বিচারব্যবস্থাকে নিজেদের কুক্ষিগত করলেই শাসকের চলে না, বাণিজ্যস্বার্থও তাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হয়। কারণ ক্রেতা তথা প্রজার ভাষা না বুঝতে পারলে সওদাও অসম্ভব, শাসনও সম্ভব নয়। তাই একই সময়ে ‘ধ্রুপদী’ আরবি-ফারসি-সংস্কৃত শেখার পাশাপাশি, শাসকরা ‘ভার্নাকুলার’ ভাষাসমূহ শেখার তাগিদ অনুভব করল। তবে শাসিতের ভাষার ওপর শাসকের দাপট যাতে অব্যাহত থাকে ও জ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে যাতে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়, সেই স্বার্থের প্রেরণা থেকে এক নতুন কার্যক্রম শুরু হল পুরোদমে। যুগপৎ শাসকের দাপট বজায় রাখা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার পরিকল্পনা শুরু হল মূলত দু’দিক থেকে – ইতিহাস ও ভাষা। রবার্ট ওর্ম A History of the Military Transactions of the British Nation in Indostan from the year 1745 (১৭৪৫), চার্লস গ্র্যান্ট Observations on the State of Society among Asiatic Subjects of Great Britain (১৭৯২), জেমস মিল The History of British India (১৮১৭), জেমস টড Annals and Antiquities of Rajasthan or the Central and Western Rajpoot States of India (প্রথম খণ্ড ১৮২৯, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৩২) প্রমুখ ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ, শাসকের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতীয় সভ্যতার ‘কাঙ্ক্ষিত’ ভাবাদর্শগত নির্মাণ ও ব্রিটিশের বাঞ্ছিত ‘সভ্যতার দূত’ তত্ত্বটির বৈধতা দেওয়ার কাজে নামলেন কোমর বেঁধে।
ইতিহাস ‘নির্মাণ’-এর সঙ্গেই চলছিল সাহেবদের ভাষা ‘নির্মাণ’-এর চাতুরিও। ফলত শুরু হল ভাষাকে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের পছন্দসই ব্যাকরণ বানানোর কাজ, যাতে ভাষার আসল পকড়টা সর্বদা শাসকের হাতে থাকে। এরই অবশ্যম্ভাবী আনুষঙ্গিক হিসেবে এল ভাষার অভিধান, ভাষার জরিপ (Survey), ভাষার সীমানা নির্ধারণ ইত্যাদি। একই সময় থেকে অর্থাৎ ১৭৭০ থেকে ১৭৮৫-র মধ্যে, ভাষার ক্ষেত্রেও তারা শাসনযন্ত্র মসৃণ রাখার নানা ‘যন্ত্রপাতি’ – ব্যাকরণ, অভিধান, পাঠ্যপুস্তক এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা থেকে অনুবাদ ইত্যাদি – যোগান দিতে থাকল। এই সময়ের কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল — আলেকজান্ডার ডাও-এর The History of Hindostan (১৭৭০), উইলিয়াম জোন্স-এর A Grammar of the Persian Language (১৭৭১), জর্জ হ্যাডলি-র The Practical and Vulgar Dialect of the Indostan Language Commonly Called Moors (১৭৭২), ফ্রান্সিস গ্ল্যাডউইন-এর English Persian Vocabulary (১৭৭৫), ন্যাথানিয়েল হ্যালহেড-এর A Grammar of the Bengal Language (১৭৭৮), জন রিচার্ডসন-এর A Dictionary of English, Persian and Arabic (১৭৮০), চার্লস উইলকিন্স-এর The Bhagvat-Geeta or Dialogues of Kreeshna and Arjoon (১৭৮৫), জন গিলক্রিস্ট-এর A Dictionary English and Hindustanee, Part I (১৭৮৭) ইত্যাদি।
অবশ্য হেস্টিংসের অনেক আগে থেকেই পাশ্চাত্যের নানা স্থানে, ভাষার ইতিহাস-নির্মাণ শুরু হয়েছিল। ১৬৯০ সালে জন লক Essay concerning Human Understanding প্রবন্ধে জানান, আফ্রিকানদের বুদ্ধি জন্তুজানোয়ারদের মতো। ১৭৫৩-তে ডেভিড হিউম Of National Characters প্রবন্ধে পৃথিবীর তাবৎ মনুষ্যকুলের চূড়ান্ত বর্ণবাদী ব্যাখ্যা হাজির করে, শ্বেতাঙ্গদের (বর্তমানের পরিভাষায় ককেশিয়ান) অন্য সমস্ত বর্ণের মানুষের চেয়ে উন্নত বলে দাবি করেন। প্রকৃতপক্ষে ষোড়শ শতক থেকেই ইউরোপীয় দার্শনিকরা, মানুষের ‘আদি’ ভাষার সন্ধানে ব্যাপৃত ছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, পৃথিবীর সমস্ত ভাষাই সেই আদিভাষা থেকে উদ্ভূত। এই আদিভাষাকে তাঁরা ‘পবিত্র’ ও ‘অভিজাত’ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। ফলে সমগ্র ইউরোপের জন্য, এই আদিভাষার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল লাতিন, গ্রিক ও হিব্রু।
এই ধারণা আরও জোরালো হয় ১৭৬৯ সালে হার্ডার-এর Essay on the Origin of Language প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পরে, যেখানে তিনি সমস্ত ভাষাকে একটিমাত্র ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যুক্তি দেখান। সমস্ত বর্ণের মধ্যে শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করে, প্রথম কেতাবি কিতাব প্রকাশিত হয় জার্মানির গোটিঙ্গন (Gottingen) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ব্রিটিশরা এই তত্ত্ব লুফে নেয়। শ্বেতাঙ্গদের ভাষাকে শ্রেষ্ঠতম বিবেচনা করে, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর নির্মাণ শুরু হয় এবং সেমেটিক (মূলত আরবি) ও হ্যামিটিক (উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত) ভাষাসমূহকে, অ-শ্বেতাঙ্গদের (মূলত বাদামি বর্ণের মানুষজন) ভাষা হিসেবে চিহিত করা হয়। এই ভাষাশ্রেণির একদম শেষ স্তরে আশ্রয় নেয়, ‘কালা আদমি’-দের নিগ্রিটিক (জুলু) বা সুদানিক (ইথিওপিয়া থেকে সেনেগাল অবধি প্রচলিত) ভাষাগুলি। এইভাবে তিনটি স্তরে থাকবন্দি হয় পৃথিবীর যাবতীয় ভাষা।
সংস্কৃতকে এই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীতে স্থান দেওয়া হলেও, তাকে ইংরেজরা অতীত ভারতবর্ষের লুপ্ত গরিমা হিসেবে চিহ্নিত করে। চিহ্নিতকরণের সময়ে সংস্কৃত সাহিত্যের অনেক আখ্যান-উপাখ্যানের নিদর্শন যে দেশীয় ভাষাতেও পুরোমাত্রায় বিদ্যমান, এই সহজ কথাটা তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিস্মৃত হতে বাধ্য হয়। বরং তারা এ কথা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে যে, সংস্কৃত ‘মৃত’ ভাষা এবং তার সঙ্গে বর্তমান উপমহাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতির যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে দেশে চালু সমস্ত ভাষাই হয় ‘তদ্ভব’ (dialects) নতুবা অপকৃষ্ট ‘দেশি’ (vernacular) ভাষা মাত্র। ফলে ভাষাকে তিনটি স্তরে থাকবন্দি করে ফেলার প্রক্রিয়া, এখানেও অব্যাহত থাকে। ভারতবর্ষে এই কাজটি প্রথমে এশিয়াটিক সোসাইটি ও পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে, বিদেশি সাহেবদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দেশি পণ্ডিত-মৌলবিদের সক্রিয় সহযোগিতায় শুরু হয়।
সাহেবদের এই সংস্কৃত ভাষাচর্চার ব্যাপারে বুদ্ধদেব বসু জানাচ্ছেন,
...আধুনিক ভারতে সংস্কৃতচর্চা একটি বিলেতফেরৎ সামগ্রী, ভারতের তুলো বা পাট নিয়ে শ্বেতাঙ্গরা যেমন বিবিধ প্রস্তুত পণ্যের আকারে ভারতের হাটেই চালিয়েছে, তেমনি তাদের বুদ্ধির প্রক্রিয়ায় সংস্কৃত বিদ্যাও রূপান্তরিত হ’লো নানা রকম ব্যবহারযোগ্য বিজ্ঞানে।১
তিনি আরও বলছেন,
...সমগ্রভাবে এ-কথাই সত্য যে সংস্কৃত ভাষার রচনাবলির মধ্যে শ্বেতাঙ্গরা দেখেছেন — গ্রীক বা লাতিনের মতো কোনো সাহিত্য নয়, রসসৃষ্টি নয়, সৃষ্টিকর্ম নয় — দেখেছেন ইতিহাস ইত্যাদির উপাদান, আর ভারতীয় মনের পরিচয় পেয়ে ভারতবাসীকে বশীভূত রাখার ও খ্রীষ্টানীকৃত করার একটি সম্ভাব্য উপায়। শেষের কথাটা, বলা বাহুল্য, ইংরেজ বিষয়ে বিশেষভাবে প্রযোজ্য।২
তাঁর এই বক্তব্যের উৎকৃষ্ট প্রমাণ রেখে গেছেন কর্নেল বোডেন। তিনি তাঁর সঞ্চিত অর্থে, ১৮১১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতের অধ্যাপকপদ প্রতিষ্ঠা করেন। একদা ওই পদে অধিষ্ঠিত স্যার মনিয়র উইলিয়ামস ১৮৯৯-এ রচিত সংস্কৃত থেকে ইংরেজি অভিধানের ভূমিকায় বলেছেন, বোডেন স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে এই পদ স্থাপনে তাঁর লক্ষ্য সংস্কৃত ভাষায় বাইবেল-অনুবাদের উন্নয়ন, যাতে তাঁর স্বদেশীয়রা ভারতবাসীকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারে।
অন্যদিকে হ্যালহেড A Grammar of the Bengal Language গ্রন্থে কোনও রাখঢাক না রেখে স্পষ্ট জানান, ‘Little indeed can be urged in favour of bulk of the modern Bengalees’।৩ ভাষাটা কেমন হওয়া ‘উচিত’ তা সাহেব জানেন বলে, ‘ফিরিঙ্গিনামুপকরার্থ’ ভাষা শেখার বইটিতে ‘প্রভু’ হ্যালহেড-এর কণ্ঠস্বর ক্রমে জোরালো হয়ে ওঠে। তাঁর কাছে বাংলা ভাষার ‘forms of letters’, ‘modes of spelling’ এবং ‘choice of words’ সবই ‘equally erroneous and absurd’। বাঙালিরা ‘can neither decline a word, nor construct a sentence’। ফলে তাদের লেখায় গিজগিজ করে ‘Persian, Arabic and Hindostanic terms’। মোদ্দা কথা, বাঙালি বলতে-লিখতে জানে না, তাই নিজের ভাষায় গুচ্ছের অন্য ভাষার শব্দ গুঁজে দিয়ে, ভাষাটাকে অকারণে ‘unintelligible’ এবং ‘obscure’ করে তোলে! তিনি ‘প্রকৃত’ বাংলা জানেন বলে ‘ভৃত্য’দের ভুল ধরতে পারেন, দেখতে পান ভৃত্যের ভাষার ‘improper structure’! তাই হ্যালহেড সাহেব ‘প্রভু’দের কড়া নির্দেশ দেন, তারা যেন ভাষাটার চর্চা এমনভাবে করে, যাতে ভাষাটা তাদের কাছে হয়ে ওঠে ‘a general medium of intercourse between the Government and its Subjects; between the Natives of Europe who are to rule, and the Inhabitants of India who are to obey’।৪
আর তাঁর দেখানো পথ ধরেই বাংলা ভাষা থেকে ‘অদরকারি’ আরবি-ফারসি-হিন্দুস্তানির ‘খাদ’ বিসর্জন দিয়ে শুরু হয়, বাংলার ‘নিখাদ’ সংস্কৃতায়ন প্রকল্প। পরবর্তীকালে যে প্রকল্পের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নেবেন ‘ভৃত্য’ বিদ্যাসাগর, তিনি অবশ্য ‘প্রভু’ হ্যালহেডের কথায় কোনও ভুল দেখতে পান না। বরং তাঁর নির্ভেজাল প্রশংসা করে তিনি লিখবেন –
১৭৭৮ খৃঃ অব্দে, বাঙ্গালা অক্ষরে সর্বপ্রথম এক পুস্তক মুদ্রিত হয়। অসাধারণ- বুদ্ধিশক্তিসম্পন্ন হালহেড সাহেব, সিবিল কর্মে নিযুক্ত হইয়া, ১৭৭০ খৃঃ অব্দে, এতদ্দেশে আসিয়া, ভাষাশিক্ষা করিতে আরম্ভ করেন। তিনি যেরূপ শিক্ষা করিয়াছিলেন, পূর্বে কোনও য়ুরোপীয় সেরূপ শিখিতে পারেন নাই।৫
প্রসঙ্গত, এই বিষয়টি লেখাটির তৃতীয় পর্বে বিশদে আলোচিত হবে।
A Grammar of the Bengal Language গ্রন্থে হ্যালহেড রীতিমতো গর্বভরে জানান, তিনিই প্রথম ইউরোপীয় যিনি ‘আবিষ্কার’ করেছেন ‘the Bengal language merely as derived from its parent Shanscrit’।৬ আর জোন্সকে তাঁর ভবিষ্যতের ‘আবিষ্কার’-এর পথ মসৃণ করে দেন এই ধরতাইটুকু দিয়ে যে, তিনি ‘the similitude of Shanscrit words with those of Persian and Arabic, and even of Latin and Greek’৭ দেখে চরম বিস্মিত হয়েছেন। বাধ্য ছাত্রের মতো ‘ভারততত্ত্ববিদ’ উইলিয়াম জোন্স, ‘মহাজন’ হ্যালহেডের দেখানো পথ অনুসরণ করে ১৭৮৬-র ২ ফেব্রুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটির তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশনের বক্তৃতায়, ঘোষণা করেন শাসকের সেই বহুপ্রার্থিত তত্ত্বটি। তিনি বলেন,
The Sanscrit language, whatever be its antiquity, is of a wonderful structure; more perfect than the Greek, more copious than the Latin, and more exquisitely refined than either, yet bearing to both of them a stronger affinity, both in the roots of verbs and in the forms of grammar, …there is a similar reason, though not quite so forcible, for supposing that both the Gothick and the Celtick, though blended with a very different idiom, had the same origin with the Sanscrit; and the old Persian might be added to the same family ….৮ [নজরটান জোন্সের]
এই বক্তৃতায় জোন্স হ্যালহেডের পথ ধরেই দেখান গ্রিক, লাতিন ইত্যাদি ভাষার শব্দভাণ্ডারের সঙ্গে সংস্কৃতের মিল যথেষ্ট।
আসলে কোম্পানি এই ধারণাকে সামনে রেখে দেখাতে চেয়েছিল, ব্রিটিশদের ভারতবর্ষে উপনিবেশ স্থাপন অন্যায় তো নয়ই, বরং বহু শতাব্দী আগে আর্যদের আগমনের মতোই এ দেশের পক্ষে তা যুগান্তকারী ও মঙ্গলজনক একটি ঘটনা। এর ফলে বিস্মৃতপ্রায় আর্য-ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রায় অভাবনীয় সেতুনির্মাণ সম্ভব করে তুলেছে ইংরেজরা; বলা বাহুল্য, সেজন্য দেশবাসীর ব্রিটিশদের প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ভারতবর্ষে বাণিজ্য প্রসার ও শাসন চালানোর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে ব্রিটিশরা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিল যে, এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বৈদিক আর্যদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতে অভ্যস্ত। ফলে এইরকম একটা তত্ত্বকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে, প্রাচীন আর্যদের মতো ইউরোপীয় আর্য-বংশোদ্ভূত ইংরেজরাও তাদের চোখে বরণীয় হয়ে উঠবে। উপনিবেশের প্রজাদের মন পেতে, এই অব্যর্থ দাওয়াই প্রথম দিকে বেশ কাজেও লেগে গিয়েছিল।
কিন্তু এই কৃত্রিম ‘আর্যতত্ত্ব’ চালু করতে গিয়ে, বিপদ এসেছিল অন্যদিক থেকে। কারণ একই সঙ্গে গ্রিক ও লাতিনের মতো সংস্কৃতকে ‘ধ্রুপদী’ ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি ইংরেজরা জানায়, কালের নিয়মে বদল হয়ে যে সমস্ত ভাষা তাদের থেকে ‘জন্মেছে’, সেগুলো ওই ধ্রুপদী ভাষা থেকে ‘বিচ্যুত’। শুধু তাই নয়, এই সাব্যস্ত করা ‘ধ্রুপদী’ ভাষাসমূহের সঙ্গে যে সমস্ত ভাষার ধাঁচ মিলল না, তাদের ‘খারাপ’ প্রাচ্যভাষা বলতে অসুবিধা হল না এই সাহেবদের। ততদিনে সংস্কৃতের চলন অনুযায়ী, বাংলা ভাষাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে নেওয়ার প্রয়াস শুরু হয়ে গেছে। কেবল কতগুলো অবাধ (arbitrary) চিহ্নের মিলজুলের ওপর নির্ভর করে এই যে সৃষ্টি করা হল ‘ভালো’ প্রাচ্য সংস্কৃত আর ‘খারাপ’ প্রাচ্য সেমেটিক গোষ্ঠীর কাজিয়া, তা ভারতবর্ষের বিভাজন হওয়ার আগে পর্যন্ত থামবে না।
এই সুযোগে, এহেন উইলিয়াম জোন্সের সংস্কৃত চর্চার সামান্য হদিশ নেওয়া যাক। জোন্স লন্ডনে নানা ভাষা শিখলেও সংস্কৃত জানতেন না। কলকাতায় আসার আগে, অক্সফোর্ডে শিক্ষক রেখে আরবি শিখেছেন তিনি – এমনটা অবশ্য জানা গেছে। ১৭৮৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েছেন বটে, অথচ তখনও অবধি সংস্কৃতর ‘স’ জানেন না। মুনশিদের দিয়ে আরবি, ফারসি আর হিন্দুস্তানি দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন কোনও ক্রমে। ১৭৮৩-র ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় আসা ইস্তক সংস্কৃত নিয়ে তাঁর কোনও উৎসাহের কথা জানা তো যাচ্ছেই না, বরং উইলকিন্সকে ১৭৮৪-র ২৪ এপ্রিল তিনি জানাচ্ছেন ‘life is too short and my necessary business too long for me to think at my age of acquiring a new language’।৯ এদিকে আদালতে সংস্কৃত শাস্ত্রবিচার করে রায় দিতে হয়, জোন্সের যাকে বলে একেবারে বেইজ্জত অবস্থা! হিন্দু শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদের খপ্পর থেকে নিজেকে বাঁচাতে এবং সে ভাষাটার পকড় নিজের হাতে তুলে নিতে, ১৭৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি উইলিয়াম পিট (জুনিয়র)-কে জানান তাঁর সংস্কৃত শেখার আসল মনোবাসনার কথা। ভাষা হিসেবে সংস্কৃত শেখা তাঁর উদ্দেশ্যে নয়, আসলে তিনি ভাষাটা শিখতে আগ্রহী যাতে তিনি ‘may be a check on the Pundits of the court’।১০
এর আগে অর্থাৎ ভারতে পদার্পণ করার প্রায় বছরখানেকের মধ্যে, এই উদ্দেশ্যে তিনি হাজির হয়েছেন কাশী, যদিও সেখান থেকে তাঁকে ব্যর্থমনোরথ হয়ে ফিরতে হয়েছে। এবারে ১৭৮৫-র সেপ্টেম্বর মাসে, তিনি সংস্কৃত শিক্ষায় হাতে খড়ি নিতে পাড়ি জমান নবদ্বীপ। ৮ সেপ্টেম্বর প্যাট্রিক রাসেলকে চিঠি লিখে তিনি জানাচ্ছেন, সেখানে তাঁর যাওয়ার একমাত্র কারণ হল এমন একজন উপযুক্ত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সন্ধান করা, যাঁর থেকে তিনি ‘the rudiments of that venerable and interesting language’১১ আয়ত্ত করে স্মৃতিশাস্ত্র অনুবাদ করতে পারেন। কিন্তু দুর্গাপুজোর কারণে, নবদ্বীপের ব্রাহ্মণেরা তখন নবদ্বীপ ছেড়ে দূরস্থ যজমানদের বাড়িতে চলে গেছেন। ফলে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের কাউকে না পেয়ে, অগত্যা অক্টোবর মাসে তিনি কলকাতা ফেরেন অব্রাহ্মণ (বৈদ্য) রামলোচন পণ্ডিতকে সঙ্গে নিয়ে। কৃষ্ণনগর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর উইলকিন্সকে চিঠিতে জানাচ্ছেন, তিনি এবারে রামলোচনের থেকে হিতোপদেশ পড়া শিখবেন।১২ মাত্র মাসখানেকের সংস্কৃত ভাষাশিক্ষার সঙ্গে ফারসি ভাষার জ্ঞান মিলিয়ে, আদালতে জজপণ্ডিতদের মত উলটে দিয়ে নিজের রায় দেওয়া শুরু করেন জোন্স। শুধু তাই নয়, রামলোচনের যাদুগুণে মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি সংস্কৃততে এত পারদর্শী হয়ে ওঠেন যে, ১৭৮৬ সালের ২৩ অক্টোবর হেস্টিংসকে জানাচ্ছেন, তিনি হিতোপদেশ -এর অনুবাদ করে ফেলেছেন এবং কিছুদিন পরেই ‘compiling a complete Digest of Indian laws’১৩-এর কাজে হাত দেবেন! লেখাটির দ্বিতীয় পর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হবে, হ্যালহেড-জোন্সের শাস্ত্রগ্রন্থ অনুবাদের নমুনা ও তার বিষময় ফলাফল।
সংস্কৃতর পাশাপাশি সাহেবদের ফারসি শেখার ধুম তখন তুঙ্গে, যা অবশ্য কিছুকাল পরে পুরো স্তব্ধ হবে। গভর্নর জেনারেল হওয়ার পরেই, হেস্টিংস মুর্শিদাবাদ থেকে রাজধানী স্থানান্তরিত করেছেন কলকাতায়। বাংলার নব্যধনী আশরফ মুসলমান ও হিন্দু দেওয়ান-বেনিয়ানদের বিশ্বাস অর্জন করে ‘আমি তোমাদেরই লোক’-এর বুজরুকির আড়ালে, আসলে নিজেদের শাসনব্যবস্থাকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করতে চেয়েছেন তিনি। ফলস্বরূপ ইংরেজদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপনিবেশিক শহরের শরীরে বহুমূল্য গয়না হিসেবে, উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে স্থাপিত হয়েছে প্রথমে কলকাতা মাদ্রাসা (১৭৮১) ও সামান্য পরে এশিয়াটিক সোসাইটি (১৭৮৪)।
১৮০০ সালে ওয়েলসলির শাসনকালে যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই কলেজে আরবি ও ফারসিকে পাঠ্যক্রমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করে, তার অন্তর্ভুক্তির জন্য হেস্টিংস লিখছেন —
To the Persian language as being the medium of all Political intercourse the first place ought to be assigned in the studies of the Pupils; and as much of the Arabic as is necessary to shew the principles of its construction and the variations…. The Persian language ought to be studied to perfection, and is requisite to all the civil servants of the Company, as it may also prove of equal use to the Military Officers of all the Presidencies.১৪
বাংলার এক মিলিটারি অফিসার উইলিয়াম ডেভি পইপই করে সাহেবদের সতর্ক করে দিচ্ছেন এই বলে যে, তাদের ফারসি ভাষাটা শুধু অনর্গল বলা শিখলেই চলবে না, এই ভাষায় লিখিত সমস্ত চিঠিও পড়তে হবে গড়গড়িয়ে এবং চিঠির গুরুত্ব বুঝে তার যথাযথ উত্তরও দিতে হবে নিজে হাতে লিখে। নাহলে ভয়ানক অনর্থ ঘটতে পারে, কারণ তাতে ‘the secret negotiations and correspondence of government are liable to be made public through the medium of the native Munchees, or writers, whom he will be obliged to employ and trust’।১৫ সাহেবদের এত এত আরবি-ফারসি-সংস্কৃতচর্চার জোয়ার নামছে একটাই কারণে। হেস্টিংস দ্বিধাহীনভাবে জানাচ্ছেন, সাহেবরা তাদের শাসনের সুবিধার্থে শাসিতদের সমস্ত কিছুকে নিজেদের পছন্দসই মাপে কেটে-ছেঁটে এমনভাবে হাজির করবে, যাতে ‘to graft Western notions and methods on to the main stem of Eastern Institutions’।১৬ আর এর পুরো রাশটা থাকবে কতিপয় ছোকরা সাহেব কর্মচারীর হাতে।
কর্নওয়ালিস মূলত রাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন বেশি। কলকাতা মাদ্রাসার ১০ বছর পরে কোম্পানির বেনারসের রেসিডেন্ট (এই রেসিডেন্টরা ছিলেন কোম্পানি ও দেশীয় রাজন্যবর্গের সেতুস্বরূপ। কোম্পানি দেশীয় রাজরাজড়াদের সামরিক নিরাপত্তা দিত, বিনিময়ে সেখানে বকলমে চলত কোম্পানির শাসন) জনাথন ডানকানের অনুরোধে সাড়া দিয়ে, ১৭৯১ সালে বারাণসীতে সংস্কৃত কলেজ স্থাপনেই শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান সীমাবদ্ধ। অবশ্য এর পেছনেও যে শাসকের যথেষ্ট স্বার্থবুদ্ধি ছিল, তা স্পষ্ট হয় ডানকানের বক্তব্যে। এই কলেজ সম্পর্কে ১৭৯২-এর ১ জানুয়ারি লর্ড কর্নওয়ালিসকে ডানকান লেখেন,
সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হওয়ার দরুন প্রধান উপকার হবে ব্রিটিশদের, হিন্দুদের চোখে আরও উজ্জ্বল হবে ব্রিটিশের ভাবমূর্তি। হিন্দুরা যখন দেখবে তাদের দর্শন ও শাস্ত্র সম্পর্কে অনীহা বা অবজ্ঞা দূরে থাক, সে সব বিষয়ে স্থানীয় রাজন্যবর্গের চেয়েও সরকারের আগ্রহ ঢের বেশি, তখন স্বভাবতই বিদেশি সরকারের প্রতি, হিন্দুদের মনে সম্ভ্রম ও সম্প্রীতির ভাব আরও জোরদার হবে।১৭
কলকাতায় মাদ্রাসা ও বারাণসীতে সংস্কৃত কলেজ স্থাপন করে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশীয় মানুষদের সামান্য সন্তোষবিধান করার পরে, লর্ড ওয়েলেসলি (কার্যকাল: মে ১৭৯৮-জুলাই ১৮০৫) নামেন, তাঁর দেশোয়ালি ভাইদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজে।
সওদাগরি ব্যবস্থা মসৃণভাবে চালাতে গেলে, সওদাগরদের সওদার ভাষা শিখে নেওয়া খুব জরুরি। শুধু তাই নয়, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার রায় যাতে শাসকস্বার্থকে অক্ষুন্ন রাখে, সেদিকে দৃষ্টি রেখে আদালতের ভাষার ওপর দখলদারিও প্রয়োজনীয় বটে। তাই ইংল্যান্ড থেকে আগত ছোকরা সাহেব কর্মচারীদের ভারতীয় ভাষাশিক্ষা শেখানোর উদ্দেশ্যে, ১৮০০ সালে কলকাতায় স্থাপিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। কলেজে মূলত শেখানো হত আরবি, ফারসি, হিন্দুস্তানি, সংস্কৃত, বাংলা ও অন্যান্য দেশীয় ভাষা। কলেজের প্রতিটি বিভাগের মূল দায়িত্বে ছিলেন একজন ইউরোপীয় অধ্যাপক – যেমন আরবি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন বেইলি (John Baillie), ফারসির দায়িত্বে এডমনস্টোন (N.B. Edmonstone), হিন্দুস্তানির দায়িত্বে গিলক্রিস্ট (John Gilchrist), সংস্কৃতের দায়িত্বে কোলব্রুক (Henry Colebrooke) এবং বাংলা ও অন্যান্য দেশীয় ভাষাশিক্ষার দায়িত্ব ছিল কেরি (William Carey)-র ওপর।
এই অধ্যাপকদের সহায়তা করার জন্য ছিলেন একজন প্রধান মুনশি, একজন দ্বিতীয় মুনশি এবং একদল অধস্তন মুনশি। তবে অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে এই সহায়কদের মুনশি বলা হলেও, বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের সহায়করা পণ্ডিত নামে পরিচিত ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, কেরির প্রধান পণ্ডিত ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, দ্বিতীয় পণ্ডিত রামনাথ বাচস্পতি এবং অধস্তন পণ্ডিতরা ছিলেন শ্রীপতি রায়, আনন্দচন্দ্র শর্মা, রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়, কাশীনাথ তর্কালঙ্কার, পদ্মলোচন চূড়ামণি ও রামরাম বসু। খুব স্বাভাবিকভাবেই এ ক্ষেত্রে অধ্যাপদের সঙ্গে, তাঁদের সহকারীদের বেতন বৈষম্য বহাল ছিল। ইউরোপীয় অধ্যাপকদের মাসিক বেতন ছিল ১৫০০ টাকা (তবে অধ্যাপক বেইলি ১৬০০ টাকা ও কেরি ৫০০ টাকা পেতেন); পাঁচটি বিভাগের প্রধান মুনশি মাসিক ২০০ টাকা, দ্বিতীয় মুনশি ১০০ টাকা এবং অন্যান্য অধস্তন মুনশি ৪০ টাকা পেতেন। ভাষাশিক্ষার আসল কাজটাএই পণ্ডিত বা মুনশিরাই করতেন, যদিও তাঁদের নিয়ন্ত্রণের রাশটা ছিল তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর। শিশিরকুমার দাশ যথার্থই মন্তব্য করেছেন –
The European teachers controlled the policy and the Indian teacher obeyed the orders. The British teachers in the College were not only inferior to their European counterparts, they were also inferior to their Indian colleagues, in respect of their knowledge of Indian languages. And yet the Indian scholars were not treated at par with the European scholars. …The Indian scholar knew that he was superior to his European master in respect of the knowledge of the Indian language, but he also realised that he was not competent to teach that language directly to foreign students without the help of the European teacher. He was primarily an informant, a mere tool in the exercise of language teaching to be handled by others.১৮
প্রসঙ্গত, ১৮১৩ সালের সনদের আগে মিশনারিদের কলকাতায় কার্যকলাপ চালানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও, কেরির ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটানো হয়েছিল।
ওয়েলেসলি কলেজটিকে গড়তে চেয়েছিলেন অক্সফোর্ডের আদলে, ১৮০১-এ কলেজে পড়াশোনা শুরু হওয়ার মাত্র দু-বছরের মধ্যে, এ বাবদ খরচ হয়েছিল ২,২৪,৫৫৫ পাউন্ড।১৯ বলা বাহুল্য, এহেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ব্যয়বহুল প্রকল্প লন্ডনস্থ কোম্পানির পরিচালকবর্গের আদৌ মনঃপূত ছিল না। ১৮০৪-এ এই খরচে রাশ টানতে ইংল্যান্ডে একটি কলেজ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যে সিদ্ধান্তের মূল মাথা ছিলেন চার্লস গ্র্যান্ট। এমব্রি জানাচ্ছেন:
…there was never any question in the minds of those familiar with the Company’s administration that Grant was the driving force behind the move to establish a college and was the author of the Report that outlined its constitution .২০
ঠিক হয়, ইংল্যান্ডের প্রস্তাবিত কলেজটিতে ভাবী সিভিলিয়ানরা দু-বছর বাধ্যতামূলক পড়াশোনার সঙ্গে, প্রাথমিক স্তরে ভারতীয় ভাষাসমূহ শিখবেন এবং তার পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে যে কোনও একটি ভারতীয় ভাষা শিখবেন। অবশেষে ১৮০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হেইলিবারি ( Haileybury) কলেজ, যেখানে ভবিষ্যতের সিভিলিয়ানরা ইউরোপীয় বিষয়সমূহের সঙ্গে ভারতীয় ভাষা হিসেবে আরবি, ফারসি ও হিন্দুস্তানি শিখতে শুরু করে। ১৮০৭ থেকেই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজটি মাত্র তিনজন অধ্যাপক-শিক্ষক – আরবি ও ফারসির জন্য বেইলি, হিন্দুস্তানির জন্য ক্যাপ্টেন মোয়াট এবং সংস্কৃত ও বাংলার জন্য কেরি – নিয়ে ক্রমে মৃতপ্রায় হতে শুরু করে।
১৮১৩-তে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্দেশে, কোম্পানিকে এ দেশের শিক্ষার দায়িত্ব খানিকটা স্বীকার করে নিতে হয়। ১৮১৩ সালে প্রবর্তিত নতুন সনদের ৪৩ সংখ্যক ধারা অনুযায়ী বলা হয়:
সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন ও উন্নতি এবং বিদ্বান ভারতীয়দের উৎসাহদান ও বিজ্ঞানের প্রবর্তন ও প্রসারের উদ্দেশ্যে, বাৎসরিক অন্যূন এক লক্ষ টাকা ব্যয় করা হবে।
যেহেতু সনদের এই ধারাটিতে লিপিবদ্ধ বিভিন্ন শব্দের ব্যাখ্যা নিয়ে ভবিষ্যতে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে তোলপাড় ঘটবে, সে কারণে সনদে ঠিক কী বলা হয়েছিল সেটা দেখে নেওয়াও জরুরি। সেখানে বলা হয় —
…a sum of not less than one lac of rupees in each year shall be set apart and applied to the revival and improvement of literature and the encouragement of the learned natives of India, and for the introduction and promotion of a knowledge of the sciences among the inhabitants of the British territories in India ....২১
তবে সনদের ধারাটিতে শিক্ষার জন্য এক লক্ষ টাকা ব্যয় ও বিজ্ঞান শিক্ষা প্রচলনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হলেও, কোম্পানির এই প্রতিশ্রুতি পালনের বিষয়টি কোনও ভাবেই বাধ্যতামূলক ছিল না।
সনদের ব্যাখ্যা নিয়ে ‘প্রাচ্যবাদী’ ও ‘প্রতীচ্যবাদী’দের মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠলেও কোম্পানি বিজ্ঞান শিক্ষাদানের প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয়। তাদের তরফে অজুহাত হিসেবে যুক্তি দেখানো হয়, পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের শিক্ষাদান জনসাধারণের যুক্তিসঙ্গত চাহিদার মধ্যে পড়ে না এবং তা দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। ১৮১৪-তে কোম্পানির পরিচালকবর্গ লন্ডন থেকে কড়া নির্দেশ পাঠান, ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অনুকরণে ভারতবর্ষে কোনও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। এই সময়ে গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ময়রা, মার্কুইস অফ হেস্টিংস (কার্যকাল: অক্টোবর ১৮১৩-জানুয়ারি ১৮২৩)। ভারতবর্ষের শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান সম্ভবত শূন্য। তবু তাঁরই ভূয়সী প্রশংসা করে বিদ্যাসাগর লিখবেন,
লার্ড হেষ্টিংস বাহাদুরের অধিকারের পূর্বে, প্রজাদিগকে বিদ্যাদান করিবার কোনও অনুষ্ঠান হয় নাই। প্রজারা অজ্ঞানকূপে পতিত থাকিলে, কোনও কালে, রাজ্যভঙ্গের আশঙ্কা থাকে না; এই নিমিত্ত, তাহাদিগকে বিদ্যাদান করা রাজনীতির বিরুদ্ধ বলিয়াই পূর্বে বিবেচিত হইত। কিন্তু লার্ড হেষ্টিংস বাহাদুর, এই সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করিয়া, কহিলেন, ইঙ্গরেজরা, প্রজাদের মঙ্গলের নিমিত্তই, ভারতবর্ষে রাজ্যাধিকার স্থাপিত করিয়াছেন; অতএব, সর্বপ্রযত্নে, প্রজার সভ্যতা সম্পাদন ইঙ্গরেজ জাতির অবশ্যকর্তব্য। অনন্তর, তদীয় আদেশ অনুসারে, স্থানে স্থানে বিদ্যালয় স্থাপিত হইতে লাগিল।২২
যাই হোক, অবশেষে বিস্তর টানাপোড়েনের পরে ১৮২৩-এর ১৭ জুলাই, কোম্পানির পরিচালকবর্গ বাংলায় শিক্ষাবিভাগ পরিচালনার জন্য দশ সদস্যবিশিষ্ট শিক্ষা সংসদ (General Committe of Public Instruction) স্থাপন করেন।
সংসদের সদস্যরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, শিক্ষাখাতে বরাদ বাৎসরিক অন্যূন এক লক্ষ টাকা প্রাচ্যবিদ্যার ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে। শিক্ষার বিষয় হবে সংস্কৃত ও আরবি-ফারসি সাহিত্য-ব্যাকরণ এবং প্রাচ্য দর্শন। সেই সঙ্গে ঠিক হয়, টোল-চতুষ্পাঠী, মক্তব-মাদ্রাসা এবং সংস্কৃত কলেজগুলি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাবে। ১৮২৩ সালে নতুন গভর্নর জেনারেলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন লর্ড আমহার্স্ট (কার্যকাল: অগস্ট ১৮২৩-মার্চ ১৮২৮)। এর আগে লর্ড মিন্টো (কার্যকাল: জুলাই ১৮০৭-অক্টোবর ১৮১৩) ১৮১১ সালে বারাণসী ব্যতীত বাংলার নবদ্বীপ ও বিহারের ত্রিহুতে, আরও দুটি সংস্কৃত কলেজ খোলার প্রস্তাব দিলেও তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত করা যায়নি। এখন বর্তমান শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, কাশীর সংস্কৃত কলেজটির মতো কলকাতাতেও অবিলম্বে সংস্কৃত সাহিত্য ও ব্যাকরণ এবং প্রাচ্য দর্শনের চর্চার জন্য, সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে, ১৮২৩-এর ১১ ডিসেম্বর রামমোহন লর্ড আমহার্স্টকে একটি দীর্ঘ চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে তিনি জানান যে, এদেশে এখন সংস্কৃত চর্চা এবং ভারতীয় দর্শনের চর্চা ক্ষতিকর হবে। তিনি স্পষ্ট বলেন, বেদান্ত-মীমাংসা-ন্যায় এসবের চর্চা ছাত্রদের চিত্তবৃত্তির উৎকর্ষ ঘটাবে না। বরং এই চর্চার ফলে, ছাত্ররা কেবল ব্যাকরণের কচকচি ও নানাবিধ চুলচেরা দার্শনিক কুযুক্তির দ্বারা তাদের মস্তিষ্ককে অযথা ভারাক্রান্ত করে তুলবে। তিনি আরও লেখেন –
এদেশে অজ্ঞতার অন্ধকার কায়েম করা যখন সরকারের অভিপ্রায় নয়, তখন সরকার নিশ্চয়ই আরও উদার ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে আগ্রহী হবে। এই উদার ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে থাকবে গণিত, জড় ও জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও শারীরবিদ্যা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানাদি। তাই যে অর্থ এখন প্রস্তাবিত কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা না করে এ দেশে আধুনিক শিক্ষার উপযোগী একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং ইউরোপে শিক্ষিত যোগ্য ও জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষক, গ্রন্থাগার, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার এবং তার জন্য যন্ত্রপাতি এই সব খাতেই ওই অর্থ ব্যয় করা উচিত।২৩ [নজরটান সংযোজিত]
মজার কথা এই, এর ঠিক তিন বছর পরে ১৮২৬ সালে কলকাতার বুকে রামমোহন স্থাপন করবেন, বেদান্তচর্চার জন্য আস্ত একটা কলেজ!
তবে সরকার থেকে তাঁর এই প্রতিবাদমূলক চিঠিকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সদ্য প্রতিষ্ঠিত সরকারি শিক্ষা সংসদের আপত্তিতে, রামমোহনের আবেদন বাতিল করে যথাসময়ে অর্থাৎ ১৮২৪ সালে, কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। শুধু তা-ই নয়, ১৮২৩ থেকে ১০ বছরের মধ্যে শিক্ষা সংসদ কলকাতা মাদ্রাসা এবং কাশীর সংস্কৃত কলেজের পুনর্গঠন ও উন্নতির ব্যবস্থা; দিল্লি এবং আগ্রায় প্রাচ্যবিদ্যা চর্চার জন্য কলেজ স্থাপন; সংস্কৃত ও আরবি বই প্রকাশের ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে উদ্যোগী হয়। আর মাত্র পাঁচ বছর পরে, এই সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হবেন কলেজের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শ্রেষ্ঠতম তারানাথ তর্কবাচস্পতি ভর্তি হবেন তারও বছরখানেক পরে।
১৮১৩-র সনদ অনুসারে, পাদরিরা ভারতবর্ষের সর্বত্র অবাধ যাতায়াতের অধিকার পান। সরকারি প্রচেষ্টা না থাকলেও এই সময়ে মূলত তাঁদের উদ্যোগে ও বেসরকারি প্রয়াসে, কলকাতার আশেপাশে নানা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় বেশ কিছু ইংরেজি স্কুল ও কলেজ। শিবনাথ শাস্ত্রী জানাচ্ছেন —
সুবিধা বুঝিয়া কয়েকজন ফিরিঙ্গী কলিকাতার স্থানে স্থানে ইংরাজী স্কুল স্থাপন করিলেন। সার্বরণ (Sherburne) নামক একজন ফিরিঙ্গী চিৎপুর রোডে একটী স্কুল স্থাপন করিলেন। সুবিখ্যাত দ্বারকানাথ ঠাকুর এই স্কুলে প্রথম শিক্ষালাভ করেন। মার্টিন বাউল (Martin Bowle) নামক আর একজন ফিরিঙ্গী আমড়াতলায় এক স্কুল স্থাপন করেন; সুপ্রসিদ্ধ মতিলাল শীল সেই স্কুলে শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন। আরটুন পিট্রাস (Arratoon Petres) নামক আর একজন ফিরিঙ্গী আর একটী স্কুল স্থাপন করেন; তাহার যাবতীয় ছাত্রের মধ্যে কলুটোলার কাণা নিতাই সেন ও খোঁড়া অদ্বৈত সেন প্রসিদ্ধ। ইঁহারা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ব্যাকরণহীন ইংরাজী বলিতে পারিতেন এবং লিখিতে পারিতেন বলিয়া তৎকালীন কলিকাতা সমাজে ইঁহাদের খ্যাতি প্রতিপত্তির সীমা ছিল না। ...লোকে সম্ভ্রমের সহিত ইঁহাদের দিকে তাকাইত।২৪
১৮১৭ সালে মূলত সম্ভ্রান্ত উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আর্থিক সাহায্যে, কুড়ি জন ছাত্রকে নিয়ে খোলা হয় হিন্দু কলেজ; পরের বছরে জোশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম কেরি ও উইলিয়াম ওয়ার্ডের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে শ্রীরামপুর কলেজ।
আসলে কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা পালাবদলের পালা অনুভব করতে পারছিলেন। তাঁরা ক্রমশ এই উপলব্ধিতে থিতু হচ্ছিলেন যে, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফারসির বদলে ইংরেজিতে পর্যাপ্ত বুৎপত্তি ছাড়া, দায়িত্বপূর্ণ সরকারি চাকরি পাওয়া আদৌ সম্ভব নয়। শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছেন:
তখন স্বীয় স্বীয় বালকদিগকে ইংরাজী শিখাইবার জন্য লোকের এমন ব্যগ্রতা জন্মিয়াছিল যে, হেয়ারের পক্ষে বাটীর বাহির হওয়া কঠিন হইয়াছিল। বাহির হইলেই দলে দলে বালক – “Me poor boy, have pity on me, me take in your school” বলিয়া তাঁহার পাল্কীর দুই ধারে ছুটিত। তদ্ভিন্ন পথেঘাটে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিগণ তাঁহাকে অনুরোধ-উপরোধ করিতেন।২৫
তবে কলকাতা শহরে ও তার আশেপাশে ইংরেজি শিক্ষার গোড়াপত্তন হলেও, তার প্রচলন যে বাংলার সর্বত্র তেমন হয়নি, সে কথা দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের জবানি থেকে শোনা যাক। এ সম্পর্কে বিদ্যাসাগরের সুহৃদ কার্তিকেয়চন্দ্র জানিয়েছেন –
তৎকালে কলিকাতা ও তৎসন্নিহিত আট দশ ক্রোশের বহির্দেশে ইংরেজী শিক্ষার বড় প্রথা ছিল না। সে সময় স্কুলের শিক্ষকের ও কেরাণীর পদ ব্যতীত ইংরেজীতে আর কোন কর্ম মফঃস্বলে দৃষ্ট হইত না; এবং এই সকল পদের বেতন বা মান অধিক ছিল না। দেশের সমস্ত জেলার রাজকার্য পারস্য ভাষায় নির্বাহ হইত। সে সকল পদের বেতন অধিক না হউক, উৎকোচ যথেষ্ট লাভ হইত, এবং পদেরও গৌরব বিলক্ষণ ছিল। এই কারণে মফঃস্বলের প্রধান পরিবারেরা আপন আপন সন্তানদিগকে ইংরেজী বিদ্যা শিক্ষা না দিয়া পারস্য বিদ্যা শিক্ষা দিতেন।২৬
এইভাবে একদিকে ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করার উদ্ভট আগ্রহ এবং অন্যদিকে তার সীমিত প্রসার, পরে জন্ম দিতে থাকবে আরও নানা শ্রেণিবিন্যাসের, তৈরি হবে থাকবন্দি নতুন এক সমাজ।
*****************************************************************
উল্লেখপঞ্জী:
১. বুদ্ধদেব বসু, কালিদাসের মেঘদুত, কলকাতা, ১৯৫৯, পৃ. ৩
২. তদেব, পৃ. ৪
৩. Nathaniel Halhed, A Grammar of the Bengal Language, Hoogly, 1778, p. 178
৪. তদেব, p. ii
৫. বাঙ্গালার ইতিহাস; গোপাল হালদার (সম্পাদিত), বিদ্যাসাগর রচনাসংগ্রহ, প্রথম খণ্ড, কলকাতা, ১৯৭২, পৃ. ২৬৫
৬. Nathaniel Halhed, A Grammar of the Bengal Language, p. xxi
৭. তদেব, p. iii
৮. ‘The Third Anniversary Discourse’, William Jones, The Works of Sir William Jones, Vol. I, London, 1799, p. 26
৯. Garland Cannon (ed.), The Letters of Sir William Jones, Vol. II, Oxford, 1970, p. 646
১০. তদেব, পৃ. ৬৬৪
১১. তদেব, পৃ. ৬৮০
১২. তদেব, পৃ. ৬৮২
১৩. তদেব, পৃ. ৭১৮
১৪. W. H. Hutton (ed.), ‘A Letter of Warren Hastings on the Civil Service of the East India Company’, English Historical Review 44, 1929, p. 635; উদ্ধৃত Bernard S. Cohn, Colonialism and Its Forms of Knowledge: The British in India, New Jersey, 1996, p. 24
১৫. Bernard S. Cohn, Colonialism and Its Forms of Knowledge: The British in India, p. 22
১৬. A. M. Davies, Strange Destiny: A Biography of Warren Hastings, New York, 1935, p. 71; উদ্ধৃত Bernard S. Cohn, Colonialism and Its Forms of Knowledge: The British in India, p. 61
১৭. H. Sharp (ed.), Selections from Educational Records, Part I, 1781-1839, Calcutta, 1920, p. 10
১৮. Sisir Kumar Das, Sahibs and Munshis: An Account of the College of Fort William, New Delhi, 1960, pp. 106-07
১৯. তদেব, পৃ. ২৭
২০. A.T. Embree, Charles Grant and British Rule in India, London, 1962, p. 195
২১. H. Sharp (ed.), Selections from Education Records, Part I, 1781-1839, p. 22
২২. বাঙ্গালার ইতিহাস; গোপাল হালদার (সম্পাদিত), বিদ্যাসাগর রচনাসংগ্রহ, প্রথম খণ্ড, কলকাতা, ১৯৭২, পৃ. ২৮২
২৩. H. Sharp (ed.), Selections from Education Records, Part I, 1781-1839, p. 101
২৪. শিবনাথ শাস্ত্রী, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, কলকাতা, ২০১৯, পৃ. ৫০-৫১
২৫. তদেব, পৃ. ৩০
২৬. দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়, আত্মজীবনচরিত, কলকাতা, ১৩৬৩, পৃ. ৮
টেক টিম। এই লেখাটার ইংরেজি ফন্ট আমাকে প্রায় গোটা বিশেক বদলাতে হল। তবুও তিনটে জায়গায় কিছুতেই বঙ্কিম হরফ এড়াতে পারলাম না। এ তো বড্ড মুশকিলে ফেললেন মশাইরা! পরের অধ্যায়গুলো তো আরও বড় হবে। তখন এইরকম করতে গেলে তো চিত্তির!!
দারুণ হয়েছে, এই যে First Principles থেকে আলোচনাটাকে তৈরী করছেন, অনবদ্য!
লেখাগুলো আরেকটু বিস্তৃত করলে কেমন হয়?
'লেখা হিসেবে' এইটি পচুন্দ হইল
ডিঃ অভিমত ব্যক্তিগত
ঈশ্বরচন্দ্রের বুদ্ধিমত্তা ও বিদ্যানুশীলনের প্রতিভার বৈচিত্র দেখে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক সকলেই বিস্মিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিভার যোগ্য সম্মান দেওয়ার জন্য প্রবীণ অধ্যাপক শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি মহাশয় প্রস্তাব করলেন, ঈশ্বরচন্দ্রকে একটি উপাধি দেওয়া দরকার। এই প্রস্তাব সমর্থন করলেন প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশ। আর এই ঐতিহাসিক প্রশংসাপত্রে স্বাক্ষর করলেন সংস্কৃত কলেজের ছ’জন অধ্যাপক— ব্যাকরণে গঙ্গাধর শর্মা, কাব্যে জয়গোপাল, অলঙ্কারে প্রেমচন্দ্র, বেদান্ত ও ধর্মশাস্ত্রে শম্ভুচন্দ্র, ন্যায়শাস্ত্রে জয়নারায়ণ ও জ্যোতিষশাস্ত্রে যোগধ্যান— যাঁরা প্রত্যেকেই নিজের বিষয়ে ছিলেন সে যুগের দিকপাল পণ্ডিত। খুব কম ব্যক্তিই সেযুগে এই উপাধি পেয়েছিলেন, তারানাথের পুত্র তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
এলেবেলে কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যেন তেন প্রকরণে ঈশ্বরচন্দ্রকে ডাউন করবার জন্য তারানাথকে আপ করলেন না?
"লার্ড হেষ্টিংস বাহাদুরের অধিকারের পূর্বে, প্রজাদিগকে বিদ্যাদান করিবার কোনও অনুষ্ঠান হয় নাই। প্রজারা অজ্ঞানকূপে পতিত থাকিলে, কোনও কালে, রাজ্যভঙ্গের আশঙ্কা থাকে না; এই নিমিত্ত, তাহাদিগকে বিদ্যাদান করা রাজনীতির বিরুদ্ধ বলিয়াই পূর্বে বিবেচিত হইত। কিন্তু লার্ড হেষ্টিংস বাহাদুর, এই সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করিয়া, কহিলেন, ইঙ্গরেজরা, প্রজাদের মঙ্গলের নিমিত্তই, ভারতবর্ষে রাজ্যাধিকার স্থাপিত করিয়াছেন; অতএব, সর্বপ্রযত্নে, প্রজার সভ্যতা সম্পাদন ইঙ্গরেজ জাতির অবশ্যকর্তব্য। অনন্তর, তদীয় আদেশ অনুসারে, স্থানে স্থানে বিদ্যালয় স্থাপিত হইতে লাগিল।"
কি মুশকিল, আর কতবার বলতে হবে যে 'বাঙ্গালার ইতিহাস' বইটা জন মার্শম্যানের 'আউটলাইন অফ দ্য হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল' বইয়ের অনুবাদ? এলেবেলে বিদ্যাসাগরের বক্তব্য বলে জবরদস্তি করে বার যা চালাতে চাইছেন তা আসলে মার্শম্যানের বক্তব্য! দেখা যাক মার্শম্যান তাঁর বইয়ের ২৫০-২৫১ পাতায় কি লিখেছেন।
"Before the days of Lord Hastings, no effort has been made to give the blessings of education to the people. It was considered bad policy to enlighten them, because their ignorance was regarded as a kind of security for the continuance of our empire. Lord Hastings rejected this barbarous notion. He declared that the British Government had been planted in India for the good of the people, and that it was the duty of the English to raise them in the scale of civilization. A new era commenced in his reign, schools were set up, and efforts to improve the Native mind, were, for the first time, encouraged."
আর কতবার মার্শম্যানের বক্তব্যকে বিদ্যাসাগরের নাম দিয়ে চালাবেন এলেবেলে মহাশয়? এভাবে ইতিহাসচর্চা হয় না, ইতিহাসের বিকৃতি হয়।
আলোচনা জমে ক্ষীর!
অরিন এবং এবড়োখেবড়ো দুজনের বক্তব্যই প্রণিধানযোগ্য।
মার্শম্যান প্রসঙ্গে এলেবেলের বক্তব্য শুনতে আগ্রহী।
তিনি অবশ্য ‘প্রভু’ হ্যালহেডেরকথায় কোনও ভুল দেখতে পান না। বরংতাঁর নির্ভেজাল প্রশংসা করে তিনি লিখবেন–
তিনি অবশ্য ‘প্রভু’ হ্যালহেডেরকথায় কোনও ভুল দেখতে পান না। বরংতাঁর নির্ভেজাল প্রশংসা করে তিনি লিখবেন–
"আর মাত্র পাঁচ বছর পরে, এই সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হবেন কলেজের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শ্রেষ্ঠতম তারানাথ তর্কবাচস্পতি ভর্তি হবেন তারও বছরখানেক পরে।"
এলেবেলে ওরফে দেবোত্তমের এই বক্তব্যের কি কোনো অথেনটিক তথ্যসূত্র আছে নাকি সবটাই 'আপন মনের মাধুরী মিশায়ে'?
বলেছিলাম, উত্তর দেব সোম বা মঙ্গলবারে। কিন্তু পরিচিত কিছু মানুষজন (মানুষ বলা যাবে তাঁদের?) লেখাটির দ্বিতীয় অধ্যায় থেকেই যাচ্ছেতাই রকমের অসভ্যতা শুরু করেছেন। দলের পাণ্ডাটি আমি 'ইংরেজির ম্যাস্টর' বলার জন্য লালায়িত, তাঁর পুরনো শাগরেদ যথারীতি এলেবেলে যে 'দেবোত্তম' - তা জানানোর জন্য মরিয়া। এবং এই সুযোগে তাঁর 'শ্রদ্ধেয়' দেবোত্তমদার থেকে 'অথেনটিক তথ্যসূত্র' জেনে নেওয়ার পুরনো অভ্যাস থেকে বিচ্যুত না হতে পারা! সঙ্গে নতুন 'সানাইয়ের পোঁ'-টি এই সাইটে এতই অপটু যে, জীবনের প্রথম পোস্টটি দুবার করে ফেলেছেন!!
সবাই জেনে রাখুন - আমার নাম দেবোত্তম। পদবি চক্রবর্তী। নিবাস নবদ্বীপ। ইংরেজির শিক্ষক। আশা করি আর ফাটা রেকর্ড বাজানোর প্রয়োজন হবে না। আজ অবধি গুরুতে এই ব্যক্তিকুচ্ছোর জয়গান কোনও ধারাবাহিক লেখায় হয়েছে কি না, সেটা গুরুর লোকজন বলতে পারবেন। বিগত পাঁচ বছরে, অন্তত আমার চোখে পড়েনি।
এঁরা যুক্তিবাদীর আড়ালে থাকা চরম ভক্তবাদীর দল। পাণ্ডাটি একটি ওয়েব ম্যাগাজিনে বিদ্যাসাগরকে নাস্তিক বলে আগেই বিবেচনা করে নিয়ে, পোবোন্দো লিখে আমার কাছে বিস্তর অপদস্থ হয়েছিলেন। এবং সেই ম্যাগাজিনেও আমি একবারের জন্যও ব্যক্তি আক্রমণ না করলেও, আমি যে চাকরিবাকরি করে ভুঁড়ি বাগিয়ে দিনান্তে ফোন বা ল্যাপটপ থেকে কমেন্ট করছি - জাতীয় আক্রমণ করতে ভোলেননি।
শকুনের নজর যথারীতি ভাগাড়ে থাকে। এঁদের দশাও তাই। বাতিল খাতা হচ্ছেন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে খলবল করা পুঁটিমাছ। এটা যে নদী এবং সেখানে পুঁটি এমনিতেই দম আটকে মারা যাবে, সেই বোধটুকুও নেই!! আর সানাই-এর পোঁকে চিরকালই করুণা করি।
যদি দ্বিতীয় পর্ব এখানে প্রকাশিত হয়, তাহলে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাখলাম এই ভক্তিবাদীদের দুই ধর্মবাবা রামকেষ্ট ভটচাজ আর আশীষ লাহিড়ীকে এই খোলা খাতায় স্বনামে লিখতে। দেখব তাঁদের খাঁচায় কত দম আছে।
রঞ্জনবাবু, নিজে লিখেছি বলে বলছি না। আজ অবধি বাংলা ভাষায় জোন্সকে এইভাবে খুল্লমখুল্লা নগ্ন করার কেউ হিম্মত রাখেনি। হ্যালহেডকেও। সেটা গুরুর দৌলতে আমি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেছি। যাঁরা করেননি, তাঁরা আমার থেকে একশো থেকে হাজার গুণ পণ্ডিত। কিন্তু দমে কুলায়নি। কেন এই দুই সাহেবকে নগ্ন করেছি, সেটা দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশিত হবে।
একটা দুশো বছরের পুরনো বাড়ির সবে প্লাস্টার খসানোর পর্ব শুরু হয়েছে। তাও যথেষ্ট রেখে-ঢেকে। বীরসিংহের মাটির বাড়িটাকে প্রথমে উপনিবেশের জল-সার দিয়ে পোক্ত একতলা বানানো হয়েছে। তার পরে স্বাধীন (!) ভারতে উপনিবেশের যেসব দাস রয়ে গেছে, তাঁদের অর্থে ও উদ্যমে বাড়িটাকে দোতলা বানানোর পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।
এতদিনে ছোটলোকরা শাবল-গাঁইতি নিয়ে নেমেছে। এখন প্লাস্টার খসানো হবে সাবধানে। ষষ্ঠ অধ্যায় থেকে একটা একটা করে ইট খুলে নেওয়া হবে। আর তৃতীয় পর্ব আসার আগেই বাড়ির ভিত পুরো ধসে যাবে। বাঙ্গালার ইতিহাস তৃতীয় পর্বের জন্য বরাদ্দ আছে। কিন্তু মাত্র দুটো কিস্তি আসতে না আসতেই যে হারে অসভ্যতা শুরু হয়েছে, সে কারণে সামান্য নমুনা।
বিদ্যাসাগর বইটির বিজ্ঞাপনে নিজে লিখেছেন,
বাঙ্গালার ইতিহাসের দ্বিতীয় ভাগ, শ্রীযুক্ত মার্শমন সাহেবের রচিত ইঙ্গরেজী গ্রন্থের শেষ নয় অধ্যায় অবলম্বনপূর্বক, সঙ্কলিত, ঐ গ্রন্থের অবিকল অনুবাদ নহে। কোনও কোনও অংশ, অনাবশ্যকবোধে, পরিত্যক্ত হইয়াছে, এবং কোনও কোনও বিষয়, আবশ্যক বোধে, গ্রন্থান্তর হইতে সঙ্কলন পূর্বক, সন্নিবেশিত হইয়াছে।
এই পুস্তকে, অতি দুরাচার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসনারোহণ অবধি, চিরস্মরণীয় লার্ড উইলিয়ম বেন্টিক মহোদয়ের অধিকারসমাপ্তি পর্যন্ত, বৃত্তান্ত বর্ণিত আছে।
যদিও আবশ্যকতা ও অনাবশ্যকতা বিচারের ভিত্তি সম্পর্কে তিনি একটি কথাও বলেননি!
তবে তা খুঁজে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ এই বই লেখার ২৪ বছর পরেও ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে তাঁর মনোভাবের যে কণামাত্র পরিবর্তন হয়নি, তার প্রমাণ তিনি নিজেই রেখে গেছেন এই বাক্যগুলো লিখে -
যেরূপ শুনিতে পাই, তাঁহারা রাজ্যভোগের লোভে আকৃষ্ট হইয়া, এ দেশে অধিকার বিস্তার করেন নাই; সর্বাংশে এ দেশের শ্রীবৃদ্ধিসাধনই তাঁহাদের রাজ্যাধিকারের একমাত্র উদ্দেশ্য।
সেই কারণে ৮৮ পৃষ্ঠা (তৎকালীন ১১ ফর্মা)-র বাঙ্গালার ইতিহাস-এ ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের জন্য ব্যয়িত হয়েছে মাত্র তিনটি বাক্য! হাঁড়ির ভাত সেদ্ধ হয়েছে কি না, তা পাকা পাচক বা পাচিকা খান পাঁচেক চাল টেস্ট করলেই বুঝে যায়! আশা করি, অতঃপর বাঙ্গালার ইতিহাসকে অনুবাদ বলে চালানোর ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগটি হজম করে নেওয়া হবে!!
পরবর্তী অধ্যায়ে জন মার্শম্যান আর তাঁর বাপ জোশুয়া মার্শম্যান আসবেন। তখন দেখবেন এঁদের আসল রূপ।
বলেছিলাম, উত্তর দেব সোম বা মঙ্গলবারে। কিন্তু পরিচিত কিছু মানুষজন (মানুষ বলা যাবে তাঁদের?) লেখাটির দ্বিতীয় অধ্যায় থেকেই যাচ্ছেতাই রকমের অসভ্যতা শুরু করেছেন। দলের পাণ্ডাটি আমি 'ইংরেজির ম্যাস্টর' বলার জন্য লালায়িত, তাঁর পুরনো শাগরেদ যথারীতি এলেবেলে যে 'দেবোত্তম' - তা জানানোর জন্য মরিয়া। এবং এই সুযোগে তাঁর 'শ্রদ্ধেয়' দেবোত্তমদার থেকে 'অথেনটিক তথ্যসূত্র' জেনে নেওয়ার পুরনো অভ্যাস থেকে বিচ্যুত না হতে পারা! সঙ্গে নতুন 'সানাইয়ের পোঁ'-টি এই সাইটে এতই অপটু যে, জীবনের প্রথম পোস্টটি দুবার করে ফেলেছেন!!
সবাই জেনে রাখুন - আমার নাম দেবোত্তম। পদবি চক্রবর্তী। নিবাস নবদ্বীপ। ইংরেজির শিক্ষক। আশা করি আর ফাটা রেকর্ড বাজানোর প্রয়োজন হবে না। আজ অবধি গুরুতে এই ব্যক্তিকুচ্ছোর জয়গান কোনও ধারাবাহিক লেখায় হয়েছে কি না, সেটা গুরুর লোকজন বলতে পারবেন। বিগত পাঁচ বছরে, অন্তত আমার চোখে পড়েনি।
এঁরা যুক্তিবাদীর আড়ালে থাকা চরম ভক্তবাদীর দল। পাণ্ডাটি একটি ওয়েব ম্যাগাজিনে বিদ্যাসাগরকে নাস্তিক বলে আগেই বিবেচনা করে নিয়ে, পোবোন্দো লিখে আমার কাছে বিস্তর অপদস্থ হয়েছিলেন। এবং সেই ম্যাগাজিনেও আমি একবারের জন্যও ব্যক্তি আক্রমণ না করলেও, আমি যে চাকরিবাকরি করে ভুঁড়ি বাগিয়ে দিনান্তে ফোন বা ল্যাপটপ থেকে কমেন্ট করছি - জাতীয় আক্রমণ করতে ভোলেননি।
শকুনের নজর যথারীতি ভাগাড়ে থাকে। এঁদের দশাও তাই। বাতিল খাতা হচ্ছেন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে খলবল করা পুঁটিমাছ। এটা যে নদী এবং সেখানে পুঁটি এমনিতেই দম আটকে মারা যাবে, সেই বোধটুকুও নেই!! আর সানাই-এর পোঁকে চিরকালই করুণা করি।
যদি দ্বিতীয় পর্ব এখানে প্রকাশিত হয়, তাহলে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাখলাম এই ভক্তিবাদীদের দুই ধর্মবাবা রামকেষ্ট ভটচাজ আর আশীষ লাহিড়ীকে এই খোলা খাতায় স্বনামে লিখতে। দেখব তাঁদের খাঁচায় কত দম আছে।
রঞ্জনবাবু, নিজে লিখেছি বলে বলছি না। আজ অবধি বাংলা ভাষায় জোন্সকে এইভাবে খুল্লমখুল্লা নগ্ন করার কেউ হিম্মত রাখেনি। হ্যালহেডকেও। সেটা গুরুর দৌলতে আমি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেছি। যাঁরা করেননি, তাঁরা আমার থেকে একশো থেকে হাজার গুণ পণ্ডিত। কিন্তু দমে কুলায়নি। কেন এই দুই সাহেবকে নগ্ন করেছি, সেটা দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশিত হবে।
একটা দুশো বছরের পুরনো বাড়ির সবে প্লাস্টার খসানোর পর্ব শুরু হয়েছে। তাও যথেষ্ট রেখে-ঢেকে। বীরসিংহের মাটির বাড়িটাকে প্রথমে উপনিবেশের জল-সার দিয়ে পোক্ত একতলা বানানো হয়েছে। তার পরে স্বাধীন (!) ভারতে উপনিবেশের যেসব দাস রয়ে গেছে, তাঁদের অর্থে ও উদ্যমে বাড়িটাকে দোতলা বানানোর পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।
এতদিনে ছোটলোকরা শাবল-গাঁইতি নিয়ে নেমেছে। এখন প্লাস্টার খসানো হবে সাবধানে। ষষ্ঠ অধ্যায় থেকে একটা একটা করে ইট খুলে নেওয়া হবে। আর তৃতীয় পর্ব আসার আগেই বাড়ির ভিত পুরো ধসে যাবে। বাঙ্গালার ইতিহাস তৃতীয় পর্বের জন্য বরাদ্দ আছে। কিন্তু মাত্র দুটো কিস্তি আসতে না আসতেই যে হারে অসভ্যতা শুরু হয়েছে, সে কারণে সামান্য নমুনা।
বিদ্যাসাগর বইটির বিজ্ঞাপনে নিজে লিখেছেন,
বাঙ্গালার ইতিহাসের দ্বিতীয় ভাগ, শ্রীযুক্ত মার্শমন সাহেবের রচিত ইঙ্গরেজী গ্রন্থের শেষ নয় অধ্যায় অবলম্বনপূর্বক, সঙ্কলিত, ঐ গ্রন্থের অবিকল অনুবাদ নহে। কোনও কোনও অংশ, অনাবশ্যকবোধে, পরিত্যক্ত হইয়াছে, এবং কোনও কোনও বিষয়, আবশ্যক বোধে, গ্রন্থান্তর হইতে সঙ্কলন পূর্বক, সন্নিবেশিত হইয়াছে।
এই পুস্তকে, অতি দুরাচার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসনারোহণ অবধি, চিরস্মরণীয় লার্ড উইলিয়ম বেন্টিক মহোদয়ের অধিকারসমাপ্তি পর্যন্ত, বৃত্তান্ত বর্ণিত আছে।
যদিও আবশ্যকতা ও অনাবশ্যকতা বিচারের ভিত্তি সম্পর্কে তিনি একটি কথাও বলেননি!
তবে তা খুঁজে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ এই বই লেখার ২৪ বছর পরেও ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে তাঁর মনোভাবের যে কণামাত্র পরিবর্তন হয়নি, তার প্রমাণ তিনি নিজেই রেখে গেছেন এই বাক্যগুলো লিখে -
যেরূপ শুনিতে পাই, তাঁহারা রাজ্যভোগের লোভে আকৃষ্ট হইয়া, এ দেশে অধিকার বিস্তার করেন নাই; সর্বাংশে এ দেশের শ্রীবৃদ্ধিসাধনই তাঁহাদের রাজ্যাধিকারের একমাত্র উদ্দেশ্য।
সেই কারণে ৮৮ পৃষ্ঠা (তৎকালীন ১১ ফর্মা)-র বাঙ্গালার ইতিহাস-এ ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের জন্য ব্যয়িত হয়েছে মাত্র তিনটি বাক্য! হাঁড়ির ভাত সেদ্ধ হয়েছে কি না, তা পাকা পাচক বা পাচিকা খান পাঁচেক চাল টেস্ট করলেই বুঝে যায়! আশা করি, অতঃপর বাঙ্গালার ইতিহাসকে অনুবাদ বলে চালানোর ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগটি হজম করে নেওয়া হবে!!
পরবর্তী অধ্যায়ে জন মার্শম্যান আর তাঁর বাপ জোশুয়া মার্শম্যান আসবেন। তখন দেখবেন এঁদের আসল রূপ।
এটা 'প্রবেশ' করে মন্তব্য করে রাখলাম। আর তারানাথ তর্কবাচস্পতি দ্বিতীয় পর্বে একটি আলাদা অধ্যায় জুড়ে আসবেন। ওই মাপের পণ্ডিতের জন্য একটি আলাদা অধ্যায় না লেখা হলে, তাঁর প্রতি ছোটলোকদের যথাযথ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন হবে না। তার আগে বহুবিবাহ নিয়ে বিদ্যাসাগরের ধাস্টামোটি বিশদে বিকশিত হবে।
এই রে, আপনিও তো দেখছি দুবার পোস্ট করে ফেলেছেন।
এলেবেলে ওরফে দেবোত্তম তো দেখছি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে ব্যক্তি আক্রমণেই বেশি উৎসাহী। কে সানাইয়ের পোঁ আর কে পুঁটিমাছ, ওসবের বদলে মুল প্রসঙ্গে থাকলে ভাল হত না কি?
ঈশান এবং পিনাকী, আপনাদের দুজনের কাছেই স্পষ্ট অভিযোগ জানাচ্ছি।
১. যিনি নিজে গুরুর একজন ব্লগার, যিনি দিনকয়েক আগে এখানে একটা তেবাসি পোবোন্দো নামিয়েছেন (ওটা আমাকে তিনি নিজে পাঠিয়েছিলেন বছর দেড়েক আগে), তিনি গুরুরই অন্য এক ব্লগারের নিক ব্যবহার করে ব্যক্তি আক্রমণ দিয়ে শুরু করেছেন। এই লেখাটির লেখক 'ইংরেজির ম্যাস্টর' কি না, তা পাঠকদের জানা কি খুব জরুরি? এটা কি সৌজন্য প্রদর্শনের নমুনা?
২. যিনি গুরুতে দুটো টই খুলেছিলেন, যাঁর দ্বিতীয় টইটি মুক্তমনার অভিজিৎ রায়ের একটি লেখার কাঁচা কপি-পেস্ট মাত্র, আমি নিজে তিতিবিরক্ত হয়ে নাম-পদবি-নিবাস-পেশা সব জানানোর পরেও তিনি একই ব্যক্তি আক্রমণ জারি রেখেছেন।
এবং এঁরা দুজনেই কিন্তু শুরুটা করেছেন নিপাট 'ভদ্রলোক' হিসেবে।
আপনারা কি এই ব্যাপারটায় আদৌ ইন্টারভেন করবেন? আমি মঙ্গলবার অবধি দেখব। তারপর ছোটলোক এলেবেলে তার 'ছোটলোক' গিরি শুরু করবে। তখন কিন্তু গুরুর খোলা খাতা সংস্কৃতির দোহাই দিতে পারবেন না।
এই পর্বটি আমার বিশেষ ভালো লাগলো। আসলে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের ছাত্রী হিসেবে এই বিশেষ বয়ান ও বক্তব্যের সঙ্গে আমি বিশেষ পরিচিত। স্বভাবতই, এই পর্বটির ওপরে দুর্বলতা তৈরী হল।
পরে আরো একবার পড়তে হবে। মোহ বশত এ লেখা পড়লে লেখাটির যথার্থ মূল্যায়ন হবে না।
ধেত্তেরি।
এলেবেলে,
আপনি দুর্বাসা না হইয়া বশিষ্ঠ হউন।
মার্শম্যান প্রশ্নের জবাব দিলেন, ব্যস। অন্যদের নামগোত্র জানিযা কী করিব? ব্যক্তিগত আক্রমণ এড়াইয়া চলুন।
ভাল লিখিতেছেন, নিন্দুকের কথায় কান দিবেন না। নতুবা পথভ্রষ্ট হইবেন।
এলেবেলে, আমি এক্ষেত্রে রঞ্জনবাবুর সঙ্গে একমত।
এই ক্লাসের লেখায়, যেখানে আপনি লোকের আজন্মলালিত কনফার্মেশন বায়াস ভাঙছেন, সেখানে তাঁরা এই ধরণের লেখা পড়তে অভ্যস্ত নন, তাঁরা আক্রমণ করবেন। তবে আপনি স্থিতধী থাকুন, পাল্টা আক্রমণে যাবেন না। আপনার কলম কথা বলুক।
@এলেবেলে,
আমার এক গুরু বলেছিলেন, কোনও একটা লেখা প্রকাশিত হয়ে গেলেই তুমি তার থেকে 'লেখক' হিসেবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেবে। সন্ধিৎসু পাঠক হিসেবেই লেগে থেকো।
সব অভিযোগের তাৎক্ষণিক জবাব দেবার কি কোনও প্রয়োজন আছে? এতো শ্রম স্বীকার করে এই লেখাটি লিখছেন আপনি। বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার নির্ভুল আবেগ চোখে পড়ছে। বিষয় হিসেবে 'বিদ্যাসাগর' আমারও প্রিয় বিষয়। কয়েক দশক ধরে তাঁর সম্বন্ধে একটা ধারণা তৈরি করতে প্রয়াস পাই। হয়তো আপনার সব বিশ্লেষণ আমার সঙ্গে মিলছে না। কিন্তু অসহিষ্ণু হবার তো কোনও কারণ নেই। বিদ্যাসাগর কোনও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক নেতা ন'ন।
উপনিবেশ ও বাঙালির পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার ব্যাপারটি অতিশয় জটিল। আমাদের 'ছোটোবেলা'য় রামমোহনের দুশো বছর পূর্তির সময়ও তৎকালীন য়ুরোপিয় ও বাঙালি মানসিকতা ও মূল্যবোধের টানাপোড়েন নিয়ে অনেক 'দুষ্পাচ্য' আলোচনার সাক্ষী আছি আমরা। এরকম একটি বহুমুখী জটিল সময় ও পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করা বেশ দুরূহ কাজ। সরলরৈখিক সিদ্ধান্ত সব সময় হয়তো যথার্থ হয়না। কিন্তু জানালা কেন বন্ধ হবে? আপনি নির্বাধে নিজস্ব বিশ্বাসের কথা লিখুন। যাঁর গ্রহণ করার হবে, তিনি করবেন। নয়তো নীরবে প্রত্যাখ্যান করার স্বাধীনতা তো থেকেই যাচ্ছে। কলহ কেন?
নির্বিবাদ এগিয়ে যান। যদি মনে হয় 'জ্ঞান' দিচ্ছি, মার্জনা করবেন। ঃ-)
থাম্বস আপ!
ঠগ দেবোত্তম আর জোচ্চোর দেবব্রত এদের ঢ্যামনামো সামাজিক মাধ্যম নির্বিশেষে চলছেই। সংগঠিত প্রতিবাদের মুখোমুখি হলে নাকে কেঁদে গা ঢাকা দেয় । কিছুদিন পরে ফিরে এসে আবার খেউর আর লম্ফঝম্প শুরু করে।
pakhidadu | 164.100.26.91 | ১২ অক্টোবর ২০২০ ১৬:২৫
এই মন্তব্যটি অত্যন্ত আপত্তিকর। কাউকে ঠগ বলাটা যথেষ্ট সিরিয়াস।
এলেবেলে চাইলে এই মন্তব্য নিয়ে সাইবার হ্যারাসমেন্টে অভিযোগ জানাতে পারেন। আর এই ধারাবাহিকটির শুরু থেকেই দিল্লির ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার থেকে কেউ বা কারা আনপ্রোভোকড গালিগালাজ করে যাচ্ছে। সেন্ট্রাল গভমেন্টের ইন্সটিউট থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় গালিগালাজ করা - সাইবার হ্যারাসমেন্ট সেল খুব একটা ভাল চোখে দেখবে না যদ্দুর জানি।
আর যেহেতু গুরুতে লগিন না করে লিখতে পারার সুবিধেটার যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে, কাজেই আমিও আমার লগিন করে রেটিং দেবার সুবিধেটার যথেচ্ছ ব্যবহার করব। এই সিরিজের সমস্ত লেখায় আমি ৫ রেটিং দিয়ে যাব, সে আমার মতে সেই পর্ব যেমনই হোক না কেন।
একজন পরিশ্রমী প্রতিভাবান লেখককে ঠগ জোচ্চোর এসব বলা হবে মানা যায় না। প্রবন্ধের বক্তব্যের সংগে একমত না হলেও সকল পাঠক ই এই বিচিত্র কমেন্টের প্রতিবাদ করুন।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
প্রতিবাদ করাই উচিত। বক্তব্য পছন্দ না হলে পালটা বক্তব্য রাখা যেতে পারে, যুক্তি দিয়ে । গাল দিলে বুঝতে হবে যুক্তির ভাঁড়ারে কিছু কম পড়িয়াছে। আমি এলেবেলের বক্তব্যের সব পয়েন্টের সঙ্গে সহমত হই বা না হই, এলেবেলের কোন বিষয়ে নিজের জ্ঞান-বিশ্বাস-পছন্দ মত কথা বলার অধিকারের পক্ষে ।
লেখক মহাশয় ধুতি জড়াইয়া প্রানপনে প্রমান করিবার চেষ্টা করিতেছেন বিদ্যাসাগর রামমোহন ইত্যাদি মনীষীগণ বৃটিশ নেড়ি কুত্তা বিশেষ। উনি উনার অনুকল্পটি সাজাইয়া গুছাইয়া তামাক সাজিয়া তথ্যের ঘনঘোর বর্ষা বর্ষন করিলেন । ভুলিয়া যাইলেন প্রকল্পএর প্রমানে নাল হাইপোথেসিস থাকিতে হয়। নচেত কোন থিসিসেই সিন্থেসিস সম্ভব নহে।
লেখকের ইতিহাসে কত পরস্পরবিরোধিতা এবং তথ্য বিভ্রাট আছে তার দুই চারিটি নমুনা পেশ করিতেছি।
(১) ল্যাটিনের সাথে সংস্কৃতের সম্পর্ক - এইটি সত্য এবং বাস্তব। ভাষা দুইটির বেসিক ১০০ টি শব্দ জানিলেই জানিতেন যে দুইটি ভাষার মধ্যে মিল সাংঘাতিক। এবং তা আধুনিক কালের পন্ডিত রা মানিয়া লইয়াছেন। জেনেটিক স্টাডিও তাহার প্রমান দেয়। ফ্রাঞ্জ বপ ইন্দো ইউরোপিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ ধারনার জনক । যিনি জার্মান। এবং তার মূল পেপারগুলির প্রকাশকাল ১৮২০-৭০। মোটামুটি ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষা একাডেমিক রিসার্চে আসে ১৮৫০ হইতে। ইহারপর হইতে অধ্যাবধি ইহা এক্টিভ এরিয়া অব রিসার্চ। ইহার পিছনে কলোনিয়াল মোটিভ খুঁজিতে যাওয়া হাস্যকর।কারন ইহার বাপ ফ্রান্স বপ জার্মান ছিলেন- বৃটিশ কলোনোলাইজেশনে সাহায্য করিবার অভিপ্রায় তাহার ছিল না। মানুষটি ছিলেন সোদাসাপ্টা পন্ডিত ।
(২) ওয়ারেন হেস্টিংস ( এবং কোম্পানী) প্রথমে মনে করিয়াছিল স্থানীয় ফৌজদারি এবং সামাজিক আইনগুলি সংস্কার করিলেই চলিবে। ইসলামিক আইনে অসুবিধা হয় নাই। কিন্ত ১৮২০ সালের মধ্যে কোম্পানী বুঝিতে পারে হিন্দু আইন একটি মিরাজ। হিন্দু আইন বলিয়া কিছু সম্ভব না। ইহার কারনেই লর্ড বেন্টঙ্ক ( এবং ইউটিলিরিয়ন গন মনে করিতেন আইনের ভিত্তি উলিটিরিয়ানিজম হওয়া উচিত) ভারতে আধুনিক আইন আনিতে চাইলেন। যাহার ইতিহাস ভারত বর্ষেআজো চলিতেছে।
(৩) বাংলা ভাষার প্রথম ব্যকারন /অভিধান ডাচেদের লেখা (১৬৮০)। দ্বিতীয়টি বৃটিশের। বনিকরা বানিজ্যের কারনে এই ভাষা শিখিতে চাহিত কিন্ত অভিধান এবং ব্যকারনের অভাবে সমস্যা হইত। সুতরাং তাহারা এই ভাষাটিকে একটি ফ্রেম ওয়ার্কে বাঁধিতে চাইয়াছিল। ইহার কারনেই তাহারাই ভাষাটির ব্যাকারন অভিধান দিয়াছে। বাঙালী হিসাবে তাহাতে লজ্জিত হইতে পারেন-কিন্ত ইহা ঐতিহাসিক সত্য। বিদ্যাসাগর হইতে সব পন্ডিতদের হায়ার করার একটিই কারন-যাতে -আইনের খচড়া প্রস্তুত হয় ,দুই চলেবল একটি নেটিভ ভাষার জন্ম দেওয়া সম্ভবহয়। কারন তাহা তখন ছিল না। ফার্সি ছিল কোর্টের ভাষা-যাহা উন্নত । কিন্ত নেটিভ ভাষা নহে। নেটিভরা শিখিত। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠিতে ছিল তাহা হইলে ফার্সি কেন? ইংরেজি শিখিলেই হয়। বাঙালীর কাছে ফার্সি ইংরেজি উভয় রাজভাষা।
শুধু তথ্য চাটিয়া খাইলেই কেহ ঐতিহাসিক হইতে পারে না।
কিছুতেই লোভ সামলাতে পারলাম না ভেতোবাঙালী র মন্ত্যবের এই অংশ টা পড়ে
"........-যাতে -আইনের খচড়া প্রস্তুত হয়.........."
ধরে নিচ্ছি এটা টাইপো , কিন্তু অসাধারণ ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ :)
আর ডেলিবারেটলি লিখে থাকলে কোনো কথা হবে না :)
বাঙালীর বানানজ্ঞান বেশ উদ্বেগ জাগায়। এটাকেও বিদ্যাসাগরের অন্যতম ব্যর্থতা হিসেবে ভাবা যেতেই পারে,
' প্রানপনে, প্রমান, বর্ষন, নচেত , পন্ডিত, ধারনা, অধ্যাবধি, ব্যকারন, বনিক, বানিজ্যের, কারনেই, ব্যাকারন , খচড়া...'
আজেবাজে ট্রোলগুলোকে উপেক্ষা করাই ভালো। উত্তর না পেলে আপনা থেকেই চুপ করে যাবে এরা ।লেখাটা খুব ভালো হচ্ছে। চালিয়ে যান। .
বাপ্সরে,ভেতোবাঙ্গালির গুরুচণ্ডালি ভাষা এ ভেতোপেটে সহ্য হইলে হয় ! 'বর্ষার বর্ষনে' পড়ে সেই রক্তের রক্তকরবীর রক্তস্নান মনে পড়িয়া গেল। এমতি 'ব্যকারন' সমেত 'প্রানপনে অকারনে পন্ডিত প্রমান' কারী খচড়াই কি 'চাইইয়াছিলাম' '" ?:-(
যাহোক,লেখকের সঙ্গে দ্বিমত থাকতেই পারে,কিন্তু ব্যক্তি আক্রমণগুলো এখানে কীভাবে প্রাসঙ্গিক ?
আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় রঞ্জনবাবু, অরিনবাবু, শিবাংশুবাবু, খ এবং দ-দি এই লাগাতার অসভ্যতা ও ব্যক্তি আক্রমণের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন, নিঃসন্দেহে এটি আমার সবচেয়ে বড় পাওনা।
আলাদা করে অরিনবাবুকে বলি, এই লেখা দ্বিতীয় পর্বের শেষে ৮৫ হাজার শব্দে গিয়ে ঠেকেছে। তৃতীয় পর্ব শেষ হলে, সংখ্যাটা এক লক্ষ ছাড়িয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। এখন আমার অ্যাপও নেই, ল্যাপও নেই। পাতি ডেস্কটপে খটখটিয়ে টাইপ করা মাত্র। কাজেই স্যার আর বাড়াতে বলবেন না! তবে প্রত্যেকটি পর্ব গুরুত্ব অনুসারে ছোট-বড় হবে। তাতে যেমন কোনও অধ্যায়ে সর্বনিম্ন ২ হাজার শব্দ থাকবে, তেমনই কোনও অধ্যায়ে ৭ হাজার+ শব্দ থাকবে। পাঠক মোবাইলে পড়বেন, সেই পাঠের অভ্যাসকে এই লেখায় পরোক্ষে চ্যালেঞ্জ করা হবে। পড়তায় পোষালে তিনি পড়বেন, না পোষালে খেউড় দেখবেন!
শিবাংশুবাবু, এই লেখার প্রতি, বিশ্বাস করুন, আমার এতটুকু মায়া নেই। আমি পুজোর পুরোহিত মাত্র। নিষ্ঠাভরে পুজো সম্পন্ন করছি। তিথি পেরিয়ে গেলে সেই পুজো নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই, পুরোহিতদের তা থাকতে নেই। আপনি আমাকে একবার কেন, দরকারে হাজারবার ‘জ্ঞান’ দেবেন। তাতে আমিই বরং সমৃদ্ধ হব।
দ-দি, এই প্রথম আমি গুরুতে লগিন করে মন্তব্য করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ প্রথমেই আমার ‘এবড়োখেবড়ো’ নিকটি জনৈক ‘ভদ্রলোক’ হাতসাফাই করেছেন। তাঁকে অনুরোধ করলেও তিনি ‘ভদ্রলোক’ বলেই ‘ছোটলোক’ এলেবেলের অনুরোধে পাত্তা দেননি। বলা যায় না, এর পরে হয়তো আমার এই নিকটিও কোনও ‘ভদ্রলোক’ হাতসাফাই করতে পারেন। তাই এই ব্যবস্থার শরণাপন্ন হওয়া।
হ্যাঁ, ভবিষ্যতে যদি এহেন কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটে, তবে সাইবার সেলের সাহায্য নিতে হবে। গুরুতে লিখে আমি কোনও চুরির দায়ে ধরা পড়িনি যে, যে কেউ অচেনা নিকের আড়ালে যা খুশি বলে পার পেয়ে যাবে। তবে আপনি কেন ওই রেটিং-এর চক্করে পড়বেন? রেটিং, শেয়ার সংখ্যা, কতজন পড়েছেন – কিছু নিয়েই আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। আমার ধারণা, আপনারও নেই। কাজেই বাদ্দিন।
এইবারে কিছু পণ্ডিতপ্রবরের কথায় আসি।
১০ অক্টোবর ২০২০ ০৬:২০
ইনি প্রথমে জ্যোতিষিগিরি করেছেন তুহিন মালাকার দিয়ে কত দিন টানা যাবে! পরে এলেবেলে যে ‘ইংরেজির ম্যাস্টর’, সে কথা না জানানো ইস্তক রাতে ঘুমোতে পারেননি!! অতঃপর ফুটোস্কোপ লাগিয়ে মার্শম্যান চেরিপিক করতে গিয়ে বেসিকটাই ভুলে মেরে দিয়েছেন!!! আহা, বেচারি স্বয়ং বিদ্যাসাগরের লেখা বাঙ্গালার ইতিহাস-এর বিজ্ঞাপনটি পড়ে উঠতে পারেননি। )))))))))))))))))))
অতঃপর একটি বিজ্ঞসুলভ মন্তব্য করেছেন //এলেবেলে কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যেন তেন প্রকরণে ঈশ্বরচন্দ্রকে ডাউন করবার জন্য তারানাথকে আপ করলেন না?//
এখন কে বোঝাবে, এখানে লেখাটির শিরোনাম ‘সংস্কৃতের আবাহন, সংস্কৃতির বিসর্জন’? এখানে হ্যালহেড-জোন্স-হেস্টিংস-ওয়েলেসলি আসবেন। তারানাথ আসবেন কেন? আসলেই তো বরং বেখাপ্পা হবে!
১০ অক্টোবর ২০২০ ১৩:০৪
এঁর ঠোট ফোলানোর কারণ আবার অন্য! ইনি ফেসবুক নামক এঁদোপুকুরের অন্যতম কচুরিপানা, বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বিশেষ অজ্ঞ ব্যক্তি! এঁর বক্তব্য আমি কেন বিদ্যাসাগরকে শ্রেষ্ঠতম না বলে, তারানাথকে বলেছি! ফলে তাঁর ভগোমানের আসন টলে গেছে! অথচ সংস্কৃত কলেজের ছাত্র হিসেবে এঁদের দুজনের অ্যাকাডেমিক রেকর্ডটাই ইনি জানেন না! তাই তাঁকে ঝিনুক দিয়ে দুধ খাওয়াতে হবে বলে ভ্যাঁ কান্না জুড়েছেন। )))))))))))))))))
১৩ অক্টোবর ২০২০ ০৩:১৩
এঁর পাণ্ডিত্যসুলভ মন্তব্য হল // ল্যাটিনের সাথে সংস্কৃতের সম্পর্ক - এইটি সত্য এবং বাস্তব।//
এই বাস্তবটা এড়িয়ে গেলে, সংস্কৃতকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীতে স্থান দেওয়ার কথা এলেবেলে লেখে না। অথচ তিনি নিজে কায়দা করে যেটা এড়িয়ে গেছেন সেটা হল, এই উপলব্ধিতে আসার আগে জোন্সের সংস্কৃত চর্চার ইতিহাসটা কত দিনের! হ্যালহেডই বা সংস্কৃতে কত ধনুর্ধর পণ্ডিত ছিলেন!! বিদ্যাসাগর কলেজে পড়েছিলেন ১২ বছর পাঁচ মাস। এই দুজন? ))))))))))))))))))))
অতঃপর নিপাট মূর্খতার প্রকাশ করেছেন //ওয়ারেন হেস্টিংস ( এবং কোম্পানী) প্রথমে মনে করিয়াছিল স্থানীয় ফৌজদারি এবং সামাজিক আইনগুলি সংস্কার করিলেই চলিবে। ইসলামিক আইনে অসুবিধা হয় নাই। কিন্ত ১৮২০ সালের মধ্যে কোম্পানী বুঝিতে পারে হিন্দু আইন একটি মিরাজ। হিন্দু আইন বলিয়া কিছু সম্ভব না।//
কলোনিয়াল হিন্দু আইনের স্রস্টা যে স্বয়ং হেস্টিংস-কর্নওয়ালিস এবং তার সহায়ক যে হ্যালহেড-জোন্স – এই বাস্তব সত্যটি ইনি জানেনই না!
একই ভাবে জানেন না বলেই লিখতে পেরেছেন //চলেবল একটি নেটিভ ভাষার জন্ম দেওয়া সম্ভবহয়। কারন তাহা তখন ছিল না।//
বাংলাকে যারা সাহেবদের নকল করে ‘নেটিভ’ ভাষা বলে, যারা সেই ভাষার ‘জন্মদাতা’-র সম্মান দেয় বিদেশি শাসকদের, তাদের ঔপনিবেশিক ‘প্রভু’দের প্রতি দাসত্ব এমনিই প্রকাশিত হয়ে পড়ে! খামোখা উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।